বিশ্বব্যাপী জৈব জ্বালানি উৎপাদনের নেপথ্যে প্রধান রাজনৈতিক চালিকাশক্তি হল কী ভাবে সেটির ফলে কৃষক সম্প্রদায় এবং গ্রামীণ অর্থনীতিগুলি লাভবান হচ্ছে।
Image Source: Chris Trebble — Flickr/CC BY 2.0
ভারতে জৈব জ্বালানি: প্রাপ্ত সুবিধাগুলি কি খরচের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ?
পটভূমি
আই ই এ-এর (আন্তর্জাতিক শক্তি সংস্থা) অনুমান অনুসারে, ভারত ২০২৩ সালের মধ্যে চিনকে অতিক্রম করে বিশ্বেরতৃতীয় সর্বোচ্চইথানল উৎপাদনকারী দেশ হয়ে উঠবে। ২০১৬ সালেও ভারত সর্বাধিক ইথানল উৎপাদনকারী দেশগুলির তালিকায় সপ্তম স্থানে ছিল এবং ২০২১ সালের মধ্যে সে জার্মানি, তাইল্যান্ড এবং কানাডাকে অতিক্রম করে তালিকায় চতুর্থ স্থানে উঠে আসে। আশা করা হচ্ছে যে ভারত ২০২২ সালের মধ্যে ইথানল উৎপাদনের ক্ষমতায় চিনের সমকক্ষ হয়ে উঠবে এবং ২০২৩ সালের মধ্যেচিনকে অতিক্রম করেআমেরিকা এবং ব্রাজিলের ঠিক পরেই তৃতীয় স্থানে উঠে আসবে। ভারতের ইথানল উৎপাদন সংক্রান্ত আই ই এ-এর আশাবাদী অনুমানের নেপথ্যে সাম্প্রতিকতম উল্লেখযোগ্য নীতিগত পদক্ষেপ হল নীতি আয়োগ এবং পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাস মন্ত্রক (এম ও পি এন জি) দ্বারা প্রকাশিত২০২১ সালের রিপোর্ট-এইথানল মিশ্রণের নতুন লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা।
খাদ্যদ্রব্যের ফিডস্টকের উপর ভিত্তি করে জৈব জ্বালানি উৎপাদনে ফিরে যাওয়া খাদ্য বনাম জ্বালানি বিতর্ককে উস্কে দিয়েছে। এই পদক্ষেপটি একাধিক পরিবেশবাদী সংস্থার সমালোচনার মুখে পড়েছে।
এই রিপোর্ট অনুযায়ী প্রধান সুপারিশগুলি হল ২০২২ সালের এপ্রিল মাসের মধ্যে এম ও পি এন জি-র নির্দেশ মতো সারা দেশব্যাপী পেট্রোলে১০%ইথানল মিশ্রণ (ই ১০) এবং ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসের মধ্যে পর্যায়ক্রমিক ভাবে২০%ইথানল মিশ্রণের (ই ২০) বাস্তবায়ন করা। এটিজৈব জ্বালানি সংক্রান্ত জাতীয় নীতি ২০১৮দ্বারা নির্ধারিত লক্ষ্যকে এগিয়ে নিয়ে যাবে যা ২০৩০ সালের মধ্যে পেট্রোলে ই ২০ এবং ডিজেলে ৫% জৈব ডিজেল (বি ৫) মিশ্রণের একটি নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রাকে তুলে ধরে। ২০২১ সালেরনীতি আয়োগের রিপোর্টেপ্রযুক্তির দৃষ্টিকোণ থেকে এক ধাপ পিছিয়ে গিয়ে খাদ্যভিত্তিক ফিডস্টক / মাড়ের উপর ভিত্তি করে জৈব জ্বালানি উৎপাদনের উপর জোর দেওয়া হয়েছে। অন্য দিকে ২০১৮ সালের নীতিতে অভোজ্য বায়োমাসের উপরে নির্ভর করে জৈব জ্বালানি উৎপাদনের উপর জোর দেওয়া হয়েছিল। খাদ্যদ্রব্যের ফিডস্টকের উপর ভিত্তি করে জৈব জ্বালানি উৎপাদনে ফিরে যাওয়া খাদ্য বনাম জ্বালানি বিতর্ককে উস্কে দিয়েছে। এই পদক্ষেপটি একাধিক পরিবেশবাদী সংস্থার সমালোচনার মুখে পড়েছে।
