-
CENTRES
Progammes & Centres
Location
মাঙ্কিপক্স আরও ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে অধিকতর সমন্বিত আন্তর্জাতিক প্রয়াস প্রয়োজন।
মাঙ্কিপক্সের প্রাদুর্ভাব: আমরা কতটা প্রস্তুত?
মাঙ্কিপক্স ভাইরাসের সর্বাধিক ব্যাপক প্রাদুর্ভাবটি বর্তমানে বিদ্যমান। ২০২২ সালের ১৩ মে থেকে ৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ৫৩,০০০-এরও বেশি সংক্রমণের ঘটনা এবং ১৫ জনের মৃত্যুর খবর নথিভুক্ত হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) ২০২২ সালের জুলাই মাসে মাঙ্কিপক্সকে আন্তর্জাতিক উদ্বেগের নিরিখে একটি জনস্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে। ১০০টি দেশে সংক্রমণের ঘটনা দেখা গিয়েছে, যার মধ্যে অনেকেই প্রথম বারের মতো এই প্রাদুর্ভাবের সম্মুখীন হয়েছে। ২০২২ সালের ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ভারতে ১১টি সংক্রমণ এবং ১টি মৃত্যুর ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে। এমনকি দৈনিক সংক্রমণের গড় সংখ্যা হ্রাস পেলেও, বিশ্বব্যাপী সেই পরিসংখ্যানের বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে পরীক্ষার সংখ্যা সীমিত (পরীক্ষার সুযোগ এবং সেই সঙ্গে পরীক্ষা করার সদিচ্ছা), টিকা থাকলেও অবিলম্বে তা উপলব্ধ হওয়ার সম্ভাবনা কম এবং অ্যান্টিভাইরালের মতো ওষুধ এখনও অনুমোদিত নয় এবং ব্যাপক ভাবে উপলব্ধ নয়। ভারতে ভি আর ডি এল নেটওয়ার্ক (ভাইরাস রিসার্চ অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক ল্যাবরেটরিজ) মাঙ্কিপক্সের জন্য আণবিক পরীক্ষানিরীক্ষা চালাচ্ছে এবং তার পরে নমুনাগুলি নিশ্চিত করার জন্য পুনের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজিতে (এন আই ভি) পাঠানো হচ্ছে। বাণিজ্যিক ডায়াগনস্টিক কিটগুলির নির্মাণ কাজ চলছে এবং তা দেশে পাওয়া যায়।
মাঙ্কিপক্স বহুলাংশে একটি স্বসীমিত রোগ এবং বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সংক্রমিত ব্যক্তি বা প্রাণীর ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে আসার ফলে এটি ছড়িয়ে পড়ে। এটি মানুষ এবং প্রাণী উভয়কেই সংক্রমিত করে বলে জানা গিয়েছে – মানুষ / প্রাণী থেকে প্রাণী এবং প্রাণী থেকে মানুষের সংক্রমিত হওয়ার ঘটনা সামনে উঠে এসেছে। সংক্রমিত ব্যক্তিদের মধ্যে জ্বর, ব্যথা এবং ক্লান্তির উপসর্গ এবং তার পরবর্তী সময়ে বেদনাদায়ক র্যাশের মতো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। এই র্যাশের সংখ্যা, বিন্যাস এবং অবস্থান পরিবর্তিত হতে পারে। বর্তমান প্রাদুর্ভাবে বেশিরভাগ রোগীর মধ্যেই এই র্যাশ দেখা গিয়েছে এবং কারও কারও কখনও জ্বরের লক্ষণ দেখা যায়নি। এগুলি হাত, মুখ, পা, শরীর এবং মলদ্বার ও যৌনাঙ্গের চারপাশ-সহ শরীরের বিভিন্ন অংশে দেখা দিতে পারে। রোগ থেকে সেরে উঠতে সাধারণত দুই থেকে চার সপ্তাহ সময় লাগে, কিন্তু র্যাশ থেকে মামড়ি শুকিয়ে খসে না-পড়া পর্যন্ত রোগীর থেকে সংক্রমণের সম্ভাবনা থেকে যায়।
