Expert Speak India Matters
Published on Sep 27, 2022 Updated 5 Days ago

নানা উত্থান-পতন সত্ত্বেও বিচারবিভাগকে সাধারণ নাগরিকের ন্যায়বিচার পাওয়ার শেষ অবলম্বন এবং সংখ্যাগরিষ্ঠতাবাদের প্রতিস্পর্ধী একটি প্রশাসনিক প্রতিষ্ঠান রূপে এখনও মনে করা হয়।

৭৫তম বর্ষে ভারতীয় বিচার বিভাগ: গণতন্ত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ
৭৫তম বর্ষে ভারতীয় বিচার বিভাগ: গণতন্ত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ

ভূমিকা

ভারতে গণতন্ত্র ও উদারনৈতিক মূল্যবোধকে শক্তিশালী করার উদ্দেশ্যে বিচার বিভাগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে: সংবিধানের অভিভাবক হওয়া থেকে শুরু করে, রাষ্ট্রীয় বাড়াবাড়ির বিরুদ্ধে দরিদ্র এবং পিছিয়ে পড়া গোষ্ঠীর মানুষদের স্বার্থের দক্ষ রক্ষাকর্তা হয়ে লক্ষ লক্ষ সাধারণ মানুষের শেষ অবলম্বন স্বরূপ একটি প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা পেয়েছে। কয়েকটি ব্যতিক্রম ছাড়া ভারতীয় বিচার বিভাগীয় ব্যবস্থা গত ৭৫ বছরে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সংবিধানকে রক্ষা করতে এবং আইনের শাসনকে তুলে ধরতে সফল হয়েছে। এখনও সেই ধারাই বজায় আছে, যদিও সংখ্যাগরিষ্ঠতাবাদের প্রতিস্পর্ধী একটি প্রশাসনিক প্রতিষ্ঠান রূপে এটি নানা উত্থান-পতনের সাক্ষী। বিচারকদের নিয়োগের পদ্ধতি এবং ক্রমবর্ধমান নিয়োগ ঘাটতি, দায়বদ্ধতা, দুর্নীতি, সাধারণ নাগরিকদের জন্য ন্যায়বিচারের অধিকার এবং সুলভতা সংক্রান্ত বিষয়গুলির সংস্কার নিয়ে বিচার বিভাগীয় ব্যবস্থার নিজস্ব উদ্বেগের কারণ রয়েছে। এই সংক্ষিপ্ত প্রতিবেদনটির মূল লক্ষ্য হল বিচার বিভাগীয় বিবর্তনের কতগুলি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাকে তুলে ধরা এবং গণতন্ত্রের সশক্তিকরণ ও স্বাধীনতা-পরবর্তী ভারতে ব্যক্তিগত স্বাধীনতা রক্ষায় আদালতের ভূমিকার উপরে আলোকপাত করা।

বিচারকদের নিয়োগের পদ্ধতি এবং ক্রমবর্ধমান নিয়োগ ঘাটতি, দায়বদ্ধতা, দুর্নীতি, সাধারণ নাগরিকদের জন্য ন্যায়বিচারের অধিকার এবং সুলভতা সংক্রান্ত বিষয়গুলির সংস্কার নিয়ে বিচার বিভাগীয় ব্যবস্থার নিজস্ব উদ্বেগের কারণ রয়েছে।

