Expert Speak Terra Nova
Published on Oct 21, 2022 Updated 8 Days ago

২০৩২ সালে নবায়নযোগ্য শক্তি ও পারমাণবিক শক্তি উৎপাদন ক্ষমতা খুব দ্রুত বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ভারতে বিদ্যুৎ উৎপাদনে জ্বালানি মিশ্রণ: বর্তমান ও ভবিষ্যৎ
ভারতে বিদ্যুৎ উৎপাদনে জ্বালানি মিশ্রণ: বর্তমান ও ভবিষ্যৎ

এই নিবন্ধটি কম্প্রিহেনসিভ এনার্জি মনিটর: ভারত এবং বিশ্ব সিরিজের অংশ


বর্তমান অবস্থা: ক্ষমতা ও উৎপাদন

সি ই এ (কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ)-র খসড়া জাতীয় বিদ্যুৎ পরিকল্পনা, যা জনসাধারণের মতামতের জন্য সেপ্টেম্বর ২০২২ (এন ই পি ২০২২)-এ প্রকাশিত হয়েছে, তাতে ২০১৭-২২ সালের ঘটনাবলির পর্যালোচনা করা হয়েছে, আর সেই সঙ্গেই ২০২২-২৭ এর জন্য উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধির বিস্তারিত পরিকল্পনা এবং ২০২৭-২০৩২-এর জন্য অনুমান দেওয়া হয়েছে। ২০১৭-২২ সালে উৎপাদন ক্ষমতা সংযোজিত হয় ৩০,৬৬৭ মেগাওয়াট, যা পরিকল্পিত ৫১,৫৬১ মেগাওয়াট সংযোজনের থেকে ৪০ শতাংশ কম। ক্ষমতা সংযোজনে ঘাটতির প্রাথমিক কারণ ছিল অতিমারির কারণে লকডাউন। ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২২ পর্যন্ত মোট উৎপাদন ক্ষমতা দাঁড়িয়েছে ৪০৪,১৩২.৯৬ মেগাওয়াট, যার মধ্যে কয়লা ব্যবহার করে তাপবিদ্যুতের অবদান ২১০,৬৯৯.৫ মেগাওয়াট বা ৫২.১৪ শতাংশ, জলবিদ্যুতের অবদান ৪৬,৮৫০.১৭ মেগাওয়াট বা মোট ক্ষমতার ১১.৫ শতাংশ, প্রাকৃতিক গ্যাসের অবদান ২৪,৮৫৬.২১ বা মোট ক্ষমতার মাত্র ৬ শতাংশের সামান্য বেশি, এবং পারমাণবিক শক্তির অবদান ৬৭৮০ মেগাওয়াট বা বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতার ১.৬ শতাংশের সমান। নবায়নযোগ্য শক্তির (সৌর, বায়ু, বায়োমাস ও অন্যান্য নতুন পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির উৎস) অবদান ছিল ১১৪,৪৩৭.‌৩৭ মেগাওয়াট (জুলাই ২০২২) বা ২৮.‌৩ শতাংশ, যা কয়লার পরে দ্বিতীয় বৃহত্তম। কয়লা ও প্রাকৃতিক গ্যাস ২০২১-২২ সালে ১১১৪.৭ টেরাওয়াট ঘণ্টা (টি ডবলিউ এইচ) বা ৭৪ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছে, আর তারপরে ছিল নবায়নযোগ্য শক্তি, যা ১৭৮.‌৩৪ টি ডবলিউ এইচ বা ১১.৯ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছে। জলবিদ্যুৎ ১৫৪.৬৪ টি ডবলিউ এইচ বা ১০.৩৬ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদনে অবদান রেখেছে, আর পারমাণবিক শক্তি ৪৭.১১০ টি ডবলিউ এইচ বা ৩.১৫ শতাংশ।

