Author : Rumi Aijaz

Issue BriefsPublished on Sep 02, 2022
ballistic missiles,Defense,Doctrine,North Korea,Nuclear,PLA,SLBM,Submarines

পি এম এ ওয়াই (ইউ) কেমন চলছে? ভারতের জাতীয় আবাসন কর্মসূচির পর্যালোচনা

  • Rumi Aijaz

    ভারতের ক্রমবর্ধমান শহর এলাকায় ক্রমশ বেড়ে–চলা প্রয়োজনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার উপযোগী সাশ্রয়ী মূল্যের বাড়ির সরবরাহ অত্যন্ত অপ্রতুল; এর ফলস্বরূপ বেড়ে চলেছে বস্তি ও অন্যান্য এলোমেলোভাবে নির্মিত এলাকা, যেখানে বসবাসের অবস্থা অত্যন্ত করুণ। ২০১৫ সালে ভারত সরকার সাশ্রয়ী মূল্যের আবাসনের অভাব পূরণ করতে নিয়ে আসে একটি জাতীয় আবাসন কর্মসূচি:‌ প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা (নাগরিক) বা পি এম এ ওয়াই (ইউ)। এই প্রতিবেদনটি পি এম এ ওয়াই (ইউ)–এর অগ্রগতির মূল্যায়ন করে, এবং দেখায় যে মিশনটি ২০২২ সালের মধ্যে সকলের জন্য আবাসন প্রদানের লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৫০ শতাংশ অর্জন করতে পেরেছে। প্রতিবেদনটি এই কর্মসূচির সাফল্যের ক্ষেত্রে প্রশাসনিক ও আর্থ–সামাজিক প্রতিবন্ধকতার রূপরেখা তুলে ধরেছে।

    আরোপণ: রুমি আইজাজ, “হাউ ফেয়ারস দ্য পি এম এ ওয়াই (ইউ)? টেকিং স্টক অফ ইন্ডিয়া’‌জ ন্যাশনাল হাউজিং প্রোগ্র‌্যাম’‌’‌, ওআরএফ বিশেষ প্রতিবেদন নং ১৮৯, মে ২০২২, অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন।

পি এম এ ওয়াই (ইউ) কেমন চলছে? ভারতের জাতীয় আবাসন কর্মসূচির পর্যালোচনা

ভূমিকা

ভারতে শহরগুলির বিপুল সংখ্যক বাসিন্দা দুটি সম্পর্কিত কারণে উপযুক্ত বাড়িতে বসবাস করতে অক্ষম: তাঁদের বাড়ি কেনা বা ভাড়া নেওয়ার জন্য অপ্রতুল আয়, এবং সাশ্রয়ী মূল্যের বাড়ির অভাব।[ক] শহর জীবিকার সুযোগ তৈরি করে এমন একটা ধারণা প্রচলিত আছে, আর তাই শহরাঞ্চল মানুষকে আকর্ষণ করে। এই ব্যক্তি বা পরিবারগুলি অতএব তাঁদের সামর্থমতো অর্থ একত্র করে শহরের অপরিকল্পিত এলাকায় নিজেদের জন্য কিছু একটা আশ্রয় তৈরি করে নেন। এই ঘটনা ভারতীয় শহরগুলিতে বস্তি ও অপরিকল্পিত কলোনিগুলিকে বাড়বাড়ন্তের দিকে নিয়ে গেছে। যেহেতু এই বাসস্থানগুলি অননুমোদিত, তাই সরকারি সংস্থাগুলি প্রায়শই তাদের মৌলিক সুযোগ–সুবিধা প্রদান করে না, এবং জীবনযাত্রাও নিম্নমানের হয়ে যায়।

২০১১ সালের শেষ আদমশুমারিতে দেখা গেছে, ৬৫ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ, বা ভারতের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৫ শতাংশ, বস্তিতে বাস করেন। এই সংখ্যা দেশের মোট শহুরে জনসংখ্যার ১৭ শতাংশ।[১] সবচেয়ে বেশি বস্তিবাসী জনসংখ্যার রাজ্যগুলি (২৮ শতাংশের উপরে) হল অন্ধ্রপ্রদেশ, ছত্তিশগড় ও মধ্যপ্রদেশ৷ কিছু পার্বত্য রাজ্যে, বিশেষ করে হিমাচল প্রদেশ, সিকিম, অরুণাচল প্রদেশ, নাগাল্যান্ড ও মিজোরামে, বস্তিগুলি তুলনামূলকভাবে সাম্প্রতিককালে গড়ে উঠেছে, কারণ এগুলি ২০১১ সালের আদমশুমারির গণনায় প্রথম উঠে এসেছে। নির্দিষ্ট শহরগুলির ক্ষেত্রে, বৃহত্তর বিশাখাপত্তনম, জব্বলপুর, বৃহত্তর মুম্বই, বিজয়ওয়াড়া ও মেরঠে[২] বস্তিবাসী জনসংখ্যা ছিল বৃহত্তম:‌ ৪০ শতাংশেরও বেশি।

অননুমোদিত কলোনিতে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যার নির্ভরযোগ্য তথ্য পাওয়া যায় না। কিছু অনুমান অনুসারে, দিল্লির জনসংখ্যার ২৫–৩০ শতাংশ এই ধরনের কলোনিতে বাস করেন।[৩] অনেক দরিদ্র মানুষ তাঁদের মাথার উপর ছাদ ছাড়াই সরকারি এলাকায় বাস করেন, যেমন ফুটপাথে।

