Published on Jan 02, 2024 Updated 0 Hours ago

বিভিন্ন প্রবণতা নারীর মানসিক স্বাস্থ্যে বিঘ্ন ঘটাচ্ছে। অবিলম্বে মানসিক স্বাস্থ্যনীতিতে লিঙ্গকে মূলস্রোতে নিয়ে আসার উদ্যোগ প্রয়োজন

নারীদের জন্য মৌলিক স্বাস্থ্য পরিষেবা: লিঙ্গ বৈষম্য বিশ্লেষণ

একটি সর্বজনীন মানবাধিকার হিসাবে আমরা ভাল মানসিক সুস্থতা অর্জনের থিম নিয়ে ১০ অক্টোবর ‘‌বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস’‌ উদযাপন করি, যেটি মনে করিয়ে দেয় যে মহিলারা সম্ভবত মানসিক স্বাস্থ্য মহামারির নীরব শিকার। এই কথা মাথায় রেখে মানসিক সুস্থতার উপর কথোপকথনগুলির আরও গভীরে গিয়ে মানসিক স্বাস্থ্যের লিঙ্গ বৈষম্যগুলি অনুসন্ধান করা অপরিহার্য।
 


মহিলাদের মানসিক স্বাস্থ্যকে উপেক্ষা করা: ২০৩০ অ্যাজেন্ডার অগ্রগতি প্রভাবিত হয়


ক্রমশই বিশ্বজুড়ে বেশি বেশি সংখ্যক মানুষ মানসিক রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন, যা এখন জীবনের কোনও না কোনও পর্যায়ে প্রতি চারজনের মধ্যে একজনকে প্রভাবিত করে। মহিলারা এর সব চেয়ে খারাপ শিকার, কারণ তাঁদের মধ্যে প্রতি পাঁচজনের একজন বিষণ্ণতা বা উদ্বেগের মতো মানসিক অসুস্থতার সম্মুখীন হন, যেখানে পুরুষদের মধ্যে এতে আক্রান্ত হন
প্রতি আটজনের মধ্যে একজন  বিশ্বজুড়ে মানসিক স্বাস্থ্যে লিঙ্গ বৈষম্যের বিরক্তিকর প্রবণতা সত্ত্বেও অপ্রতুল গবেষণা সামাজিক অসমতা ও মানসিক সুস্থতার মধ্যে আন্তঃসম্পর্ক অনুধাবনে আমাদের সূক্ষ্ম বোঝাপড়াকে বাধা দেয়। মানসিক রোগের বিশাল নির্ণায়ক ক্ষেত্রটি অতএব মানসিক রোগ সংজ্ঞায়িত করাকে জটিল করে তোলে। প্রমাণের একটি ক্রমবর্ধমান পরিমাণ দেখায় যে মানসিক স্বাস্থ্য অ্যাজেন্ডার জন্য শুধু মানসম্পন্ন পরিষেবা ও যত্নপ্রাপ্তির সুযোগ সহজতর করলেই হবে না, সেইসঙ্গেই সেই সাধারণ সামাজিক ও অর্থনৈতিক বাস্তবতাগুলিকেও মোকাবিলা করতে হবে যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে রূপ দেয়। যেহেতু দেশগুলি স্থিতিশীল উন্নয়নের জন্য ২০৩০ অ্যাজেন্ডা অর্জনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, লক্ষ্য অনুযায়ী ফলাফল অর্জন করতে স্থিতিশীল উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) ও মানসিক স্বাস্থ্যের আন্তঃসম্পর্ককে (চিত্র ১–এ দেখানো হয়েছে) স্বীকৃতি দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।
 
চিত্র ১: মানসিক স্বাস্থ্য এবং এসডিজি–র আন্তঃসম্পর্ক
Fundamental Health Services For Women
সূত্র:
‌লান্ড ও অন্যরা, ২০১৮


