Author : Rumi Aijaz

Published on Oct 31, 2022 Updated 9 Days ago

শহরের ভবিষ্যৎ বৃদ্ধিকে চালিত করা এবং অন্তর্নিহিত পরিকল্পনা সংক্রান্ত সমস্যাগুলির সমাধান করার জন্য এম পি ডি ২০৪১ একটি আদর্শ কাঠামো হতে পারে।

দিল্লির জন্য পরিবহণ এবং পরিবেশ সংক্রান্ত প্রস্তাব
দিল্লির জন্য পরিবহণ এবং পরিবেশ সংক্রান্ত প্রস্তাব

দিল্লি এবং প্রতিবেশী রাজ্য হরিয়ানা, রাজস্থান এবং উত্তর প্রদেশের শহর / গ্রামের মধ্যে জোরালো কার্যকরী সংযোগ বিদ্যমান। প্রত্যেক দিন বিপুল সংখ্যক মানুষ কাজ, পড়াশোনা অথবা ব্যবসা সম্পর্কিত কাজে দিল্লিতে যাতায়াত করেন।

মানুষ উপলব্ধ সুযোগগুলি থেকে উপকৃত হলেও ব্যাপক সংখ্যক মানুষের যাতায়াত দিল্লির বিদ্যমান পরিকাঠামো, পরিষেবা এবং পরিবেশের উপর প্রবল চাপ সৃষ্টি করে। গতিশীল পরিস্থিতিকে যথাযথ ভাবে সামাল দিতে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক সংস্থার অক্ষমতার ফলে বেশ কিছু সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।

সমস্যাগুলি মোকাবিলা করার জন্য কেন্দ্রের সহায়তায় সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকারগুলি দ্বারা একটি সহযোগিতামূলক পরিকল্পনা এবং উন্নয়ন কৌশল অনুসরণ করা হচ্ছে। আঞ্চলিক সমস্যাগুলি সমাধান করা এবং তার জন্য যা প্রয়োজন তার ব্যবস্থা করা শহর স্তরের সংস্থাগুলির নিজস্ব প্রচেষ্টার মাধ্যমে সম্ভব নয়, এই উপলব্ধি সংশ্লিষ্ট পদক্ষেপের নেপথ্যে প্রধান কারণ৷

উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, বাহাদুরগড়, গুরুগ্রাম, ফরিদাবাদ, গাজিয়াবাদ এবং নয়ডার মতো নিকটবর্তী শহরগুলিতে দিল্লি মেট্রো রেল করিডোর সম্প্রসারণ আঞ্চলিক গতিশীলতার উন্নতিতে ব্যাপক ভাবে সাহায্য করেছে।

এই আঞ্চলিক উদ্যোগের লক্ষ্য জাতীয় রাজধানী অঞ্চলে (এন সি আর) সুষম উন্নয়ন সুনিশ্চিত করা। গ্রামীণ ও শহুরে জনবসতির উন্নয়ন এবং আঞ্চলিক পর্যায়ে বিভিন্ন ধরনের উন্নয়নমূলক প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে এই লক্ষ্য অর্জন করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, বাহাদুরগড়, গুরুগ্রাম, ফরিদাবাদ, গাজিয়াবাদ এবং নয়ডার মতো নিকটবর্তী শহরগুলিতে দিল্লি মেট্রো রেল করিডোর সম্প্রসারণ আঞ্চলিক গতিশীলতার উন্নতিতে ব্যাপক ভাবে সাহায্য করেছে। এর ফলে যানজট এবং কার্বন নিঃসরণ উভয়ই হ্রাস পাবে।

সমস্যার সমাধান: দিল্লির জন্য মাস্টার প্ল্যান

দিল্লির জন্য আসন্ন মাস্টার প্ল্যানে (এম পি ডি ২০৪১) অবহেলিত আঞ্চলিক সমস্যাগুলি সমাধানের জন্য আরও পরিকল্পনা দেওয়া হয়েছে। এটি আঞ্চলিক সংযোগ, পরিবহণ সংক্রান্ত পরিকাঠামো এবং পরিবেশকেই অগ্রাধিকার দেয়।

