Author : Pratnashree Basu

Published on May 02, 2024 Updated 0 Hours ago

দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে পুনর্মিলনের দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য ত্যাগ করার উত্তর কোরিয়ার সিদ্ধান্ত কোরীয় উপদ্বীপ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য একটি জটিল পরিস্থিতি উপস্থাপন করেছে।

সামরিক শক্তি প্রদর্শনের নেপথ্যে: উত্তর কোরিয়ার উদ্দেশ্য এবং উত্তর-পূর্ব এশিয়ার উদ্বেগ

১৫ জানুয়ারি কিম জং-উন ঘোষণা করেছিলেন যে, উত্তর কোরিয়া দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে একত্রিত হওয়ার প্রতিশ্রুতি বাতিল করবে, উত্তর কোরিয়ার সংবিধান থেকে দক্ষিণ কোরিয়া সংক্রান্ত ধারা খারিজ করে দেবে এবং সমন্বিতকরণের লক্ষ্যে কর্মরত সমস্ত রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলিকে বাতিল করার পাশাপাশি দক্ষিণের প্রতিবেশী অর্থাৎ দক্ষিণ কোরিয়াকে তার প্রধান শত্রু হিসাবে চিহ্নিত করবে এ হেন ঘোষণাটি পিয়ংইয়ংয়ের উচ্চতর সামরিক শক্তি প্রদর্শনের পরপরই করা হয়েছে, যা আসলে উত্তর-পূর্ব এশীয় নিরাপত্তার জন্য স্বাভাবিকের চেয়ে অনেকটাই বেশি অশান্ত ২০২৪ সালের সূচনার ইঙ্গিত দিয়েছে। গত ৫-৭ জানুয়ারি দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে বিতর্কিত পশ্চিম সমুদ্র সীমানার কাছে বেশ কয়েক দফা গোলাগুলি বর্ষণের পরে পিয়ংইয়ং ১৪ জানুয়ারি একটি সলিড-ফুয়েল হাইপারসনিক মিসাইল উৎক্ষেপণ করে এবং জানুয়ারি দক্ষিণ কোরিয়া ঘোষণা করে যে, তারা ‘জলের নীচে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবস্থা’র পরীক্ষা চালাচ্ছে।

দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে পুনর্মিলনের দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য উত্তর কোরিয়া বাতিল করছে… এ হেন ঘোষণা কোরীয় উপদ্বীপের জন্য উল্লেখযোগ্য তাৎপর্য বহন করে। উত্তর কোরিয়ার অবস্থানের এই পরিবর্তনের পাশাপাশি এ হেন ঘোষণা যে, তারা যুদ্ধ শুরু করবে না; কিন্তু কোনও যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হলে তা এড়িয়েও যাবে না… আসলে বেশ কয়েকটি মূল উদ্বেগ ও বিষয় উত্থাপন করেছে। পুনর্মিলনের লক্ষ্য পরিত্যাগ করা আসলে দুই কোরিয়াকে একক সরকারের অধীনে একত্রিত করার কয়েক দশকব্যাপী আকাঙ্ক্ষার মৃত্যুকেই বোঝায়। যুদ্ধের বিষয়ে উত্তর কোরিয়ার অস্পষ্ট অবস্থান নানাবিধ অনিশ্চয়তার জন্ম দেওয়ার পাশাপাশি কোরীয় উপদ্বীপে উত্তেজনা বৃদ্ধি করেছে। কারণ দীর্ঘ সময় যাবৎ পিয়ংইয়ং-এর পারমাণবিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা অগ্রগতি আন্তর্জাতিক উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে। সক্রিয় ভাবে না চাইলেও সংঘাতে জড়িয়ে পড়ার যে কোনও ইচ্ছার ইঙ্গিত আখেরে সামরিক উত্তেজনা বৃদ্ধির ঝুঁকিকেই দর্শায়।

 

দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে পুনর্মিলনের দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য উত্তর কোরিয়া বাতিল করছে… এ হেন ঘোষণা কোরীয় উপদ্বীপের জন্য উল্লেখযোগ্য তাৎপর্য বহন করে।

