Author : Aditya Bhan

Published on Aug 30, 2022 Updated 27 Days ago

এফ/এ–১৮ সুপার হর্নেট ক্রয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি ঘনিষ্ঠ দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্কের সূচনা করতে পারে, যা গভীর সমুদ্রে চিনা নৌবাহিনীর আধিপত্যবাদী উচ্চাকাঙ্ক্ষা্র মোকাবিলায় ভারতের, এবং বিশেষ করে ভারতীয় নৌবাহিনীর, জন্য উপকারী হবে।

ভারতীয় নৌবাহিনীর জন্য ক্যারিয়ার–ভিত্তিক যুদ্ধবিমান  সরবরাহের  প্রতিযোগিতায় রাফালকে ছাড়িয়ে যেতে পারে সুপার হর্নেট
ভারতীয় নৌবাহিনীর জন্য ক্যারিয়ার–ভিত্তিক যুদ্ধবিমান সরবরাহের প্রতিযোগিতায় রাফালকে ছাড়িয়ে যেতে পারে সুপার হর্নেট

ভারতীয় নৌবাহিনীর চলতি মাল্টি–রোল ক্যারিয়ার বোর্ন ফাইটারস (এম আর সি বি এফ) পরিকল্পনার অধীনে কমপক্ষে ২৬টি যুদ্ধবিমান সংগ্রহ করা হবে;‌ তবে ৫৭টি বিমানের প্রাথমিক প্রয়োজন থাকায় আরও বেশি সংখ্যায় বিমান কেনারও সুযোগ থাকছে। এই অবস্থায় দুই প্রতিযোগী মুখোমুখি হচ্ছে:‌ রাফাল মেরিন (এম) বিমান এবং এফ/এ–১৮ সুপার হর্নেট। ট্রায়াল শেষ হয়েছে, এবং ভারতীয় নৌবাহিনী গোয়ায় উপকূলভিত্তিক পরীক্ষা স্থাপনাগুলিতে (এস বি টি এফ) অনুষ্ঠিত পরীক্ষা থেকে সম্পূর্ণ ডেটা পেয়েছে।

যুদ্ধবিমান বেছে নেওয়ার এবং অর্ডার দেওয়ার জন্য হাতে সময় কম, কারণ ভারতের দ্বিতীয় বিমানবাহী রণতরী আই এন এস বিক্রান্ত–কে ১৫ আগস্ট ২০২২–এ ভারতীয় নৌবাহিনীর পরিষেবায় কমিশন করার কথা। যদিও ভারতের প্রথম দেশীয়ভাবে তৈরি বিমানবাহী রণতরী আই এন এস বিক্রান্ত ভারতীয় নৌবাহিনীর মিগ ২৯কে বিমানগুলি ব্যবহার করতে পারে, কিন্তু সেগুলির অপ্রতুল প্রাপ্যতা এবং সীমিত সংখ্যা ইঙ্গিত করে যে তা দিয়ে ভারতের দুটি বিমানবাহী রণতরীর কোনওটিরই প্রয়োজন মেটানো যাবে না।  তাই জরুরি প্রয়োজন অতিরিক্ত যুদ্ধবিমানের।

এফ/এ–১৮–এর সম্ভাবনার পক্ষে একটি সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে এই দাবি করা হয়েছে যে বিমানটি শুধু সফলভাবে এস বি টি এফ ট্রায়ালই সম্পন্ন করেনি, সেই সঙ্গেই স্কি–জাম্প টেক–অফের জন্য ভারতীয় নৌবাহিনীর প্রয়োজন অতিক্রম করে পেলোডের ক্ষেত্রেও যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েছে। বিমানটি পরীক্ষা কেন্দ্রের স্কি জাম্প থেকে দুটি এজিএম–৮৪ হারপুন ক্ষেপণাস্ত্র বহন করে নিয়ে যায়, যার প্রতিটির ওজন ৫৫০ কেজি, অর্থাৎ মোট লোডআউট ১,১০০ কেজি ।

আইএনএস বিক্রান্তের এলিভেটরে ফিট করার জন্য এফ/এ–১৮ ডানা ভাঁজ করতে পারে;‌ কিন্তু রাফাল এম–এর পক্ষে তা একটি জটিল কাজ, কারণ এর ডানা ভাঁজ করা যায় না।

এছাড়াও সুপার হর্নেটের পক্ষে আর একটি যুক্তি হলএর টুইন–সিটার ভেরিয়েন্ট এফ/এ–১৮–এফ–এর প্রাপ্যতা , যেখানে রাফাল শুধু এক–সিটার হয়। তাছাড়া আই এন এস বিক্রান্তের এলিভেটরে ফিট করার জন্য এফ/এ–১৮ ডানা ভাঁজ করতে পারে;‌ কিন্তু রাফাল এম–এর পক্ষে তা একটি জটিল কাজ, কারণ এর ডানা ভাঁজ করা যায় না। যদিও রাফাল এম–এর ডানার দৈর্ঘ্য ৩৫ ফুট ৯ ইঞ্চি, যা এফ/এ–১৮র ৪৪ ফুট ৮.৫  ইঞ্চির থেকে কম, কিন্তু দ্বিতীয়টির ডানা ভাঁজ করার পরে তা কমিয়ে ৩০.৫ ফুটে নামানো যেতে পারে, যা রাফাল এম–এর থেকেও ৫ ফুট কম।

