Author : Harish Manchanda

Expert Speak Terra Nova
Published on Nov 09, 2022 Updated 12 Days ago

২০৭০ সালের মধ্যে ভারতের নেট–জিরো নির্গমন অর্জনের জন্য কয়লা শক্তির ব্যবহার ধীরে ধীরে সম্পূর্ণ বন্ধ করতে হবে, এবং পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে।

শক্তি ক্ষেত্র: ভারতের নেট–জিরো যাত্রাপথে বিরাট বাধা
শক্তি ক্ষেত্র: ভারতের নেট–জিরো যাত্রাপথে বিরাট বাধা

কপ২৬–এ পাঁচটি অঙ্গীকার করা হয়েছে

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ১ নভেম্বর ২০২১–এ গ্লাসগোয় অনুষ্ঠিত রাষ্ট্রপুঞ্জের ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (ইউ এন এফ সি সি সি)–এর কনফারেন্স অফ দ্য পার্টিজ-এর ২৬তম অধিবেশনে (কপ২৬) ভারতের পাঁচ–দফা কর্মসূচি পেশ করেন, যা ‘পঞ্চামৃত’ নামে পরিচিতি পেয়ে বিখ্যাত হয়েছে। এই প্রতিশ্রুতিগুলি হল সেই সব দৃঢ় পদক্ষেপ যা ভারতকে নেট শূন্য অর্জনের জন্য করতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে:

• ২০৩০ সালের মধ্যে ভারতের অ–জীবাশ্ম শক্তির ক্ষমতা ৫০০ গিগাওয়াটে নিয়ে যাওয়া।
• ২০৩০ সালের মধ্যে দেশের অর্থনীতির কার্বন তীব্রতা ৪৫ শতাংশ কমিয়ে ২০০৫–এর স্তরে আনা।
• ২০৩০ সালের মধ্যে পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির মাধ্যমে দেশের শক্তির চাহিদার ৫০ শতাংশ পূরণ করা।
• ২০৩০ সালের মধ্যে সম্ভাব্য নির্গমনের থেকে ১ বিলিয়ন টন কার্বন নির্গমন হ্রাস করা।
• ২০৭০ সালের মধ্যে নেট–জিরো নির্গমন অর্জন।

উপরের কয়েকটি প্রতিশ্রুতি ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে প্যারিসে অনুষ্ঠিত কপ২১–এ ভারত যে সব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। গত ছয় থেকে সাত বছরে ভারত সচেতনভাবে তার পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি (আর ই) ক্ষমতা বাড়িয়েছে। ২০১৫ সাল থেকে ভারতের সম্মিলিত বায়ু ও সৌরশক্তির উৎপাদন ২.৫ গুণ বেড়েছে। আজ ভারত ইনস্টল করা পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি ও বায়ুশক্তি ক্ষমতার ক্ষেত্রে বিশ্বে চতুর্থ স্থানে এবং সৌরশক্তি ক্ষমতার ক্ষেত্রে পঞ্চম স্থানে আছে।

অ–জীবাশ্ম উৎসের মাধ্যমে ৫০০ গিগাওয়াট শক্তির ক্ষমতা অর্জনের প্রতিশ্রুতি বদলে করা হয়েছে ২০৩০ সালের মধ্যে অ–জীবাশ্ম জ্বালানি উৎসের মাধ্যমে ৫০ শতাংশ ক্রমবর্ধিত বৈদ্যুতিক শক্তি উৎপাদন করার ক্ষমতা অর্জন।

এই উচ্চাভিলাষী লক্ষ্যগুলির মধ্যে কয়েকটি অর্জন করা যাবে না উপলব্ধি করে গত ৩ আগস্ট অনুষ্ঠিত কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে সেগুলির কিছু পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। রাষ্ট্রনির্ধারিত অবদান (এন ডি সি) নামে পরিচিত এই লক্ষ্যগুলি ইউ এন এফ সি সি-তে জমা দেওয়ার জন্য যেভাবে হালনাগাদ করা হয়েছে তা নিচে উল্লেখ করা হল:

• ২০৩০ সালের মধ্যে অ–জীবাশ্ম জ্বালানিভিত্তিক শক্তি সংস্থান থেকে ৫০ শতাংশ ক্রমবর্ধিত বৈদ্যুতিক শক্তি উৎপাদন করার ক্ষমতা অর্জন করা।
• দেশের অর্থনীতির কার্বন তীব্রতা ২০০৫–এর স্তর থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে ৪৫ শতাংশে নামিয়ে আনা।
• ২০৭০ সালের মধ্যে নেট–জিরো নির্গমন অর্জন।

