Author : Ayjaz Wani

Expert Speak Raisina Debates
Published on Oct 12, 2022 Updated 6 Days ago

চিনের বিশাল চাপ সত্ত্বেও প্রকাশিত রিপোর্টটি জিনজিয়াং প্রদেশে উইঘুর ও অন্য মুসলিম সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের কথা প্রকাশ করেছে।

ও এইচ সি এইচ আর রিপোর্ট: জিনজিয়াং–এ নৃশংসতার কথা ফাঁস
ও এইচ সি এইচ আর রিপোর্ট: জিনজিয়াং–এ নৃশংসতার কথা ফাঁস

তাঁর কার্যালয় ছাড়ার আগে ৩১ আগস্ট রাষ্ট্রপুঞ্জের বিদায়ী মানবাধিকার প্রধান মিশেল ব্যাশেলেট গণপ্রজাতন্ত্রী চিনের জিনজিয়াং উইঘুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে মানবাধিকার পরিস্থিতির উপর বহুপ্রতীক্ষিত রিপোর্টটি প্রকাশ করেন। রিপোর্টে বলা হয়েছে, সন্ত্রাসবাদ ও চরমপন্থাবিরোধী কৌশলের অজুহাতে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের নেতৃত্বে চিনা সরকার গুরুতরভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে। রিপোর্টে এ কথাও বলা হয়েছে যে জিনজিয়াংয়ের মুসলমানদের বিরুদ্ধে চিনা সরকারের অন্যায় আচরণ আন্তর্জাতিক অপরাধ, বিশেষ করে ‘‌মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ’‌ হিসাবে গণ্য হতে পারে। এতে চিনকে ‘‌নিজেদের স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত সকল ব্যক্তিকে (মুসলিম সংখ্যালঘুদের), তা সে তাঁরা বৃত্তিমূলক শিক্ষা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রেই থাকুন অথবা কারাগার বা অন্য যে কোনও বন্দিশালায়, তাঁদের মুক্তি দিতে’‌ ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। কূটনৈতিক চ্যানেলের মাধ্যমে চিনা কমিউনিস্ট পার্টির (সি সি পি) ক্রমবর্ধমান চাপ সত্ত্বেও ব্যাশেলেট এবং তাঁর অফিসের প্রকাশিত এই রিপোর্টটিকে বিশ্বব্যাপী সুশীল সমাজ গোষ্ঠী ও উইঘুর নির্বাসিতরা স্বাগত জানিয়েছেন।

যেখানে এক মিলিয়নেরও বেশি মুসলমান ‌কনসেনট্রেশন বা রি–এজুকেশন ক্যাম্পে আটক রয়েছেন, সেই জিনজিয়াং অঞ্চলে চিনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের (ও এইচ সি এইচ আর) মূল্যায়ন স্থগিত করার জন্য বেজিং কয়েক মাস ধরে ক্রমাগত কূটনৈতিক আক্রমণ এবং চাপের কৌশল ব্যবহার করেছে। চিন অভিযোগ করেছে যে রিপোর্টটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও অন্য পশ্চিমী দেশগুলির ‘‌প্রক্রিয়াজাত’‌, এবং ‘‌ মিথ্যা কথায় ভরা’‌। তারা ব্যাশেলেটকে মানসিকভাবে দলে টানার চেষ্টা করেছিল এই কথা বলে যে তিনি ২০২২ সালের মে মাসে জিনজিয়াং–এ ইউ এন এইচ সি আর প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেওয়ার সময় ব্যক্তিগতভাবে ‘‌প্রকৃত জিনজিয়াং–এর নিরাপদ ও স্থিতিশীল সমাজ’‌ প্রত্যক্ষ করেছেন।

জিনজিয়াং পরিস্থিতি নিয়ে ক্রমবর্ধমান  আন্তর্জাতিক উদ্বেগ ব্যাশেলেটকে এই বছরের মে মাসে ছয় দিনের জন্য চিন সফরে ইউ এন এইচ সি আর প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিতে প্রণোদিত করে।

