গত এক দশকে অতুলনীয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) উদ্ভাবনের ফলে অগ্রগতি অভূতপূর্ব গতি পেয়েছে। অনেকগুলি অভিনব ও রূপান্তরমূলক ব্যবহারের ক্ষেত্র এখন সামনে উঠে আসছে এবং স্পষ্ট করে দিচ্ছে যে উন্নয়ন পরিকল্পনায় এআই-এর একীকরণ কোনও বিকল্প নয়, বরং অপরিহার্য। এই এলাকাটি অনেকাংশে অনাবিষ্কৃত থেকে গিয়েছে, যা উত্তরের চেয়ে বেশি প্রশ্ন তৈরি করে। যাই হোক, ভবিষ্যৎ উন্নয়নের জন্য নির্দেশক নীতি হিসাবে এগুলির অন্বেষণ অপরিহার্য। একটি সম্ভাব্য সূচনাবিন্দুর মধ্যে উন্নয়নশীল দেশগুলি এআই প্রস্তুতিকে শীর্ষ অ্যাজেন্ডা আইটেম হিসাবে অগ্রাধিকার দিতে পারে কিনা, এবং সম্ভাব্যভাবে, এই দেশগুলি প্রযুক্তিগত বিবর্তনের কিছু বিপর্যয়মূলক পর্যায়কে এড়িয়ে "এআই-প্রথম" দেশে পরিণত হতে পারে কিনা তা খতিয়ে দেখার বিষয়গুলি থাকবে। ইন্টারনেট ও স্মার্টফোনের ব্যাপক ব্যবহারের পরিপ্রেক্ষিতে সম্ভাব্যভাবে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক ও প্রযুক্তিগতভাবে পারদর্শী কর্মশক্তি গঠনের জন্য কি ইচ্ছাকৃতভাবে এআই সরঞ্জামগুলিতে জনতাত্ত্বিক দক্ষতার উপর ফোকাস করা সম্ভব? এই অন্বেষণটি একটি মৌলিক ধারণার মধ্যে নিহিত: উদীয়মান দেশগুলির কি দ্রুত এআই সরঞ্জামগুলিতে দক্ষতা অর্জন করা উচিত?
এআই সক্রিয়তা
এআই এখন একটি স্থায়ী সংবদ্ধতা, এবং তা এমন পরিবর্তন আনছে যা অননুমেয় এবং প্রায়ই বোধগম্যতার অতীত। যাই হোক, এই প্রযুক্তির ইতিবাচক দিকগুলি তুলে ধরা এবং এটিকে সবার অর্থনৈতিক ও উন্নয়ন লক্ষ্যগুলির সঙ্গে একীভূত করার চেষ্টা করা অত্যাবশ্যক৷ এআই-এর স্থায়ী প্রকৃতির পরিপ্রেক্ষিতে, এআই বোঝা এবং কার্যকরভাবে ব্যবহার করার উপর মনোযোগ দেওয়া অপরিহার্য। এআই সরঞ্জাম সম্ভবত প্রয়োজনীয় হতে পারে। এআই সরঞ্জামগুলি সফ্টওয়্যার অ্যাপ্লিকেশন এবং সিস্টেমগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করে, যা ঐতিহ্যগতভাবে মানুষের বুদ্ধিমত্তার প্রয়োজন হয় এমন কাজগুলি সম্পাদন করার জন্য এআই কৌশলগুলিকে নিয়োগ করে। অ্যালগরিদম ও মেশিন লার্নিংয়ের মাধ্যমে এই সরঞ্জামগুলি ডেটা বিশ্লেষণ করে, সিদ্ধান্ত নেয় এবং প্রক্রিয়াগুলি স্বয়ংক্রিয় করে, দক্ষতা বৃদ্ধি করে, এবং সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা রাখে।
এআই সরঞ্জামগুলি সফ্টওয়্যার অ্যাপ্লিকেশন এবং সিস্টেমগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করে, যা ঐতিহ্যগতভাবে মানুষের বুদ্ধিমত্তার প্রয়োজন হয় এমন কাজগুলি সম্পাদন করার জন্য এআই কৌশলগুলিকে নিয়োগ করে।