সরকারি সংস্থাগুলি ঐতিহাসিকভাবে অপরিকল্পিত (বা নিয়ম-না-মেনে গড়ে ওঠা) বসতি এলাকাগুলির বৃদ্ধির বিষয়ে একটি উদার দৃষ্টিভঙ্গি নিয়েছে। যদিও কর্তৃপক্ষ উচ্ছেদ অভিযানও চালিয়ে থাকে, তবে তার বেশিরভাগই করা হয় যখন এলাকাটি একটি উন্নয়ন প্রকল্পের মধ্যে আসে বা স্পষ্টভাবে অ–নিরাপদ বলে মনে করা হয়। দরিদ্র পরিবারগুলি যেখানেই তাদের বাড়ি তৈরি করেছে, সেখানেই তাদের বসবাসের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, প্রত্যেক ব্যক্তিরই যে ইচ্ছা হলে শহরে বাস করার অধিকার রয়েছে, ক্রমশ বেশি করে তার স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে, এবং সেই সঙ্গে এই ধরনের অনেক এলাকাকে অনুমোদিত হিসাবে মর্যাদা দেওয়া হয়েছে, আর পরবর্তীতে আপগ্রেডও করা হয়েছে। এমন বসতি এলাকায় বসবাসকারী মানুষের জন্য অসংখ্য আবাসন কর্মসূচিও চালু করা হয়েছে।

২০১১ সালের আদমশুমারির পরে, ২০১২ সালে আবাসন ও নগর দারিদ্র্ বিমোচন মন্ত্রক অনুমান করেছিল যে শহুরে ভারতে আরও ১৮.৭৮ মিলিয়ন আবাসিক ইউনিট[৪] প্রয়োজন। এই সামগ্রিক হিসাবের মধ্যে ৯৫ শতাংশ ছিল অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল শ্রেণি (ই ডবলিউ এস) এবং নিম্নআয়ের গোষ্ঠীর (এল আই জি) জন্য।

২০১৪ সালে একই মন্ত্রকের, তখন মন্ত্রকটির নাম হয়েছে আবাসন ও নগর বিষয়ক মন্ত্রক (মিনিস্ট্রি অফ হাউজিং অ্যান্ড আরবান অ্যাফেয়ার্স), পরবর্তী অনুমানে বলা হয়, আবাসনের চাহিদা ১১.২২ মিলিয়ন আবাসিক ইউনিটে দাঁড়াবে।[৫] পরের বছর ন্যাশনাল ডোমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স (এনডিএ) সরকার ২০২২ সালের মধ্যে সকলের জন্য আবাসন–এর ব্যবস্থা করতে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা (শহুরে) [পি এম এ ওয়াই (ইউ)] চালু করে। প্রকল্পটি ইতিমধ্যেই চালু থাকা আগের ইউনাইটেড প্রোগ্রেসিভ অ্যালায়েন্স (ইউপিএ) সরকারের একটি কর্মসূচির সম্প্রসারিত সংস্করণ হতে চেয়েছিল।

পি এম এ ওয়াই (ইউ) নিম্নলিখিত চারটি উপায়ে বাস্তবায়িত হচ্ছে:[৬]

(১) বিদ্যমান বস্তিগুলির উন্নয়ন (আই এস এস আর):

এর আওতায় বিদ্যমান বস্তিগুলিকে একই জায়গায় নতুন, বাসযোগ্য বাড়ি দিয়ে প্রতিস্থাপিত করা হচ্ছে৷ কেন্দ্র প্রতি বাড়িতে ১০০,০০০ টাকা পর্যন্ত সহায়তা প্রদান করে। একটি উন্মুক্ত ও স্বচ্ছ বিডিং প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নির্বাচিত বেসরকারি ডেভেলপারদের উৎসাহিত করা হয় বস্তিবাসীদের সঙ্গে পরামর্শ করে পুনর্নির্মাণ প্রকল্পের নকশা তৈরি ও বাস্তবায়ন করতে। বেসরকারি ডেভেলপারদের মধ্যে আগ্রহ তৈরি করতে এবং প্রকল্পগুলিকে আর্থিকভাবে কার্যকর করার জন্য প্রণোদনা দেওয়া হয়। এর মধ্যে রয়েছে তাদের অতিরিক্ত ফ্লোর এরিয়া অনুপাত এবং ফ্লোর স্পেস সূচকের অনুমতি দেওয়া, হস্তান্তরযোগ্য উন্নয়ন অধিকার প্রদান, এবং প্রকল্পগুলিকে ক্রস সাবসিডি দেওয়ার জন্য বাজারে কিছু বাড়ি বিনামূল্যে বিক্রি করা। কাজ শেষ হওয়ার পর যোগ্য বস্তিবাসীদের স্বচ্ছ পদ্ধতিতে বাড়ি বরাদ্দ করা হয়।

(২) ক্রেডিট–লিঙ্কড সাবসিডি স্কিম (সি এল এস এস):

এই প্রকল্পটি ই ডবলিউ এস, এল আই জি এবং মধ্যম আয়ের গোষ্ঠীগুলিকে (এম আই জি) লক্ষ্য করে করা। এই গোষ্ঠীর মানুষেরা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ৩–৬.৫ শতাংশ ভর্তুকিযুক্ত সুদে ১.২ মিলিয়ন পর্যন্ত গৃহঋণ পাওয়ার যোগ্য, এবং ঋণটি সর্বাধিক ২০ বছরের মধ্যে পরিশোধযোগ্য। প্রাপ্ত অর্থ একটি বাড়ি কিনতে, নিজের বাড়ি তৈরি করতে বা বিদ্যমান বাসস্থান উন্নত/বর্ধিত করতে ব্যবহার করা যেতে পারে। শুধুমাত্র ৩০ থেকে ২০০ বর্গ মিটারের মধ্যে কার্পেট এলাকা–সহ বাড়িগুলিই এর আওতায় আসে৷ শর্তাবলির মধ্যে রয়েছে অনগ্রসর অংশগুলিকে অগ্রাধিকার দেওয়া, যেমন ম্যানুয়াল স্কাভেঞ্জার, মহিলা, তফসিলি জাতি (এসসি)/তফসিলি উপজাতি (এসটি)/অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণি (ওবিসি), সংখ্যালঘু, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি এবং ট্রান্সজেন্ডাররা।

৩) অংশীদারিতে সাশ্রয়ী মূল্যের আবাসন (এ এইচ পি):

