Author : Shairee Malhotra

Published on May 02, 2024 Updated 0 Hours ago

সমগ্র যুদ্ধের সময় স্টলটেনবার্গ ন্যাটোর ঐক্য বজায় রাখা এবং রাশিয়ার প্রতি তার প্রতিক্রিয়ায় ঐকমত্য গড়ে তোলার দরুন তাঁকে প্রতিস্থাপন করার মতো তেমন কোনও প্রার্থী নেই বললেই চলে।

ন্যাটোর পরবর্তী মহাসচিব কে হতে চলেছেন?

২০১৪ সাল থেকে এক দশক ধরে নরওয়ের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী জেনস স্টলটেনবার্গ ন্যাটোর মহাসচিব। তাঁর মেয়াদ ইতিমধ্যে তিন বার বাড়ানো হয়েছে এবং গত বছর সেই মতাদেশ আরও এক বছর বৃদ্ধি করে ২০২৪ সালের অক্টোবর মাস পর্যন্ত করা হয়েছে। ফলে এই ক্রমশ মেয়াদবৃদ্ধি কিন্তু উত্তরাধিকারী নিয়োগের ক্ষেত্রে ন্যাটোর মধ্যেই নানাবিধ অসুবিধা এবং ঐকমত্যের অভাবকেই প্রকাশ্যে এনেছে।

ফরাসি প্রেসিডেন্ট মানুয়েল ম্যাক্রোঁ জোট সম্পর্কে সেই বিখ্যাত উক্তি করেছিলেন… জোট কিনা আসলে ‘ব্রেন ডেড’ বা ‘মস্তিষ্কগত ভাবে মৃত’। ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার যুদ্ধ ন্যাটোকে ফের সক্রিয় হয়ে ওঠার নতুন উদ্দেশ্য প্রদান করেছে। এই গোটা সময়টা জুড়ে স্টলটেনবার্গ জোটের ঐক্য বজায় রেখেছেন এবং রাশিয়ার প্রতিক্রিয়ায় ঐকমত্য তৈরি করেছেন। ফলে তাঁর জায়গায় কে আসবেন, সেই প্রশ্নের উত্তর বেশ কঠিন হয়ে পড়েছে।

ন্যাটোর মুখ হিসেবে নির্বাহী ক্ষমতা কম থাকা সত্ত্বেও মহাসচিবের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ক্রমাগত যুদ্ধের ক্লান্তি, অভ্যন্তরীণ রাজনীতির বাধ্যবাধকতা এবং ইরায়েল-হামাস যুদ্ধের মতো বিক্ষিপ্ততার মাঝেই ইউক্রেনের জন্য অব্যাহত সামরিক সমর্থন শক্তি প্রদর্শনের বিষয়টি নিশ্চিত করতে মহাসচিবের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) মতো ন্যাটোও ঐকমত্যের মাধ্যমে কাজ করে, যেখানে সিদ্ধান্তের জন্য সমস্ত সদস্য রাষ্ট্রের অনুমোদন প্রয়োজন হয় এবং হাঙ্গেরি তুর্কিয়ের মতো স্পয়লার বা ভিন্নমত পোষণকারী দেশের উপস্থিতি কোনও সিদ্ধান্ত গ্রহণের বিষয়টিকে জটিল করে তোলে। সুতরাং, একজন সম্ভাব্য প্রার্থীকে জোটের ৩১টি সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে ঐকমত্য তৈরি করা, দেশগুলির নিজ নিজ দাবির মধ্যে এগিয়ে যাওয়ার পথ খুঁজে নেওয়া, দেশগুলির উদ্বেগ তুলে ধরা এবং একটি বৃহৎ আমলাতন্ত্র পরিচালনা করায় পারদর্শী হতে হবে।

 

ক্রমাগত যুদ্ধের ক্লান্তি, অভ্যন্তরীণ রাজনীতির বাধ্যবাধকতা এবং ইরায়েল-হামাস যুদ্ধের মতো বিক্ষিপ্ততার মাঝেই ইউক্রেনের জন্য অব্যাহত সামরিক সমর্থন শক্তি প্রদর্শনের বিষয়টি নিশ্চিত করতে মহাসচিবের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।

 

একজন নতুন মহাসচিব একটি গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে দায়িত্ব নেবেন। যেহেতু জোটটি ১৯৪৯ সালে ১২টি মূল দেশ থেকে শুরু করে বর্তমানে প্রায় ৩১টি দেশে সম্প্রসারিত হয়েছে এবং অদূর ভবিষ্যতে সুইডেনের যোগদানের সম্ভাবনা রয়েছে, তাই ঝুঁকির পরিধি প্রকৃতিও বেশ ভিন্ন। বর্তমানে রাশিয়াকে মোকাবিলা করাই ন্যাটোর প্রধান বাধ্যবাধকতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এক সময়ে ইউরো-আটলান্টিক এবং ইন্দো-প্যাসিফিক… ভিন্ন ভিন্ন মঞ্চ বলে বিবেচিত হলেও, তার নিরাপত্তার যোগসূত্র দক্ষিণ চিন সাগরের মতো পরিসরকে অন্তর্ভুক্ত করার দরুন ন্যাটোর চ্যালেঞ্জের পরিধি বেশ প্রশস্ত হয়েছে। সর্বোপরি উদীয়মান প্রযুক্তি, বিভ্রান্তিমূলক প্রচারাভিযান এবং বাণিজ্য নির্ভরতার ক্রমবর্ধমান অস্ত্রায়ন নতুন যুগের ব্যাঘাত সৃষ্টি করছে।

