ইউক্রেন ও ভারতের মন্থর বৃদ্ধি: প্রাথমিকে ফিরে যাওয়া
এই সংক্ষিপ্ত নিবন্ধটি ‘ইউক্রেন সঙ্কট: সংঘর্ষের কারণ এবং পথ’ সিরিজের অন্তর্গত।
অর্থবর্ষ ২০২১–২২–এর অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর ত্রৈমাসিকের (তৃতীয় ত্রৈমাসিক) প্রকৃত বৃদ্ধির নিম্ন হার এর বিষয়টি ঘিরে প্রচুর অকারণ বিষণ্ণতা তৈরি হয়েছে। অনুযোগ যদি কিছু থাকে, তা হল এক ত্রৈমাসিক থেকে পরবর্তী ত্রৈমাসিকে বৃদ্ধির হারের নিম্নগামী প্রবণতাই তৃতীয় ত্রৈমাসিকের ফলাফল থেকে আরও নিশ্চিত হয়েছে: প্রথম ত্রৈমাসিকে ২০.১ শতাংশ, দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে ৮.৪ শতাংশ, এবং তৃতীয়তে ৫.৪ শতাংশ।
এটা সম্ভব যে বর্তমান ত্রৈমাসিকে (চতুর্থ ত্রৈমাসিক-জানুয়ারি থেকে মার্চ ২০২২) বৃদ্ধি ৪ থেকে ৪.৫ শতাংশে নেমে যেতে পারে। ন্যাশনাল স্ট্যাটিসটিক্যাল অফিস (এনএসও) ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২ তারিখে ২০২১-২২ সালের গোটা বছরের প্রকৃত জিডিপি বৃদ্ধির গড় ৮.৯৫ শতাংশ হবে বলে জানালেও তার পরিবর্তে এখন তা ৮ থেকে ৮.৫ শতাংশ হতে পারে।
তারপর এসেছে এমন দুটি ত্রৈমাসিক যখন বৃদ্ধির হার কম হলেও ইতিবাচক ছিল। এর ফলে তৎকালীন প্রধান অর্থনৈতিক উপদেষ্টা সময়ের আগেই কিছুটা ইকনমেট্রিক স্বাধীনতা নিয়ে ঘোষণা করে বসেন যে একটি ভি আকৃতির পুনরুজ্জীবন চলছে।
এটা কতটা বিপর্যয়কর হবে? এর ফলে ২০২১-২২ সালের জন্য এনএসও–র অনুমিত ১৪৭.৭২ লক্ষ কোটি টাকা থেকে জিডিপি–র আয়তন কমে যাবে ১.২ লক্ষ কোটি টাকার মতো৷ এর তুলনা করুন আগের অর্থবর্ষ ২০২০-২১-এ ভারতের ১০.১১ লক্ষ কোটি টাকা হারানোর সঙ্গে (জিডিপি–র ক্ষতির সঙ্গে অতিমারির আগের বছর, অর্থাৎ ২০১৯-২০ সালের ১৪৭.৯ লক্ষ কোটির জিডিপি–র তুলনামূলক অঙ্কে)। তা হলে দেখা যাবে এই অর্থবর্ষে ‘ধীরগতির বৃদ্ধির’ কারণে অধৈর্য হয়ে পড়ার আবেগগত দিকটি ঘাটতির পরিসংখ্যানগত প্রাসঙ্গিকতাকে ছাপিয়ে গিয়েছে।
নিচের টেবিলটি দেখায় যে অতিমারির ধাক্কায় ২০২০-২১–এর প্রথম ত্রৈমাসিকে ভারতের প্রকৃত জিডিপি ২৪ শতাংশের বেশি নাটকীয় পতনের সম্মুখীন হয়েছিল; তারপরে পরবর্তী ত্রৈমাসিকে তাৎক্ষণিক সংশোধনের মাধ্যমে জিডিপির ত্রৈমাসিক হারের হ্রাস কমে হয় ৭ শতাংশ। তারপর আসে এমন দুটি ত্রৈমাসিক যখন বৃদ্ধির হার কম হলেও ইতিবাচক ছিল। এর ফলে তৎকালীন প্রধান অর্থনৈতিক উপদেষ্টা সময়ের আগেই কিছুটা ইকনমেট্রিক স্বাধীনতা নিয়ে ঘোষণা করে বসেন যে একটি ভি আকৃতির পুনরুজ্জীবন চলছে।