 

ঘোষণাটি প্রতিবেশী দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জও তৈরি করেছে। দক্ষিণ কোরিয়া, চি, জাপান এবং রাশিয়া এই অঞ্চলে স্থিতিশীলতা বজায় রাখার প্রচেষ্টায় ভূমিকা পালন করেছে এবং উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ আলোচনাকে উত্সাহ জুগিয়েছে। উত্তর কোরিয়ার উদ্দেশ্যগুলির আকস্মিক পরিবর্তনের জন্য আঞ্চলিক কৌশল কূটনৈতিক উদ্যোগের পুনর্মূল্যায়নের প্রয়োজন হতে পারে। দক্ষিণ কোরিয়া নিকটতম সবচেয়ে প্রত্যক্ষ ভাবে প্রভাবিত প্রতিবেশী দেশ হওয়ায় একটি সূক্ষ্ম কূটনৈতিক কর্মকাণ্ডের সম্মুখীন হয়েছে। কয়েক দশক ধরে দক্ষিণ কোরিয়ার সরকার উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সম্পৃক্ততা চূড়ান্ত পুনর্মিলনের লক্ষ্যে নীতি অনুসরণ করেছে। যাই হোক, উত্তর কোরিয়ার পুনর্মিলনের আকাঙ্ক্ষা পরিত্যাগ করা আসলে সিলকে তার পদ্ধতি পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য করেছে, যাতে আরও দৃঢ় নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য একটি পরিবর্তন করা সম্ভব হয়। একই সঙ্গে সিওল বিশেষ করে টোকিও এবং ওয়াশিংটনের সঙ্গে তার কূটনৈতিক প্রচেষ্টার বৈচিত্র্যকরণের জন্য প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে পিয়ংইয়ংয়ের তরফে গোলাগুলি চালানোর পরপরই তিনটি দেশ ত্রিপাক্ষিক নৌ মহড়া পরিচালনা করেছে। পুনর্মিলন সংক্রান্ত কিমের ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় সিল আনুষ্ঠানিক ভাবে বলেছে যে, আন্তঃ-কোরীয় সম্পর্কে যা-ই বদল ঘটুক না কেন, উত্তর কোরিয়া সমন্বিতকরণের নীল নকশার উন্নতি-সহ পুনর্মিলন সংক্রান্ত নিজস্ব প্রচেষ্টা উদ্যোগ অব্যাহত রাখবে। উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক সক্ষমতা আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতা নিয়ে তার দীর্ঘ দিন যাবৎ উদ্বেগের মধ্যে থাকা জাপান এই ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে আরও আতঙ্কিত হয়ে উঠতে পারে। উত্তর কোরিয়ার উদ্দেশ্যের পরিবর্তন জাপানের নিরাপত্তা উদ্বেগকে উস্কে দিতে পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র – যার এই অঞ্চলে যথেষ্ট সামরিক উপস্থিতি রয়েছে এবং উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ আলোচনায় যে একটি গুরুত্বপূর্ণ শক্তি হয়ে উঠেছে – তাকেও এই নতুন কূটনৈতিক পরিসরের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে হবে। উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে আলোচনার জন্য ওয়াশিংটনকে তার দৃষ্টিভঙ্গির পুনর্মূল্যায়ন করতে হবে এবং আঞ্চলিক অংশীদারদের সঙ্গে নিবিড় ভাবে সহযোগিতা করতে হবে।