এই সু্যোগটির আওতায় কেন্দ্র একটি আবাসন প্রকল্পের অংশ হিসাবে নির্মিত প্রতিটি ই ডবলিউ এস বাড়ির জন্য ক্রেতাদের ১৫০,০০০ টাকা আর্থিক সহায়তা প্রদান করে। রাজ্য / কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলি তাদের নিজস্ব সংস্থার মাধ্যমে বা বেসরকারি ক্ষেত্রের সঙ্গে অংশীদারিত্বে প্রকল্প গ্রহণ করতে পারে, এবং বিভিন্ন আয় বিভাগের জন্য বাড়ি তৈরি করতে পারে। যোগ্যতামান অনুযায়ী আবাসন প্রকল্পে কমপক্ষে ২৫০টি বাড়ি থাকতে হবে, যার মধ্যে ৩৫ শতাংশ ই ডবলিউ এস বিভাগের জন্য সংরক্ষিত থাকবে। তা ছাড়া প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, একক মহিলা, প্রবীণ নাগরিক, এসসি/এসটি/ওবিসি শ্রেণিভুক্ত ব্যক্তি, সংখ্যালঘু এবং ট্রান্সজেন্ডারদের এই ধরনের সহায়তার অগ্রাধিকার দেওয়া হয়।

(৪) সুবিধাভোগীর নেতৃত্বে পৃথক নতুন বাড়ি নির্মাণ/বর্ধিতকরণ (বি এল সি–এন/বি এল সি–ই):

ই ডবলিউ এস শ্রেণিভুক্ত লোকেরা নতুন বাড়ি তৈরি করতে বা বিদ্যমান বাড়িগুলিকে নিজেরাই উন্নত করতে ইচ্ছুক হলে, এবং যাঁরা অন্য কোনও বিভাগের অধীনে পি এম এ ওয়াই (ইউ)–এর সুবিধাগুলি পাননি, তাঁরা প্রতি বাড়িতে ১৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত কেন্দ্রীয় সরকারের সহায়তার জন্য আবেদন করতে পারেন৷ তাঁরা যে জমিতে নির্মাণ করতে চান তার মালিকানার প্রমাণ দিতে তাদের জমি/সম্পত্তির নথি জমা দিতে হবে। ডায়রেক্ট বেনিফিট ট্রান্সফার (ডি বি টি)–এর মাধ্যমে যোগ্য আবেদনকারীদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠিয়ে দেওয়া হয়। রাজ্য / কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের সংস্থাগুলি, যেগুলি সাশ্রয়ী মূল্যের আবাসন উপনিবেশগুলি তৈরি করে, তারা বাড়ি তৈরি করতে এবং জল সরবরাহ, স্যানিটেশন, রাস্তা ও বিদ্যুতের মতো মৌলিক নাগরিক পরিকাঠামো প্রদানের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সহায়তা পায়।

পি এম এ ওয়াই (ইউ) নির্দেশিকা অনুযায়ী রাজ্য / কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিকে কেন্দ্রের সঙ্গে সমঝোতাপত্র স্বাক্ষর করতে হয়, আবাসন চাহিদা সমীক্ষা করতে হয় (স্থানীয় প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে), এবং প্রস্তাবনা, কর্মের পরিকল্পনা, বার্ষিক বাস্তবায়ন পরিকল্পনা ও বিশদ প্রকল্প প্রতিবেদন তৈরি করতে হয়। পি এম এ ওয়াই (ইউ)–এর সঙ্গে একটি প্রযুক্তি উপ–মিশন (টি এস এম) রয়েছে, যার লক্ষ্য আধুনিক, উদ্ভাবনী ও সবুজ প্রযুক্তির ও বাড়ি নির্মাণের উপাদানের ব্যবহার নিশ্চিত করা। দেশের বিভিন্ন ভূ–জলবায়ু অঞ্চলের পরিপ্রেক্ষিতে টি এস এম দুর্যোগ–প্রতিরোধী প্রযুক্তি ব্যবহারের সুযোগ তৈরি করে।

গ্রাম থেকে শহরে মানুষের নিয়মিত স্থানান্তর এবং কোভিড–১৯ অতিমারি–প্ররোচিত লকডাউনের পরে দেখা বিপরীত স্থানান্তর সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার ২০২০ সালের জুলাই মাসে সাশ্রয়ী ভাড়াবাড়ির ব্যবস্থা করতে অ্যাফর্ডেবল রেন্টাল হাউজিং কমপ্লেক্স (এ আর এইচ সি) প্রকল্পও চালু করেছিল। এটি পি এম এ ওয়াই (ইউ)–এর অন্তর্ভুক্ত একটি উপ–প্রকল্প, যার লক্ষ্য ই ডবলিউ এস, এল আই জি, এস সি, এস টি, ও বি সি, মহিলা, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি এবং সংখ্যালঘুরা। উদ্যোগের আওতায় খালি পড়ে থাকা সরকারি আবাসন (এখন অবধি প্রায় ৮৮,২৩৬টি বাড়ি)[৭] সাশ্রয়ী ভাড়ায় অভিবাসীদের জন্য উপলব্ধ করা হবে। এই প্রকল্প অনুযায়ী সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলির দ্বারা এ আর এইচ সি–র নির্মাণ, পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে।

পি এম এ ওয়াই (ইউ): একটি স্টেটাস রিপোর্ট

এই প্রতিবেদনে পি এম এ ওয়াই (ইউ)–এর অগ্রগতি এবং এর বাস্তবায়নের অভিজ্ঞতার মূল্যায়ন করা হয়েছে, অনুমোদিত এবং নির্মিত বাড়িগুলির উপর জাতীয়, রাজ্য ও শহর–স্তরের ডেটা এবং কেন্দ্রের দ্বারা রাজ্য ও শহরগুলিতে দেওয়া আর্থিক সহায়তা পর্যালোচনা করা হয়েছে। সেই সঙ্গেই ভারতের প্রস্তাবিত ‘‌স্মার্ট সিটি’‌–তে সাশ্রয়ী মূল্যের আবাসন উদ্যোগের প্রকৃতি বোঝার চেষ্টা করা হয়েছে। পি এম এ ওয়াই (ইউ)–এর ভৌত ও আর্থিক অগ্রগতির মূল্যায়ন থেকে নিম্নলিখিত বিষয়গুলি উঠে এসেছে:

