Author : Pallika Singh

Expert Speak India Matters
Published on Mar 09, 2022 Updated 4 Days ago

পথশিশুদের বিষয়টির একটি দীর্ঘ ইতিহাস আছে, এবং তবুও এখনও বিষয়টি প্রাপ্য নীতিগত মনোযোগ পায়নি।

পথশিশু: অবহেলাভরা আচরণ

Source Image: Josep Castell — Flickr/CC BY-NC-ND 2.0

পথশিশু: অবহেলাভরা আচরণ

রাষ্ট্রপুঞ্জ (ইউএন)–এর সংজ্ঞা অনুযায়ী পথশিশু হল সেই শিশুরা যারা রাস্তায় কাজ করছে বা বাস করছে, যাদের পরিবার রাস্তায় আছে বা যারা তাদের পরিবার থেকে পালিয়ে গিয়েছে এবং রাস্তায় বসবাস করছে। ভারতে তাদের সংখ্যা নিয়ে সাম্প্রতিক কোনও তথ্য নেই। ইউনিসেফ ২০০০ সালে বলেছিল ভারতে আনুমানিক ১ কোটি ৮০ লক্ষ পথশিশু রয়েছে, যা বিশ্বের সর্বোচ্চ। মৌলিক চাহিদা ও সুযোগ থেকে দূরে থাকা এই বাচ্ছারা শুধু পারিবারিক যত্ন ও সুরক্ষা থেকেই বঞ্চিত হয় না, নির্যাতন, অবহেলা ও মৃত্যুরও মুখোমুখি হয়। রাষ্ট্রপুঞ্জের শিশু অধিকার সম্মেলনে শোষণ ও পীড়ন থেকে সুরক্ষার অধিকার, যথাযথ উন্নয়ন নিশ্চিত করার জন্য পর্যাপ্ত জীবনযাত্রার মান ও পুষ্টির অধিকার, বেগার শ্রম থেকে সুরক্ষা, শিক্ষার অধিকার, দত্তকের এবং নাম ও জাতীয়তার অধিকারের কথা বলা হয়েছে। এই অধিকারগুলি ভারতের সংবিধানেও দেওয়া হয়েছিল। এই সব আইন ও প্রচেষ্টা সত্ত্বেও পথশিশুরা শিশুশ্রম, শিশুপাচার ও শোষণের শিকার হয়। অতিমারি চলাকালীন অর্থনৈতিক অবনতি, স্কুল বন্ধ হওয়া, এবং বিশ্ব জুড়ে বর্ধিত লকডাউনের সময় বাড়িতে আরও বেশি করে নিপীড়নকারী প্রাপ্তবয়স্কদের সংস্পর্শে আসার কারণে শিশুদের সামগ্রিক অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে। ইউনিসেফ ইন্ডিয়া রিপোর্ট ২০২০ অনুসারে, অতিমারি চলাকালীন স্কুল বন্ধ হওয়ার কারণে স্কুলছুটের হার বৃদ্ধির পাশাপাশি ২৮ কোটি ৬০ লক্ষ শিশুর শিক্ষা বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে। লকডাউন ও এর সম্প্রসারণ দরিদ্র ও সুযোগসুবিধা থেকে বঞ্চিত পরিবারগুলির প্রায় ৪ কোটি শিশুকে উল্লেখযোগ্য ভাবে প্রভাবিত করেছে, যেমন অভিবাসীদের শিশু, গ্রামাঞ্চলে খামার ও মাঠে কাজ করা শিশু, এবং পথশিশু।

অতিমারি চলাকালীন অর্থনৈতিক অবনতি, স্কুল বন্ধ হওয়া, এবং বিশ্ব জুড়ে বর্ধিত লকডাউনের সময় বাড়িতে আরও বেশি করে নিপীড়নকারী প্রাপ্তবয়স্কদের সংস্পর্শে আসার কারণে শিশুদের সামগ্রিক অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে।

