Originally Published Foreign Policy Published on Apr 04, 2022 Commentaries 7 Days ago

ফিলিপিনসের কাছে সাম্প্রতিক বিক্রি একটি বড় ঘটনা, কিন্তু ভারতের আরও বড় উচ্চাকাঙ্ক্ষা পূরণের পথে বাধা আছে৷

ভারতের প্রতিরক্ষা শিল্প কি রফতানি বাজারে সাফল্য পাবে?

Source Image: Jewel Samad — AFP via Getty

ভারতের প্রতিরক্ষা শিল্প কি রফতানি বাজারে সাফল্য পাবে?

প্রশিক্ষণ ও সহায়তার ব্যবস্থাসহ ব্রহ্মস সুপারসনিক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের তিনটি উপকূলীয় প্রতিরক্ষা ব্যাটারি সরবরাহ করার জন্য ফিলিপিনসের কাছ থেকে ৩৭.‌৫ কোটি মার্কিন ডলারের বরাত পেয়ে জানুয়ারিতে ভারত একটি বিরল মাইলফলক স্থাপন করেছে। অস্ত্রগুলি ইন্দো-রুশ যৌথ উদ্যোগের ফসল, ফলে তা এখন ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের পরিপ্রেক্ষিতে আরও তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ভারত কিন্তু এখনও সমরাস্ত্র ও সরঞ্জামের জন্য রাশিয়ার উপর নির্ভরশীল, এবং ভারত রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ পরিষদে রাশিয়ার আগ্রাসনের নিন্দা করা থেকে বিরত থেকেছে। প্রতিরক্ষা স্বার্থ এবং পশ্চিমের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান ঘনিষ্ঠতার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার ক্ষেত্রে নয়াদিল্লি এখন ক্রমবর্ধমান দ্বিধাদ্বন্দ্বের সম্মুখীন।

তবে ব্রহ্মস বিক্রি কিন্তু ভারতের সাফল্য: এটি বেশ কয়েক বছরের মধ্যে নয়াদিল্লির প্রথম বড় সামরিক রফতানি, আর ভিয়েতনাম ও ইন্দোনেশিয়ার মতো দেশগুলিও এই ক্ষেপণাস্ত্রের প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করেছে৷

ভারত কিন্তু এখনও সমরাস্ত্র ও সরঞ্জামের জন্য রাশিয়ার উপর নির্ভরশীল, এবং ভারত রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ পরিষদে রাশিয়ার আগ্রাসনের নিন্দা করা থেকে বিরত থেকেছে।

মিসাইল চুক্তি গত পাঁচ বছরে ভারতের চিত্তাকর্ষক গতিপথকেও নির্দেশিত করে। ভারতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০১৭ সালে সমস্ত প্রতিরক্ষা রফতানির বার্ষিক মূল্য ৩০ কোটি মার্কিন ডলারের কম ছিল। স্টকহলম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুসারে, ২০২০ সালের মধ্যে ভারত প্রথম বারের জন্য বিশ্বব্যাপী শীর্ষ ২৫টি অস্ত্র রফতানিকারকদের মধ্যে ছিল। আরও সাম্প্রতিক সরকারি পরিসংখ্যান দেখায় যে ভারত ২০১৬ ও ২০২১ অর্থবর্ষের মধ্যে তার রফতানির মূল্য চারগুণ করেছে:‌ প্রায় ২৭.‌৫ কোটি ডলার থেকে ১১৩ কোটি ডলার