এর উপর জোর দেওয়া অপরিহার্য যে এআই সরঞ্জাম তৈরি করা শক্তিশালী শিক্ষা এবং পরিকাঠামোর উপর নির্ভর করে। উন্নত দেশগুলি এই দিক থেকে একটি সুবিধা পেতে পারে। যাই হোক, উদীয়মান দেশগুলিকে অবশ্যই এআই এন্টারপ্রাইজ এবং দক্ষতার বিকাশের লক্ষ্যে কাজ করতে হবে, এবং তা একটি সহায়ক শিক্ষামূলক পরিবেশ ও প্রযুক্তিগত পরিকাঠামো প্রতিষ্ঠার সঙ্গে জড়িত। আরও গুরুত্বপূর্ণ, এআই সরঞ্জামগুলিতে দক্ষতা অর্জন উদীয়মান দেশগুলির জন্য একটি অপরিহার্য পূর্বশর্ত। এই সরঞ্জামগুলি আন্তর্জাতিক মাত্রায় বা অভ্যন্তরীণভাবে বিকশিত যা-ই হোক না কেন, তারা প্রযুক্তির মাধ্যমে ব্যবসা শুরু এবং পরিচালনা করার জন্য নন-টেক ব্যক্তিদের ক্ষমতায়নে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মূল নজর থাকছে পুনরায় তৈরি করার প্রয়োজন ব্যতিরেকে বিদ্যমান এআই সরঞ্জামগুলিকে ব্যবসায়িক ক্রিয়াকলাপ সুশৃঙ্খল করার জন্য ব্যবহার করা। এই কৌশলগত পদ্ধতিতে উদীয়মান দেশগুলিকে "এআই-প্রথম" জাতির মর্যাদায় চালিত করার সম্ভাবনা রয়েছে।
একটি "এআই-প্রথম" জাতির ধারণাটি এমন একটি জনসংখ্যাকে কল্পনা করে যার এআই সরঞ্জাম তৈরি করার দক্ষতা ও শিক্ষাগত পটভূমির অভাব থাকতে পারে। সরঞ্জাম তৈরির উপর জোর দেওয়ার পরিবর্তে এখানে লক্ষ্য হল জ্ঞান ও দক্ষতার সঙ্গে একটি জনসংখ্যাকে এমনভাবে উপযুক্ত করে তোলা যাতে ব্যবসা নির্মাণ এবং তাদের স্বতন্ত্র সামাজিক ও অর্থনৈতিক উদ্দেশ্যগুলি অনুসরণ করার জন্য বিদ্যমান এআই সরঞ্জামগুলি কার্যকরভাবে ব্যবহার করা যায়। হাতিয়ার তৈরি থেকে হাতিয়ার ব্যবহারের দিকে এইভাবে নজর ঘোরানোর কারণ উদীয়মান দেশগুলির ক্ষমতায়ন, অর্থনৈতিক বৃদ্ধি, এবং উন্নয়নের জন্য এআই-এর রূপান্তরমূলক সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে সক্ষম করা।
বৃদ্ধির লালন
সামনের পথ চলার জন্য এআই গ্রহণকে উৎসাহিত করার ক্ষেত্রে সরকারের অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করা প্রয়োজন। শিক্ষাব্যবস্থার সমস্ত স্তরে এআই শিক্ষার একীকরণের উপর প্রাথমিক জোর দেওয়া উচিত। অন্বেষণের যোগ্য একটি অতিরিক্ত উপায় হল সরকারি ও বেসরকারি উভয় ধরনের এআই ইনকিউবেটর স্থাপন। এই ইনকিউবেটরগুলি ব্যবসায়িক সহায়তা সংস্থা হিসাবে কাজ করবে, এবং উদ্যোক্তাদের উদ্যোগকে উন্নত করার জন্য এআই এবং অন্যান্য উদীয়মান প্রযুক্তির ব্যবহারে সহায়তা করবে। ব্যবসায়িক ক্রিয়াকলাপে এআই অন্তর্ভুক্ত করার সুবিধাগুলির কথা প্রচার করা অপরিহার্য, যা এই প্রযুক্তিগুলি ব্যবসা পরিচালনার বিভিন্ন দিককে কতটা ইতিবাচকভাবে প্রভাবিত করতে পারে তা তুলে ধরে।
উদীয়মান দেশগুলিকে অবশ্যই এআই এন্টারপ্রাইজ এবং দক্ষতার বিকাশের লক্ষ্যে কাজ করতে হবে, এবং তা একটি সহায়ক শিক্ষামূলক পরিবেশ ও প্রযুক্তিগত পরিকাঠামো প্রতিষ্ঠার সঙ্গে জড়িত।