রাস্তায় চ্যালেঞ্জ ও নীতিগত ত্রুটি

বেশি করে পথশিশু তৈরি হওয়ার সাধারণ কারণগুলি হল অর্থনৈতিক সঙ্কট ও চরম দারিদ্র্য, শিশুকে ছেড়ে চলে যাওয়া ও অকার্যকর পরিবার। একটি রিপোর্ট অনুসারে ৩৫ কোটি ৬০ লক্ষ বা ১৭.৫ শতাংশ শিশু চরম দারিদ্র্যের মধ্যে বাস করে। চরম দারিদ্র্যের অর্থ দিনপ্রতি ১.৯০ মার্কিন ডলারের কম। কাজেই, শিশুরা বিভিন্ন কারণের সংমিশ্রণের ফলে পথে নেমে আসে। বেকারত্ব, দারিদ্র্য, গৃহে হিংসা, পরিবার ভেঙ্গে যাওয়া, আশ্রয়ের অভাব, গ্রাম-শহর অভিবাসন, বন্যা, খরা বা অন্য কোনও দুর্যোগের কারণে বাস্তুচ্যুত হওয়াকে ক্রমবর্ধমান বিপদ ও বড় ধরনের অসম সমাজে সামাজিক বর্জনের কয়েকটি প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রায়শই শিশুদের রাস্তায় আশ্রয় নিতে উৎসাহিত করা বা বাধ্য করার পুশ ফ্যাক্টর হিসেবে বর্ণিত সমস্যাযুক্ত পরিবারগুলি সাধারণত ভিড়ে ঠাসা আবাসন পরিস্থিতির সঙ্গে লড়াই করে, যার ফলে স্বাস্থ্যসংক্রান্ত ঝুঁকি বেড়ে যায় এবং মৌলিক পরিষেবাগুলি থেকে তারা বঞ্চিত হয়। পরিবারের মধ্যে অস্থিতিশীল ও হিংসাত্মক পরিস্থিতি শিশুদের সঙ্গে পারিবারিক সংযোগকে দুর্বল করে দিতে পারে, তাদের স্কুলে যাওয়া ব্যাহত করতে পারে, তাদের শিক্ষাগত ও স্কুলনির্ভর কর্মক্ষমতা দুর্বল করে দিতে পারে, তাদের বন্ধুত্ব ও অন্যান্য সম্পর্ককে প্রভাবিত করতে পারে, এবং তারা যে স্কুলে যায় এবং যে সম্প্রদায়ে বাস করে সেগুলির সঙ্গেও তাদের সংযোগ দুর্বল করে দিতে পারে। পথে ঠেলে দেওয়ার অন্য কারণগুলির মধ্যে রয়েছে এইচআইভি/এডস ও কুষ্ঠের মতো রোগ, বাল্যবিবাহ ও জোর করে বিয়ের মতো ক্ষতিকারক প্রথা, এবং যুদ্ধ ও অভ্যন্তরীণ স্থানচ্যুতির মতো সামাজিক ঘটনা।

বেকারত্ব, দারিদ্র্য, গৃহে হিংসা, পরিবার ভেঙ্গে যাওয়া, আশ্রয়ের অভাব, গ্রাম-শহর অভিবাসন, বন্যা, খরা বা অন্য কোনও দুর্যোগের কারণে বাস্তুচ্যুত হওয়াকে ক্রমবর্ধমান বিপদ ও বড় ধরণের অসম সমাজে সামাজিক বর্জনের কয়েকটি প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

