Published on May 06, 2024 Updated 0 Hours ago

জর্জিয়া এক দিকে রুশ আগ্রাসনবাদ এবং অন্য দিকে ইইউ সদস্যপদ অর্জনের মাঝে ভারসাম্য রক্ষার চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন এবং এই সংক্রান্ত সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়া এড়ানোর জন্য একটি সতর্ক মনোভাব প্রয়োজন

জর্জিয়ার ইইউ সদস্যপদ সংক্রান্ত প্রতিবন্ধকতা

যেহেতু জর্জিয়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য হওয়ার পথে ক্রমশ এগিয়ে চলেছে, তাই দক্ষিণ ককেশীয় প্রজাতন্ত্রে উত্তেজনার পারদ ছড়িয়ে পড়েছে। গত ১৫ ডিসেম্বর ইইউ জর্জিয়ার সদস্যপদের আবেদন দ্রুত নিষ্পত্তির প্রক্রিয়া শুরু করে এবং জর্জিয়াকে প্রার্থীর মর্যাদা প্রদান করে, যার ফলে পূর্ব ইউরোপীয় ককেশীয় দেশগুলি রাশিয়ার আগ্রাসনের সম্মুখীন হয়। ইউরোপীয় ইউনিয়নে জর্জিয়ার সম্ভাব্য সদস্যপদ সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জগুলি অব্যাহত রয়েছে এবং তা শুধু মাত্র তার সত্তাতাত্ত্বিক পূর্বসূরি রাশিয়ার তরফেই নয়, বরং অভ্যন্তরীণ ভাবেই।

 

উরোপের সঙ্গে সমন্বয়ের প্রয়াস

ইউরোপের সঙ্গে সংযুক্ত হওয়ার জন্য তিবিলিসির দাবি নতুন নয়। পূর্ববর্তী ইউএসএসআর বিলুপ্ত হওয়ার পর থেকে রুশ-বিরোধী মনোভাব জর্জীয় রাজনীতির রূপরেখাকে সংজ্ঞায়িত করেছে। নব্বই দশকের শেষ থেকে ২০০০-এর দশকের গোড়ার দিকে নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজেশন (ন্যাটো) দ্রুত প্রসারিত হয়েছে এবং জর্জিয়া সক্রিয় ভাবে তার সদস্যপদের প্রত্যাশী থেকেছে। সম্ভাব্য বিপদরেখা লঙ্ঘিত হতে দেখে গণহত্যার অভিযোগে রুশবাহিনীকে দক্ষিণ ওসেটিয়া আবখাজিয়ায় জড়ো করা হয় ও মস্কো এই দুটি অঞ্চলের সার্বভৌমত্বের দাবিকে সমর্থন করেছিল। তার পর থেকে জর্জিয়ার রাজনৈতিক অভিজাতরা সতর্কতার সঙ্গে ইউরোপীয় সমন্বিতকরণের উচ্চাকাঙ্ক্ষার পথে হেঁটেছেন।

 

একই বছরে রাশিয়ায় জর্জিয়ার রফতানির পরিমাণ ৩২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্কের স্বাভাবিকীকরণ সত্ত্বেও ইউরোপীয় প্রকল্পের জন্য আগ্রহীদের সংখ্যা বছরের পর বছর ক্রম রাশিয়া বিরোধী মনোভাবের সঙ্গে সমানুপাতিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।

 

২০১৪ সালে জর্জিয়া ইইউ-এর সঙ্গে একটি সাংগঠনিক চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। একই সঙ্গে জর্জিয়ার রাজনৈতিক অভিজাতরা রাশিয়ার সঙ্গে তাদের সম্পর্ক পুনর্নির্মাণের দিকে মনোনিবেশ করেছিলেন। ২০১৪ সালে ভিসাহীন ভ্রমণ-সহ দুই দেশের মধ্যে সরাসরি বিমান চলাচল পুনরায় চালু হয়। দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের ব্যাপক পরিমাণ রাশিয়ার সঙ্গে জর্জিয়ার চাপানউতোর কমাতে আরও সাহায্য করেছে। ২০২৩ সালে রাশিয়া থেকে জর্জিয়ার আমদানির পরিমাণ ২০২২ সালের তুলনায় ৭৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ১.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হয়েছে। একই বছরে রাশিয়ায় জর্জিয়ার রফতানির পরিমাণ ৩২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্কের স্বাভাবিকীকরণ সত্ত্বেও ইউরোপীয় প্রকল্পের জন্য আগ্রহীদের সংখ্যা বছরের পর বছর ক্রম রাশিয়া বিরোধী মনোভাবের সঙ্গে সমানুপাতিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। যাই হোক, তিবিলিসির রাজনৈতিক অভিজাতরা যদিও এই মনোভাব পোষণ করেন না - যাঁরা ইউরো-আটলান্টিসিস্ট ভবিষ্যতের কথা বলে এবং ন্যাটো সদস্য হওয়ার আকাঙ্ক্ষা পোষণ করা সত্ত্বেও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সমর্থনে কিয়েভের ন্যাটো সদস্যপদ পাওয়ার উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে দোষারোপ করেন, ব্রাসেলস বিরোধী ব্যাপক বাগাড়ম্বরমূলক প্রচার চালান এবং রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক অব্যাহত রেখেছেন। নির্ধারিত শর্তগুলি মেনে নেওয়া এবং সেগুলির বাস্তবায়ন করা বর্তমান ক্ষমতাসীন জর্জিয়ান ড্রিম পার্টির জন্য একটি চ্যালেঞ্জের কারণ হয়ে উঠতে পারেকারণ তাদের কিছু রাজনৈতিক স্বার্থ জর্জীয় জনগণের ইউরো-আটলান্টিসিস্ট আকাঙ্ক্ষার তুলনায় প্রত্যক্ষ বিরোধী।