বিশেষ করে নিম্ন উপার্জনকারী সম্প্রদায়ের জন্য অঞ্চলটিতে যাতায়াত করা সহজ নয়। কারণ একাধিক অঞ্চল / ট্রাভেল করিডোর সরকারি পরিবহণ পরিষেবার আওতার বাইরে। অন্যান্য সম্প্রদায় মোটরগাড়ি কিনে এবং তা ব্যবহার করে সমস্যাটি কাটিয়ে উঠেছে। জীবনযাত্রার এই ধরন ব্যক্তিগত মোটরগাড়ির সংখ্যা ব্যাপক ভাবে বৃদ্ধি করেছে এবং একই সঙ্গে যানজট, কার্বন নিঃসরণ এবং ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা সম্পর্কিত সমস্যাগুলিকেও গুরুতর করে তুলেছে।

মাল্টি-মোডাল ট্রাফিক চলাচল এবং নিত্যযাত্রীদের চলাচলের সুবিধার্থে খসড়া পরিকল্পনায় বিদ্যমান রেলওয়ে স্টেশন এবং ইন্টার স্টেট বাস টার্মিনালের (আই এস বি টি) সংস্কার, নতুন আঞ্চলিক সড়ক / রেল করিডর এবং জন পরিবহণ পরিবর্তন ব্যবস্থা, সঠিক অবস্থান এবং নির্মীয়মান রিজিওনাল র‍্যাপিড ট্রানজিট সিস্টেম (আর আর টি এস) স্টেশনগুলির সঙ্গে অন্য গণ ট্রানজিট স্টেশনগুলির সমন্বয়ের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। দিল্লিকে মিরাটের সঙ্গে যুক্ত করার জন্য একটি ৮২.৫ কিলোমিটার দীর্ঘ আর আর টি এস করিডরও গড়ে তোলা হচ্ছে।

নতুন আঞ্চলিক ইন্টিগ্রেটেড ফ্রেট কমপ্লেক্স (আই এফ সি) নির্মাণ এবং বিদ্যমান আই এফ সি-গুলির আধুনিকীকরণের মাধ্যমে পণ্যবাহী যানবাহনের জন্য স্টোরেজ এবং পণ্যবাহী যানগুলির পার্কিংয়ের মতো ফ্রেট সংক্রান্ত পরিষেবাগুলির চাহিদা পূরণ করার প্রস্তাব আনা হয়েছে।

উন্নত পরিবহণ পরিকল্পনা ও তার বাস্তবায়নের জন্য এবং দৈনন্দিন কার্যকলাপগুলিকে আরও ভাল ভাবে সমন্বিত করার জন্য পূর্ববর্তী এম পি ডি দ্বারা প্রস্তাবিত একটি ইউনিফায়েড মেট্রোপলিটন ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (ইউ এম টি এ) গঠনে পুনরায় জোর দেওয়া হয়েছে।

মাল্টি-মোডাল ট্রাফিক চলাচল এবং নিত্যযাত্রীদের চলাচলের সুবিধার্থে খসড়া পরিকল্পনায় বিদ্যমান রেলওয়ে স্টেশন এবং ইন্টার স্টেট বাস টার্মিনালের (আই এস বি টি) সংস্কার, নতুন আঞ্চলিক সড়ক / রেল করিডর এবং জন পরিবহণ পরিবর্তন ব্যবস্থা, সঠিক অবস্থান এবং নির্মীয়মান রিজিওনাল র‍্যাপিড ট্রানজিট সিস্টেম (আর আর টি এস) স্টেশনগুলির সঙ্গে অন্য গণ ট্রানজিট স্টেশনগুলির সমন্বয়ের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

বেশির ভাগ মাসেই এন সি আর-এ বাতাসের গুণমান অত্যন্ত খারাপ থাকে। ধুলোর ঝড়ের মতো প্রাকৃতিক কারণগুলি বায়ুর গুণমান হ্রাসে ভূমিকা পালন করলেও সমস্যার নেপথ্যে প্রাথমিক কারণগুলি হল নিম্নমানের মোটরগাড়ি / বাণিজ্যিক জ্বালানির ব্যবহার, রাস্তা এবং বাড়ি নির্মাণের নিকৃষ্ট পদ্ধতি এবং কৃষি / পৌরসভার বর্জ্যের অপ্রতুল নিষ্কাশনের মতো মানুষের ব্যবহারিক কার্যকলাপ।

বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য বৃক্ষাচ্ছাদন ও ভূ-পৃষ্ঠের জলাশয় বজায় রাখার গুরুত্ব নাগরিক সংস্থাগুলি ভাল মতোই অবগত। তা সত্ত্বেও এ ক্ষেত্রে যথেষ্ট অবহেলা লক্ষ করা গিয়েছে।

এম পি ডি ২০৪১-এর খসড়ায় দিল্লির পরিসীমা তথা যমুনা নদীর প্রবাহ বরাবর গ্রিন বাফার / গ্রিন বেল্ট বজায় রাখার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেওয়া হয়েছে। এই কর্মসূচিতে চারা গাছ ও বৃক্ষ রোপণ করা হবে যা দূষণ পরিশোধনে কাজ করবে এবং স্থানীয় অঞ্চলটির উষ্ণায়নের সমস্যাও নিয়ন্ত্রণ করবে।

দিল্লি, হরিয়ানা এবং রাজস্থানের কিছু অংশে বিস্তৃত আরাবল্লি পর্বতমালার সমৃদ্ধ উদ্ভিদ ও প্রাণীকুলকে রক্ষা করার বিষয়টি সম্পর্কেও প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে। বেশ কিছু জায়গায় অননুমোদিত নির্মাণের ঘটনাও ঘটেছে। হরিয়ানার কর্তৃপক্ষও পরিকল্পিত ভাবে উন্নয়ন কর্মসূচির বাস্তবায়নে আগ্রহী। এ ধরনের নির্মাণ শৈলশিরার জীববৈচিত্র্যের জন্য বিপজ্জনক।

যমুনা নদীর ক্রমবর্ধমান দূষণ আর একটি উদ্বেগের বিষয়। নদীর ধারে বিভিন্ন স্থানে অপরিশোধিত বর্জ্য, শিল্পকারখানার বর্জ্য এবং আবর্জনা ফেলা হয়। দিল্লির নজফগড় হ্রদে একই রকমের সমস্যা লক্ষ করা গিয়েছে, যেখানে গুরুগ্রাম থেকে অপরিশোধিত পয়ঃবর্জ্য জমা হয়। ভূপৃষ্ঠের জলাশয়গুলির অশুদ্ধতা বন্য প্রাণী এবং এই ধরনের জলাশয়ের উপর নির্ভরশীল নিম্ন উপার্জনকারী সম্প্রদায়ের ক্ষতি করে। নিষ্কাশনের আগে বর্জ্য জল পরিশোধন এবং আবর্জনা প্রক্রিয়াকরণ / পুনর্ব্যবহার করার ব্যাপারে কিছু প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে।

উপরের অনুচ্ছেদগুলিতে দিল্লিতে পরিবহণ এবং পরিবেশের উন্নতির জন্য খসড়া এম পি ডি ২০৪১-এ উত্থাপিত পরিকল্পনা প্রস্তাবনাগুলিকে বর্ণনা করা হয়েছে। এই প্রস্তাবগুলির দ্রুত বাস্তবায়ন নির্ভর করবে দিল্লি ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (ডি ডি এ) কর্তৃক খসড়া পরিকল্পনার দ্রুত চূড়ান্তকরণের উপর।

এই পরিকল্পনায় জৈব-পচনকারীর ব্যাপক ব্যবহার এবং বায়োমাস পাওয়ার প্রকল্পে ধানের খড়ের ব্যবহারের ক্ষেত্রে অধঃক্ষেপ ব্যবস্থাপনার দূষণমুক্ত এবং সাশ্রয়ী সমাধান প্রদান করে।