জৈব জ্বালানি
বর্তমানে যেদু’প্রকারের জৈব জ্বালানিরউৎপাদন সর্বাধিক, সে দু’টি হল- শর্করাভিত্তিক জৈব ইথানল উৎপাদন এবং ভেজিটেবল অয়েল বা ফ্যাটি অ্যাসিড মিথাইল ইস্টার (এফ এ এম ই) ভিত্তিক জৈব ডিজেল। অধিকাংশপ্রথম প্রজন্মেরজৈব জ্বালানিগুলি (ওয়ান জি বি, প্রধানত জৈব ইথানল এবং জৈব ডিজেল) সেই সব খাদ্যপ্রদানকারী উদ্ভিদ থেকে উৎপাদিত হয় যেগুলির মধ্যে শর্করা, তেল এবং সেলুলোজের মতো শক্তিধারক অণু বর্তমান। ২০০০ সাল থেকে সমগ্র জৈব জ্বালানি উৎপাদনে জৈব ডিজেলের ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ১০ গুণ — ২০০০ সালের৩.৩%থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২০ সালে তা প্রায় ৩২%-এ দাঁড়িয়েছে। কিন্তু সমগ্র উৎপাদনের এখনও প্রায় দুই তৃতীয়াংশ দখল করে আছে জৈব ইথানল। প্রথম প্রজন্মের জৈব জ্বালানিগুলি থেকে জৈব জ্বালানি উৎপাদনের পরিমাণ সীমিত এবং খাদ্য সুরক্ষার উপরে এর একটি ঋণাত্মক প্রভাব বিদ্যমান। দ্বিতীয় প্রজন্মের জৈব জ্বালানিগুলির (টু জি বি) উৎপাদনেলিগনোসেলুলোজিকফিডস্টক / মাড় (উদ্ভিদের অশর্করাভিত্তিক তন্তুমূলক অংশ) ব্যবহার করা হয় যার মধ্যে পড়ে খড়, আখের ছিবড়ে, জঙ্গলের বর্জ্য পদার্থ (খাদ্যাংশ ব্যতীত) এবং প্রান্তিক জমিতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে চাষ করা শক্তি উৎপাদনকারী শস্য। বর্তমানে বাণিজ্যিক স্তরে টু জি বি বা দ্বিতীয় প্রজন্মের জৈব জ্বালানি উৎপাদনের পরিমাণ অত্যন্ত সীমিত। তৃতীয় প্রজন্মের জৈব জ্বালানি উৎপাদন প্রধানতশৈবালভিত্তিকএবং জৈব ডিজেল, জৈব ইথানল এবং হাইড্রোজেন ইত্যাদি (থ্রি জি বি) উৎপাদনে অভোজ্য উচ্চ উৎপাদনশীল, অনাবাদি জমির ব্যবহারের উপরে নির্ভরশীল। থ্রি জি বি বা তৃতীয় প্রজন্মের জৈব জ্বালানি উৎপাদন এখনও গবেষণা ও উন্নয়ন স্তরেই রয়েছে। এমনকি, অফুরান, সস্তা ও সহজলভ্য কাঁচামাল ব্যবহার করে সৌরশক্তিকে সরাসরি ব্যবহারযোগ্য শক্তিতে রূপান্তরিত করারচতুর্থ প্রজন্মের জৈব জ্বালানি(ফোর জি বি) বা ফোটোবায়োলজিক্যাল সৌর জ্বালানি এবং বৈদ্যুতিক জ্বালানির উৎপাদন প্রক্রিয়া এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে।
