Author : Harsh V. Pant

Originally Published Dhaka Tribune Published on Nov 05, 2022 Commentaries 12 Days ago

আজ ব্রিটেনকে তার অতীত গৌরবের ফ্যাকাশে ছায়ার মতো দেখাচ্ছে

লিজ ট্রাস–উত্তর ব্রিটেনের রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ
লিজ ট্রাস–উত্তর ব্রিটেনের রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ

ব্রিটিশ কনজারভেটিভ পার্টি একটি অতল গহ্বরের মুখোমুখি হয়েছে বললে কমিয়ে বলা হবে। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে বরিস জনসনের মতো একজন অসম্মানিত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী আবারও দলের নেতা তথা দেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে নেমে পড়েছিলেন।

লিজ ট্রাস বড় ধরনের অর্থনৈতিক উদ্যোগের প্রতিশ্রুতি দিয়ে দায়িত্বে এসেছিলেন, কিন্তু ৪৫ দিনের মধ্যে তাঁকে পদত্যাগ করতে হল। তিনি বলেছিলেন, ‘‌‘‌আমি যে রায়ের ভিত্তিতে নির্বাচিত হয়েছি তা পূরণ করতে পারব না।’‌’‌ এবং এইভাবে তিনি সবচেয়ে কম সময়ের ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী হিসাবে ইতিহাসে থেকে গেলেন।

কিন্তু এই ৪৫ দিনের মধ্যেও তাঁর নীতিগুলি যে ধরনের অর্থনৈতিক অস্থিরতা ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা তৈরি করেছিল তা ব্রিটিশ রাজনৈতিক ইতিহাসে নজিরবিহীন।

টোরিরা দিগভ্রান্ত, অর্থনীতি বিপর্যস্ত, এবং দেশটি তার ইতিহাসে নজিরবিহীন শাসন–শূন্যতার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে রয়েছে।

এর সবই ট্রাসের দোষ নয়, তবে ভালর জন্য হোক বা মন্দের জন্য, তিনি চিরকাল এই ব্রিটিশ উথালপাথাল পর্বের মুখ্য চরিত্র হয়ে থাকবেন।

ট্রাস তাড়াহুড়োয় থাকা একজন নেত্রী ছিলেন, কারণ তাঁর এখন–পরিত্যক্ত সেপ্টেম্বরের মিনি বাজেট থেকেই অশান্তি শুরু হয়েছিল এবং আর্থিক বাজারগুলিকেও বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দিয়েছিল।

এই বেশ র‌্যাডিকাল নীতি–নথিতে যাঁরা বেশি কর দেন তাঁদের জন্য কর হ্রাস করে ঋণের মাধ্যমে অর্থায়ন করা হয়েছিল, যা ইতিমধ্যেই চাপের মধ্যে থাকা অর্থনীতিকে অবিলম্বে মূল্যস্ফীতির দিকে নিয়ে যায়। আর্থিক বাজার দুরবস্থায় পড়ার সঙ্গে সঙ্গে পাউন্ডের দাম কমে যায়, যার ফলে ব্যাঙ্ক অফ ইংল্যান্ড পেনশন তহবিলকে বিপন্মুক্ত করতে এগিয়ে আসতে বাধ্য হয়।

যখন চাপ তীব্র হয়ে ওঠে তখন ট্রাসকে তাঁর ঘনিষ্ঠ মিত্র ও চ্যান্সেলর কোয়াসি কোয়ার্টেংকে বরখাস্ত করতে এবং বাজারকে শান্ত করার প্রয়াসে জেরেমি হান্টকে নিয়োগ করতে হয়েছিল।

একদিন পরে তাঁর স্বরাষ্ট্র সচিব সুয়েলা ব্র্যাভারম্যান পদত্যাগ করেন, এবং হাউস অফ কমন্স–এ ভোটের সময় গুন্ডামির অভিযোগের মধ্যে একটি বিশৃঙ্খল রাত তৈরি হয়, যা শেষ পর্যন্ত তাঁর ভাগ্য নির্ধারিত করে দেয়।

ব্যাঙ্ক অফ ইংল্যান্ড সতর্ক করেছে যে সুদের হার পূর্বপ্রত্যাশিত হারের চেয়ে বেশি বৃদ্ধি পেতে পারে, কারণ মূল্যস্ফীতি ৪০ বছরের মধ্যে প্রায় দ্রুততম হারে বাড়ছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও লিজ ট্রাসের মূল অর্থনৈতিক নীতিকে ‘‌একটি ভুল’‌ বলে অভিহিত করেছেন, এবং বলেছেন যে সরকারের মিনি বাজেটের পরে যে অর্থনৈতিক উথালপাতাল হয়েছিল তা ‘অনুমেয়’‌ ছিল।

এমনকি ব্রিটেনের সুপারমার্কেট শৃঙ্খল টেসকো-র প্রধান খোলামেলাভাবে প্রকাশ্যে বলেছেন যে রক্ষণশীলদের ‘‌বৃদ্ধির পরিকল্পনা ছিল না’‌। তিনি জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান ব্যয়ের ফলে তৈরি হওয়া চ্যালেঞ্জগুলির বিষয়ে সতর্ক করে দিয়েছে্ন।