জিনজিয়াং অঞ্চল সংবাদে এসেছে প্রেসিডেন্ট শি এবং সিসিপি–র বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও অন্য সমমনস্ক পশ্চিমী গণতন্ত্রগুলি সাংস্কৃতিক আগ্রাসনকে সহিংসভাবে সমর্থন করার—যার মধ্যে  গণহত্যা এবং মানবতার বিরুদ্ধে সবচেয়ে জঘন্য অপরাধ সামিল ছিল—অভিযোগ আনার পর। জিনজিয়াং পরিস্থিতি নিয়ে ক্রমবর্ধমান  আন্তর্জাতিক উদ্বেগ ব্যাশেলেটকে এই বছরের মে মাসে ছয় দিনের জন্য চিন সফরে ইউ এন এইচ সি আর প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিতে প্রণোদিত করে। প্রতিনিধি দলটি বিভিন্ন স্তরের মানুষের পাশাপাশি শিক্ষাবিদ, ব্যবসায়ী প্রতিনিধি, স্থানীয় কর্মকর্তা এবং সুশীল সমাজের সংগঠনগুলির সঙ্গে দেখা করেন। যদিও ব্যাশেলেট তাঁর সফরের সময় চিন ও সিসিপির প্রতি খুব নরম আচরণের জন্য কঠোর সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন, পরবর্তীতে ৩১ আগস্ট অফিস ছাড়ার আগে তিনি রিপোর্টটি প্রকাশ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।

জিনজিয়াং–এ মানবাধিকার

চিনের উত্তর–পশ্চিম প্রদেশ জিনজিয়াং–এর জনসংখ্যায় আদি উইঘুর এবং কাজাখ ও উজবেক অভিবাসী মুসলমানদের আধিপত্য ছিল। ১৯৪৯–এর পরে সিসিপি এই অঞ্চলের জনসংখ্যার এই ঘনত্ব কমানোর করার জন্য জিনজিয়াং–এ চিনা হানদের অভিবাসন বাড়াতে থাকে। অবশেষে স্থানীয় মুসলমানেরা নগণ্য সংখ্যালঘুতে পরিণত হন। রাজধানী উরমুচি ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র, যেমন কারামাই ও শিহেজির আশেপাশে, নতুন হান উপনিবেশ গড়ে উঠেছে। এই সব জায়গায় স্বাস্থ্য পরিষেবা, শিল্প ও শিক্ষাগত সুবিধা–সহ আধুনিক সুযোগসুবিধা রয়েছে। ধীরে ধীরে উইঘুর মুসলিমরা, যারা এই অঞ্চলের সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিল, তারা কৃষি ছাড়া অর্থনীতির সমস্ত ক্ষেত্রে প্রান্তিক হয়ে পড়ে। যেমন, উইঘুরদের ৮০ শতাংশেরও বেশি এখনও কৃষিক্ষেত্রে নিযুক্ত, যেখানে বেশিরভাগ হোয়াইট–কলার চাকরি হানদের হাতে চলে গিয়েছে। এমনকি কৃষি কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রেও উইঘুর কৃষকদের গড় আয় ১০৫ মার্কিন ডলার, যেখানে হানদের ৩৮৬ মার্কিন ডলার। এই একমুখী আর্থসামাজিক রূপান্তর সিনিফিকেশন ও সাংস্কৃতিক সীমাবদ্ধতার দিকে নিয়ে গেছে, এবং উইঘুরদের মধ্যে কেন্দ্রবিমুখী প্রবণতা বাড়িয়েছে।

রাজধানী উরমুচি ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র, যেমন কারামাই ও শিহেজির আশেপাশে নতুন হান উপনিবেশ গড়ে উঠেছে। এই সব জায়গায় স্বাস্থ্য পরিষেবা, শিল্প এবং শিক্ষাগত সুবিধা সহ আধুনিক সুযোগসুবিধা রয়েছে।