২১ ফেব্রুয়ারি ২০২২ পর্যন্ত সারা দেশে শহরাঞ্চলে ১১.৪৬ মিলিয়ন বাড়ি অনুমোদন করা হয়েছিল, যার জন্য ১,২২৮.৯৮ বিলিয়ন টাকা দেওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে ৯.৩৬ মিলিয়ন বাড়ি ‘‌গ্রাউন্ডেড’‌ (অর্থাৎ কাজ শুরু হয়েছে), এবং ৫.৫১ মিলিয়ন বাড়ির কাজ শেষ হয়েছে, যা অনুমোদিত বাড়ির অর্ধেকেরও কম । প্রকল্পের চারটি ভিন্ন উপাদানের অধীনে অনুমোদিত, নির্মীয়মান এবং নির্মিত বাড়িগুলি সারণি ১–এ দেখানো হয়েছে। ডেটা অনুযায়ী আই এস এস আর উপাদানের উল্লেখযোগ্য সাফল্য দেখা গেছে, কিন্তু এ এইচ পি এবং বি এল সি উদ্যোগগুলি ধীর গতিতে চলছে। আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে বি এল সি উপাদানের আওতায় সর্বাধিক সংখ্যক বাড়ি তৈরি বা সম্প্রসারিত করা হয়েছে।

সারণি ১: পি এম এ ওয়াই (ইউ)–এর আওতায় অনুমোদিত, নির্মীয়মান ও নির্মিত বাড়ি, সর্বভারতীয়

সূত্র:‌ আবাসন ও নগর বিষয়ক মন্ত্রক, ২০২২।[৮]

নোট: * সুবিধাভোগীর সংখ্যা;‌ ০.৬১ মিলিয়ন এম আই জি এবং ১.২২ মিলিয়ন ই ডবলিউ এস/এল আই জি অন্তর্ভুক্ত; **একটি চাহিদা সমীক্ষার উপর ভিত্তি করে।

কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির মধ্যে, শহুরে এলাকায় পি এম এ ওয়াই–এর অধীনে অনুমোদিত বাড়ির সংখ্যা আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে ৬০৩ থেকে জম্মু ও কাশ্মীরে ৪৮,৭৭৭ পর্যন্ত নানা সংখ্যার। রাজ্যগুলির মধ্যে সবচেয়ে কম সংখ্যা ছিল গোয়ায় (‌৩,৫২০ ইউনিট)‌ এবং সবচেয়ে বেশি অন্ধ্রপ্রদেশে (‌২.০৪ মিলিয়ন)‌। অন্ধ্রপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ ও মহারাষ্ট্র, এই তিন রাজ্যের প্রতিটিতে ১০ লাখের বেশি বাড়ি অনুমোদন করা হয়েছে।

কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির মধ্যে নির্মিত বাড়ির হারে চণ্ডীগড় ও দিল্লি সর্বোচ্চ জায়গায় আছে, যে জায়গাগুলিতে অনুমোদনের তুলনায় নির্মিত বাড়ির সংখ্যা কয়েকগুণ ছাড়িয়ে গেছে। কিন্তু এর কারণ হল আগের প্রকল্পগুলির অধীনে অনুমোদিত বাড়িগুলি, যেগুলি আগে সম্পূর্ণ করা যায়নি, সেগুলিও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এর পরে রয়েছে দাদরা ও নগর হাভেলি এবং দমন ও দিউ, যে জায়গাগুলিতে ৭০ শতাংশ নির্মাণ সমাপ্ত হয়েছে। সর্বনিম্ন সমাপ্তির হার আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের, মাত্র ৭.৩ শতাংশ।

রাজ্যগুলির মধ্যে, উত্তর–পূর্ব বাদে, গোয়া, তেলঙ্গানা, কেরল ও গুজরাট ৭০ শতাংশেরও বেশি বাড়ির নির্মাণ সমাপ্ত করে সেরা পারফরমার হয়েছে৷ সর্বনিম্ন হার ছিল অন্ধ্রপ্রদেশ ও বিহারে, যেখানে অনুমোদিত বাড়িগুলির ৩০ শতাংশেরও কম সম্পূর্ণ হয়েছে৷ উত্তর–পূর্বে অনুমোদিত বাড়ি ছিল ৬২৮ (সিকিম) থেকে ১৬৮,১০৬ (আসাম)–এর মধ্যে। ত্রিপুরা এবং সিকিম ৫০ শতাংশের বেশি সমাপ্তি রিপোর্ট করেছে, যেখানে মণিপুর এবং মিজোরামে এই হার মাত্র ১৩ শতাংশ। (চিত্র ১ দেখুন)

চিত্র ১: পি এম এ ওয়াই (‌ইউ)‌–এর অধীনে রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে নির্মিত বাড়ির হার

সূত্র:‌ আবাসন ও শহর বিষয়ক মন্ত্রক, ২০২২।[৯]

স্মার্ট সিটিতে পি এম এ ওয়াই (‌ইউ)

পি এম এ ওয়াই (‌ইউ) নির্দেশিকাগুলি অন্যান্য চলতি নগর-উন্নয়ন উদ্যোগগুলির সঙ্গে প্রকল্পটির একত্রীকরণ বাধ্যতামূলক করে, যাতে সম্পদগুলি ন্যায়সঙ্গতভাবে ব্যবহার করা যায় এবং সর্বাধিক সামাজিক সুবিধা অর্জন করা যায়। স্মার্ট সিটি মিশন বিবৃতিতে দরিদ্রদের আবাসনের জন্য নিম্নলিখিত বিধানগুলি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে:[১০]

