Published on May 08, 2024 Updated 1 Hours ago

ভারতীয় নৌবাহিনী ২০০৮ সালের পর থেকে উল্লেখযোগ্য ভাবে বৃহত্তর উদ্দেশ্য নিয়ে এই অঞ্চলে জলদস্যু বিরোধী অভিযান পরিচালনা করছে

ব্যাপক পরিবর্তন: লোহিত সাগরে ভারতীয় নৌবাহিনী

ভারতীয় নৌবাহিনী (আইএন) এডেন উপসাগর এবং পশ্চিম আরব সাগরে তার বৃহত্তম সেনাবাহিনী মোতায়েন শুরু করেছে। এই মোতায়েন ইয়েমেনে ইরান সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে বিদ্যমান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের সামরিক পদক্ষেপের অংশ নয়। আইএন-এর অভূতপূর্ব বৃহৎ নৌবাহিনী ফ্লোটিলা ১২টি যুদ্ধজাহাজ রয়েছে, যার মধ্যে দুটি অত্যাধুনিক জাহাজ এডেন উপসাগরে মোতায়েন করা হয়েছে এবং অবশিষ্ট ১০টি মোতায়েন করা হয়েছে উত্তর ও পশ্চিম আরব সাগরে এই মোতায়েন অঞ্চলটির পূর্ববর্তী মোতায়েনের তুলনায় শক্তি এবং অভিযানের মাত্রা উভয় ক্ষেত্রেই একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনকেই দর্শায়। জলদস্যু বিরোধী এবং অপহরণ বিরোধী অভিযানগুলি হল আইএন-এর বিদ্যমান অভিযানের কেন্দ্রীয় বৈশিষ্ট্য, যার একটি উল্লেখযোগ্য বিশেষ নৌ অভিযানমূলক বাহিনীও রয়েছে।

প্রায় ছবছরের বিরতির পর আবার এডেন উপসাগর এবং উত্তর ও পশ্চিম আরব সাগরে জলদস্যু আক্রমণ ঘটছে। সোমালিয়ার জলদস্যু গোষ্ঠীগুলি ২০০৮ সাল থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে তাণ্ডব চালিয়েছিল তবে ২০১৮ সাল থেকে ২০২৩ সালের শেষ পর্যন্ত জলদস্যুতার ঘটনা প্রায় ঘটেনি বললেই চলে। রায়েল হামাসের মধ্যে যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট বিশৃঙ্খলাকে কাজে লাগিয়ে এবং ইরান সমর্থিত হুতি মিলিশিয়া এডেন উপসাগর এবং লোহিত সাগরে ইরায়েল তার পশ্চিমী সমর্থকদের বাণিজ্যিক জাহাজের উপর হামলা চালানোর ফলে জলদস্যুদের প্রত্যাবর্তন ঘটেছে।

 

জলদস্যু বিরোধী এবং অপহরণ বিরোধী অভিযানগুলি হল আইএন-এর বিদ্যমান অভিযানের কেন্দ্রীয় বৈশিষ্ট্য, যার একটি উল্লেখযোগ্য বিশেষ নৌ অভিযানমূলক বাহিনীও রয়েছে।

 

এই পটভূমিতে আইএন-কে ২০০৮ সাল থেকে যে কোন সময়ের তুলনায় যথেষ্ট শক্তি প্রদর্শন এবং উল্লেখযোগ্য ভাবে বৃহত্তর উদ্দেশ্যে সেনা মোতায়েন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ২০০৮ সালে ভারত প্রথম বারের মতো টহল দিয়েছিল এবং এডেন উপসাগরে জলদস্যুদের আগ্রাসী কাজকর্মকে প্রতিহত করার জন্য সেনা মোতায়েন করেছিল। প্রকৃতপক্ষে, ভারতের বর্তমান নৌ উপস্থিতি পূর্ব আফ্রিকার উপকূল এবং এডেন উপসাগর অঞ্চলে অন্য যে কোন দেশের তুলনায় অনেকটাই বেশি। অতীতের তুলনায় - যখন আইএন প্রতিরক্ষামূলকতা, অত্যধিক সতর্কতা এবং একটি অন্তর্মুখী অভিযোজন দ্বারা ব্যাপক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল – আইএন-এর সেনা মোতায়েনের ধরনে পরিবর্তন মূলত আইএন-এর অভ্যন্তরে নেতৃত্ব এবং ক্ষমতার নিরিখে ক্রমবর্ধমান আত্মবিশ্বাসেরই ফসল।

