-
CENTRES
Progammes & Centres
Location
দক্ষতার ঘাটতি মেটাতে ভারতকে উচ্চ প্রযুক্তিগত ও বৃত্তিমূলক পাঠক্রম প্রসারিত করে কর্মযোগ্যতার উন্নতি করতে হবে।
বিশ্ব যুব দক্ষতা দিবস ২০২২: ভারতের যুবসমাজের দক্ষতা উন্নত করা
রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ পরিষদ (ইউ এন জি এ) ২০১৪ সালের নভেম্বর মাসে ১৫ জুলাই দিনটিকে বিশ্ব যুব দক্ষতা দিবস (ডব্লিউ ওয়াই এস ডি) হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে ৬৯/১৪৫ প্রস্তাবটি পাস করে। যে বিপুল সংখ্যক যুবক–যুবতী বিশ্বব্যাপী বেকার তা নিয়ে সাধারণ পরিষদ উদ্বিগ্ন ছিল। ২০১৩ সালের হিসেব অনুযায়ী এদের সংখ্যা ছিল ৭৪.৫ মিলিয়ন এবং এদের অধিকাংশই উন্নয়নশীল দেশে বাস করত। সেই থেকে দিনটি কর্মসংস্থান, উপযুক্ত কাজ এবং উদ্যোগের জন্য তরুণদের দক্ষ করার গুরুত্বকে স্মরণ করে। ২০৩০ অ্যাজেন্ডা ফর সাসটেনেব্ল ডেভেলপমেন্ট–এ দক্ষতার উন্নয়ন ও যুব সমাজের জন্য কাজ উল্লেখযোগ্য জায়গা পেয়েছে। সাসটেনেব্ল ডেভেলপমেন্ট গোল্স (এস ডি জি)–এর ৪.৪ নম্বর লক্ষ্য প্রাসঙ্গিক দক্ষতাসম্পন্ন যুবা ও প্রাপ্তবয়স্কের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য ভাবে বৃদ্ধির জন্য আহ্বান জানিয়েছে, আর ৮.৬ নম্বর লক্ষ্য ১৫ বছরের মধ্যে কর্মসংস্থান, শিক্ষা বা প্রশিক্ষণ না–পাওয়া যুবাদের শতাংশে উল্লেখযোগ্য হ্রাসের আহ্বান জানিয়েছে। ২০২২ সালের বিশ্ব যুব দক্ষতা উন্নয়ন দিবসের থিম হল ‘ভবিষ্যতের জন্য যুবা দক্ষতার রূপান্তর’। থিমটি যুবাদের এমন দক্ষতা প্রদানের দিকে মনোযোগ আকর্ষণ করে যা তাদেরকে ক্রমবর্ধমান চ্যালেঞ্জের জন্য স্থিতিস্থাপক করে তুলতে পারে, চাকরিতে তাদের উৎপাদনশীলতা বাড়াতে পারে, কর্মসংস্থানযোগ্যতা বাড়াতে পারে, এবং ভবিষ্যতের জন্য তাদের প্রস্তুত করতে পারে।
দিনটি কর্মসংস্থান, উপযুক্ত কাজ এবং উদ্যোগের জন্য তরুণদের দক্ষ করার গুরুত্বকে স্মরণ করে। ২০৩০ অ্যাজেন্ডা ফর সাসটেনেব্ল ডেভেলপমেন্ট–এ দক্ষতার উন্নয়ন ও যুবকদের জন্য চাকরি উল্লেখযোগ্য জায়গা পেয়েছে।
রাষ্ট্রপুঞ্জের জনসংখ্যার অনুমান অনুসারে, বিশ্বে ১.৮ বিলিয়ন তরুণ (১৫-২৯ বছর) রয়েছে। বিশ্বের ২০ শতাংশ যুবক বা প্রায় ৩৬৬ মিলিয়ন ভারতে বাস করে। ভারতের নিজস্ব জনসংখ্যার পরিপ্রেক্ষিতে সাম্প্রতিক অনুমানগুলি দেখায় যে ২০২০ সালে মোট ১.৩ বিলিয়ন জনসংখ্যার প্রায় ২৭ শতাংশ যুবা এবং প্রায় ৫৪২ মিলিয়ন মানুষ কর্মক্ষম (১৫ থেকে ৬৪ বছর)। ভারতের শ্রমবাজার চিনের পরেই দ্বিতীয়, এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ই ইউ) তুলনায় অনেক বড়। শুধু তাই নয়; ২০২০-৫০ সালের মধ্যে ভারতের আরও ১৮৩ মিলিয়ন মানুষ কর্মজীবী বয়সে পৌঁছবে বলে আশা করা হচ্ছে, যার ফলে আগামী তিন দশকের মধ্যে ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক কর্মশক্তির ২২ শতাংশ ভারত থেকে আসবে। ভারতে বেকারত্বের উচ্চ হারও রয়েছে। ভারতে যুবকদের মধ্যে কর্ম–অযোগ্যতা হার বা আনএমপ্লয়বিলিটি রেট ২০২১ সালে ৫৪.১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা আগের বছরে ৫৩.৭৯ শতাংশ ছিল। কর্মযোগ্যতার হার ২০২০ সালে ৪৫.৯৭ শতাংশ ছিল, আর আগের বছরের তুলনায় প্রান্তিক উন্নতির পর ২০২১ সালে ৪৬.২ শতাংশে পৌঁছেছে। দেশে বেতনভোগী কর্মসংস্থানের অংশ ২০১৮-১৯ সালে ২১.৯ শতাংশ ছিল, কিন্তু ২০১৯-২০ সালে তা ২১.৩ শতাংশে নেমে এসেছে। অনানুষ্ঠানিক ক্ষেত্র ভারতে ৯০ শতাংশের বেশি মানুষকে নিয়োগ করে। কর্মসংস্থানের অভাব ভারতের মাধ্যমিক শিক্ষা এবং উচ্চতর প্রতিষ্ঠানে প্রদত্ত শিক্ষার মান এবং প্রযুক্তিগত ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ পরিকাঠামোর মান নিয়ে উদ্বেগ তৈরি করে।
