Author : Sohini Nayak

Expert Speak Raisina Debates
Published on Apr 26, 2022 Updated 18 Days ago

অনেক বাধা কাটিয়ে এমসিসি-নেপাল কমপ্যাক্টে অবশেষে সবুজ সঙ্কেত পেয়েছে।

মিলেনিয়াম চ্যালেঞ্জ কর্পোরেশন (এমসিসি)–এর নেপাল কমপ্যাক্ট অবশেষে অনুমোদিত
মিলেনিয়াম চ্যালেঞ্জ কর্পোরেশন (এমসিসি)–এর নেপাল কমপ্যাক্ট অবশেষে অনুমোদিত

মিলেনিয়াম চ্যালেঞ্জ কর্পোরেশন (এমসিসি) হল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি দ্বিপাক্ষিক বৈদেশিক সহা্যতা সংস্থা,  যা মার্কিন কংগ্রেস তৈরি করেছিল ২০০৪ সালে। এই কর্মসূচির প্রাথমিক লক্ষ্য হল নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলিকে ভাল রকমের সহায়তা প্রদান করা, তাদের দারিদ্র্য হ্রাস করা ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিয়ে আসা। বিভিন্ন ক্ষেত্র, যেমন শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সড়ক ও পরিবহন পরিকাঠামো, জ্বালানি ও কৃষিকে উন্নয়নের সুনির্দিষ্ট স্তম্ভ হিসেবে ধরে এই কর্মসূচিতে সেগুলির জন্য সুদ-মুক্ত তহবিলের সাথেআর্থিক সহায়তার দেওয়া হয়। ২০১৯ সাল থেকে এমসিসি ২৯টি দেশকে ১,৩০০ কোটি মার্কিন ডলার মূল্যের ৩৭টি কমপ্যাক্ট অনুমোদন করেছে।

স্থলবেষ্টিত হিমালয়ের দেশ নেপাল এমন অংশীদারিত্বের একটি প্রস্তাব পায়, যদিও  দীর্ঘমেয়াদে তার উপযোগী ফলাফলের বিষয়ে সিদ্ধান্তহীনতার কারণে বিষয়টি বিলম্বিত হচ্ছিল। বিষয়টি নীতিনির্ধারণী বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছে, কারণ দক্ষিণ এশিয়ায় নেপালের ভূ-কৌশলগতভাবে আপাত নির্জোট অবস্থান এর ফলে বিপন্ন হয়েছে, যেহেতু এই প্রস্তাবটি সরাসরি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যোগাযোগের ইঙ্গিত দেয়। তবে যেহেতু কম্প্যাক্টের জন্য যোগ্যতা অর্জনকারী প্রথম কয়েকটি দেশের মধ্যে নেপাল একটি ছিল, যারা ২০টির মধ্যে ১৬টি নীতি সূচক পূরণ করেছিল, তাই দেশটিতে বছরের পর বছর বিতর্ক ও আলোচনা চলছিল। সেইসঙ্গেই এই বিষয়টিকে ব্যবহার করা হচ্ছিল নিজেদের সুবিধার জন্য আন্তঃদলীয় রাজনৈতিক দ্বন্দ্বকে উৎসাহিত করতে। বিষয়টি নিয়ে অনেক শঙ্কা ও জল্পনা-কল্পনা সত্ত্বেও নেপালের পার্লামেন্ট বছরের পর বছর বিলম্বের পর অবশেষে চুক্তিটি অনুমোদন    করেছে। এই বিষয়ে একটি ১২-দফা ব্যাখ্যামূলক ঘোষণাপত্র পেশ করা হয়েছিল, এবং তারপর এমসিসি অনুমোদিত হয়েছিল।

অস্বস্তিকর বোঝা

নেপালের পূর্ববর্তী শাসক দল, দেশের তৎকালী প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলির নেতৃত্বাধীন নেপাল কমিউনিস্ট পার্টি (এনসিপি), এমসিসি–র বিষয়ে বিভক্ত ছিল। এখানে উল্লেখ করা আবশ্যক যে এই দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় একটি পক্ষ হওয়ার প্রস্তাবটি প্রাথমিকভাবে সেই সময়ে এসেছিল যখন নেপালি কংগ্রেস (এনসি) দেশের নেতৃত্বে ছিল। এখানে উল্লেখ্য, কমপ্যাক্টের জন্য আবেদন করার প্রথম পদক্ষেপটি ছিল ২০১২ সালে, নেপালের ইউনিফাইড কমিউনিস্ট পার্টির (মাওবাদী) প্রধানমন্ত্রী বাবুরাম ভট্টরাইয়ের নেতৃত্বে, যা ২০১৪ সাল পর্যন্ত আটকে রাখা হয়েছিল, যতক্ষণ না নেপাল ন্যূনতম নীতির মানদণ্ড পূরণ করে।

