-
CENTRES
Progammes & Centres
Location
এখন যখন ডলারের বিপরীতে রুপির মূল্য কমছে, ভারতীয় অর্থনীতিতে তার কী প্রভাব পড়বে?
সাম্প্রতিক সময়ে মার্কিন ডলারের তুলনায় ভারতীয় মুদ্রা ক্রমশ নিম্নগামী হয়েছে। ২০২২ সালের জুলাই মাসে একটি দিনের জন্য রুপি এমনকি ৮০ টাকা প্রতি ডলারের ঐতিহাসিক নিম্নতমও লঙ্ঘন করেছিল। যাই হোক, এই নিম্নমুখী প্রবণতা ঐতিহাসিকভাবে শক্তিশালী ইউরো ও ব্রিটিশ পাউন্ড স্টার্লিং–এর ক্ষেত্রেও লক্ষ্য করা গিয়েছে, যা মার্কিন ডলারের তুলনায় সাম্প্রতিক সময়ে রুপির চেয়ে বেশি দুর্বল হয়েছে। এর থেকে প্ররোচিত একটি সরকারি প্রতিক্রিয়ায় বলা হয় যে রুপি–ডলারের বিনিময় হার একটি বৃহত্তর আন্তর্জাতিক সমন্বয়ের অংশ। এটি কিন্তু ঘটনাটির একটি ভাসা ভাসা ব্যাখ্যা।
অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন সংসদে যখন অবমূল্যায়নের পিছনে রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ এবং তেলের দাম বৃদ্ধির মতো কারণগুলিকে উদ্ধৃত করেছেন, তখন রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার (আর বি আই) গভর্নর বিদেশি পোর্টফোলিও বিনিয়োগকারীদের (এফ পি আই) একযোগে আর্থিক সম্পদ খালাস করা সম্পর্কে কথা বলেছেন। জুলাই ২০২২ পর্যন্ত, এফ পি আই–রা ভারতীয় আর্থিক বাজারে টানা তিন বছর ধরে নেট ইতিবাচক বিনিয়োগের পরে ২৯.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের ভারতীয় ইকুইটি ও ঋণ বিক্রি করেছে।
| চিত্র ১: মে ২০১৪ থেকে মাসিক রুপি–ডলার বিনিময় হারের প্রবণতা |
![]() |
| * ডায়াগ্রামে প্রতিটি ডেটা পয়েন্টে ডলারপ্রতি রুপির দাম ধরা হয়েছে; মাসের শেষ বিনিময় হার বিবেচনা করা হয়েছে। সূত্র: ডেটাবেস অন ইন্ডিয়ান ইকনমি , রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া |
তবে জুলাইয়ের শেষের দিকে ভারতীয় বাজারে এফ পি আই–দের ফিরে আসার লক্ষণ দেখা গিয়েছে। একই মাসে পাইকারি মূল্য সূচকের (ডব্লিউ পি আই) মূল্যস্ফীতির সামান্য হ্রাস অব্যাহত ছিল। তা সত্ত্বেও রুপির অবমূল্যায়নের প্রভাব কাটেনি। তার কারণ এই সাধারণ সত্য যে ডলারের বিপরীতে রুপি ক্রমাগত দুর্বল হয়ে চলেছে, বিশেষ করে ২০১৮ সালের শুরু থেকে (চিত্র ১)।
মুল্যস্ফীতি বৃদ্ধির হার আপাতত থমকে আছে, কিন্তু তা ব্যাপকভাবে কমেনি। জুলাইয়ের ডব্লিউ পি আই মূল্যস্ফীতি ছিল ১৩.৯৩ শতাংশ। জুন মাসে তা ছিল ১৫.১৮ শতাংশ৷ সুতরাং, অর্থনীতিতে দাম উচ্চ স্তরে থাকবে। অতএব, আরবিআই–এর আর্থিক কড়াকড়ি এখন থাকবে। ওদিকে মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অভ্যন্তরীণ সুদের হার বাড়াতে থাকায় আরেকটি এফপিআই পুল–আউটের বাস্তব সম্ভাবনা রয়েছে।