এ থেকে দেখা যাচ্ছে কপ২৬–এ দেওয়া দুটি প্রতিশ্রুতি বাদ পড়েছে। এর মধ্যে আছে পুনর্নবীকরণযোগ্য উৎসের মাধ্যমে ৫০ শতাংশ শক্তির চাহিদা পূরণ করা এবং ২০৩০ সালের মধ্যে দেশের নির্গমনের থেকে ১ বিলিয়ন টন কার্বন নিঃসরণ হ্রাস করা। অ–জীবাশ্ম উৎসের মাধ্যমে ৫০০ গিগাওয়াট শক্তির ক্ষমতা অর্জনের প্রতিশ্রুতি বদলে করা হয়েছে ২০৩০ সালের মধ্যে অ–জীবাশ্ম জ্বালানি উৎসের মাধ্যমে ৫০ শতাংশ ক্রমবর্ধিত বৈদ্যুতিক শক্তি উৎপাদন করার ক্ষমতা অর্জন। এই সংশোধনের পিছনের কারণগুলি বোঝার জন্য ভারতীয় বিদ্যুৎ ক্ষেত্রের বর্তমান এবং ভবিষ্যতের পরিকল্পিত অবস্থান বুঝতে হবে।

ভারতীয় শক্তি ক্ষেত্র: বর্তমান ও ভবিষ্যতের পরিকল্পিত অবস্থান

বৃহৎ জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ পুনর্নবীকরণযোগ্য উৎসগুলির বর্তমান ইনস্টল করা ক্ষমতা ৩০.৬.২০২২ পর্যন্ত ভারতের  শক্তি মন্ত্রকের কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ (সি ই এ) –এর হিসাব অনুযায়ী প্রায় ১৬১ গিগাওয়াট। বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য অ–জীবাশ্ম জ্বালানি উৎসের বর্তমান ক্ষমতা হল ১৬৮ গিগাওয়াট, যা কপ২৬–এ প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ৫০০ গিগাওয়াটে উন্নীত করা প্রয়োজন। ২০১৫ সালে ইউ এন এফ সি সি সি–কে দেওয়া এন ডি সি–র কথা মাথায় রেখে সি ই এ ২০২৯–৩০ সালের সম্ভাব্য সর্বোত্তম বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা নির্ধারণ করেছে। সি ই এ জানুয়ারি ২০২০ সালে প্রকাশিত প্রতিবেদনে অনুমান করেছে যে ২০২৯–৩০ সালে মোট ৮১৭ গিগাওয়াট বিদ্যুতের প্রয়োজন হবে।

২০২৯–৩০ সালে বৃহৎ জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র‌গুলিসহ পুনর্নবীকরণযোগ্য  বিদ্যুতের পরিকল্পিত ক্ষমতা প্রায় ৫০৬ গিগাওয়াট হবে, অর্থাৎ মোট স্থাপিত ক্ষমতার প্রায় ৬২ শতাংশ। ইউ এন এফ সি সি সি–কে দেওয়া লক্ষ্যমাত্রায় ২০৩০ সালের মধ্যে পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির মাধ্যমে তার শক্তির চাহিদার ৫০ শতাংশ পূরণ করার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু নির্দিষ্ট বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ক্ষমতা এবং প্রকৃত উৎপাদনের মধ্যে বড় আকারের পার্থক্য থাকে, যেহেতু বিভিন্ন জ্বালানিভিত্তিক শক্তির উৎস বিদ্যুৎ উৎপাদনে ভিন্ন ভিন্ন ভাবে অবদান রাখে। সৌর ও বায়ু থেকে বিদ্যুৎ চব্বিশ ঘণ্টা নিরবচ্ছিন্ন ভাবে উৎপন্ন করা যায় না, তাই তাপ, পারমাণবিক ও জলবিদ্যুৎ প্ল্যান্টের তুলনায় সৌর ও বায়ুর গড় ক্ষমতা ব্যবহার কম।

তুলনা: বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং পাওয়ার প্লান্টের ক্ষমতা