 

ইইউ সংস্কার কার্যকর করা

বর্তমানে ইইউ বিদেশ ও নিরাপত্তা নীতির সাথে তিবিলিসির সম্মতির হার ৪৩ শতাংশ। একটি উচ্চ সম্মতি হারের জন্য ইইউ জর্জিয়ার ইইউ সদস্যপদের জন্য নটি শর্ত আরোপ করেছে বিভ্রান্তি বিদেশি হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে লড়াই, জর্জিয়ার বৈদেশিক নীতিকে ইইউ বিদেশনীতির সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ করে তোলা, জর্জিয়ার গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলির শক্তিকরণ, ভেনিস কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন করা এবং জর্জীয় অর্থনীতির ডি-অলিগার্কিং’ (মুষ্টিমেয় মানুষের কাছে ক্ষমতা থাকার বদলে তা ছড়িয়ে দেওয়া) ক্ষেত্রগুলির সংস্কার এর অন্তর্ভুক্ত।

২০২২ সালের হিসাবে ৮৯ শতাংশ জর্জীয় ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগদান করতে চাওয়া সত্ত্বেও জর্জীয় রাজনৈতিক অভিজাতরা সংস্কার কার্যকর করতে ধীর গতিতে কাজ করেছেন। এটি জনসংখ্যার আকাঙ্ক্ষা অভিজাতদের রাজনীতির মধ্যে দ্বিধাকেই দর্শায়। তা সত্ত্বেও ইইউ-এর জন্য জর্জিয়ার অর্থনৈতিক ভাবে প্রদান করার মতো তেমন কিছু নেই, বরং তা ইউনিয়নকে দুর্বল করে তুলতে পারে। কারণ জর্জিয়ার জিডিপি ইইউ-এর দরিদ্রতম সদস্যদেশ বুলগেরিয়ার অর্ধেক তিবিলিসি কোনইইউ দেশের সঙ্গে নিজের স্থল সীমান্ত ভাগ করে নেয় না। এমনকি কোনও স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে ইউরোপীয় প্রকল্পে যোগদান জর্জিয়ার জন্য একটি কঠিন কাজ এবং এ হেন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে গড়ে প্রায় বছর সময় লাগে। জর্জিয়ার জন্য জর্জিয়ান ড্রিম পার্টি এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের তদারকি কমিটিগুলিকে রাশিয়ার প্রভাব থেকে জর্জিয়াকে দূরে রাখার সংস্কার-সহ ইইউ-এর সংস্কারের আওতায় আনার জন্য যৌথ ভাবে কাজ করতে হবে।

 

রাশিয়ার সঙ্গে ক্রমবর্ধমান মিথস্ক্রিয়া জর্জিয়ার ইইউ সদস্যপদের জন্য উদ্বেগের বিষয় হবে। উপরন্তু, সংযোগ একটি সমস্যা হয়ে উঠবে।

 

রুশ নির্ভরতা

মস্কো থেকে বিচ্ছিন্নকরণের কাজটি কঠিন হবেকারণ জর্জিয়ায় উপর রাশিয়ার প্রভাব ক্রমশ বেড়ে চলেছে। ২০২২ সালে জর্জিয়ায় ১৫০০০টিরও বেশি রুশ সংস্থা নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে, যা ২০২১ সালের তুলনায় ১৬ শতাংশ বৃদ্ধিকেই দর্শায়। অর্থনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে আক্রমণের পর থেকে জর্জিয়ায় রুশফতানির পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং জর্জিয়ায় রুশ জ্বালানির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫১ শতাংশে। পেট্রোলিয়াম আমদানির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৮২ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে। একই বছরে রাশিয়া থেকে গ্যাস আমদানি ৩২ শতাংশ বেড়েছে এবং কয়লা আমদানি ১৫৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে যার পরিমাণ হল ৭০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০২১ সাল থেকে রুশ পর্যটকদের পরিমাণ জর্জিয়ায় ২০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