 

প্রার্থী অনেক, অভাব কমত্যের

গত কয়েক মাস ধরে ন্যাটোর মহাসচিব পদটির জন্য বেশ কয়েকটি নাম উত্থাপিত হয়েছে এবং মানদণ্ড পছন্দের একটি দীর্ঘ তালিকা রয়েছে।

এত দিন পর্যন্ত মহাসচিব পদে পুরুষই আসীন ছিলেন। তাই এ বার কোনও নারীকে এই পদের জন্য প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। ইউক্রেনকে সমর্থন করার ক্ষেত্রে এবং রাশিয়ার বিষয়ে নিজেদের তরফে দেওয়া সতর্কবার্তা সঠিক হওয়ার দরুন মধ্য ও পূর্ব ইউরোপের দেশগুলি অনেকটাই এগিয়ে রয়েছে এবং অনেকেই এই অঞ্চল থেকে ন্যাটোর প্রধানকে চান। এই প্রেক্ষাপটে এস্তোনিয়ান প্রধানমন্ত্রী কাজা ক্যালাসের নাম উঠে এসেছে, যাঁর দেশ ২০২৩ সালে সামরিক বাজেটের ২.৮৫ শতাংশ ব্যয় করেছে প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত ব্যয়ের বিষয়ে প্রার্থীর স্বদেশের রেকর্ড নির্বাচনের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, বিশেষ করে যেহেতু ৩১টি সদস্যের মধ্যে মাত্র ৮টি দেশ নিজেদের তাদের বাধ্যতামূলক জিডিপি প্রতিরক্ষা ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রার শতাংশ পূরণ করতে পেরেছে তা সত্ত্বেও ভবিষ্যতে রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনে সম্ভাব্য আগ্রহী পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলি বাল্টিক দেশ থেকে আগত এমন কাউকে ন্যাটোর প্রধান পদে দেখতে চাইবে না, যিনি রাশিয়ার প্রতি ভীষণ কঠোর মনোভাব পোষণ করেন।

ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী মেটে ফ্রেডেরিকসেন তাঁর জোরালো কিন্তু ইউক্রেনের পক্ষপাতদুষ্ট সমর্থনের মাধ্যমে সমর্থন কুড়োতে পারেন। তা সত্ত্বেও ডেনমার্কের সামরিক খাতে ব্যয় জিডিপির ১.৩৮ শতাংশ অর্থাৎ ন্যাটো দ্বারা নির্ধারিত শতাংশের কম এবং ২০০৯-২০১৪ সালে ক্ষমতায় থাকা প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অ্যান্ডারস ফগ রাসমুসেন-এর মহাসচিব পদে প্রার্থী হওয়া ডেনমার্কের অন্য কোনও নেতৃত্বের (বা এমনকি স্টলটেনবার্গের পরে নর্ডিক দেশ থেকে উদ্ভূত অন্য কোনও নেতা) ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনাকে আবছা করে দিয়েছে।

 

ইউক্রেনকে সমর্থন করার ক্ষেত্রে এবং রাশিয়ার বিষয়ে নিজেদের তরফে দেওয়া সতর্কবার্তা সঠিক হওয়ার দরুন মধ্য ও পূর্ব ইউরোপের দেশগুলি অনেকটাই এগিয়ে রয়েছে এবং অনেকেই এই অঞ্চল থেকে ন্যাটোর প্রধানকে চান।

 

কানাডার উপ-প্রধানমন্ত্রী এবং প্রাক্তন বিদেশমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিহ্যান্ড এই ভূমিকার জন্য যোগ্য এক মহিলা প্রার্থী, যিনি ইউক্রেনকে কঠোর ভাবে সমর্থন করেছেন এবং এমনকি রাশিয়ার নিষিদ্ধ ব্যক্তিদের তালিকায় রয়েছেন। কিন্তু কানাডা প্রতিরক্ষা ব্যয়ে পিছিয়ে আছে এবং একজন ইইউ-বহির্ভূত প্রার্থীকে সম্ভবত ফ্রান্স এবং অন্যান্য দেশ ভেটো দেবে। কারণ ন্যাটোর ৩১টি সদস্য দেশের মধ্যে ২২টি দেশই ইইউ-র অন্তর্ভুক্ত এবং স্টলটেনবার্গ ইতিমধ্যেই একটি ইইউ-বহির্ভূত দেশ থেকে ক্ষমতায় আসীন ছিলেন। এই কারণেই কিয়েভের শীর্ষ সমর্থনকারীদের অন্যতম এবং ন্যাটোর প্রতিরক্ষা ব্যয়ের লক্ষ্য পূরণ করা সত্ত্বেও ব্রেক্সিট-পরবর্তী ব্রিটেনের প্রাক্তন প্রতিরক্ষা সচিব বেন ওয়ালেসের প্রার্থীপদ প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়েছে।

