Author : Hari Bansh Jha

Published on Apr 07, 2024 Updated 1 Days ago

নেপালে ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক অস্থিরতা সত্ত্বেও সরকারকে অর্থনীতির পুনর্গঠনে সাহসী পদক্ষেপ ‌করতে হবে

নেপালে অর্থনৈতিক সঙ্কট ঘনীভূত হচ্ছে

যদিও সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী পুষ্প কমল দহল জলবিদ্যুৎ খাতে কিছু ইতিবাচক প্রবণতা, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, এবং দেশে বিদেশী পর্যটক আসার বর্ধিত প্রবণতার উপর ভিত্তি করে নেপালের অর্থনীতির একটি গোলাপী ছবি এঁকেছেন, তবুও জনগণ তাঁদের দৈনন্দিন জীবনে এ সবের প্রভাব খুব কমই অনুভব করছেন। কৃষি ও শিল্পে উৎপাদন কমে যাওয়া, বেকারত্বের সমস্যাসহ বাণিজ্য ঘাটতি বৃদ্ধি, শেয়ারবাজারে পতন, রিয়েল এস্টেটের ব্যবসা থমথমে অবস্থায় থাকা, এবং রেস্তোরাঁ ও হোটেল ছাড়াও অন্যান্য ব্যবসায়িক কার্যক্রম হ্রাসের কারণে দেশটি মারাত্মক অর্থনৈতিক সঙ্কটের মুখোমুখি হচ্ছে। এর উপরে ৮.১৯ শতাংশ মূল্যস্ফীতি জনগণের ক্রয়ক্ষমতাকে দ্রুত ক্ষয় করছে।

অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি কৃষিক্ষেত্রটি সমস্যায় পড়েছে। যে দেশ চাল রপ্তানি করত তারা কয়েক বছর ধরে তা আমদানি করতে শুরু করেছে। ২০২১–২২ সালে নেপাল ভারত থেকে ৪৭৩.৪৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের
১.৪ মিলিয়ন টন চাল আমদানি করে। পরবর্তীতে, ভারত ২০ জুলাই ২০২৩ তারিখে অন্যান্য দেশের সঙ্গে নেপালেও নন–বাসমতি সাদা চাল রপ্তানির উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে, কিন্তু কিছু সময়ের পরে ভারত আবার নেপালে ৯৫,০০০ টন নন–বাসমতি চাল রপ্তানি অনুমোদন করে।


কৃষি ও শিল্পে উৎপাদন কমে যাওয়া, বেকারত্বের সমস্যাসহ বাণিজ্য ঘাটতি বৃদ্ধি, শেয়ারবাজারে পতন, রিয়েল এস্টেটের ব্যবসা থমথমে অবস্থায় থাকা, এবং রেস্তোরাঁ ও হোটেল ছাড়াও অন্যান্য ব্যবসায়িক কার্যক্রম হ্রাসের কারণে দেশটি মারাত্মক অর্থনৈতিক সঙ্কটের মুখোমুখি হচ্ছে।



শিল্প–কারখানা হয় বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বা তাদের সক্ষমতার অনেক নিচে কাজ করছে। উদাহরণস্বরূপ, নেপালের অন্যতম প্রধান শিল্প সিমেন্ট শিল্প তার ক্ষমতার ৩০ শতাংশের নিচে কাজ করছে। সম্প্রতি, নেপাল সরকার রপ্তানিকারী শিল্পগুলিকে কিছু প্রণোদনা দিয়েছে। এটি একটি নতুন শুল্ক বিল অনুমোদন করেছে, যা শিল্পের কাঁচামাল আমদানিতে রপ্তানিকারী শিল্পগুলিতে শুল্ক মকুব করেছে। এই বিলে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট, উড়োজাহাজ, খুচরা যন্ত্রাংশ, সরঞ্জাম এবং ফ্লাইটে সরবরাহকৃত খাবার ও পানীয়গুলিতে ব্যবহৃত জ্বালানির উপর 
কর ছাড়ের বিধান রয়েছে। তবে, এই ধরনের বিধানগুলি কীভাবে শিল্প ক্ষেত্রের সমস্যার সমাধান করবে তা জানা যায়নি।