বিষযটি নিয়ে নির্ভরযোগ্য তথ্যের কোনও উৎসও নেই, প্রাপ্যতাও নেই, বিশদ কোনও সমীক্ষাও করা হয়নি। এর ফলে সমস্যাটিকে কতটা গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে তা নিয়েও উদ্বেগ দানা বাঁধে। সামাজিক ভাবে ক্ষতিকর এই ঘটনার ব্যাপকতা কোথাও পরিমাপ করা হয় না, যার ফলে তাদের কল্যাণে নীতি প্রণয়ন বা কর্মসূচির বাস্তবায়নও হয় না। এনজিও দ্বারা করা সমস্ত সমীক্ষা বা হিসেব ভিন্ন ভিন্ন মাত্রার ভিন্ন ভিন্ন তথ্য নিয়ে আসে। ভারতে রাস্তায় বসবাসকারী শিশুদের সংখ্যা গণনার দায়িত্ব কোনও সরকারি সংস্থার হাতে নেই। দিল্লি সরকার পথশিশুদের সংজ্ঞা ঠিক করার জন্য ও বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়া ও নির্দেশিকা তৈরির জন্য একটি নীতি নথি নিয়ে এসেছিল, যার লক্ষ্য ছিল শিশু কল্যাণ কমিটিগুলিকে আইনি পদক্ষেপ করার ক্ষমতা দেওয়া। কিন্তু সবই নিষ্ফল হয়েছে। ২০২১ সালের জুনে যে নীতিটি তৈরি হয়েছিল, তাতে কারা ঠিক সুবিধা পাবে তা নিয়ে এখনও অনেক প্রশ্ন আছে। এই নথিতে পথশিশুদের উদ্ধার ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা, তাদের স্বাস্থ্য ও পরিচ্ছন্নতা সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য ’‌বাল সম্বাদ’‌–এর মতো প্রকল্প, এবং ১৮ বছরের কম বয়সী শিশুদের সামগ্রিক সুস্থতার জন্য ‘‌সূর্যোদয়’‌ প্রকল্পর মতো বিষয় অন্তর্ভুক্ত ছিল। এই নীতিতে পথশিশুদের সিভিল ডিফেন্স স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে প্রশিক্ষণ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে, যা মোটেই পথশিশুদের বিপদের পুরো দৃশ্যকল্প বা তার সমাধানগুলির সঙ্গে খুব একটা যুক্ত নয়। কারণ এই শিশুরা এখনও রাস্তায় তাদের মৌলিক প্রয়োজনের জন্য লড়াই করে। প্রভাব–নির্দেশকের (ইম্প্যাক্ট ইন্ডিকেটর) মাধ্যমে তথ্য উপলব্ধ না–হওয়া পর্যন্ত, এবং নীতি থেকে প্রকৃত সুবিধাভোগীরা উপকৃত না হলে, কোনও কর্মসূচিই কার্যকর নয়। সরকার দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাসকারী মানুষের তথ্য দেয়;‌ কিন্তু রাস্তায় দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাসকারী শিশুদের, তাদের রোগ, অপুষ্টি, আসক্তি বা সংঘটিত অপরাধের, অথবা তাদের শোষণের বিষয়ে কোনও তথ্যই দেয় না।

নিজের বৃহৎ যুব জনসংখ্যা এবং এই জনসংখ্যাগত লাভের ইতিবাচক প্রভাবগুলি ভারতকে একটি ক্রমবর্ধমান অর্থনীতির দিকে এগিয়ে নিয়ে গেছে। পথশিশুদের এই সামাজিক রোগ নিয়ে বিশ্বব্যাপী উদ্বেগ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ম্লান হয়ে যাচ্ছে। এই শিশুরা অপুষ্টি ও ক্ষুধার শিকার হয়, এবং প্রায়শই না–খেয়ে দিন কাটায়। বেকার অবস্থায় তারা সাধারণত চোর হয়ে ওঠে, মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে বা শিশুশ্রমিকে পরিণত হয়।