বিবর্তন: প্রথম পর্যায়

৭৫ বছরের ঘটনাবহুল যাত্রায় ভারতীয় বিচার বিভাগীয় ব্যবস্থার একাধিক অবতার ছিল। স্বাধীনতার প্রাথমিক বছরগুলিতে উচ্চ আদালতগুলি বিচার সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জের সীমাবদ্ধ পরিসরকে আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে একটি নিয়ন্ত্রক রূপে ব্যবহার করেছিল যা মূলত বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনার ক্ষমতার মাধ্যমে প্রয়োগ করা হয়। বিচার বিভাগীয় ব্যবস্থার প্রাথমিক বছরগুলিতে তিনটি প্রভাবশালী দিক হল: প্রথমত, এটি সংবিধানের বয়ান অনুসরণ করেছিল; দ্বিতীয়ত, এটি সরকারের মতাদর্শ (সমাজতন্ত্র, ইতিবাচক পদক্ষেপ / সংরক্ষণ নীতি) দ্বারা প্রভাবিত হতে অস্বীকার করে; তৃতীয়ত, সংবিধান সংশোধনের পূর্ণ ক্ষমতা লাভের আইনি বিচক্ষণতাকে সঠিক পন্থা বলে ধরে নেওয়া হয়। ফলে কামেশ্বর প্রসাদ মামলায় বিচার বিভাগ জমিদারি বিলুপ্তিকে বেআইনি এবং সম্পত্তির অধিকারের লঙ্ঘন বলে ঘোষণা করলেও এই ধারাকে বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনার আয়ত্তের বাইরে রাখার জন্য যখন সংসদে প্রথম সংবিধান সংশোধনী আইন দ্রুত পাস করা হয়, তখন বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনার বিধানটি ব্যবহার করা হয়নি। একই ভাবে চম্পকম দোরাইরাজনের ক্ষেত্রে আদালত সংসদের সঙ্গে প্রাতিষ্ঠানিক সংঘর্ষ এড়িয়ে সমতার অধিকার (অনুচ্ছেদ ১৪-র অধীনে) লঙ্ঘন হিসেবে বর্ণের ভিত্তিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সংরক্ষণের কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্তকে বাতিল করেছে। এই সমস্ত ক্ষেত্রে বিচার বিভাগ সংবিধানের একটি ইতিবাচক ব্যাখ্যাকেই অনুসরণ করেছে।

দ্বিতীয় পর্যায়

অশান্ত এবং রাজনৈতিক ভাবে উদ্বেল দ্বিতীয় পর্যায় শুরু হয় গোলোক নাথ মামলার রায়ের মাধ্যমে। এ ক্ষেত্রে বিচার বিভাগীয় ব্যবস্থা মৌলিক অধিকারের বিস্তৃত ব্যাখ্যা দিয়ে রাজনৈতিক পরিসরে প্রবেশ করে। সুপ্রিম কোর্ট ১৭তম সংশোধনীর সাংবিধানিকতা পুনর্বিবেচনা করে এবং সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে মামলাটির রায়ে উক্ত সংশোধনীকে অবৈধ ঘোষণা করে। একই ভাবে শঙ্করী প্রসাদ এবং সজ্জন সিং মামলাগুলিকে খারিজ করার মাধ্যমে এটি সংসদের সঙ্গে মতবিরোধ এড়াতে সক্ষম হয়েছিল। আদালতের তরফে জানানো হয় যে, সংসদের সংশোধনী ক্ষমতা মানুষের মৌলিক অধিকার রক্ষা সাপেক্ষ। সংক্ষেপে বললে, সুপ্রিম কোর্ট সংসদকে তার আইন প্রণয়নের সার্বভৌমত্ব প্রদানে অস্বীকার করে এবং সম্পত্তির অধিকার সংক্রান্ত ক্ষেত্রেও বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনার ক্ষমতাকে পুনর্বহাল করে। এর ফলে বিচার বিভাগ এবং সংসদের মধ্যে সংঘর্ষের একটি মঞ্চ তৈরি হয়। নিজের শ্রেষ্ঠত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার জন্য সংসদ ২৪তম সংশোধনী আইন পাস করে, যার মাধ্যমে গোলোক নাথ মামলার পূর্ববর্তী রায়কে নাকচ করে দেওয়া হয়।