ফলে খুব স্বাভাবিক ভাবেই সকলের সুনজরে এসেছেন ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডের লেইন, যাঁর ইউক্রেনকে সমর্থন-সহ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ইইউ স্তরে ঐকমত্য তৈরিতে অপরিসীম অভিজ্ঞতা রয়েছে। কিন্তু তাঁর নিজের দেশের ইউরোপের অর্থনৈতিক শক্তিকেন্দ্র হিসাবে মর্যাদা থাকা সত্ত্বেও জার্মানি প্রতিরক্ষা ব্যয়ে পিছিয়ে রয়েছে এবং জার্মান প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসাবে তাঁর আগের কার্যকাল কথিত ক্রোনিজমের দরুন অজনপ্রিয় প্রমাণিত হয়েছিল। তা ছাড়া, কথাও লক্ষ্যণীয় যে, ফন ডের লেইন কমিশনের প্রেসিডেন্ট হিসাবে আর কটি মেয়াদ থাকতে চান কি না। কারণ কমিশনের প্রেসিডেন্টের পদ ন্যাটো মহাসচিবের পদের চেয়ে নিঃসন্দেহে অনেক বেশি শক্তিশালী

নেদারল্যান্ডসের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুটে এই মহাসচিব পদের দৌড়ে রয়েছেন। তাঁর সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক এবং ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে সাধারণ নির্বাচন পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী থাকার ১৩ বছরের অভিজ্ঞতা রয়েছে। তবে অন্যান্য ন্যাটো সদস্য এ বার কোনও ‘ডাচ নেতৃত্ব’কে ক্ষমতায় চাইবে না। কারণ ন্যাটোর মধ্যে ইতিমধ্যেই তিন জন ডাচ প্রধান রয়েছেন। সর্বোপরি, ইউক্রেনে উদার ভাবে অনুদান প্রদান করা সত্ত্বেও তাঁর দেশ নেদারল্যান্ডসের প্রতিরক্ষা ব্যয়ের অস্বাভাবিক পরিসংখ্যান২০২৩ সালে জিডিপির মাত্র ১.৭ শতাংশ - রুটের বিরুদ্ধেই গিয়েছে।

এ ভাবে বেশ কয়েকটি সম্ভাব্য ন্যাটো প্রধান প্রার্থী থাকা সত্ত্বেও বেশির ভাগই নির্দিষ্ট কিছু গুণমানে উতরে গেলেও সব ক’টি পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন। এ ছাড়া এই প্রেক্ষাপটে শিরোনামে থাকা সত্ত্বেও এই কথিত প্রার্থীদের কেউ ন্যাটোর মহাসচিব পদে আসীন হওয়ার জন্য আদৌ আগ্রহী বা উপলব্ধ কি না, সে কথাও স্পষ্ট নয়।

 

ইউক্রেনে উদার ভাবে অনুদান প্রদান করা সত্ত্বেও তাঁর দেশ নেদারল্যান্ডসের প্রতিরক্ষা ব্যয়ের অস্বাভাবিক পরিসংখ্যান – ২০২৩ সালে জিডিপির মাত্র ১.৭ শতাংশ - রুটের বিরুদ্ধেই গিয়েছে।

 

এই বছর নির্ধারিত ইইউ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন হওয়ার দরুন পরিস্থিতি আরও জটিল। আরও প্রভাবশালী ইইউ প্রতিষ্ঠানের ভূমিকার জন্য বৃহত্তর প্রচেষ্টা প্রদান করলেও ন্যাটোর মহাসচিব পদটি খানিক যেন সান্ত্বনা পুরস্কারের মতোই… ইউরোপের মধ্যেই এ হেন মনোভাব বেশ স্পষ্ট। এর সঙ্গে আবার যোগ হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্পের সম্ভাব্য বিজয় সংক্রান্ত বৃহত্তর ভয়। ট্রাম্প জিতলে ন্যাটোর প্রতি অনীহা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাহারের সম্ভাবনাও একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। সুপ্রিম অ্যালায়েড ম্যান্ডার ইউরোপ-এর (এসএসিইইউআর) ভূমিকার স্থায়ী ধারক হিসাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবের পরিপ্রেক্ষিতে ন্যাটো প্রধানের আবার ওয়াশিংটনের অনুমোদন প্রয়োজন, যিনি ঘনিষ্ঠ ট্রান্স-আটলান্টিক সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখতে সক্ষম হবেন।

হুমকির বলয় ক্রমসম্প্রসারিত হওয়ার এবং ইউরোপীয় মহাদেশে ক্রমাগত যুদ্ধ চলার দরুন এ বার ন্যাটো সদস্য রাষ্ট্রগুলিকে একটি সিদ্ধান্তমূলক পছন্দ নির্বাচন করতেই হবে।

 


শায়রী মলহোত্র অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের অ্যাসোসিয়েট ফেলো।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.