মেয়ে পথশিশুরা যৌন নিপীড়ন, শারীরিক নির্যাতন এবং হয়রানির ক্ষেত্রে এত কিছুর সম্মুখীন হয় যে তা প্রায়ই যা রিপোর্ট করা হয় তার থেকে অনেক বেশি। দেশগুলির মধ্যে যুদ্ধ এবং অভ্যন্তরীণ স্থানচ্যুতিও রাস্তায় ঠেলে দেওয়ার কারণ। মহিলা, কিশোরী এবং শিশুদের প্রায়শই যুদ্ধ অঞ্চলে ইচ্ছাকৃত ভাবে অত্যন্ত নৃশংস উপায়ে হত্যা করা হয়। প্রায়ই তাদের বাড়ি, স্কুল বা শরণার্থী শিবির থেকে অপহরণ করা হয়, এবং শ্রম দিতে বা যৌন দাসত্ব করতে বাধ্য করা হয়, বা পাচার করে দেওয়া হয়। এই ধরনের দুর্যোগের মনোসামাজিক প্রভাব এই শিশুদের মধ্যে উদ্বেগ, বিষণ্ণতা, পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার (পিটিএসডি) এবং নেশা করার কারণ হতে পারে। পথশিশুরা ইনহেল্যান্ট থেকে শুরু করে সিগারেট, কোকেন, স্ম্যাক ও চরসের মতো মাদকদ্রব্যের ব্যাপক অপব্যবহার করছে। ভারতে মাদক ব্যবহারের ২০১৯ রিপোর্ট অনুযায়ী ইনহেল্যান্ট হল শিশু এবং কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রচলিত নেশার বস্তু। ২০১৫ সালের জুভেনাইল জাস্টিস (কেয়ার অ্যান্ড প্রোটেকশন অফ চিলড্রেন) অ্যাক্ট, ১৯৮৫ সালের নারকোটিক ড্রাগস অ্যান্ড সাইকোট্রপিক সাবস্ট্যান্স অ্যাক্ট (এগুলি বিভিন্ন মন্ত্রকের সঙ্গে যুক্ত)‌ আছে ঠিকই, কিন্তু এগুলির কোনওটিরই মাদকাসক্ত এই দুর্বল গোষ্ঠীগুলির জন্য নির্দিষ্ট পরিকল্পনা নেই। এই ভাবে সমস্যাটি উপেক্ষিত থেকে যায়। সময়ের অভাব, আইনি প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রিতা, সংজ্ঞায়িত পরিকাঠামো বা আর্থিক সংস্থান না–থাকা, এবং অকার্যকর শিশু কল্যাণ কেন্দ্রগুলি রাস্তার শিশুদের মধ্যে মাদক ব্যবহারের সমস্যাকে বাড়িয়ে তোলে। উদ্ধার হওয়া পথশিশুদের পুনর্বাসন ও তাদের সমাজের সঙ্গে ফের যুক্ত করাই হল প্রধান কাজ, যার জন্য প্রতিটি ধাপে নজরদারি সহ জনবল, স্বাস্থ্য ক্লিনিক ও শিক্ষাগত সহায়তার তত্ত্বাবধান প্রয়োজন। এগুলির অভাবের ফলে শিশুরা এই ধরনের আশ্রয়কেন্দ্র বা বাড়ি থেকে পালিয়ে ফের রাস্তায় ফিরে আসে।

এই শিশুরা অপুষ্টি ও ক্ষুধার শিকার হয়, এবং প্রায়শই না–খেয়ে দিন কাটায়। বেকার অবস্থায় তারা সাধারণত চোর হয়ে ওঠে, মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে বা শিশুশ্রমিকে পরিণত হয়।

যথেষ্ট আয় না–থাকায় এরা একটি উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ শ্রেণিতে পরিণত হয়, এবং তা তাদের অত্যাচার ও মানসিক অসুস্থতার শিকার করে তোলে। ফলে তারা আরও সুরক্ষাবিহীন হয়ে পড়ে, এবং আরও প্রতিকূল আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়। তাদের মধ্যে রোগের প্রবণতা বেশি দেখা যায়, বিশেষ করে ইন্ট্রাভেনাস ড্রাগ নেওয়ার কারণে এইচআইভি/এডস এবং অন্যান্য যৌনরোগ; আর এই ভাবে এই শিশুরা সামাজিক ভাবে বিচ্ছিন্ন কলঙ্কিত সম্প্রদায়ের মানুষ হয়ে ওঠে। যৌন শোষণ ও অত্যাচারের কারণে গৃহহীনেরা নানা বিপদের মুখে পড়ে এবং কিশোরীদের গর্ভাবস্থার ঝুঁকিও থাকে বেশি, যা স্বাস্থ্যসেবার যথেষ্ট সুযোগের অভাবের কারণে মেয়েদের মধ্যে মৃত্যুহার বাড়িয়ে দেয়। এটি তাদের এবং তাদের নবজাত সন্তানদের সামাজিক অসুখগুলির সামনে আরও অরক্ষিত করে তোলে, এবং আরও গৃহহীন পরিবার ও পথশিশুর জন্ম দেয়। বিশ্বব্যাপী পাঁচ বছরের কম বয়সী প্রায় ২০ শতাংশ শিশু চরম দারিদ্র্যের মধ্যে বাস করে। ব্যক্তিগত শনাক্তকরণ নথি ও স্কুলে তালিকাভুক্তি না–থাকায় স্বাস্থ্য ও পুষ্টি কর্মসূচি এবং খাদ্য নিরাপত্তার সুযোগ নেওয়া বা বাড়িতে রেশন ও মিড-ডে মিল পাওয়া এদের পক্ষে কঠিন হয়, এবং প্রায়শই তা নাগালের বাইরে থেকে যায়। এই শিশুদের এই ভাবে ‘‌পোষণ অভিযান’‌ (আইসিডিএস ও মিড-ডে মিল)–এর মতো বিভিন্ন পুষ্টি কর্মসূচির সুবিধা থেকে দূরে রাখা হয়েছে। সেখানে এই ধরনের সুবিধাভোগীদের উল্লেখ কোথাও পাওয়া যায় না।