নিচের সারণিটি ২০২১–২২ এর জন্য তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির উৎসগুলির বিদ্যুৎ উৎপাদনের ইনস্টল করা শক্তির ক্ষমতা ও অবদানের শতাংশ দেখায়। ২০২৯–৩০ সালের জন্য পরিকল্পিত ক্ষমতা এবং পরিকল্পিত বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য একই রকম তুলনা দেওয়া হয়েছে। ২০২১–২২ সালে পুনর্নবীকরণযোগ্য উৎস (সৌর + বায়ু + বায়োমাস + ছোট জলবিদ্যুৎ) থেকে মোট ইনস্টলড ক্ষমতার অংশ ২৭ শতাংশ হলেও বিদ্যুৎ উৎপাদনে তা মাত্র ১২ শতাংশ অবদান রেখেছিল, যেখানে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলির (কয়লা + লিগনাইট + গ্যাস) ক্ষমতা প্রায় ৬০ শতাংশ হলেও একই বছর বিদ্যুৎ উৎপাদনে সেগুলির অবদান ছিল ৭৫ শতাংশ। ২০২৯–৩০ সালের সি ই এ রিপোর্টে পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির অংশ (বড় জলবিদ্যুৎ ব্যতীত) ৪৪৫ গিগাওয়াট হবে বলে অনুমান করা হয়েছে, যা মোট ইনস্টলড ক্ষমতার ৫৫ শতাংশে পৌঁছবে। কিন্তু বিদ্যুৎ উৎপাদনে তা ৩২ শতাংশ অবদান রাখবে, যা কপ২৬–এ দেওয়া প্রতিশ্রুতির থেকে ১৮ শতাংশ কম হবে।

(*): ‌২০২১–২২–এর জন্য ইনস্টল করা ক্ষমতা সি ই এ–র ডিসেম্বর ২০২১ রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে বলা হয়েছে

যদি ভারতকে প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির মাধ্যমে তার শক্তির চাহিদার ৫০ শতাংশ পূরণ করতে হয়, তবে তার জন্য পুনর্নবীকরণযোগ্য উৎসগুলির বিশাল সম্প্রসারণের প্রয়োজন হবে। কয়লা–/গ্যাসভিত্তিক প্ল্যান্টের তুলনায় পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি সস্তা হয়ে উঠলেও সৌর/বায়ুবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলি চব্বিশ ঘণ্টা বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারে না। সৌর/বায়ু শক্তির উৎসগুলির এই ধরনের বিরামবিহীন উৎপাদন ক্ষমতার অভাব পাওয়ার গ্রিডে অস্থিরতা নিয়ে আসে। যখন বিদ্যুৎ উৎপন্ন হচ্ছে না সেই সময় বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য বড় ব্যাটারি স্টোরেজ কার্যকর হতে পারে;‌ কিন্তু এই ধরনের স্টোরেজের জন্য প্রয়োজন বিশাল ব্যবস্থা, যা অর্থনৈতিকভাবে অকার্যকর। বড় জলবিদ্যুৎ ও পারমাণবিক প্রকল্পের প্রাথমিক খরচ বেশি। প্রাকৃতিক গ্যাসচালিত জেনারেটর, যা কয়লাভিত্তিক প্ল্যান্টের তুলনায় ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ কম কার্বন ডাইঅক্সাইড নির্গত করে, তা শক্তি গ্রিডে স্থিতিশীলতা আনার জন্য বায়ু ও সৌরশক্তির একটি নির্ভরযোগ্য ব্যাকআপ হতে পারে। অতএব বিদ্যুৎ উৎপাদনে কয়লার বিকল্প হতে পারে প্রাকৃতিক গ্যাস। ভারতের অভ্যন্তরীণ গ্যাস উৎপাদন প্রয়োজন পূরণের জন্য পর্যাপ্ত নয়, তাই প্রায় ৫০ শতাংশ গ্যাসের ব্যবহার তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (এল এন জি) আমদানির মাধ্যমে পূরণ করা হয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এল এন জি–র দাম ঐতিহাসিকভাবে বেশি, এবং ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের কারণে তা আরও খারাপ হয়েছে। এই সব কারণে বিশ্বব্যাপী এবং বিশেষ করে ইউরোপে আরও  স্পষ্টভাবে কয়লার ব্যবহার পর্যায়ক্রমে কমানোর গতি মন্থর হয়ে পড়েছে। ভারতেও গার্হস্থ্য গ্যাসের প্রাপ্যতার স্বল্পতা এবং এল এন জি–র ব্যয়সাধ্য মূল্য ২৪ গিগাওয়াট গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কম ব্যবহারের কারণ। তাই বিদ্যুৎ উৎপাদনে কয়লা প্রতিস্থাপন করার জন্য, বা বিরতিহীন বায়ু/সৌর বিদ্যুতের ব্যাকআপ দেওয়ার জন্য, এলএনজি/প্রাকৃতিক গ্যাসের মূল্য অবশ্যই সাধ্যের মধ্যে আনতে হবে।

