-
CENTRES
Progammes & Centres
Location
সম্পদের বৈশ্বিক ঘাটতি উন্নত এবং উন্নয়নশীল বিশ্বের উপর তির্যক প্রভাব ফেলেছে। উন্নয়নশীল বিশ্বের পক্ষে এটির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়া আরও কঠিন হয়েছে।
অপ্রতিসম উন্নয়নের বাস্তবতা এবং স্থিতিশীল উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা
কোভিড-১৯ অতিমারি কেবলমাত্র সঙ্কট মোকাবিলা করার প্রেক্ষিতে দেশের অভ্যন্তরে ও বিশ্বব্যাপী সম্পদের ক্রমবর্ধমান ব্যবধানকে উন্মোচিতই করেনি, একই সঙ্গে এর তির্যক ম্যাক্রো-ইকনমিক এবং উন্নয়নমূলক প্রভাবগুলিকেও প্রকাশ করেছে। নিশ্চিত ভাবে এ কথা বলা যায় যে, উন্নত দেশগুলিতে আয়ের বৈষম্য অতিমারির কারণে আরও বৃদ্ধি পেয়েছে যেখানে শীর্ষ ১ শতাংশ গত দু’বছরে প্রচুর পরিমাণে অপ্রত্যাশিত উপার্জনের সাক্ষী থেকেছে। ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে জুন মাসের মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বেকারত্ব ১৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেলেও, একই সময়ে পাঁচ জন ধনীতম আমেরিকানের (জেফ বেজোস, বিল গেটস, ওয়ারেন বাফেট, মার্ক জুকারবার্গ এবং ল্যারি এলিসন) সম্পদের পরিমাণ ২৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। তাঁদের বর্তমান সম্মিলিত সম্পদ সমগ্র আফ্রিকা মহাদেশের মোট সম্মিলিত সম্পদের চেয়েও বেশি।
আবার গ্লোবাল নর্থ এবং সাউথের মধ্যে উন্নয়নমূলক মাপকাঠিগুলির পার্থক্যও অত্যন্ত স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। শিক্ষা এমনই একটি উদাহরণ– অতিমারিজনিত কারণে উন্নততর অর্থনীতিসম্পন্ন দেশগুলির শিশুরা ২০২০ সালে গড়ে ১৫ দিন স্কুল যেতে পারেনি। সেখানে উদীয়মান বাজার অর্থনীতির দেশগুলির ক্ষেত্রে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৫-এ, এবং সবচেয়ে দরিদ্র দেশগুলির শিশুদের ক্ষেত্রে এই সংখ্যা ৭২ দিন। একই রকম ভাবে উন্নয়নশীল দেশগুলিতে আয়ের উপর অনেক বেশি প্রভাব পড়েছে। দরিদ্রতর অর্থনীতিসম্পন্ন দেশগুলির অপ্রাতিষ্ঠানিক ক্ষেত্রগুলির উপর অতি নির্ভরতার অর্থ হল যখন লকডাউন এবং অন্যান্য বিধিনিষেধ আদর্শ হয়ে উঠতে শুরু করে, তখন নির্দিষ্ট ম্যাক্রো-ইকনমিক ভারসাম্য রক্ষাকারী বাজার শক্তির পতনের কারণে বেকারত্ব এবং দারিদ্রও বাড়তে থাকে।
দরিদ্রতর অর্থনীতিসম্পন্ন দেশগুলির অপ্রাতিষ্ঠানিক ক্ষেত্রগুলির উপর অতি নির্ভরতার অর্থ হল যখন লকডাউন এবং অন্যান্য বিধিনিষেধ আদর্শ হয়ে উঠতে শুরু করে, তখন নির্দিষ্ট ম্যাক্রো-ইকনমিক ভারসাম্য রক্ষাকারী বাজার শক্তির পতনের কারণে বেকারত্ব এবং দারিদ্রও বাড়তে থাকে।
অর্থনীতির পতনের ফলে সৃষ্ট ঘাটতিগুলি পূরণ করার উদ্দেশ্যে উন্নয়নশীল বিশ্বের সরকারগুলি সামাজিক নিরাপত্তা প্রকল্প এবং সুবিধাগুলির মাধ্যমে দরিদ্রদের উপর বোঝা কমানোর চেষ্টা চালালেও উন্নত অর্থনীতিসম্পন্ন দেশগুলিতে প্রাপ্ত সুবিধের তুলনায় তা নিতান্তই নগণ্য। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যোগ্য প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকরা প্রণোদনা হিসেবে ন্যূনতম ১২০০ মার্কিন ডলার পেয়েছেন, যখন উন্নয়নশীল দেশগুলিতে সরকারি প্রচেষ্টা উচ্চ রাজস্ব ঘাটতির কারণে অপ্রতুল ছিল এবং প্রায়শই অন্তর্নিহিত দুর্নীতির কারণে উদ্দিষ্ট সুবিধাভোগীদের কাছে পৌঁছতে পারেনি।