এনসি আবার ক্ষমতায় ফিরে আসার পর এটিই ছিল দেশটির গ্রহণ করা প্রথম ইতিবাচক দ্বিপাক্ষিক অবস্থানগুলির মধ্যে একটি, যা নিয়ে সিপিএন ইউএমএল অনেক বিতর্ক তৈরি করেছিল। প্রকৃতপক্ষে, এমসিসি আনুষ্ঠানিকভাবে গৃহীত হওয়ার পর ওলি দ্রুততার সঙ্গে এই বিষয়টি নিয়ে ‘‌ইচ্ছাকৃত ভুল তথ্য প্রচার’‌ করা হয়েছিল বলে অভিযোগ করেছিলেন। তিনি বলেন, ‘‌‘‌‌বিতর্কটি এমনভাবে চলেছে যে তা নেপালি জাতির ক্ষমতা ও নেপালি আত্মসম্মানকে উপেক্ষা করেছে। তা দেশকে ভালোবাসেন এবং দেশের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির স্বপ্ন দেখেন এমন এক নেতার প্রতি সমগ্র সমাজে ঘৃণার মনোভাব ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল।‌’‌’‌ আবার নেপালের শ্রমিক ও কৃষক পার্টির চেয়ারম্যান নারায়ণ মান বিজ্জুকছের মতো নেতারাও আছেন, যাঁরা অভিযোগ করেছেন সিপিএন (মাওবাদী কেন্দ্র) চেয়ারম্যান পুষ্প কমল দাহাল ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অফ জাস্টিস–এর ক্রোধ থেকে নিজেকে রক্ষা করার জন্য চুক্তিতে সম্মত হয়েছেন। নেপালের গৃহযুদ্ধের সময়, যখন দাহাল ছিলেন একজন মাওবাদী বিদ্রোহী নেতা, তখন কয়েক হাজার লোকের মৃত্যুর পরে তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগের গিয়েছিল। পরে তিনি প্রধানমন্ত্রী হন।

এছাড়াও আর্থিক সুযোগ সত্ত্বেও দেশের বর্তমান আইনের সঙ্গে এমসিসি–র কম্প্যাক্টের সংঘাতের ক্ষেত্রে এমসিসি প্রাধান্য পাবে বলে কমপ্যাক্ট–এর ধারা নিয়েও নেপাল সতর্ক রয়েছে। কারণ তা জনগণের কাছে প্রতারণামূলক বলে মনে হয়েছিল।

নেপালের সাবেক যুগ্ম সচিব বৈকুন্ঠ আরিয়াল ও এমসিসি–র ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়াশিংটনে সাবেক অর্থমন্ত্রী জ্ঞানেন্দ্র বাহাদুর কারকি ও মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জন সুলিভানের উপস্থিতিতে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেন। এতে নেপালকে ৫০ কোটি মার্কিন ডলারের সাহায্য দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, যার মধ্যে ১৩ কোটি মার্কিন ডলার বিশেষ করে নেপালের সংযোগ ও জ্বালানি ক্ষেত্রের উন্নতির জন্য দেওয়ার কথা।

স্থায়ী কমিটির বৈঠক নির্বিঘ্নে শেষ হলেও গঠনমূলক কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছনো সম্ভব হয়নি। এমসিসি-র যাচাই-বাছাইয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ ছিল নেপালের ইন্দো-প্যাসিফিক যোগাযোগ,   নিয়ে মার্কিন-নেপাল ভুল বোঝাবুঝি ও সঠিক তথ্য আদান–প্রদানের অভাব। এই যোগাযোগের বিষয়টি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি ইন্দো-প্যাসিফিক মতবাদে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছিল। সেই উল্লেখটি নেপাল সরাসরি অস্বীকার করেছিল, এবং তার ভূ-কৌশলগত চিত্রের পক্ষেও তা অনুকূল ছিল না, কারণ এর আগে কোনও আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করা হয়নি। কিন্তু মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের দক্ষিণ এশিয়ার অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডেভিড জে রেঞ্জের ব্যাখ্যায় এমসিসি–কে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজিক রিপোর্টের একটি অংশ হিসাবে দেখানো হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে, এবং কমপ্যাক্টটি কীভাবে নেপালকে বিশ্বের সামনে উপস্থাপন করবে তা নিয়ে প্রশ্ন ও সংশয় তৈরি হয়। এদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক কর্মসূচির পাশাপাশি সামরিক সহায়তার বিপদও সব সময় লুকিয়ে থাকে, যা প্রতিবেশী দেশগুলির মধ্যে আশঙ্কা ও সংশয় তৈরি করেছে।