সূত্র:‌ ড্রাফ্ট ন্যাশনাল ইলেকট্রিসিটি প্ল্যান

২০২৭ সালের জ্বালানি মিশ্রণের পরিকল্পনা

এন ই পি ২০২২ যে ছবি তুলে ধরেছে সেই অনুযায়ী ২০২৭ সালের মধ্যে এখনকার নির্মীয়মান যে সব প্রকল্পে উৎপাদন শুরু হয়ে যাবে, তার মধ্যে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা হল ২৫,৫৮০ মেগাওয়াট এবং গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ৩৭০ মেগাওয়াট। এর অর্থ হল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২৩৬,২৭৯.৫ মেগাওয়াটে বৃদ্ধি পাবে, কিন্তু তারপরেও তা মোট উৎপাদনের ৩৭.৯ শতাংশে নেমে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। ৩৭০ মেগাওয়াট ক্ষমতা সংযোজনের পর বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রাকৃতিক গ্যাসের অংশ সামান্য বৃদ্ধি পেয়ে ৬.২ শতাংশ হবে। যদিও ১০,৯০৩ মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ ক্ষমতা যুক্ত হবে বলে আশা করা হচ্ছে, তা হলেও ২০২৭ সালের মধ্যে জলবিদ্যুতের অংশ ৯.২ শতাংশে নেমে আসবে। প্রায় ১৫৮০ মেগাওয়াট পাম্প করা জলবিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২০২৭ সালের মধ্যে চালু হয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে, এবং পারমাণবিক শক্তি ৭০০০ মেগাওয়াট যোগ করায় তার অংশ দ্বিগুণ হবে, যার ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতায় এর অংশ ২.২ শতাংশে উন্নীত হবে। নবায়নযোগ্য শক্তি ১৮৭,৯০৯ মেগাওয়াট ক্ষমতা যোগ করবে, এবং তার মধ্যে সৌর (‌১৩২,০৮০ মেগাওয়াট)‌ সবচেয়ে বেশি অবদান রাখবে, আর তারপরে থাকবে বায়ুশক্তি (৪০,‌৫০০ মেগাওয়াট)‌। বায়োমাস–ভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন ২৩১৮ মেগাওয়াট এবং পাম্প করা স্টোরেজ ২৭০০ মেগাওয়াট অবদান রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী এগনো সম্ভব হলে ২০২৭ সালের মধ্যে ৩০২,৩৪৬ মেগাওয়াট বা ৪৮.৫ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতার দৌলতে নবায়নযোগ্য শক্তির সামগ্রিক অংশ কয়লার চেয়ে বেশি হবে। উৎপাদনের পরিপ্রেক্ষিত থেকে কয়লা ১১৫৮ টি ডবলিউ এইচ বা ৫৮.৮ শতাংশ উৎপাদন করবে এবং সর্ববৃহৎ জায়গায় থাকবে। নবায়নযোগ্য শক্তি প্রত্যাশিত ৫০৩ টি ডবলিউ এইচ উৎপাদন করতে পারলে ২০২৭ সালের মধ্যে তা মোট উৎপাদনের ২৬.৪ শতাংশ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাসের অংশ ৩৫ টি ডবলিউ এইচ বা মাত্র ১.৭ শতাংশে প্রান্তিক অবস্থায় থাকবে, এবং পারমাণবিক উৎপাদনের অংশ ৮২ টি ডবলিউ এইচ বৃদ্ধি পেয়ে হবে ৪.১ শতাংশ। ১৮৯ টি ডবলিউ এইচ উৎপাদনের ফলে জলবিদ্যুতের ভাগ সামান্য কমে ৯.৬ শতাংশে নামবে বলে আশা করা হচ্ছে।

২০৩২ সালের জ্বালানি মিশ্রণের পরিকল্পনা

মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২০২৭ সালের ৬২২,৮৯৯ মেগাওয়াট থেকে ২০৩২ সালের মধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশ বেড়ে ৮৬৫,৯৪১ মেগাওয়াটে উন্নীত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এর মধ্যে ২১৪,০২০ মেগাওয়াটের বৃহত্তম ক্ষমতা সংযোজন আসার কথা নবায়নযোগ্য শক্তি থেকে, যার প্রায় ৬৯ শতাংশ হবে সৌর ফোটোভলটাইক্স (পি ভি)। ২০৩২ সালের মধ্যে প্রায় ১০,০০০ মেগাওয়াট অফশোর বায়ু বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়ে যাবে বলেও আশা করা হচ্ছে। সামগ্রিকভাবে, অনুমান করা হয়েছে ২০৩২ সাল নাগাদ ৫১৬,৩৬১ মেগাওয়াট  বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতার প্রায় ৬০ শতাংশ নবায়নযোগ্য শক্তি থেকে আসবে। কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতার অংশ ২০২৭ সালের প্রায় ৩৭ শতাংশ থেকে ২০৩২ সালে ২৮.৩ শতাংশে নেমে আসার কথা৷ ২০২৭ সালের পরে কোনও অতিরিক্ত গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা প্রত্যাশিত নয়, এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রাকৃতিক গ্যাসের অংশ হ্রাস পেয়ে ২০৩২ সালের মধ্যে মাত্র ২.৯ শতাংশে নেমে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে৷ ৬৮,৬৪১.১৭ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতায় জলবিদ্যুতের অংশ ২০৩২-এ ৭.৯ শতাংশে নেমে আসবে বলে মনে করা হচ্ছে, যেখানে ২০২৭ সালের অনুমিত অংশ ৯.৬। পারমাণবিক বিদ্যুতের ক্ষেত্রে ২০৩২ সালের মধ্যে ৮০০০ মেগাওয়াটের অতিরিক্ত ক্ষমতা যুক্ত হওয়ার কথা। তা হলে পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২২,৪৮০ মেগাওয়াটে বৃদ্ধি পাবে এবং মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতায় এর অংশ ২.৫ শতাংশে (২০২৭ সালের ২.২ শতাংশ থেকে) উন্নীত হবে । ২০৩২ সালের মধ্যে মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন ৮৬৫,৯৪১ টি ডবলিউ এইচ-এ উন্নীত হবে বলে আশা করা হচ্ছে, যার মধ্যে কয়লা ১৩৩৩.৮ টি ডবলিউ এইচ বা প্রায় ৫০ শতাংশের কারণে সবচেয়ে বড় অংশ হিসাবে থেকে যাবে। নবায়নযোগ্য শক্তি মোট উৎপাদনের ৩৪.৮ শতাংশের সমান হবে এবং ৯৩৮ টি ডবলিউ এইচ  স্পর্শ করবে বলে অনুমান। ২০৩২ সালে ২৩১.৮ টি ডবলিউ এইচ জলবিদ্যুৎ মোট উৎপাদনের ৮.৭ শতাংশ হবে আর পারমাণবিক জেনারেটর থেকে ১৩৪ টি ডবলিউ এইচ শক্তি উৎপাদন মোট উৎপাদনের ৫ শতাংশে উন্নীত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