অন্য দিকে শিক্ষা ও অফিস অনলাইনে স্থানান্তরিত হওয়ায় ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটানোর জন্য প্রযুক্তির প্রতি অবিলম্বে মনোযোগ দেওয়া আবশ্যক হয়ে ওঠে। সরকারি সংস্থা এবং অন্যান্য সংস্থার মধ্যে আরও ভাল ভার্চুয়াল নেটওয়ার্ক তৈরি করার প্রয়োজনীয়তা এর আগে কখনও এত প্রবল ছিল না। এটি সামগ্রিক ভাবে দেশগুলিকে উপকৃত করলেও, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং আফ্রিকার মতো দরিদ্র দেশগুলিতে ধনী-দরিদ্র বিভাজনকে স্থায়িত্ব দিয়েছে, যেখানে একমাত্র ধনী শ্রেণিগুলিই ভবিষ্যতে এই ধরনের বিশেষাধিকার নিরবচ্ছিন্ন ভাবে পেতে সক্ষম হবে। যদিও উন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশগুলি, যেখানে প্রযুক্তির প্রাচুর্য এবং তা ব্যবহারের অধিকার বর্তমান, সেগুলি এ হেন বৈষম্য দ্বারা জর্জরিত নয়, অন্তত অনুন্নত অর্থনীতির মতো তো নয়ই।
এই প্রেক্ষাপটে এ কথা স্পষ্ট যে, বিশ্ব অর্থনীতিগুলি উন্নত এবং উন্নয়নশীল বিশ্বের মধ্যে বহুমেরুবিশিষ্ট কেন্দ্রাভিমুখী গোষ্ঠীতে রূপান্তরের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। একই সঙ্গে রাষ্ট্রপুঞ্জের স্থিতিশীল উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এস ডি জি), যেটিকে বিশ্বকে একটি ন্যায়সঙ্গত, শান্তিপূর্ণ এবং সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সুনিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে একটি বৈশ্বিক ধাক্কা হিসেবে কল্পনা করা হয়েছে, সেটি সমাজ, অর্থনীতি এবং পরিবেশ সংক্রান্ত সম্মিলিত দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে স্থিতিশীল উন্নয়ন চ্যালেঞ্জকে মোকাবিলা করার চেষ্টা করে। এস ডি জি-গুলিতে সমগ্র বিশ্ব জুড়ে এ হেন পরিবর্তন আনতে চাওয়া হলেও গ্লোবাল নর্থ ও সাউথের মধ্যে সংশ্লিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ক্ষমতার বৈষম্য এ ক্ষেত্রে বৃহত্তম অন্তরায়। অতিমারি নিঃসন্দেহে এই প্রবণতাগুলির প্রকাশের উপর ক্ষতিকারক প্রভাব ফেলেছে।
চিত্র ১ : এস ডি জি স্কোরস ২০২২ বাই গ্রুপিং (১০০-র মধ্যে)
প্রথমত, এস ডি জি কাঠামোর মধ্যে অন্তর্নিহিত ট্রেড অফ রয়েছে, যেখানে একটি লক্ষ্যমাত্রা অন্যান্য লক্ষ্যমাত্রার উপর ইতিবাচক বা নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, এস ডি জি ৯-এর (শিল্প, উদ্ভাবন এবং পরিকাঠামো) সর্বদাই এস ডি জি ১৩-র (জলবায়ু কর্মসূচির) উপরে নেতিবাচক প্রভাব ফেলার সহজাত প্রবণতা থাকবে। স্থিতিশীল উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রাগুলির মধ্যে আন্তঃসম্পর্কের বিন্যাস এতটাই জটিল যে অতিমারির বিভিন্ন প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাবের কারণে এক বা একাধিক লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের প্রক্রিয়া ব্যর্থ হলে তা সমগ্র পরিকাঠামোটির কার্যকারিতাকে ব্যাহত করে। এই উন্নয়ন প্রকল্পগুলির দুর্বলতা দরিদ্র দেশগুলিতে আরও বেশি স্পষ্ট এবং এর ফলে এস ডি জি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের নিরিখে এগুলির ব্যর্থতার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়।
