Author : Manoj Joshi

Expert Speak Raisina Debates
Published on Apr 09, 2022 Updated 7 Days ago

চিন কি এই পরিস্থিতিতে এগিয়ে এসে ইইউ-মার্কিন জোট ও রাশিয়ার মধ্যে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করতে পারে?

ইউক্রেন সংকটের প্রতিক্রিয়া: ইউরোপ-ইউএস ও চিন
ইউক্রেন সংকটের প্রতিক্রিয়া: ইউরোপ-ইউএস ও চিন

ইউক্রেনের ঘটনাবলির প্রেক্ষাপটে রাশিয়া ও আমেরিকা-ইউরোপীয় ইউনিয়ন জোটের সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখতে চিন ব্যর্থ হচ্ছে, এবং এই অক্ষমতার কারণে দেশটি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। সঙ্কটের বিষয়ে চিনা বার্তাগুলিতে বিভ্রান্তি স্পষ্ট, এবং তারা কখন কী জানত তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। তবে এখন চিন বলেছে যে তারা ইচ্ছুক মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করতে। কিন্তু এই ভূমিকা নেওয়ার মতো বিশ্বাসযোগ্যতা কি চিনের আছে?

চিনারা সার্বভৌমত্ব ও ভূখণ্ডগত সংহতির গুরুত্ব নিশ্চিত করতে চেয়েছিল, কিন্তু একই সঙ্গে তারা সঙ্কটের জন্য নর্থ অ্যাটলান্টিক ট্রিটি অরগানাইজেশন (ন্যাটো) ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করেছে। তারা এই অভিযানকে ‘আক্রমণ’‌‌ হিসেবে বর্ণনা করতে অস্বীকার করে, এবং রুশ ট্যাঙ্কগুলি ইউক্রেনে মৃত্যু ও ধ্বংসের লীলা চালানোর পরেও কূটনীতিকেই এগিয়ে চলার পথ হিসেবে উল্লেখ করেছিল। নয়াদিল্লির অবস্থান একই ছিল, কিন্তু ভারত ন্যাটোকে দোষারোপ করেনি। তবে বেজিংয়ের চেয়ে ভারতের অবস্থানের প্রভাব অনেক কম।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের সমস্যার সময় চিন ইইউ–কে কৌশলগত সুযোগের একটি ক্ষেত্র হিসেবে দেখেছে, কারণ ইইউ সব সময়েই নিরাপত্তার ইস্যুর থেকে অর্থনৈতিক সম্পর্ককে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে। তবে এখন ইউরোপে এমন একটি মহাসংকট দেখা দিয়েছে যা পনেরো লক্ষ শরণার্থীর সৃষ্টি করেছে, এবং নিরাপত্তা ইস্যুতে পশ্চিমী বিশ্বকে ঐক্যবদ্ধ করেছে।

চিনারা সার্বভৌমত্ব ও ভূখণ্ডগত সংহতির গুরুত্ব নিশ্চিত করতে চেয়েছিল, কিন্তু একই সঙ্গে তারা সঙ্কটের জন্য নর্থ অ্যাটলান্টিক ট্রিটি অরগানাইজেশন (ন্যাটো) ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করেছে।

বড় প্রশ্ন হল, চিনারা তাদের ৪ ফেব্রুয়ারির যৌথ বিবৃতি জারি করার আগে রুশ পরিকল্পনা সম্পর্কে অবগত ছিল কি না। নিউ ইয়র্ক টাইমস একটি গোয়েন্দা রিপোর্টের উদ্ধৃতি দিয়েছে যেখানে বলা হয়েছে চিনা কর্মকর্তারা রাশিয়াকে শীতকালীন অলিম্পিক শেষ না–হওয়া পর্যন্ত ইউক্রেন অভিযান বন্ধ রাখতে বলেছিল।

গেমসের উদ্বোধনী দিনে জারি করা রুশ–চিন যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, এখন বিশ্ব ব্যবস্থায় একটি ‘‌নতুন যুগ’‌ এসেছে যেখানে ‘‌দুই রাষ্ট্রের মধ্যে বন্ধুত্বের কোনও সীমা নেই’‌, এবং ‘‌সহযোগিতার কোনও নিষিদ্ধ ক্ষেত্র’‌ও নেই। রাশিয়া তাইওয়ান নিয়ে চিনা অবস্থানের প্রতি সমর্থন ঘোষণা করেছিল, এবং বেজিংও মস্কোর পাশে দাঁড়িয়ে ন্যাটোর প্রসার বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছিল এবং ইউক্রেন নিয়ে রাশিয়ার নিরাপত্তা–নিশ্চয়তার দাবিকে সমর্থন করেছিল।

