Author : Abhijit Singh

Expert Speak India Matters
Published on Mar 18, 2022 Updated 5 Days ago

ভারতীয় প্রতিরক্ষা পরিষেবার জন্য বাজেট ‘চক্রব্যূহ’ থেকে নিস্তারের কোনও পথ নেই।

প্রতিরক্ষা বাজেট ২০২২-২৩: একটি মিশ্র প্রতিশ্রুতি
প্রতিরক্ষা বাজেট ২০২২-২৩: একটি মিশ্র প্রতিশ্রুতি

অর্থমন্ত্রীর বাজেট ঘোষণার প্রাক্কালে গণমাধ্যমে একটি রিপোর্টে প্রকাশ পায়, প্রতিরক্ষা খাতে মূলধনী বরাদ্দ খরচ করার ক্ষেত্রে এক অস্বাভাবিক মন্থর গতি লক্ষ করা গেছে। প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে,বর্তমান অর্থবর্ষে ভারতীয় সেনা বাজেটে তাদের বরাদ্দ মূলধনী অর্থের মাত্র ৪০% খরচ করেছে। ভারতীয় বায়ুসেনা তাদের জন্য বরাদ্দ বাজেটের প্রায় ৭০% খরচ করেছে। শুধু মাত্র ভারতীয় নৌবাহিনী ৯০% খরচ করতে সক্ষম হয়েছে।

বেশ কিছু দিন যাবৎ স্বাভাবিক বরাদ্দের তুলনায় অনেকটা বেশি মূলধনের প্রয়োজনীয়তার কথা বলে আসা সত্ত্বেও প্রাপ্ত অর্থ কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে ভারতীয় সেনার চ্যুতি আশ্চর্যজনক। এমনকি গত বছরের প্রতিরক্ষা বাজেটেও নতুন অস্ত্র এবং সরঞ্জাম কেনার জন্য অতিরিক্ত মূলধনী অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছিল। যদিও তাতে লাভ বিশেষ হয়নি, সে কথা স্পষ্ট। অতিমারির প্রকোপে চুক্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ায় দেরি এবং অর্থপ্রদান ও অস্ত্র প্রাপ্তির প্রক্রিয়াগুলি বাধাপ্রাপ্ত হওয়ার ফলে ভারতীয় সেনার অস্ত্র ক্রয়ের পরিকল্পনা ধাক্কা খেয়েছে।

গত অর্থবর্ষে ধার্য ৩৩,২৫৩ কোটি টাকার তুলনায় এই বছর ভারতীয় নৌবাহিনীর সামগ্রিক বাজেট উল্লেখযোগ্য ভাবে বৃদ্ধি পেয়ে ৪৭,৫৯০ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে, যা ভারত মহাসাগরে চিনের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ভারত সরকারের তৎপরতা এবং উপকূলীয় অঞ্চলে নিজের সক্রিয় উপস্থিতির কথা তুলে ধরার প্রয়াসকেই দর্শায়।

ফলে ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে প্রতিরক্ষা বাজেটে ভারতীয় সেনার জন্য মূলধনী বরাদ্দের পরিমাণ কমে যাওয়া অপ্রত্যাশিত নয়। চিত্তাকর্ষক না হলেও সামগ্রিক ভাবে প্রতিরক্ষা বাজেটে ৯.৪৮ শতাংশের এক স্বাস্থ্যকর বৃদ্ধি লক্ষ করা গেছে (গত বছরের বরাদ্দ ৪.৭৮ লক্ষ কোটি টাকা থেকে এ বছরের ৯.২৫ লক্ষ কোটি টাকা পর্যন্ত)। কিন্তু একই সঙ্গে ভারতীয় সেনার জন্য মূলধনী বরাদ্দ হ্রাস পেয়েছে ১২% (যার পরিমাণ প্রায় ৪০০০ কোটি টাকা)। অন্য দিকে ভারতীয় নৌবাহিনীর জন্য বরাদ্দ অর্থের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ৩০০০ কোটি টাকা, যার নেপথ্যে রয়েছে আধুনিকীকরণ খাতে ধার্য পুঁজির ৪৩% বৃদ্ধি। গত অর্থবর্ষে ধার্য ৩৩,২৫৩ কোটি টাকার তুলনায় এই বছর ভারতীয় নৌবাহিনীর সামগ্রিক বাজেট উল্লেখযোগ্য ভাবে বৃদ্ধি পেয়ে ৪৭,৫৯০ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে, যা ভারত মহাসাগরে চিনের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ভারত সরকারের তৎপরতা এবং উপকূলীয় অঞ্চলে নিজের সক্রিয় উপস্থিতির কথা তুলে ধরার প্রয়াসকেই দর্শায়। এমনকি ভারতীয় উপকূল রক্ষা খাতেও গত বছরের তুলনায় এ বছর বরাদ্দ অর্থের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে ৩৯%।

