রো বনাম ওয়েড মামলার রায় খারিজ: নারী এবং মার্কিন গণতন্ত্রের জন্য ধাক্কা
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট ২৪ জুন ৬:৩ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় বাতিল করে দেয় ১৯৭৩ সালের রো বনাম ওয়েড মামলার রায়, যা সেই সময় পর্যন্ত গর্ভপাতকে একটি সাংবিধানিক অধিকার হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছিল যতক্ষণ না একটি ভ্রূণ গর্ভের বাইরে বেঁচে থাকতে পারে, সাধারণত গর্ভাবস্থার ২২ বা ২৪ সপ্তাহ। এই রায়টি এমন এক সময়ে এসেছে যখন প্রায় ৫০টি দেশ গর্ভপাত আইনকে উদার করে গর্ভপাতের ক্ষেত্রে মহিলাদের অধিকার নিশ্চিত করার প্রশ্নে ইতিমধ্যে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সেই কয়েক ডজন দেশের মধ্যে স্থান করে নিল যারা প্রক্রিয়াটিকে মারাত্মকভাবে সীমিত করে মহিলাদের নিজের শরীর শাসন করার অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে।
যদিও এই সিদ্ধান্তের অর্থ এই নয় যে গর্ভপাত অবিলম্বে সারা দেশে নিষিদ্ধ করা হবে, তবে এটি পৃথক মার্কিন রাজ্যগুলিকে যুক্তিসঙ্গত ভিত্তিতে পর্যালোচনা সাপেক্ষে গর্ভপাত নিয়ন্ত্রণ বা নিষিদ্ধ করার ক্ষমতা দেয়। এর মানে হল যে যদি গর্ভপাত–বিরোধী প্রবিধানগুলিকে সাংবিধানিকভাবে চ্যালেঞ্জ করা হয়, তাহলে ততক্ষণ পর্যন্ত গর্ভপাতের নিষেধাজ্ঞাগুলিকে আইনসঙ্গত বলে ধরে নেওয়া হবে যতক্ষণ আইনসভার বিশ্বাস করার জন্য একটি ‘যৌক্তিক ভিত্তি’ থাকবে যে এই আইনটি তাদের রাজ্যের বৈধ স্বার্থে কাজ করে।
এই সিদ্ধান্তের সবচেয়ে তাৎক্ষণিক পরিণতিগুলির মধ্যে একটি হল যাঁরা গর্ভপাত চাইছেন তাঁদের এখন নিকটতম গর্ভপাত প্রদানকারীর কাছে পৌঁছনোর এবং গর্ভপাতের যত্ন নেওয়ার জন্য উল্লেখযোগ্য দূরত্ব ভ্রমণ করতে হবে।
একটি গবেষণা সংস্থা যারা গর্ভপাতের অধিকারকে সমর্থন করে সেই গাটমাশের ইন্সটিটিউট–এর অনুমান, ২৬টি রাজ্যের আইনসভার গর্ভপাতের অধিকার নিষিদ্ধ বা যথেষ্ট পরিমাণে সীমাবদ্ধ করার সম্ভাবনা রয়েছে৷ এর মধ্যে ১৩টি মার্কিন রাজ্য ইতিমধ্যেই সাম্প্রতিক রায়ের প্রত্যাশায় ‘ট্রিগার আইন’ তৈরি এবং প্রয়োগ করেছে, যা অবিলম্বে বা দ্রুত রাষ্ট্রীয় পদক্ষেপের মাধ্যমে কার্যকর হবে। অতএব এটা বলাই যায় যে সর্বোচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত গর্ভপাত নিষিদ্ধ করার জন্য এমন একটি ভয়ঙ্কর পথ তৈরি করেছে যা সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বৈষম্য শক্তিশালী করতে পারে, এবং স্বাধীন ও সমান নাগরিক হিসাবে নারীদের মর্যাদা ছিনিয়ে নিতে পারে।
একথা মনে রাখাও গুরুত্বপূর্ণ যে এমন জবরদস্তিমূলক গর্ভপাতবিরোধী আইন শুধুমাত্র নারীর অধিকারের বিরুদ্ধেই নয়, বরং অন্যান্য সর্বজনীনভাবে স্বীকৃত অধিকারেরও—যেমন সমতা, স্বাস্থ্যের অধিকার এবং কতজন শিশুর জন্ম দিতে হবে সে বিষয়ে স্বাধীন পছন্দের—বিরুদ্ধে যায়। এই সিদ্ধান্তের সবচেয়ে তাৎক্ষণিক পরিণতিগুলির মধ্যে একটি হল যাঁরা গর্ভপাত চাইছেন তাঁদের এখন নিকটতম গর্ভপাত প্রদানকারীর কাছে পৌঁছনোর এবং গর্ভপাতের যত্ন নেওয়ার জন্য উল্লেখযোগ্য দূরত্ব ভ্রমণ করতে হবে। এই মহিলাদের মধ্যে অনেকে পরিষেবা প্রদানকারীর কাছে পৌঁছতে পারলেও প্রায় এক–চতুর্থাংশ গর্ভবতী মহিলা তা পারবেন না।