দ্বিতীয় প্রজন্মের জৈব জ্বালানিগুলির (টু জি বি) উৎপাদনে লিগনোসেলুলোজিক ফিডস্টক / মাড় (উদ্ভিদের অশর্করাভিত্তিক তন্তুমূলক অংশ) ব্যবহার করা হয় যার মধ্যে পড়ে খড়, আখের ছিবড়ে, জঙ্গলের বর্জ্য পদার্থ (খাদ্যাংশ ব্যতীত) এবং প্রান্তিক জমিতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে চাষ করা শক্তি উৎপাদনকারী শস্য।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পৃথিবীরবৃহত্তম ইথানল উৎপাদকএবং বিশ্বব্যাপী ইথানল উৎপাদনের ৪৬% সে দেশে হয়ে থাকে। একই সঙ্গে আমেরিকায় মোট উৎপাদনের ১৯% হওয়ার ফলে তারা পৃথিবীর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জৈব ডিজেল উৎপাদনকারী দেশও। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মোট জৈব ইথানল উৎপাদনের ৮৭%-ই ভুট্টা নির্ভর। ব্রাজিল পৃথিবীরদ্বিতীয় বৃহত্তম ইথানল উৎপাদকএবং সে দেশে বিশ্বের মোট ইথানল উৎপাদনের ২৮% এবং মোট জৈব ডিজেল উৎপাদনের ১৪% হয়ে থাকে। ব্রাজিলে ইথানল উৎপাদনের প্রধান উৎস আখ এবং জৈব ডিজেলের প্রধান উৎস হল সয়াবিন।ইউরোপীয় ইউনিয়নবিশ্বের বৃহত্তম জৈব ডিজেল উৎপাদক এবং এর অধিকাংশটাই আমদানিকৃত ফিডস্টক বা মাড় থেকে করা হয়ে থাকে। বিশ্বব্যাপী ২০১৯ সালে মোট প্রাথমিক শক্তি চাহিদা এবং পরিবহণ ক্ষেত্রে শক্তি ব্যবহারের যথাক্রমে০.২%এবং০.৭%জোগান দিয়েছে জৈব জ্বালানিগুলি। ভারতেও পূর্বোক্ত ক্ষেত্রগুলিতে মোট শক্তি চাহিদার যথাক্রমে০.২%ও০.৭%জোগান দিয়েছে জৈব জ্বালানিগুলি।
জৈব জ্বালানি ব্যবহারের যুক্তি
পরিবেশগত, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে জৈব জ্বালানি ব্যবহারেরসুবিধা এবং অসুবিধাদুই-ই আছে। গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণের পরিমাণ হ্রাস, অপরিশোধিত তেলের আমদানি কমিয়ে শক্তি নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা এবং গ্রামীণ এলাকার উন্নয়নের মতো বিষয়গুলিই বিশ্বব্যাপী জৈব জ্বালানি উৎপাদনে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ চালিকাশক্তি।নীতি আয়োগের প্রতিবেদনেএই একই সুবিধাগুলির কথা বলা হয়েছে। যেমন — শক্তি নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা যাতে অপরিশোধিত তেলের সম্ভাব্য আমদানির পরিমাণ কমানো যায়, স্থানীয় উদ্যোক্তা এবংআখচাষিদের শক্তি অর্থনীতিতে অংশগ্রহণ বৃদ্ধি এবং যানবাহনগত নিঃসরণের পরিমাণ হ্রাস করা। যদিও এর ফলে কৃষকেরা স্পষ্টতই উপকৃত হবে। কারণ জৈব জ্বালানি শস্য-সহ যে কোনও কৃষিজ শস্যের চাহিদা বৃদ্ধিই কৃষকদের পক্ষে লাভজনক। কিন্তু জৈব জ্বালানির ব্যবহারের ফলে প্রাপ্ত শক্তি এবং পরিবেশগত সুবিধাগুলি কিছুটা ধোঁয়াশাময় এবং বিশেষ ভাবে প্রেক্ষিত নির্ভর।
নেট শক্তি ভারসাম্য