যাই হোক, এমন অনাবিষ্কৃত এবং এমনকি অপ্রচলিত অথচ পরিচিত পদ্ধতি থাকতে পারে যা উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে। একটি উদ্ভাবনী ও দূরদর্শী প্রস্তাবের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে ডিজিটাল পাবলিক পরিকাঠামো (ডিপিআই)-র মতো সরকার-প্রদত্ত এআই সরঞ্জাম বা পরিষেবাগুলি তৈরি করা। এই পরিষেবাগুলি ব্যক্তি বা ব্যবসার জন্য এআই সরঞ্জামগুলি প্রদান করবে, যা ব্যবসার জন্য এআই-চালিত চ্যাটবট, ইনভেন্টরি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম ও ডেটা বিশ্লেষণ সরঞ্জামগুলির মতো বৈশিষ্ট্যগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করবে। এই ধারণাটি এমন একটি দৃশ্যকল্পের কল্পনা করে যেখানে সরকার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সুবিধাগুলিকে কাজে লাগানোর জন্য সমাজের বিস্তৃত বর্ণালীর ক্ষমতায়ন করে, এবং এআই প্রযুক্তি ব্যবহারের সুযোগকে গণতান্ত্রিক করতে সক্রিয়ভাবে অবদান রাখে।
উদাহরণ হিসেবে ভারতের কথা বিবেচনা করুন। এটা কল্পনা করা যায় যে ইন্ডিয়াস্ট্যাক IndiaStack-এর মাধ্যমে উৎপন্ন বিশাল ডেটা ব্যবহার করে ভারত তার নিজস্ব বড় ভাষা মডেল ( এলএলএম) তৈরি করার সম্ভাবনা রাখে। এই মডেলটি ভারতীয় ভাষা এবং প্রাসঙ্গিক সূক্ষ্মতার জন্য জটিলভাবে তৈরি করা যেতে পারে, কার্যকরভাবে দেশ-নির্দিষ্ট ব্যবহারের ক্ষেত্রে এবং চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে। এই প্রয়াসটি ইন্ডিয়াস্ট্যাক দ্বারা পরিপূরক বা শক্তিশালী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যেখানে এলএলএম-এর এই সেটটি গণ–পরিষেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পায়। এর উদ্দেশ্য হল আধার ও ইউপিআই-এর মাধ্যমে অর্জিত সাফল্যের মতো সমগ্র জনগণের জন্য সুবিধাগুলি প্রসারিত করা। সংক্ষেপে, এটি এআই সরঞ্জামগুলিতে প্রবেশাধিকারকে গণতান্ত্রিক করবে, বিশেষ করে উদ্যোক্তা ও ছোট ব্যবসার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামগুলিকে। এই সরঞ্জামগুলি ডেটা বিশ্লেষণ থেকে শুরু করে চ্যাটবট এবং ব্যক্তিগত সহকারী পর্যন্ত সমস্ত কিছুকে অন্তর্ভুক্ত করতে পারে, এবং নির্দিষ্ট কাজের স্বয়ংক্রিয়তায় সহায়তা করে।
সরকার এআই শিক্ষাকে একীভূত করে, এআই ইনকিউবেটর স্থাপন করে, এবং ডিপিআই-এর মতো উদ্ভাবনী উদ্যোগ বিবেচনা করে এআই গ্রহণের গতিপথকে সক্রিয়ভাবে রূপ দিতে পারে।
