Author : Gurjit Singh

Expert Speak Raisina Debates
Published on Oct 11, 2022 Updated 6 Days ago

কেনিয়ার সাম্প্রতিক নির্বাচনে রাজনৈতিক হিংসার অনুপস্থিতি পূর্ব আফ্রিকার এই দেশটির জন্য এক ইতিবাচক ঘটনা।

কেনিয়ার নির্বাচন: আশ্চর্যজনক ভাবে এক গণতান্ত্রিক এবং শান্তিপূর্ণ প্রক্রিয়া
কেনিয়ার নির্বাচন: আশ্চর্যজনক ভাবে এক গণতান্ত্রিক এবং শান্তিপূর্ণ প্রক্রিয়া

প্রেসিডেন্ট পদ, পার্লামেন্টের উভয় কক্ষ, কাউন্টি গভর্নরবর্গ এবং ৪৭টি কাউন্টি অ্যাসেম্বলির সদস্য পদ-সহ কেনিয়ার বহুস্তরীয় নির্বাচন প্রক্রিয়াটি  আগস্ট মাসে সম্পন্ন হয়েছে। এ ক্ষেত্রে লক্ষ করার মতো বিষয়টি হল, এই নির্বাচন প্রক্রিয়াগুলি ছিল সম্পূর্ণ রূপে হিংসামুক্ত। নির্বাচনী ফলাফলে পার্থক্যের দরুন নির্বাচনী পিটিশন জমা পড়লেও হিংসাত্মক ঘটনার অনুপস্থিতি কেনিয়ার গণতন্ত্রের জন্য এক উল্লেখযোগ্য প্রাপ্তি।

সোমালিয়া, সুদান, দক্ষিণ সুদান এবং ইথিওপিয়া-সহ সমগ্র অঞ্চলটি, যা সাধারণত সংঘর্ষপ্রবণ, সেই ক্ষেত্রেও এটি নিঃসন্দেহে এক ভাল লক্ষণ। একই রকম ভাবে রোয়ান্ডা এবং ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোও, যাকে সম্প্রতি পূর্ব আফ্রিকান সম্প্রদায়ের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, সেই অঞ্চলও অশান্তিতে জড়িয়ে পড়েছে। রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ভাবে অগ্রগতি দর্শানোর জন্য কেনিয়া বর্তমানে পূর্ব আফ্রিকার পথ প্রদর্শক হয়ে উঠেছে।

২০১৫ সালে উহুরু কেনিয়াত্তার বিরুদ্ধে মামলা খারিজ করা হয় এবং ২০১৬ সালে প্রমাণের অভাবে রুটোর বিরুদ্ধে মামলাও প্রত্যাহার করা হয়।

প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কেনিয়া কোয়ানজা (কেনিয়া ফার্স্ট) জোটের প্রার্থী ডেপুটি প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম রুটো সামান্য ব্যবধানে আজিমিও লা উমজা (রেজোলিউশন টু ইউনিটি) জোটের প্রার্থী রাইলা ওদিঙ্গাকে পরাজিত করেন। নির্বাচনে উইলিয়াম রুটো মোট ৫০.৪৯ শতাংশ বা ৭১,৭৬,১৪১টি ভোট পান  এবং ওদিঙ্গা ৪৮.৮৫ শতাংশ বা ৬৯,৪২,৯৩০টি ভোট পান। ইনডিপেন্ডেন্ট ইলেকটোরাল অ্যান্ড বাউন্ডারিজ কমিশন (আই ই বি সি) দ্বারা ডেপুটি প্রেসিডেন্ট রুটোকে নতুন প্রেসিডেন্ট রূপে নির্বাচিত করার সিদ্ধান্ত বজায় রাখার সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্ত বিপক্ষদের অবাক করলেও এর ফলে কোনও প্রকাশ্য হিংসার ঘটনা ঘটেনি।

