Author : Ramanath Jha

Published on Dec 07, 2022 Updated 24 Days ago

সিট বেল্ট পরা ছাড়াও রাস্তার মান উন্নত করা এবং জাতীয় মহাসড়কের আরও ভাল রক্ষণাবেক্ষণ সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

জাতীয় সড়কে পথ–দুর্ঘটনা রোধ করা
জাতীয় সড়কে পথ–দুর্ঘটনা রোধ করা

২০১৯ সালের মার্চে একটি সার্কুলারে ন্যাশনাল হাইওয়েজ অথরিটি অফ ইন্ডিয়া (এন এইচ এ আই) জাতীয় মহাসড়ক নির্মাণের ক্ষেত্রে সময়ের আগেই সমাপ্তির শংসাপত্র দিয়ে দেওয়ার বিষয়টি উত্থাপন করেছিল। এন এইচ এ আই লক্ষ্য করেছিল যে কিছু কিছু ক্ষেত্রে সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক মন্ত্রকের নির্ধারিত ‘‌‌মান ও নির্দিষ্টকরণ’‌ অনুযায়ী কাজ হওয়ার আগেই সমাপ্তির শংসাপত্র জারি করা হয়েছিল। এক্ষেত্রে রাস্তার একদম ধারের অংশ, রাস্তার নির্দেশক চিহ্ন, রাস্তার উপরের চিহ্ন, ঢালের ড্রেসিং এবং রাস্তার ধারের আলো ইত্যাদির মতো আইটেমগুলি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। সার্কুলারটি এই ধরনের সার্টিফিকেট ইস্যু করা নিষিদ্ধ করেছে, বিশেষ করে যদি অসম্পূর্ণতার কারণে ‘‌ব্যবহারকারীদের বাস্তবিক অসুবিধা হয়’‌ বা তাদের নিরাপত্তা প্রভাবিত হয়।

সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক মন্ত্রী জোর দিয়ে বলেছিলেন যে নির্মাণের গতি কমে গেলেও নিরাপদ সড়ক নির্মাণ করা প্রয়োজন।

উপরে উদ্ধৃত সার্কুলারটিকে কিছু অনুমোদিত ইঞ্জিনিয়র যথাযথ গুরুত্ব সহকারে নেননি। এই অবহেলা সড়ক দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে, এমনকি মৃত্যুও ঘটতে পারে। এন এইচ এ আই এখন অপরাধীদের সতর্ক করেছে যে এই ধরনের আচরণকে দায়িত্বের গুরুতর অবহেলা হিসাবে বিবেচনা করা হবে, এবং অসম্পূর্ণ রাস্তার কাজগুলির জন্য এই ধরনের শংসাপত্র প্রদানকারী অফিসারদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। উপরন্তু, এই ধরনের অসমাপ্ত পরিকাঠামোতে গুরুতর দুর্ঘটনা ঘটলে কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগতভাবে দায়ী করা হবে। সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক মন্ত্রী জোর দিয়ে বলেছিলেন যে নির্মাণের গতি কমে গেলেও নিরাপদ সড়ক নির্মাণ করা প্রয়োজন।

মন্ত্রীর এই বক্তব্য জাতীয় মহাসড়কে রাস্তা নির্মাণের একটি উদ্বেগজনক দিক প্রকাশ করে, যেখানে সম্পদ নির্মাণ করতে গিয়ে নিরাপত্তাকে উপেক্ষা করা হয়। জাতীয় মহাসড়কগুলিতে সড়ক–মৃত্যুর খুব বেশি শতাংশ এই বিষয়টিকেই তুলে ধরে। জাতীয় মহাসড়কগুলি দেশের সড়ক নেটওয়ার্কের মাত্র ২ শতাংশ, তবে সমস্ত সড়ক-মৃত্যুর প্রায় ৩৫ শতাংশের জন্য দায়ী। এদিকে যে গতিতে জাতীয় মহাসড়ক তৈরি হচ্ছে তার জন্য মন্ত্রক কৃতিত্ব নিচ্ছে। ২০২১ অর্থবছরে এই গতি প্রতিদিন রেকর্ড ৩৭ কিলোমিটারে পৌঁছেছিল। তারপর ২০২২ আর্থিক বছরের প্রথম ছয় মাসে তা প্রতিদিন ১৯.৪৪ কিলোমিটারে নেমে এসেছে। নিরাপত্তার বিষয়ে আরও যত্নের কারণে যদি গতি হ্রাস করা হয়ে থাকে তবে এই ঘটনা স্বাগত।