বিশ্বব্যাপী প্রতিরক্ষা বিক্রয় বা‌ড়িয়ে ভারতের অভ্যন্তরীণ শিল্পকে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আগ্রহের অবদানও কিছু কম নয়। দেশের সামরিক গবেষণা ও উৎপাদনকে, বিশেষ করে বেসরকারি ক্ষেত্রে, সীমিত সরকারি তহবিল ও ক্রয়ের ধীরগতির বিরুদ্ধে লড়াই করতে হচ্ছে। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মধ্যে এই ধরনের তহবিলের ঘাটতি পূরণ করতে পারে রফতানি, যার ফলে দেশের শিল্প লাভবান হবে ও ভারতের ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব বাড়বে। কিন্তু ইতিমধ্যেই এই কৌশলের সামনে নানা চ্যালেঞ্জ রয়েছে, যেমন গ্রাহকের প্রয়োজন ও রফতানির চাহিদা মেটাতে দেশীয় শিল্পের সক্ষমতা।

সাম্প্রতিক উন্নতি সত্ত্বেও যদি জিডিপি বা প্রতিরক্ষায় সরকারি ব্যয়ের অংশ হিসেবে পরিমাপ করা হয়, তা হলে ভারতের প্রতিরক্ষা রফতানিতে এখনও ঘাটতি রয়েছে। ভারত সরকারের নিজস্ব উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য থাকা সত্ত্বেও দেখা যাচ্ছে বাস্তব পরিস্থিতি গুরুতর। ২০১৯ সালে ভারতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রক রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিরক্ষা সংস্থাগুলিকে ২০২৩ অর্থবর্ষের মধ্যে রফতানির মাধ্যমে মোট বার্ষিক আয়ের ২৫ শতাংশ উপার্জন করার নির্দেশ দেয়; এরপর মোদী আহ্বান জানান ২০২৫ সালের মধ্যে ৫০০ কোটি ডলারের রফতানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের।

ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মধ্যে এই ধরনের তহবিলের ঘাটতি পূরণ করতে পারে রফতানি, যার ফলে দেশের শিল্প লাভবান হবে ও ভারতের ভূ-রাজনৈতিক শক্তি বাড়বে।

অভ্যন্তরীণ ও বিদেশি, উভয় ক্ষেত্রের চাহিদা পূরণ করার জন্য ভারতীয় শিল্পের ক্ষমতা বৃদ্ধি করার পরিপ্রেক্ষিতটি মাথায় রাখলে বলতে হয়, কোনও লক্ষ্যই বাস্তবসম্মত নয়। বিগত কয়েক বছরে, ভারতের বার্ষিক প্রতিরক্ষা রফতানির অঙ্ক আসলে কিছুটা কমেছে:‌ ২০১৯ সালের ১৪‌৩ কোটি ডলার থেকে ২০২১ অর্থবছরে ১১৩ কোটি ডলারে নেমেছে। সর্বশেষ সংখ্যাটি রাষ্ট্রায়ত্ত ক্ষেত্রের উপার্জনের প্রায় ১০ শতাংশ, কারণ রফতানির একটি উল্লেখযোগ্য অংশ এখনও বেসরকারি ক্ষেত্রের। একই ভাবে, মোদীর ঘোষিত লক্ষ্য অর্জনের জন্য রফতানি প্রতি বছর ৫০ শতাংশের বেশি বাড়াতে হবে।

ভারতের সমর–সরঞ্জাম কেনা এবং আধুনিকীকরণ সংক্রান্ত প্রতিরক্ষা ব্যয়ের প্রায় ৬০ শতাংশ অভ্যন্তরীণ উৎসের জন্য ব্যয় করা হয়। এই বছরের বাজেটে এই মোট ব্যয়ের পরিমাণ প্রায় ১,৬৬০ কোটি ডলার ধরা হয়েছে, যার অর্থ হল দেশে শিল্প ২০২৩ অর্থবর্ষে প্রায় ১,০০০ কোটি ডলার মূল্যের ব্যবসা পাবে। মোদীর রফতানির লক্ষ্যমাত্রাটি সমগ্র দেশীয় মূলধনের অর্ধেকের সমান। এই সম্মিলিত চাহিদা মেটাতে প্রয়োজনীয় অতিরিক্ত ক্ষমতা তৈরি করা অসম্ভব হবে।