দ্বিতীয়ত, একটি দেশের কার্যকলাপ অন্য দেশের এস ডি জি অর্জনের ক্ষমতাকে প্রভাবিত করতে পারে। এই ধরনের অর্থনৈতিক, পরিবেশগত এবং সামাজিক প্রভাবগুলি প্রায়শই প্রাপক দেশগুলির জন্য ব্যয় বা ক্ষতিতে রূপান্তরিত হয় এবং তা তাদের যে কোনও প্রচেষ্টাকেই থামিয়ে দিতে পারে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, উন্নত অর্থনীতির ‘গ্রিন গ্রোথ’ প্রক্রিয়াগুলি প্রায়শই দরিদ্র দেশগুলিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। কারণ উন্নত অর্থনীতির দেশগুলি তাদের উত্পাদন ইউনিটগুলিকে দরিদ্র দেশগুলিতে স্থানান্তরিত করেছে। অতিমারির ফলে সৃষ্ট বিরতি ২০৩০ সালের মধ্যে এস ডি জি পূরণের গুরুত্বকে ত্বরান্বিত করলেও তা দরিদ্র দেশগুলির জন্য শুধু ঝুঁকির পরিমাণই বাড়িয়েছে। যদি এক বা একাধিক দেশের একটি গোষ্ঠী অপর দেশের ক্ষতির বিনিময়ে উন্নতি সাধন করে থাকে, তা হলে গোটা বৈশ্বিক সম্প্রদায় নিছক একটি শূন্য অঙ্কের খেলায় জড়িয়ে পড়বে, যা এস ডি জি-গুলির সামগ্রিক প্রকৃতির পরিপ্রেক্ষিতে অর্থহীন।
অর্থনৈতিক, পরিবেশগত এবং সামাজিক প্রভাবগুলি প্রায়শই প্রাপক দেশগুলির জন্য ব্যয় বা ক্ষতিতে রূপান্তরিত হয় এবং তা তাদের যে কোনও প্রচেষ্টাকেই থামিয়ে দিতে পারে।
তৃতীয়ত, এস ডি জি লক্ষ্যমাত্রা পূরণের জন্য নিঃসন্দেহে অতিমারি-পরবর্তী বিশ্বে সরকারি ও বেসরকারি উভয় ক্ষেত্রেই নতুন করে মনোনিবেশ এবং পর্যাপ্ত অর্থায়নের প্রয়োজন হবে। একটি শক্তিশালী বেসরকারি ক্ষেত্রের অভাব এবং অপ্রতুল আর্থিক সংস্থান উন্নত দেশগুলির তুলনায় উন্নয়নশীল বিশ্বের জন্য আরও চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠবে। এই অবস্থা অতিমারি-প্ররোচিত ম্যাক্রো-ইকনমিক অস্থিতিশীলতার দরুন আরও গুরুতর হয়েছে, মুদ্রাস্ফীতির চাপ থেকে ক্রমবর্ধমান চলতি অ্যাকাউন্ট ঘাটতি খারাপতর হয়েছে, যেমনটা আমরা সাম্প্রতিক সময়ে অনেক উন্নয়নশীল এবং অনুন্নত দেশে লক্ষ করেছি।
পরিশেষে, গ্লোবাল নর্থ ও সাউথের কাছে উপলব্ধ সম্পদের বৈষম্যের মধ্যে প্রয়োজনীয় তথ্যের নাগাল পাওয়ার সুযোগে অসমতা এবং অনুন্নত বৈজ্ঞানিক সক্ষমতা্র প্রশ্নও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে এবং এ ভাবে সেগুলি বিশ্বের ন্যায়সঙ্গত অগ্রগতি অর্জনের পথে এক প্রধান বাধা রূপে কাজ করে। নিম্ন আয়সম্পন্ন দেশগুলি উন্নত দেশগুলির কয়েক দশক আগের উচ্চ প্রযুক্তিগত স্তর ছুঁতেও অক্ষম। সম্পদের বৈশ্বিক ঘাটতি উন্নত এবং উন্নয়নশীল বিশ্বের উপর তির্যক প্রভাব ফেলেছে। উন্নয়নশীল বিশ্বের পক্ষে এটির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়া আরও কঠিন হয়েছে। একটি সক্রিয়তর দৃষ্টিভঙ্গি গ্লোবাল সাউথের জন্য গ্লোবাল নর্থের প্রচেষ্টার সঙ্গে সমন্বিত হওয়া জরুরি। কারণ ২০৩০ সালের মধ্যে এস ডি জি অর্জন করতে হলে এই ধরনের বৈষম্য প্রশমিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
লেখক এই প্রবন্ধে তাঁর গবেষণায় সহায়তার জন্য এন এল এস আই ইউ, বেঙ্গালুরুর রোহান রসের কাছে কৃতজ্ঞ।
মতামত লেখকের নিজস্ব।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.
Soumya Bhowmick is a Fellow and Lead, World Economies and Sustainability at the Centre for New Economic Diplomacy (CNED) at Observer Research Foundation (ORF). He ...
Read More +