Author : Kabir Taneja

Originally Published Inter Regional Published on Mar 29, 2022 Commentaries 7 Days ago

গত এক দশকে ভারত-আমিরশাহি সম্পর্কের উন্নতির দ্রুত গতি দর্শায় যে, উভয় দেশই একটি নতুন অধ্যায়ের দিকে এগিয়ে চলেছে।

সি ই পি এ: ভারত ও সংযুক্ত আরব আমিরশাহির মধ্যে অর্থনৈতিক নিরাপত্তা বৃদ্ধি

Source Image: MEAphotogallery — Flickr

সি ই পি এ: ভারত ও সংযুক্ত আরব আমিরশাহির মধ্যে অর্থনৈতিক নিরাপত্তা বৃদ্ধি

১৯ ফেব্রুয়ারি ভারত এবং সংযুক্ত আরব আমিরশাহি একটি তাৎপর্যপূর্ণ এবং বিস্তৃত বাণিজ্যিক চুক্তি স্বাক্ষর করেছে যা উভয় দেশের অর্থনীতিকে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে পারস্পরিক ১০ হাজার কোটি মার্কিন ডলার মূল্যের বাণিজ্যের লক্ষ্যের কাছাকাছি নিয়ে আসবে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং আবু ধাবির যুবরাজ ও সংযুক্ত আরব আমিরশাহির সশস্ত্র বাহিনীর ডেপুটি সুপ্রিম কমান্ডার শেখ মহম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান ভার্চুয়াল সাক্ষাৎ করেন এবং কম্প্রিহেনসিভ ইকনমিক পার্টনারশিপ এগ্রিমেন্টের (সি ই পি এ) উদ্বোধন করেন যেটি আবু ধাবি ও নিউ দিল্লির মধ্যে দ্রুত হারে বর্ধমান কৌশলগত অংশীদারিত্বের উপরে ভিত্তি করে নির্ধারিত এক অর্থনৈতিক আন্তঃসহযোগিতা চুক্তি। এই চুক্তি মে মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে কার্যকর হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

ভারত-আমিরশাহি পারস্পরিক সহযোগিতার পরিমাণ বিগত কয়েক বছরে উল্কার গতিতে বৃদ্ধি পেয়েছে। যদিও এই সম্ভাবনার বীজ প্রোথিত হয়েছিল ২০০৩ সালে, যখন প্রয়াত ভারতীয় রাষ্ট্রপতি এ পি জে আব্দুল কালাম আবু ধাবি সফরে যান এবং এর পরে ২০০৬ সালে সৌদি রাজা আবদুল্লার ভারত সফরে আসার ঐতিহাসিক ঘটনাটি ঘটে। ২০১৫ সালে মোদীর সংযুক্ত আরব আমিরশাহি সফর ৩৪ বছরে কোনও ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর তরফে প্রথম এবং আবু ধাবির যুবরাজ ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবস উদযাপনে সম্মানিত অতিথি রূপে ২০১৬ সালে ভারত সফর করেন। ২০১৭ সালে উভয় দেশই তাদের সম্পর্ককে ‘কম্প্রিহেনসিভ স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশিপ’-এর স্তরে উন্নীত করে। যেখানে ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট (এফ টি এ) বা মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি ফলপ্রসূ হতে সাধারণত কয়েক বছর, এমনকি দশকও লেগে যায়, সেখানে সি ই পি এ-র সফল স্বাক্ষর পর্ব (৯০ দিনেরও কম সময়ের আলাপ-আলোচনায় স্বাক্ষরিত) দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার এক নতুন মডেল তুলে ধরে।

উচ্চ প্রতিযোগিতামূলক ক্ষেত্র যেমন বয়ন শিল্প (যেটি বর্তমানে শুল্কের আওতাধীন। যদিও বাংলাদেশের মতো বয়নশিল্পে উন্নত অন্য দেশগুলি সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে এ হেন রফতানির জন্য কোনও শুল্ক দেয় না) থেকে শুরু করে মণিরত্ন, অটোমোবাইল, ঔষধপত্র ইত্যাদি ক্ষেত্রগুলি সি ই পি এ দ্বারা উপকৃত হবে।