ফলস্বরূপ, কিছু মহিলা ওষুধ বা অন্যান্য উপায়ে স্বপরিচালিত গর্ভপাতের পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারেন, যার ফলে ডাক্তারি তত্ত্বাবধান এবং যথাযথ যত্ন ছাড়াই তাঁদের গর্ভ্পাত হবে। এটি উদ্বেগজনক, কারণ অনেকের কাছে গর্ভপাতের ওষুধ সম্পর্কে পর্যাপ্ত তথ্য নেই।
একটি বৈশ্বিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইবিস রিপ্রোডাক্টিভ হেলথ–এর মতে, প্রতি পাঁচজন গর্ভবতীর মধ্যে একজন গর্ভপাতের স্বপরিচালনার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু কেউ কখনও এই উদ্দেশ্যে ওষুধ ব্যবহার করার কথা জানায়নি। পরিবর্তে তাঁরা ‘শারীরিক আঘাত, যোনিতে বস্তু ঢোকানো এবং ক্ষতিকারক পদার্থ খাওয়ার’ মতো বিষয়গুলি রিপোর্ট করেছেন। এই কারণগুলির সংমিশ্রণ এখন মহিলাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যাগুলির বর্ধিত ঝুঁকিতে রাখতে পারে, যা মাতৃমৃত্যুর উচ্চহারের কারণ হতে পারে।
১৪তম সংশোধনীতে বলা হয়েছে যে ‘কোনও রাজ্য এমন কোনও আইন প্রণয়ন বা প্রয়োগ করবে না যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের বিশেষাধিকার বা অনাক্রম্যতাগুলিকে খর্ব করবে; এবং কোনও রাজ্য আইনের যথাযথ প্রক্রিয়া ছাড়া কোনও ব্যক্তিকে জীবন, স্বাধীনতা বা সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করবে না; বা তার এক্তিয়ারের মধ্যে কোনও ব্যক্তিকে আইনের সমান সুরক্ষা অস্বীকার করবে না’।
এছাড়াও, যে রাজ্যগুলি গর্ভপাত নিষিদ্ধ করেছে সেখান থেকে যেহেতু হাজার হাজার মহিলা গর্ভপাতের জন্য সেই রাজ্যগুলিতে চলে যাবেন যেখানে গর্ভপাত এখনও বৈধ, তাই সেখানে স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা মারাত্মকভাবে প্রভাবিত হবে, কারণ সমস্ত পরিষেবা প্রদানকারী এখন চাহিদার বিশাল বৃদ্ধির জন্য প্রস্তুত নয়। সিদ্ধান্তটি তাই সেই হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলির উপর অতিরিক্ত চাপ তৈরি করবে যেগুলি এখনও কোভিড–১৯ অতিমারি–উত্তর পরিস্থিতির সঙ্গে লড়াই করে চলেছে।
এছাড়াও একটি উল্লেখযোগ্য অংশ যাঁরা গর্ভপাত করতে চাইলেও তাঁদের সেই সুযোগ নেই, বিশেষ করে দরিদ্র মহিলারা, তাঁরা পুরো সময়ের জন্য গর্ভধারণ করতে বাধ্য হবেন। এটি তাঁদের আর্থিক পরিস্থিতি নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করে, তাঁদের জন্য সন্তান জন্ম দেওয়ার পরবর্তী জীবনযাত্রার খরচ মেটানো আরও বেশি কঠিন করে তোলে, তাঁদের আরও দারিদ্র্যের দিকে ঠেলে দেয় এবং ছোটখাটো চাকরি নিতে বাধ্য করে, যা তাঁদের সামান্যই নিরাপত্তা দেয়।
