Author : Ramanath Jha

Expert Speak Urban Futures
Published on Sep 06, 2022 Updated 3 Days ago

বিহারে নগরায়ণের নিম্নমুখী প্রবণতা সংশোধন করতে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকার উভয়কেই আরও কার্যকর পদক্ষেপ করতে হবে।

বিহারে নগরায়ণ ত্বরান্বিত করা
বিহারে নগরায়ণ ত্বরান্বিত করা

বিহারের অত্যন্ত মন্থর নগরায়ণ জাতীয় উদ্বেগের কারণ হওয়া উচিত। রাজ্যের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অভাব চিহ্নিত করে যে প্রধান সূচকগুলি তার মধ্যে এটি একটি। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী যেখানে সারা দেশে নগরায়ণ ৩১.২ শতাংশ, সেখানে বিহারের নগরায়ণ মাত্র ১১.৩ শতাংশ। যদিও রাজ্যটির জনসংখ্যা ভারতের মোট জনসংখ্যার ৮.৬ শতাংশ, দেশের মোট শহুরে জনসংখ্যার মাত্র ৩.১ শতাংশ বিহারের। একটি বিশাল জনসংখ্যার রাজ্যে এমন পরিস্থিতি দেশের বাকি অংশে ছায়া ফেলতে বাধ্য, এবং দেশের অগ্রগতি শ্লথ করে দেওয়ারও কারণ।

২০০১-২০১১ সালে বৃহৎ রাজ্যগুলির মধ্যে বিহারে সর্বাধিক জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে:‌ ২৫.৪২ শতাংশ। এই সময় জাতীয় বৃদ্ধির হার ছিল ১৭.৭০ শতাংশ।

২০১৯ সালে অনুমান করা হয়েছিল যে প্রায় ১২.‌৫ কোটি জনসংখ্যার রাজ্যটি জনসংখ্যাগতভাবে মহারাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে গেছে, এবং এখন উত্তরপ্রদেশের পরে দ্বিতীয় জনবহুল রাজ্য। উল্লেখযোগ্য, ২০০১-২০১১ সালে বৃহৎ রাজ্যগুলির মধ্যে বিহারে সর্বাধিক জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে:‌ ২৫.৪২ শতাংশ। এই সময় জাতীয় বৃদ্ধির হার ছিল ১৭.৭০ শতাংশ। বিপরীতে, বৃহৎ রাজ্যগুলির মধ্যে এর নগরায়ণের বৃদ্ধি ছিল সর্বনিম্ন। তা মাত্র ০.৮ শতাংশ বেড়েছে, যা দশকের নগরায়ণে জাতীয় বৃদ্ধি ৩.৪ শতাংশের থেকে অনেক কম। এটি আরও লক্ষণীয় যে নগরায়ণের জাতীয় স্তর এবং বিহারের নগরায়ণ স্তরের মধ্যে শতাংশের ব্যবধান বাড়ছে। ১৯৬১ সালে পার্থক্য ছিল ১১.৪ শতাংশ। ২০১১ সালের মধ্যে এটি ১৯.৯ শতাংশে উন্নীত হয়েছিল।