বলপূর্বক শিশু ভিক্ষাবৃত্তি

ভারতে হাজার হাজার শিশুকে অপহরণ করা হয় এবং ভিক্ষা করতে বাধ্য করা হয়, যা পথশিশুদের সমস্যা বাড়িয়ে দেয়। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের তথ্য অনুযায়ী প্রতি বছর প্রায় ৪০,০০০ শিশুকে অপহরণ করা হয় এবং তাদের মধ্যে ২৫ শতাংশেরও বেশি শিশুকে আর খুঁজে পাওয়া যায় না। ভারতে এখনও এমন একটি শক্তিশালী মানব পাচার বিরোধী আইন নেই যেখানে কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে, কারণ এটি এখনও সংসদে সংশোধনীর অপেক্ষায় আছে। আরও উদ্বেগের বিষয় হল ভারত জুড়ে আনুমানিক ৩০০,০০০ শিশুকে মাদকাসক্ত করা হয়, লাঞ্ছিত করা হয়, এবং তারপরে রাস্তায় ভিক্ষা করানো হয়। পথশিশুরা বলপ্রয়োগ ও মাদক খাইয়ে দেওয়ার মতো ছলচাতুরির মাধ্যমে পাচারের শিকার হয়, এবং মেয়েরা বিদেশে বা দেশের অভ্যন্তরে পাচার হয়ে যাওয়া বা পতিতাবৃত্তিতে ঠেলে দেওয়ার বিপদের মধ্যে থাকে। তারা তাদের নিজস্ব পরিবেশ থেকে দূরে সরে যায়, বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে, তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হয়, আর তারা কারও সাহায্যও চাইতে পারে না। জুভেনাইল জাস্টিস অ্যাক্ট, ২০১৫ এবং শিশু শ্রম আইন, ২০১৬ অনুযায়ী শিশুদের সুরক্ষা দেওয়া, এবং ভিক্ষাবৃত্তি, অননুমোদিত হকিং ও বিপজ্জনক শিশু শ্রমের বিরুদ্ধে শাস্তি দেওয়ার বিধান থাকলেও এখনও মানব পাচারকারী জোট দ্বারা প্রভাবিত বহু মিলিয়ন ডলারের শিল্প সুপ্রতিষ্ঠিত রয়েছে। পুলিশ এবং সংগঠনগুলির এই সমস্যাটি মোকাবিলা করার ক্ষমতা অস্পষ্ট ও অপ্রতুল, কারণ ভারতে ভিক্ষাবৃত্তি ও নিঃস্ব অবস্থার প্রতিকারের কোন যুক্তরাষ্ট্রীয় আইন নেই, বিশেষ করে বাচ্ছাদের জন্য।

পথশিশুরাও বলপ্রয়োগ ও মাদক খাইয়ে দেওয়ার মতো ছলচাতুরির মাধ্যমে পাচারের শিকার হয়, এবং মেয়েরা বিদেশে বা দেশের অভ্যন্তরে পাচার হয়ে যাওয়া বা পতিতাবৃত্তিতে ঠেলে দেওয়ার বিপদের মধ্যে থাকে।