কিন্তু নারীর অধিকার এবং স্বাস্থ্যের জন্য নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া ছাড়াও এই পরিবর্তিত পরিস্থিতি মার্কিন বিচার বিভাগ ও গণতন্ত্রের উপর সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলবে। মার্কিন সংবিধান অনুসারে, ১৪তম সংশোধনীতে বলা হয়েছে যে ‘কোনও রাজ্য এমন কোনও আইন প্রণয়ন বা প্রয়োগ করবে না যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের বিশেষাধিকার বা অনাক্রম্যতাগুলিকে খর্ব করবে; এবং কোনও রাজ্য আইনের যথাযথ প্রক্রিয়া ছাড়া কোনও ব্যক্তিকে জীবন, স্বাধীনতা বা সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করবে না; বা তার এক্তিয়ারের মধ্যে কোনও ব্যক্তিকে আইনের সমান সুরক্ষা অস্বীকার করবে না’। এবং এই ১৪তম সংশোধনী তুলে ধরা হয়েছিল মূলত ১৯৭৩ সালে রো বনাম ওয়েড রায়কে ন্যায্যতা দেওয়ার জন্য।
পরবর্তী সময়ে সুপ্রিম কোর্ট ১৪তম সংশোধনী ব্যবহার করেছে অন্যান্য অধিকারকে ন্যায্যতা দেওয়ার জন্য, এবং সেই সঙ্গে রাজ্যগুলিকে এমন আইন প্রয়োগ থেকে বিরত করতে যা একজন ব্যক্তির স্বাধীনতা বা অধিকার লঙ্ঘন করে, যার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত সংবিধানে সরাসরি বলা নেই এমন অধিকারও, যেমন গোপনীয়তার অধিকার। কিন্তু ঘটনা হল, বিচারপতি আলিটো তাঁর বর্তমান রায়ে রো বনাম ওয়েড মামলার রায়কে বাতিল করতে শেষ পর্যন্ত সেই একই সংশোধনী ব্যবহার করেছেন।
বিচারপতি আলিটো প্রকৃতপক্ষে বলেছেন, “সংবিধান গর্ভপাতের কোনও উল্লেখ করে না, এবং এই ধরনের কোনও অধিকার কোনও সাংবিধানিক বিধান দ্বারা নিহিতভাবেও সুরক্ষিত নয়, যার উপর রো এবং কেসির সমর্থকেরা এখন প্রধানত নির্ভর করে সেই চতুর্দশ সংশোধনীর ডিউ প্রসেস ক্লজও নয়। সংবিধানে উল্লেখ করা হয়নি এমন কিছু অধিকারের নিশ্চয়তা দেওয়ার জন্য এই বিধানটি রাখা হয়েছে, তবে এই জাতীয় অধিকার অবশ্যই ‘এই জাতির ইতিহাস এবং ঐতিহ্যের গভীরে প্রোথিত’ হতে হবে এবং আদেশীকৃত স্বাধীনতার ধারণার মধ্যে নিহিত থাকতে হবে… গর্ভপাতের অধিকার এর মধ্যে পড়ে না। বিংশ শতাব্দীর শেষভাগ পর্যন্ত মার্কিন আইনে এই ধরনের অধিকার সম্পূর্ণ অজানা ছিল।”
বিচারপতি আলিটো তাঁর বর্তমান রায়ে রো বনাম ওয়েড মামলার রায়কে বাতিল করতে শেষ পর্যন্ত সেই একই সংশোধনী ব্যবহার করেছেন।
এটি আমাদের স্পষ্টভাবে দেখিয়ে দিয়েছে যে মূলত মার্কিন নাগরিকদের সুরক্ষার জন্য যে সংশোধনীটি আনা হয়েছিল তা কীভাবে দুমড়ে–মুচড়ে, অন্যান্য সম্প্রদায়ের চাহিদা এবং উদ্বেগকে উপেক্ষা করে এবং তাদের সর্বজনীন অধিকার ছিনিয়ে নিয়ে শুধু একটি সম্প্রদায়ের স্বার্থ পরিবেশন করার জন্য রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করা যায়।
এই উদ্বেগের কারণে সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্ত বিশ্বজুড়ে স্বাস্থ্য গবেষক, রাজনীতিবিদ এবং অর্থনীতিবিদদের তরফ থেকে তীব্র সমালোচনার ঝড় তুলেছে। যেহেতু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সবচেয়ে প্রভাবশালী এবং ধনী, তাই সেই দেশ এখন গর্ভপাতের অধিকার প্রত্যাহার করায় অনেক অ্যাক্টিভিস্ট চিন্তিত যে এই রায় তাদের নিজ নিজ দেশে গর্ভপাতকে বৈধকরণের সাম্প্রতিক অগ্রগতিগুলিকে বিপন্ন করতে পারে, এবং এইভাবে তাদের গণতন্ত্রের ভয়ঙ্কর ঘাটতিগুলি তুলে ধরতে পারে। এই সিদ্ধান্তের অন্তর্নিহিত বিষয়গুলি, অতএব, অবিলম্বে বিবেচনা করা প্রয়োজন।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.