মূল পরিকাঠামো উপাদানগুলির মধ্যে সাশ্রয়ী মূল্যের আবাসন অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।
গ্রিনফিল্ড এলাকায় প্রদত্ত মোট আবাসনের মধ্যে কমপক্ষে ১৫ শতাংশ সাশ্রয়ী মূল্যের আবাসন বিভাগে হওয়া উচিত।
রিডেভেলপমেন্ট হোক বা গ্রিনফিল্ড ডেভেলপমেন্ট, অন্তত ৮০ শতাংশ বাড়িকে জ্বালানি–সাশ্রয়ী করতে হবে।

১০০টি প্রস্তাবিত স্মার্ট সিটিতে পি এম এ ওয়াই (‌ইউ)–এর অধীনে মোট ২.৩৭ মিলিয়ন বাড়ি অনুমোদন করা হয়েছিল, যার মধ্যে ১.৪ মিলিয়ন বাড়ি বা প্রায় ৬০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। অনুমোদিত বাড়ির সংখ্যা পাসিঘাটে (অরুণাচল প্রদেশ) ৬৩ থেকে আমেদাবাদের ২৫৬,০৯৩–এর মধ্যে ঘোরাফেরা করেছে। অটল নগর (ছত্তিশগড়), কাভারত্তি (লক্ষদ্বীপ), এবং নিউ টাউন (‌কলকাতা)‌–এর জন্য কোনও বাড়ি অনুমোদন করা হয়নি। সর্বোচ্চ সংখ্যাগুলি (১৩৩,৩৭৬ থেকে ২৫৬,০৯৩) আমেদাবাদ, বেঙ্গালুরু, সুরাট ও পুনের জন্য অনুমোদিত হয়েছে।

১০০টি শহরের মধ্যে ১৩টিতে অনুমোদিত সমস্ত বাড়ির নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে; আটটিতে সমাপ্তির হার ৮০ শতাংশের উপরে। ৪০–৮০ শতাংশ বাড়ির নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে ৫৫টি শহরে (চিত্র ২ দেখুন)। ২১টি শহরে সমাপ্তির হার ৪০ শতাংশের নিচে, তিনটি শহরে তা ১০ শতাংশের নিচে—ইম্ফল, পোর্ট ব্লেয়ার ও সোলাপুর।

চিত্র ২: পি এম এ ওয়াই (‌ইউ)‌–এর অধীনে স্মার্ট সিটিগুলিতে নির্মিত বাড়ির হার

সূত্র:‌ আবাসন ও শহর বিষয়ক মন্ত্রক, ২০২২।[১১]

সব মিলিয়ে ১৮০ বিলিয়ন টাকা ব্যয়ে স্মার্ট সিটি মিশনের অধীনে ১৪৩টি সাশ্রয়ী মূল্যের আবাসন প্রকল্পের প্রস্তাব করা হয়েছিল,[১২] যা মিশনের অধীনে প্রতিশ্রুত ২,০৫০ বিলিয়ন টাকার মোট বিনিয়োগের ৯ শতাংশ। এসব প্রকল্পের মধ্যে ৩৮.‌৩৮ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে এবং একই অনুপাতে কাজ চলছে। তবে প্রকল্পের প্রায় এক–চতুর্থাংশের কাজ এখনও শুরুই হয়নি (চিত্র ৩ দেখুন)।

চিত্র ৩: প্রস্তাবিত স্মার্ট সিটিগুলিতে সাশ্রয়ী আবাসন প্রকল্পগুলির অগ্রগতি

সূত্র: ইলেটস নিউজ নেটওয়র্ক, জুন ৭, ২০২১।

স্মার্ট সিটিগুলিতে পি এম এ ওয়াই (ইউ) প্রকল্পগুলি বস্তি পুনর্বাসন এবং পুনরুন্নয়ন, ই ডবলিউ এস/এল আই জি ফ্ল্যাট, কর্মজীবী মহিলাদের হস্টেল, রাত্রিকালীন আশ্রয়কেন্দ্র এবং সাশ্রয়ী মূল্যের ভাড়ার আবাসন কেন্দ্রগুলির সঙ্গে সম্পর্কিত (চিত্র ৪ দেখুন)। সুরাট, তুমাকুরু (কর্নাটক) ও ভুবনেশ্বরের কিছু প্রতিনিধিত্বমূলক প্রকল্প নিম্নলিখিত অনুচ্ছেদে বর্ণিত হয়েছে।

সুরাট

২০১৭–২০ সালে, ই ডব্লিউ এস পরিবারবর্গের জন্য সুরাটের মাগোব এলাকায় ২০৮টি ফ্ল্যাট তৈরি করা হয়েছিল, যার প্রায় ১৫০ মিলিয়ন টাকার নির্মাণ ব্যয় কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের মধ্যে ভাগ করা হয়েছিল।[১৩] ১৩ তলার দুটি অ্যাপার্টমেন্ট ব্লক তৈরি করা হয়েছে। একটি বসার ঘর, শয়নকক্ষ, রান্নাঘর এবং বাথরুম সহ প্রতিটি ইউনিটের ক্ষেত্রফল ৩০–৪০ বর্গ মিটার, এবং একেকটি ৩০০,০০০–৫০০,০০০ টাকায় ই ডব্লিউ এস পরিবারগুলির কাছে বিক্রি হয়েছিল৷ সাধারণ সুবিধার মধ্যে রয়েছে পার্কিং এরিয়া, এল ই ডি স্ট্রিট লাইট, লিফট, ফায়ার ফাইটিং ইকুইপমেন্ট, রেন ওয়াটার হার্ভেস্টিং ফেসিলিটি, ওয়েস্ট ওয়াটার ট্রিটমেন্ট সুবিধা, জৈব বর্জ্য কনভার্টার, এবং পাইপযুক্ত প্রাকৃতিক গ্যাস লাইন।[১৪]

