Published on May 06, 2025 Updated 0 Hours ago

রুশ গ্যাস ট্রানজিট চুক্তি পুনর্নবীকরণে ইউক্রেনের অস্বীকৃতির ফলে স্লোভাকিয়া ব্যাপক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং বিকল্প খুঁজছে

স্লোভাকিয়া এবং ইউক্রেন গ্যাস চুক্তি

২০২৫ সালের জানুয়ারি মাসে  ইউক্রেন গ্যাস ট্রানজিট চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে যায়, যার ফলে ইউক্রেন হয়ে ইউরোপে রাশিয়ার পাইপলাইনে প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। ২০১৯ সালে পাঁচ বছরের জন্য গ্যাস ট্রানজিট চুক্তির পুনর্নবীকরণ করা হয়, যা প্রাথমিক ভাবে ২০০৯ সালে ১০ বছরের জন্য স্বাক্ষরিত হয়েছিল। তবে কিয়েভ এটির পুনর্নবীকরণে অস্বীকৃত হয়েছে এই যুক্তি দিয়ে যে, ইউরোপে রুশ প্রাকৃতিক গ্যাসের পরিবহণ মস্কোকে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অর্থায়নে সহায়তা করছে, যার ফলে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে বেশ কয়েকটি ইউরোপীয় দেশ বিভিন্ন মাত্রায় প্রভাবিত হয়েছে। পশ্চিম ইউরোপীয় দেশগুলি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কাতার নরওয়ে থেকে এলএনজি  আমদানির মাধ্যমে রুশ গ্যাসের ক্ষতি পূরণ করতে সক্ষম হলেও, মধ্য ও দক্ষিণ ইউরোপ এর প্রভাব আরও তীব্র ভাবে অনুভব করেছে। এর মধ্যে, স্থলবেষ্টিত মধ্য ইউরোপীয় প্রজাতন্ত্র স্লোভাকিয়া ইউক্রেনের মধ্য দিয়ে গ্যাস পরিবহণ বন্ধের ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। স্লোভাক প্রাইম মিনিস্টার রবার্ট ফিকো ইউক্রেনের সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করেছেন এবং স্লোভাকিয়ায় বসবাসকারী ইউক্রেনীয় শরণার্থীদের সহায়তা বন্ধ বিদ্যুৎ বিক্রি বন্ধ করার হুমকি দিয়েছেন।

স্লোভাকিয়ার উপর প্রভাব

দক্ষিণ ও মধ্য ইউরোপীয় দেশগুলি, বিশেষ করে ইতালি, অস্ট্রিয়া, হাঙ্গেরি স্লোভাকিয়া তাদের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য রাশিয়ার উপর বেশি নির্ভরশীল। তবে, পরিবহণ বন্ধের কারণে ইতালি, অস্ট্রিয়া হাঙ্গেরি বাধাগ্রস্ত হলেও বিকল্প গ্যাসের উৎস নিশ্চিত করার কারণে তারা আরও ভাল ভাবে প্রস্তুত ছিল। হাঙ্গেরি টার্কস্ট্রিম পাইপলাইনের মাধ্যমে কৃষ্ণ সাগরের মধ্য দিয়ে রুশ গ্যাস পরিবহণের উপর বেশি নির্ভরশীল ছিল। গ্যাস আমদানির জন্য ইতালি অস্ট্রিয়ার বন্দরগুলিতে এলএনজি টার্মিনাল রয়েছে।

ইউক্রেনে রাশিয়া প্রবেশের আগে ডিসেম্বর মাসে স্লোভাকিয়া রুশ গ্যাসের মালিকানা পরিবর্তন করে গ্যাস চুক্তি পুনর্নবীকরণ করার প্রস্তাব করেছিলঅন্য কথায় বলতে গেলে, বহুজাতিক সংস্থাগুলি রুশ-ইউক্রেনীয় সীমান্ত থেকে গ্যাস কিনবে এবং এর দরুন পরিবহণের জন্য ইউক্রেনকে অর্থ প্রদান করবে।