অবশ্য কিমের ঘোষণা অভ্যন্তরীণ চুক্তি সংরক্ষণের একটি প্রচেষ্টা হতে পারেবিশেষ করে তাঁসম্পূর্ণ বক্তৃতা নানা ভাবে জীবিকার মান উন্নত করা এবং অর্থনৈতিক লক্ষ্য অর্জনের উপর মনোযোগ দেওয়া হয়েছে। তবে এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, খাদ্য জ্বালানির ঘাটতি নিয়ে ইতিমধ্যেই সংগ্রামরত উত্তর কোরিয়ার অর্থনীতি কিমের এ হেন ঘোষণার পর যথেষ্ট চাপের মুখে পড়তে পারে। প্রকৃতপক্ষে, ২০২৩ সালে উত্তর কোরিয়া ত্যাগ করে দক্ষিণ কোরিয়ায় পাড়ি দেওয়া মানুষের সংখ্যা তিন গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের কারণে কয়েক বছর যাবৎ আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা জারি রয়েছে। এই নিষেধাজ্ঞাগুলি দেশটির বৈদেশিক মুদ্রা, প্রযুক্তি এবং পণ্যের প্রবেশাধিকারকে সীমাবদ্ধ করেছে। উত্তর কোরিয়া তার উদ্দেশ্যগুলিকে পুনর্নির্মাণ করায়, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এই নিষেধাজ্ঞাগুলি চালিয়ে যাওয়া বা সেগুলি আদৌ সামঞ্জস্যপূর্ণ করা জরুরি কি না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। প্রকৃতপক্ষে, সিরাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদকে (ইউএনএসসি) পিয়ংইয়ংয়ের বর্ধিত পারমাণবিক কর্মসূচির বিষয়ে নীরবতা ভঙ্গ করে অবস্থান গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে। ২০০৬ সালে পিয়ংইয়ংয়ের প্রথম পারমাণবিক পরীক্ষার পর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা এবং বছরের পর বছর ধরে সেই নিষেধাজ্ঞা কঠোর করা সত্ত্বেও ইউএনএসসি উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি রোধে ব্যর্থ হয়েছে।

 

উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের কারণে কয়েক বছর যাবৎ আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা জারি রয়েছে।

 

ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তেজনাপূর্ণ হলেও পিয়ংইয়ং-এর বর্ধিত আচরণকে বাস্তবতার পরিবর্তে অনেক বেশি বাগাড়ম্বর বলা যেতে পারে। পিয়ংইয়ং সম্ভবত মহড়া, পরীক্ষা গুলিবর্ষণ চালিয়ে যেতে পারে এবং এমনকি সমন্বিতকরণ সম্পর্কিত সমস্ত কার্যক্রম বাতিল করার পথেও হাঁটতে পারে। কিন্তু উত্তর কোরিয়ার পক্ষ থেকে প্রত্যক্ষ আক্রমণ চালানোর সম্ভাবনা কম। এর কারণ হল উত্তর কোরিয়া এ বিষয়ে যথেষ্ট অবগত যে, কোন সামরিক আক্রমণ অনিবার্য ভাবে ওয়াশিংটনকে এই অঞ্চলে ফের সম্পৃক্ত করার সুযোগ করে দেবে এবং উত্তর কোরিয়া এ হেন পরিস্থিতি হলে মোটেও কোনও প্রকার প্রতিক্রিয়া জানাতে ইচ্ছুক নয়। তা সত্ত্বেও দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে পুনর্মিলনের দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য ত্যাগ করার উত্তর কোরিয়ার সিদ্ধান্ত কোরীয় উপদ্বীপ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য একটি জটিল ও সংবেদনশীল পরিস্থিতি উপস্থাপন করেছে। বিবর্তিত ভূ-রাজনৈতিক সমীকরণ সত্ত্বেও হেন পরিস্থিতির জন্য যথেষ্ট সতর্ক বিবেচনা, কূটনৈতিক সম্পৃক্ততা এবং এই অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার প্রতিশ্রুতি প্রয়োজনউত্তর কোরিয়ার অনির্দেশ্য ইতিহাসের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে নীতির এ হেন পরিবর্তন এই অঞ্চলে শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষার জন্য একটি সতর্ক দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখারই দাবি করে।

 


প্রত্নশ্রী বসু অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের অ্যাসোসিয়েট ফেলো।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.

Author

Pratnashree Basu

Pratnashree Basu

Pratnashree Basu is an Associate Fellow, Indo-Pacific at Observer Research Foundation, Kolkata, with the Strategic Studies Programme and the Centre for New Economic Diplomacy. She ...

Read More +