ঋণের কম চাহিদার কারণে
নেপালের বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলির মুনাফা ২০২৩–২৪ সালের প্রথম তিন মাসে ১৮.৬১ শতাংশ কমে ৮.৪১ বিলিয়ন ভারতীয় রুপিতে নেমে এসেছে। লিকুইডেশন থেকে বাঁচাতে বেশ কয়েকটি ব্যাঙ্ককে একীভূত করা হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে সাধারণ জনগণকে তাদের আমানতের নিরাপত্তার বিষয়ে আশ্বস্ত করার জন্য নেপাল রাষ্ট্র ব্যাঙ্ক, সে দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক, একটি বিধান তৈরি করেছে যা অনুযায়ী ব্যাঙ্ক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে আমানত ও ক্রেডিট গ্যারান্টি ফান্ডে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ জমা রাখতে হবে। এই পদক্ষেপটি এটি নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে করা হয়েছে যে, কোনও ব্যাঙ্ক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান উঠে গেলে আমানত ও ক্রেডিট গ্যারান্টি তহবিল ৩১২,৫০০ ভারতীয় রুপি পর্যন্ত আমানতকারীর ক্ষতি পূরণ করবে।

অধিকন্তু, আমদানির তুলনায় নেপালের রপ্তানি বছরের পর বছর কমছে। জুলাইয়ের মাঝামাঝি থেকে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত নেপাল ৩৯.৫ বিলিয়ন ভারতীয় রুপির পণ্য রপ্তানি করেছে এবং ৪০১.৩৭ বিলিয়ন মূল্যের পণ্য আমদানি করেছে, যা ৩৬১.৮৭ বিলিয়ন ভারতীয় রুপি বাণিজ্য ঘাটতি তৈরি করেছে। রপ্তানি নেপালের সামগ্রিক বাণিজ্যের মাত্র ৮.৯৬ শতাংশ


সাধারণ জনগণকে তাদের আমানতের নিরাপত্তার বিষয়ে আশ্বস্ত করার জন্য নেপাল রাষ্ট্র ব্যাঙ্ক, সে দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক, একটি বিধান তৈরি করেছে যা অনুযায়ী ব্যাঙ্ক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে আমানত ও ক্রেডিট গ্যারান্টি ফান্ডে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ জমা রাখতে হবে।



এছাড়া মার্কিন ডলারের বিপরীতে নেপালি রুপি ধীরে ধীরে তার মূল্য হারাচ্ছে। ২০২২–২৩ অর্থবছরে ১৭ জুলাই, ২০২২–এ এক মার্কিন ডলার ছিল ১২৮ নেপালি রুপির (৮০ ভারতীয় রুপি) সমতুল্য। ১৬ জুলাই ২০২৩–এ তা বেড়ে হয় ১৩১.৬৮ নেপালি রুপি (৮২.৩ ভারতীয় রুপি)। মার্কিন ডলার ও নেপালি রুপির মধ্যে বিনিময় হারের এই পরিবর্তনের কারণে নেপালের ২০২২–২৩ অর্থবছরে
৩৭.৫ বিলিয়ন ভারতীয় রুপি মূল্যের বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় ক্ষতি হয়েছে, কারণ দেশটিকে দেশীয় মুদ্রায় বিদেশী ঋণদাতাদের আরও বেশি অর্থ প্রদান করতে হয়েছিল।

পাশাপাশি, নারীসহ নেপালি যুবারা ঠিক সেইভাবে দেশ থেকে নিষ্ক্রান্ত হচ্ছেন যেভাবে মৌমাছিরা নিরাপত্তাহীনতার অনুভূতি তৈরি হলে তাদের মৌচাক ছেড়ে যায়। প্রতি বছর
১০ লাখের বেশি তরুণ–তরুণী কাজের সন্ধানে দেশ ছেড়ে বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছেন। যুবকদের অনেকেই বিদেশে এমন জায়গায় কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন যেখানে তাঁদের জীবন বিপন্ন হয়। সম্প্রতি, নেপাল সরকারের নীতি অগ্রাহ্য করে ভাড়াটে হিসাবে রুশ সেনাবাহিনীতে যোগদানকারী ২০০ নেপালি যুবকের মধ্যে ৭ যুবক নিহত হয়েছেন, এবং প্রায় ১০০ জন নিখোঁজ। আশঙ্কা করা হচ্ছে ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে তাঁরা আহত হয়েছেন ।