সাম্প্রতিক বছরগুলিতে ভারত ‘স্কিল ইন্ডিয়া মিশন’–এর অধীনে দক্ষতা উন্নয়ন এবং বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ ও শিক্ষার জন্য ন্যাশনাল স্কিল ডেভেলপমেন্ট মিশন (এন এস ডি এম), প্রধানমন্ত্রী কৌশল বিকাশ যোজনা (পি এম কে ভি ওয়াই), ন্যাশনাল পলিসি অন স্কিল ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড এন্ট্রাপ্রিনিউয়ারশিপ, ভারতীয় দক্ষতা উন্নয়ন পরিষেবা (আই এস ডি এস), জন শিক্ষণ সংস্থান (জে এস এস), সংকল্প সহ বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ, কর্মসূচি ও প্রকল্প চালু করেছে। যাই হোক, এই কর্মসূচি ও প্রকল্পগুলি সত্ত্বেও ভারতীয় যুবকদের মধ্যে বেকারত্ব ২০২১ সালে ২৮.২৬ শতাংশের বেশি ছিল, আর এই হার ২০২০ সালে ছিল ২৪.৯ শতাংশ এবং ২০১৮ সালে ২৩ শতাংশ। এর থেকে এই ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে এখনকার প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ–কাঠামো পুনর্গঠন করা দরকার। ২০১৯-২০ সাল পর্যন্ত ৫৪২ মিলিয়ন মানুষের মধ্যে মাত্র ৭৩ মিলিয়ন বা প্রায় ১৩ শতাংশ কোনও ধরনের বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ পেয়েছে এবং মাত্র ৩ শতাংশ আনুষ্ঠানিকভাবে দক্ষ ছিল। তুলনামূলকভাবে, চিনের ২৪ শতাংশ কর্মী দক্ষ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৫২ শতাংশ, ব্রিটেনে ৬৮ শতাংশ এবং জাপানে ৮০ শতাংশ।
দেশে বেতনভোগী কর্মসংস্থানের অংশ ২০১৮-১৯ সালে ২১.৯ শতাংশ ছিল, কিন্তু ২০১৯-২০ সালে তা ২১.৩ শতাংশে নেমে এসেছে। অনানুষ্ঠানিক ক্ষেত্র ভারতে ৯০ শতাংশের বেশি মানুষকে নিয়োগ করে।
বিশ্বায়িত বিশ্বে, যেখানে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ও শিল্পগুলির মধ্যে প্রতিযোগিতা তীব্র হয়েছে, শ্রমিকদের প্রয়োজন উচ্চ স্তরের দক্ষতা, যা তাদের উদ্ভাবনে জড়িত হতে, পণ্য/পরিষেবার গুণমান উন্নত করতে, এবং উৎপাদন প্রক্রিয়ায় তাদের দক্ষতা বাড়াতে এমনভাবে সক্ষম করে যাতে পুরো ভ্যালু চেন লিঙ্কেজগুলি উন্নত হয়। প্রযুক্তিগত দ্রুত পরিবর্তনগুলিকে বরণ করার জন্য প্রয়োজন সেগুলির উৎপাদন, প্রয়োগ এবং বিস্তারের বিশেষ জ্ঞান ও দক্ষতা। ভারতের ডিজিটাল রূপান্তরের সময় যুবকদের অন্বেষণ ও উপকৃত হওয়ার জন্য অর্থনৈতিক সুযোগগুলি অব্যাহত থাকবে। যাই হোক, এই ধরনের সুযোগের সদ্ব্যবহার করার জন্য দেশে জনগণের দক্ষতায়ন এবং আরও দক্ষতায়নের জরুরি প্রয়োজন রয়েছে। ২০২৫ সালের মধ্যে ১ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের ডিজিটাল অর্থনীতির সম্ভাবনা সৃষ্টির জন্য দক্ষতা উন্নয়ন ও দক্ষতাভিত্তিক বৃদ্ধি একটি বিশাল চ্যালেঞ্জ। স্কুল পর্যায়ে দক্ষতা বৃদ্ধির শিক্ষা না–দেওয়া থেকে শুরু করে নানা কারণে ভারতে দক্ষতার বিকাশ হয় না। দুর্বল ডিজিটাল অ্যাক্সেস, ডিজিটাল দক্ষতার অভাব, দুর্বল ইন্টারনেট সংযোগ ও প্রাসঙ্গিক ডিভাইসগুলিতে অ্যাক্সেস, এবং উচ্চ ডেটা খরচ সমস্যাটিকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। ভারতের ৭ শতাংশ কর্মশক্তির প্রতিনিধিত্বকারী প্রায় ২৭ মিলিয়ন মানুষের ডিজিটাল দক্ষতা প্রয়োজন।