দুর্ভাগ্যবশত, ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে আহমেদাবাদ–মুম্বই জাতীয় মহাসড়কে সাইরাস মিস্ত্রির মৃত্যুর পরে নিরাপত্তা ব্যর্থতা এবং জাতীয় মহাসড়কে বিপুল সংখ্যক মৃত্যুর বিষয়ে এন এইচ এ আই–এর আত্মসমীক্ষা দেখা যায়নি। যাত্রীর সিট বেল্ট পরা ছিল না এবং তাই একাধিক আঘাতের কারণে তাঁর মৃত্যু হয়েছে, এই কথাই শুধু গুরুত্ব পায়। যাই হোক, যা উল্লেখ করা প্রয়োজন তা হল সিট বেল্ট জীবন বাঁচাতে সাহায্য করতে পারে, কিন্তু দুর্ঘটনা এড়াতে এর কোনও ভূমিকা নেই। এক্ষেত্রে পরে একটি সাত সদস্যের ফরেনসিক তদন্ত দল আবিষ্কার করেছে যে দুর্ঘটনাটি ঘটেছিল পরিকাঠামোগত সমস্যার কারণে। মিস্ত্রি যে গাড়িতে ভ্রমণ করছিলেন সেটি ভুলভাবে ডিজাইন–করা একটি সেতুতে আঘাত করেছিল। ব্রিজের প্যারাপেটটি শোল্ডার লেনের মধ্যে ঢুকে এসেছিল। তাছাড়া তিন লেন বিশিষ্ট রাস্তাটি একটি সঠিক রঙ না–করা বিপজ্জনক এল–আকৃতির কংক্রিট ডিভাইডার সহ অপ্রত্যাশিতভাবে দুটি লেনের সড়কে সংকুচিত হয়েছে। রাস্তার সংকেতগুলি অত্যন্ত অপ্রতুল ছিল, যা সেই রাস্তাটিকে একটি ‘‌ব্ল্যাক স্পট’‌ করে তুলেছে। এই শব্দবন্ধটি রাস্তার এমন একটি অংশের জন্য ব্যবহৃত হয় যেখানে ঘন ঘন দুর্ঘটনা ঘটে।

তিন লেন বিশিষ্ট রাস্তাটি অপ্রত্যাশিতভাবে দুটি লেনের সড়কে সংকুচিত হয়েছে একটি বিপজ্জনক এল–আকৃতির কংক্রিট ডিভাইডার সহ, যেটিতে সঠিক রঙ করা নেই।

দুর্ঘটনাটি বিধ্বস্ত গাড়ির অত্যধিক গতির সমস্যাও উত্থাপন করেছে। বলা হয়েছিল যে গাড়িটি ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটারের বেশি গতিতে যাচ্ছিল। তবে মন্ত্রী কিন্তু নিজেই ভারতীয় এক্সপ্রেসওয়ে ও জাতীয় সড়কে  উচ্চ গতির পক্ষে। তিনি এক্সপ্রেসওয়েতে ১৪০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা এবং চার লেন জাতীয় মহাসড়কে কমপক্ষে ১০০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা গতিসীমার প্রস্তাব করেছিলেন। তিনি বলেন, ভারতের হাইওয়েগুলির মানের যথেষ্ট উন্নতির কারণে যানবাহন অতীতের তুলনায় দ্রুত যেতে পারবে বলেই এই বিষয়টিকে সমর্থন করা হয়েছিল। মন্ত্রী কিছু বিচারবিভাগীয় রায়েরও সমালোচনা করেছিলেন যা জাতীয় মহাসড়কে গতি বাড়ানোর অনুমতি দেয়নি। যাই হোক, জাতীয় মহাসড়কের নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে বারবার সামনে আসা কিছু তথ্যের আলোকে দেখা যাচ্ছে যে গতি বৃদ্ধির ক্ষেত্রে আরও বেশি সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন।

জাতীয় মহাসড়কের ক্ষেত্রে আরও একটি তথ্য উঠে আসছে। তা হল সেগুলির রক্ষণাবেক্ষণের মান। যদিও সরকার দাবি করে যে সেগুলি আন্তর্জাতিক মানের, একটি সাম্প্রতিক প্রতিবেদন ভারতে বর্ষার পরে জাতীয় মহাসড়কে যাত্রীদের দুর্দশার কথা তুলে ধরেছে। বৃষ্টির কারণে দেশের ধমনী–জালিকা খারাপ অবস্থায় পড়েছে, কারণ সেগুলি খানাখন্দে ভরে গেছে। উদ্ধৃত প্রতিবেদনে এন এইচ ৮–এর গুরগাঁও-জয়পুর অংশের উল্লেখ করা হয়েছে, যা টোলের হার বৃদ্ধি সত্ত্বেও অসম্পূর্ণ এবং ভয়ানকভাবে খানাখন্দে ভরা। সংসদীয় স্থায়ী কমিটির কাছে সরকারের দেওয়া জবাবে এই দুঃখজনক অবস্থার কারণ ব্যাখ্যা করা হয়েছে। জাতীয় মহাসড়কগুলির রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বাজেটের বিধান তাদের নিজস্ব আনুমানিক হিসাবের মাত্র ৪০ শতাংশ ছিল। স্পষ্টতই আরও বেশি কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণের জন্য জাতীয় মহাসড়কের রক্ষণাবেক্ষণের খরচ কমানো হচ্ছে। রক্ষণাবেক্ষণের অর্থের ৬০ শতাংশের ঘাটতি ভয়ঙ্করভাবে বেশি, এবং এর অর্থ হল সর্বত্রই সংস্থান কম হচ্ছিল, যার ফলে পর্যাপ্ত রক্ষণাবেক্ষণের সম্ভাবনা ছিল খুবই কম।

