Author : Vivek Mishra

Expert Speak Raisina Debates
Published on Apr 08, 2022 Updated 7 Days ago

বাইডেনের স্টেট অফ দি ইউনিয়ন ভাষণটি ইউক্রেনের সংকট ও আফগানিস্তানের মতো বৈশ্বিক সমস্যাগুলির বিপরীতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ সমস্যাগুলির উপরেই বেশি গুরুত্ব আরোপ করেছে।

বাইডেনের স্টেট অফ দি ইউনিয়ন বক্তৃতা: অভ্যন্তরমুখী দৃষ্টিভঙ্গির জোরালো প্রকাশ

Source Image: Adam Schultz — Flickr

বাইডেনের স্টেট অফ দি ইউনিয়ন বক্তৃতা: অভ্যন্তরমুখী দৃষ্টিভঙ্গির জোরালো প্রকাশ

স্টেট অফ দি ইউনিয়ন ভাষণ হল কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে মার্কিন প্রেসিডেন্টের বার্ষিক ভাষণ। সাধারণত এই ভাষণটি মার্কিন প্রেসিডেন্টদের তাঁদের কৃতিত্ব উপস্থাপন করা, চ্যালেঞ্জ ও অগ্রাধিকারগুলিকে চিহ্নিত করা, এবং তার পাশাপাশি আইনি প্রস্তাবগুলি ঘোষণা করার একটি সুযোগ। নেতিবাচক দিক থেকে দেখলে, স্টেট অফ দি ইউনিয়ন ভাষণকে প্রায়শই প্রেসিডেন্টের ‘‌‌কী কী করণীয়’‌ তালিকা হিসেবে সাধারণ মানুষ উপহাস করে থাকেন। কিন্তু বাইডেন সেই সমালোচনা অতিক্রম করেছেন ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়ে এবং মার্কিন অর্থনীতিকে ফের নিজের পায়ে দাঁড় করানোর ভিত্তিতে শক্তিশালী অভ্যন্তরমুখী দৃষ্টিভঙ্গি অবলম্বন করে। বাইডেনের ঘোষণাগুলি এই বছরের শেষের দিকের মধ্যবর্তী নির্বাচনে তাঁর রাজনৈতিক ভাগ্য কী ভাবে নির্ধারণ করে সেটাই এখন দেখার।

২ মার্চ বাইডেন কংগ্রেসের সামনে তাঁর গত এক বছরের কাজের খতিয়ান রেখে বার্ষিক স্টেট অফ দি ইউনিয়ন ভাষণ দেন। বাইডেনের ভাষণটি শুরুতেই ইউক্রেনের বিরুদ্ধে চলতি সামরিক অভিযান থেকে রাশিয়াকে নিবৃত্ত করার জন্য মার্কিন সরকার কী কী পদক্ষেপ করেছে সে সম্পর্কে ‘‌চড়া সুরে’‌ বাঁধা ছিল। বাইডেন তাঁর দুর্দান্ত স্বতঃস্ফূর্ত ভঙ্গিমাতেই তার দ্বিতীয় স্টেট অফ দি ইউনিয়ন ভাষণ দিয়েছেন। বেশিরভাগ প্রেসিডেন্সিয়াল স্টেট অফ দি ইউনিয়ন ভাষণগুলির বৈশিষ্ট্য যেমন হয়, সেই পথ ধরে বাইডেনের বক্তৃতার মধ্যেও মাঝেমাঝেই এসেছে তাঁর প্রশাসন গত এক বছরে যা বাস্তবায়িত করেছে বা বাস্তবায়িত করতে চেয়েছে সেই প্রসঙ্গ এবং সেই সব নীতির ফলে লাভবান মানুষদের কথা। বাইডেনের বক্তৃতায় প্রতীকেরও ছড়াছড়ি ছিল। ফার্স্ট লেডি জিল বাইডেন সহ আইনসভার অনেক সদস্যই ইউক্রেনের সমর্থনে হলুদ ও নীল রঙের পোশাক পরেছিলেন।