১৯৫০–এর দশক থেকে এযাবৎ কালের মধ্যে এখনই দুই দেশের সম্পর্ক সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ। উল্লেখ্য যে চিন ২০০৮ সালে জর্জিয়ার যুদ্ধ এবং ২০১৪ সালে ইউক্রেন আক্রমণকে সমর্থন করেনি, এবং এখনও ক্রিমিয়ার অন্তর্ভুক্তিকে স্বীকৃতি দেয়নি।

যৌথ বিবৃতির লক্ষ্য যুক্তরাষ্ট্র হলেও ইইউ এতে মোটেই খুশি হয়নি। ১৮ ফেব্রুয়ারি রুশ আক্রমণের প্রাক্কালে মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে তাঁর বক্তৃতায় ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডার লেইন চিন-রাশিয়া বিবৃতিটিকে আক্রমণ করে বলেছিলেন যে তাদের ‘‌নতুন যুগ’কে‌ এমন একটি সময় বলে মনে হচ্ছে যেখানে শক্তিশালীর শাসন বিরাজ করে এবং ‘‌আত্মনিয়ন্ত্রণের পরিবর্তে ভয় দেখানো’‌ হয়।

ওই সম্মেলনে চিনের বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই-র বক্তব্য যথেষ্ট যুক্তিসঙ্গত বলে মনে হয়েছে। তিনি ন্যাটোর পূর্বমুখী সম্প্রসারণে লাগাম টানার প্রয়োজনের উপর গুরুত্ব আরোপ করে বলেছিলেন সব দেশের সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতা ও ভূখণ্ডগত সংহতিকে সম্মান এবং রক্ষা করা উচিত। তিনি মিনস্ক ২ চুক্তিতে প্রত্যাবর্তনের আহ্বান জানান, যা তাঁর কথায় সঙ্কট থেকে‌ বেরিয়ে আসার একটি পথ। তিনি যোগ করেন যে রাশিয়ার ‘‌যুক্তিপূর্ণ নিরাপত্তা উদ্বেগকে সম্মান করা উচিত, এবং গুরুত্ব সহকারে নেওয়া উচিত’‌।

তবে আক্রমণ শুরু হওয়ার পরে এই বার্তাটি বিভ্রান্তিকর এবং স্ববিরোধী বলে মনে হতে থাকে। এটি সমস্ত দেশের ‘‌সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতার’‌ প্রতি সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করতে থাকে, কিন্তু আক্রমণকে উপেক্ষা করে কূটনীতি ও আলোচনার গুরুত্ব তুলে ধরতে থাকে।

রাশিয়া তাইওয়ান নিয়ে চিনা অবস্থানের প্রতি সমর্থন ঘোষণা করেছিল, এবং বেজিংও মস্কোর পাশে দাঁড়িয়ে নেটোর প্রসার বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছিল এবং ইউক্রেন নিয়ে রাশিয়ার নিরাপত্তা–নিশ্চয়তার দাবিকে সমর্থন করেছিল।

২৫ ফেব্রুয়ারি, চিন রুশ আক্রমণকে ‘‌বিশেষ সামরিক অভিযান’‌ হিসেবে বর্ণনা করার পরের দিন, শি পুতিনের সঙ্গে কথা বলেন, এবং জানিয়ে দেন যে চিন ‘‌আলোচনার মাধ্যমে সমস্যাগুলির সমাধান’‌ চায়। তিনি ‘‌ঠান্ডা যুদ্ধের মানসিকতা ত্যাগ’‌ করার এবং ‘‌সব দেশের বৈধ নিরাপত্তা উদ্বেগকে সম্মান’‌ করার উপর জোর দেন। তিনি বলেছিলেন, “সব দেশের সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতাকে সম্মান করার এবং রাষ্ট্রপুঞ্জের সনদের নীতিগুলি মেনে চলার বিষয়ে চিনের একটি ধারাবাহিক ও মৌলিক অবস্থান রয়েছে।”