দক্ষতা বাড়ানোর মাধ্যমে অতিরিক্ত কর্মসংস্থানের সম্ভাবনার গুরুত্ব কোনওভাবেই ছোট করা যাবে না। ২০৩০ সালের মধ্যে ২.৩ মিলিয়ন অতিরিক্ত চাকরি প্রত্যাশিত, যা শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরে দ্বিতীয়, যে দেশটি ২.৭ মিলিয়ন অতিরিক্ত চাকরি তৈরি করতে পারে।
এটা ঘটনা যে ভারতের একটি বড় ধরনের ‘ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড’ রয়েছে: তার বেশিরভাগ লোকের বয়স ৩০ বছরের কম, ২০২২ সালে প্রতি মাসে প্রায় ১.২৫ মিলিয়ন নতুন কর্মী (১৫-২৯ বছর বয়সী) ভারতের কর্মীবাহিনীতে যোগদান করবেন বলে অনুমান করা হয়েছে৷ এই নতুন কর্মীদের জন্য ভাল বেতনের উৎপাদনশীল কাজের ব্যবস্থা করা ভারতের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে থাকবে। শিক্ষা এবং দক্ষতা উন্নয়ন এই লাভ তোলার ব্যবস্থা করতে পারে। দক্ষতা বাড়ানোর মাধ্যমে অতিরিক্ত কর্মসংস্থানের সম্ভাবনার গুরুত্ব কোনওভাবেই ছোট করা যাবে না। ২০৩০ সালের মধ্যে ২.৩ মিলিয়ন অতিরিক্ত চাকরি প্রত্যাশিত, যা শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরে দ্বিতীয়, যে দেশটি ২.৭ মিলিয়ন অতিরিক্ত চাকরি তৈরি করতে পারে। হিসেবগুলি এ কথাই অনুমান করে যে উন্নত দক্ষতায় বিনিয়োগ ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্ব অর্থনীতিকে ৬.৫ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং ভারতের অর্থনীতিকে ৫৭০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার পর্যন্ত বাড়িয়ে দিতে পারে৷
মানব পুঁজিতে বিনিয়োগ যেমন স্থিতিশীল অর্থনৈতিক বৃদ্ধি অর্জনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, তেমনই উচ্চতর প্রযুক্তিগত এবং বৃত্তিমূলক দক্ষতা অর্থনীতির প্রতিযোগিতার উন্নতি করতে পারে, এবং সামাজিক অন্তর্ভুক্তি, উৎপাদনশীলতা, সবার জন্য উপযুক্ত কর্মসংস্থান ও দারিদ্র্যহ্রাসে অবদান রাখতে পারে। ভারতে কর্মশক্তির দক্ষতার ঘাটতি পূরণের জন্য একটি নীতি ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর প্রয়োজন, যা সরকার, শিল্প, শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ পরিষেবা প্রদানকারী এবং নাগরিক সমাজের মধ্যে অংশীদারির ভিত্তিতে গড়ে উঠবে। স্থিতিশীল উন্নয়ন লক্ষ্যগুলির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে জাতীয় যুব নীতি ২০২১ ভারতে যুব উন্নয়নের জন্য একটি ১০ বছরের পরিকল্পনা করেছে, যার লক্ষ্য অর্থনৈতিক বৃদ্ধির অগ্রগতিতে যুবাদের সম্ভাবনাকে বন্ধনমুক্ত করা। তাদের কাজে উন্নতি করার পথ তৈরি করে দিতে এবং ভবিষ্যতের কাজের চ্যালেঞ্জগুলির মোকাবিলায় সক্ষম করতে দক্ষতায়ন, উচ্চতর দক্ষতায়ন এবং পুনর্দক্ষতায়ন প্রয়োজন, কারণ তা তাদের উদীয়মান প্রযুক্তি ও সুযোগগুলির সদ্ব্যবহার করার চাবিকাঠি হবে।
লেখক গবেষণা ইনপুট প্রদানের জন্য সৃষ্টি পান্ডের অবদানকে স্বীকার করেছেন।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.
Preeti Kapuria was a Fellow at ORF Kolkata with research interests in the area of environment development and agriculture. The approach is to understand the ...
Read More +