রাইলা এই নিয়ে পঞ্চম বারের জন্য প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পরাজিত হলেন এবং ৭৭ বছর বয়সি মানুষটি আগামী দিনে হয়তো আর কোনও চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিতে পারবেন না। তুলনায় ৫৫ বছর বয়সি রুটো নবীন রাজনীতিকদের অন্যতম। দ্বিতীয় প্রেসিডেন্ট দানিয়েল আরাপ মোই, যিনি কালেনজিন উপজাতি জোটকে সুদৃঢ় করে কেনিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম গোষ্ঠীতে পরিণত করেছিলেন, তাঁর অধীনে এক জন যুব নেতা এবং রাজনৈতিক সংগঠক রূপে কাজ করার সময়ে রুটো সকলের নজরে আসেন। কিকুয়ু জনজাতি থেকে এখনও পর্যন্ত যে তিন জন কেনিয়ার প্রেসিডেন্ট হয়েছেন, তাঁরা হলেন জোমো কেনিয়াত্তা, মোয়াই কিবাকি, এবং উহুরু কেনিয়াত্তা। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ভাবে কিকুয়ুরা কেনিয়ার প্রধান জনজাতি। দুই জনজাতির মধ্যে শত্রুতা কমেনি এবং ক্ষমতার লড়াই অব্যাহত রয়েছে। এ হেন বিভাজনের ফলে এখনও পর্যন্ত প্রত্যেকটি নির্বাচনই হিংসার ঘটনায় জর্জরিত থেকেছে। এর চরমতম উদাহরণ হল ২০০৭-০৮ সালের নির্বাচন যখন প্রেসিডেন্ট উহুরু কেনিয়াত্তা এবং তাঁর ডেপুটি রুটোকে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্ট অপরাধমূলক কাজকর্মের জন্য অভিযুক্ত করে।

কেনিয়া থেকে প্রাপ্ত তথ্য প্রমাণের অভাবে আই সি সি বিষয়টির তদন্ত চালিয়ে যেতে অসমর্থ হয়। ২০১৫ সালে উহুরু কেনিয়াত্তার বিরুদ্ধে মামলা খারিজ করা হয় এবং ২০১৬ সালে প্রমাণের অভাবে রুটোর বিরুদ্ধে মামলাও প্রত্যাহার করা হয়। অনেকেই ২০০৭ সালের নির্বাচনী হিংসার অন্যতম প্রধান স্থপতি হিসেবে রুটোকে মনে রাখলেও তাঁর প্রধান রাজনৈতিক শক্তি হল তাঁর সাংগঠনিক দক্ষতা যা তিনি প্রথমে মোই এবং পরবর্তী সময়ে কিবাকির স্বার্থে ব্যবহার করেছেন।

কেনিয়ার রাজনৈতিক পরিকাঠামো এখনও কিকুয়ু জনজাতির আধিপত্য দ্বারা প্রভাবিত এবং তারা ছোট ছোট জনজাতির সঙ্গে ক্ষমতা ভাগ করে নিলেও লুওদের ক্ষমতা থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে চায়।

রুটো নিজেকে উহুরু দ্বারা পরিত্যক্ত বলে মনে করলেও নিজের সাংগঠনিক ক্ষমতার উপরে তাঁর যথেষ্ট আস্থা ছিল। কিকুয়ু এবং লুওদের একত্র করার উদ্দেশ্যে উহুরু তাঁর চিরাচরিত প্রতিদ্বন্দ্বী রাইলার সঙ্গে হাত মেলালেও রুটো উত্তরাধিকার রূপে মোইয়ের কালেনজিন-এর দায়িত্ব পান, যা তাঁকে কিকুয়ুদের সমর্থন প্রদান করে। সংশ্লিষ্ট নির্বাচনটি শ্রেণি সম্পর্কিত, জনজাতি সম্পর্কিত নয়। কারণ তিনি কোনও রাজা নন, বরং এক জন সামান্য মুরগিপালক… রুটো বারংবার এ হেন দাবি জানালেও এ কথা স্পষ্ট যে, কিকুয়ু-লুও শত্রুতা এখনও প্রশমিত হয়নি। কেনিয়ার রাজনৈতিক পরিকাঠামো এখনও কিকুয়ু জনজাতির আধিপত্য দ্বারা প্রভাবিত এবং তারা ছোট ছোট জনজাতির সঙ্গে ক্ষমতা ভাগ করে নিলেও লুওদের ক্ষমতা থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে চায়। রুটো নিজেকে এমন এক পরিত্যক্ত ডেপুটি প্রেসিডেন্ট বলে অনুভব করেন, যাঁর সরকারে কোনও ভূমিকা এবং দায়িত্ব নেই। তা সত্ত্বেও তিনি উহুরুর কিকুয়ু নির্বাচনী ক্ষেত্রকে এমন ভাবে প্রভাবিত করেন, যাতে অঞ্চলটি রাইলাকে সমর্থন প্রদান করে না, ঠিক যেমনটা উহুরু চেয়েছিলেন।