শি এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন

বর্ধিত অর্থনৈতিক শোষণ এবং বাস্তবায়িত জনসংখ্যাগত পরিবর্তন জাতিগত বিভেদের দিকে পরিচালিত করেছে, এবং তা মাঝে মাঝে সহিংস প্রতিবাদ উস্কে দিয়েছে, যাকে সিসিপি বিচ্ছিন্নতাবাদ ও সন্ত্রাসবাদ হিসাবে চিহ্নিত করেছে। অশান্ত অঞ্চলের উইঘুর এবং অন্য মুসলিম সংখ্যালঘুরা শি–র একনায়কত্বে একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পরিণত হয়েছিল। শি–র নির্দেশনায় জিনজিয়াংকে চিনের সবচেয়ে বেশি সামরিকীকৃত অঞ্চলে পরিণত করা হয়েছিল, যার বৈশিষ্ট্য ছিল হাই–টেক নিরাপত্তা, মানুষের উপর সর্বক্ষণ ডিজিটাল নজরদারি এবং সমস্ত স্থানীয় উইঘুরদের ডিএনএ প্রোফাইলিং। জিনজিয়াং শাসনের জন্য শি তিব্বতে সংখ্যালঘু–বিরোধী নীতির জন্য পরিচিত একজন সেনা–থেকে–রাজনীতিবিদ হয়ে ওঠা ব্যক্তি চেন কোয়ানগুওকে নিযুক্ত করেছেন। চেনের নীতির লক্ষ্য ছিল উইঘুর সাংস্কৃতির কেন্দ্র। কিছু পশ্চিমী গণতন্ত্র এই অঞ্চলে পরবর্তী নৃশংসতাকে গণহত্যা বলে নিন্দা করেছে। চিনা কর্তৃপক্ষ গণ–বন্দিশিবির এবং রাজনৈতিক মত চাপিয়ে দেওয়ার কর্মসূচি শুরু করেছে, এবং জিনজিয়াং–এর দুই–তৃতীয়াংশ মসজিদ ও অন্যান্য মুসলিম ধর্মীয় উপাসনালয় ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।

২০১৮ সালে জিনজিয়াং থেকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা গেছে যে ধর্মীয় চরমপন্থা এবং বিচ্ছিন্নতাবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করার অজুহাতে দশ লাখেরও বেশি মুসলমানকে পুনর্শিক্ষার জন্য বন্দি শিবিরে পাঠানো হয়েছিল। লম্বা দাড়িওয়ালা উইঘুর মুসলিমদের এবং বোরখা পরা মহিলা বা যাঁরা পরিবার পরিকল্পনার নিয়ম লঙ্ঘন করেছিলেন তাঁদের এই বন্দি শিবিরে পাঠানো হয়েছিল, এবং বাধ্য করা হয়েছিল সিসিপি–র প্রতি আনুগত্যের অঙ্গীকার করতে, ইসলাম ও তাঁদের সংস্কৃতির নিন্দা করতে, আর ম্যান্ডারিন ভাষা শিখতে। আপাত হিসাব অনুযায়ী বেজিং ১০৮ মিলিয়নেরও বেশি মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করে ১,২০০টি কনসেনট্রেশন ক্যাম্প নির্মাণ করেছে, যেখানে সিসিপি নির্যাতন, যৌন হিংসা, বলপূর্বক শ্রম, এবং বলপূর্বক বন্ধ্যাকরণ ও গর্ভপাত করে দমনমূলক সিনিসাইজেশন শুরু করেছে। এই সামগ্রিক নৃশংসতা উইঘুরদের স্বাভাবিক জনসংখ্যা বৃদ্ধির পতন ঘটিয়েছে, এবং কোভিড–১৯ অতিমারি চলাকালীন অনেকেই সিসিপি দ্বারা অবৈধ অঙ্গ সংগ্রহের শিকার হয়েছিলেন