আদালতের তরফে জানানো হয় যে, সংসদের সংশোধনী ক্ষমতা মানুষের মৌলিক অধিকার রক্ষা সাপেক্ষ। সংক্ষেপে বললে, সুপ্রিম কোর্ট সংসদকে তার আইন প্রণয়নের সার্বভৌমত্ব প্রদানে অস্বীকার করে এবং সম্পত্তির অধিকার সংক্রান্ত ক্ষেত্রেও বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনার ক্ষমতাকে পুনর্বহাল করে।

সংসদের এই সংশোধনী আইন আদালতকে ঐতিহাসিক কেশবানন্দ ভারতী রায় প্রদান করতে বাধ্য করেছিল, যা সংবিধান সংশোধন করার ব্যাপারে সংসদের সার্বভৌম ক্ষমতার উপর বিধিনিষেধ আরোপ করে। সুপ্রিম কোর্টের ১৩ জন বিচারকের একটি সাংবিধানিক বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠ ভাবে (৭ জন বিচারপতি দ্বারা সমর্থিত) রায় দেয় যে, সংবিধান সংস্কার করার জন্য সংসদই সর্বোচ্চ হলেও ৩৬৮ অনুচ্ছেদের অধীনে তা সংবিধানের ‘মৌলিক কাঠামো’র পরিবর্তন করতে পারে না। এই রায়ের ফলে সরকারের তরফে আরও প্রতিরোধ গড়ে ওঠে। এর ফলে কী হয়েছিল তা সকলেরই জানা। তিন জন বরিষ্ঠতম বিচারককে অভূতপূর্বভাবে এড়িয়ে গিয়ে বিচারপতি এ এন রায়কে ভারতের প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ করা হয়। পরবর্তী সময়ে এই দ্বন্দ্ব চরমে পৌঁছয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর নির্বাচনের বৈধতার সঙ্গে সম্পর্কিত রাজ নারায়ণ মামলায়। এলাহাবাদ হাইকোর্ট শ্রীমতী গান্ধীর নির্বাচন এবং তারপর ১৯৭৫ সালের জুন মাসে জরুরি অবস্থা ঘোষণাকে খারিজ করে দেওয়ার ফলে বিচার বিভাগীয় ব্যবস্থার একটি তীব্র প্রান্তিকীকরণের মঞ্চ তৈরি হয়। জাতীয় জরুরি অবস্থা এবং বিচারকদের পদোন্নতির ক্ষেত্রে প্রবীণতাকে অগ্রাহ্য করা – যা বিচার বিভাগীয় ব্যবস্থাকে অতিরিক্ত রাজনীতিকীকরণের দিকে পরিচালিত করেছে বলে মনে করা হয়, এবং বিতর্কিত এ ডি এম জব্বলপুর বনাম শিবকান্ত শুক্ল মামলায় বিচার বিভাগীয় ব্যবস্থার দুর্বল আত্মসমর্পণের নেপথ্যে এর ভূমিকা ছিল অনেকটাই। এই মামলার রায় মৌলিক অধিকারের ২১তম ধারার আওতায় বেঁচে থাকার অধিকার স্থগিত করার সরকারি সিদ্ধান্তকে সমর্থন জুগিয়েছিল। এই রায় উচ্চতর বিচার বিভাগীয় ব্যবস্থার প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতাকে প্রকাশ্যে আনার পাশাপাশি দেশের সাংবিধানিক গণতন্ত্রের জন্য একটি নতুন অবনমনকেও চিহ্নিত করে।