চিরাচরিত জোট রাইলা-উহুরু মৈত্রীর তুলনায় রুটোকে অধিক প্রাধান্য দেয়। রুটো শুধু মাত্র তাঁর নিজের ভোটই ধরে রাখেননি, একই সঙ্গে তিনি কেনিয়ার কেন্দ্রীয় অঞ্চলের একাধিক স্থানে জয়লাভ করেন, যেখানে কিকুয়ু এবং কেনিয়াত্তাদের ব্যাপক প্রভাব বিদ্যমান। তাঁর ভোটের শতাংশ বৃদ্ধি তাঁর জয়ের নেপথ্যে গুরুত্বপূর্ণ কারণ। মোম্বাসা উপকূল এবং নাইরোবির পূর্বাভিমুখী নির্বাচনী ক্ষেত্রগুলি-সহ যে সব স্থানে রাইলা পূর্ববর্তী নির্বাচনগুলিতে জয়লাভ করেছেন, সেখানেও তাঁর ভোট শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। যে সব নির্বাচনী ক্ষেত্রে রাইলা ব্যাপক ভোট ব্যবধানে জয়ী হতেন, তার সংখ্যাও কমে এসেছে। চিরাচরিত ভোট ঘাঁটিগুলি ধরে রাখতে না-পারা এবং নতুন ভোট অর্জনে ব্যর্থতা তাঁর হারের নেপথ্যে এক উল্লেখযোগ্য কারণ।

ভোট প্রদানের পরিমাণ প্রায় ৬৫ শতাংশে নেমে এসেছে, যা বিগত ১৫ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। প্রাপ্য ভোট শতাংশের ব্যবধান রুটোর পক্ষে ব্যাপক প্রভাব ফেলে। অনেকেই এমনটা মনে করেন যে, এই নির্বাচন রুটো এবং তাঁর দল দক্ষতার সঙ্গে নিয়ন্ত্রণ করেছেন। সমগ্র নির্বাচনী পর্বব্যাপী ওপিনিয়ন পোলগুলিতে রাইলার জয়ের সম্ভাবনার কথাই বার বার প্রচারিত হয়। কারণ তাঁর সৃষ্ট জোটটিকে প্রাথমিক ভাবে অপরাজেয় বলে মনে করা হচ্ছিল। কিন্তু যে বিষয়টি সকলের নজর এড়িয়ে যায়, সেটি ছিল উহুরুর নিজের এলাকায় তাঁরই বিরুদ্ধে ক্রমশ শক্তিশালী হতে থাকা চোরা স্রোত। তাই রুটোর জয় গণমাধ্যমগুলিকে অবাক করে। ভোট দানের পরিমাণ বৃদ্ধি করার জন্য নির্বাচনী প্রক্রিয়া এবং ভোট বণ্টনের প্রক্রিয়াটির পর্যালোচনা প্রয়োজন। কারণ সে দেশের যুব সম্প্রদায় রাজনৈতিক প্রক্রিয়া সম্পর্কে আশাহত এবং তাই তাঁরা ভোট দান করা থেকে বিরত থেকেছেন।

মোম্বাসা উপকূল এবং নাইরোবির পূর্বাভিমুখী নির্বাচনী ক্ষেত্রগুলি-সহ যে সব স্থানে তিনি পূর্ববর্তী নির্বাচনগুলিতে জয়লাভ করেছেন, সেখানেও রাইলার ভোট শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।

সুপ্রিম কোর্টের রায়

রাইলা নির্বাচনী ফলাফল মেনে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি ও তাঁর দল প্রতিবাদ জানালেও তাঁরা নির্বাচনী আইন মেনে চলার এবং আবেদন করার সময়োপযোগিতা সম্পর্কে সর্বদা সচেতন ছিলেন। সে দেশের সর্বপ্রথম মহিলা চিফ জাস্টিস মার্থা কুমের নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্ট রাইলার আবেদন খারিজ করে দেন। এই ঘটনা পাঁচ বছর আগের ঘটনার চেয়ে আলাদা, যখন সুপ্রিম কোর্ট নির্বাচন বাতিল করে দেয় এবং নতুন নির্বাচন ঘোষণা করে। সেই সময় উহুরু রাইলাকে পরাজিত করে নির্বাচনে জয়ী হলেও রাইলা নতুন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেননি।

