Published on Apr 20, 2024 Updated 0 Hours ago
পূর্বমুখী যাত্রা: ভারত-জাপান-দক্ষিণ কোরিয়া ত্রিপাক্ষিক তৈরি হচ্ছে?

তাঁর সাম্প্রতিক পর পর সিওল ও টোকিও সফরের সময় বিদেশমন্ত্রী ড. এস. জয়শঙ্কর ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরে ভারতের দুটি প্রধান অংশীদারের সঙ্গে ভবিষ্যতের সহযোগিতার জন্য সুর ও এজেন্ডা সেট করেছিলেন। এই সফরটি দশম ভারত-প্রজাতন্ত্রী কোরিয়া জয়েন্ট কমিশন মিটিং (জেসিএম)-এর অংশ ছিল, যেখানে জয়শঙ্কর কোরিয়া প্রজাতন্ত্রের বিদেশ বিষয়ক মন্ত্রী মিঃ চো তাই-ইউল-‌এর সঙ্গে আলোচনা করেন। এরপর ১৬তম ভারত-জাপান বিদেশমন্ত্রীদের কৌশলগত সংলাপের সময় জয়শঙ্কর জাপানের বিদেশমন্ত্রী ইয়োকো কামিকাওয়ার সঙ্গে আলোচনা করেন। এছাড়াও আলোচ্যসূচিতে ছিল ভারত ও জাপানের বিদেশ মন্ত্রক দ্বারা যৌথভাবে আয়োজিত প্রথম রাইসিনা গোলটেবিল @ টোকিওতে অংশগ্রহণ, যা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক গভীর করতে এবং আঞ্চলিক সহযোগিতা জোরদার করার ট্র্যাক টু প্রচেষ্টার অংশ হিসাবে ব্যবসায়ী নেতা, থিঙ্ক ট্যাঙ্ক এবং অ্যাকাডেমিকদের একত্র করেছিল।


সিওলের সঙ্গে নয়াদিল্লির অংশীদারিত্বের মূল দিকগুলির মধ্যে রয়েছে সেমিকন্ডাক্টর, সবুজ হাইড্রোজেন, পারমাণবিক ক্ষমতা এবং গুরুত্বপূর্ণ ও উদীয়মান প্রযুক্তি।



যদিও জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া উভয়ের সঙ্গেই ভারতের সম্পর্ক বছরের পর বছর ধরে স্থির গভীরতার সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ হয়েছে, উভয়ের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা সাম্প্রতিক বছরগুলিতে অংশীদারিত্বের পরিধি সম্প্রসারণের মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট উত্থানের সাক্ষী হয়েছে, এবং তা ধীরে ধীরে তিনটি দেশের মধ্যে সহযোগিতার একটি সম্ভাব্য ত্রিপক্ষীয় কাঠামোর ভিত্তি হয়ে উঠেছে। সিওলের সঙ্গে নয়াদিল্লির অংশীদারিত্বের মূল দিকগুলির মধ্যে রয়েছে সেমিকন্ডাক্টর, সবুজ হাইড্রোজেন, পারমাণবিক ক্ষমতা এবং গুরুত্বপূর্ণ ও উদীয়মান প্রযুক্তি। টোকিওর সঙ্গে প্রতিরক্ষা ও ডিজিটাল প্রযুক্তি, পরিচ্ছন্ন শক্তি, উচ্চগতির রেল, শিল্প প্রতিযোগিতা ও সংযোগের উপর ফোকাস করা হয়। উভয় দেশের সঙ্গে সেমিকন্ডাক্টর ও সরবরাহ শৃঙ্খল স্থিতিস্থাপকতা হল সহযোগিতার সাধারণ দিক যা নয়াদিল্লি গড়ে তুলতে চায়।

জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া ভারতের ইন্দো-প্যাসিফিক প্রয়াসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, এবং বিভিন্ন মাত্রা জুড়ে এই অঞ্চলের কৌশলগত ভূচিত্রে উল্লেখযোগ্যভাবে অবদান রাখে। জাপান একটি দীর্ঘস্থায়ী অর্থনৈতিক অংশীদার হিসাবে পরিকাঠামো উন্নয়ন, প্রযুক্তি হস্তান্তর এবং বিনিয়োগের মতো গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলিতে ভারতের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অবিচ্ছেদ্য অংশ। দেশটি ভারতের বৃদ্ধির গতিপথে যথেষ্ট অবদান রেখেছে, এবং ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরে স্থিতিশীল উন্নয়নের প্রশ্নে উভয়ের দৃষ্টিভঙ্গি সামঞ্জস্যপূর্ণ। পরিকাঠামো প্রকল্পগুলিতে দীর্ঘমেয়াদি ফোকাস-‌সহ জাপান ভারতের অর্থনৈতিক উন্নয়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ  অংশীদার। উভয় দেশই আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার বিষয়ে একই রকম উদ্বেগ প্রকাশ করে এবং একটি নিয়ম-ভিত্তিক ব্যবস্থার পক্ষে কথা বলে। কোয়াড অংশীদারিত্ব, যার মধ্যে রয়েছে জাপান, ভারতের বৃহত্তর আউটরিচ গোলস-‌এর সঙ্গে সারিবদ্ধ, যেমন আন্তর্জাতিক নিয়মগুলি বজায় রাখার গুরুত্ব, জাহাজ চলাচলের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা, নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জগুলি মোকাবিলা করা এবং অর্থনৈতিক বৃদ্ধির উপর জোর দেওয়া৷ কোয়াডে জাপানের অংশগ্রহণ একটি অবাধ ও উন্মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিকের পক্ষে সমবেত কণ্ঠস্বরকে সমৃদ্ধ করে, এবং এই অঞ্চলে ভারতের অবস্থানকে শক্তিশালী করে। সামুদ্রিক নিরাপত্তায় উভয়ের মধ্যে সহযোগিতামূলক প্রচেষ্টা ভারত মহাসাগরে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ভারতের সক্ষমতা বাড়ায় এবং ইন্দো-প্যাসিফিকের বহুপাক্ষিক প্ল্যাটফর্মে নয়াদিল্লি ও টোকিওর অংশগ্রহণ ও প্রচেষ্টাকে শক্তিশালী করে।


কোয়াড অংশীদারিত্ব, যার মধ্যে রয়েছে জাপান, ভারতের বৃহত্তর আউটরিচ গোলস-‌এর সঙ্গে সারিবদ্ধ, যেমন আন্তর্জাতিক নিয়মগুলি বজায় রাখার গুরুত্ব, জাহাজ চলাচলের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা, নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জগুলি মোকাবিলা করা এবং অর্থনৈতিক বৃদ্ধির উপর জোর দেওয়া৷



দক্ষিণ কোরিয়া কোয়াডের অংশ না হলেও তার আঞ্চলিক প্রভাব এবং কূটনৈতিক সম্পর্কের কারণে কৌশলগত গুরুত্ব রাখে। দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে অর্থনৈতিক সহযোগিতা তার উন্নত প্রযুক্তিগত ক্ষমতা দ্বারা চালিত, যা ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরে ভারতের অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত অগ্রগতিতে উল্লেখযোগ্যভাবে অবদান রাখে। ২০১৭ সালে শুরু হওয়া দক্ষিণ কোরিয়ার "নতুন দক্ষিণী নীতি" দক্ষিণ কোরিয়ার আঞ্চলিক সম্পৃক্ততায় ভারতের ক্রমবর্ধমান গুরুত্ব প্রদর্শন করে, এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলি ও ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক প্রসারের উপর জোর দেয়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, তার নিজস্ব ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল গ্রহণের পাশাপাশি সিওল ইন্দো-প্যাসিফিক আখ্যানের বিস্তৃত স্থাপত্যের অধীনে এই অঞ্চলের অন্য গণতান্ত্রিক এবং সমমনা দেশগুলির সঙ্গে অংশীদার হওয়ার অভিপ্রায় প্রদর্শন করেছে।