সুতরাং, শীর্ষ ব্যাঙ্ককে একইসঙ্গে এই সমস্ত উদ্বেগগুলির মোকাবিলা করতে হবে, এবং ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। কিন্তু, একযোগে সব সমাধান করা সম্ভব নয়, এবং সে জন্যই একে বলা হয় মুদ্রানীতির ত্রিধা (মানিটরি পলিসি ট্রাইলেমা)।
অর্থনীতিবিদ মাইকেল ক্লেইন একবার এই বিখ্যাত মন্তব্য করেছিলেন: “সরকারগুলি নীতি ত্রিধার সম্মুখীন হয়; বাকিটা ভাষ্য।”
পলিসি ট্রাইলেমা, যাকে অসম্ভব বা অসামঞ্জস্যপূর্ণ ট্রিনিটিও বলা হয়, এ কথাই বলে যে একটি দেশকে মুক্ত পুঁজির গতিশীলতা, বিনিময় হার ব্যবস্থাপনা এবং আর্থিক স্বায়ত্তশাসনের মধ্যে যে কোনও দুটি বিকল্প বেছে নিতে হয় (নিচের চিত্রের তিনটি কোণ)।
![]() |
| সুত্র: দ্য ইকনমিস্ট |
মুক্ত পুঁজির গতিশীলতা আছে এমন একটি দেশ যদি মার্কিন ডলারের সঙ্গে তার বিনিময় হার ঠিক করার পর ফেডারেল রিজার্ভের হারের চেয়ে চড়া সুদের হার নির্ধারণ করে, তাহলে বিদেশি পুঁজি প্রধানত উচ্চ আয়ের সন্ধানে সেখানে প্রবাহিত হবে। উচ্চতর পুঁজির প্রবাহ তখন স্থানীয় মুদ্রার চাহিদা বাড়াবে, এবং অবশেষে স্থানীয় মুদ্রা মূল্যবান হবে, এবং মার্কিন ডলারের সঙ্গে তার গাঁটছড়া ভেঙে দেবে। একইভাবে, যদি সুদের হার ফেডহারের নিচে নির্ধারিত করা হয়, তাহলে মূলধন বেরিয়ে যাবে এবং পরবর্তীতে স্থানীয় মুদ্রার অবমূল্যায়ন হবে। সে ক্ষেত্রেও ডলারের সঙ্গে গাঁটছড়া ভাঙবে।
সুতরাং যেখানে মূলধন প্রবাহের নিয়ন্ত্রণ কার্যত বাস্তবায়িত করা যায় না, যেমন আজকের বিশ্বায়িত আর্থিক পৃথিবীতে, তখন নীতির ট্রাইলেমা দুটি পছন্দের মধ্যে প্রকাশিত হয়: (ক) পরিবর্তনশীল বিনিময় হার ও একটি স্বাধীন মুদ্রানীতি, এবং (খ) স্থির বিনিময় হার ও বৈদেশিক মুদ্রানীতি–নির্ভরতা। ধনী উন্নত দেশগুলি প্রথম বিকল্পটি বেছে নেয়, আবার অন্য কিছু দেশকে (যেমন যেসব দেশ ইউরো গ্রহণ করেছে, তাদের বেশিরভাগ) দ্বিতীয়টি অনুসরণ করতে হয়।
ভারত প্রথম বিকল্পের বন্ধনীতে মানানসই। দেশটির মূলধনের গতিশীলতা, একটি পরিবর্তনশীল বিনিময় হার এবং স্বাধীন মুদ্রানীতি রয়েছে, যা দিয়ে দেশটি অর্থনীতির প্রয়োজন অনুসারে দেশীয় সুদের হার নির্ধারণ করে। যাই হোক, নীতিগত টালবাহানা থেকে গিয়েছে, এবং গত চার বছরে ভারতীয় রুপির অভিজ্ঞতা তার সাক্ষ্য বহন করে। রুপি স্থিতিশীল করার জন্য আরবিআই পর্যায়ক্রমে বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে হস্তক্ষেপ করে, কিন্তু নীতির ট্রাইলেমা একইসঙ্গে বিনিময় হার এবং মুদ্রাস্ফীতি ব্যবস্থাপনার অনুসন্ধানে শীর্ষ ব্যাঙ্কের পায়ের তলার মাটি পিচ্ছিল করে তুলতে বাধ্য।