বর্তমান অর্থবর্ষ ২০২১-২২ শুরু হয়েছিল আগের বছরের তুলনায় প্রথম ত্রৈমাসিকের উচ্চতর স্তরে। কিন্তু তা সত্ত্বেও তা ছিল ২০১৯-২০–র প্রথম ত্রৈমাসিকের ‘আদর্শ’ স্তর থেকে ৯.২% নীচে। একদিকে ইতিবাচক প্রবণতা এবং তার বিপরীতে ২০১৯-২০–র ধারা এখনও অব্যাহত আছে, আর তার পাশাপাশি বৃদ্ধির মাত্রা কমছে। তবে আমরা ২০১৯-২০ অর্থবর্ষের শেষে যেখানে ছিলাম, এই অর্থবর্ষের শেষে আবার সেখানে পৌঁছে যাব। প্রকৃত সমস্যা হল অর্থনৈতিক স্থবিরতার (স্ট্যাগনেশন) বোধ, যা অংশত ভারতের ‘দ্রুত বেড়ে চলা’ অর্থনীতির কারণে তৈরি হওয়া অস্বাভাবিক উচ্চ প্রত্যাশার পরিণতি।
আমরা যখন একটি নতুন অর্থবর্ষ ২০২২-২৩ এর দিকে পা রাখছি, তখন আমরা সম্ভবত এই বাস্তবতা মেনে নিতে পারছি না যে একটি ‘দ্রুত বেড়ে চলা’ অর্থনীতির ট্যাগলাইন এখনও আমাদের অর্জন করতে হবে। নিশ্চিত ভাবেই ৮ শতাংশের বেশি বার্ষিক বৃদ্ধির সম্ভাবনা আছে। কী ভাবে তা দ্রুত উপলব্ধ করা যায়, সেইটাই লক্ষ কোটি টাকার প্রশ্ন।
মন্থর বৃদ্ধির আর্থিক ফলাফল
ধীরগতির বৃদ্ধির অন্যতম খারাপ দিক হল এর ফলে আর্থিক সঙ্কোচন হয়, যার ফলে আবার সরকারি বিনিয়োগের মাধ্যমে পুনরুজ্জীবন বা বেকারদের জন্য বাড়তি আয় সহায়তার ব্যবস্থা বাধাপ্রাপ্ত হয়। তবে চলতি অর্থবর্ষের প্রথম ১০ মাসে (এপ্রিল ২০২১ থেকে জানুয়ারি ২০২২) রাজস্ব ও ঋণ-বহির্ভূত মূলধন বাবদ প্রাপ্তি ১৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যাকে একটি সুস্থ পুনরুদ্ধার বলা যায়। অবশ্য পুরো বছরের নমিনাল জিডিপি ১৯ শতাংশ হবে বলে এনএসও–র পূর্বাভাস থেকে দেশ পিছিয়ে রয়েছে৷
প্রকৃত সমস্যা হল অর্থনৈতিক স্থবিরতার (স্ট্যাগনেশন) বোধ, যা অংশত ভারতের ‘দ্রুত বেড়ে চলা’ অর্থনীতির কারণে তৈরি হওয়া অস্বাভাবিক উচ্চ প্রত্যাশার পরিণতি।
সুদের অর্থপ্রদানের বোঝা এই অর্থবর্ষে আগের বছরের তুলনায় ১৯.৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, এবং পরবর্তী অর্থবর্ষে (২০২৩ অর্থবর্ষ) বাজেটে তা কমিয়ে ১৫.৬ শতাংশ করা হয়েছে৷ যদি ইউক্রেন সংকট কেটে যায়, তা হলে বিশ্বব্যাপী সুদের হার সম্ভবত বাড়বে এবং সুদের বোঝা কমানোর ক্ষেত্রে বাজেটের প্রয়াস ব্যর্থ হতে পারে। বিপরীত দিকে, যদি ইউক্রেন সংকট অব্যাহত থাকে, তা হলে বিশ্বজুড়ে যে ধাক্কা লাগবে তার ফলে বৃদ্ধি এবং চাকরির উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। সে ক্ষেত্রে মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভ সুদের হারের স্বাভাবিকীকরণ পিছিয়ে দিতে পারে, যা ভারতের পক্ষে সুবিধাজনক হবে, কারণ আমরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় স্বাভাবিকীকরণ থেকে আরও দূরে রয়েছি। ঘটনাচক্রে আমরা ইউক্রেনের দুর্দশা থেকেও লাভ পেতে পারি।