আশ্চর্যের বিষয় নয় যে বিরোধী দলগুলো অবিলম্বে সাধারণ নির্বাচনের দাবি করছে, আর লেবার পার্টির নেতা স্যার কেয়ার স্টারমার বলেছেন যে দেশ ‘‌টোরি পার্টির শীর্ষে আরেকটি পরীক্ষা বরদাস্ত করতে পারে না’‌।

এই বছরের দ্বিতীয় বার কনজারভেটিভ পার্টির নেতা নির্বাচনের পর কনজারভেটিভ পার্টির নতুন নেতা ও নতুন প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করা হয়েছে। ঋষি সুনাক ছয় বছরে টোরিদের পঞ্চম নেতা ও  প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন, যা বুঝিয়ে দেয় বাহ্যিক নীতিসংক্রান্ত পছন্দের চেয়েও রক্ষণশীলদের পীড়িত করছে অভ্যন্তরীণ এক গভীর অসুখ ।

কিছু মৌলিক কারণে এটি ব্রেক্সিট–এর কথা ফিরিয়ে আনে, যা অনেক টোরির জন্য তাদের মতাদর্শগত বিশ্বাসের গৌরব-মুকুটের পালক ছিল। কিন্তু এখন যখন বাস্তবতা দংশন করতে চলেছে, তখন একটি উপলব্ধি হচ্ছে যে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরে ব্রিটিশ অর্থনৈতিক ভাগ্য পরিচালনা করা অনেকের কল্পনার চেয়েও বেশি ভয়ঙ্কর।

টোরিদের এমনই অবস্থা যে বরিস জনসন, যিনি জুলাই মাসে কনজারভেটিভ নেতার পদ ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন বহু কেলেঙ্কারির কারণে, তিনি আবার প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ফিরে এসেছিলেন।

ঋষি সুনাক ও পেনি মরড্যান্ট ছিলেন অন্যান্য সম্ভাব্য প্রতিযোগী। সুনাক এই পর্যায়েই বুকিদের ফেভারিট হিসাবে উঠে এসেছিলেন। সুনাক ও ট্রাস এর আগেও একে অপরের মুখোমুখি হয়েছিলেন, এবং সুনাক কনজারভেটিভ এম পি–দের ব্যাপক সমর্থন পেয়েছিলেন।

তাঁর অর্থনৈতিক নীতিও আরও ভাল ছিল। তিনি স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন যে ট্রাসের পরিকল্পনাগুলি ব্রিটেনের পাবলিক ফিন্যান্সকে ‘‌গুরুতর বিপদে’‌ ফেলবে এবং মূল্যস্ফীতি উস্কে দেবে, যার ফলে দোকানগুলিতে পণ্যের দাম আরও চড়া হবে। পরবর্তী ঘটনাক্রম প্রমাণ করেছে তাঁর বক্তব্য সঠিক ছিল।

কিন্তু কনজারভেটিভদের দুর্দশার শেষ নেই। এমনকি এখন নতুন নেতার সময়েও ক্ষমতার উপর টোরির দখল হ্রাস হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, আর লেবার পার্টি ক্ষমতা দখলের জন্য অপেক্ষা করছে।

কনজারভেটিভ পার্টিকে প্রথমে বুঝে নিতে হবে ব্রেক্সিট–পরবর্তী ব্রিটিশ রাজনৈতিক পরিবেশে তাদের অবস্থান ঠিক কোথায়। যতক্ষণ না তারা এই দ্বিধার সমাধান করতে পারছে, নেতৃত্ব পরিবর্তন করে কোনও কাজের কাজ হবে না।

এই রাজনৈতিক অনিশ্চয়তাই বৈশ্বিক মঞ্চে ব্রিটেনের জন্য সমস্যা তৈরি করছে, যেখানে দেশটি ঐতিহ্যগতভাবে তার ওজনের চেয়ে বেশি প্রভাব খাটাত।

আজ ব্রিটেনকে তার অতীত গৌরবের ফ্যাকাশে ছায়ার মতো দেখাচ্ছে। ই ইউ তাকে নিয়ে আর আগ্রহী নয়, আর বাকি বিশ্ব ইউরোপীয় সংযোগহীন ব্রিটেনের সংস্করণের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে সময় নিচ্ছে।

ভঙ্গুর অর্থনীতির সময়ে ব্রিটেনের ইন্দো-প্যাসিফিক ঝোঁক ঠিক করা কঠিন হবে। এবং  ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তিও এখন একটি চ্যালেঞ্জিং পথের মুখোমুখি হল।

ব্রিটেন যদি বিশ্বব্যাপী গঠনমূলক ভূমিকা পালন করতে চায় তাহলে এখন তার অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক ভারসাম্য ঠিক রাখা গুরুত্বপূর্ণ।


এই ভাষ্যটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ‘ঢাকা ট্রিবিউন’-এ

মতামত লেখকের নিজস্ব।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.