সার্বিক শক্তি অনুপাত (ও ই আর)অথবা কোনও জ্বালানির উৎপাদনে ব্যবহৃত সব শক্তির সম্মিলিত পরিমাণের সঙ্গে জ্বালানিটি (পেট্রোলিয়াম অথবা জৈব জ্বালানি) দ্বারা উৎপাদিত শক্তির অনুপাত পেট্রোলের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ এবং সেলুলোজিক ইথানলের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন। কিন্তু জৈব জ্বালানি উৎপাদনে ব্যবহৃত শক্তি উৎসগুলি প্রধানত পুনর্নবীকরণযোগ্য হওয়ার ফলেজীবাশ্ম শক্তি অনুপাত (এফ ই আর)অর্থাৎ তরল জ্বালানি শক্তি উৎপাদন ও জীবাশ্ম শক্তি বিনিয়োগের অনুপাতটি অপেক্ষাকৃত ভাবে কম। পেট্রোলের ক্ষেত্রে এফ ই আর এবংও ই আরদুইয়েরই পরিমাণ সমান এবং সেটি হল০.৮। পাশাপাশিব্রাজিলীয় আখভিত্তিক ইথানলেরক্ষেত্রে এর পরিমাণ প্রায়১০। আখভিত্তিক ইথানলের ক্ষেত্রে এফ ই আর যথেষ্ট বেশি কারণ ইথানল উৎপাদনে ব্যবহৃত শক্তির বেশির ভাগটাই আসে আখের তন্তু থেকে। ভারতীয় ইথানলের আনুমানিক এফ ই আর তথ্য পাওয়া যায় না। কিন্তু সেটি সম্ভবত ব্রাজিলীয় ইথানলের চেয়ে কম। কারণ একাধিক গবেষণায় ব্রাজিলীয় ইথানলকে সব জৈব জ্বালানির মধ্যে সর্বাধিক শক্তিসাশ্রয়ী বলে মনে করা হয়।
গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণ
নীতি আয়োগেররিপোর্টে ইথানল মিশ্রণের বিষয়টিতে জোর দিতে ব্যবহারিক ক্ষেত্রে গ্রিন হাউস গ্যাস বা জি এইচ জি-র সম্ভাব্য নিঃসরণ হ্রাস অর্থাৎ যানবাহনের টেল-পাইপ থেকে নিঃসৃত গ্যাসের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু লাইফসাইকল অ্যাসেসমেন্ট (এল সি এ)গবেষণায় উৎপাদনকেন্দ্র থেকে জ্বালানি ব্যবহারের সম্পূর্ণ জীবনচক্রে জৈব জ্বালানিগুলির কার্বন প্রশমন এবং অন্য পরিবেশগত প্রভাবগুলির কথাও বিবেচনা করা হয়। এ ক্ষেত্রে প্রাপ্ত পরিসংখ্যান অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পরস্পর বিরোধী এবং বিভিন্ন হিসেবের পার্থক্য ব্যাপক। এইব্যাপক প্রকরণেরএকটি কারণ হল জৈব জ্বালানির জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল চাষ করার ক্ষেত্রে জমির ব্যবহারে পরিবর্তন ঘটার ফলে নেট কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ নির্ধারণে সমস্যা। সব গাছপালাইকার্বন সিঙ্কবা কার্বন আধার রূপে কাজ করে। কারণ সালোকসংশ্লেষের সময়ে তারা পরিবেশ থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড (সি ও টু) শোষণ করে নেয়। যানবাহনে জৈব জ্বালানির দহনের ফলে পরিবেশে পুনরায় সি ও টু মিশতে থাকলেও নতুন জৈব জ্বালানি উৎপাদনকারী গাছগুলির পুনর্বৃদ্ধি কার্বন ডাই অক্সাইড নিঃসরণের ভারসাম্য রক্ষা করে, অর্থাৎ জৈব জ্বালানিগুলি তত্ত্বগত দিক থেকে কার্বন নিরপেক্ষ। কিন্তু জৈব জ্বালানি উৎপাদনকারী