আই ই বি সি যথেষ্ট দক্ষতার সঙ্গে নির্বাচনী প্রক্রিয়াটি পরিচালনা করেছে এবং প্রাপ্তির সঙ্গে সঙ্গেই তারা উপলব্ধ তথ্য জনসমক্ষে প্রকাশ করেছে। স্বচ্ছতায় অনভ্যস্ত একটি ব্যবস্থার জন্য এ হেন পদক্ষেপ বিহ্বলজনক। যদিও ফলাফল মিলিয়ে দেখার সময়ে অসঙ্গতি নজরে পড়ে। এর ফলে আশ্চর্যজনক ভাবে আই ই বি সি ভেঙে যায় এবং উহুরু দ্বারা নিযুক্ত চার জন সাম্প্রতিকতর কর্মী আই ই বি সি-র অন্তিম ঘোষণা থেকে নিজেদের নাম প্রত্যাহার করে নেন। তাঁরা কোনও এক অজ্ঞাত কারণে ব্যক্তিগত ভাবে পৃথক সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করেন, এবং আদালতেও যাননি। যাই হোক, এর ফলে নির্বাচনী ফলাফল অস্পষ্ট হয়ে ওঠে এবং বিশেষত কেনিয়া এবং তার পারিপার্শ্বিক অঞ্চলে সহিংসার আশঙ্কার কারণে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। সৌভাগ্যবশত আদালতের তরফে স্বচ্ছ ভাবে সময়ানুবর্তিতা মেনে চলার দরুন রুটোকে প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করা সম্ভব হয়।

রুটো সম্ভবত রাইলা এবং কেনিয়াত্তার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ পার্লামেন্ট নির্বাচনে উভয় পক্ষই প্রায় সমান সংখ্যক আসন পেয়েছিল। ৬৭ সদস্যের সেনেটে কাওয়ানজা ২৪টি এবং আজিমিও ২৩টি আসনে জয়লাভ করে। উভয়েই বিশেষ স্বার্থ সুরক্ষিত করতে ১০ জন সদস্যকে মনোনীত করে। অ্যাসেম্বলিতে ৩৪৯ আসনের হাউসে আজিমিও ১৭৩টি আসনে জয়লাভ করে, যেখানে কাওয়ানজা জয়ী হয় ১৬১টি আসনে। রাইলা জোটের মধ্যে থেকে কয়েকটি আগ্রহী গোষ্ঠী পার্লামেন্টে রুটোর সঙ্গে জোটবদ্ধ হওয়ার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এক তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন হওয়া সত্ত্বেও রুটো পার্লামেন্টের উভয় হাউসের নেতৃত্ব প্রদানের ক্ষমতা অর্জনে সমর্থ হয়েছেন, যা তাঁর আধিপত্যকেই দর্শায়।

রাইলা নির্বাচনী ফলাফল মেনে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি ও তাঁর দল প্রতিবাদ জানালেও তাঁরা নির্বাচনী আইন মেনে চলার এবং আবেদন করার সময়োপযোগিতা সম্পর্কে সর্বদা সচেতন ছিলেন।

এমন ঘটনা আগামী দিনেও ঘটতে দেখা যাবে যেহেতু তারা আগামী পাঁচ বছরের জন্য রাজনৈতিক ক্ষমতার কেন্দ্রে নিজেদের জায়গা করে নিতে চাইবেন। রাইলার ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হওয়ার ফলে লুহইয়া এবং লুওদের মতো অন্যান্য বৃহৎ জনজাতিও নতুন নেতৃত্বের কথা চিন্তাভাবনা করে কি না, সে দিকেও সকলের নজর থাকবে। রুটো জনজাতিগুলির পারস্পরিক শত্রুতাকে এক শ্রেণি সংগ্রামে রূপান্তরিত না করলেও তিনি এক জন অ-রাজবংশীয় নেতা হয়ে উঠেছেন এবং এর ফলে দলগুলি ও অঞ্চলগুলির অভ্যন্তরে পরিবর্তনের প্রবাহ সূচিত হতে পারে।

মতামত লেখকের নিজস্ব।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.