Author : Farhan Shaikh

Issue BriefsPublished on Oct 31, 2022
ballistic missiles,Defense,Doctrine,North Korea,Nuclear,PLA,SLBM,Submarines

লিঙ্গসাম্যকে জলবায়ু কর্মসূচির মূল প্রবাহে নিয়ে আসা

  • Farhan Shaikh

    বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে যে দেশগুলি তীব্র ভাবে ঝুঁকির মুখে পড়েছে, ভারত তাদের অন্যতম। প্রশমন এবং অভিযোজন উভয় ক্ষেত্রেই উল্লেখযোগ্য প্রচেষ্টা করা হলেও সেগুলি লিঙ্গ সমতার সমস্যাগুলি বিবেচনা করতে ব্যর্থ  হয়েছে। অথচ এটা প্রমাণিত যে জলবায়ু পরিবর্তনের অসামঞ্জস্যমূলক বোঝা মেয়ে এবং নারীদের বহন করতে হচ্ছে জলবায়ু এবং লিঙ্গের মধ্যে জটিল আন্তঃসংযোগ সৃষ্টিকারী জীবিকা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পুষ্টি এবং অন্য ক্ষেত্রগুলির প্রেক্ষিতে এই ব্যবধান ঘোচানো প্রয়োজন এই সংক্ষিপ্ত প্রতিবেদনটিতে এই সম্পর্কগুলি খতিয়ে দেখা হয়েছে এবং লিঙ্গগত দৃষ্টিভঙ্গি-সহ ভারতের সর্বাত্মক জলবায়ু কর্মসূচির পরিকল্পনার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

    আরোপণ: ফরহান শেখ, ‘মুভিং জেন্ডার ইক্যুইটি টু দ্য মেনস্ট্রিম অব ক্লাইমেট অ্যাকশন’, ও আর এফ ইস্যু ব্রিফ নং ৫৮২, সেপ্টেম্বর ২০২২, অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন।

লিঙ্গসাম্যকে জলবায়ু কর্মসূচির মূল প্রবাহে নিয়ে আসা

ভূমিকা

সর্বব্যাপী ও অপ্রত্যাশিত হওয়ার দরুনই জলবায়ু পরিবর্তন এক অনন্য সমস্যা নয়, বরং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জনসংখ্যা এবং বাস্তুতন্ত্রকে এটি  নানা দুর্বোধ্য উপায়ে প্রভাবিত করে। এই অস্পষ্টতা জলবায়ুর অবস্থা এবং  দারিদ্র্যের একাধিক কারণের জটিল আন্তঃসংযোগ থেকে উদ্ভূত হয়, যেগুলি বহুবিধ সামাজিক-সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটে অন্তর্নিহিত। ফলে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের বর্তমান কর্মসূচিগুলি খুব কম সম্পদের অধিকারী অথবা সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং নির্ভরযোগ্য তথ্য লাভের সুবিধা থেকে বঞ্চিতদের উপর জটিল (নন-লিনিয়ার) প্রভাবগুলি সম্পূর্ণ রূপে মোকাবিলা করতে সক্ষম না-ও হতে পারে।

উন্নত এবং উন্নয়নশীল উভয় দেশেই, পিতৃতান্ত্রিক কাঠামো এবং কঠোর ভাবে সংজ্ঞায়িত লিঙ্গ বিধিগুলি প্রায়ই নারী এবং মেয়েদের সুবিধাবঞ্চিত করে। ফলে চরম আবহাওয়াজনিত ঘটনা বা বিপর্যয়ের সময়ে প্রত্যেকে কতটা গুরুতর প্রভাবিত এই প্রশ্নের চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায় বিদ্যমান শক্তি সম্পর্ক এবং কাঠামোগত বাধার কারণে কে বা কারা বেশি প্রভাবিত। ২০১৯ সালের মার্চ মাসে নাইরোবিতে রাষ্ট্রপুঞ্জের এনভায়রনমেন্ট অ্যাসেম্বলির চতুর্থ অধিবেশনে নারী ও মেয়েদের উপর জলবায়ু পরিবর্তনের জটিল বোঝার কথা স্বীকার করে নেওয়ার পাশাপাশি ‘তাঁদের জ্ঞানের শক্তি এবং সম্মিলিত কাজের’ উপর জোর দেওয়া হয়েছে।(১)

সাম্প্রতিক আলাপ-আলোচনায় গৃহস্থালির অধিক দায়িত্ব, সম্পদের মালিকানার অভাব এবং প্রতিকূল পরিস্থিতিতে মানিয়ে নেওয়ার জন্য দক্ষতা ও জ্ঞানের লভ্যতার সীমাবদ্ধতার দরুন নারীদের উপর জলবায়ু পরিবর্তনের অসামঞ্জস্যপূর্ণ প্রভাবগুলির কথা উঠে এসেছে। এই সংক্ষিপ্ত প্রতিবেদনটি লিঙ্গের দৃষ্টিকোণ থেকে পরিবেশগত অবস্থার পরিবর্তনের গভীর প্রভাবগুলির মূল্যায়ন করে এবং ভারতের জলবায়ু পরিবর্তন প্রতিক্রিয়া পরিকল্পনার অধীনে যে নীতিগুলি তৈরি করা হচ্ছে তাতে সমতা আনার জন্য গঠনমূলক উপায়ের প্রস্তাবনা দেয়।

পটভূমি নির্মাণ

ব্রিটেনের (ইউ কে) ফরেন, কমনওয়েলথ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফিসের (এফ সি ডি ও) করা ২০২২ সালের একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে যে, ওড়িশার অর্থনৈতিক ভাবে স্থিতিশীল জেলাগুলির মধ্যে একটি, কেন্দ্রাপাড়া, দ্রুত অভিবাসনের সম্মুখীন হচ্ছে, যেখানে  বারংবার ঘূর্ণিঝড়, বন্যা এবং ঝড়ের কারণে জনসংখ্যার ৮৫ শতাংশ বছরে এক থেকে দু’বার অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হন।(২) তবে সম্প্রদায়ের জন্য নিরাপদ এবং স্থিতিশীল জীবিকার অনুপস্থিতি এই অভিবাসনের নেপথ্যে প্রধান কারণ। জেলাটি পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত এবং স্থানীয় প্রাকৃতিক সম্পদের উপর তীব্র ভাবে নির্ভরশীল হওয়ার দরুন তাপপ্রবাহ এবং দীর্ঘস্থায়ী খরার মতো চরম আবহাওয়াজনিত ঘটনা কৃষিকাজের স্থিতিশীলতাকে প্রভাবিত করছে, যার উপর জনসংখ্যার ৪০ শতাংশ নির্ভরশীল এবং একই সঙ্গে ২৮ মিলিয়ন মানুষকে জীবিকা প্রদানকারী মৎস্য চাষের উপরেও প্রভাব ফেলেছে।