তৃতীয় পর্যায়

এ ডি এম জব্বলপুর-পরবর্তী পর্যায় আদালতগুলিকে প্রাতিষ্ঠানিক পরিবর্তনের দিকে পরিচালিত করে এবং বিশেষত সাংবিধানিক আদালত গতিপথ পরিবর্তনে বিশেষ সময় নষ্ট করেনি। এ ডি এম জব্বলপুর মামলার রায়টি আইনি প্রতিবেদনগুলির চর্চিত বিষয় হলেও – যাকে অবশ্য বহু পরে স্পষ্টভাবে খারিজও করা হয় – সেই পথ সংশোধনের জন্য বিচার বিভাগীয় ব্যবস্থা তৎপর ছিল। জাতীয় জরুরি অবস্থা চলাকালীন হওয়া ক্ষয়ক্ষতি প্রশমন করতে মানেকা গান্ধী বনাম ইউনিয়ন অফ ইন্ডিয়া ও তার পরবর্তী সিদ্ধান্তগুলিতে আদালত ধারা ২১-এর সম্ভাবনাকে সুবিস্তৃত করে ‘জীবনের অধিকার’-এর বিষয়টিকে একটি বৃহত্তর অর্থ দেওয়ার চেষ্টা করেছে। মানেকা গান্ধী মামলায় বিচার বিভাগীয় ব্যবস্থা জীবন এবং ব্যক্তিগত স্বাধীনতার নিরিখে একটি নতুন দিগন্তের উন্মোচন করে, যখন সেখানে নির্ধারণ করা হয় যে ধারা ২১-এর অধীনে এমন সমস্ত পদক্ষেপ অন্তর্ভুক্ত থাকবে যা জীবনকে অর্থবহ করে তোলে এবং আইন দ্বারা প্রতিষ্ঠিত পদ্ধতিটিতে ন্যায্যতা, ন্যায়পরায়ণতা এবং অস্বেচ্ছাচারিতাকে অন্তর্ভুক্ত করে একটি নতুন অর্থ প্রদানের চেষ্টা করা হয়।

এ ভাবেই আদালত শ্রমিক, আবাসিক এবং সাধারণ জনগণকে তাঁদের সম্মিলিত অধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে আদালতে আবেদন জানানোর অধিকার প্রদান করে।

এ ভাবে ধীরে ধীরে বিচার বিভাগ সৃজনশীল ভাবে জনস্বার্থ মামলা (পি আই এল) ব্যবহার করে মৌলিক অধিকারের একটি বিস্তৃত ব্যাখ্যা প্রদানের মাধ্যমে বিচার বিভাগীয় সক্রিয়তার একটি যুগের সূচনা করে। এস পি গুপ্ত বনাম প্রেসিডেন্ট অফ ইন্ডিয়া এবং অন্যান্য মামলার মাধ্যমে পি আই এল বিপ্লবের সূচনা হয়। মামলার রায় ঘোষণার সময় বিচারপতি পি এন ভগবতী বলেছিলেন যে, ‘জনসাধারণের যে কোনও সদস্য সৎ উদ্দেশ্যে এবং সরকারের ভুল সিদ্ধান্ত বা জনসাধারণের ক্ষতির প্রতিকারে যাতে পদক্ষেপ করা হয় সে ব্যাপারে যথেষ্ট আগ্রহী হলে আদালতে যেতে পারেন।’ এ ভাবেই আদালত শ্রমিক, আবাসিক এবং সাধারণ জনগণকে তাঁদের সম্মিলিত অধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে আদালতে আবেদন জানানোর অধিকার প্রদান করে। একই সঙ্গে বিচার বিভাগ তার উদ্দেশ্যে লেখা চিঠিগুলিকে লিখিত আবেদন (রিট পিটিশন) হিসেবে বিবেচনা করার সিদ্ধান্ত নেয় কারণ তা ‘বিচারের পরিসর’ প্রশস্ত করবে। আদালতের পি আই এল-এর ইতিবাচক প্রচার জনসাধারণের উপকারে উদ্বুদ্ধ বহু ব্যক্তি, আইনজীবী এবং এন জি ওকে মানবাধিকার লঙ্ঘন, নারীর অধিকার, শিশুর অধিকার, বেগার শ্রমিক, পরিবেশ দূষণ এবং এমনকি সাংবিধানিক ও প্রশাসন সংক্রান্ত বিষয়ে মামলা দায়ের করতে উৎসাহিত করে। সর্ব অর্থেই পি আই এল ভারতে বিচার বিভাগীয় সক্রিয়তার একটি যুগের নির্মাণ করেছে। পি আই এল-এর মাধ্যমে আদালত সৃজনশীল ভাবে প্রকৃত অধিকারের (অর্থাৎ মৌলিক অধিকার বিশেষত ধারা ২১-এর অধীনে) পরিসরকে প্রসারিত করেছে, যাতে মানুষের মর্যাদার সঙ্গে বেঁচে থাকার অধিকার, জীবিকার অধিকার এবং স্বাস্থ্যকর পরিবেশের অধিকারের মতো অন্তর্নিহিত অধিকারগুলি সুনিশ্চিত করা যায়।