যদিও, এ বারে বাজেটের প্রধান আলোচ্য বিষয়টি ছিল আধুনিকীকরণ খাতে ধার্য মোট অর্থের ৬৮% দেশীয় শিল্পের জন্য বরাদ্দ করার ব্যাপারে অর্থমন্ত্রীর ঘোষণা। এই ঘোষণা স্বদেশিকরণের প্রচারের জন্য গৃহীত সরকারি সিদ্ধান্তগুলির মধ্যে সাম্প্রতিকতম। এই পদক্ষেপের অন্যতম লক্ষ্য হল বৈদেশিক অস্ত্র সরঞ্জাম ক্রয়ের উপরে সেনার নির্ভরতা কমিয়ে আনা। ২০২০ সালের আগস্ট মাসে ১০১টি দ্রব্যের আমদানির উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করা থেকে শুরু করে ২০২১ সালের মে মাসে ১০৮টি প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের ‘সুনিশ্চিত ভাবে স্বদেশিকরণের তালিকা’ প্রকাশ করা পর্যন্ত… ভারতীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রক ক্রমান্বয়ে বিদেশে উৎপাদিত সরঞ্জাম ক্রয় করার সম্ভাব্য পথগুলিকে সংকীর্ণ করে তুলেছে। অর্থমন্ত্রী তাঁর বাজেট বক্তৃতায় অভ্যন্তরীণ ভাবে প্রয়োজনীয় যুদ্ধ সরঞ্জামের জোগান পূরণ করার গুরুত্বের কথা পুনরাবৃত্তি করেন। প্রতিরক্ষামন্ত্রী যিনি পূর্বেও স্বদেশিকরণ প্রক্রিয়াকে সহজতর করে তোলার উদ্দেশ্যে একটি নতুন ডি আর ডি ও অস্ত্র ক্রয় নির্দেশাবলি সহ অন্যান্য স্বদেশিকরণের পদক্ষেপকে সমর্থন জুগিয়েছেন, একাধিক অভিজ্ঞ প্রতিরক্ষা কর্মী ও ভাষ্যকারদের মতোই ‘ভোকাল ফর লোকাল’ বা ‘স্বদেশি প্রচেষ্টাকে সমর্থন’ করার বিষয়ে সরব হয়েছেন।

প্রতিরক্ষামন্ত্রী যিনি পূর্বেও স্বদেশিকরণ প্রক্রিয়াকে সহজতর করে তোলার উদ্দেশ্যে একটি নতুন ডি আর ডি ও অস্ত্র ক্রয় নির্দেশাবলি সহ অন্যান্য স্বদেশিকরণের পদক্ষেপকে সমর্থন জুগিয়েছেন, একাধিক অভিজ্ঞ প্রতিরক্ষা কর্মী ও ভাষ্যকারদের মতোই ‘ভোকাল ফর লোকাল’ বা ‘স্বদেশি প্রচেষ্টাকে সমর্থন’ করার বিষয়ে সরব হয়েছেন।

তবুও সরকার দ্বারা গৃহীত পদক্ষেপগুলি অনেকাংশেই ‘বলপূর্বক স্বদেশিকরণ’-এর প্রচেষ্টাকে নির্দেশ করে। বর্তমানে যখন যুদ্ধ-বিগ্রহ আরও অত্যাধুনিক হয়ে উঠেছে, তখন সেনাকে বাধ্য করা হচ্ছে স্বদেশে পরিকল্পিত ও নির্মিত অস্ত্র ব্যবহারে যেগুলি প্রয়োজনীয় দক্ষতার মাপকাঠি অতিক্রম করতে সক্ষম না-ও হতে পারে। বাস্তবিক ভাবে অতীতেও একাধিক বার ভারতীয় সেনা নিম্ন মানের স্বদেশি সরঞ্জাম প্রত্যাখ্যান করেছে। যদিও এ কথার অর্থ এটা নয় যে, ভারতের সব ক’টি প্রতিরক্ষা শিল্প সংস্থাই অযোগ্য। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, লারসন অ্যান্ড টুবরোর (এল অ্যান্ড টি) কথা যেটি একটি বেসরকারি সংস্থা হয়েও ভারতের সাবমেরিন নির্মাণ প্রকল্পে অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে ভারতীয় সেনার গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজন সাধন করেছে। যদিও এল অ্যান্ড টি-র উদাহরণটি আদর্শ নমুনা নয়, ব্যতিক্রমের দলে পড়ে। সামগ্রিক ভাবে ভারতের বেসরকারি সংস্থাগুলি প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে এবং এর অন্যতম প্রধান কারণ হল, গবেষণা ও উন্নয়ন খাতে সংস্থাগুলির পর্যাপ্ত অর্থ বিনিয়োগের অভাব। ভারতীয় সেনার তরফ থেকে চুক্তির অভাব সংস্থাগুলিকে বিনিয়োগে উৎসাহিত না করার অন্যতম কারণ হলেও ভারতের দেশীয় বেসরকারি ক্ষেত্রে প্রক্রিয়ার অদক্ষতা এমন এক বাস্তব যা অস্বীকার করা সম্ভব নয়। স্বদেশি শিল্পাঞ্চলে বাধ্যতামূলক বিনিয়োগ সদর্থক পদক্ষেপ রূপে প্রশংসাযোগ্য হলেও সেটি এমন এক শিল্পাঞ্চল বাস্তুতন্ত্র গড়ে তুলতে সক্ষম নয় যার অধীনে একটি প্রতিরক্ষা উপপদ্ধতি (সাব-সিস্টেম) বিকশিত হয়ে পারে।