এই সমস্যা শুধু মাত্র ওড়িশাতেই সীমাবদ্ধ নয়। শক্তিশালী, মাইক্রোলেভেল দুর্বলতার মূল্যায়নেও সারা দেশের অন্য জলবায়ু হটস্পটগুলি উঠে এসেছে।(৩) অসম এবং ঝাড়খণ্ডের মতো রাজ্যগুলিতেও অনুরূপ জলবায়ু-প্ররোচিত বাস্তুচ্যুতি ঘটেছে, যখন মুম্বই এবং কলকাতার মতো উপকূলীয় শহরগুলি পরিযায়ী জনসংখ্যার অন্তঃপ্রবাহের সঙ্গে সঙ্গে জলের ঘাটতি এবং ক্রমবর্ধমান খাদ্যমূল্যের সম্মুখীন হয়েছে। ভারতের দক্ষিণ এবং পশ্চিম  অঞ্চলগুলি চরম খরার প্রবণতাসম্পন্ন, যা দ্রুত ফসল নষ্ট হওয়া এবং নিম্ন খাদ্য নিরাপত্তার সমস্যাকে গুরুতর করে তুলেছে। ইতিমধ্যেই উত্তর এবং উত্তর-পূর্ব অঞ্চলগুলি অত্যন্ত বন্যাপ্রবণ হয়ে উঠেছে, যা অভিবাসনের পরিমাণ বৃদ্ধি করেছে।(৪)

কী ভাবে জলবায়ু পরিবর্তন নারীদের নিরাপত্তার বোধ ও ভাল থাকাকে প্রভাবিত করে? চিত্র ১-এ প্রদর্শিত কাঠামো বিভিন্ন গবেষণার তথ্য তুলে ধরে, যা দর্শায় যে, জলবায়ু পরিবর্তন কী ভাবে স্থিতিশীল জীবিকা, নিরাপত্তা, বিশুদ্ধ জল, পয়ঃনিষ্কাশন, স্বাস্থ্য পরিষেবা এবং শিক্ষার ক্ষেত্রগুলিকে প্রভাবিত করে।(৫)

চিত্র ১: ক্লাইমেট জেন্ডার ইমপ্যাক্ট ফ্রেমওয়ার্ক বা জলবায়ু লিঙ্গ প্রভাব কাঠামো

উত্স : লেখকের নিজস্ব, বিভিন্ন মুক্ত সূত্র থেকে প্রাপ্ত।

২০১৮ সালে জলবায়ু সম্পর্কিত বিপর্যয়গুলির সংস্পর্শে আসার কারণে এবং কৃষির মতো জলবায়ু সংবেদনশীল ক্ষেত্রের উপর জনসংখ্যার একটি বড় শতাংশের অর্থনৈতিক নির্ভরতার কারণে ভারতকে জলবায়ু পরিবর্তনের নিরিখে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশ(৬) হিসেবে তুলে ধরা হয়েছিল। প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসবাসকারী, উপজাতি সম্প্রদায়, সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর অংশ অথবা মরসুমি পরিযায়ী এবং মৎস্য, বনাঞ্চল এবং কৃষিকাজে জড়িত মেয়ে ও নারীদের উপর এই পরিস্থিতির গুরুতর প্রভাব পড়েছে। এই সম্প্রদায়গুলির অধিকাংশতেই নারীদের জীবনযাত্রা প্রাকৃতিক সম্পদ সংগ্রহ ও ব্যবস্থাপনার কাজের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িত।

উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, ভারতের মোট মৎস্যজীবীর ৩৪.৬ শতাংশই নারী, যেখানে দেশের সমস্ত অর্থনৈতিক ভাবে সক্রিয় নারীদের ৮০ শতাংশ কৃষি ক্ষেত্রে নিযুক্ত।(৭) নারীরা নৈমিত্তিক কৃষি শ্রমের একটি উচ্চ অনুপাত জুড়ে রয়েছেন। কারণ বেশির ভাগ পুরুষ অকৃষি ক্ষেত্রে, যা প্রধানত লিঙ্গভিত্তিক, সেখানে মজুরিভিত্তিক কাজে নিযুক্ত। ২০১৭-১৮ সালের অর্থনৈতিক সমীক্ষায় এ কথা উঠে আসে যে, পুরুষদের বহির্গমনের সঙ্গে সঙ্গে ভারতে কৃষি ক্ষেত্রে ক্রমবর্ধমান নারীকরণ ঘটেছে, যার ফলে কৃষক, কৃষি ক্ষেত্রের শ্রমিক এবং উদ্যোক্তাদের ভূমিকায় নারীদের সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে।(৮)

ইন্টারগভর্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জের (আই পি সি সি) বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের ষষ্ঠ মূল্যায়ন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বর্তমানে ভারতের কৃষি জমি মারাত্মক ভাবে বিপদের সম্মুখীন। এটি মহিলাদের জন্য বিশেষত অসুবিধাজনক। কারণ ভারতে মোট জমির মাত্র ১৪ শতাংশ নারীদের হাতে রয়েছে।(৯) জমির মালিকানার অভাব নারীদের উপরে একাধিক প্রভাব ফেলে, যার মধ্যে রয়েছে উচ্চ কাজের চাপ, মানসিক চাপ, এবং আনুষ্ঠানিক অর্থের সীমিত লভ্যতা।(১০)