পরের দিন রাশিয়ার পদক্ষেপের নিন্দা করে রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবের উপর ভোটদান থেকে চিন বিরত থাকে। চিনা বিশেষ প্রতিনিধি বিরত থাকার বিষয়টি ব্যাখ্যা করে দাবি করেন যে এই জটিল সমস্যাকে সতর্কতার সঙ্গে মোকাবিলা করাই তাঁদের লক্ষ্য, যাতে পরিস্থিতি আরও খারাপ না–হয়। তিনি আপ্তবাক্যের পুনরাবৃত্তি করে বলেছিলেন যে ‘‌সকল রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব ও ভূখণ্ডগত সংহতিকে সম্মান করা উচিত’‌।

আরেকটি রিপোর্ট এসেছিল যার গুরুতর প্রভাব পড়তে পারে:‌ আমেরিকানরা আক্রমণ বন্ধ করার জন্য চিনাদের সঙ্গে একাধিক বার কথা বলেছিল, এবং এমনকি তাদের সঙ্গে গোয়েন্দা তথ্যও শেয়ার করেছিল। কিন্তু পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য কাজ না করে বেজিং মস্কোর সঙ্গে সেই তথ্য শেয়ার করে

ইইউ-মার্কিন সম্পর্কের পরিণতি

বিগত কয়েক দশক ধরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপে একক ভাবে উদ্যোগী হয়ে চেষ্টা করেছে ন্যাটো মিত্রদের প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়াতে এবং নিজেদের প্রতিরক্ষার বিষয়টিকে আরও গুরুত্ব সহকারে নিতে রাজি করাতে। ইউক্রেন এই মিত্রদের অবস্থান পরিবর্তন করতে বাধ্য করেছে। প্রকৃতপক্ষে ইউএস-ইইউ কৌশলগত সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হয়েছে, বিশেষ করে আজ যখন ইউরোপীয়দের আবারও তাদের প্রধান নিরাপত্তা প্রদানকারী হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উপর নির্ভর করতে হচ্ছে।

চিনা বিশেষ প্রতিনিধি বিরত থাকার বিষয়টি ব্যাখ্যা করে দাবি করেছেন যে এই জটিল সমস্যাকে সতর্কতার সঙ্গে মোকাবিলা করাই তাঁদের লক্ষ্য, যাতে পরিস্থিতি আরও খারাপ না–হয়।

সম্ভবত সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ঘটনা হল জার্মানির অবস্থানের বড় ধরনের পরিবর্তন। বিগত দশকগুলিতে দেশটি যে দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করেছিল সেখানে বিদেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্কের উপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। ইউক্রেন আক্রমণের তিন দিন পর জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শোলজ ঘোষণা করেন যে জার্মানি তার প্রতিরক্ষা ব্যয় দ্রুত তার জিডিপি–র ২ শতাংশের বেশি করবে। ২০২১ সালে জার্মানি এ জন্য ৪৩০০ কোটি ইউরো খরচ করেছে, যা প্রায় তার জিডিপি-র ১.৫৩ শতাংশ। এ ছাড়াও, প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম ক্রয়ের জন্য আরও ১০ হাজার কোটি ইউরো উপলব্ধ হবে। ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস ও বেলজিয়ামের মতো অন্য ন্যাটো দেশগুলিও তাদের প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সুইডেন এবং ফিনল্যান্ডের মতো নন-ন্যাটো দেশগুলি ঘোষণা করেছে যে তারাও তাদের প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়াবে।

চিন কি রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে শান্তি চুক্তি করাতে পারবে?

রাশিয়ার সঙ্গে চিনের ‘‌পাথরের মতো দৃঢ়’‌ সম্পর্ক পুনর্ব্যক্ত করার পাশাপাশি ৭ মার্চ বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই বলেছিলেন যে চিন দুই দেশের মধ্যে ‘‌প্রয়োজনীয় মধ্যস্থতা করতে’‌ ইচ্ছুক। তিনি আরও বলেছিলেন যে চিন ইউক্রেনে মানবিক সহায়তা পাঠাবে। এটি একটি স্পষ্ট সংকেত যে ইউক্রেনের প্রতিরোধের মুখে বেজিং রাশিয়ার প্রতি তার সমর্থনের পুনর্মূল্যায়ন করছে। ইউক্রেন সংকট চিনের জন্য বিপদ, না কি সুযোগ, তা শুধু ইতিহাসই বলবে। নিষেধাজ্ঞাগুলি বজায় থাকলে বেজিংয়ের পথ কঠিন হতে পারে। চিনের পক্ষে ইউক্রেনের ঘটনার দরুন ক্ষয়ক্ষতি থেকে বাঁচা সহজ হবে না। তবে বেজিংকে মধ্যস্থতা করার চেষ্টা করার জন্যও উৎসাহিত করা যেতে পারে। সফল হলে তা একটি বৈশ্বিক শক্তি হিসেবে চিনের মর্যাদা ব্যাপক ভাবে বাড়িয়ে দেবে, এবং ইউরোপের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষতি মেরামত করতে সাহায্য করবে।