স্থানীয় মুদ্রার কোনও অবমূল্যায়ন দেশীয় অর্থনীতিতে দুটি বিপরীত প্রভাব ফেলতে পারে। একদিকে আমদানিকৃত পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণে মূল্যস্ফীতি ঘটতে পারে। এর ফলে অভ্যন্তরীণ ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পাবে, এবং পরবর্তীকালে অভ্যন্তরীণ বৃদ্ধি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। অন্যদিকে দ্বিতীয় প্রভাবটি ইতিবাচক হতে পারে, কারণ মুদ্রার অবমূল্যায়ন আন্তর্জাতিক বাজারে রপ্তানিকে সস্তা এবং প্রতিযোগিতামূলক করে তুলতে পারে, এবং দেশীয় বাজারে আমদানি ব্যয়বহুল হতে পারে। এই বিষয়টি তখন নিট রপ্তানি বৃদ্ধির দিকে নিয়ে যেতে পারে (রপ্তানি মাইনাস আমদানি) এবং অভ্যন্তরীণ বৃদ্ধি বাড়াতে পারে।
আমদানিকৃত পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণে মূল্যস্ফীতি ঘটতে পারে। এর ফলে অভ্যন্তরীণ ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পাবে এবং পরবর্তীকালে অভ্যন্তরীণ বৃদ্ধি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
প্রথম প্রভাবটি সাধারণ বিনিময় হার (নমিনাল এক্সচেঞ্জ রেট) দ্বারা নির্ধারিত হয়। দ্বিতীয় প্রভাবটির সঙ্গে প্রকৃত বিনিময় হার (রিয়েল এক্সচেঞ্জ রেট) জড়িত। এই দুটি প্রভাবের মধ্যে কোনটি বেশি শক্তিশালী, তা দিয়ে দেশীয় অর্থনীতি কোন দিকে যাবে তা নির্ধারিত হয়।
| চিত্র ২: জানুয়ারি ২০১৪ থেকে মাসিক নমিনাল এফেকটিভ এক্সচেঞ্জ রেট এবং রিয়েল এফেকটিভ এক্সচেঞ্জ রেট সূচকের প্রবণতা (ভিত্তি: ২০১৫–১৬ = ১০০) |
![]() |
| * নমিনাল এফেকটিভ এক্সচেঞ্জ রেট (এন ই ই আর) সূচকগুলি অনেক প্রাসঙ্গিক বৈদেশিক মুদ্রার ওজনযুক্ত গড়–এর বিপরীতে একটি মুদ্রার মূল্যের পরিমাপ উপস্থাপন করে। এন ই ই আর–কে মূল্যহ্রাস ব্যবস্থা বা খরচের সূচক দিয়ে ভাগ করলে রিয়েল এফেকটিভ এক্সচেঞ্জ রেট (আর ই ই আর) পাওয়া যায়। * ডায়াগ্রামে এন ই ই আর এবং আর ই ই আর সূচকগুলি একটি ৪০–মুদ্রার ঝুড়ির বিপরীতে গণনা করা হয়েছে; উভয়ই ট্রেড–ওয়েটেড সূচক। * সূচকে বৃদ্ধি/হ্রাস রুপির মূল্যবৃদ্ধি/অবমূল্যায়ন নির্দেশ করে। সূত্র: ডেটাবেস অন ইন্ডিয়ান ইকনমি , রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া |
সাধারণত, এন ই ই আর এবং আর ই ই আর একসঙ্গে চলে, যেমনটি ২০১৮ সাল পর্যন্ত চিত্র ২–এ দেখা যায়। যাই হোক, ২০১৯ সাল থেকে রুপির প্রকৃত এবং সাধারণ মূল্যের মধ্যে একটি ক্রমবর্ধমান ভিন্নতা দেখা দিয়েছে। এটি বোঝায় যে যখন রুপির অবমূল্যায়নের নেতিবাচক প্রভাব ভারতীয় অর্থনীতিতে খারাপভাবে আঘাত করবে, তখন রপ্তানির উপর দ্বিতীয় ইতিবাচক প্রভাব থেকে সম্ভাব্য লাভ পাওয়া যাবে না, কারণ রুপির প্রকৃত বিনিময় হার ধারাবাহিকভাবে সাধারণ বিনিময় হারকে ছাড়িয়ে গেছে। এবং এই অতিমূল্যায়িত প্রকৃত বিনিময় হারের কারণে রপ্তানি আয়ের ক্ষেত্রে সামান্যই লাভ হবে বা কোনও লাভ হবে না।