সি ই পি এ-র অধীনে পণ্য এবং পরিষেবা উভয়েরই সহজ এবং কার্যকর আদান-প্রদানের জন্য সব রকম বাধা অপসারণ করা হয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, এই চুক্তিতে ৮০% শুল্ক হার অপসারিত হয়েছে, সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে ভারতীয় রফতানির প্রায় ৯০% এত দিন যার আওতাভুক্ত ছিল। সি ই পি এ-র বাস্তবায়ন হলে আগামী কয়েক বছরে এই শুল্কমুক্ত বাণিজ্যের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়াবে ৯৭ শতাংশে। উচ্চ প্রতিযোগিতামূলক ক্ষেত্র যেমন বয়ন শিল্প (যেটি বর্তমানে শুল্কের আওতাধীন। যদিও বাংলাদেশের মতো বয়নশিল্পে উন্নত অন্য দেশগুলি সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে এ হেন রফতানির জন্য কোনও শুল্ক দেয় না) থেকে শুরু করে মণিরত্ন, অটোমোবাইল, ঔষধপত্র ইত্যাদি ক্ষেত্রগুলি সি ই পি এ দ্বারা উপকৃত হবে। ভারতীয় অনুমান অনুযায়ী এই চুক্তির ফলে ভারতে আনুমানিক ১০ লক্ষ নতুন কাজের সুযোগ তৈরি হবে। এ ছাড়াও, এই চুক্তি অনুযায়ী সংযুক্ত আরব আমিরশাহি ভারত থেকে অতি পেশাদার কর্মীদের জন্য ১৪ লক্ষ ওয়ার্ক ভিসা বা কাজের ছাড়পত্র মঞ্জুর করবে। এ ক্ষেত্রে মনে রাখা আবশ্যিক যে, বৃহত্তর উপসাগরীয় অঞ্চলটি ৮০ লক্ষ ভারতীয় নাগরিকের বাসস্থান (যা প্রায় সুইৎজারল্যান্ডের সম্পূর্ণ জনসংখ্যার সমান)। ভারত ঐতিহাসিক ভাবে উপসাগরীয় দেশগুলিতে সস্তা শ্রমিক প্রেরণের সঙ্গে সম্পর্কিত হলেও এই ধারণা ক্রমশ বদলাচ্ছে। অতি পারদর্শী মানব সম্পদের সন্ধানে প্রধান গন্তব্য রূপে ভারত উপসাগরীয় দেশগুলির মধ্যে ক্রমশ জনপ্রিয়তা অর্জন করছে।

সি ই পি এ-র স্বাক্ষরিত হওয়া শুধু মাত্র ভারত-সংযুক্ত আরব আমিরশাহির সম্পর্কেই নয়, এফ টি এ-র বিষয়টিতেও অভূতপূর্ব অগ্রগতি ঘটিয়েছে। এ কথা অস্বীকার করার কোনও জায়গা নেই যে, ভারতের অভ্যন্তরীণ বাজারটি অত্যন্ত সংবেদনশীল এবং সদা পরিবর্তনশীল, যেখানে ক্ষুদ্র ও মাঝারি মাপের শিল্পগুলিই সর্ববৃহৎ নিয়োগকারীর কাজ করে। ই ইউ, ব্রিটেন, অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশ এবং অঞ্চলগুলির সঙ্গে ভারতের এফ টি এ সংক্রান্ত আলাপ-আলোচনা উভয় তরফেই উল্লেখযোগ্য বাধার সম্মুখীন হলেও সংযুক্ত আরব আমিরশাহির সঙ্গে চুক্তি এটাই দর্শায় যে, উপসাগরীয় অর্থনীতিগুলি নতুন বাণিজ্য এবং বিনিয়োগ উভয়েরই আঁতুড়ঘর রূপে ভারতের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে। এই আগ্রহ মূলত শক্তি নিরাপত্তা, খাদ্য নিরাপত্তা এবং সার্বভৌম পুঁজি খাতে বিনিয়োগের সুরক্ষিত পরিবেশের মতো ক্ষেত্রগুলিতে দেখা গেছে। এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে অন্তত পক্ষে আগামী দু’দশকের জন্য ভারতের মতো উন্নয়নশীল অর্থনীতিগুলিতে হাইড্রোকার্বনের নিরবচ্ছিন্ন জোগানের প্রয়োজন পড়বে।

বৃহত্তর উপসাগরীয় অঞ্চলটিতে একটি প্রারম্ভিক মঞ্চ বা লঞ্চ প্ল্যাটফর্ম হিসেবে সি ই পি এ-র প্রসার ঘটানো সংক্রান্ত কথাবার্তাও এর পর থেকে ইতিবাচক গতি পাবে বলে আশা করা যায়। ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গয়াল জানিয়েছেন যে, ভারত চলতি বছর শেষ হওয়ার আগেই গালফ কোঅপারেশন কাউন্সিলের (জি সি সি) সঙ্গে এফ টি এ চূড়ান্ত করার পথে এগোচ্ছে। এই চুক্তি অনুযায়ী সংযুক্ত আরব আমিরশাহি, সৌদি আরব, বাহরিন, ওমান, কাতার এবং কুয়েতের মতো দেশের অর্থনীতিগুলিকে একটি একক বাণিজ্য ব্লকের আওতাভুক্ত করা হবে যারা সি ই পি এ দ্বারা নির্ধারিত শুল্ক হার মেনে চলবে। সম্মিলিত ভাবে জি সি সি ইতিমধ্যেই ভারতের একক বৃহত্তম বাণিজ্য ব্লক যেটি ২০০০-০১ থেকে ২০১৫-১৬ সালের মধ্যে বাণিজ্যে দশ গুণ বৃদ্ধির সাক্ষী থেকেছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে ভারত-সংযুক্ত আরব আমিরশাহির মধ্যে বাণিজ্য ভারত-জি সি সি অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বের অগ্রদূত হিসেবে কাজ করেছে।