ধীর বৃদ্ধির কারণ

উচ্চ জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং নগণ্য নগরায়ণের ফলে রাজ্যটি ভারতের রাজ্যগুলির মধ্যে সর্বাধিক মানব বহির্গমনের সাক্ষী হয়েছে। অতিমারির সময় হাজার হাজার বিহারি পরিযায়ীর পায়ে হেঁটে রাজ্যের উদ্দেশ্যে যাত্রার দৃশ্য বিষয়টিকে চোখের সামনে তুলে ধরেছিল। এন এস এস ও (ন্যাশনাল স্যাম্পল সার্ভে অর্গানাইজেশন) ৬৪তম রাউন্ড মাইগ্রেশন ডেটার উপর ভিত্তি করে ২০১৪ সালের একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছিল যে বিহার থেকে কর্মসংস্থানের উদ্দেশ্যে রাজ্যত্যাগের সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি ছিল। একটি আরও এবং সাম্প্রতিকতম ডি–সিরিজ সেন্সাস ২০১১ ডেটাও একই কথা বলেছিল, এবং অনুমান করেছিল যে পুরো দেশের মধ্যে বিহার থেকে সবচেয়ে বেশি কাজের উদ্দেশ্যে বহির্গমন হয়। বিহার থেকে প্রায় ৫৫ শতাংশ পুরুষ কাজের প্রয়োজনে অভিবাসী হন। এটি ভারতের সামগ্রিক গড়ের দ্বিগুণেরও বেশি। দিল্লি, ঝাড়খণ্ড, পশ্চিমবঙ্গ, মহারাষ্ট্র, উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানা ও পাঞ্জাব এদের পছন্দের গন্তব্য। আশ্চর্যজনকভাবে, বিহারের গ্রাম ও শহর উভয় জায়গা থেকেই বাইরে যাওয়ার হার উঁচু, যা ইঙ্গিত করে যে কর্মসংস্থানের পাশাপাশি বহির্গমনের অন্য কারণগুলির মধ্যে আছে শিক্ষা ও ব্যবসার সুযোগের মতো বিষয়ও। জনসংখ্যার অতিউচ্চ বৃদ্ধি এবং নগরায়ণের অভাব থেকে একথা অনুমান করা যেতে পারে যে বিহারে নগরায়ণের বৃদ্ধি হয় শুধু অভ্যন্তরীণ বৃদ্ধির কারণে, এবং বহির্গমনের মাধ্যমে বিহারের পুরুষ ও মহিলারা রাজ্যের বাইরের শহরগুলিতে জনসংখ্যায় উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে।

বিহারের গ্রাম ও শহর উভয় জায়গা থেকে বাইরে যাওয়ার হার উঁচু, যা ইঙ্গিত করে যে কর্মসংস্থানের পাশাপাশি বহির্গমনের অন্য কারণগুলির মধ্যে আছে শিক্ষা ও ব্যবসার সুযোগের মতো বিষয়ও।

রাজ্যের সামগ্রিক অর্থনৈতিক সমস্যার কারণে বহির্গমনের ক্রমবর্ধমান ঘটনার কারণগুলি অনুধাবন করা কঠিন নয়। জমির উচ্চ উর্বরতা এবং জলসম্পদে সমৃদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও রাজ্যটির কৃষিজ উৎপাদন খুব কম। কৃষির উপর অসামঞ্জস্যপূর্ণভাবে উচ্চ–নির্ভরতা (‌রাজ্যের প্রায় ৮০ শতাংশ কর্মশক্তিকে পোষণ করে কৃষি)‌, জোতের বিভাজন এবং কৃষকদের মধ্যে অত্যন্ত উচ্চ ভূমিহীনতা কৃষি উৎপাদনশীলতার ক্ষেত্রে বিশাল প্রতিবন্ধক। উচ্চ জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে, যার ফলে ভূমির উপর অসহনীয় চাপ সৃষ্টি হয়েছে এবং বেঁচে থাকার জন্য বাধ্য হয়ে মানুষকে অন্য রাজ্যে যেতে হয়েছে।  অন্যদিকে, এর বিকল্প হিসাবে শিল্পক্ষেত্রে কর্মসংস্থানের সুযোগ খুব কম, কারণ শিল্প রাজ্যে শিকড় খুঁজে পায়নি। রাজ্যে শিল্পের জন্য পরিবেশ প্রতিকূল হিসাবে বিবেচিত হওয়ার পটভূমিতে সুযোগ থাকা সত্ত্বেও তা গ্রহণে আগ্রহীর সংখ্যা খুব কম। কম বিনিয়োগের কারণগুলি হল ভৌত ও সামাজিক পরিকাঠামোতে বড় ঘাটতি, দুর্বল আর্থিক বাজার এবং ঋণের কম সুযোগ, দক্ষ জনশক্তির কম প্রাপ্যতা, নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলার বিষয়ে বিশাল উদ্বেগ এবং লাল ফিতের ফাঁস। শিল্পে কর্মসংস্থান কম হওয়ার ফলে নগরায়ণের মূল উপাদানটি অনুপস্থিত।