কিন্তু বাইডেন সেই সমালোচনা অতিক্রম করেছেন ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়ে এবং মার্কিন অর্থনীতিকে ফের নিজের পায়ে দাঁড় করানোর ভিত্তিতে শক্তিশালী অভ্যন্তরমুখী দৃষ্টিভঙ্গি অবলম্বন করে।

ইউক্রেনীয় সংকটের প্রেক্ষাপটে বক্তৃতার সময়কাল এমন ছিল যে ইতিমধ্যে বক্তৃতার বেশ কয়েকটি খসড়া তৈরি করতে হয়েছিল। ইউক্রেন নিয়ে বাইডেনের সুর বাঁধা হয়েছিল তাঁর প্রশাসনের গণতান্ত্রিক প্রয়াস তুলে ধরার জন্য, এবং তা অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক ঐক্য ও ট্রান্স-আটলান্টিক সম্পর্ককে জোরদার করেছে। তবে এই অনুভবভিত্তিক প্রয়াসটিকে তুলে ধরা হয়েছিল এমন ভাবে যাতে মনে হয় এগুলি রাশিয়ার বিরুদ্ধে যথেষ্ট শক্তিশালী পদক্ষেপ। কিন্তু সম্ভবত ইউরেশিয়ার কেন্দ্রস্থলের ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে তা সে ভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল না।

রাশিয়ার বিরুদ্ধে পদক্ষেপগুলির ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বাইডেন রুশ অলিগার্ক ও দুর্নীতিগ্রস্ত নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে মার্কিন বিচার বিভাগের নেতৃত্বে টাস্ক ফোর্স তৈরির কথা ঘোষণা করেন, যার অর্থ ছিল পুতিনের ঘনিষ্ঠ বৃত্তের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপগুলি তুলে ধরা। ইউক্রেনের সঙ্কটকে অগ্রাধিকার দেওয়ার ঘটনা এই ধারণাই দৃঢ় করে যে গত বছরটি তাঁর প্রশাসনের জন্য বিদেশ নীতির ক্ষেত্রে একটি বড় ধরনের উদ্বেগের বিষয় ছিল। তারপর তাঁর ভাষণের বাকি অংশ জুড়ে অভ্যন্তরীণ ইস্যুতে কথা বলা এই ঘটনাটিকেই প্রতিষ্ঠা করে যে বাইডেন প্রশাসনের কাছে আমেরিকার ঐতিহ্যগত বিদেশ সংক্রান্ত বিষয়গুলির চেয়ে বেশি গুরুত্ব পাবে ঘরোয়া বিষয়গুলি। বাইডেনের ভাষণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক সীমাবদ্ধতাগুলির অনুল্লেখ থেকেই সেই সীমাবদ্ধতাগুলিও স্পষ্ট হয়ে যায়। নিশ্চিত ভাবেই বাইডেনের বক্তৃতার তিনটি প্রধান বিষয় ছিল ইউক্রেনের প্রতি আমেরিকার সমর্থন, দেশের অর্থনীতি, এবং অতিমারি মোকাবিলা।

বাইডেনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অভ্যন্তরীণ বিষয় ছিল উচ্চ মূল্যস্ফীতি মোকাবিলায় নেওয়া ব্যবস্থাদি। বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতি চার দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ। বাইডেনের রাজনৈতিক দৃশ্যপট মুদ্রাস্ফীতি ও মূল্যবৃদ্ধির দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে। বেশিরভাগ আমেরিকান, প্রতি ১০ জনে ৭ জন , এখন বিশ্বাস করেন যে সর্বোত্তম পদ্ধতিতে মূল্যস্ফীতির মোকাবিলা করা হয়নি। বাইডেন অতিমারি, মূল্যস্ফীতি ও বিদেশি সরবরাহ শৃঙ্খলের উপর নির্ভরতাকে সরাসরি সংযুক্ত করে ‘‌মেক ইন আমেরিকা’‌র পক্ষে সওয়াল করেন। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে স্বল্পমেয়াদি ক্ষেত্রে দেশীয় উৎপাদনে উৎসাহ দান কী ভাবে মূল্যস্ফীতির মোকাবিলা করবে সে সম্পর্কে সংশয় এবং স্পষ্টতার অভাব রয়েছে।