মোট প্রতিরক্ষা মূলধনী বরাদ্দের প্রায় তিন চতুর্থাংশ আত্মনির্ভরতার জন্য সংরক্ষিত রাখা স্বদেশিকরণের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে যথাযথ মনে হলেও তা ভারতীয় সেনাকে এক আপাতবিরোধী বাস্তবের সঙ্গে লড়াইয়ের সম্মুখীন করেছে। ভারতীয় সশস্ত্রবাহিনীকে কর্মক্ষমতার ধার বজায় রাখার উপায় ভাবতে হবে এমন সব যুদ্ধ সরঞ্জাম ব্যবহার করে যেগুলি মানের দিক থেকে শ্রেষ্ঠ তো নয়ই, এমনকি যথেষ্ট ভরসাযোগ্যও নয়। আগামিদিনে কয়েকটি বৈদেশিক প্রকল্পের কাজ হওয়ার কথা থাকলেও এবং ভারতীয় সরকারের আদেশের ঘেরাটোপে থাকা সত্ত্বেও বিশেষ করে ভারতীয় নৌবাহিনীকে প্রমাণিত ভাবে সক্ষম সরঞ্জাম ক্রয় করার ভাবতে হবে।

ভারতীয় সশস্ত্রবাহিনীকে কর্মক্ষমতার ধার বজায় রাখার উপায় ভাবতে হবে এমন সব যুদ্ধ সরঞ্জাম ব্যবহার করে যেগুলি মানের দিক থেকে শ্রেষ্ঠ তো নয়ই, এমনকি যথেষ্ট ভরসাযোগ্যও নয়।

আধুনিকীকরণের খামতির কথা মাথায় রেখে নতুন প্রতিরক্ষা বাজেটের ২৫% পুঁজি বেসরকারি সংস্থা, নতুন উদ্যোগ এবং অ্যাকাডেমিয়াগুলির গবেষণা ও উন্নয়ন বাজেট হিসেবে ধার্য করা হয়েছে। এটি শতাংশের নিরিখে তাৎপর্যপূর্ণ হলেও প্রকৃত পরিসংখ্যানের দিক থেকে তেমন কিছু নয়। বাস্তবে ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে বেসরকারি ক্ষেত্রে প্রতিরক্ষা আর অ্যান্ড ডি খাতে বরাদ্দ টাকার পরিমাণ মাত্র ৩০০০ কোটি টাকা যেখানে এই খাতে মোট প্রতিরক্ষা বাজেট ১১,৯৮১ কোটি টাকা (গত বছরের মোট বরাদ্দ ছিল ১১,৩৭৫ কোটি টাকা)। একই সঙ্গে এ কথাও উল্লেখযোগ্য যে, সম্ভবত পূর্ব বরাদ্দ টাকা খরচ না করার দরুণ ২০২০-২১ অর্থবর্ষের সংশোধিত আর অ্যান্ড ডি বাজেট থেকে ১৫০০ কোটি টাকা কমিয়ে আনা হয়। এবং এ সব কিছুই ভারতের প্রতিরক্ষা উন্নয়ন ও গবেষণা ক্ষেত্রের বাস্তব চিত্র তুলে ধরে।

অনেকেই আশা করেছিলেন যে, ১৫তম অর্থ কমিশনের প্রস্তাব অনুযায়ী প্রতিরক্ষা এবং অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা (এম এফ ডি আই এস) খাতে অর্থমন্ত্রী এক সুনির্দিষ্ট এবং নিরবচ্ছিন্ন আধুনিকীকরণ পুঁজির ঘোষণা করবেন। তেমনটা হলে তা বরাদ্দ পুঁজির অনিশ্চিত খরচের সমস্যা সমাধানের পথে একটি পদক্ষেপ হতে পারত। কিন্তু সরকার প্রকৃতপক্ষে অনিঃশেষিত পুঁজি পুনরায় প্রতিরক্ষা বাজেটের অন্তর্ভুক্ত করতে সম্পূর্ণ ভাবে প্রস্তুত নয়। এর ফলে ভারতীয় সেনাকে বিদ্যমান নিয়মের আওতায় থেকেই খরচ না-হওয়া টাকা ফেরত দিয়ে দিতে হবে এবং একই সঙ্গে তাকে সেই বাজেট ‘চক্রব্যূহ’র অধীনস্থই থাকতে হবে যা সব সশস্ত্র সেনাবাহিনীরই নিয়তি।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.