Author : Kabir Taneja

Published on Apr 10, 2024 Updated 0 Hours ago
গাজা থেকে হুতি: পশ্চিম এশিয়ার সংঘর্ষের চাপানউতোর বৃদ্ধির মূল্যায়ন

২০১৫ সালে উপসাগরীয় অঞ্চলের দরিদ্রতম দেশ ইয়েমেন সংঘাতের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছিল যখন এক দিকে সৌদি আরব এবং অন্য দিকে ইরান একে অপরের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছিল। এই সময়ে নয়াদিল্লি ইয়েমেনে আটকে পড়া ভারতীয় নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে অপারেশন রাহাত চালু করেছিল। রাজধানী সানার বিপর্যস্ত বিমানবন্দরে প্রবেশাধিকার অর্জনের জন্য ভারতীয় কূটনীতি রিয়া তেহরানের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে ভারতীয় বিমানের অবতরণ নিরাপদে রওনা হওয়ার জন্য আক্রমণাত্মক প্রতিরোধ স্থগিত রাখার মধ্যস্থতায় আসে। সৌদি বিমান অভিযান ইয়েমেনে হুতি মিলিশিয়া উভয়ই এই স্থানান্তরের জন্য অনুমতি দিয়েছে এবং তা মধ্যপ্রাচ্যের (পশ্চিম এশিয়া) বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে ভারতীয় কূটনীতির সম্পৃক্ততাকেই দর্শায়।

 

এই অঞ্চলের বর্তমান সঙ্কট অর্থাৎ ৭ অক্টোবর ইরায়েলের বিরুদ্ধে হামাসের সন্ত্রাসবাদী হামলা থেকে লেবানন, সিরিয়ার মতো অন্যান্য অঞ্চলে (এখনও নিয়ন্ত্রিত) সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ার পরিণতি থেকে শুরু করে বর্তমানে গুরুত্বপূর্ণ লোহিত সাগরে সংঘর্ষের ঘটনা বিশ্বকে সতর্ক হতে বাধ্য করেছে

 

তার পর থেকে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। এই অঞ্চলের বর্তমান সঙ্কট অর্থাৎ ৭ অক্টোবর ইরায়েলের বিরুদ্ধে হামাসের সন্ত্রাসবাদী হামলা থেকে লেবানন, সিরিয়ার মতো অন্যান্য অঞ্চলে (এখনও নিয়ন্ত্রিত) সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ার পরিণতি থেকে শুরু করে বর্তমানে গুরুত্বপূর্ণ লোহিত সাগরে সংঘর্ষের ঘটনা বিশ্বকে সতর্ক হতে বাধ্য করেছে৭ অক্টোবরের কাছাকাছি সময়ে ইয়েমেন থেকে ইরানের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত একটি বিরাজমান শিয়া-জায়েদি মিলিশিয়া, যারা আবার আনুষ্ঠানিক ভাবে আনসার আল্লাহ নামেপরিচিত অর্থাৎ সেই হুতিরা ঘোষণা করে যে, তারা প্রধানত সুন্নি-ইসলাম জনসংখ্যাবিশিষ্ট প্যালেস্তাইনিদের সাহায্য করার জন্য গাজা সংঘাতে অংশগ্রহণ করবে। তার পর থেকে গোষ্ঠীটি নিয়মিতভাবে লোহিত সাগরের মধ্য দিয়ে সুয়েজ খালের দিকে যাতায়াতকারী বাণিজ্যিক জাহাজগুলির উপর আক্রমণ চালিয়েছে এবং সরাসরি পশ্চিমী সামরিক সম্পদ, বিশেষ করে ইরাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সৈন্যদের লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। মোদ্দা কথা, জঙ্গি গোষ্ঠীটি এমন একটি যুদ্ধে যোগ দিয়েছে, যেটি ভৌগোলিক ভাবে তাদের থেকে ২২০০ কিলোমিটার দূরে চলছে২০২১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক একটি সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীতালিকা থেকে হুতিরা ছাড় পাওয়ার পর প্যালেস্তাইনের যুদ্ধ এই জঙ্গি দলটির নিজস্ব কৌশলগত আদর্শগত লক্ষ্যের জন্য এক সুবর্ণ সুযোগ।