তর্কাতীতভাবে, জয়শঙ্করের সফরের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল তিনি সিওল ও টোকিও উভয়ের সঙ্গে বৈঠকের সময় সমসাময়িক সুযোগ তৈরি করা এবং বিকাশের উপর জোর দিয়েছিলেন। এর কেন্দ্রবিন্দুটি একটি দূরদর্শী দৃষ্টিভঙ্গিকে তুলে ধরে, যা দ্রুত বিকশিত বৈশ্বিক ভূচিত্র এবং দেশগুলির জন্য তাদের গতিপথকে সক্রিয়ভাবে আকার দেওয়ার প্রয়োজনীয়তাকে স্বীকৃতি দেয়। সমসাময়িক সুযোগগুলির উপর জোর দেওয়া উদীয়মান চ্যালেঞ্জগুলির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়া এবং গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে সহযোগিতার সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর জন্য ভারতের প্রতিশ্রুতির প্রমাণ হিসাবে কাজ করে, এবং বিশ্ব পরিমণ্ডলে এমন  একটি গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় হিসাবে ভারতের অবস্থান নির্দেশ করে যে উদীয়মান প্রবণতাগুলিকে পুঁজি করে এবং যে ২১ শতকের জটিলতাগুলির মধ্যে এগিয়ে চলতে প্রস্তুত। এটি উদ্ভাবন, প্রযুক্তিগত সহযোগিতা এবং দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের ভবিষ্যৎ গতিপথ গঠনে একটি সক্রিয় পদ্ধতির দিকনির্দেশ করে।
 

জয়শঙ্করের সফরের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল তিনি সিওল ও টোকিও উভয়ের সঙ্গে বৈঠকের সময় সমসাময়িক সুযোগ তৈরি করা এবং বিকাশের উপর জোর দিয়েছিলেন।



২০২২ ও ২০২৩–এর মধ্যে টোকিও ও সিওল কয়েক দশক ধরে তাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে পিছনে টেনে ধরে রাখা সমস্যাগুলিকে অতিক্রম করার জন্য ধীরে ধীরে এবং ইচ্ছাকৃত পদক্ষেপ করেছে। এই কৌশলগত পরিবর্তন একে অপরের সঙ্গে আরও কার্যকরভাবে কাজ করার জন্য একটি অভিন্ন স্বীকৃতি প্রতিফলিত করে এবং আঞ্চলিক সুযোগ ও উদ্বেগগুলির ক্ষেত্রে সম্মিলিতভাবে প্রতিক্রিয়া জানানোর পথ তৈরি করে। এটি কূটনৈতিক সম্পর্কের পরিপক্বতাকে নির্দেশ করে। ভারতের দৃষ্টিকোণ থেকে পূর্ব এশিয়ায় এই ক্রমবর্ধমান সমন্বয় অপরিসীম তাৎপর্য বহন করে, কারণ আরও সমন্বিত ও সহযোগিতামূলক পূর্ব এশিয়া এই দুই দেশের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার জন্য ভারতের পক্ষে আরও অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে। এই কৌশলগত সারিবদ্ধতা একত্রে তিনটি দেশের মধ্যে ত্রিপাক্ষিক সহযোগিতার পুনরুজ্জীবনের দ্বার উন্মুক্ত করে। এই ত্রিপাক্ষিকের ধারণা প্রথম ২০১১ সালে উদ্ভূত হলেও এখনও পর্যন্ত সুপ্ত ছিল। যেহেতু ইন্দো-প্যাসিফিকের ভূ-রাজনৈতিক ভূচিত্র ক্রমাগত বিকশিত হচ্ছে, একটি নতুন দিল্লি-সিওল-টোকিও ত্রিপাক্ষিক সহযোগিতা উদীয়মান চ্যালেঞ্জ ও সুযোগগুলির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার জন্য একটি নমনীয় ও গতিশীল কাঠামো প্রদান করে৷



এই ভাষ্যটি প্রথম হিন্দুস্তান টাইমস-এ প্রকাশিত হয়েছিল।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.