ঘন ঘন খরা এবং অমরসুমি ভারী বৃষ্টিপাতের পরে একাধিক রাজ্য সরকার এই ধরনের জলবায়ু আঘাত মোকাবিলায় ক্ষতিপূরণ প্যাকেজ চালু করেছে। যদিও বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই পুরুষদের হাতে জমির মালিকানা থাকায় তাঁরাই এই ক্ষতিপূরণ পান। মহিলা কৃষকদের এ হেন প্যাকেজ প্রাপ্তির কোনও পৃথক তথ্য পাওয়া যায় না, যা এই উদ্যোগগুলির লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্যের প্রভাব নির্ধারণকে কঠিনতর করে তোলে।

ঘন ঘন জলবায়ু বিপর্যয় গুণমানসম্পন্ন শিক্ষা, ঋতুচক্রের যত্ন এবং উপযুক্ত পুষ্টির মতো প্রয়োজনীয় জিনিসগুলির প্রাপ্তিতে অতিরিক্ত বাধা তৈরি করতে পারে। ভারতে জলঘটিত বিপর্যয়ের ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতা দর্শায় যে, জলের স্তর ক্রমাগত উঁচু হয়ে যাওয়া এবং ঘন ঘন বন্যার ফলে বিপর্যয়ে বাস্তুচ্যুতদের জন্য ত্রাণ শিবিরে স্বাস্থ্যবিধিসম্মত উপকরণ, মহিলা সাহায্যকারী এবং লিঙ্গনির্দিষ্ট শৌচাগারের অভাব নারীদের ঋতুচক্রের যত্নকে বিঘ্নিত করে।(১১) উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ ময়ূরী ভট্টাচার্য, যিনি বহু আলোচিত ‘ডিগনিটি ইন ফ্লাডস’ ক্যাম্পেন শুরু করেছিলেন, তিনি দেখিয়েছেন যে, ভারতে দুর্যোগের সময় ঋতুচক্রের স্বাস্থ্যবিধি ও যত্ন নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে নীতিনির্ধারণ পর্যায়ে কৌশলগত কাঠামোর অভাব রয়েছে। ত্রাণ শিবির এবং আশ্রয়কেন্দ্রগুলিতেও গর্ভবতী এবং স্তন্যদানকারী নারীদের জন্য প্রয়োজনীয় পর্যাপ্ত ব্যবস্থার অভাব রয়েছে।(১২)

বন্যার মতো খরাও স্বাস্থ্যবিধিকে প্রভাবিত করতে পারে এবং খরার সময় ঋতুচক্রের পরিচর্যার জন্য পরিষ্কার জলের অভাবে কিশোরীদের স্কুলে যেতে পারার সম্ভাবনা কম। ২০১৫-১৬ সালে ভারতে ঘটা খরার বিশ্লেষণে দেখা গিয়েছে যে, মধ্যপ্রদেশে সমীক্ষা চালানো ৬০-৮০ শতাংশ স্কুলে হ্যান্ড পাম্প শুকিয়ে গেছে, যার ফলে মেয়েদের জন্য উপলব্ধ জল, পয়ঃনিষ্কাশন এবং স্বাস্থ্য পরিষেবা বিঘ্নিত হয়েছে।(১৩) মালালা ফান্ড গার্লস এডুকেশন অ্যান্ড ক্লাইমেট চ্যালেঞ্জেস ইনডেক্স অনুযায়ী, ২০২৫ সালের মধ্যে ভারতে ১৪১ মিলিয়ন স্কুলপড়ুয়া মেয়ে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের মুখে পড়বে।(১৪) নিম্ন আয়ের পরিবারগুলিতে ঘন ঘন বিপর্যয় দারিদ্র্যের দিকে ঠেলে দেয়, যা স্কুল ছেড়ে দেওয়া মেয়েদের সংখ্যা বৃদ্ধি করে।(১৫)

ফসল নষ্ট হওয়া, অনভিপ্রেত বৃষ্টিপাতের ধরন এবং কার্বন ডাই অক্সাইডের ঘনত্ব বৃদ্ধির কারণে জলবায়ু পরিবর্তন ভারতের ক্ষুধা ও অপুষ্টির অবসান ঘটানোর প্রচেষ্টাকেও খর্ব করছে।(১৬) দ্য কনসালটেটিভ গ্রুপ ফর ইন্টারন্যাশনাল এগ্রিকালচারাল রিসার্চ (সি জি আই এ আর) জেন্ডার প্ল্যাটফর্ম একটি সর্বাঙ্গীন কাঠামো নির্মাণ করে দেখিয়েছে যে, কী ভাবে জলবায়ু পরিবর্তন কম পুষ্টি ও স্বাস্থ্যহানির দিকে চালিত করে। একই সঙ্গে এটিতে নারীদের মধ্যে অপুষ্টির তিনটি গুরুত্বপূর্ণ কারণকে চিহ্নিত করে একটি বিশদ বিশ্লেষণও করা হয়েছে। বিষয় তিনটি হল: ক্ষুধার সময়ে পরিবারের অন্য সদস্যদের মুখে খাবার তুলে দেওয়ার জন্য নিজেরা খাদ্যগ্রহণ না করা; জল এবং জ্বালানির জন্য দীর্ঘ দূরত্ব অতিক্রম করতে বাধ্য হওয়া; এবং উৎপাদনশীল সম্পদ এবং পুঁজির লভ্যতার অভাব।(১৭)

ভারতীয় প্রেক্ষাপটে এই সমতার অভাব বিপর্যয়কর হতে পারে, যেহেতু দেশের প্রজননক্ষম ৫১ শতাংশ মহিলা (১৫ থেকে ৪৯ বছর) ইতিমধ্যেই রক্তাল্পতায় আক্রান্ত৷(১৮) ১৪০ কোটি মানুষের দেশ ভারত খাদ্য ও অর্থকরী ফসলের ক্রমহ্রাসমান ফলনের দরুন স্থায়ী প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়েছে এবং বিশ্ব ক্ষুধা সূচক বা গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্সে ১১৬টি দেশের মধ্যে ১০১তম স্থানে রয়েছে।

লিঙ্গ অন্তর্ভুক্ত জলবায়ু কর্মসূচির প্রস্তাবিত পথ

জলবায়ু পরিবর্তন এবং লিঙ্গ বৈষম্যের মধ্যে সংযোগের বহুমাত্রিক প্রকৃতির কথা বিবেচনা করে ভারতকে বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক ক্ষেত্রগুলিতে গবেষণা সক্রিয়ভাবে একীভূত করতে হবে এবং জলবায়ু কর্মসূচিতে লিঙ্গ উদ্দেশ্যমূলকতা সুনিশ্চিত করতে হবে।