তাছাড়া, ভারতীয় বিমানগুলির সঙ্গে অস্ত্র এবং ইঞ্জিনের অভিন্নতাও এফ/এ–১৮র আবেদন বাড়ায়। ভারতীয় নৌবাহিনীর ভবিষ্যৎ টুইন–ইঞ্জিন ডেকভিত্তিক ফাইটার প্রাথমিকভাবে এফ–৪১৪ ইঞ্জিন ব্যবহার করবে, যা সুপার হর্নেটকে শক্তি জোগাতেও ব্যবহৃত হয়। উপরন্তু, ভারতীয় নৌবাহিনীর পি–৮১ নেপচুন লং রেঞ্জ মাল্টিরোল মেরিটাইম পেট্রোল এয়ারক্রাফ্টের সঙ্গেও বিমানটির অস্ত্রের অভিন্নতা  এবং আন্তঃকার্যকারিতার বাড়তি সুবিধা রয়েছে।

এই প্রযুক্তিগত বিবেচনার পাশাপাশি আছে রাশিয়ার থেকে এস–৪০০ বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কেনার প্রেক্ষাপটে মার্কিন প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের জন্য নিষেধাজ্ঞা আইনের আওতা থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভারতকে ছাড় দেওয়ার সাম্প্রতিক ঘটনাটি, যা ভূ–রাজনৈতিক কারণে ভারতীয় নৌবাহিনীর সুপার হর্নেট কেনার জন্য অনুঘটক হিসাবে কাজ করতে পারে। এটিকে একটি আস্থানির্মাণ ব্যবস্থা হিসাবে দেখা যেতে পারে, বিশেষ করে অতীতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মধ্যে পারস্পরিক আস্থার অভাবের পরিপ্রেক্ষিতে, এবং তুরস্কের ক্ষেত্রে ২০১৭ সালে এস–৪০০ কেনার জন্য একটি অনুরূপ চুক্তির পর এই ধরনের কোনও ছাড় না–মেলার পটভূমিতে। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে তুরস্ক তার পঞ্চম প্রজন্মের এফ–৩৫ এয়ারক্রাফ্ট থেকে বঞ্চিত হয়

ভারতীয় বিমান বাহিনীর ক্ষেত্রে দৃশ্যপটটি ভারতীয় নৌবাহিনীর থেকে বেশ ভিন্ন। রাফালের এম৮৮ ইঞ্জিন প্রস্তুতকারক  ভারতে তার বৃহত্তম বিমান ইঞ্জিন রক্ষণাবেক্ষণ, মেরামত ও ওভারহল করার সুবিধা স্থাপনের প্রস্তাব দিয়েছে ভারতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রককে। এই প্রস্তাবটি বিমান বাহিনীর ১১৪ মাল্টি–রোল ফাইটার এয়ারক্রাফ্ট সংগ্রহের ক্ষেত্রে রাফালকে নির্বাচনের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দিয়েছে।

ভারতীয় নৌবাহিনীর পি–৮১ নেপচুন লং রেঞ্জ মাল্টিরোল মেরিটাইম পেট্রোল এয়ারক্রাফ্টের সঙ্গেও বিমানটির অস্ত্রের অভিন্নতা এবং আন্তঃকার্যকারিতার বাড়তি সুবিধা রয়েছে।

যাই হোক, ভারতীয় নৌবাহিনীর দৃষ্টিকোণ থেকে সুপার হর্নেটের ব্লক ৩ ভেরিয়েন্টটি একটি ভাল বিমান, কারণ মার্কিন সশস্ত্র বাহিনী ব্যবহার করে এমন সমস্ত টুইন–ইঞ্জিন কৌশলগত যুদ্ধবিমানগুলির মধ্যে এটির রক্ষণাবেক্ষণের খরচ সর্বনিম্ন। এমনকি অ্যাভিওনিক্সের দিক থেকেও ব্লক ৩ বেশ উন্নত। চিনকে মোকাবিলা করার জন্য ভারতের এই ধরনের যুদ্ধবিমানেরই প্রয়োজন, কারণ চিন বৈদ্যুতিন যুদ্ধের প্লাটফর্ম হিসাবে জে–১৫ বিমানকে উন্নত করে জে–১৫ডি যুদ্ধবিমান তৈরি করছে।  ই/এ–১৮জি গ্রোলার, যা এফ/এ–১৮ সুপার হর্নেটের মতো একই এয়ারফ্রেম ব্যবহার করে, ভারতীয় নৌবাহিনীকে আগামী সময়ের জন্য শক্তিশালী বৈদ্যুতিন যুদ্ধের ক্ষমতা উপহার দিতে পারে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ক্রমাগত চিনের তুলনায় তার প্রযুক্তিগত অগ্রগতি বজায় রাখার জন্য কাজ করছে, এবং সুপার হর্নেটকে নতুন প্রযুক্তি দিয়ে সজ্জিত করার ঘটনাটি মার্কিন নৌবাহিনীকে চিনের পিপলস লিবারেশন আর্মি নেভির থেকে বাড়তি সুবিধা প্রদান করেছে। ভারত মহাসাগর অঞ্চলে পিপলস লিবারেশন আর্মি নেভির ক্রমবর্ধমান উপস্থিতির দিকে নজর রেখে বলা যায়, একই অস্ত্র ব্যবস্থাগুলি পরবর্তীকালে ভারতীয় নৌবাহিনী তার সুপার হর্নেটে ব্যবহার করতে পারে। তাই সুপার হর্নেট ক্রয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি ঘনিষ্ঠ দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্কের সূচনা করতে পারে, যা পিপলস লিবারেশন আর্মি নেভির গভীর সমুদ্রে আধিপত্যবাদী উচ্চাকাঙ্ক্ষার মোকাবিলায় ভারতের, বিশেষ করে ভারতীয় নৌবাহিনীর, জন্য উপকারী হবে।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.