রাশিয়ার সঙ্গে ক্রমবর্ধমান মিথস্ক্রিয়া জর্জিয়ার ইইউ সদস্যপদের জন্য উদ্বেগের বিষয় হবে। উপরন্তু, সংযোগ একটি সমস্যা হয়ে উঠবে। কারণ জর্জিয়ার ইইউ-এর কোনও দেশের সঙ্গে অভিন্ন সাধারণ সীমান্ত নেই। বুলগেরিয়া শহর কাপিতান জর্জিয়ার নিকটতম ইইউ অতিক্রমণ বিন্দু, যা কিনা ১৫০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। দূরত্বের কথা বিবেচনা করে এবং যেমনটা পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে অর্থাৎ বুলগেরিয়ার তুলনায় ৫০ শতাংশ কম জিডিপি-সহ জর্জিয়ার অর্থনৈতিক ভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে প্রদান করার মতো কিছু নেই। ইউক্রেনের যুদ্ধ ইইউ-রাশিয়ার সম্পর্ককে খারাপতর করে তুলেছে এবং মস্কোর সঙ্গে জর্জিয়ার বাণিজ্য জর্জিয়ায় উপর ক্রমাগত রুশ প্রভাব ইইউ-এর জন্য একটি সমস্যা হয়ে উঠবে।

রাশিয়া ছাড়াও জর্জিয়ায় উপর চিনা প্রভাব বৃদ্ধি সমস্যাজনক। বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের জন্য জর্জিয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। আনাকিলা গভীর সমুদ্র বন্দর, মধ্য করিডোর, বাকু-তিবিলিসি-কারস রেলওয়ে এবং দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির মতো প্রকল্পগুলি চিন ও জর্জিয়ার সহযোগিতাকে আরও জোরদার করেছে। এই ধরনের সম্পৃক্ততা ব্রাসেলসের জন্য উদ্বেগের কারণ হতে পারেকারণ ইইউ এবং বেশ কয়েকটি সদস্য রাষ্ট্র বেজিংয়ের সাথে তাদের সম্পর্ক পুনর্নির্মাণ করার প্রক্রিয়ায় রত

 

জর্জিয়ার রোজকার রাজনীতি

ইইউ প্রসঙ্গে জর্জিয়া রাজনীতিবিদরা দ্বিধাবিভক্ত। জর্জিয়ার প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এবং জর্জিয়ান ড্রিম পার্টির প্রতিষ্ঠাতা বিজিনা ইভানিশভিলি আদতে একজন অলিগার্ক, যিনি রুশ প্রেসিডেন্ট বরিস ইয়েলসিনের অধীনে বিপুল পরিমাণ সম্পদ সংগ্রহ করেছিলেন এবং জর্জিয়াকে পশ্চিম থেকে দূরে সরিয়ে আনার প্রক্রিয়ায় সফল হয়েছিলেন। অন্য দিকে, ইইউ-পন্থী প্রেসিডেন্ট সালোমে জোরাবিচভিলি ড্রিম পার্টির তরফে অকুণ্ঠ নিঃশর্ত সমর্থন পান না এবং দেশটির সাংবিধানিক আদালতের বিরুদ্ধে কাজ করার দরুন জর্জিয়ার ইইউ সদস্যপদ সংক্রান্ত আলোচনা করতে বিভিন্ন ইউরোপীয় রাজধানী জুড়ে ভ্রমণ করার সময় অভিশংসনের ঝুঁকির আওতায় ছিলেন।

জর্জিয়া ধীরে ধীরে ব্রাসেলসের দিকে অগ্রসর হওয়ায় জর্জিয়ান ড্রিম পার্টি আগামী অক্টোবরে হতে চলা নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী

 

জর্জিয়া রুশ দুঃসাহসিকতার ঝুঁকির পাশাপাশি ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যপদ অর্জনের ভারসাম্য রক্ষার চ্যালেঞ্জে জর্জরিত এবং জর্জিয়ার উত্তরাঞ্চলে সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়া এড়াতে একটি সতর্ক দৃষ্টিভঙ্গি প্রয়োজন রয়েছে

ইইউ সম্প্রসারণ শুধু মাত্র একটি বহু-গতিসম্পন্ন ইউরোপের ভিত্তি স্থাপন করবে না – যা আসলে একটি ইইউ আখ্যান, যেখানে ইইউ-এর বিভিন্ন দেশ প্রতিটি দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে বিভিন্ন স্তরে গতিতে সমন্বিত হবে -  বরং এর পাশাপাশি রুশ আগ্রাসনকে উস্কে দিতে পারে। এই কারণেই জর্জিয়ার রাজনৈতিক অভিজাতরা সতর্কতার সঙ্গে ইইউ-এ যোগদানের প্রশ্নটি বিবেচনা করছেন। জর্জিয়া ধীরে ধীরে ব্রাসেলসের দিকে অগ্রসর হওয়ায় জর্জিয়ান ড্রিম পার্টি আগামী অক্টোবরে হতে চলা নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী ইইউতে জর্জিয়ার দীর্ঘমেয়াদি ভবিষ্যৎ কী হবে, তা কেবল সময়ই বলবে।

 


রাজোলি সিদ্ধার্থ জয়প্রকাশ অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ প্রোগ্রামের রিসার্চ ইন্টার্ন।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.

Author

Rajoli Siddharth Jayaprakash

Rajoli Siddharth Jayaprakash

Rajoli Siddharth Jayaprakash is a Research Assistant with the ORF Strategic Studies programme, focusing on Russia's domestic politics and economy, Russia's grand strategy, and India-Russia ...

Read More +