ভারত সরকার ক্রমাগত সমর্থন করে চলেছে অদক্ষ রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন উদ্যোগগুলিকে, যেগুলি তার উচ্চাকাঙ্ক্ষার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াবে। উল্টোদিকে প্রতিরক্ষা রফতানির লক্ষ্য পূর্ণ করতে সক্ষম বেসরকারি উদ্যোগগুলিকে যৎসামান্য সাহায্য দেওয়া হয়। ইচ্ছাকৃত ভাবেই হোক বা প্রচলিত পদ্ধতির অনুসরণেই হোক, সরকারের পক্ষে নিজের মালিকানাধীন সংস্থা থেকে প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত সাজসরঞ্জাম সংগ্রহ করা সহজ। একটি দেশে, যেখানে দুর্নীতি ব্যাপক ও রাজনৈতিক ভাবে সংবেদনশীল, সেখানে বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে সমস্ত লেনদেন নজরদারিকে আমন্ত্রণ জানায়। অতএব, প্রতিরক্ষা রফতানি আরও চারগুণ বাড়ানো সহজ হবে না।

তা ছাড়া ভারতের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন উদ্যোগগুলি রফতানির বাজারে নিজেদের আলাদা ছাপ রাখতে পারেনি। ব্রহ্মস বিক্রয়ের আগে সর্বোচ্চ অঙ্কের রফতানি চুক্তিটি ছিল ২০০৯ সালে ইকুয়েডরের সঙ্গে সাতটি হিন্দুস্তান অ্যারোনটিক্স অ্যাডভান্স লাইট হেলিকপ্টার-এর জন্য ৫ কোটি ডলারের চুক্তি। সেটাই প্রথম বিশ্ব রফতানি বাজারে ভারতের জাঁকজমকপূর্ণ আগমনবার্তা ঘোষণা করেছিল। কিন্তু পরপর দুর্ঘটনার পর ২০১৫ সালে কুইটো চুক্তি বাতিল করায় প্রয়াসটি ব্যর্থতায় পরিণত হয়। প্রচুর সংখ্যায় উৎপাদন, ইউনিটপ্রতি কম খরচ, এবং ভারতের সামরিক বাহিনীর ব্যাপক ব্যবহার সত্ত্বেও হেলিকপ্টারটি তখন থেকে আর তেমন রফতানি সাফল্য অর্জন করতে পারেনি।

দেশীয় জাহাজ নির্মাণ, অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানোর ক্ষেত্রে যাকে নয়াদিল্লি প্রায়শই সাফল্যের গল্প হিসেবে দাবি করে, তার কাহিনিও হতাশাজনক। ভারতীয় যুদ্ধজাহাজগুলি অনুপযুক্ত ভাবে কনফিগার করা, অথবা খুব ব্যয়বহুল, বা দুটোই। ভারত এমনকি গোলাবারুদের মতো ব্যবহার্য জিনিসপত্রও রফতানি করে না। পূর্ববর্তী অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি সার্ভিস, যা এখন সাতটি পাবলিক সেক্টর ইউনিটে বিভক্ত, ১৯৮০-র দশক থেকে আর্টিলারি গোলাবারুদ তৈরি করছে, কিন্তু এর সবচেয়ে বড় রফতানি ছিল ২০১৯–এ সংযুক্ত আরব আমিরশাহিকে ৪.‌৫৭ কোটি ডলারের সরবরাহ।

ব্রহ্মস বিক্রয়ের আগে সর্বোচ্চ অঙ্কের রফতানি চুক্তিটি ছিল ২০০৯ সালে ইকুয়েডরের সঙ্গে সাতটি হিন্দুস্তান অ্যারোনটিক্স অ্যাডভান্স লাইট হেলিকপ্টার-এর জন্য ৫ কোটি ডলারের চুক্তি। সেটাই প্রথম বিশ্ব রফতানি বাজারে ভারতের জাঁকজমকপূর্ণ আগমনবার্তা ঘোষণা করেছিল।