মানসিকতার পরিবর্তন: মানসিক স্বাস্থ্যে লিঙ্গভিত্তিক সামাজিক গঠনগুলি উন্মুক্ত করা


সারা বিশ্বে নারীরা সাধারণত সামাজিক ক্রিয়া–প্রতি্ক্রিয়াগুলির বিস্তৃত বর্ণালী জুড়ে চোখে পড়ার মতো সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্যের মুখোমুখি হন। স্কুল যাওয়া ও কর্মসংস্থানের নিম্ন হার, নেতৃত্বের অবস্থানে নিম্ন প্রতিনিধিত্ব, শক্তি দারিদ্র্য, প্রযুক্তি ও অর্থের সীমিত সুযোগ, যত্ন প্রদানের দায়িত্ব, ঘনিষ্ঠ অংশীদারদের হিংস্রতা এবং অন্য লিঙ্গ স্টিরিওটাইপগুলি সক্রিয়ভাবে মহিলাদের উচ্চ মানসিক চাপে অবদান রাখে।
৩৬৮ মিলিয়ন পুরুষ ও ছেলেদের বিপরীতে ৩৮৩ মিলিয়ন মহিলা ও মেয়েরা প্রতিদিন ১.৯০ মার্কিন ডলারের কম অর্থে জীবনযাপন করে বিশ্বের সবচেয়ে দারিদ্র্যপীড়িত মানুষ হিসাবে গণ্য


সারা বিশ্বে নারীরা সাধারণত সামাজিক ক্রিয়া–প্রতিক্রিয়াগুলির বিস্তৃত বর্ণালী জুড়ে চোখে পড়ার মতো সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্যের মুখোমুখি হন।



দারিদ্র্য নারীদের মানসিক চাপের একটি দুষ্ট চক্রে আটকে রাখে, কারণ নারীরা এর পরিণতি দ্বারা
ভিন্নভাবে প্রভাবিত হয়। ৭০–এর দশকে পরিচালিত গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছিল যে শিশুযত্নের দায়িত্বসহ আর্থিকভাবে চাপা–পড়া মহিলারা অন্য মহিলাদের তুলনায় বেশি বিষণ্ণতার ঝুঁকির মধ্যে থাকেন। গবেষণার একটি সমৃদ্ধ ভান্ডার রয়েছে যা ইঙ্গিত করে যে নারীরা তাঁদের পরিবারের জন্য গার্হস্থ্য, প্রজনন ও যত্ন প্রদানের দায়িত্ব পালন করতে থাকায় তাঁদের সবেতন চাকরি নেওয়ার বিকল্পগুলি সীমিত হয়ে যায়। তাঁরা এমন ক্ষেত্রগুলিতে ভিড় করার প্রবণতা দেখান যেগুলি প্রায়শই গৃহস্থালির দায়িত্বের সম্প্রসারণ, যার ফলে সেখানে অনানুষ্ঠানিক অর্থনীতির মতোই কম বেতনের চাকরি হয়। মহিলাদের অর্জিত মজুরি প্রায়শই পারিবারিক কাঠামোর মধ্যে নির্ধারিত অনুক্রমিক সামাজিক নিয়ম দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়, যা আয়ের ব্যবহারের উপর মহিলাদের নিয়ন্ত্রণ এবং তাঁদের সিদ্ধান্ত গ্রহণকে নির্দেশিত করে। অর্থনৈতিক সিদ্ধান্তগুলি, যখন মহিলারা গ্রহণ করেন, তখন তাঁদের নিজের মঙ্গলের পরিবর্তে গৃহস্থালির ব্যয় এবং শিশুদের দিকে চালিত হয়। প্রকৃতপক্ষে, এমন শক্তিশালী প্রমাণ রয়েছে যে পুরুষদের তুলনায় চাকরি হারানোর ক্ষেত্রে মহিলাদের গুরুতর ধরনের মানসিক অসুস্থতায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

আয় সম্পর্কিত বঞ্চনা প্রায়শই খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার দিকে চালিত করে, এবং এটি বেশ কয়েকটি নেতিবাচক শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের অবস্থার সঙ্গে যুক্ত। যাই হোক, অপ্রতুল খাদ্য গ্রহণসহ খাদ্য নিরাপত্তাহীন বাড়িতে বসবাসকারী মহিলারা বিষণ্ণতা এবং
দুর্বল মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ। খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার সম্মুখীন মায়েদের তাদের সন্তানদের সাধারণ স্বাস্থ্য ও বৃদ্ধির উপর নেতিবাচক প্রভাবেরও মোকাবিলা করতে হয়। যদিও উচ্চ আয়ের দেশগুলিতে মহিলাদের খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা এবং দুর্বল মানসিক অবস্থা একটি ক্রমবর্ধমান উদ্বেগ হিসাবে প্রমাণিত হয়েছে, কোভিড–১৯ অতিমা্রি মহিলাদের মানসিক চাপের মাত্রাকে আরও প্রভাবিত করেছে, বিশেষত যখন তাঁরা গুরুতর খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার মুখোমুখি হয়েছিলেন।