সুরাটে অভিবাসী শ্রমিকদের জন্য সাশ্রয়ী ভাড়ার আবাসনও তৈরি করা হয়েছে। শহরের টেক্সটাইল ও হিরা শিল্প অন্যান্য রাজ্য থেকে বিপুল সংখ্যক শ্রমিক আকর্ষণ করার কারণে সেখানে ভাড়া বাড়ির চাহিদা বেশি। অতিমারি–প্ররোচিত লকডাউনের সময় এই জাতীয় শ্রমিকদের নিরাপদ আবাসনের প্রয়োজন তীব্রভাবে অনুভূত হয়েছিল, কারণ তাদের মজুরি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অভিবাসীরা বাড়ি ভাড়া দিতে অক্ষম ছিল, এবং অনেককে তাদের বাড়িওয়ালারা বাড়ি খালি করতে বলেছিল। এই প্রকল্পের আওতায় বেসরকারি সংস্থাগুলিকে খালি পড়ে থাকা সরকারি বাড়িগুলি সংস্কারের জন্য এবং পরবর্তীতে ভাড়া–আবাসন হিসেবে ব্যবহার করার জন্য দেওয়া হয়। ৩২ বর্গ মিটার আকারের মোট ৩৯৩টি এক–বিএইচকে (বেডরুম–হল–রান্নাঘর) ফ্ল্যাট, যা পূর্বে ২০১৪ সালে রাজ্য নগর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সুডা) দ্বারা শহরের শচীন এলাকায় নির্মিত হয়েছিল, প্রতি মাসে ৩,৫০০–৪,০০০ ভারতীয় টাকা ভাড়ায় উপলব্ধ করা হয়েছে।[১৫] বেসরকারি সংস্থাকে  ২৫ বছরে সুডা–কে ১৮০ মিলিয়ন টাকা দিতে হবে।[১৬]

তুমাকুরু

এই শহরে বস্তির জমিগুলিকে একটি পরিকল্পিত আবাসিক কমপ্লেক্স হিসাবে পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে। বস্তির বাসিন্দাদের শূন্য খরচে নবনির্মিত ঘর দেওয়া হয়।[১৭]

ভুবনেশ্বর

ওড়িশা সরকারের সহায়তায় শহরের কেন্দ্রস্থলে একটি তিনতলা সামাজিক ইকুইটি কেন্দ্র তৈরি করা হয়েছে। এটি নির্মাণ শ্রমিক এবং গৃহহীন ব্যক্তিদের ভাড়া দিয়ে থাকার আবাসনের ব্যবস্থা করেছে। শহরের মিউনিসিপ্যালিটি ১০০ শয্যার ধারণক্ষমতাসহ ভিক্ষুকদের জন্য একটি আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপন করেছে।[১৮]

চিত্র ৪ আরও বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরে।[১৯]

চিত্র ৪: প্রস্তাবিত স্মার্ট সিটিগুলিতে সাশ্রয়ী আবাসন

সূত্র: (১) mapsofindia.com; (২) আবাসন ও শহর বিষয়ক মন্ত্রক, ডিসেম্বর ২০২১।[২০]

পি এম  ওয়াই (ইউ)–এর অর্জন এবং ত্রুটি

১। ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে এবং ই ডব্লিউ এস ও অন্যান্য অভাবী সম্প্রদায়ের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। নারীর ক্ষমতায়নের উপর জোর দেওয়া হচ্ছে, কারণ পরিবারের নারীকেই বাড়ির মালিকানার অধিকার দেওয়া হয়। প্রদত্ত আর্থিক সহায়তা মানুষকে তাদের বাড়ি ক্রয়, নির্মাণ বা উন্নত করতে সক্ষম করে। অভিবাসী শ্রমিক, কর্মজীবী মহিলা এবং গৃহহীনদের জন্য আবাসিক সুবিধাও তৈরি করা হচ্ছে।

২। সমস্ত নগর উন্নয়ন উদ্যোগের মধ্যে—যেমন বিভিন্ন শহরে মেট্রো রেল নেটওয়ার্ক, মৌলিক নাগরিক পরিষেবা প্রদানের জন্য অটল মিশন ফর রিজুভেনেশন অ্যান্ড আরবান ট্রান্সফরমেশন (অম্রুত), সামগ্রিক স্মার্ট সিটি প্রকল্প, স্বচ্ছ ভারত (সকলের জন্য স্যানিটেশন) মিশন এবং অন্যান্য—পি এম এ ওয়াই (ইউ) গত তিন বছরে কেন্দ্র থেকে সর্বোচ্চ বাজেট বরাদ্দ পেয়েছে। ২০২২–২৩ বাজেটে যেমন ২৮০ বিলিয়ন টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এটি মোট বাজেট বরাদ্দের ৩৬.৫৭ শতাংশ।[২১]

৩। কয়েকটি শহর বাড়ির নকশায় স্মার্ট বৈশিষ্ট্যগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করার পাশাপাশি টেকসই নির্মাণ সামগ্রী[খ] ব্যবহার করার উপর জোর দিয়ে ‘‌সবুজ নির্মাণ’‌ করছে। যেমন, ই ডব্লিউ এস–এর জন্য সুরাট প্রকল্পে জলের টেকসই ব্যবস্থাপনা, টেকসই স্যানিটেশন এবং বিদ্যুৎ–সাশ্রয়ী উপকরণ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তবে এই ধরনের উদাহরণ বিরল। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই, শক্তি ও জলের ব্যবহার বা তরল ও কঠিন বর্জ্যের টেকসই ব্যবস্থাপনার কোনও ব্যবস্থা ছাড়াই ঐতিহ্যগতভাবে বাড়ি নির্মাণ করা হচ্ছে। বিল্ডিং পারফরম্যান্স পরিমাপ করার জন্য বার্ষিক অডিটও করা হয় না। একটি স্বাধীন মূল্যায়নে দাবি করা হয়েছে যে দেশের মোট নির্মিত পরিবেশের ৫ শতাংশও সবুজ নয়।[২২]