প্রতিযোগিতামূলক মূল্যের পণ্য প্রস্তুত করা এবং সরকারি সমর্থন পাওয়া সত্ত্বেও সময়মতো ও ঠিকঠাক খরচে পণ্য সরবরাহ করার ক্ষেত্রে ভারতের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিরক্ষা উদ্যোগগুলি সম্পর্কে ধারণা ভাল নয়। এই বিষয়ে ফিলিপিনসের সঙ্গে ব্রহ্মস চুক্তি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ তা ভারতকে এক দশকের মধ্যে প্রথম বার সুযোগ দিয়েছে এই নেতিবাচক ধারণা পরিবর্তন করার৷ পরিষেবা দেওয়ার প্রশ্নে মসৃণতা অন্যান্য অস্ত্র ব্যবস্থা, যেমন আকাশ সারফেস-টু-এয়ার মিসাইল ও পিনাক রকেট আর্টিলারি, দেশের মধ্যে উৎসাহের সঙ্গে গ্রহণের পথ প্রশস্ত করবে। ফলে এগুলি বিদেশের বাজারেও গুরুত্ব পাবে।

কিন্তু সরকারি ক্ষেত্রের ইউনিটগুলি রেকর্ড সময়ে তাদের রফতানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারলেও তা সরকারের প্রতিরক্ষা রফতানির লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেকেরও কম হবে। তাই ভারতকে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সংস্থাগুলির বাইরে তাকাতে হবে, এবং বেসরকারি উদ্যোগগুলিকে সহায়তা দিতে হবে। বিকাশমান বেসরকারি ক্ষেত্র ইতিমধ্যেই তার ওজনের চেয়ে বেশি দায়ভার কাঁধে নিয়েছে: একটি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন টিভি চ্যানেল ২০২০ সালে উল্লেখ করেছে যে ২০২০ অর্থবর্ষের ১২০ কোটি ডলার প্রতিরক্ষা রফতানির ৯৫ শতাংশই ছিল বেসরকারি ক্ষেত্রের অবদান। এই কাজটা তারা করতে পেরেছে প্রাথমিক ভাবে প্রতিরক্ষা অফসেটের দৌলতে, অর্থাৎ বিক্রেতার কাছ থেকে ক্রেতার একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক পণ্য বা পরিষেবা সংগ্রহের চুক্তির সুবাদে।

সরকার যদি সৃজনশীল ভাবে রাজস্ব নীতি, প্রতিরক্ষা অফসেট ও মূলধনী ব্যয়ের মাধ্যমে বেসরকারি ক্ষেত্রকে আরও দ্রুত বিকশিত হতে সক্ষম করে, তা হলে প্রতিরক্ষা রফতানির উপর তার বিরাট প্রভাব দেখা যাবে। নয়াদিল্লির একটি সমন্বিত প্রতিরক্ষা রফতানি নীতির লক্ষ্যে কাজ করার জন্য নতুন করে আগ্রহ তৈরি হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। ব্রহ্মস বিক্রয়ের মতো বড় ধরনের পদক্ষেপ সেদিকেই অঙ্গুলিনির্দেশ করছে। বার্ষিক ভারতীয় প্রতিরক্ষা রফতানি যাতে ১০০ কোটি মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে যায়, সেই উদ্দেশ্যে সরকার বড় ধরনের নীতি সংস্কার করেছে। ৫০০ কোটি মার্কিন ডলারে পৌঁছনোর জন্য কিন্তু মোদী সরকারকে বড় ধরনের আর্থিক ও শিল্প সংস্কারেও মনোনিবেশ করতে হবে।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.

Authors

Harsh V. Pant

Harsh V. Pant

Professor Harsh V. Pant is Vice President – Studies and Foreign Policy at Observer Research Foundation, New Delhi. He is a Professor of International Relations ...

Read More +
Angad Singh

Angad Singh

Angad Singh was a Project Coordinator with ORFs Strategic Studies Programme.

Read More +