উচ্চ দারিদ্র্য, গার্হস্থ্য বিচ্ছিন্নতা, এবং নিজের সম্পর্কে নিম্ন ধারণা প্রায়ই নিম্ন স্তরের শিক্ষা ও আর্থিক স্বাধীনতার কারণে উদ্ভূত, এবং এর ফলে
মহিলাদের মধ্যে মানসিক অসুস্থতার উচ্চ প্রকোপ দেখা দিতে পারে। ভারতসহ পাঁচটি দেশে পরিচালিত একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে যে মহিলাদের স্বল্প শিক্ষা ও দারিদ্র্য সাধারণ মানসিক ব্যাধিগুলির সঙ্গে দৃঢ়ভাবে জড়িত। যদিও নারীরা জলের প্রধান সংগ্রহকারী, কারণ তাঁরা এই অত্যাবশ্যক সম্পদটি তাঁদের পরিবারের জন্য জোগাড় করার দায়িত্ব বহন করেন, তারপরেও তাঁরা জলের দারিদ্র্যের শিকার হন। জলের নিরাপত্তাহীনতা হতাশা, লজ্জা, গার্হস্থ্য হিংসার পাশাপাশি মানসিক চাপ বাড়াতে পারে। সীমাবদ্ধ স্যানিটেশনের সঙ্গে যুক্ত মানসিক স্বাস্থ্যের ঝুঁকির ক্রমবর্ধমান প্রমাণ জলের নিরাপত্তাহীনতার সঙ্গে অবিচ্ছেদ্যভাবে যুক্ত।

ক্রমবিস্তৃত গবেষণায় অপ্রতুল স্যানিটেশনের সঙ্গে সম্পর্কিত মানসিক স্বাস্থ্যের ঝুঁকির প্রমাণ দেখানো হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে ব্যক্তিগত ও পরিচ্ছন্ন স্যানিটেশন পরিসরগুলিতে প্রবেশাধিকারের অভাব, এবং যৌন বা শারীরিক হিংসার ভয়সহ প্রতিকূল সামাজিক ও ভৌত পরিবেশের কারণে স্যানিটেশন সুবিধাগুলির ব্যবহার এড়াতে জল বা খাবার খাওয়াকে দমন করার প্রয়োজন, ইত্যাদি। মহিলাদের অপূর্ণ ঋতুকালীন স্বাস্থ্যবিধি চাহিদা এবং মানসিক স্বাস্থ্যের উপর এর প্রভাব নিয়ে
খুব কম গবেষণা করা হয়েছে; এটি মহিলাদের পিরিয়ড পভার্টির সঙ্গে এর আন্তঃসম্পর্ক বিশ্লেষণ করার প্রয়োজন নিশ্চিত করে।

এই বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরে স্বীকৃত যে নারীর বিরুদ্ধে হিংস্রতা
গুরুতর সামাজিক ও মানসিক স্বাস্থ্যসমস্যা সৃষ্টি করে। শুধু তাই নয়, নারীর বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হিংসা, যেমন গার্হস্থ্য ও যৌন নির্যাতন ও নিগ্রহ, মানসিক ব্যাধির বর্ধিত ঝুঁকির সঙ্গে যুক্ত। লিঙ্গের উপর ভিত্তি করে কর্মক্ষেত্রে হয়রানিও মানসিক স্বাস্থ্যসম্পর্কিত সমস্যাগুলির জন্য একটি ঝুঁকির কারণ হিসাবে পরিচিত, যেখানে ভুক্তভোগীরা উদ্বেগ, বিষণ্ণতা, ড্রাগ ও অ্যালকোহল আসক্তি বা খাওয়ার বিশৃঙ্খলার ঘটনাগুলি রিপোর্ট করেন৷