৪। ২০২২ সালের মধ্যে সকলের জন্য আবাসনের (এইচ এফ এ) লক্ষ্য অর্জিত হয়নি। পি এম এ ওয়াই (ইউ)–এর অধীনে অনুমোদিত বাড়ির অর্ধেকেরও কমের নির্মাণ ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যে শেষ হয়েছে। বাড়ি সম্পূর্ণ হওয়ার হার কেন্দ্রীয় আর্থিক সহায়তার টাকা দেওয়ার উপর, এবং সেই সঙ্গে সুবিধাভোগীদের অর্থনৈতিক অবস্থার উপর নির্ভর করে (যেহেতু তাদেরও টাকা দিতে হবে)। সুতরাং, কিছু রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল যে অনুমোদিত তহবিল প্রাপ্তিতে পিছিয়ে রয়েছে — যেমন অন্ধ্রপ্রদেশ, বিহার, মিজোরাম, মণিপুর এবং আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ — এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। এগুলি অনুমোদিত সহায়তার ৪৪ শতাংশেরও কম পেয়েছে[২৩] এবং সর্বনিম্ন হার রেকর্ড করেছে। অন্যান্য সাধারণ প্রাতিষ্ঠানিক ঘাটতি যা প্রকল্পের সমাপ্তিতে বাধা দেয় তার মধ্যে রয়েছে বিলম্বিত অনুমোদন, কঠোর উন্নয়ন নিয়ম, নির্মাণের উচ্চ ব্যয়, বাস্তবায়নকারী সংস্থার অপ্রতুল প্রযুক্তিগত ক্ষমতা, এবং কম খরচের প্রযুক্তিকে মূল ধারায় ব্যবহারের ব্যর্থতা।[২৪]

৫। পি এম এ ওয়াই (ইউ)–এর বি এল সি (এন) এবং বি এল সি (ই) উপাদানগুলির ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় তহবিল প্রায়শই বিলম্বিত হয়, কারণ পৌরসভাগুলি তহবিল ব্যবহারের শংসাপত্র জমা দিতে ব্যর্থ হয়, যা সাধারণত সুবিধাভোগীদের নির্মাণ চালিয়ে যেতে বা নির্মাণের উন্নতি করতে অক্ষমতার কারণে ঘটে। কোভিড–১৯–জনিত লকডাউনের সময় অনেক পরিবারের আয় খুব বেশি কমে গেছে, এবং তারা বাড়ি নির্মাণে তাদের অংশ দিতে অক্ষম হয়ে পড়েছিল। উদাহরণস্বরূপ, মহারাষ্ট্রে, একটি নতুন ইউনিট নির্মাণের খরচ প্রায় ৪৫০,০০০–৬৫০,০০০ টাকা (জমির খরচ আলাদা)। ১৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত কেন্দ্রীয় সহায়তা পাওয়া যায়, আর অবশিষ্ট খরচ সুবিধাভোগীকে বহন করতে হয়। সুবিধাভোগীদের আয় কমে যাওয়ায় অনেক প্রকল্প অসম্পূর্ণ থেকে গেছে। এমন বাড়ি খুঁজে পাওয়া বিরল নয় যেখানে দেওয়াল তোলা হয়েছে, কিন্তু ছাদ তৈরি করা যায়নি।[২৫]

৬। কিছু জায়গায়, যেভাবে ভিন্ন এলাকায় বাড়ির ব্যবস্থা করা হচ্ছে তা সুবিধাভোগীদের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। ঘনবসতিপূর্ণ শহরগুলিতে কেন্দ্রীয় এলাকায় পি এম এ ওয়াই (ইউ) বাড়ি নির্মাণের জন্য খালি জমি উপলব্ধ নেই; অতএব দরিদ্রদের জন্য আবাসন প্রকল্প প্রান্তিক এলাকায় হতে হবে। এই এলাকাগুলিতে প্রায়ই প্রয়োজনীয় সামাজিক/অর্থনৈতিক/ভৌত পরিকাঠামো ও পরিষেবার অভাব থাকে, এবং শহরের কেন্দ্রের সঙ্গে এলাকাগুলি মোটেই ভালভাবে সংযুক্ত থাকে না। উদাহরণস্বরূপ, আমেদাবাদে[২৬] সবরমতী নদীর নিকটবর্তী বস্তিবাসীদের শহরের পূর্ব প্রান্তে ওধব–এ স্থানান্তরিত করা হয়েছে। সরকারি পরিবহণ প্রায় উপলব্ধ না–থাকায় যাতায়াতের অসুবিধা তাঁদের জন্য সাধারণ কাজ চালিয়ে যাওয়াও কঠিন করে তোলে। এই কারণে অনেকেই তাঁদের নতুন বাড়িতে যাননি, এবং সেগুলি খালি রয়ে গেছে।

৭। শহরগুলিতে খালি জমির সীমিত প্রাপ্যতা প্রকল্পের অগ্রগতি ধীর করে দেওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ। এই সমস্যাটি সরকার বিভিন্ন উপায়ে মোকাবিলা করছে: (১) পি এম এ ওয়াই (ইউ) নির্দেশিকাগুলি অনুযায়ী রাজ্য / কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিকে তাদের মাস্টার প্ল্যানগুলিতে সাশ্রয়ী মূল্যের আবাসনের জন্য জমি নির্ধারণ করতে হবে; (২) নির্মাণ সংস্থাগুলিকে আবাসন প্রকল্পগুলিতে ই ডব্লিউ এস–এর জন্য জমি/ফ্ল্যাট সংরক্ষণ করতে হবে; (৩) ল্যান্ড পুলিং মডেল ব্যবহার করে শহরগুলির প্রান্তিক এলাকায় উপলব্ধ খালি জমি অধিগ্রহণ করা হচ্ছে; (৪) খালি পড়ে থাকা সরকারি আবাস অভিবাসী জনগোষ্ঠীর জন্য ভাড়ার ভিত্তিতে উপলব্ধ করা হচ্ছে; (৫) ভূমির সর্বোত্তম ব্যবহারের জন্য যেখানে মানুষ বসবাস করছেন সেখানেই পুনর্বাসনের মাধ্যমে বিদ্যমান অপরিকল্পিত অঞ্চলগুলিকে উন্নত করা হচ্ছে; এবং (৬) ছোট ফরম্যাটের হাউজিং তৈরি করা হচ্ছে। ভুবনেশ্বর, সুরাট এবং তুমাকুরুতে পরিলক্ষিত এই ধরনের ব্যবস্থাগুলি উপযোগী প্রমাণিত হচ্ছে।