ইউক্রেন ভূরাজনৈতিক দ্বন্দ্ব দ্রুততর করল
বিশ্বব্যাপী অতিমারি থেকে উদ্ভূত অনিশ্চয়তা ও ব্যাঘাতের সঙ্গে এখন যুক্ত হয়েছে ইউক্রেনের চলতি সংকট। তবে এটি একটি সুযোগও বটে।
নেটোর কাজকর্ম ধীরে ধীরে বাড়ানো সম্পর্কে রাশিয়ার দীর্ঘদিনের নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগের প্রতি উদাসীনতার কারণে সংকট অনেকদিন ধরে দানা বাঁধছিল। রুশ ‘সাম্রাজ্যে’র কাছে তাঁর শক্তিশালী নেতৃত্বের গুরুত্ব প্রতিষ্ঠা করার জন্য প্রেসিডেন্ট পুতিনের সংকল্পকে ছোট করে দেখা হয়েছিল। এবং সেটাও ঘটেছে এমন একটা বছরে যখন প্রেসিডেন্ট শি চৈনিক ‘সাম্রাজ্যে’ তাঁর অবস্থান শক্তিশালী করছেন।
ইউক্রেনের গণতান্ত্রিক ভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট চড়া ঝুঁকির সাহসী পথ বেছে নিয়েছেন, যেখানে দেশের ভেতরেই এমন একটি যুদ্ধ লেগেছে যা সব কিছু বিকল করে দেবে। চিনের সঙ্গে ২০২০ সালের সীমান্ত বিরোধ নিরসনে ভারত যে বাস্তববাদী ও বহুমাত্রিক বাধাদানের কৌশল গ্রহণ করেছিল, তার সঙ্গে এর তুলনা করুন। দুই দেশের মধ্যে এখনকার অসামঞ্জস্য এবং চিনের আগ্রাসী ভঙ্গি যে তার অভ্যন্তরীণ, রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতার ফল, তা মাথায় রেখে ভারত পা ফেলেছিল।
ইউক্রেনে একটি ‘সম্মানজনক যুদ্ধবিরতি’ সব পক্ষের জন্যই ভাল। এই যুদ্ধবিরতি প্রেসিডেন্ট পুতিনকে শান্ত করবে। একই সঙ্গে তা ধনী এবং বুড়িয়ে যাওয়া পশ্চিম ইউরোপকে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে এমন জায়গায় যেখানে সামাজিক ভাবে সচেতন বিলাসবহুল উপভোগ বাড়বে, সময়ের পূর্বে পেনশন পাওয়া যাবে, কর্ম ও জীবনের আরামদায়ক ভারসাম্য থাকবে, রাষ্ট্রকর্তৃক বিভিন্ন খরচ বহনের ব্যবস্থা হবে, এবং জিডিপি-তে সামরিক ব্যয়ের অনুপাত কমবে (যা কিনা নিম্ন–মধ্য আয়ের ভারতের থেকেও কম হবে)।
ভারতীয় অর্থনীতির ২০১৭ সাল থেকে স্পষ্ট কাঠামোগত দুর্বলতাগুলির—সরকারি ও বেসরকারি পুঁজির অদক্ষ বরাদ্দ, অতি–গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক ও পরিকাঠামো ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতার নিম্ন স্তর, সরকারি পরিষেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে শাসনের নিম্ন মান, এবং মানব উন্নয়নের কৌশলগুলির হোঁচট খাওয়া—তাৎপর্যপূর্ণ সংস্কার প্রয়োজন।