মাঙ্কিপক্স বহুলাংশে একটি স্বসীমিত রোগ এবং বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সংক্রমিত ব্যক্তি বা প্রাণীর ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে আসার ফলে এটি ছড়িয়ে পড়ে।
মাঙ্কিপক্স হল পক্সভাইরাস গোত্রের একটি ডাবল স্ট্র্যান্ডেড ডি এন এ ভাইরাস, যার দু’টি ভাগ হল – ক্লেড ১ এবং ক্লেড ২। এই ক্লেডগুলির প্রভাব যথাক্রমে মধ্য আফ্রিকা এবং পশ্চিম আফ্রিকার বিভিন্ন অঞ্চলে লক্ষ করা গিয়েছে। ঐতিহাসিক প্রাদুর্ভাবের তথ্য থেকে জানা যায়, ক্লেড ১-এর সংক্রমণ ক্ষমতা বেশি এবং তা ক্লেড ২-এর চেয়ে বেশি গুরুতর। বর্তমান প্রাদুর্ভাবের জিনোমগুলি সাবক্লেড ২বি-এর অন্তর্গত।
বহু দশক ধরে মাঙ্কিপক্সকে একটি সম্ভাব্য জৈবিক শঙ্কা হিসেবে বিবেচিত করা হয়েছে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৎপরতায় সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে টিকা এবং অ্যান্টিভাইরাল নির্মাণের কাজ চলছে। মাঙ্কিপক্স গুটিবসন্ত ভাইরাসের (ভেরিওলা ভাইরাস) সঙ্গে সম্পর্কিত, তবে এটি কম সংক্রমণযোগ্য এবং অপরটির তুলনায় কম গুরুতর রোগের কারণ বলে বিবেচিত। ১৯৭০-এর দশকে গুটিবসন্ত নির্মূলের প্রচেষ্টার সময় দেখা গেছিল, গুটিবসন্তের টিকা মাঙ্কিপক্স (পর্যবেক্ষণমূলক গবেষণা থেকে ৮৫ শতাংশ) এবং কাউপক্স প্রতিরোধে সক্ষম। সম্ভবত যাঁদের গুটিবসন্তের টিকা দেওয়া হয়েছিল (১৯৮০ সালে এটি নির্মূলের আগে), তাঁরা মাঙ্কিপক্স থেকে কিছুটা হলেও সুরক্ষা পাবেন। যদিও এই পারস্পরিক সুরক্ষার মাত্রাটি এখনও স্পষ্ট নয়। র্যাশ ও অন্যান্য উপসর্গ একই রকমের হলেও মাঙ্কিপক্স ভেরিসেলা / চিকেনপক্স / দানাবসন্ত সৃষ্টিকারী ভেরিসেলা-জোস্টার ভাইরাসের (হিউম্যান আলফাভাইরাস ৩) সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। উভয়ই ডি এন এ ভাইরাস হলেও জীবনচক্রের নিরিখে তারা একে অন্যের চেয়ে এতটাই আলাদা যে পারস্পরিক সুরক্ষা প্রদানের বিষয়টি প্রায় অসম্ভব।
কম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াসম্পন্ন তৃতীয় প্রজন্মের গুটিবসন্ত টিকা ইমভেনেক্সকে (বাভারিয়ান নর্ডিক দ্বারা নির্মিত, যাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জিনিওস বলা হয়) ব্যতিক্রমী পরিস্থিতিতে মাঙ্কিপক্সের বিরুদ্ধে ব্যবহারের জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। কারণ রোগের বিরল প্রকৃতির কারণে টিকা সম্পর্কিত কিছু তথ্য শুধু মাত্র অ-মানব গবেষণা থেকেই উপলব্ধ। পুরনো প্রজন্মের গুটিবসন্ত টিকার তুলনায় তুলনামূলক ভাবে সেফটি প্রোফাইল হওয়ার কারণে বা প্রতিক্রিয়া সুরক্ষিততর হওয়ায় বর্তমান প্রাদুর্ভাবের নিরিখে এই টিকাটিকেই সকলেই ব্যবহার করছেন।