পি আই এল-এর বাইরেও, যা উল্লেখযোগ্য ভাবে বিচার বিভাগীয় ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে তুলেছিল, বিচার বিভাগীয় সক্রিয়তার এই পর্যায়ে আদালত নিজের উপরেই বিচারক নিয়োগের ক্ষমতা অর্পণ করে। বিচার বিভাগীয় নিয়োগকে কার্যকর্তাদের হস্তক্ষেপের বাইরে রাখার মাধ্যমে স্বায়ত্তশাসন বজায় রাখার চেষ্টা করা ছাড়াও, এই সিদ্ধান্তের উদ্দেশ্য ছিল দুর্বল জোট সরকারগুলির শাসনকালে বিচার বিভাগীয় আধিপত্যকে আরও শক্তিশালী করে তোলা। তিন বিচারকের মামলা হিসেবে পরিচিত ধারাবাহিক রায়ে বিচার বিভাগ এই কাজ করেছে। ১৯৯৮ সালে তৃতীয় বিচারক মামলায় সুপ্রিম কোর্ট একটি কলেজিয়াম ব্যবস্থা তৈরির আহ্বান জানিয়েছিল, যেখানে অন্যান্য বিচারক নিয়োগের জন্য সক্রিয় ভাবে পরামর্শ দেওয়া হয়।

সরকার একটি খসড়া আইন পাশ করার মাধ্যমে ন্যাশনাল জুডিশিয়াল অ্যাপয়েন্টমেন্ট কমিশন (এন জে এ সি) গঠন করে বিচার বিভাগীয় নিয়োগকে ন্যূনতম নির্বাহী হস্তক্ষেপের মাধ্যমে পুরোপুরি বিচার বিভাগের হাতে না-রাখতে সচেষ্ট হয়।

২০১৫ সালে কলেজিয়াম ব্যবস্থাটিকে (যেখানে বিচারকরা নিজেরাই নিজেদের নিয়োগ করেন) জাতীয় বিচার বিভাগীয় নিয়োগ কমিশন (এন জে এ সি) দ্বারা প্রতিস্থাপিত করার চেষ্টা করা হয়েছিল। সরকার একটি খসড়া আইন পাশ করার মাধ্যমে ন্যাশনাল জুডিশিয়াল অ্যাপয়েন্টমেন্ট কমিশন (এন জে এ সি) গঠন করে বিচার বিভাগীয় নিয়োগকে ন্যূনতম নির্বাহী হস্তক্ষেপের মাধ্যমে পুরোপুরি বিচার বিভাগের হাতে না-রাখতে সচেষ্ট হয়। যদিও উদ্বেগের কিছু কারণ এই আইনে ছিল। আধিকারিক স্তরে স্বনিয়োগের ক্ষমতাকে খর্ব করার প্রচেষ্টা অনুমান করে পাঁচ সদস্যের সুপ্রিম কোর্টের একটি বেঞ্চ সেই নতুন আইনকে অসাংবিধানিক বলে ঘোষণা করে। এ ভাবে বিচার বিভাগীয় ব্যবস্থা দৃঢ় ভাবে বিচারক নিয়োগের ক্ষেত্রে যে কোনও রকম সম্ভাব্য নির্বাহী হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করে।