কয়লা বিদ্যুৎ ক্ষেত্র: এখন যা প্রয়োজন

বেস লোড নেওয়া এবং দেশের ক্রমবর্ধমান শক্তির চাহিদা মেটানোর জন্য কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলি স্বাভাবিক পছন্দ হয়ে ওঠে। আরেকটি কারণ হল ভারতে পর্যাপ্ত সস্তা কয়লার প্রাপ্যতা, তুলনামূলক স্বল্প প্রস্তুতিপর্ব, এবং জল বা পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের তুলনায় কম মূলধনী খরচ। সি ই এ ২০২৯–৩০–এর জন্য পরিকল্পিত ক্ষমতার পরিপ্রেক্ষিতে সামগ্রিক উৎপাদনে কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলির অবদান কমিয়েছে, কিন্তু নতুন ৫৬ গিগাওয়াট কয়লাভিত্তিক ক্ষমতা যোগও করা হয়েছে।

প্রাকৃতিক গ্যাসচালিত জেনারেটর, যা কয়লাভিত্তিক প্ল্যান্টের তুলনায় ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ কম কার্বন ডাইঅক্সাইড নির্গত করে, তা শক্তি গ্রিডে স্থিতিশীলতা আনার জন্য বায়ু ও সৌরশক্তির একটি নির্ভরযোগ্য ব্যাকআপ হতে পারে।

কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উপর অত্যধিক নির্ভরতার নিজস্ব ক্ষতিকর দিক রয়েছে, যা ২০২২ সালের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে দেখা গেছে। সেই সময় বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলিতে কয়লার সরবরাহ  গ্রীষ্মের শুরুতে বেড়ে–যাওয়া সর্বোচ্চ চাহিদা মেটানোর জন্য পর্যাপ্ত ছিল না। ভারত বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম কয়লা উৎপাদনকারী ও ভোক্তা। তারা ২০২১–২২ সালে প্রায় ৭৭৩ মিলিয়ন টন কয়লা উৎপাদন করেছে;‌ এবং অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের অপ্রতুলতার কারণে গত কয়েক বছর ধরে ভারত তার কয়লার চাহিদার একটি অংশ আমদানি করে আসছে। ভারত সরকারের মন্ত্রিগোষ্ঠীর তৈরি পঞ্চবার্ষিক ভিশন ডকুমেন্টে (২০১৯–২৪)‌ কয়লার অভ্যন্তরীণ উৎপাদন ২০২৩–২৪ সালে ১,১৪৯ মিলিয়ন টন হবে বলে অনুমান করা হয়েছে, যা ২০১৯ সালে ৭৩০ মিলিয়ন টন ছিল। এই উৎপাদনের প্রায় ৮০ শতাংশ  শুধুই বিদ্যুৎ ক্ষেত্র ব্যবহার করবে।

এ কথা বলা যেতেই পারে যে কয়লাভিত্তিক শক্তির সম্প্রসারণের সঙ্গে পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির জন্য ভারতের প্রদত্ত প্রতিশ্রুতিগুলির কোনও সঙ্গতি নেই। এমনকি ২০২৯–৩০ সালেও, সি ই এ অনুমান অনুসারে, বিদ্যুৎ উৎপাদনের মিশ্রণে কয়লার অংশ প্রায় ৫০ শতাংশে থাকবে, যেখানে পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তিগুলির অংশভাগ ৩২ হবে । তাই, ২০৩০ সালের মধ্যে পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি থেকে তার ৫০ শতাংশ শক্তির চাহিদা অর্জনের লক্ষ্য বাদ দেওয়া ছাড়া ভারতের কাছে কোনও বিকল্প ছিল না।

সি ই এ অনুযায়ী ২০২৯–৩০ সালে মোট ইনস্টল করা বিদ্যুতের ক্ষমতা প্রায় ৮২০ গিগাওয়াট হবে। কপ২৬–এ ঘোষিত পূর্বের লক্ষ্য অনুযায়ী এখন অ–জীবাশ্ম জ্বালানি ক্ষমতা ৫০০ গিগাওয়াটের পরিবর্তে ৫০ শতাংশ অর্থাৎ ৪১০ গিগাওয়াট রাখা হয়েছে, এবং এইভাবে লক্ষ্যমাত্রা ৯০ গিগাওয়াট কমিয়ে আনা হয়েছে। যতক্ষণ জীবাশ্ম জ্বালানির উৎসের জন্য ৫০ শতাংশ ক্ষমতা বজায় থাকে, ততক্ষণ এটি ভারতীয় বিদ্যুৎ ক্ষেত্রকে পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি ক্ষমতা এবং/অথবা তাপশক্তি ক্ষমতা যোগ করার জন্য নমনীয়তা দেবে।

এই জাতীয় প্ল্যান্ট থেকে কার্বন ডাইঅক্সাইড নিঃসরণ কমাতে কার্বন ক্যাপচার অ্যান্ড স্টোরেজ (সি সি এস ) ডিভাইসগুলির উন্নতিসাধন এবং ব্যবহার করা হলে প্রযুক্তিগত হস্তক্ষেপ উপকারী হিসাবে প্রমাণিত হবে।

সামনে পথনেটজিরোর দিকে ভারতের যাত্রা

যদিও সৌর ও বায়ুর তুলনায় তাপশক্তির ক্ষমতা বাড়ানো উপকারী, কিন্তু এটি ২০৭০ সালের মধ্যে নেট–জিরোর দিকে ভারতের যাত্রাকে লাইনচ্যুত করতে পারে। ভারতের কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ ক্ষেত্র দেশটির কার্বন ডাই অক্সাইড–এর বৃহত্তম নির্গমনকারীগুলির মধ্যে একটি; এটি ভারতের গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমনের এক–তৃতীয়াংশ এবং ভারতের জ্বালানি সম্পর্কিত কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমনের প্রায় ৫০ শতাংশের জন্য দায়ী। সাম্প্রতিক অনুমান অনুসারে, ২০৭০ সালের মধ্যে ভারতের নেট–জিরো উচ্চাকাঙ্ক্ষার জন্য তার কয়লা শক্তির ব্যবহার ২০৬০ সালের মধ্যে পর্যায়ক্রমে পুরোপুরি শেষ করতে হবে, এবং এর সৌর ও বায়ু ক্ষমতা বিদ্যমান ১০৯ গিগাওয়াট থেকে ২০৭০ সালের মধ্যে ৭,৪০০ গিগাওয়াটের উপরে নিয়ে যেতে হবে। ভারত সরকারের চালু করা সবুজ হাইড্রোজেন নীতি , যা ২০৩০ সালের মধ্যে বার্ষিক ৫ মিলিয়ন টন গ্রিন হাইড্রোজেন উৎপাদনের পরিকল্পনা করে, তা লাইনচ্যুত হতে পারে কারণ উৎপাদন নির্ভর করে সবুজ শক্তির উপর ।

কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ওপর নির্ভরতা কমাতে ভারতকে দ্রুত পদক্ষেপ করতে হবে। এই জাতীয় প্ল্যান্ট থেকে কার্বন ডাইঅক্সাইড নিঃসরণ কমাতে কার্বন ক্যাপচার অ্যান্ড স্টোরেজ (সি সি এস ) ডিভাইসগুলির উন্নতিসাধন এবং ব্যবহার করা হলে প্রযুক্তিগত হস্তক্ষেপ উপকারী হিসাবে প্রমাণিত হবে। এর জন্য কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন, এবং শুধু সৌর ও বায়ুশক্তিতেই নয়, শক্তি সঞ্চয় করার ক্ষমতা তৈরিতেও বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন। ভারতে বায়ু ও সৌরশক্তির বিস্তার অত্যন্ত অসামঞ্জস্যপূর্ণ, কারণ ১০টি রাজ্যে মোট বিদ্যুতের প্রায় ৯৭ শতাংশের স্থাপনা হয়েছে। তাই ঘাটতি–রাজ্যগুলির উন্নতি করতে হবে। সৌর/বায়ু লক্ষ্যমাত্রা পূরণের জন্য রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বণ্টন সংস্থাগুলির আর্থিক স্বাস্থ্যকেও শক্তিশালী করতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা হল, ভারত নেট জিরো অর্জন করতে পারে শুধু উন্নত দেশগুলির কাছ থেকে রেয়াতি অর্থ ও সাশ্রয়ী প্রযুক্তি পেলে

মতামত লেখকের নিজস্ব।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.