রায়েল এবং হামাসের মধ্যে যুদ্ধের প্রধান উদ্বেগের মধ্যে অন্যতম - যা গত তিন মাসে প্রচুর ধ্বংস এবং মৃত্যুর সাক্ষী থেকেছে - হল এই যে, এটি এমন একটি অঞ্চল জুড়ে অপরিসীম প্রভাব ফেলেছে, যেখানে অনেক আরব রাষ্ট্র বর্তমানে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির দিকে মনোনিবেশ করতে চাইলেও অঞ্চলটির চিরাচরিত চরিত্র সেই প্রচেষ্টার পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। যাই হোক, এই চ্যুতি রেখাগুলিকে উপেক্ষা করা এবং অর্থনৈতিক রূপান্তরের দিকে মনোনিবেশ করা সর্বদা একটি বৃহৎ সমস্যা নিরসনে যৎসামান্য উদ্যোগ হয়েই রয়ে গিয়েছে, যেমনটা অক্টোবর পরবর্তী সময়ে ঘটা নানাবিধ ঘটনায় আরও স্পষ্ট হয়েছে। সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরশাহির (ইউএই) মতো আঞ্চলিক বৃহৎ শক্তিগুলি হামাসের পতনে আগ্রহী হলেও যে কোনও বিকল্প রাজনৈতিক পরিকল্পনার অভাব হামাসকে একই রকম বা তার চেয়েও খারাপ গোষ্ঠী দ্বারা প্রতিস্থাপিত করবে।

বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি কেমন হবে, সে বিষয়ে স্পষ্টতার অভাব রয়েছে। এই ব্লু প্রিন্ট বা নীল নকশার অভাব কেবল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মুখাপেক্ষী হওয়ার দরুনই হয়নি, বরং এর নেপথ্যে রয়েছে আরব বিশ্বও, যারা সর্বদা এই অঞ্চলের ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতার উপর গভীর সমতা এবং বর্তমানে কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন বজায় রাখতে চায়। হামাসের বিরুদ্ধে গাজায় যুদ্ধ অব্যাহত রয়েছে, যদিও ইরায়েলের হামলার সংখ্যা দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে। যাই হোক, রায়েল বা ইয়েমেনের হুতি, লেবাননের হিজবুল্লাহ, ইরাকের কাতাইব হিজবুল্লাহ এবং অন্যদের মধ্যে গাজায় হামাসের দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্যগুলি কী এবং অঞ্চলব্যাপী সংঘাত প্রতিরোধে এই সব দলের কী বিকল্প হতে পারে, সে বিষয়ে ন্যূনতম স্পষ্টতা নেই।

 

হামাসের বিরুদ্ধে গাজায় যুদ্ধ অব্যাহত রয়েছে, যদিও ইরায়েলের হামলার সংখ্যা দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে।

 

এর ফলে এই অঞ্চলে সংঘর্ষের চাপানউতোর দৃঢ় ভাবে ইরান এবং তার প্রক্সিদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এ সব সত্ত্বেও তেহরান গত এক দশকে তার কৌশলগত লক্ষ্যে সফল হয়েছে। ইরানের সরকার, বিশেষ করে ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পোরেশন (আইআরজিসি) কোন বাধা ছাড়াই তাদের প্রক্সি নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ করতে সক্ষম হয়েছে। ইরাক এবং আফগানিস্তান উভয় দেশ থেকে ক্লান্ত মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহারের পর বিদেশি হস্তক্ষেপবাদের সম্ভাবনা ক্ষীণ এবং সমাধান না হলেও, ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে প্রতিটি রাজনৈতিক বিভাজন অভ্যন্তরীণ ভাবে এই প্রসঙ্গে একটি কার্যকর পথ হতে পারে।

যাই হোক, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আর একটি সমস্যা হল এই যে, এটি একটি অঞ্চল-ব্যাপী সংঘাতের সম্ভাবনার ক্ষেত্রে উল্লিখিত চাপানউতোর নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ। রায়েলের সামরিক অভিযানের নেপথ্যে সম্পূর্ণ রূপে সমর্থন জোগানোর জন্য প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বর্তমানে ব্যাপক ভাবে সমালোচিত হলেও - সেই সমালোচনার কিছু অংশ সত্যি হলেও – মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা অংশীদারিত্বের সত্যতা নিয়ে আন্তর্জাতিক পরিসরে তাঁর ক্ষুণ্ণ হওয়া ভাবমূর্তি শুধু মাত্র মধ্যপ্রাচ্যের জন্যই নয়, বরং একই সঙ্গে শিয়া ও তার ঊর্ধ্বে উঠে বৃহত্তর মার্কিন-চিন প্রতিযোগিতার নিরিখেও বিপর্যয়কর। এই উদ্বেগগুলি একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনী বছরে বাইডেনের নেতৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করেছে, যেখানে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রত্যাবর্তনের চেষ্টা করার দরুন ইতিমধ্যেই বাইডেন টালমাটাল পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছেন।