চিত্র ২: অন্তর্ভুক্তিমূলক জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার পথ

উত্স: লেখকের নিজস্ব, একাধিক মুক্ত সূত্র থেকে প্রাপ্ত

নিম্নলিখিত বিষয়গুলি ভারতের জন্য প্রয়োজনীয় পথের রূপরেখা নির্মাণ করে:

১. নীতি নির্মাণ এবং প্রশাসনিক স্তরে পদ্ধতিগত প্রক্রিয়াগুলিকে শক্তিশালী করা৷

পর্যাপ্ত প্রভাব সুনিশ্চিত করার জন্য আমূল স্বচ্ছতা, সহযোগিতামূলক  প্রচেষ্টাকে পথ দেখাতে শক্তিশালী কাঠামো এবং স্বাস্থ্য, শিক্ষা, জল, পয়ঃনিষ্কাশন, হাইজিন (ডব্লিউ এ এস এইচ) ও জীবিকা সংস্থানের ক্ষেত্র জুড়ে ঘটা অগ্রগতির উপর সর্বাত্মক নজরদারি প্রয়োজন। ভারতে জাতীয় জলবায়ু লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়েছে এবং নিয়ন্ত্রক প্রবিধানগুলি ন্যাশনালি ডিটারমাইন্ড কন্ট্রিবিউশন (এন সি ডি) এবং ইউ এন ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন ক্লাইমেট চেঞ্জ-এর (ইউ এন এফ সি সি সি) শূন্য নির্গমনের লক্ষ্য দ্বারা পরিচালিত হলেও নীতি ও পরিকল্পনার বাস্তবায়ন রাজ্য-পর্যায়েই ঘটে থাকে। রাজ্য স্তরের সংস্থাগুলিকে ভারতের প্রশমন এবং অভিযোজন পরিকল্পনাগুলিকে একটি লিঙ্গ রূপান্তরমূলক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখতে হবে।

ক্লাইমেট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট নলেজ নেটওয়ার্ক-এর (সি ডি কে এন) গবেষণায় স্টেট অ্যাকশন প্ল্যানস ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ-এ (এস এ পি সি সি) লিঙ্গকে মূলধারায় আনার সুযোগকে চিহ্নিত করা হয়েছে। কয়েকটি রাজ্য তা করলেও নীতি এবং অনুশীলনের মধ্যে এখনও উল্লেখযোগ্য ব্যবধান রয়েছে।(১৯) নীতিগত স্তরে যে সব রাজ্য কৃষি এবং সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রগুলির জলবায়ু নীতিতে লিঙ্গ সমতাকে মূল ধারায় আনার উপরে গুরুত্ব প্রদান করেছে, তার মধ্যে ওড়িশা, কেরল এবং গুজরাত অন্যতম। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, ওড়িশার মৎস্য নীতি শিক্ষা, বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ, সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সুযোগের বৈচিত্র্যকরণ, বাজার নির্মাণ এবং সামাজিক সুবিধার উপর বিশেষ জোর দেয় এবং ওড়িশার কৃষি নীতিগুলি জলাশয় উন্নয়ন এবং সিস্টেম অব রাইস ইন্টেসিফিকেশনের (এস আর আই) কর্মসূচিতে মহিলাদের অংশগ্রহণের পরিমাণ বৃদ্ধি করে।

এর পাশাপাশি নীতি আয়োগ একটি রাজ্য স্তরের জ্বালানি ও জলবায়ু সূচক তৈরি করেছে এবং একই সঙ্গে লিঙ্গ সমতার দিকে অগ্রসর হয়ে বিদ্যমান ব্যবধানের চিহ্নিতকরণ এবং সংশ্লিষ্ট অগ্রগতিকে তুলে ধরতে একটি জাতীয় লিঙ্গ সূচক নির্মাণের কাজ করছে। যে সব জলবায়ু কর্মসূচি প্রকল্পে লিঙ্গ-অভিঘাত লক্ষ করা গিয়েছে, সেগুলির পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন পদ্ধতির শক্তিশালীকরণের মাধ্যমে দায়বদ্ধতা বৃদ্ধি করার পাশাপাশি এই দুইয়ের মাঝে সমন্বয় গঠন প্রয়োজন।

অভিযোজন কৌশলগুলি স্থানীয় ভাবে কতটা প্রাসঙ্গিক এবং যে সব সম্প্রদায়ের জন্য সেগুলি পরিকল্পিত, তাদের প্রাথমিক চাহিদার প্রতি কৌশলগুলি কতটা সাড়া দিচ্ছে তা সুনিশ্চিত করার জন্য জলবায়ু প্রভাব এবং তার ঝুঁকির উপর এস এ পি সি সি-গুলির নিয়মিত মূল্যায়নের অভাব রয়েছে।(২০) প্রকৃত পক্ষে ৮০ শতাংশেরও বেশি ভারতীয় জলবায়ু ঝুঁকি দ্বারা প্রভাবিত জেলাগুলিতে বসবাস করেন। অসম, অন্ধ্রপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, কর্নাটক এবং বিহারের মতো রাজ্যগুলি চরম জলবায়ুভাবাপন্ন ঘটনা দ্বারা সর্বাধিক প্রভাবিত। লিঙ্গবিচ্ছিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে ঝুঁকির মূল্যায়নকে শক্তিশালী করা যেতে পারে।(২১) জলবায়ু ঝুঁকির উপর পর্যায়ক্রমিক তথ্য সংগ্রহের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণে এবং ইউনিয়ন ও জেন্ডার বাজেটের অধীনে জলবায়ু সংক্রান্ত খরচের উপর নজর রাখার ক্ষেত্রে কেন্দ্রও একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