সামনের পথ

পরিবার ও সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন শিশুদের পথনির্দেশ ও পরামর্শ দেওয়ার জন্য মনোরোগ বিশেষজ্ঞ, মনোবিজ্ঞানী, থেরাপিস্ট–সহ চাইল্ড গাইডেন্স ক্লিনিক স্থাপন করা গুরুত্বপূর্ণ। একটি বিস্তারিত সমীক্ষা করা, প্রতিটি রাজ্যে দেশের পথশিশুদের নিখুঁত সংখ্যা পরিমাপ করা, উৎসস্থল (হটস্পট)গুলি এবং এর সঙ্গে সম্পর্কিত কারণগুলি চিহ্নিত করার জন্য একটি একক সংস্থার দ্বারা ডেটা ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম তৈরি করাও অপরিহার্য। উদ্বেগের ক্ষেত্রগুলি চিহ্নিত করতে, সামাজিক অসদাচরণগুলির উপর নজর রাখতে, এবং পরিকল্পনা ও কর্মসূচির সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং বাস্তবায়নে সহায়তা করার জন্য এই ডেটা সিস্টেমটিকে জিআইএস ম্যাপিংয়ের সঙ্গে যুক্ত করা উচিত। শেল্টার হোমের উন্নয়ন, গৃহহীন লোকদের শনাক্তকরণ, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি কর্মসূচির ব্যবহারে উৎসাহিত করে জাতীয় উন্নয়নে অন্তর্ভুক্ত করা, এবং সামাজিক নিরাপত্তা প্রকল্পগুলি এই কাজে সহায়ক হবে। এই ধরনের শিশুদের খুঁজে বার করাই যথেষ্ট নয়, তাদের পুনর্বাসনের দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত, যাতে এই শিশুদের শোষণের এই চক্রে ফের প্রবেশ না–করতে হয়। উদ্ধারকৃত পথশিশুদের, বিশেষ করে মেয়েদের ক্ষমতায়নের জন্য একটি অনুমোদিত বাজেট ও প্রকল্প চালু করা দরকার। মানব পাচার ও মাদকের ব্যবহারের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য পরিষেবা এবং আইনি সহায়তা দিতে, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার জন্য কল্যাণমূলক প্রকল্প এবং আয়ের সুযোগ দিতে, এবং তাদের সম্প্রদায় ও পরিবারে তাদের ফিরিয়ে আনার জন্য প্রয়াস শুরু করা প্রয়োজন। চাকরির প্রশিক্ষণ এবং দক্ষতায়ন তাদের এই আর্থিক স্বাধীনতা দেবে। ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ওয়ান স্টপ পরিষেবা–সহ নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রের ব্যবস্থা করা সমান ভাবে গুরুত্বপূর্ণ। তরুণ এবং কিশোর বয়সীদের মধ্যে মাদক ব্যবহারের প্রভাব সম্পর্কে সংবেদনশীলতা ও সচেতনতা গুরুত্বপূর্ণ। রাস্তার লক্ষাধিক শিশুকে উদ্ধার করা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা, নিরাপদ দত্তক গ্রহণ নীতি তৈরি করা এবং মানব পাচার রোধে আইন তৈরি করা উচিত। শিশু ভিক্ষুক ও রাস্তার ধারের হকারদের নিয়ন্ত্রণ ও নিষিদ্ধ করা, এবং ভিক্ষাবৃত্তির চক্র ও কেলেঙ্কারির বিষয়ে নীতিনির্ধারকদের মধ্যে আলোচনা দরকার, যাতে তাঁরা সমাধানের পথ বার করতে পারেন এবং জেলা পর্যায়ে সেগুলো কার্যকর করতে পারেন। জেলা পরিকল্পনা কমিটির পাশাপাশি পঞ্চায়েতি রাজ প্রতিষ্ঠান (পিআরআই) ও স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাগুলি সমাজে এই ধরনের নেতিবাচক বিচ্যুতি প্রতিরোধ করার প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। শিশুদের বিরুদ্ধে হিংসা নিয়ে দেশের কর্তৃপক্ষের সরব হওয়া উচিত। এই কর্তৃপক্ষ এখনও ভারতে পথশিশুদের সমস্যাকে স্বীকৃতি দেওয়ার পাশাপাশি সমস্ত শিশুকে সমান সুযোগ দিতে ব্যর্থ হয়েছে।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.