তবে স্লোভাকিয়ার কাছে সীমিত বিকল্প রয়েছে। তা সত্ত্বেও, ইউক্রেনের মাধ্যমে গ্যাস পরিবহণ বজায় রাখার জন্য প্রাইম মিনিস্টার ফিকোর যুক্তি কেবল স্লোভাকিয়ার জ্বালানি নিরাপত্তার বাইরেও বিস্তৃত। ২০২৩ সালে, স্লোভাকিয়া ইউক্রেনের মাধ্যমে ১২.৬৭ বিলিয়ন ঘনমিটার রুশ গ্যাস পেয়েছিল, যার মধ্যে ৪.৩ বিলিয়ন ঘনমিটার গ্যাস ব্যবহার করেছিল। দেশটি তার বিদ্যুতের চাহিদার বেশির ভাগই পারমাণবিক শক্তির মাধ্যমে উৎপাদিত করে এবং শুধুমাত্র প্রয়োজনের সময় গ্যাস ব্যবহার করে। এ ভাবে স্লোভাকিয়া প্রাকৃতিক গ্যাস পরিবহণে বেশি রাজস্ব আয় করে, যার জন্য স্লোভাকিয়া বছরে ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের ট্রানজিট ফি অর্জন করে।

ইউক্রেনে রাশিয়া প্রবেশের আগে ডিসেম্বর মাসে স্লোভাকিয়া রুশ গ্যাসের মালিকানা পরিবর্তন করে গ্যাস চুক্তি পুনর্নবীকরণ করার প্রস্তাব করেছিলঅন্য কথায় বলতে গেলে, বহুজাতিক সংস্থাগুলি রুশ-ইউক্রেনীয় সীমান্ত থেকে গ্যাস কিনবে এবং এর দরুন পরিবহণের জন্য ইউক্রেনকে অর্থ প্রদান করবে। কিয়েভ এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। এতে স্লোভাকরা ক্ষুব্ধ হয়েছে। কারণ স্লোভাকিয়া দাবি করে যে, জেলেনস্কির গ্যাস পরিবহণ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক ভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ছিল, যা ছোট ইইউ দেশগুলির ক্ষতি করছে।

এই পরিস্থিতিকে দুটি দৃষ্টিকোণ থেকে মূল্যায়ন করা দরকার। প্রথমত, হাঙ্গেরির প্রাইম মিনিস্টার ভিক্টর অরবানের মতো ফিকোও রাশিয়ার সঙ্গে তাঁর দেশের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ককে সমর্থন করেছেন এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে ইউরোপের অন্যান্য অংশের তুলনায় বরং ইতিবাচক নজরে দেখেছেন। এর পাশাপাশি তিনি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সময় (অরবানের সঙ্গে) ইউক্রেনে ইউরোপের সহায়তার বিরোধিতা করেছেন। ডিসেম্বর মাসে তিনি পুতিনের সঙ্গে আলোচনা করার জন্য মস্কোতে একটি আকস্মিক সফরও করেছিলেন। ২০২৩ সালে ক্ষমতায় ফিরে আসার পর থেকে তিনি স্লোভাক বিদেশনীতিকে রাশিয়ার পক্ষে চালিত করেছেন। এ ভাবে তিনি রাশিয়ার সঙ্গে তার দেশের সম্পর্ককে বিপন্ন না করার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, যা পরিবহণ চুক্তির সমাপ্তির ফলে ঘটতে পারে। এখানে লক্ষ্যণীয় যে ফিকো প্রথম স্লোভাক প্রধানমন্ত্রী নন, যিনি মস্কোর সঙ্গে আরও ভাল সম্পর্কের প্রত্যাশী। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ভ্লাদিমির মেসিয়ারও রাশিয়ার দিকে ঝুঁকেছিলেন। ফিকোর ক্ষেত্রে পরিস্থিতি তাকে রাশিয়ার দিকে আরও বেশি করে ঠেলে দিয়েছে। ২০১৮ সালে অনুসন্ধানী সাংবাদিক জান কুচিয়াক এবং তাঁর বাগদত্তাকে হত্যার পর স্লোভাকিয়ায় একটি রাজনৈতিক সঙ্কদেখা দেয়। ইইউ একটি সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানায় এবং স্লোভাকিয়া জুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয়, যার ফলে ফিকো পদত্যাগ করেন। শরণার্থীদের বিষয়ে তাঁর অবস্থান এবং মূল্যবোধের বিষয়ে ইইউর সমালোচনার মতো অন্যান্য কারণ আসলে ফিকোকে তাঁর ইউরোপীয় অংশীদারদের চেয়ে রাশিয়ার সঙ্গে বেশি যোগাযোগ করতে সাহায্য করেছে।