ক্রমাগত পরিবর্তনশীল শহুরে পরিবেশের মহিলারা তাঁদের ব্যক্তিগত এবং প্রকাশ্য  জীবনে একাধিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন, যা তাঁদের মানসিক চাপের জন্য দুর্বল করে তোলে। নিরাপদ পরিবহণ খোঁজার সংগ্রাম, অপ্রতুল রাস্তার আলো,  কর্মক্ষেত্রে হয়রানি,
গার্হস্থ্য হিংসা ও হামলার বর্ধিত ঝুঁকি, দুর্বল প্রজনন স্বাস্থ্য, এবং প্রসব–পরবর্তী সময়ে কর্মজীবনের ভারসাম্য খুঁজে পেতে অক্ষমতার কারণে বিষণ্ণতার মতো বিস্তৃত পরিসরে সব আর্থ–সামাজিক স্তরের নারীরাই এর শিকার হন। অনুমান করা হয় যে শহুরে এলাকায় মহিলাদের প্রভাবিত করে এমন মানসিক ব্যাধিগুলির প্রাদুর্ভাবের হার প্রতি ১,০০০ জনে প্রায় ৬৪.৮

বিশ্ব এখন জলবায়ু সঙ্কটের প্রশমন ও তার সঙ্গে অভিযোজনের ব্যবস্থা করে চলায় মহিলাদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর এসবের প্রভাব অন্বেষণ করা গুরুত্বপূর্ণ, কারণ
জলবায়ু পরিবর্তন মহিলাদের উপর অসামঞ্জস্যপূর্ণ প্রভাব ফেলছে। কার্বন ব্রিফ থেকে কেস স্টাডি ইঙ্গিত দেয় যে জলবায়ু–সম্পর্কিত মানসিক চাপ থেকে মহিলারা বেশি প্রভাবিত হতে পারেন। বন্যা, গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঘূর্ণিঝড় ও ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা — সবই মহিলাদের পোস্ট–ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার (পিটিএসডি)–সহ মানসিক চাপের জন্য বেশি ঝুঁকিতে রাখে, বিশেষ করে যদি তাঁরা চরম আবহাওয়ার কারণে স্থানচ্যুতির ক্ষেত্রে যৌন হিংস্রতার সম্মুখীন হন। গৃহস্থালির কাজে কাঠ, কয়লা বা গোবরের মতো অপরিচ্ছন্ন শক্তির দীর্ঘমেয়াদি ব্যবহার শুধু শ্বাসযন্ত্র, কার্ডিওভাসকুলার, মাতৃ ও শিশুমৃত্যুর কারণই হয় না, সেইসঙ্গেই মানসিক চাপও তৈরি করতে পারে।

ভূ–রাজনৈতিক উত্তেজনার পাশাপাশি বিশ্বজোড়া অতিমারির ক্ষেত্রেও নারীরা সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠী। কোভিড–১৯–এর বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্যসংকট শারীরিক, যৌন ও মানসিক নির্যাতনের একটি অভূতপূর্ব বৃদ্ধির সূত্রপাত করেছে, যা ব্যাপকভাবে ‘‌ছায়া মহামারি’‌ নামে পরিচিত। এটি নারীদের মৌলিক অধিকার ও মর্যাদা এবং
তাঁদের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের জন্য বিপদস্বরূপ। যুদ্ধের সময় এবং দ্বন্দ্বপরবর্তী পরিস্থিতিতে তাঁদেরই বিশাল মূল্য দিতে হয়, যেখানে তাঁরা যৌন হিংসা ও মানসিক অসুস্থতা এবং তার সঙ্গে যুক্ত কলঙ্কের মুখোমুখি হন।


কোভিড–১৯–এর বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্যসংকট শারীরিক, যৌন ও মানসিক নির্যাতনের একটি অভূতপূর্ব বৃদ্ধির সূত্রপাত করেছে, যা ব্যাপকভাবে ‘‌ছায়া মহামারি’‌ নামে পরিচিত। এটি নারীদের মৌলিক অধিকার ও মর্যাদা এবং তাঁদের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের জন্য বিপদস্বরূপ। 


হু–এর মানসিক স্বাস্থ্য অ্যাটলাস ২০২০–র  মূল্যায়ন অনুসারে, সাধারণভাবে মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে শাসন, সংস্থান, পরিষেবা, তথ্য ও প্রযুক্তির প্রধান ফাঁকগুলির কারণে বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য ব্যবস্থাগুলি দমবন্ধ অবস্থায় আছে। বিষয়টি চিত্র ২–এ দেখানো হয়েছে।

চিত্র ২:‌ জনসাধারণের মানসিক স্বাস্থ্যের মূল ফাঁকগুলির একটি স্ন্যাপশট
Fundamental Health Services For Women
সূত্র:
হু, ২০২২