একাধিক কৃষি, স্বাস্থ্য এবং আনুষঙ্গিক খাতের প্রকল্পের আওতায় নারীদের জন্য তহবিল নির্ধারণের পাশাপাশি, রাজ্যগুলিকে এমন নীতিরও পরিকল্পনা করতে হবে, যা জলবায়ু প্রশমনের প্রচেষ্টায় নারীদের সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতে সক্ষম করে তুলবে৷ যেভাবে জলবায়ুর প্রভাব বিভিন্ন জেলা জুড়েও যথেষ্ট পরিবর্তিত হয়, সে ভাবে পদ্ধতিটির অবশ্যই স্থানীয়করণ হওয়া জরুরি। এস এ পি সি সি-গুলিকে অবশ্যই জেলা স্তরে নামিয়ে আনতে হবে এবং লিঙ্গের উপর স্পষ্ট নজর দিয়ে একটি সর্বাত্মক পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে। স্বাস্থ্য পরিষেবা, পুষ্টি, জীবিকা, শিক্ষা এবং ওয়াশ-এর অধীনে এস এ পি সি সি এবং অন্য প্রাসঙ্গিক প্রকল্পগুলি যাতে চিহ্নিত সম্প্রদায়গুলিকে আরও ভাল ভাবে পরিষেবা দিতে সক্ষম হয়, তার জন্য কেন্দ্রের তরফে রাজ্যগুলির প্রতি নির্দেশিকা জারি করা উচিত।

বয়ঃসন্ধিকালীন মেয়েদের চাহিদার প্রতিও মনোযোগ দেওয়া উচিত। তাদের শিক্ষা, প্রজননকালীন যত্ন এবং নির্দিষ্ট কিছু সামাজিক নিয়মের ফলে ক্ষতির সম্ভাবনা থেকে সুরক্ষা প্রদান করাও জরুরি। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দারিদ্র্য বৃদ্ধি পেলে মেয়েদের বিদ্যালয়ে পাঠানোই প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়ে। কারণ পরিবারগুলি হয় তাদের ঘরের কাজে নিযুক্ত করে অথবা তাড়াতাড়ি বিয়ে দিয়ে দেয়। সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মানসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত পরামর্শ, আইনি সহায়তা এবং ঋতুচক্রকালীন যত্নের মতো পরিষেবার প্রবিধান আনা প্রয়োজন। বিশেষ করে ঘন ঘন খরা, ফসল নষ্ট এবং অন্যান্য জলবায়ু প্রভাব দ্বারা ঝুঁকির মুখে দাঁড়িয়ে থাকা অঞ্চলগুলিতে অরক্ষিত এবং স্কুলছুট মেয়েদের উপর জোরাল নজরদারির ব্যবস্থা গড়ে তোলা উচিত। বৈশ্বিক উদাহরণগুলি দর্শিয়েছে যে, শিক্ষা ক্ষেত্রে বিনিয়োগের মাধ্যমে লিঙ্গ সমতা বৃদ্ধির ফলে জলবায়ুর অভিযোজন আরও শক্তিশালী এবং ন্যায়সঙ্গত হয়ে ওঠে, গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের প্রশমন বৃদ্ধি পায় এবং বৃহত্তর জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতা লক্ষ করা যায়।(২২)

বিপর্যয়ের সময়ে ভারতে ঋতুচক্রকালীন স্বাস্থ্যবিধির জন্য একটি পথপ্রদর্শনকারী নীতিকাঠামো প্রয়োজন। এটি করার জন্য রাজ্য স্তরে স্বাস্থ্য বিভাগ এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ, উভয়কেই একত্রে কাজ করতে হবে। ওয়াটার এইড এবং ইউ এন পপুলেশন ফান্ড (ইউ এন এফ পি এ) একটি কাঠামো(২৩) তৈরি করলেও তা রাজ্য সরকারগুলি এখনও গ্রহণ করতে পারেনি। সরকারের ওয়াশ নীতিগুলি স্যানিটারি ন্যাপকিনের উত্পাদনের উপরে মনোনিবেশ করে এবং অন্য কোনও পুনর্ব্যবহারযোগ্য ও পরিবেশ-বান্ধব বিকল্পের কথা ভাবে না। ন্যাপকিনের যথাযথ নিকাশি ব্যবস্থার অভাব এবং আরও স্থিতিশীল পণ্যগুলি সম্পর্কে অপ্রতুল সম্প্রদায় সচেতনতা যৌথ ভাবে পরিবেশগত ক্ষতির কারণ হতে পারে এবং মেয়েদের সামনে উপস্থিত বিকল্পগুলিকে সীমিত করে দেয়।

দেশব্যাপী রক্তাল্পতার প্রকোপ মোকাবিলার প্রচেষ্টাকে জোরদার করার  জন্য এবং সেই সঙ্গে বাস্তবায়নের ব্যবধান পূরণ করার উদ্দেশ্যে জেলা স্তরের ড্যাশবোর্ডের মতো গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থার সূচনা করতে ২০১৮ সালে সরকার অ্যানিমিয়ামুক্ত ভারত (এ এম বি) প্রকল্প চালু করেছে। বিভিন্ন রাজ্য জুড়ে নারী এবং শিশুদের উপর রক্তাল্পতার তীব্র প্রকোপের মোকাবিলা করার জন্য এই কর্মসূচির উচিত পরিবারের মধ্যে লিঙ্গ ব্যবস্থার কেন্দ্রবিন্দুতে অন্তর্নিহিত সমস্যার মূল কারণকে খতিয়ে দেখা। যেহেতু বেশিরভাগ পরিবারে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী পুরুষরাই, তাই তাঁদের জন্য সচেতনতা ও সংবেদনশীলতার প্রচার এ এম বি কৌশলের একটি প্রধান উপাদান হয়ে উঠতে পারে। সর্বোপরি এই নীতি বহুমুখী পুরুষ স্বাস্থ্যকর্মীদের সুবিধা প্রদান করতে পারে। কারণ মহিলা স্বাস্থ্যকর্মীরা প্রায়শই সামাজিক বাধার কারণে পুরুষদের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ভাবে যোগাযোগ স্থাপনে ব্যর্থ হন। স্বাস্থ্য ও লিঙ্গ বিষয়ক বিষয়ে কর্মরত পুরুষ স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ এবং কার্যকর পরিষেবা প্রদানে তাঁদের সাহায্য করার জন্য সরকার প্রাসঙ্গিক নাগরিক সমাজ সংস্থাগুলির সঙ্গে অংশীদারিত্ব গড়ে তুলতে পারে। এর পাশাপাশি কর্মসূচিটি সেই সকল হটস্পট জেলাকে অগ্রাধিকার দিতে পারে, যেখানে জলবায়ু  বিপন্নতা এবং লিঙ্গ বৈষম্য উল্লেখযোগ্য ভাবে বেশি। সহযোগী প্রচেষ্টা হিসাবে  সরকার সক্ষম অঙ্গনওয়াড়ি এবং পোষণ অভিযান ২.০-এর মতো অন্যান্য বৃহৎ মাপের কর্মসূচিকে শক্তিশালী করার জন্য জলবায়ু-পুষ্টি সম্পর্কিত প্রযুক্তিগত বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে একজোটে কাজ করতে পারে।