ই ইউ, সংযুক্ত যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশ এবং অঞ্চলগুলির সঙ্গে ভারতের এফ টি এ সংক্রান্ত আলাপ-আলোচনা উভয় তরফেই উল্লেখযোগ্য বাধার সম্মুখীন হলেও সংযুক্ত আরব আমিরশাহির সঙ্গে চুক্তি এটাই দর্শায় যে, উপসাগরীয় অর্থনীতিগুলি নতুন বাণিজ্য এবং বিনিয়োগ উভয়েরই আঁতুড়ঘর রূপে ভারতের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে।

সর্বোপরি মধ্যপ্রাচ্যে ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতার সাম্প্রতিক পুনর্বিন্যাস বৃহত্তর এবং আরও স্থিতিশীল অর্থনৈতিক সহযোগিতার এক উন্নততর পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। এই পুনর্বিন্যাসের অংশ হিসেবে আব্রাহাম অ্যাকর্ডস স্বাক্ষরিত হওয়া — যা সংযুক্ত আরব আমিরশাহির নেতৃত্বে ইজরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের জন্য একগুচ্ছ আরব রাষ্ট্রকে কাছাকাছি এনেছে — অর্থনৈতিক সহযোগিতার সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে। একটি এফ টি এ স্বাক্ষরকে কেন্দ্র করে ভারত ইজরায়েলের সঙ্গেও কথাবার্তা চালাচ্ছে এবং ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, ইজরায়েল এবং সংযুক্ত আরব আমিরশাহির বিদেশমন্ত্রীরা অঞ্চলটিতে ভবিষ্যৎ আন্তঃসহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা করার জন্য ভার্চুয়াল সাক্ষাৎ করেছেন। সমাবেশের পরে মার্কিন বিবৃতিতে বাণিজ্য, জলবায়ু পরিবর্তন, জ্বালানি এবং সমুদ্র নিরাপত্তাকে অভিন্ন স্বার্থের মূল ক্ষেত্র হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। প্রযুক্তির মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে আরও বিস্তৃত আমিরশাহি -ইজরায়েল অর্থনৈতিক সহযোগিতার ক্রমবর্ধমান সম্ভাবনার পাশাপাশি ভারতের মতো দেশগুলিকে বাণিজ্যিক এবং রাজনৈতিক পরিবেশের প্রেক্ষিতে কম টানাপড়েনের সম্মুখীন হতে হয়। এর ফলে ইজরায়েল, আরব বিশ্ব এবং ইরানের মধ্যে কৌশলগত সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখা এখন ভারতের পক্ষে সহজতর হবে।

উপসংহারে বলা যায়, সি ই পি এ শুধু মাত্র ভারত-সংযুক্ত আরব আমিরশাহি সম্পর্কের উত্থানের একটি চিহ্ন মাত্র নয়। কোভিড-১৯ অতিমারি, ইউক্রেনের সঙ্কট এবং ক্রমশ আগ্রাসী হয়ে ওঠা চিনের জন্য বিশ্ব অর্থনীতিতে ঘটা উল্লেখযোগ্য ব্যাঘাতগুলির প্রেক্ষিতে দৃঢ় মূল্যবোধের সঙ্গে বাণিজ্যিক চুক্তি এবং যৌথ স্বার্থের প্রতি পারস্পরিক শ্রদ্ধা উভয় দেশের অর্থনীতি এবং জনসাধারণের জন্য অতি প্রয়োজনীয় একটি সুরক্ষাবলয় প্রদান করে। বর্তমান সময়ে ভারত এবং সংযুক্ত আরব আমিরশাহির মধ্যে গৃহীত একাধিক পদক্ষেপ ১৯৯০-এর দশকে নেওয়া সম্ভব ছিল না। গত এক দশকে ভারত-আমিরশাহি সম্পর্কের উন্নতির দ্রুত গতি দর্শায় যে, উভয় দেশই একটি নতুন অধ্যায়ের দিকে এগিয়ে চলেছে। এই পরিবর্তনকে যে অর্থনীতি, বাণিজ্য এবং উন্নত ব্যক্তিগত সম্পর্ক নেতৃত্ব দিচ্ছে, তা উভয় দেশের জন্য এক ইতিবাচক পদক্ষেপ।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.