ইউক্রেন আক্রমণের তিন দিন পর জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শোলজ ঘোষণা করেন যে জার্মানি তার প্রতিরক্ষা ব্যয় দ্রুত তার জিডিপি–র ২ শতাংশের বেশি করবে।

এরপর ইইউ বিদেশ নীতিবিষয়ক প্রধান জোসেপ বোরেল বলেছেন যে চিনের উচিত শান্তি আলোচনার মধ্যস্থতা করা, কারণ পশ্চিমীরা আর তা করতে পারবে না। কিন্তু বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই তাঁর সঙ্গে ফোনালাপে ইউক্রেন ও রাশিয়ার ‘‌সরাসরি আলোচনা’‌ করা উচিত বলে মার্কিন বিদেশমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের বক্তব্যের উপর জোর দিয়ে এই বিষয়টি বাতিল করে দেন।

তার পরেও রাশিয়ার প্রতি তাদের ‘‌সীমাহীন’‌ দায়বদ্ধতার কারণে বেজিং মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করতে পারে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। চিনারা অবশ্য শীতকালীন অলিম্পিক সংক্রান্ত রিপোর্ট অস্বীকার করেছে।

এই প্রস্তাবটি সফল না হওয়ার আরেকটি কারণ হল বেজিংয়ের পক্ষে পুতিনের সর্বাধিকতাবাদী লক্ষ্যগুলিকে, যেমন ইউক্রেনকে সম্পূর্ণ মুছে ফেলা বা বড় ধরনের বিভাজন, আটকানো কঠিন হবে। আর তা হলে ইউক্রেনীয়দের কাছে চিনের প্রস্তাবগুলি গ্রহণযোগ্য হবে না।

পরিশেষে একটি প্রতিপ্রশ্ন হল, চিনারা কি সত্যিই আন্তরিক? তারা উত্তর কোরিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের মধ্যে শান্তিস্থাপনে বিশেষ আগ্রহী বা কার্যকরী ছিল না। তারা তাদের প্রতিবেশে একটি উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতি রেখে দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সমাধান করবে বলে।

চিনারা মনে করতে পারে যে পুতিন ইউক্রেনে আটকে পড়লে বিষয়টা তাদের জন্য মোটেই খারাপ নয়। রাশিয়া তাদের উপর আরও বেশি নির্ভরশীল হয়ে উঠবে, এবং চিন তাদের কাছ থেকে তেল ও গ্যাসের পাশাপাশি অন্যান্য পণ্যের আরও শস্তা সরবরাহ পেয়ে যাবে। তা ছাড়া তাদের নতুন ঘনিষ্ঠতার যুক্তি অনুসারে রাশিয়াকে নতুন নিষেধাজ্ঞা এড়াতে সহায়তা করার জন্য চিন প্রলুব্ধ হতে পারে।

চিনারা মনে করতে পারে যে পুতিন ইউক্রেনে আটকে পড়লে বিষয়টা তাদের জন্য মোটেই খারাপ নয়। রাশিয়া তাদের উপর আরও বেশি নির্ভরশীল হয়ে উঠবে, এবং চিন তাদের কাছ থেকে তেল ও গ্যাসের পাশাপাশি অন্যান্য পণ্যের আরও শস্তা সরবরাহ পেয়ে যাবে।

চিনের উপর অবশ্য চিন-ইউরোপ রেল ট্র্যাফিক ব্যাঘাতের সরাসরি প্রভাব পড়তে পারে। দিনে গড়ে ৪০টি ট্রেন চিনের ১৮০টি শহরকে ২৩টি ইউরোপীয় শহরের সঙ্গে সংযুক্ত করে, এবং দ্বিমুখী স্থল বাণিজ্যের মাধ্যমে ৭,৫০০ কোটি মার্কিন ডলার আয়ের ব্যবস্থা করে। ট্রাফিকের বেশিরভাগ অংশ এখনও ইউক্রেনকে এড়িয়ে বেলারুশ হয়ে পোল্যান্ডে যাচ্ছে। তবে অপারেটরদের পক্ষে বিষয়টি কঠিন হয়ে পড়বে বলে মনে হয়, বিশেষত যখন রাশিয়ার রেলপথে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে।