নেপালের ২০১৫ সালের অবরোধ ও ভূমিকম্প, কোভিড-১৯ সঙ্কট, এবং যা কখনও শেষ হবে না বলে মনে হচ্ছে তেমন নড়বড়ে রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে ধীরগতি হয়ে–পড়া অর্থনীতির বৃদ্ধির জন্য এই প্রাণশক্তির প্রয়োজন।

এমসিসি–কে যথাযথ স্বীকৃতি দেওয়ার পরেও নেপাল নিঃসন্দেহে অত্যন্ত সংবেদনশীল অবস্থানে রয়েছে। ভারত ও চিন দেশটির এবং তার উচ্চাকাঙ্ক্ষার উপর ঘনিষ্ঠ নজর রাখছে, এবং চিনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই)–এর মতো নানা ভাবে উন্নয়নের জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ প্রদান করছে। এই অবস্থায় এই বিষয়টি বেশ স্পষ্ট যে দেশটি সাবধানে পা ফেলছে। এছাড়াও আর্থিক সুযোগ সত্ত্বেও দেশের বর্তমান আইনের সঙ্গে এমসিসি–র কম্প্যাক্টের সংঘাতের ক্ষেত্রে এমসিসি প্রাধান্য পাবে বলে কমপ্যাক্ট–এর ধারা নিয়েও নেপাল সতর্ক রয়েছে। কারণ তা জনগণের কাছে প্রতারণামূলক বলে মনে হয়েছিল। এই বিষয়ে চিন বর্তমানে চুক্তির আনুষ্ঠানিক তাৎপর্য ব্যাখ্যা করে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে খুব স্পষ্টভাবে বলেছে যে তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘‌জবরদস্তিমূলক কূটনীতির’‌ বিরুদ্ধে, এবং এই বিষয়টিতে কোনও রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা অন্তর্ভুক্ত করা উচিত নয়।

উপসংহার

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও নেপালের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের জন্য এমসিসি কমপ্যাক্ট অপরিহার্য বলে বিবেচিত হতে পারে। এটি শুধু বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী দেশের সাথে নেপালের সম্পর্ক দৃঢ় করবে না, বরং দেশটিকে ২০৩০ সালের মধ্যে মধ্যম–আয়ের দেশের মর্যাদা অর্জন করতে সক্ষম করবে। এই বিষয়টি ইউএসএইড নথিতে উল্লেখ করা হয়েছে। সুনির্দিষ্টভাবে বললে নেপালের ২০১৫ সালের অবরোধ ও ভূমিকম্প, কোভিড-১৯ সঙ্কট, এবং যা কখনও শেষ হবে না বলে মনে হচ্ছে তেমন নড়বড়ে রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে ধীরগতি হয়ে–পড়া অর্থনীতির বৃদ্ধির জন্য এই প্রাণশক্তির প্রয়োজন। এই ভয়ানক পরিস্থিতিতে এমসিসি তার অর্থনৈতিক অবস্থা উন্নত করার এবং স্বনির্ভরতা অর্জনের একটি সুযোগ। এই চুক্তিতে উন্নয়নের উপযুক্ত অংশীদার হওয়ার ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাসঙ্গিকতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই অনুদান একদিকে একটি ৪০০-কেভি ট্রান্সমিশন লাইন তৈরি করতে সাহায্য করবে (যা শুধুমাত্র নেপালি পক্ষকে ভারতের সাথে বিদ্যুৎ বাণিজ্যের জন্য অর্থায়নের সুবিধা দেবে) এবং অন্যদিকে নেপালের পূর্ব-পশ্চিম মহাসড়কের আপগ্রেডেশনের জন্য ও সাহায্য করবে।

যদিও নেপালের জন্য অর্থনৈতিক ফ্রন্টে এই ঊর্ধ্বমুখী বক্ররেখার সর্বোত্তম ব্যবহারের এটাই উপযুক্ত সময়, তবুও তাকে তার নিকটবর্তী প্রতিবেশীদের সঙ্গে তার সম্পর্কের বিষয়েও যত্নশীল হতে হবে, যাতে দেশটি  কয়েক দশক ধরে যে সম্পর্ক লালনপালন করে আসছে তা বজায় রাখা যায়। বাফার হিসাবে তার গুরুত্ব বাদ দিলেও, একটি গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় হিসাবে তার কাছে আরও জরুরি বিষয় হল, দক্ষিণ এশীয় অঞ্চল এবং বর্ধিত প্রতিবেশের বাইরে উন্নত ভবিষ্যতের সম্ভাবনাগুলি খোঁজার জন্য নেপালের কাছে এখনই সবচেয়ে উপযুক্ত সময়।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.

Author

Sohini Nayak

Sohini Nayak

Sohini Nayak was a Junior Fellow at Observer Research Foundation. Presently she is working on Nepal-India and Bhutan-India bilateral relations along with sub regionalism and ...

Read More +