এই ধারণার অন্তর্নিহিত যুক্তি অনেকাংশে একই রয়ে গেছে, বিশেষ করে ভারতের মতো দেশে। স্পন্দনশীল স্টার্টআপ বাস্তুতন্ত্র এবং জনসাধারণের জন্য এআই পণ্যগুলি বিকাশে নিযুক্ত সক্রিয় বেসরকারি ক্ষেত্রের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের পক্ষে হস্তক্ষেপ করা এবং তার নাগরিকদের জন্য অনুরূপ পণ্য উৎপাদন করা সম্পূর্ণরূপে অনুমেয়। এই পদ্ধতিটি ইউপিআই-এর মতো সফল উদ্যোগগুলির সঙ্গে সারিবদ্ধ, এবং এটি চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ এবং সুযোগগুলির জন্য বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশকে প্রস্তুত করার জন্য সরকারের ক্ষমতা প্রদর্শন করে। সরকার এআই শিক্ষাকে একীভূত করে, এআই ইনকিউবেটর স্থাপন করে, এবং ডিপিআই-এর মতো উদ্ভাবনী উদ্যোগ বিবেচনা করে এআই গ্রহণের গতিপথকে সক্রিয়ভাবে রূপ দিতে পারে। এই কৌশলগত পদক্ষেপগুলি সম্মিলিতভাবে এআই-এর সুযোগের গণতন্ত্রীকরণ, উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করা এবং ব্যবসাগুলিকে প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত ভবিষ্যতের দিকে চালিত করার দিকে কাজ করে।
আগামী-ভবিষ্যৎ উদ্যোগ
উদীয়মান প্রযুক্তির প্রভাব ব্যাপক হবে, যা উন্নত ও উন্নয়নশীল উভয় দেশকেই প্রভাবিত করবে। একটি সম্ভাবনা রয়েছে যে উদীয়মান বাজার এবং উন্নয়নশীল অর্থনীতিগুলি এআই থেকে কম তাৎক্ষণিক ব্যাঘাত অনুভব করতে পারে। যাই হোক, এই দেশগুলিতে প্রায়শই এআই-এর সুবিধাগুলি সম্পূর্ণরূপে কাজে লাগানোর জন্য প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো এবং দক্ষ কর্মীর অভাব থাকে, এবং তা একটি ঝুঁকি তৈরি করে যে সময়ের সঙ্গেসঙ্গে প্রযুক্তিটি দেশগুলির মধ্যে বৈশ্বিক বৈষম্যকে বাড়িয়ে তুলতে পারে।
সরকারগুলির এখনই সক্রিয় পদক্ষেপ করা উচিত, এবং বৈষম্য বৃদ্ধির আগে তাদের নাগরিকদের এআই সরঞ্জামগুলিতে দক্ষতা অর্জনে সহায়তা করার দিকে মনোনিবেশ করা উচিত, বিশেষ করে উদীয়মান অর্থনীতিতে, যেগুলি আরও বেশি ঝুঁকির সম্মুখীন হয়৷ উদাহরণস্বরূপ, বৃদ্ধির জন্য এমএসএমই-র উপর তাদের যথেষ্ট নির্ভরতা বিবেচনা করুন। ইন্টারনেট অনুপ্রবেশের উন্নতির সঙ্গে এমএসএমই-গুলি কি ব্যবসায়িক কার্যকলাপের জন্য তার শক্তি ব্যবহার করতে পারে? আরও এক ধাপ এগিয়ে, এআই কি এই ব্যবসাগুলিকে স্বয়ংক্রিয় বা সহায়তা করতে অবদান রাখতে পারে? এই দৃশ্যটি শুধুমাত্র একটি সম্ভাব্য উদাহরণ উপস্থাপন করে, যদিও তা কিছুটা ভবিষ্যৎমুখী। এআই নিঃসন্দেহে সমস্ত ক্ষেত্রজুড়ে বিরাট পরিবর্তন ঘটাচ্ছে। যাই হোক, এআই-কে একটি গঠনমূলক শক্তি হিসাবে দেখার জন্য ইতিবাচক রূপান্তরের সম্ভাবনার উপর নজর রেখে আখ্যানের পরিবর্তন প্রয়োজন।
সৌরদীপ বাগ অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের অ্যাসেসিয়েট ফেলো
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.