চ্যালেঞ্জ

বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতার জন্য খসড়া এন ই পি ২০২২-এর অনুমানগুলি ২০৩০ সালের মধ্যে ৫০০ গিগাওয়াট অ‌-জীবাশ্ম জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা স্থাপনের লক্ষ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এন ই পি ২০২২-এর অনুমান অনুসারে, ২০২২-২০৩২ সালের মধ্যে সামগ্রিক বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি ১১৪ শতাংশের বেশি হবে। এই সময়ের মধ্যে নবায়নযোগ্য শক্তি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ৩৫১ শতাংশের বেশি, পারমাণবিক ২৩০ শতাংশের বেশি, জলবিদ্যুৎ ৪৬ শতাংশের বেশি, কয়লা ১৬ শতাংশের বেশি এবং গ্যাস মাত্র ১.৫ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। যদিও কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতার গতি ধীরে হয়ে যাবে, তা হলেও ২০৩২ সালেও কিন্তু বিদ্যুৎ উৎপাদনে সবচেয়ে বেশি অবদান রাখতে থাকবে কয়লা। এটি সম্ভব হবে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পি এল এফ (প্ল্যান্ট লোড ফ্যাক্টর) ২০২৬-২৭ সালের ৫৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২০৩১-৩২ সালে ৬২ শতাংশের বেশি করার ফলে। বিদ্যুৎ উৎপাদন থেকে মোট কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গমন ২০২০-২১ সালের ৯১০ এম টি (মিলিয়ন টন) থেকে ২০৩১-৩২ সালের মধ্যে প্রায় ৩০ শতাংশ বেড়ে ১১৮০ এম টি হবে বলে মনে করা হচ্ছে, যদিও এটাই প্রত্যাশিত যে বিদ্যুৎ উৎপাদন থেকে নির্গমন ফ্যাক্টর ০.৪৪১ কেজি (কিলোগ্রাম)/কে ডবলিউ এইচ (কিলোওয়াট ঘণ্টা)-এ নেমে যাবে। ২০৩০ সালের মধ্যে অ-জীবাশ্ম জ্বালানিভিত্তিক ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং তার ফলে নির্গমন ফ্যাক্টর হ্রাস নির্ভর করছে মূলত নবায়নযোগ্য শক্তিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের, এবং কিছুটা কম পরিমাণে হলেও পারমাণবিক শক্তি উৎপাদনের বৃদ্ধির উপর। নবায়নযোগ্য শক্তির জন্য অভূতপূর্ব মাত্রায় আর্থিক সম্পদের পাশাপাশি প্রাকৃতিক সম্পদ, যেমন জমি ও খনিজের প্রয়োজন হবে। নীতির ক্ষেত্রে মূল চ্যালেঞ্জ হবে আর্থিক ও প্রাকৃতিক সম্পদের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা, নবায়নযোগ্য শক্তি থেকে জিরো মারজিনাল কস্ট পাওয়ার-এর সঙ্গে মানিয়ে নিতে বাজারকে নতুনভাবে ডিজাইন করা, এবং শক্তি নিরাপত্তা জোরদার করার জন্য ব্যাটারি ও অন্যান্য ধরনের এনার্জি স্টোরেজ উপকরণে বিনিয়োগ করা।

সূত্র:‌ ড্রাফ্ট ন্যাশনাল ইলেকট্রিসিটি প্ল্যান

মতামত লেখকের নিজস্ব।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.

Authors

Akhilesh Sati

Akhilesh Sati

Akhilesh Sati is a Programme Manager working under ORFs Energy Initiative for more than fifteen years. With Statistics as academic background his core area of ...

Read More +
Lydia Powell

Lydia Powell

Ms Powell has been with the ORF Centre for Resources Management for over eight years working on policy issues in Energy and Climate Change. Her ...

Read More +
Vinod Kumar Tomar

Vinod Kumar Tomar

Vinod Kumar, Assistant Manager, Energy and Climate Change Content Development of the Energy News Monitor Energy and Climate Change. Member of the Energy News Monitor production ...

Read More +