দেশের মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যের চাহিদা পূরণের জন্য একটি জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য প্রোগ্রাম (এনএমএইচপি) তৈরি করার ক্ষেত্রে প্রথম নিম্ন–মধ্যম আয়ের দেশ (এলএমআইসি) হওয়া সত্ত্বেও ভারতও এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত।
অধ্যয়নগুলি ইঙ্গিত দেয় যে বিশ্ব জনসংখ্যার অর্ধেক এমন দেশে বাস করেন যেখানে ২০০,০০০ বা তার বেশি মানুষের জন্য শুধু একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ আছেন। ২০১৭ সালে ভারতে প্রতি ১০০,০০০ মানুষের মধ্যে হতাশাজনকভাবে মাত্র ০.২৯ শতাংশ মানসিক সাহায্যের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন, যা মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে মানবসম্পদে বিদ্যমান বিশাল ব্যবধান প্রদর্শন করে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতীয় মহিলাদের প্রায় ৭.৫ শতাংশ গুরুতর মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যায় ভুগছেন, এবং প্রায় অর্ধেক প্রাপ্তবয়স্ক মহিলা তাঁদের জীবনে অন্তত একবার কম গুরুতর মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন। তবুও, স্বল্প তহবিল এবং সেইসঙ্গে উপলব্ধ সংস্থানগুলির স্বল্প ব্যবহার তৈরি করছে মানসিক স্বাস্থ্যের যত্নের জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষিত কর্মীর অভাব, যার মধ্যে আছেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ, মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নার্স, পরামর্শদাতা, মানসিক স্বাস্থ্যক্ষেত্রের সামাজিক কর্মী এবং অন্য অর্থপ্রদানভিত্তিক মানসিক স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদানকারীরা। ফলে সমস্যাটি আরও জটিল হয়েছে,এবং মহিলা রোগীদের কাছে পৌঁছনোর কাজটি চ্যালেঞ্জিং হয়ে গিয়েছে। লিঙ্গবিচ্ছিন্ন তথ্যের অভাবের সঙ্গে একটি দুর্বল পর্যবেক্ষণ এবং মূল্যায়ন ব্যবস্থাও মহিলাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পরিষেবার ব্যবস্থাকে বাধা দেয়। ভারতে অল্পবয়সী নারীরাও (যারা বাকি বিশ্বের তুলনায় আত্মহত্যার বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন) সাহায্য চাইতে এগিয়ে আসছেন, যেমনটি স্বাস্থ্যসেবা প্ল্যাটফর্ম প্র্যাক্টো দ্বারা ৭৮,০০০ মহিলা ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে সংগৃহীত ডেটাতে প্রতিফলিত হয়েছে। চিত্র ৩ দেখায় যে ৩৫ বছরের কমবয়সী মহিলারা মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা চাওয়ার একটি উল্লেখযোগ্য অনুপাত তৈরি করেন৷


বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতীয় মহিলাদের প্রায় ৭.৫ শতাংশ গুরুতর মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যায় ভুগছেন, এবং প্রায় অর্ধেক প্রাপ্তবয়স্ক মহিলা তাঁদের জীবনে অন্তত একবার কম গুরুতর মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন। 



চিত্র ৩
Fundamental Health Services For Women
সূত্র:
প্র্যাক্টো ইনসাইটস

এই বিঘ্নকারী প্রবণতাগুলি অবিলম্বে মানসিক স্বাস্থ্যনীতিতে এমনভাবে লিঙ্গকে মূলস্রোতে নিয়ে আসার লক্ষ্যে পদক্ষেপের আহ্বান জানায় যা মহিলাদের সামাজিকভাবে সৃষ্ট দুর্বলতাগুলিকে স্বীকৃতি দিতে এবং অগ্রাধিকার দিতে সক্ষম হবে। মানসিক স্বাস্থ্য ও এসডিজি–র মধ্যে এই সুপ্রতিষ্ঠিত সংযোগের মধ্যে,
যা অনেক উপায়ে দ্বিমুখী, স্পষ্টতই মহিলাদের মানসিক সুস্থতা অর্জনের পথ তৈরি করার সম্ভাবনা রয়েছে।


অরুন্ধতী বিশ্বাস কুন্দাল অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের একজন সিনিয়র ফেলো। এস চ্যান্ট ২০০৬, সমষ্টিগত লিঙ্গ সূচকের সঙ্গে সম্পর্কিত "দারিদ্র্যের নারীকরণ" পুনর্বিবেচনা। জে হাম দেব। ৭(২):২০১–২০

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.