এর পাশাপাশি, ২০০০-এর দশকের শেষের দিকে উত্তর-পশ্চিম আরব সাগর এবং এডেন উপসাগরের জলরাশিতে আইএন-এর উপস্থিতি ছিল সীমিত জলদস্যু বিরোধী অভিযান মোকাবিলায় ভারতের নৌ-অভিযানটি একটি মাত্র যুদ্ধজাহাজেই সীমাবদ্ধ ছিল। এটি ভারতীয় সারফেস ফ্লিট-এর তরফে মোতায়েন করা হয় এবং এটি সামান্য সাফল্য পেলেও পূর্ব আফ্রিকান উপকূল, উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদ (জিসিসি) এবং অন্যান্য দেশের নৌবাহিনীর সঙ্গে সহযোগিতামূলক সম্পৃক্ততা ও অভিযানমূলক মহড়া মোতায়েন দক্ষতার নিরিখে ভারতীয় নৌবাহিনীর ক্ষমতা অপ্রতুলই ছিল। যে অঞ্চলে আইএন-এর সারফেস ভেসেলগুলি বর্তমানে জলদস্যু মোকাবিলায় মোতায়েন করা হয়েছে, তার পৃষ্ঠের ক্ষেত্রফল ২.৫ মিলিয়ন বর্গ নটিক্যাল মাইল এবং এত বড় অঞ্চল যে কোন একক নৌবাহিনীর জন্য টহল দেওয়া খুবই দুঃসাধ্য কাজ। যাই হোক, বর্তমান মোতায়েন ইঙ্গিত করে যে আইএন-এর ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং জলরাশির বিস্তৃত পরিসর জুড়ে কী ভাবে জটিল জলদস্যু বিরোধী অভিযানগুলিকে কার্যকর ভাবে, দ্রুত গতিতে এবং প্রায় রক্তক্ষয় ছাড়াই সম্পন্ন করা যায়, সে বিষয়ে ভারতীয় নৌবাহিনীর ধারণা বৃদ্ধি পেয়েছে।

 

যে অঞ্চলে আইএন-এর সারফেস ভেসেলগুলি বর্তমানে জলদস্যু মোকাবিলায় মোতায়েন করা হয়েছে, তার পৃষ্ঠের ক্ষেত্রফল ২.৫ মিলিয়ন বর্গ নটিক্যাল মাইল এবং এত বড় অঞ্চল যে কোন একক নৌবাহিনীর জন্য টহল দেওয়া খুবই দুঃসাধ্য কাজ

 

ভূ-রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে এই প্রতিশ্রুতিটিকে বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ব্যাখ্যা করেছেন এই বলে: আশপাশের দেশে যখন খারাপ ঘটনা ঘটছে, তখন ‘আমাদের কিছু করার নেই’ বলে আমরা এক দায়িত্বহীন দেশ হয়ে উঠতে চাই না।’ ই প্রতিশ্রুতি কৌশলগত ভাবে অত্যাবশ্যক জলপথের মাধ্যমে বাণিজ্যিক জাহাজের সুরক্ষা ও চলাচলের স্বাধীনতা সুনিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে অভিযানের দায়ভার পালনে নয়াদিল্লির ইচ্ছেকেই দর্শায়।

জলদস্যুদের আক্রমণের সর্বশেষ পুনরুত্থান জাহাজ চলাচলে ব্যাঘাত ঘটিয়েছে এবং অপহরণের বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটিয়েছে। আইএন জলদস্যুদের আক্রমণের ঘটনায় অত্যন্ত দৃঢ় কার্যকর ভাবে সাড়া দিয়েছে এবং অতীতের তুলনায় অনেক বেশি করে উদ্ধারকার্যে সক্ষম হয়েছে। জানুয়ারি মাসের শুরুতে গাইডেড-মিসাইল ডেস্ট্রয়ার আইএনএস চেন্নাই-এর তরফে মোতায়েন আইএন-এর মেরিন কম্যান্ডো (মার্কোস) বাহরাইনের পথে ১৫ জন ভারতীয় ক্রু সদস্য-সহ লাইবেরিয়াপতাকাবাহী একটি জাহাজকে উদ্ধার করে। ২৬ জানুয়ারি আইএনএস বিশাখাপত্তনম ব্রিটেনের সঙ্গে সম্পর্কিত ট্যাঙ্কারের তরফে একটি ডিসট্রেস কল বা বিপদসংকেতে সাড়া দিয়েছিল, যার উপর হুতিরা ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছিল। পরবর্তী কালে টহলদারি জাহাজ আইএনএস সুমিত্র জানুয়ারি মাসের শেষের দিকে সোমালিয়ার উপকূলে দুটি ছিনতাই করা জাহাজ উদ্ধার করে। ২৮ জানুয়ারি প্রথমে ভারতীয় যুদ্ধজাহাজ ক্রুদের সেই জলদস্যুদের হাত থেকে উদ্ধার করে, যারা ইরানের পতাকাবাহী জাহাজটি দখল করেছিল। আটচল্লিশ ঘণ্টা পরে আইএনএস সুমিত্র আবার আর কটি ইরানি পতাকাবাহী জাহাজকে উদ্ধার করে, যেখানে ১৯ জন পাকিস্তানি ক্রু ছিলেনআইএন দ্বারা সম্পাদিত এই সমস্ত কার্যকলাপগুলি দ্রুত প্রতিক্রিয়ার ক্ষমতা এবং পরিষেবার স্থিতিশীল কর্মক্ষমতা প্রদর্শন করে তা সত্ত্বেও, ২০০৮ ও ২০১৮ সালের মধ্যবর্তী দশকে আক্রমণের তীব্রতা যতটা ছিল, তার তুলনায় জলদস্যু আক্রমণের সর্বশেষ ঘটনাগুচ্ছের তীব্রতা কিছুই নয়। তবুও জলদস্যুতার আকস্মিক বিস্ফোরণ হঠাৎ করে ঘটেনি। এর নেপথ্যে থেকেছে পশ্চিম এশিয়া ক্রমপরিবর্তনশীল ভূ-রাজনৈতিক পটভূমি, যা ভারতীয় নৌবাহিনীর তরফে সতর্কতামূলক নৌ অবস্থানকে বাধ্যতামূলক করে তোলে

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.