এটি প্রেসিডেন্ট শি–র জন্যও উপযুক্ত। তাকে গুরুত্ব সহকারে না–নেওয়ায় রাশিয়ার অসংযত সামরিক প্রতিক্রিয়া, এবং এখন কোনও কড়া পাল্টা জবাব দিতে স্পষ্ট অসামর্থ্য (যার মধ্যে ১৯৯৪ সালের রুয়ান্ডা গণহত্যার ছায়া দেখা যাচ্ছে), স্পষ্ট ভাবে এই ইঙ্গিত দেয় যে নেটোর পারস্পরিক লাভজনক ডেটারেন্স–এর দাবি নেহাত ফাঁকা আওয়াজ। সেই সঙ্গে এটাও স্পষ্ট যে বিশ্বের নেতৃত্ব দেওয়ার লক্ষ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক ও মানবিক মূল্য দেওয়ার উৎসাহে ভাটা পড়েছে। ইউক্রেন সঙ্কট দেখিয়ে দিল তাইওয়ানকেও যে শেষ পর্যন্ত মাথা নত করে চৈনিক ‘সাম্রাজ্যের’ সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করতে হবে, তা অনিবার্য।
চিন এবং ভারত ইতিমধ্যে রাশিয়ার নিন্দা করার জন্য মার্কিন নেতৃত্বে আনা ইউএনএসসি প্রস্তাবকে সমর্থন না–করে রাশিয়ার নিরাপত্তা উদ্বেগের প্রতি তাদের নরম মনোভাবের ইঙ্গিত দিয়েছে। যাই হোক, ইউক্রেনে সম্ভাব্য গণহত্যার বিষয়ে চোখ বন্ধ করে রাখলে ইউরোপ ও অন্যত্র চিনা ও ভারতীয় ব্যবসায়িক ও বাণিজ্যিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে এই ঘটনার নেতিবাচক পরিণতির ঝুঁকি রয়েছে। নেটোর মতো চিন ও ভারতেরও এই সংকট নিরসনে নিজেদের স্বার্থ রয়েছে।
ভারতের জন্য ইউক্রেন সঙ্কট এসেছে এমন অনুপযুক্ত সময়ে যখন তাকে অভ্যন্তরীণ ভাবে বৃদ্ধি উস্কে দিতে মনোযোগী হতে হবে। ভারতীয় অর্থনীতির ২০১৭ সাল থেকে স্পষ্ট কাঠামোগত দুর্বলতাগুলির—সরকারি ও বেসরকারি পুঁজির অদক্ষ বরাদ্দ, অতি–গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক ও পরিকাঠামো ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতার নিম্ন স্তর, সরকারি পরিষেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে শাসনের নিম্ন মান, এবং মানব উন্নয়নের কৌশলগুলির হোঁচট খাওয়া—তাৎপর্যপূর্ণ সংস্কার প্রয়োজন।
ইউক্রেন বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক নেতৃত্ব দেওয়ার সুযোগ এনেছে
ভারত বিশ্বের অভিন্ন প্রতিশ্রুতিগুলির মর্ম বজায় রাখতে পিছপা হয় না। প্রধানমন্ত্রী মোদী ২০২০ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)–র স্পনসর করা বিশ্বজুড়ে স্বল্প-আয়ের দেশগুলিতে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন সরবরাহ কর্মসূচিতে (কোভ্যাক্স) উদার ভাবে সহায়তা দিয়েছিলেন। ২০২১–এ গ্লাসগোতে কপ২৬-এ তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ভারত— একটি দেশ যার মাথাপিছু কার্বন ডাইঅক্সাইড নির্গমন বিশ্বের অর্ধেকেরও কম— ২০৭০ সালে নেট জিরো হওয়ার লক্ষ্যে কাজ করবে।