বিশ্বব্যাপী টিকার প্রাপ্যতার পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কাছে জেনেভা এবং নেদারল্যান্ডসে তৃতীয় প্রজন্মের গুটিবসন্ত টিকার পাশাপাশি পূর্ববর্তী প্রজন্মের বেশ কয়েকটি গুটিবসন্ত টিকাও মজুত রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে জিনিওসের স্টক পাইল বা বৃহত্তম মজুত (২ কোটি টিকা) থাকলেও সেগুলির বেশির ভাগই মেয়াদোত্তীর্ণ এবং সেগুলির প্রতিস্থাপন করা হয়নি। এর পাশাপাশি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আরও প্রায় ২০ লক্ষ টিকার বরাত দিয়েছে, যা ২০২২ সালে পাওয়া যাবে। ইউরোপীয় ইউনিয়নও দ্য হেলথ ইমার্জেন্সি প্রিপেয়ার্ডনেস অ্যান্ড রেসপন্সের (এইচ ই আর এ) মাধ্যমে এক লক্ষেরও বেশি ইমভেনেক্স টিকার বরাত দিয়েছে। এ হেন পদক্ষেপের উদ্দেশ্য টিকার সঞ্চয় সুরক্ষিত করা এবং নরওয়ে, আইসল্যান্ড ও অন্য সদস্য দেশগুলির ব্যক্তিগত চাহিদার ভিত্তিতে টিকার বণ্টন করা।
১৯৭০-এর দশকে গুটিবসন্ত নির্মূলের প্রচেষ্টার সময় দেখা গেছিল, গুটিবসন্তের টিকা মাঙ্কিপক্স (পর্যবেক্ষণমূলক গবেষণা থেকে ৮৫ শতাংশ) এবং কাউপক্স প্রতিরোধে সক্ষম।
যদিও সংক্রমণ, রোগের প্রকৃতি (উচ্চ সংক্রমণ, কম মৃত্যু হার) এবং টিকার অভাবের কারণে, গণটিকাকরণের সুপারিশ করা সম্ভব নয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সি ডি সি মাঙ্কিপক্স বা সম্পর্কিত ভাইরাস সংক্রান্ত পরীক্ষানিরীক্ষায় গবেষণারত পরীক্ষাগার কর্মী এবং স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের জন্য প্রি-এক্সপোজার প্রোফাইল্যাক্সিসের সুপারিশ করেছে। ইউরোপের অন্য কয়েকটি সংস্থাও উচ্চ সংক্রমণপ্রবণ গোষ্ঠী, বিশেষ করে সমকামী এবং স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদানকারী কর্মীদের জন্য টিকা প্রদানের পরামর্শ দিয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সি ডি সি এবং ইউরোপীয় সি ডি সি বর্তমানে রোগের অগ্রগতি রোধ করতে বা তার তীব্রতা কমাতে একটি পদ্ধতি হিসেবে পোস্ট-এক্সপোজার স্মলপক্স টিকা সুপারিশ করেছে।
মাঙ্কিপক্সের চিকিৎসাগত মোকাবিলার লক্ষ্য হল উপসর্গগুলির উপশম এবং জটিলতার প্রতিরোধ করা। গুটিবসন্তের চিকিৎসার জন্য তৈরি করা (এফ ডি এ অনুমোদিত) অন্তত দু’টি অ্যান্টিভাইরাল মাঙ্কিপক্স চিকিৎসার জন্য ব্যবহার করার কথা ভাবা হচ্ছে। টেকোভিরিম্যাট (ওরফে টিপক্স) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সি ডি সি দ্বারা মাঙ্কিপক্সের জন্য এক্সপ্যান্ডেড অ্যাক্সেস ইনভেস্টিগেশনাল নিউ ড্রাগ প্রোটোকলের আওতায় বিবেচিত হয়েছে এবং প্রাণী অধ্যয়নের ফলাফলের ভিত্তিতে ২০২২ সালে ইউরোপীয় মেডিসিনস এজেন্সি (ই এম এ) দ্বারা মাঙ্কিপক্সের বিরুদ্ধে ব্যবহারের জন্য লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। এর ব্যবহার কয়েকটি কেস স্টাডিতে নথিভুক্ত করা হয়েছে। অন্য অ্যান্টিভাইরাল ব্রিন্সিডোফোভিরও মাঙ্কিপক্সের চিকিৎসার কাজে ব্যবহার করা হয়েছে। এই ওষুধগুলিকে পুনর্মূল্যায়ন করার জন্য বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ব্রিটেন উভয় দেশেই বৃহত্তর গবেষণার পরিকল্পনা করা হয়েছে। বর্তমানে এই অ্যান্টিভাইরালগুলির উপলব্ধতা সীমিত।
বর্তমান প্রাদুর্ভাব একাধিক কারণে মনোযোগের দাবি রাখে: ভাইরাসের জন্য একটি দীর্ঘ ইনকিউবেশন পিরিয়ড বা উন্মেষপর্ব, যেখানে সংক্রমিত হওয়ার তিন সপ্তাহ পরে লক্ষণ দেখা দিতে পারে; ভাইরাল স্খলনের দীর্ঘ সময় এবং সংশ্লিষ্ট সংক্রমকতা (১-৩ সপ্তাহ); পরীক্ষায় অনীহা বা পরীক্ষার অলভ্যতা; অস্বাভাবিক ক্লিনিক্যাল উপস্থাপনা; টিকা এবং অ্যান্টিভাইরালের ঘাটতি; এবং নবজাতক, শিশু এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাহীন ব্যক্তিদের মধ্যে গুরুতর সংক্রমণের ঝুঁকি।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সি ডি সি মাঙ্কিপক্স বা সম্পর্কিত ভাইরাস সংক্রান্ত পরীক্ষানিরীক্ষায় গবেষণারত পরীক্ষাগার কর্মী এবং স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের জন্য প্রি-এক্সপোজার প্রোফাইল্যাক্সিসের সুপারিশ করেছে।
মাঙ্কিপক্স ভাইরাস ডি এন এ সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, নেদারল্যান্ডস, ইতালি এবং ফ্রান্সের মতো একাধিক দেশের দূষিত জলে শনাক্ত করা গিয়েছে। সংক্রমিত ব্যক্তি / প্রাণীর বিকল্প হিসেবে দূষিত জলে ভাইরাসের পরিমাণ নির্ণয় প্রাদুর্ভাবের তীব্রতা পরিমাপের জন্য একটি সহজ উপায়।
বর্তমানে মূল বিবেচ্য বিষয়টি হল একটি অনাবিষ্কৃত স্থানীয় প্রাদুর্ভাব যা শনাক্তকরণের আগেই বিপুল সংখ্যক মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। এর ফলে রোগ নিয়ন্ত্রণ আরও কঠিন হয়ে পড়বে। সংক্রমিত ব্যক্তির আচরণের পাশাপাশি ভাইরাসের বৈশিষ্ট্যের পরিবর্তন (ঐতিহাসিক প্রাদুর্ভাবের তুলনায়) উভয়ই বর্তমান প্রাদুর্ভাবের গতিপথকে প্রভাবিত করবে। সচেতনা বৃদ্ধির উপযুক্ত প্রচার এবং প্রাদুর্ভাবের উপর অবিরাম নজরদারি তাই অপরিহার্য।
মতামত লেখকের নিজস্ব।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.
Dr. Chitra Pattabiraman is a virologist/molecular biologist who uses genomic tools (sequencing) to identify and characterize pathogens. She obtained her Integrated MSc- PhD in Life ...
Read More +