শস্য চাষের জন্য যদি কোনও জঙ্গল কেটে চাষের জমি বানানো হয়, তা হলে একই সঙ্গে একটি বিস্তৃত কার্বন সিঙ্ক বা আধারের অবলুপ্তি ঘটে এবং সে ক্ষেত্রে উৎপাদিত জৈব জ্বালানি স্বাভাবিক ভাবেইকার্বন নিরপেক্ষহয় না। জঙ্গল কেটে ফেলা বাজমির ব্যবহারে পরিবর্তন(এল ইউ সি) — যেমনটা পাঠ্যপুস্তকে বলা হয়ে থাকে — জৈব জ্বালানিগুলির পরিবেশগত সুবিধার উল্লেখযোগ্য ভাবে হ্রাস ঘটায়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় ব্রাজিল থেকে আখভিত্তিক ইথানলের ক্রমবর্ধমান চাহিদার ফলে ব্রাজিলীয় রেন ফরেস্ট বা ভারী বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চলটিব্যাপক পরিমাণে বনভূমি ধ্বংসের সম্মুখীনহয়েছে। তাই ব্রাজিলীয় ইথানল ব্যবহারের ফলে সৃষ্ট জি এইচ জি-র পরিমাণ পেট্রোল ব্যবহারের ফলে সৃষ্ট নিঃসরণের তুলনায় প্রায় ৬০% বেশি।
যানবাহনে জৈব জ্বালানির দহনের ফলে পরিবেশে পুনরায় সি ও টু মিশতে থাকলেও নতুন জৈব জ্বালানি উৎপাদনকারী গাছগুলির পুনর্বৃদ্ধি কার্বন ডাই অক্সাইড নিঃসরণের ভারসাম্য রক্ষা করে, অর্থাৎ জৈব জ্বালানিগুলি তত্ত্বগত দিক থেকে কার্বন নিরপেক্ষ।
ভারতীয় পরিপ্রেক্ষিতে ভুট্টা নির্ভর ইথানল উৎপাদনের এল সি এ গবেষণা বা চিনের সয়াবিন নির্ভর জৈব ডিজেল উৎপাদন আরও বেশি প্রাসঙ্গিক হতে পারে। গবেষণাটিতে দেখা গেছে যে, চিনে প্রস্তুত ইথানল এবং জৈব ডিজেল থেকে হওয়া গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণের পরিমাণ পেট্রোল বা ডিজেল থেকে হওয়া নিঃসরণের তুলনায় যথাক্রমে৪০%এবং২০%বেশি। এমনটা হওয়ার জন্য সারের অপেক্ষাকৃত বেশি ব্যবহার, অধিক প্রক্রিয়াকরণ শক্তির প্রয়োজনীয়তা এবং কয়লাভিত্তিক শক্তি সমন্বয়কে দায়ী করা যেতে পারে। এল ইউ সি সংক্রান্ত জি এইচ জি নিঃসরণকে বাদ দিলে অধিকাংশ ওয়ান জি বি বা প্রথম প্রজন্মের জৈব জ্বালানিগুলির জি এইচ জি নিঃসরণের মাত্রাএম জে প্রতি ৩ থেকে ১১১ গ্রামকার্বন ডাই অক্সাইডের সমতুল্য (সমতুল্য কার্বন ডাই অক্সাইড প্রতি মিলিয়ন জুলস), যা পেট্রোলজাত জ্বালানির তুলনায় কম। কিন্তু এল ইউ সি বিবেচনা করা হলে দেখা যাবে যে, ই ইউ-এর (ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন) মতো জলবায়ু সচেতন অঞ্চলগুলিতে ব্যবহৃত অধিকাংশ জৈব জ্বালানিরই জি এইচ জি নিঃসরণের পরিমাণ পেট্রোল এবং ডিজেলের তুলনায় অনেকটা বেশি।
সমস্যা