৮। স্ট্যাম্প ডিউটি ছাড়, জিএসটি হ্রাস এবং অতিরিক্ত উন্নয়ন অধিকার প্রদানের মতো প্রণোদনা সত্ত্বেও সাশ্রয়ী মূল্যের আবাসন প্রকল্পগুলিতে বেসরকারি ক্ষেত্রের অংশগ্রহণ এখনও প্রত্যাশার চেয়ে কম। একটি মূল্যায়ন অনুসারে, বেসরকারি ডেভেলপাররা সরকারি কর্তৃপক্ষ দ্বারা বিডিংয়ের খরচ ও বাড়ির বিক্রয়মূল্যের ঊর্ধ্বসীমা নির্ধারণের বিষয়টি নিয়ে অসন্তুষ্ট।[২৭]

উপসংহার

পি এম এ ওয়াই (ইউ)–এর কাজকর্মের এই মূল্যায়ন এ কথাই তুলে ধরে যে বিভিন্ন প্রশাসনিক এবং আর্থ–সামাজিক সীমাবদ্ধতার দ্বারা অগ্রগতি প্রভাবিত হচ্ছে, যার মধ্যে নিম্নলিখিতগুলি গুরুত্বপূর্ণ:

  • কেন্দ্রের তহবিল দেওয়ায় এবং প্রকল্প অনুমোদনে বিলম্ব;
  • নতুন ই ডব্লিউ এস আবাসন এলাকায় পরিকাঠামো ও  পরিষেবার ঘাটতি;
  • সাশ্রয়ী মূল্যের আবাসন প্রকল্পের জন্য বেসরকারি ডেভেলপারদের আকৃষ্ট করার প্রশ্নে নানা অসুবিধা;
  • বেসরকারি বিল্ডাররা সাশ্রয়ী মূল্যের আবাসন প্রকল্পে ই ডব্লিউ এস–এর জন্য ঘর সংরক্ষণের পূর্বশর্ত লঙ্ঘন করছে;
  • পাবলিক/প্রাইভেট বিল্ডারদের গ্রিন বিল্ডিং নিয়ম /নতুন আবাসন এলাকায় গ্রিন বিল্ডিং অডিট ব্যবস্থার নিয়ম লঙ্ঘন;
  • বিপুল সংখ্যক মানুষের কম ক্রয়ক্ষমতা;
  • প্রয়োজনীয় নথিপত্র, যেমন পরিচয়পত্র, আয়ের প্রমাণ, আয়কর রিটার্ন ইত্যাদি প্রদান করতে অক্ষমতার কারণে ই ডব্লিউ এস বাড়ি প্রদান/হাউজিং লোন দিতে অসুবিধা;
  • দখল পাওয়ার পর কিছু সুবিধাভোগীর বাড়ি বিক্রি করে দেওয়া।

এই সমস্যাগুলির দ্রুত সমাধান আবাসনের চাহিদা ও সরবরাহের ব্যবধান পূরণ করতে এবং ভারতের শহুরে স্থানগুলিতে অপরিকল্পিত আবাসন এলাকার বিস্তার রোধ করতে সাহায্য করবে।


রুমি আইজাজ ওআরএফএর সিনিয়র ফেলো।


পাদটীকা

লিঙ্কের জন্য মূল প্রবন্ধ দেখুন (‌‌https://www.orfonline.org/research/how-fares-the-pmay/)


[ক] ভারত সরকার ‘সাশ্রয়ী’ হিসাবে যোগ্যতা অর্জনের জন্য বাড়ির কোনও মূল্যসীমা নির্ধারণ করেনি। পি এম এ ওয়াই (ইউ) স্কিমে একটি ‘‌সাশ্রয়ী’‌ বাসস্থানের জন্য যোগ্যতার মানদণ্ড নিম্নরূপ: (১) বস্তি এবং অপরিকল্পিত এলাকায় বসবাসকারী দরিদ্র এবং অন্যান্য অভাবী সম্প্রদায়ের জন্য ই ডব্লিউ এস এবং এল আই জি বাড়ি; (২) মৌলিক পরিকাঠামো ও পরিষেবাগুলি সহ যথাক্রমে ৩০ বর্গ মিটার এবং ৬০ বর্গ মিটার সর্বাধিক কার্পেট এলাকাবিশিষ্ট ই ডব্লিউ এস এবং এল আই জি বাড়ি; এবং (৩) ক্রেতাদের অবশ্যই এমন পরিবার হতে হবে যাদের বার্ষিক আয় ৩ লক্ষ টাকা (ই ডব্লিউ এস বাড়ির জন্য) ও ৬ লক্ষ টাকার (এল আই জি বাড়ির জন্য) বেশি নয় (আবাসন ও নগর বিষয়ক মন্ত্রক, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা (নগর), হাউজিং ফর অল মিশন স্কিম গাইডলাইনস)।

[খ] গ্রিন বিল্ডিংগুলি কম জল ব্যবহার করে, শক্তির দক্ষতা সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যায়, প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ করে, কম বর্জ্য তৈরি করে এবং স্বাস্থ্যকর থাকার জায়গা প্রদান করে (ইন্ডিয়ান গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিল, ‘‌গ্রিন বিল্ডিং অ্যান্ড সাসটেনেবল আর্কিটেকচার ইন ইন্ডিয়া’‌)।

[১] সেন্সাস অফ ইন্ডিয়া, প্রাইমারি সেন্সাস অ্যাবস্ট্র‌্যাক্ট ফর স্লাম, নিউ দিল্লি:‌ অফিস অফ দ্য রে

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.