ভারত ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে জি২০ সভাপতিত্বের দায়িত্ব গ্রহণ করার পর তার সামনে সুযোগ থাকবে বিশ্বব্যাপী জলবায়ু প্রশমনে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখার, যেহেতু বিশ্বের বৃহত্তম দেশগুলি জি২০-এর অন্যতম সদস্য এবং বিশ্বব্যাপী গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমনের ৮০ শতাংশের জন্য তারা দায়ী।(২৪) ভারত আরও সর্বাঙ্গীন (বা দূষণমুক্ত) কর্মসংস্থানের নিরিখে নারীদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় বহাল করার জন্য জ্ঞানের আদান-প্রদান এবং সহযোগিতার উপর জোর দিতে পারে। এটি ভারতকে জি২০ সদস্যদের অভিযোজন কৌশলগুলিকে প্রভাবিত করারও একটি সুযোগ করে দেবে, যেখানে এটি সম্পদ ব্যবস্থাপনা, দুর্যোগ প্রস্তুতি এবং স্থিতিশীল কর্মসংস্থানে অভিযোজিত হওয়ার ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী এবং নেতৃত্বপ্রদানকারী হিসেবে নারীদের তুলে ধরতে পারে।

২. জীবিকা সুরক্ষা এবং সম্পদ ব্যবস্থাপনার জন্য নারী-নেতৃত্বাধীন অভিযোজন।

এস এ পি সি সি-গুলির পাশাপাশি ভারতের আরও একটি ন্যাশনাল অ্যাকশন প্ল্যান ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ (এন এ পি সি সি)  কর্মসূচি রয়েছে। ন্যাশনাল মিশন ফর সাসটেনেবল এগ্রিকালচার (এন এম এস এ) হল এন এ পি সি সি-এর অধীনস্থ আটটি মিশনের একটি যা ১২তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার আওতায় পড়ে এবং এর বাজেট হল ১.০৮ লক্ষ কোটি টাকা। যদিও অভিযোজন এবং মোকাবিলা পদ্ধতির জন্য কোনও তহবিল নির্মাণ করা হয়নি এবং মিশনটি শুরু হওয়ার পর থেকে শুধুমাত্র রেন-ফেড এরিয়া ডেভেলপমেন্ট (আর এ ডি) উপাদানটি সঠিক ভাবে তার তহবিলকে কাজে লাগিয়েছে।(২৫)

কার্যকর জলবায়ু প্রতিক্রিয়ার জন্য প্রশমন এবং অভিযোজন উভয়কেই অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন। কিন্তু অভিযোজনের ক্ষেত্রে প্রায়শই সীমিত নীতিগত গুরুত্ব এবং তহবিল বরাদ্দ হয়েছে। এর পাশাপাশি নিম্ন উপার্জনকারী সম্প্রদায়কে বর্তমানে যে চাপের মুখে পড়তে হচ্ছে, তা অবিলম্বে নারীদের উল্লেখযোগ্য ক্ষমতায়নের এবং আপৎকালীন পরিকল্পনার দাবি করে। নারী-নেতৃত্বাধীন প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনায় হস্তক্ষেপের রূপান্তরমূলক সম্ভাবনাকে প্রমাণ করার জন্য যথেষ্ট নজির রয়েছে। যেমন আমদাবাদভিত্তিক বেসরকারি সংস্থা, সেল্ফ এমপ্লয়েড উইমেনস অ্যাসোসিয়েশন-এর (সেবা)(২৬) দ্বারা গৃহীত নারী, কর্মসংস্থান এবং জল অভিযান (উইমেন, ওয়ার্ক অ্যান্ড ওয়াটার)। সেবা-র হস্তক্ষেপের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ছিল জল ব্যবস্থাপনার বিষয়ে জনপরিসরে স্বাধীন ভাবে আলোচনা চালানোর জন্য নারীদের সম্মিলিত জোটকে শক্তিশালী করা, যেখানে আগে পুরুষদের আধিপত্য ছিল।(২৭)

২০২১ সাল পর্যন্ত ন্যাশনাল রুরাল লাইভলিহুডস মিশনের (এন আর এল এম) মাধ্যমে, ভারত সারা দেশে ৭৫ মিলিয়ন মহিলা সদস্য-সহ  প্রায় ৬.৯ মিলিয়ন স্বনির্ভর গোষ্ঠী (এস এইচ জি) প্রতিষ্ঠা করেছে। এই স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলি জলবায়ুকে জীবিকার সঙ্গে সংযুক্ত করার জন্য  পরিবর্তনকারী এজেন্ট হিসেবে কাজ করতে পারে, এবং সংরক্ষণের উদ্যোগগুলিকে প্রচার করতে পারে।,২৮) গ্রাম পর্যায়ে এস এ পি সি সি-এর অধীনে জলবায়ু-স্থিতিস্থাপক অনুশীলনগুলির অভিযোজন-সহ এই উদ্যোগের অধীনে রয়েছে কৃষি-বাস্তুসংস্থানীয় চর্চা, ক্ষুদ্র সেচ এবং সাধারণের ব্যবস্থাপনা(২৯)। তৃণমূল স্তরে এন জি ও-গুলি এস এইচ জি এবং অন্যান্য নারী সংস্থার সঙ্গে নিবিড় ভাবে কাজ করেছে, যাতে নারীদের ডিজিটাল এবং আর্থিক সাক্ষরতা ও বাজারে প্রবেশাধিকার-সহ, জামানত ছাড়া ক্ষুদ্র অর্থায়ন ও ঋণ প্রদানের সুযোগ দেওয়ার পাশাপাশি সর্বোত্তম কৃষি পদ্ধতি সংক্রান্ত জ্ঞান বণ্টনের সুযোগ করে দেওয়া যায়। এর দৃষ্টান্তস্বরূপ বলা যায়, স্বয়ম শিক্ষম প্রয়োগ মহারাষ্ট্রের খরা-পীড়িত মরাঠাওয়াড়া অঞ্চলে নারীচালিত জলবায়ু স্থিতিস্থাপক মডেলের সূচনা করেছে, যাতে তৃণমূল স্তরে নারী কর্মীদের আন্তঃশৃঙ্খলকে স্থিতিশীল কৃষি পদ্ধতিগুলির সঙ্গে অভিযোজিত করার পাশাপাশি নারীদের সংশ্লিষ্ট সম্প্রদায়ের মধ্যে সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা যায়। একই ভাবে মান দেশি ফাউন্ডেশন সাশ্রয়ী এবং সহজলভ্য আর্থিক পরিষেবার মাধ্যমে গ্রামীণ নারী ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের সহায়তা করে স্থানীয় জীবিকার সমস্যার সমাধান করছে।