সাম্প্রতিক একটি নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়েছে, এন ই ই আর–এর অবমূল্যায়ন সত্ত্বেও আর ই ই আর–এর অতিমূল্যায়নের এই বিচিত্র ঘটনাটি আন্তর্জাতিক দামের তুলনায় অনেক দ্রুত অভ্যন্তরীণ মূল্যবৃদ্ধির প্রত্যক্ষ ফল। সব কিছুর পরে এ কথা অনস্বীকার্য যে অভ্যন্তরীণ মূল্যস্ফীতি এবং রুপির অবনতির মধ্যে একটি যোগসূত্র রয়েছে।
সাধারণ এবং প্রকৃত বিনিময় হারের এই অস্বাভাবিক প্রবণতার পরিপ্রেক্ষিতে স্বল্পমেয়াদে বাণিজ্য ভারসাম্য বা চলতি খাতে উন্নতির সম্ভাবনা প্রায় নেই। অন্যদিকে, ডলার বিক্রি করে আরবিআই বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে হস্তক্ষেপ অব্যাহত রাখলে মূলধন খাতের অবনতি হতে পারে। উৎপাদন সঙ্কোচনের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না, কারণ আমদানি (বিশেষ করে মূলধনী পণ্য এবং ভারী যন্ত্রপাতি) ব্যাপকভাবে হ্রাস পেতে পারে।
সাম্প্রতিক সুদের হার বৃদ্ধির কারণে বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এই অবস্থায় গার্হস্থ্য উপভোক্তা চাহিদার উপর আর কোনও সঙ্কোচন অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর।
এইভাবে সামগ্রিক চাহিদার উপর বিরূপ প্রভাব পড়বে। যেহেতু আর ই ই আর বাড়ার ফলে রপ্তানি আয়ে কোনও লাভ হবে না, এবং এন ই ই আর অবমূল্যায়ন আমদানিকে ব্যয়বহুল করে তুলবে, তাই তা ঊর্ধ্বমুখী মূল্যস্ফীতির চাপ তৈরি করবে এবং ক্রয়ক্ষমতা হ্রাসের মাধ্যমে দেশীয় অর্থনীতিতে উপভোক্তা চাহিদা কমিয়ে আনবে।
যাই হোক না কেন, সাম্প্রতিক সুদের হার বৃদ্ধির (অভ্যন্তরীণ মূল্যস্ফীতির মোকাবিলায়) কারণে বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। গার্হস্থ্য উপভোক্তা চাহিদার উপর আর কোনও সঙ্কোচন অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর। আগেই ব্যাখ্যা করা হয়েছে, এই সীমাবদ্ধ পরিস্থিতিতে মুদ্রানীতি কার্যত অকার্যকর। অতএব, ভারতীয় অর্থনীতির জন্য এই সন্ধিক্ষণে একটি ক্ষতিপূরণমূলক আর্থিক নীতি অনুসরণ অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
মতামত লেখকের নিজস্ব।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.
Abhijit was Senior Fellow with ORFs Economy and Growth Programme. His main areas of research include macroeconomics and public policy with core research areas in ...
Read More +