তরুণদের বৃহৎ পরিসরে বিদেশে চলে যাওয়ার ফলে দেশে স্মার্টফোন, রেস্তোরাঁ, অ্যালকোহল, খাবার ও পানীয়, বাইক এবং অন্যান্য পণ্য ও পরিষেবার চাহিদা কমে গিয়েছে। এটি শুধু সরকারের প্রতি বেসরকারি ক্ষেত্রের আস্থাই নষ্ট করেনি, দেশের বিনিয়োগের পরিবেশকেও নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করেছে। নেপালের অর্থনীতিতে এই ধরনের কিছু ঘটনা পর্যবেক্ষণ করে ফেডারেশন অফ নেপালি চেম্বারস অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফএনসিসিআই) সভাপতি চন্দ্র প্রসাদ ঢকাল বলেছেন, "নেপালের অর্থনীতি সংবেদনশীল পর্যায়ে রয়েছে... ছোট ও মাঝারি ব্যবসার শাটার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কৃষিপণ্য আরও বাজার হারাচ্ছে। চাহিদা কমছে। ব্যবসায়ীদের মধ্যে চরম হতাশা বিরাজ করছে এবং তাঁরা বিনিয়োগ না–করে পালানোর পরিকল্পনা করছেন।”


এই ধরনের কিছু ঘটনা পর্যবেক্ষণ করে ফেডারেশন অফ নেপালি চেম্বারস অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফএনসিসিআই) সভাপতি চন্দ্র প্রসাদ ঢকাল বলেছেন, "নেপালের অর্থনীতি সংবেদনশীল পর্যায়ে রয়েছে...



সম্প্রতি, বিশ্ব ব্যাঙ্ক অনুমান করেছে যে চলতি অর্থবছরে নেপালের অর্থনৈতিক বৃদ্ধি সরকারি লক্ষ্য ছয় শতাংশের বিপরীতে ৩.৯ শতাংশের বেশি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তবে, বিশেষজ্ঞরা মনে করেন সরকার এই অর্থবছরে
৩ শতাংশ বৃদ্ধি অর্জন করতে সক্ষম হবে না, কারণ অর্থনৈতিক বৃদ্ধির প্রধান চালক কৃষি ক্ষেত্র ইতিবাচকভাবে সাড়া দিচ্ছে না।

এই অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে নেপাল বিশ্বব্যাপী দুর্নীতিরোধী সংস্থা এফএটিএফ–এর ধূসর তালিকাভুক্ত হওয়ার ঝুঁকির সম্মুখীন। এতে দেখা গিয়েছে, মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন রোধে দেশটি তেমন সিরিয়াস নয়। এছাড়াও, আন্তর্জাতিক মুদ্রা ভান্ডার (আইএমএফ) নেপালকে অর্থনীতির উন্নতির জন্য যথাযথ ব্যবস্থা না–নিলে মারাত্মক আর্থিক সংকটের বিষয়ে সতর্ক করেছে।

অনেক দেরি হওয়ার আগে নেপালকে তার অর্থনীতিকে যুদ্ধকালীন ভিত্তিতে পুনর্গঠন করতে হবে যাতে চাকরির সুযোগ তৈরি হয়, পণ্য ও পরিষেবার অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বাড়ে, বাণিজ্য ঘাটতি হ্রাস পায়, এবং ব্যবসার প্রসারের মাধ্যমে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। কিন্তু দেশের ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার মধ্যে সরকার  অর্থনীতিকে সংস্কারের প্রচেষ্টায় সাহসী পদক্ষেপ নিতে পারে কি না তা দেখতে হবে।



হরি বংশ ঝা অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের একজন ভিজিটিং ফেলো

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.