ভারত এখন বিশ্বব্যাপী শস্য ও তেলের দাম স্থিতিশীল করার জন্য রাষ্ট্রপুঞ্জ-প্রযোজিত উদ্যোগের প্রস্তাব দিয়ে বৃদ্ধি ধরে রাখার লক্ষ্যে বিশ্বব্যাপী ক্রিয়াকলাপের স্থায়িত্ব বজায় রাখার প্রতি তার দায়বদ্ধতা প্রদর্শন করতে পারে। যুদ্ধের জন্য জারি হওয়া নিষেধাজ্ঞা ইউক্রেন এবং রাশিয়া থেকে এই সব অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের সরবরাহকে বাধা দেওয়ায় ইতিমধ্যেই বিশ্বব্যাপী চড়া দামের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
ভারত এখন বৃদ্ধি বজা্য় রাখার লক্ষ্যে বিশ্বব্যাপী ক্রিয়াকলাপের স্থায়িত্ব বজায় রাখার প্রতি তার দায়বদ্ধতা প্রদর্শন করতে পারে বিশ্বব্যাপী শস্য ও তেলের দাম স্থিতিশীল করার জন্য রাষ্ট্রপুঞ্জ-প্রযোজিত উদ্যোগের প্রস্তাব দিয়ে।
ভারতের কেন্দ্রীয় পুলে গম (২ কোটি ৮০ লক্ষ টন) ও চাল (২ কোটি ৬০ লক্ষ টন) সহ খাদ্যশস্যের প্রচুর বাফার স্টক রয়েছে, যা বিশ্বব্যাপী নিয়ন্ত্রিত মূল্যে বিক্রয়ের জন্য দেওয়ার প্রস্তাব করা যেতে পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও অন্য ওইসিডি দেশগুলির যথেষ্ট কৌশলগত তেলের মজুত রয়েছে, এবং একই ভাবে তা ব্যবহার করা যেতে পারে তেলের দাম বেঁধে রাখতে, যা আগেই ব্যারেলপ্রতি ১১১ মার্কিন ডলার (ব্রেন্ট) ছাড়িয়ে গেছে। ‘খাদ্য ও জ্বালানি’র বৈশ্বিক মূল্য স্থিতিশীল রাখার এই ধরনের উদ্যোগ দরিদ্রতম দেশগুলিকে অত্যাবশ্যক পণ্যের অতিরিক্ত মূল্যবৃদ্ধির ধাক্কা থেকে রক্ষা করতে পারে।
অভ্যন্তরীণ মূল্যস্ফীতি সামাল দেওয়া
অভ্যন্তরীণ ভাবে, ভারতের কাছে যথেষ্ট কর রাজস্ব আছে যা দিয়ে অর্থনৈতিক নীতির পরিবর্তে চক্রাকার আর্থিক নীতির মাধ্যমে আমদানিকৃত মূল্যস্ফীতি ঠেকানো সম্ভব। বৃদ্ধি যে হেতু এখনও প্রাথমিক অবস্থায় আছে, তাই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে সুদের হার বাড়ানো হলে তা হবে অর্থনৈতিক বৃদ্ধির সম্ভাবনার সঙ্গে আপস করা। বরং জ্বালানির খুচরো বিক্রয়ের উপর আরোপিত উচ্চ শুল্ক কমানো হলে তা আমদানিকৃত তেলের উচ্চ মূল্যের কারণে মূল্যস্ফীতি বাড়ার ঘটনাকে রোধ করতে পারে। সে ক্ষেত্রে সরকারি মালিকানাধীন তেল সংস্থাগুলির, যারা এযাবৎ বাড়তি অশোধিত তেলের দাম পেয়েছে, তাদের ব্যালান্স শিটও ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। কেন্দ্রীয় সরকার আরোপিত করের পরিমাণ অর্ধেক করলে মূল্যস্ফীতি ০.৬ শতাংশ বা ৬০ বেসিস পয়েন্ট (এক শতাংশ হল ১০০ বেসিস পয়েন্টের সমান) কমতে পারে। এটি ২০২২ সালের জানুয়ারির ৬.১ শতাংশ উপভোক্তা মূল্যস্ফীতির হার উল্লেখযোগ্য ভাবে কমাতে পারে, এবং তার ফলে মূল্যস্ফীতি ২০২২–২৩–এর এপ্রিল থেকে জুন (প্রথম ত্রৈমাসিক) সময়কালের জন্য ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের আর্থিক নীতি কমিটির অনুমিত ৪.৯ শতাংশের হারের কাছাকাছি থাকবে৷