যদিও জলবায়ু অভিযোজনে নারীদের ভূমিকাকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ সূত্রের অভাব আছে। তা হল তাঁদের জমির সীমিত মালিকানা এবং সীমিত সম্পত্তির অধিকার। এর পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তন মরুকরণ, মাটির অবক্ষয় এবং আবাদযোগ্য জমির বর্ধিত প্রতিদ্বন্দ্বিতার মাধ্যমে নারীদের ভূমি অধিকারকে বিপদের মুখে ফেলেছে। এটি দীর্ঘমেয়াদি পরিবর্তনের নিরিখে একটি বাধা স্বরূপ। গ্রামীণ সম্প্রদায়ের মধ্যে জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতা গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে নারী কৃষকরা যে জমিতে কাজ করেন, তাঁদের তার মালিক হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্থানীয় নারী গোষ্ঠীগুলির দ্বারা গৃহীত সম্মিলিত পদক্ষেপের জন্য শক্তিশালী প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা, স্পষ্ট প্রণোদনা (স্বল্প এবং দীর্ঘমেয়াদি), সামাজিক মূলধন, সম্পত্তির অধিকার, নেতৃত্ব প্রদানে প্রশিক্ষণ এবং লাভ বণ্টন করার জন্য একটি স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার প্রয়োজন।(৩০)

এর পাশাপাশি অন্তর্নিহিত কৌশলটিকে জীবিকা সংস্থান এবং উত্পাদনশীল সম্পদের সঙ্গে পরিবেশগত সুরক্ষার দিকটিকে সংযুক্ত করতে হবে, যা কৌশলটিকে মহাত্মা গান্ধী ন্যাশনাল রুরাল এমপ্লয়মেন্ট গ্যারান্টি অ্যাক্টের (এম জি এন আর ই জি এ) মতো প্রকল্পগুলির সঙ্গে যুক্ত করে অতিরিক্ত কার্বন সিঙ্ক তৈরি করতে এবং চরম আবহাওয়াজনিত ঘটনার বিরুদ্ধে অরক্ষিত সম্প্রদায়ের স্থিতিস্থাপকতা বৃদ্ধি করতে পারে। এর একটি সাম্প্রতিকতম উদাহরণ হল, অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীকাকুলাম জেলার ঘূর্ণিঝড়-প্রবণ রুশিকুড্ডা গ্রাম যেখানে এম জি এন আর ই জি এ-এর আওতাভুক্ত শ্রমিকদের দিয়ে একটি স্থানীয় নদীখাতকে গভীর ও প্রশস্ত করা এবং ঝড়ের সমুদ্র থেকে আসা অতিরিক্ত জলকে ফের সমুদ্রে পাঠানোর উদ্দেশ্যে নিষ্কাশন চ্যানেল তৈরি করা হয়েছে। গ্রামের সমীক্ষা চালানো পরিবারের প্রায় ৬৫ শতাংশই সেচ ও কৃষি সম্পদ সৃষ্টির ফলে অধিক উপার্জন এবং কৃষিকাজের সুযোগ পেয়েছেন, যা তাঁদের দুর্যোগ মোকাবিলাতেও সাহায্য করছে।(৩১)

২০২০ সালে কোভিড-১৯ লকডাউনের সময় জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থা  যখন ধুঁকছে, তখন এস এইচ জি-গুলি নির্ভরযোগ্য প্রাথমিক স্তরের সহায়তা ব্যবস্থা প্রদান করেছে। তারা লক্ষ লক্ষ মাস্ক ও ব্যক্তিগত সুরক্ষামূলক সরঞ্জাম (পি পি ই) কিট উৎপাদন, কমিউনিটি কিচেন চালানো, স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা এবং স্থানীয় ভাষায়, বিশেষত প্রত্যন্ত জেলাগুলিতে ভাইরাস সম্পর্কে সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়ার কাজ করেছে। এই অভিজ্ঞতা নারী সমষ্টি এবং সরকারের পক্ষে ব্যাপক ভাবে সহযোগিতা করার পাশাপাশি পারস্পরিক উপকারী কৌশল বাস্তবায়নের সম্ভাবনারও প্রমাণ দিয়েছে। এমনকি রাজ্য স্তরেও বিহারে ‘দিদি কি রসোই’-এর মতো প্রকল্পগুলি, যেখানে নারীরা সরকারি হাসপাতালে রোগীদের জন্য টাটকা রান্না করা খাবার সরবরাহ করে ক্যান্টিন চালান, এই ধারণাটিকেই সমর্থন জুগিয়েছে যে, নারী সমষ্টিগুলির উদ্যোগে নেতৃত্ব দেওয়ার সুবিশাল ক্ষমতা রয়েছে। এই মডেলগুলি পরিবর্তনের প্রদর্শিত পথ হিসেবেই কাজ করতে পারে।