দ্বিতীয়ত, রুশ গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়া এমন একটি বাধা তৈরি করছে, যার লজিস্টিকাল এবং আর্থিক দিকও রয়েছে। প্রথমটির ক্ষেত্রে, দেশটিকে ৪.৩ বিলিয়ন ঘনমিটার গ্যাসের পরিমাণ পূরণ করার জন্য নতুন সরবরাহকারী খুঁজে বের করতে হবে। কঠোর আলোচনার মাধ্যমে নতুন চুক্তিতে পৌঁছতে হবে। এর ফলে স্লোভাকিয়ার জন্য গ্যাসের দাম বৃদ্ধি পাবে, যা আসলে এই বাধার আর্থিক দিক। ফিকো যুক্তি দিয়েছে যে, বিকল্প পথ অনুসন্ধানের ফলে স্লোভাকিয়া প্রতি বছর প্রায় ১ বিলিয়ন ইউরো অতিরিক্ত খরচ করবে এবং দেশটি তার অঞ্চল দিয়ে ইউরোপের বাকি অংশে গ্যাস সরবরাহের অনুমতি দিয়ে ট্রানজিট ফি বা পরিবহণ সংক্রান্ত খরচ বাবদ প্রতি বছর প্রায় ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার হারাবে।

কোভিড-১৯ অতিমারি এবং জীবনযাত্রার ব্যয় সঙ্কটের সাথে লড়াই করা পূর্ববর্তী প্রশাসনের পরে স্থিতিশীল শাসনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ফিকো  ক্ষমতায় ফিরে আসেন।

বর্তমানে, আর্থিক অবক্ষয় স্লোভাকদের জন্য উদ্বেগের বিষয়। তবে সব সমস্যাই এক রকম নয়। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, স্লোভাকিয়ায় রাজনৈতিক মেরুকরণ আরও গভীর হয়েছে। কোভিড-১৯ অতিমারি এবং জীবনযাত্রার ব্যয় সঙ্কটের সাথে লড়াই করা পূর্ববর্তী প্রশাসনের পরে স্থিতিশীল শাসনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ফিকো ক্ষমতায় ফিরে আসেন। নির্বাচনের সময় সমীক্ষাগুলি ইঙ্গিত দেয় যে, জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক যুদ্ধে রাশিয়াকে সমর্থন করেছিল এবং এই পর্যায়ে ইউক্রেনের প্রতি সামরিক সহায়তা বন্ধ করার বিষয়ে প্রতিশ্রুতি কার্যকর হয়েছিল। তবে, ১০ জানুয়ারি গ্যাস ট্রানজিট চুক্তির প্রতি ফিকোর সমর্থন এবং ফিকোর রুশপন্থী অবস্থানের বিরুদ্ধে হাজার হাজার মানুষ রাজধানী ব্রাতিস্লাভায় মিছিল করে।