এই প্রস্তাবগুলি ছাড়াও অঞ্চলটিতে অমীমাংসিত সমস্যাগুলি সমাধানের জন্য আরও পরিকল্পনা সংক্রান্ত হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। প্রথমত, যেমন জাতীয় মহাসড়কের দিল্লি-গুরুগ্রাম অংশ (এন এইচ ৪৮) বা গুরুগ্রাম-ফরিদাবাদ মহাসড়কের মতো কিছু ব্যস্ততম সড়কপথে  দক্ষ গণপরিবহণ ব্যবস্থা / বাস পরিষেবার প্রয়োজন আছে। বর্তমানে হাজার হাজার মোটর গাড়ির মালিক প্রত্যেক দিন এই করিডরগুলি ব্যবহার করেন এবং ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় প্রশাসনিক অদক্ষতার ফলে যানজট সৃষ্টি হয় এবং বাতাসের গুণমান হ্রাস পায়। অন্য দিকে গণপরিবহণ বাসের উপর নির্ভরশীল মানুষ অপ্রতুল এবং বিরল পরিষেবার সমস্যার মুখোমুখি হন। দ্বিতীয়ত, সমস্ত ইন্টার স্টেট বাস এবং মেট্রো রেল স্টেশনগুলি্র প্রথম / শেষ মাইল সংযোগ এবং স্টেশনগুলির বাইরে যানজটের সমস্যা সমাধানের জন্য স্থানীয় ফিডার বাস পরিষেবা ব্যবহার করা উচিত। কিছু মেট্রো রেল স্টেশনের বাইরে পরীক্ষামূলক ভিত্তিতে এই ধরনের পরিষেবা চালু করা হয়েছিল। কিন্তু বেসরকারি বাস অপারেটররা সরকারি সংস্থার সঙ্গে চুক্তির ধরন নিয়ে অসন্তুষ্ট হওয়ায় তাঁদের পরিষেবা প্রত্যাহার করে নেন। এই ধরনের পরিষেবার অনুপলব্ধতার কারণে বিপুল সংখ্যক মানুষ তাঁদের মোটর গাড়ি স্টেশনগুলিতে পৌঁছনোর জন্য ব্যবহার করেন যেখানে প্রচুর সংখ্যক যানবাহনের পার্কিং লটের পর্যাপ্ত সুবিধা নেই। যাঁদের নিজস্ব যানবাহন নেই, তাঁরা স্টেশনে যেতে / আসতে অসুবিধার সম্মুখীন হন। সর্বোপরি হরিয়ানা, পঞ্জাব এবং উত্তর প্রদেশে নাড়া পোড়ানোর ফলে বিশেষত শীতের মাসগুলিতে বায়ুর গুণমান হ্রাসের কারণে, সংশ্লিষ্ট রাজ্য এবং স্থানীয় সরকারগুলিকে অবশ্যই এন সি আর এবং সংলগ্ন অঞ্চলে কমিশন অন এয়ার কোয়ালিটি ম্যানেজমেন্ট দ্বারা প্রণীত একটি কর্ম পরিকল্পনা বাস্তবায়নের চেষ্টা করতে হবে। এই পরিকল্পনা জৈব-পচনকারীর ব্যাপক ব্যবহার এবং বায়োমাস পাওয়ার প্রকল্পে ধানের খড়ের ব্যবহারের ক্ষেত্রে অধঃক্ষেপ ব্যবস্থাপনার দূষণমুক্ত এবং সাশ্রয়ী সমাধান প্রদান করে। শস্য অধঃক্ষে্প ব্যবস্থাপনা মেশিন ক্রয়ের জন্য কৃষকদের আর্থিক সহায়তাও প্রদান করা হয়। কাস্টম হায়ারিং সেন্টার থেকে মেশিন ভাড়া করার বিকল্পও রয়েছে তাঁদের কাছে।

উপসংহারে বলা যায়, দিল্লিতে বসবাসকারী বেশির ভাগ মানুষই অপ্রতুল গণপরিবহণ পরিষেবা এবং দূষণের কারণে নিত্য যাতায়াত সমস্যার সম্মুখীন হন। সংশ্লিষ্ট রাজ্য এবং স্থানীয় সরকারগুলিকে এই সমস্যার দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করতে হবে।

মতামত লেখকের নিজস্ব।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.