৩. সবুজ অর্থনীতিতে রূপান্তরের চালিকাশক্তি করে তোলার জন্য নারীদের সশক্তিকরণ।

২০২১ সালে গ্লাসগোতে কনফারেন্স অফ পার্টিজ (কপ) ২৬-এ(১) এবং এর আগে ২০১৫ সালে প্যারিসে কপ ২১-এ নিম্ন কার্বন অর্থনীতিতে রূপান্তরের জন্য উচ্চাভিলাষী প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ভারতকে ২০৭০ সালের মধ্যে প্রায় ৫০ মিলিয়ন ‘গ্রিন জব’-এর সুযোগ তৈরি করতে হবে। সৌভাগ্যবশত, কোভিড-১৯ অতিমারি ভোক্তাদের মধ্যে এমন পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধি করেছে, যেগুলি স্বাস্থ্যকর এবং স্থিতিশীল উত্স থেকে প্রাপ্ত এবং যেগুলির বর্জন পরিবেশের জন্য ক্ষতিকারক নয়। যদিও সবুজ অর্থনীতির ক্রম-অভিযোজিত চাহিদা পূরণের ক্ষেত্রে শ্রমবাজারে সরবরাহ ও চাহিদার মাঝে উল্লেখযোগ্য ব্যবধান রয়েছে। জলবায়ু-স্থিতিস্থাপক কৃষি এবং জনগণের স্থিতিশীল ক্রয়ক্ষমতার পাশাপাশি ক্ষেত্র এবং সরবরাহ শৃঙ্খল জুড়ে এটির বিস্তার অতিমারি-পরবর্তী সময়ে বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। উপযুক্ত দক্ষতা, সচেতনতা, সংহতি, নিরাপত্তা এবং পরামর্শের সুবিধা পেলে নারী শ্রমিক এবং নারী নেতৃত্বাধীন অতি-ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগগুলি (এম এস এম ই) এই উত্তরণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে। জৈব এবং পরিবেশ বান্ধব পণ্য উৎপাদনকারী কার্মেসি, ক্ল্যান আর্থ, দি উওম্যানস কোম্পানি এবং রুবি অর্গানিকস– সবগুলিই নারী দ্বারা পরিচালিত।(৩২)

সবুজ অর্থনীতি প্রাধান্য পাওয়া সত্ত্বেও নারী উদ্যোক্তারা একাধিক বাধার সম্মুখীন হন।(৩৩) সবুজ অর্থনীতির মূল্য শৃঙ্খল জুড়ে বিনিয়োগকারীদের নারীদের নেতৃত্বাধীন মধ্য পর্যায়ের ব্যবসায় এবং প্রাথমিক পর্যায়ের স্টার্ট আপগুলিতে মনোনিবেশ করতে হবে, তাদের অর্থায়ন, দক্ষতা ও পরামর্শ দান, বাজারের সংযোগ, পরিবেশগত ও সামাজিক লক্ষ্যগুলিতে নিয়ন্ত্রক সহায়তা (ই এস জি), এবং স্থায়িত্ব ও সামাজিক মূলধনের সুবিধা জোগাতে হবে। দূষণমুক্ত বয়নশিল্প, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং কৃষি ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণে নারীদের মালিকানাধীন উদ্যোগগুলিকে বাজারের আকর্ষণ, বৃদ্ধির সম্ভাবনা এবং নারীদের অংশগ্রহণের প্রমাণের ভিত্তিতে অগ্রাধিকার দেওয়া যেতে পারে। সবুজ অর্থনীতিতে নির্মাণ, বৈদ্যুতিক গতিশীলতা, পর্যটন, মৎস্য সম্পদ এবং পুনর্নবীকরণযোগ্য জ্বালানির মতো খাতের গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে নারীদের উৎসাহ দেওয়াকেও গুরুত্ব দিতে হবে।

নবজাত সবুজ অর্থনীতির দ্বৈত প্রতিবন্ধকতা এবং নারী শ্রমশক্তির কম অংশগ্রহণের পরিপ্রেক্ষিতে নারীদের উৎসাহিত করার জন্য একত্রে সরকার, জনহিতৈষী সংস্থা, বেসরকারি খাত এবং নাগরিক সমাজের কাজ করা উচিত। ভারতের শ্রমশক্তির ৮০ শতাংশেরও বেশি অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কাজ করে, যেখানে নারীরা বেশির ভাগই কম বেতনের চাকরিতে নিযুক্ত হন।(৩৪) সবুজ অর্থনীতিতে, বিশেষ করে সবুজ নির্মাণ বা ই-বর্জ্য নিষ্পত্তির মতো অনেক অদক্ষ ভূমিকা-সহ ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতাগুলি অব্যাহত রয়েছে। সরকার এবং এন জি ও-গুলি ছাড়া গ্রিন জবের জন্য নারীদের সংগঠিত করার পাশাপাশি, বেসরকারি ক্ষেত্রের উচিত অপ্রাতিষ্ঠানিক কর্মীদের একত্রকারী সামাজিক উদ্যোগগুলির সঙ্গে সংযুক্ত হওয়া। এমনটা হলে তাঁরাও কর্মক্ষেত্রে মর্যাদা, ন্যূনতম মজুরি এবং নিরাপত্তার মতো সুবিধাগুলি পাওয়ার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক পরিবর্তনগুলিকেও সুনিশ্চিত করতে সক্ষম হন। নারীদের ক্ষেত্রে তাঁদের স্ব স্ব রাজ্যে দক্ষতা বৃদ্ধি করা এবং তাঁদের বাড়ির কাছাকাছি কাজে নিযুক্ত করা অনুন্নত ভৌগোলিক অঞ্চলে প্রতিভা আকর্ষণ এবং ধরে রাখার কাজটি করতে পারে। নারীচালিত এম এস এম ই-গুলিকে, বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকায় ক্ষুদ্র উদ্যোগগুলিকে, সশক্তিকরণের জন্য অর্থের লভ্যতা, বাজার সংযোগ এবং পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি বিতরণের মতো বিষয়গুলি গুরুত্বপূর্ণ।

৪. জনহিতকর অর্থায়নে লিঙ্গ এবং জলবায়ু সংক্রান্ত বিষয়গুলিকে মূলধারায় আনা।

সাম্প্রতিক বছরগুলি

  • Climate, Food and Environment
  • Gender
  • Climate Change
  • India
  • অ্যানিমিয়ামুক্ত
  • এফ সি ডি ও
  • ডিগনিটি ইন ফ্লাডস
  • পিতৃতান্ত্রিক
  • সি ডি কে এন
  • The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.