সম্ভাব্য বিকল্প

স্বল্পমেয়াদি গ্যাসের চাহিদা পূরণের জন্য নভেম্বর মাসে স্লোভাকিয়ার প্রধান গ্যাস ক্রেতা, এসপিপি (স্লোভাকিয়ায় রুশ গ্যাসের বৃহত্তম ক্রেতা) আজারবাইজান থেকে প্রাকৃতিক গ্যাস কেনার জন্য একটি স্বল্পমেয়াদি চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। জানুয়ারি মাসের গ্যাসের চাহিদা দেশের অভ্যন্তরীণ ভাণ্ডার ব্যবহার করে পূরণ করা হয়েছিল। এই বছরের ২০ জানুয়ারি ফিকো এরদোগানের সঙ্গে দেখা করে এবং তুরস্কের মাধ্যমে টার্কস্ট্রিম পাইপলাইনের মাধ্যমে রুশ গ্যাস আমদানি নিয়ে আলোচনা করেন। এই পাইপলাইন স্লোভাকিয়ায় প্রবেশের আগে তুর্কিয়ে থেকে হাঙ্গেরি পর্যন্ত বিস্তৃত১ ফেব্রুয়ারি স্লোভাকিয়া আবার রুশ গ্যাস গ্রহণ করতে শুরু করে, যখন এসপিপি টার্কস্ট্রিমের মাধ্যমে এটি আমদানি শুরু করে। এসপিপি এপ্রিলের মধ্যে গ্যাস আমদানি দ্বিগুণ করার পরিকল্পনা করেছে। কারণ বর্তমান আমদানি অপ্রতুল।

তবে, অন্যান্য দেশ থেকে বিকল্প ভাবে গ্যাস বিকল্প পথ দিয়ে রাশিয়ান গ্যাস আমদানির খরচ কেবল অত্যধিক বেশিই নয়, বরং তা গ্যাস পরিবহণে স্লোভাকিয়ার ভূমিকাতেও পরিবর্তন আনে, যা স্লোভাকিয়ার গ্যাস রাজস্বের উপর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলবে কারণ ইউরোপ ২০২৭ সালের মধ্যে সম্পূর্ণ রূপে রুশ গ্যাস ব্যবহার থেকে সরে আসার পরিকল্পনা করছে।

ইউক্রেনের মধ্য দিয়ে রুশ গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করার দুমাস পর ইউক্রেনের সংঘাতের আলোচনা বদলে গিয়েছে। ১২ ফেব্রুয়ারি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যে ৯০ মিনিটের ফোনালাপের পর - যা সম্ভাব্য ভাবে মার্কিন-রাশিয়া সম্পর্কের পুনরুদ্ধার করে - সংঘাতের অবসান ঘটাতে শান্তির আগ্রহ বৃদ্ধি পেয়েছে (এর মধ্যে রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের সম্ভাবনাও অন্তর্ভুক্ত ছিল)। সুতরাং শেষ পর্যন্ত স্লোভাকিয়ার অবস্থান অন্যান্য ইউরোপীয় দেশেচেয়ে আলাদা। ফিকো যুদ্ধবিরতি দাবি করেছেন এবং ইউক্রেনের মধ্য দিয়ে গ্যাস পরিবহণ পুনরায় চালু করার আহ্বান জানিয়েছেন। সর্বোপরি, তিনি ইউক্রেনের বিষয়ে ইউরোপীয় কাউন্সিলের সিদ্ধান্তগুলি যদি স্লোভাকিয়ার স্বার্থের বিরুদ্ধে যায়, তা হলে ভেটো প্রদানেরও হুমকি দিয়েছেন। ভূ-রাজনৈতিক ঝুঁকি কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইউক্রেনের মধ্য দিয়ে গ্যাস পরিবহণ পুনরায় শুরু করার সম্ভাবনা আলোচনার ক্ষেত্রে একটি সম্ভাব্য বিষয় হতে পারেতবে স্বল্প থেকে মধ্যমেয়াদে একটি চুক্তি সম্পন্ন হওয়ার সম্ভাবনা অত্যন্ত ক্ষীণ বলে মনে হচ্ছে।

 


অভিষেক খাজুরিয়া জওহরলাল নেহরু ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর ইউরোপিয়ান স্টাডিজের জুনিয়র রিসার্চ ফেলো।

রাজোলি সিদ্ধার্থ জয়প্রকাশ অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ প্রোগ্রামের রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.

Authors

Abhishek Khajuria

Abhishek Khajuria

Abhishek Khajuria is a Research Intern with the Strategic Studies Programme at the Observer Research Foundation ...

Read More +
Rajoli Siddharth Jayaprakash

Rajoli Siddharth Jayaprakash

Rajoli Siddharth Jayaprakash is a Research Assistant with the ORF Strategic Studies programme, focusing on Russia's domestic politics and economy, Russia's grand strategy, and India-Russia ...

Read More +