জৈব জ্বালানি সংক্রান্ত নীতি আয়োগের রিপোর্ট প্রকাশের পরবর্তী আলোচনায় ইথানল মিশ্রণের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার ফলে সম্ভাব্য খাদ্য নিরাপত্তা এবং জল সংক্রান্ত প্রতিবন্ধকতার মতোবিষয়গুলি উঠে এসেছে। আখ এমন একটি জলনির্ভর শস্য যা খাদ্যশস্য উৎপাদনের জন্য নির্ধারিত জমিতে চাষ করা হয় এবং এ কথা সহজবোধ্য যে, জ্বালানিক্ষেত্রেপ্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক চাহিদা, জল এবং খাদ্য নিরাপত্তা উভয়কেই সঙ্কটের মুখে ফেলতে পারে। শুধু মাত্র প্রয়োজনাতিরিক্ত আখ এবং চালই জ্বালানি উৎপাদনের কাজে ব্যবহৃত হয়, এমন মতামত দীর্ঘমেয়াদি ক্ষেত্রে যথাযথ না-ও হতে পারে।বর্ষাকালেপ্রত্যাশার তুলনায় অধিক বৃষ্টিপাতের ফলে হওয়া অতিরিক্ত খাদ্যশস্য উৎপাদন আগামিদিনে একটি উচ্চাকাঙ্ক্ষী ইথানল মিশ্রণকে বজায় রাখতে সক্ষম হবে না।নীতি আয়োগেররিপোর্ট অনুযায়ী ভারত বর্তমানে ইথানলের একটি প্রধান আমদানিকারী দেশ অর্থাৎ শক্তি নিরাপত্তা বৃদ্ধি করতে এখনও তার অবদান যথেষ্ট নয়। অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বৃদ্ধি না পেলে কেবল মাত্র আমদানির পরিমাণ বাড়িয়েই ইথানল মিশ্রণের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা সম্ভব হবে। যদিও অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বৃদ্ধি করা ভারতের সামনে একটি চ্যালেঞ্জস্বরূপ এবং খাদ্য নিরাপত্তার বিনিময়েইএমনটা করা সম্ভব। কারণ জৈব জ্বালানির অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় আবাদি জমির পরিমাণ খুবই কম। ইথানল মিশ্রণের মাধ্যমে যানবাহনের টেল-পাইপ থেকে হওয়া নিঃসরণের পরিমাণ হ্রাস করার প্রভাব শুধু সামান্যই নয়, সড়ক পরিবহণের সঙ্গে যুক্ত সব যানবাহনের বৈদ্যুতিকরণের ভারতীয় লক্ষ্যমাত্রার প্রেক্ষিতে অপ্রয়োজনীয়ও বটে। জৈব জ্বালানি উৎপাদনের ফলেকৃষক সম্প্রদায় এবং গ্রামীণ অর্থনীতিগুলিরপ্রাপ্ত সুবিধাই বিশ্বব্যাপী জৈব জ্বালানি উৎপাদনের নেপথ্যে প্রধান রাজনৈতিক চালিকাশক্তি। জ্বালানি উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় সম্পদের অভাবে জর্জরিত ভারতের জন্য এই পদক্ষেপ উচ্চ মূল্যের বিনিময়ে মাত্র মুষ্টিমেয় সুবিধাই এনে দিতে পারে।
সূত্র: আন্তর্জাতিক শক্তি সংস্থা, পুনর্নবীকরণযোগ্য সম্পদ ২০২১
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.
Akhilesh Sati is a Programme Manager working under ORFs Energy Initiative for more than fifteen years. With Statistics as academic background his core area of ...
Vinod Kumar, Assistant Manager, Energy and Climate Change Content Development of the Energy News Monitor Energy and Climate Change.
Member of the Energy News Monitor production ...