প্রকৃতপক্ষে, ন্যাটো ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জোরালো সমালোচনা চিনের পূর্ব ও মধ্য ইউরোপীয় বন্ধুদের ক্ষুব্ধ করেছে। এদেরকেই চিন ১৭+১ উদ্যোগের মাধ্যমে প্রলুব্ধ করে পাশে টানছিল। নেট ফলাফল হল ইউরোপীয় ইউনিয়নের কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন, যা চিন দীর্ঘদিন ধরে সমর্থন করতে চেয়েছিল, তা এখন অতীত হয়ে যেতে পারে।

সামনের দিকে তাকিয়ে: ইউএস-ইইউ ও চিন

সুতরাং, চিনারা কিছু না–করলে তাদের অনেক কিছু হারাতে হবে। মার্কিন ও ইউরোপীয় জনমত এখন বিশ্বাস করে যে চিনের বিবৃতি ও কাজ রুশদের উৎসাহিত করেছিল। চিনারা বিষয়টিকে গুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যেতে পারে, কিন্তু ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের প্রাথমিক পরিণতি ইতিমধ্যেই ঘটেছে, এবং তা হল একটি পুনরুজ্জীবিত মার্কিন-ইইউ কৌশলগত অংশীদারিত্বের উত্থান। এই মাসের শুরুতেই উরসুলা ফন ডার লেইন বলেছিলেন, “ইউরোপীয় নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা গত দুই দশকের তুলনায় গত ছয় দিনে বেশি বিকশিত হয়েছে।”

চিনারা বিষয়টিকে গুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যেতে পারে, কিন্তু ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের প্রাথমিক পরিণতি ইতিমধ্যেই ঘটেছে, এবং তা হল একটি পুনরুজ্জীবিত মার্কিন-ইইউ কৌশলগত অংশীদারিত্বের উত্থান।

এমনিতেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চিনের সম্পর্ক তিক্ত হয়ে আছে। উপরে বর্ণিত ঘটনাগুলি তাদের সম্পর্ক ভাল করার মতো কিছুই করেনি, বরং প্রকৃতপক্ষে বেজিংয়ের মধ্যমেয়াদি লক্ষ্য সম্পর্কে ওয়াশিংটনে সংশয় তৈরি করেছে। রাশিয়ার সঙ্গে মার্কিন-ইউরোপীয় ইউনিয়নের সম্পর্কের বিচ্ছেদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চিনের সম্পর্কের চেয়ে অনেক বেশি গুরুতর। যাই হোক, এখন যদি বেজিং মস্কোকে আঁকড়ে থাকার সিদ্ধান্ত নেয়, তা হলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ উভয়েই তাকে প্রতিপক্ষ হিসেবে বিবেচনা করতে পারে।

রাশিয়া ও চিন উভয়কেই এখন এমন এক ইউরোপের মোকাবিলা করতে হতে পারে যেটি শুধু জনবহুল নয়, বরং ধনী এবং দ্রুত তার সামরিক শক্তি বাড়াতে সক্ষম। আরও গুরুত্বপূর্ণ ভাবে, ইউরোপ এখন তা করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ বলে মনে হচ্ছে। পুতিনের পদক্ষেপগুলি ইতিমধ্যে মার্কিন-ইইউ কৌশলগত সম্পর্ক আরও শক্তিশালী করেছে, এবং এর বড়সড় প্রভাব পড়তে পারে ইন্দো-প্যাসিফিকেও। ইউরোপীয় ইউনিয়নের পাশাপাশি তার সদস্য ফ্রান্স ও জার্মানির মতো দেশগুলি এবং যুক্তরাজ্য (ইউকে) ইতিমধ্যেই সেখানে আরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করার ইচ্ছাপ্রকাশ করেছে।

প্রকৃতপক্ষে, এমন একটি যুক্তিও আছে যে ইউরোপীয়রা যদি উৎসাহী হয়ে তাদের নিজস্ব নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য ব্যবস্থা নিতে থাকে, তা হলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মধ্য মেয়াদে আগামী চার–পাঁচ বছর ইন্দো-প্যাসিফিকের উপর এখনকার তুলনায় আরও অনেক বেশি মনোনিবেশ করার সুযোগ পাবে।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.