লম্বা দাড়িওয়ালা উইঘুর মুসলিমদের এবং বোরখা পরা মহিলা বা যাঁরা পরিবার পরিকল্পনার নিয়ম লঙ্ঘন করেছিলেন তাঁদের এই বন্দি শিবিরে পাঠানো হয়েছিল, এবং বাধ্য করা হয়েছিল সিসিপি–র প্রতি আনুগত্যের অঙ্গীকার করতে, ইসলাম ও নিজেদের সংস্কৃতির নিন্দা করতে, আর ম্যান্ডারিন ভাষা শিখতে।

২০২০ সালের সেপ্টেম্বর শি উইঘুরদের উপর এই আক্রমণের প্রশংসা করে একে তুলে ধরেছিলেন এমন এক ‘‌সাফল্য’‌ হিসাবে যা সহিংস সন্ত্রাসবাদকে চূর্ণ করেছে এবং প্রদেশে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে এনেছে। যাই হোক, পশ্চিমী গণতন্ত্রগুলি অন্যায় হচ্ছে বলে সোরগোল করছিল। জিনজিয়াং–এ সিসিপি–র কর্মকাণ্ডকে ‘‌গণহত্যা‘‌ বলে অভিহিত করে কিছু পশ্চিমী নেতা এমনকি রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার কাউন্সিলের প্রেসিডেন্টের কাছে যৌথ চিঠি লিখেছিলেন সিসিপি–র নেতৃত্বে সংগঠিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের তদন্তের দাবিতে। তাঁরা বেজিং অলিম্পিক বয়কটেরও ডাক দিয়েছিলেন। মার্কিন সেনেট কিছু চিনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ২০২০ সালে উইঘুর হিউম্যান রাইটস পলিসি অ্যাক্ট পাস করেছে।

প্রেসিডেন্ট শি–র ভাবমূর্তি বাঁচাতে বেজিং এবং সমস্ত সিসিপি কূটনীতিক ইউ এন এইচ সি আর রিপোর্ট স্থগিত করার জন্য ব্যাপকভাবে লবি করেছিল। জুনের শেষের দিকে বেজিং জেনেভায় কূটনৈতিক মিশনের মধ্যে সমমনস্ক স্বৈরাচারী দেশগুলির, বিশেষ করে মুসলিম বিশ্বের, সমর্থন পাওয়ার জন্য একটি চিঠি প্রচার করে। চিঠিতে বলা হয়,‘‌‘‌মূল্যায়ন (জিনজিয়াংয়ের উপর) যদি প্রকাশিত হয় তাহলে মানবাধিকারের ক্ষেত্রে রাজনীতিকরণ এবং ব্লক সংঘর্ষ তীব্রতর হবে, ও এইচ সি এইচ  আর–এর বিশ্বাসযোগ্যতা ক্ষুণ্ণ হবে, এবং ও এইচ সি এইচ  আর ও সদস্য রাষ্ট্রগুলির মধ্যে সহযোগিতার ক্ষতি হবে।’‌’‌ চিন কিছু দেশকে ‘‌চিনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার’‌ চেষ্টার দায়ে অভিযুক্তও করেছে। রিপোর্টটি স্থগিত করার জন্য ব্যাপকভাবে লবি করা এবং চিনের অর্থনৈতিক প্রভাবের অপব্যবহার সত্ত্বেও ব্যাশেলেট তাঁর প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেছিলেন, এবং তাঁর মেয়াদের শেষ দিনে রিপোর্টটি প্রকাশ করেছিলেন। যাই হোক, প্রতিবেদনটি যুদ্ধরত চিনের জিনজিয়াং নীতিকে প্রভাবিত  করে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।

মতামত লেখকের নিজস্ব।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.

Author

Ayjaz Wani

Ayjaz Wani

Ayjaz Wani (Phd) is a Fellow in the Strategic Studies Programme at ORF. Based out of Mumbai, he tracks China’s relations with Central Asia, Pakistan and ...

Read More +