জাতীয় মহাসড়কগুলির রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বাজেটের বিধান তাদের নিজস্ব আনুমানিক হিসাবের মাত্র ৪০ শতাংশ ছিল।

সংসদীয় কমিটি তার ‘সড়ক ক্ষেত্রের সমস্যা’ শীর্ষক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে যে পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দের ঘাটতি সারা দেশে প্রায়শই জাতীয় মহাসড়কের যে নিম্নমান দেখা যায় তার মধ্যে প্রতিফলিত হচ্ছে। কমিটি জোর দিয়ে বলেছিল যে নিরাপত্তা এবং ভাল গড় ট্র্যাফিক গতির ক্ষেত্রে জাতীয় মহাসড়কগুলির রক্ষণাবেক্ষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, এবং একে উচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত। বিষয়টি বারবার কমিটিতে তুলে ধরা হয়েছে। একইভাবে, নীতি আয়োগ ‘‌নতুন ভারতের জন্য কৌশল @৭৫’‌ শিরোনামের প্রতিবেদনে পরামর্শ দিয়েছে যে সরকারকে তার বার্ষিক বাজেটের ১০ শতাংশ রাস্তা ও মহাসড়কের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য এখনই বরাদ্দ করা উচিত, এবং ধীরে ধীরে উন্নত দেশের মতো রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বাজেটের ৪০ শতাংশ বরাদ্দ করার উদাহরণ অনুসরণ করা উচিত। একথা স্পষ্ট যে জাতীয় মহাসড়কগুলির অবস্থা পর্যাপ্ত ভাল না থাকলে দেশ এবং রাজ্যগুলির অর্থনীতিতে আঘাত লাগে।

উপরে বর্ণিত জাতীয় মহাসড়কের ঘাটতিগুলির পরিপ্রেক্ষিতে এই ঘটনাটি কিছুটা আশ্চর্যজনক ছিল যে সাইরাস মিস্ত্রির মৃত্যুর প্রেক্ষিতে কর্তৃপক্ষ নাগরিকদের দায়িত্বগুলির দিকে অঙ্গুলিনির্দেশ করতে এবং সেগুলিকে আঁকড়ে ধরতে ব্যস্ত ছিল। যানবাহনের পিছনের সিটে বসে থাকা সিট বেল্ট ব্যবহার না–করা যাত্রীদের শাস্তি দিতে তারা তৎপর হয়। মন্ত্রী ঘোষণা করেন যে এই বিষয়ে শীঘ্রই একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে এবং অপরাধী নাগরিকদের শাস্তি দেওয়া হবে। এমন গাড়ি নির্মাতাদের বিষয়েও প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছিল যারা ভারতে তাদের গাড়িতে মাত্র চারটি এয়ারব্যাগ দেয়, যেখানে আন্তর্জাতিকভাবে তারা ছয়টি এয়ারব্যাগ দিয়ে থাকে। যদিও নাগরিকদের ভ্রমণের সময়ে সতর্কতা অবলম্বনের এবং গাড়িতে বেশি এয়ারব্যাগ থাকার বিষয়ে কোনও দ্বিমত নেই, সরকারের কিন্তু ঘোষণা করা উচিত ছিল জাতীয় মহাসড়কের নিরাপত্তা ঘাটতি এবং দুর্বল রক্ষণাবেক্ষণের উপরেও সমান মনোযোগ দেওয়া হবে। একথা স্পষ্ট যে সিট বেল্ট পরলে যাত্রীদের গুরুতর আঘাত পাওয়া ও মৃত্যু কম হতে পারে, তবে শুধুমাত্র সেই ব্যবস্থা দিয়ে সড়ক দুর্ঘটনা রোধ করা যাবে না। রাস্তা নির্মাণের গুণগত মান উন্নত করা এবং জাতীয় মহাসড়কের উন্নত রক্ষণাবেক্ষণ সমান গুরুত্বপূর্ণ।

মতামত লেখকের নিজস্ব।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.