বাইডেন অতিমারি, মূল্যস্ফীতি ও বিদেশি সরবরাহ শৃঙ্খলের উপর নির্ভরতাকে সরাসরি সংযুক্ত করে ‘‌মেক ইন আমেরিকা’‌র পক্ষে সওয়াল করেন।

বাইডেন তাঁর ভাষণে ডেমোক্র্যাটদের বিরুদ্ধে কিছু নেতিবাচক ধারণা গড়ে ওঠার আগেই তা মুছে ফেলার চেষ্টা করেছিলেন, কারণ তা এই বছরের শেষের দিকের মধ্যবর্তী নির্বাচনে তাঁদের ক্ষতি করতে পারে। হাউস ডেমোক্র্যাটদের প্রচারণার ফাঁস হওয়া মেমো অনুসারে রিপাবলিকানরা সম্ভবত তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে ডেমোক্র্যাটদের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানাবে: ‘‌সামাজিক চেতনা’‌; ছিদ্রযুক্ত সীমান্ত, এবং পুলিশ তহবিল ছাঁটাই। বাইডেন তাঁর ভাষণে শেষোক্ত দুটি বিষয়ের মোকাবিলায় যথেষ্ট মনোযোগ দিয়েছিলেন। তিনি ‘‌স্বপ্নদ্রষ্টাদের’‌ বিষয়ে এবং অভিবাসন সমস্যা মোকাবিলা করার জন্য কী ভাবে আমেরিকার সীমান্ত সুরক্ষিত করা দরকার তা নিয়ে কথা বলেন। পুলিশকে অর্থায়নের জন্য তাঁর সমর্থনের লক্ষ্য ছিল পুলিশ তহবিল ছাঁটাই নিয়ে রিপাবলিকানদের বিরোধিতা ভোঁতা করা এবং এমন একটি কর্মসূচি নেওয়া যা হয়তো মূল গণতান্ত্রিক বা দ্বিদলীয় স্বার্থের প্রতিনিধিত্ব করে না।

আশ্চর্যজনক ভাবে বাইডেন আফগানিস্তানের ব্যর্থতা এবং বৈদেশিক নীতি সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পূর্ণ এড়িয়ে গেছেন। তাঁর ভাষণের শুরুতে প্রচুর ডেস্ক চাপড়ানি সত্ত্বেও বাইডেন রাশিয়ার বাইরে যেতে পারেননি, যা তাঁর স্টেট অফ দি ইউনিয়ন ভাষণে তাঁর বিদেশ নীতিতে স্থান পেয়েছে ইউক্রেনের অস্তিত্বের সংকট হিসেবে। একটি বিধ্বংসী মানবিক সঙ্কট যে আফগানিস্তানে অবিরত প্রভাব ফেলছে, এবং কাবুলের সম্পদ ফ্রিজ করার ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও যে জড়িত আছে, রাশিয়া পেরিয়ে বিদেশ নীতির সেই সব বিষয় কাঙ্ক্ষিত মনোযোগ পায়নি। অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে বাইডেন তাঁর সরকারের ‘‌বিল্ড ব্যাক বেটার’‌ কর্মসূচির অধীনে চালু করা পরিকাঠামোগত উদ্যোগগুলির কথা তুলে ধরেছেন। অন্য যে সব গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে জোর দেওয়া হয়েছে তার মধ্যে আছে ওষুধের দাম কমানো এবং ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্যের ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক ভাবে প্রতিযোগিতামূলক হয়ে ওঠার উপর মনোনিবেশ, বিশেষ করে ইনসুলিনের মতো ওষুধের জন্য যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কেনা সম্ভবত সবচেয়ে অসাধ্য।