চতুর্থ পর্যায়

চতুর্থ পর্যায়টি ২০১৪ সালে শুরু হয় যখন তিন দশকেরও বেশি সময় বিরতির পর একটি একক রাজনৈতিক দল অপ্রতিরোধ্য সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়। নির্বাহী বিভাগ, আইনসভা এবং বিচার বিভাগীয় ব্যবস্থার প্রাতিষ্ঠানিক অবস্থান ফের নজরদারির আওতায় আসে। যদিও  বিচার বিভাগ নির্বাহীপন্থী রায় দিচ্ছে এমন সমালোচনা রয়েছে এবং ব্যক্তির জীবন ও ব্যক্তিগত স্বাধীনতা রক্ষায় তারা ব্যর্থ হয়েছে, এমনটাও মনে করা হয়। অবশ্য মানবিক সঙ্কটের এমন উদাহরণও রয়েছে যেখানে আদালত, বিশেষ করে হাইকোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্ট জীবন, খাদ্য, স্বাস্থ্য এবং মর্যাদার মৌলিক অধিকার সুরক্ষিত করতে সমর্থ হয়েছে। গত দু’বছরে সুপ্রিম কোর্ট এবং হাইকোর্ট কর্তৃক সূচিত বেশ কয়েকটি স্বতঃপ্রণোদিত মামলা এই সত্যেরই সাক্ষ্য বহন করে যে সব আদালতেই ইতিবাচক মনোভাব গ্রহণ করা হয়েছে।

উপসংহার

দেশের ইতিহাসে বিভিন্ন সময়ে বিচার বিভাগীয় ব্যবস্থার বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া সত্ত্বেও এ কথা বেশ স্পষ্ট যে, এটি ভারতে স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রকে শক্তিশালী এবং সুরক্ষিত করার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এর বিবর্তনের বেশির ভাগ অংশ জুড়েই বিচার বিভাগীয় ব্যবস্থা কার্যনির্বাহী এবং আইনি শাখাগুলির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে শেষ অবলম্বনের ভূমিকা পালন করেছে। যদিও কেন্দ্রীকরণের প্রবণতাসম্পন্ন নির্বাহী ক্ষমতার অভূতপূর্ব সশক্তিকরণের ফলে বিচার বিভাগীয় ব্যবস্থা একাধিক ক্ষেত্রে পিছপা হতে বাধ্য হয়েছে এবং তা সত্ত্বেও আইনের শাসনের প্রকৃত সাফল্য চিহ্নিত করে একটি দায়বদ্ধ প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিজেকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করেছে। এক দিকে যখন প্রাতিষ্ঠানিক মিথস্ক্রিয়ার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা এবং তা বোঝা উচিত, তখন সমগ্র ব্যবস্থার প্রতিটি শাখার সামনে উপস্থিত চ্যালেঞ্জ সম্পর্কেও খতিয়ে দেখা ও তার সমাধান খুঁজে বের করা প্রয়োজন। তাই দেশের স্বাধীনতার ৭৫তম বর্ষ উদযাপনের সময়টিই বিচার বিভাগীয় ব্যবস্থার আত্মবীক্ষণ এবং সকলের জন্য ন্যায়বিচারকে বাস্তবে পরিণত করার আদর্শ সময়।

মতামত লেখকের নিজস্ব।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.

Authors

Niranjan Sahoo

Niranjan Sahoo

Niranjan Sahoo, PhD, is a Senior Fellow with ORF’s Governance and Politics Initiative. With years of expertise in governance and public policy, he now anchors ...

Read More +
Anindita Pujari

Anindita Pujari

Anindita Pujari is Advocate-on-Record The Supreme Court of India &amp: Hony. General Secretary The Bar Association of India.

Read More +