যদিও বিহার এবং দেশের বাকি অংশের মধ্যে উন্নয়নের ব্যবধান বাড়ার অনেকগুলি কারণ আছে, এটি স্পষ্ট যে বিহারের উন্নয়ন মূলত নির্ভর করবে কৃষির উপর রাজ্যের শ্রমশক্তির একটি বিশাল শতাংশের নির্ভরতা হ্রাস করা, এবং জনসংখ্যার একটি বড় শতাংশের শিল্প ও পরিষেবাগুলিতে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারার উপর। তার জন্য রাজ্যে নগরায়ণ একটি অপরিহার্য বিষয়। ২০২১ সালে বিধানসভায় ভাষণের সময় রাজ্যের উপমুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন যে নগরায়ণ বিহার সরকারের অগ্রাধিকার। তিনি শহুরে স্থানীয় শাসনসংস্থার সংখ্যার বৃদ্ধি এবং কিছু পৌর কর্পোরেশনের ভৌগোলিক সীমা প্রসারিত করার জন্য রাজ্য সরকারের সাম্প্রতিক পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করছিলেন। তিনি আরও বলেছিলেন যে শহুরে জনসংখ্যার বৃদ্ধি রাজ্য সরকারকে নগর পঞ্চায়েত, নগর পরিষদ ও পৌর কর্পোরেশনের এক্তিয়ারের অধীনে নগরায়ণের ব্যবস্থা গ্রহণে সহায়তা করবে, এবং পাশাপাশি বিনিয়োগের জন্য ১৫তম অর্থ কমিশনের সুপারিশের মাধ্যমে তাঁদের কাছে যা আসবে তার অতিরিক্ত রাজস্ব সংস্থানের ব্যবস্থা করবে। নগরোন্নয়ন ও আবাসন মন্ত্রী আরও বলেছেন:‌ ‘‘‌‌আমাদের শহরগুলিতে নতুন নগর পঞ্চায়েত তৈরি করে আরও বেশি এলাকাকে নগর উন্নয়নের আওতায় আনতে হবে। এটি রাজ্যের উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয়।’‌’‌

নীতির সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন ছিল ৫০ শতাংশেরও কম জনসংখ্যা কৃষিকাজে নিয়োজিত থাকলে এলাকাগুলোকে শহুরে হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া।

উপরে উদ্ধৃত নির্দেশের উপর ভিত্তি করে বিহার সরকার একটি আধা–শহর বা গ্রামীণ এলাকাকে শহুরে হিসাবে ঘোষণা করার জন্য পুরনো মানদণ্ডে পরিবর্তন আনতে শুরু করেছে। নীতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন ছিল ৫০ শতাংশেরও কম জনসংখ্যা কৃষিকাজে নিয়োজিত থাকলে সেই এলাকাগুলিকে শহর হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া। অতীতের যে সংজ্ঞাকে এভাবে প্রতিস্থাপন করা হল তাতে একটি এলাকাকে তখনই শহর বলে ঘোষণা করা হত যদি এলাকাটির জনসংখ্যার ২৫ শতাংশেরও কম কৃষিতে জড়িত থাকে। মন্ত্রিসভা এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে, বিহারে ২০০,০০০ জনসংখ্যার ১২টি ‘‌নগর নিগম’‌, ৪০,০০০ থেকে ২০০,০০০ জনসংখ্যার ৪২টি ‘‌নগর পরিষদ’, এবং ৮৮টি নগর পঞ্চায়েত ছিল। এখন ৭৪টি নগর পরিষদ এবং ১৯১টি নগর পঞ্চায়েত সহ নগর নিগমের সংখ্যা হবে ১৭।