জ্বালানির খুচরো বিক্রয়ের উপর আরোপিত উচ্চ শুল্ক কমানো হলে তা আমদানিকৃত তেলের উচ্চ মূল্যের কারণে মূল্যস্ফীতি বাড়ার ঘটনাকে রোধ করতে পারে। সে ক্ষেত্রে সরকারি মালিকানাধীন তেল সংস্থাগুলির, যারা এযাবৎ বাড়তি অশোধিত তেলের দাম পেয়েছে, তাদের ব্যালান্স শিটও ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।
এক অনিশ্চিত বৈশ্বিক পরিবেশের কারণে তৈরি–হওয়া বিপদ অতিক্রম করার ক্ষেত্রে যত্নসহকারে একটি ঘরোয়া কর্মসূচি তৈরি করা, এবং সে সম্পর্কে ভারতের মধ্যে রাজনৈতিক ঐকমত্য গড়ে তোলা গুরুত্বপূর্ণ। এই কাজটি বড় পরিকাঠামোগত কর্মসূচি গ্রহণের পরিধি—যা অর্থনৈতিক মন্দার আদর্শ প্রতিষেধক হিসেবে বিবেচিত হয়—অতিক্রম করে যাবে। আরও প্রতিযোগিতামূলক অর্থনীতি গড়ে তোলা এখন বৃদ্ধি নিয়ে হতাশাবাদ ঝেড়ে ফেলার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
ভাঙ্গা বিশ্ব অর্থনীতি শক্তিশালী সরকার তৈরি করে
ইউক্রেনে আগ্রাসনের জন্য রাশিয়ার উপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত এবং কানাডা, ব্রিটেন, অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও জাপান সমর্থিত নিষেধাজ্ঞা বিশ্ব অর্থনীতির ফাটলকেই সংজ্ঞায়িত করছে, যার ফলে বাণিজ্য ও বৃদ্ধির উপর ক্ষতিকারক প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা আছে। সহযোগিতার বিপরীতে এখনকার বর্ধিত ভূ-রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার সঙ্গে একে যুক্ত করলে দেখা যাচ্ছে বিশ্বব্যাপী উন্মুক্ততার বিকল্পগুলি ক্রমশ সঙ্কীর্ণ হচ্ছে। একটি উন্মুক্ত অর্থনীতির সাধারণ অবস্থান এখন পুরনো হয়ে গেছে, এবং প্রতিস্থাপিত হয়েছে রাষ্ট্রের নিজস্ব সার্বভৌম পছন্দ দ্বারা নির্ধারিত অংশীদারিত্ব দিয়ে। এ এমন এক ভূমিকা যা এমনকি স্বচ্ছল সরকারগুলিরও দক্ষতার সঙ্গে সম্পাদন করা কঠিন হয়ে পড়ে।
তা হলে কি সঙ্কীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি নেওয়ার সময় হয়েছে? ভারত, চিন ও অন্য আঞ্চলিক শক্তিগুলির কাছে কিন্তু ইতিমধ্যেই তাদের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা পূরণে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের মধ্যে একটি লালনশীল বাস্তুতন্ত্র সংরক্ষণের প্রশ্নই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে, এবং পরীক্ষামূলক স্তরে তা নানা কৌশলগত জোটের জন্ম দিচ্ছে।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.