এক বছরের মধ্যে বাইডেনকে তাঁর বিদেশনীতিতে অভূতপূর্ব ভাবে দুবার পরীক্ষা দিতে হয়েছে, একবার আফগানিস্তানে এবং দ্বিতীয় বার চলতি ইউক্রেন সংকটে। এমন একটি ধারণা রয়েছে যে বাইডেন তার বক্তৃতায় ট্রান্স-আটলান্টিক সম্পর্ক আরও বেশি দৃঢ় করার উপর জোর দিতে পারতেন। তা হলে এক শক্তিশালী ঘরোয়া দৃষ্টিভঙ্গি এবং বিদেশ সংক্রান্ত দৃঢ় মনোভাবের মধ্যে ভারসাম্য বজায় থাকত। তবে বাইডেন তাঁর ভাষা ও বিষয়বস্তুর মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিভাজন এবং বিদেশি নীতির বাধ্যবাধকতার মিশ্রণের কারণে তাঁর শাসন সম্পর্কে মানুষের ক্লান্তি কাটানোর চেষ্টা করেছেন।

একটি বিধ্বংসী মানবিক সঙ্কট যে আফগানিস্তানে অবিরত প্রভাব ফেলছে, এবং কাবুলের সম্পদ ফ্রিজ করার ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও যে জড়িত আছে, রাশিয়া পেরিয়ে বিদেশনীতির সেই সব বিষয় কাঙ্ক্ষিত মনোযোগ পায়নি।

স্টেট অফ দি ইউনিয়ন ভাষণটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বহু মানুষ শোনেন ও দেখেন। বেশিরভাগ প্রেসিডেন্ট এটিকে অসন্তুষ্ট ভোটারদের নিজের দিকে ফিরিয়ে আনার প্রয়াস হিসেবে দেখেন। বাইডেনের জন্যও, যাঁর অনুমোদনের রেটিং যথেষ্ট কম এবং এই বছরের শেষের দিকে মধ্যবর্তী নির্বাচনের পক্ষে সমস্যাসঙ্কুল, এই ভাষণটি তাঁর রাজনৈতিক ভাগ্যকে উৎসাহিত করার একটি সুযোগ ছিল। এই ভাষণের পরে তাঁর অনুমোদনের রেটিং অস্বাভাবিক বড় ধরনের লাফ দিয়ে ৪৭ শতাংশে পৌঁছে যাওয়া বাইডেনকে রাজনৈতিক ভরসা দিতে পারে, তবে এই ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা আগামী আট মাস বজায় থাকবে কিনা তার উপর অনেক কিছু নির্ভর করবে। একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, তাঁর ২০২১ সালের ভাষণ থেকে সরে গিয়ে এবার বাইডেন যে তাঁর বক্তৃতায় জাতিগত (‌রেস)‌ প্রশ্ন এড়িয়ে গেছেন, তাও কিন্তু নজরে এসেছে। তবে বাইডেন কেতানজি ব্রাউন জ্যাকসনের মনোনয়নে অনুমোদন দিয়েছেন, যিনি মার্কিন ইতিহাসে প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ মহিলা হিসেবে সুপ্রিম কোর্টে বসতে পারেন। প্রেসিডেন্ট পদে বাইডেনের বিজয়ের পথে কৃষ্ণাঙ্গ ভোটারদের বড় ভূমিকা ছিল, এবং তা হাউস ও সেনেট উভয় কক্ষেই ডেমোক্র্যাটিক পার্টির জন্য সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিশ্চিত করেছিল। চলতি বছরের মধ্যবর্তী নির্বাচনেও তাঁদের সমর্থন ডেমোক্র্যাটিক পার্টির জন্য ততটাই গুরুত্বপূর্ণ হবে। পরিশেষে, যে হেতু স্টেট অফ দি ইউনিয়ন ভাষণের পরে ইউক্রেনের সঙ্কট মোকাবিলায় বাইডেনের সমর্থন বেড়েছে, তাই ইউক্রেনীয় সংকট কী ভাবে শেষ হয়, রাশিয়ার বিরুদ্ধে বর্তমান নিষেধাজ্ঞাগুলি কতটা কার্যকর হয় এবং বিশ্বে মার্কিন নেতৃত্বের ক্ষেত্রে ইউক্রেন-পরবর্তী সময় কী পরিস্থিতি তৈরি করে, তা দেখা এখনও বাকি আছে। এই উন্মুক্ত প্রশ্নগুলি প্রেসিডেন্ট বাইডেন এবং ডেমোক্র্যাটিক পার্টিকে তাড়া করে ফিরবে।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.