বিহার সরকারের এই পদক্ষেপগুলি নগরায়ণ শতাংশ একটি স্বাস্থ্যকর জায়গায় আনতে সহায়তা করতে পারে, এবং এর ফলে অর্থনৈতিক কার্যকলাপে প্রান্তিক বৃদ্ধি হতে পারে। তবে বিহারে নগরায়ণের সমস্যা অনেক গভীরে চলে গেছে, এবং এই ধরনের উপর উপর রূপটানের মাধ্যমে তার সমাধান হবে না। শিল্পায়নের অভাব, যা তার নিম্ন নগরায়ণ এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের অভাবের মূলে রয়েছে, তার মোকাবিলা করার জন্য রাজ্যের সম্পূর্ণ সংস্কার প্রয়োজন। রাজ্যের জন্য একটি সমীক্ষায় বিশ্বব্যাঙ্ক কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র চিহ্নিত করেছে;‌ এর মধ্যে রয়েছে বিহারে বিনিয়োগের পরিবেশের উন্নতি; জনপ্রশাসন এবং পদ্ধতিগত সংস্কার, বিশেষ করে সেই সব বিধি বদলানো যা নিম্নতর পর্যায়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা পৌঁছে দিতে বাধা দেয়; মূল সামাজিক পরিষেবাগুলির পরিকল্পনা ও রূপায়ণকে শক্তিশালী করা, বিশেষ করে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা, বাজেট ব্যবস্থাপনা ও আর্থিক সংস্কারের ক্ষেত্রে; এবং আইনশৃঙ্খলার উন্নতি।

শিল্পায়নের অভাব, যা তার নিম্ন নগরায়ণ এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের অভাবের মূলে রয়েছে, তা মোকাবিলা করার জন্য রাজ্যের সম্পূর্ণ সংস্কার প্রয়োজন।

যাই হোক, বিহারের পরিত্রাণ পুরোপুরি নিজের দ্বারা অর্জন করা সম্ভব নয়। রাজ্যটিকে এই অবস্থা থেকে টেনে তোলার জন্য ভারত সরকার এযাবৎ যত প্রচেষ্টাই করেছে তা প্রশংসনীয় ফলাফল পায়নি। ইউ এন ডি পি অনুসারে বিহার মানব উন্নয়ন সূচকের (এইচ ডি আই) একেবারে নিচে এবং ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো (এন সি আর বি) অনুসারে সহিংস অপরাধের তালিকার প্রায় শীর্ষে রয়েছে। রাজ্যটিকে তার জনসংখ্যা বৃদ্ধির গতি কমাতে হবে, তার সামাজিক জাতিগত অনমনীয়তা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে, এবং শিল্পবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করতে হবে। এগুলির প্রতিটিতে নগরায়ণের ভূমিকা আছে, তা সে জনসংখ্যাকে নিচে নামানো হোক, অথবা জাতিগত অনমনীয়তা হ্রাস করা বা অর্থনৈতিক উন্নয়নই হোক। বিহারে বৃদ্ধি ও উন্নয়নের জন্য নগরায়ণের গতি বাড়ানোর জন্য কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের সম্মিলিত শক্তি থাকতে হবে। নিঃসন্দেহে, দেশ হাজার হাজার বিহারি পরিযায়ীর যন্ত্রণা ও হতাশার মধ্যে বাড়ি ফেরার ভয়ঙ্কর দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি চায় না।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.

Author

Ramanath Jha

Ramanath Jha

Dr. Ramanath Jha is Distinguished Fellow at Observer Research Foundation, Mumbai. He works on urbanisation — urban sustainability, urban governance and urban planning. Dr. Jha belongs ...

Read More +