ইয়েমেনে হুতিদের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক বিমান হামলা ঘটনা বৃহত্তর ইরায়েল-হামাস সংঘাতের মধ্যে এই মাইক্রো-ওয়ার বা ছোট আকারের যুদ্ধগুলির ভবিষ্যৎ সম্পর্কে নানাবিধ সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছেমার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ব্রিটেনের নেতৃত্বে এই বিমান হামলা চালানো হয়েছে এবং ওয়াশিংটন এই অঞ্চলে বাণিজ্যিক জাহাজগুলিকে সুরক্ষা জোগানোর জন্য দেশগুলির একটি কনসোর্টিয়াম অপারেশন প্রসপারিট গার্ডিয়ানকে সমন্বিত করার কয়েক দিনের মধ্যে এমনটা ঘটেছে। ব্রিটিশ বিদেশ সচিব ডেভিড ক্যামেরন হুতিদের কাছে এই বিমান হামলাকে এক স্পষ্ট দ্ব্যর্থহীন বার্তা বলে অভিহিত করেছেন জঙ্গিগোষ্ঠীগুলিকে সম্পূর্ণ রূপে প্রতিহত না করে এক মৌলিক ও কৌশলগত আঘাত দেওয়ার সমালোচনার প্রত্যুত্তর বলেই মনে করা যেতে পারে এই হামলাকে। ইয়েমেনের জনসংখ্যার মধ্যে হুতিরা অজনপ্রিয় বলে পরিচিত। যাই হোক, তারা প্যালেস্তাইনিদের সমর্থনে তাদের কৌশলগত এবং শুধু মাত্র রাজনৈতিক সংহতিকে ব্যবহার করে অভ্যন্তরীণ ভাবে সমর্থন জোগাড় করার চেষ্টা চালাচ্ছে, যেখানে গাজার বিরুদ্ধে ইরায়েলি অভিযান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইরায়েলের বিরুদ্ধে জনমতকে তীব্র ভাবে গড়ে তুলতে সাহায্য করেছে।

 

ব্রিটিশ বিদেশ সচিব ডেভিড ক্যামেরন হুতিদের কাছে এই বিমান হামলাকে এক স্পষ্ট দ্ব্যর্থহীন বার্তা বলে অভিহিত করেছেন। জঙ্গিগোষ্ঠীগুলিকে সম্পূর্ণ রূপে প্রতিহত না করে এক মৌলিক ও কৌশলগত আঘাত দেওয়ার সমালোচনার প্রত্যুত্তর বলেই মনে করা যেতে পারে এই হামলাকে।

 

সর্বোপরি, গাজার যুদ্ধে বৃহত্তর, সমন্বিত, ঐক্যবদ্ধ কৌশলের অভাব তেহরানের কৌশলের নিরিখে আর কটি মৌলিক বিজয়। ইরান সম্ভবত প্রথম দেশ হয়ে উঠেছে, যারা সরাসরি সম্পৃক্ত না থেকেই অর্থ ও অস্ত্র প্রদানের মাধ্যমে ‘চাপানউতোর বৃদ্ধি’ সংক্রান্ত প্রক্সির চাবিকাঠি হাতে তুলে দিয়ে কৌশলগত গভীরতারএকটি মাস্টার প্ল্যান সফল ভাবে পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন করেছে। বড় ধরনের বাধা সত্ত্বেও ইরানের পরিকল্পনা সফল হয়েছে। পশ্চিমের, বিশেষ করে ওয়াশিংটনে মধ্যপ্রাচ্য নীতির প্রতি নতুন পদ্ধতির লক্ষ্যে প্রথম পদক্ষেপ হওয়া উচিত এই আক্ষরিক বাস্তবতাকে মেনে নেওয়া

 


কবীর তানেজা অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ প্রোগ্রামের ফেলো।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.