Author : Navdeep Suri

Expert Speak Raisina Debates
Published on Mar 08, 2022 Updated 4 Days ago

আবু ধাবির উপরে ক্রমাগত হামলা কি পশ্চিম এশিয়ায় শান্তি স্থাপনের সাম্প্রতিক উদ্যোগের ফলে সৃষ্ট আশায় জল ঢেলে দেবে?

সংযুক্ত আরব আমিরশাহির উপর আক্রমণ পশ্চিম এশিয়ায় জায়মান শান্তি উদ্যোগকেই পরীক্ষার মুখে ফেলেছে

Image Source: Sam Nabi — Flickr/CC BY-SA 2.0

সংযুক্ত আরব আমিরশাহির উপর আক্রমণ পশ্চিম এশিয়ায় জায়মান শান্তি উদ্যোগকেই পরীক্ষার মুখে ফেলেছে

তিন সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরশাহির উপর ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোনের মাধ্যমে চার বার হামলা চালানোর ঘটনা পশ্চিম এশিয়ায় শান্তি উদ্যোগের ভঙ্গুরতার নির্মম পরিচায়ক। ইয়েমেনে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটকে সমর্থন জোগানোর প্রতিশোধ রূপে সংযুক্ত আরব আমিরশাহির উপর চালানো যথাক্রমে ১৭, ২৪ এবং ৩১ জানুয়ারির প্রথম তিনটি হামলার দায়িত্ব নেয় হুতি-রা। হুতিদের সঙ্গে ইরানের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিদ্যমান। ফলে এমনটা অনুমান করা যেতেই পারে যে উক্ত হামলাগুলিতে ব্যবহৃত ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোনগুলি ইরানে নির্মিত এবং লেবাননের হিজবোল্লা প্রযুক্তিবিদরা হামলার জন্য ময়দানে নেমে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা জুগিয়েছে। ২০২২ সালের ২ ফেব্রুয়ারি তিনটি সশস্ত্র ড্রোনের সাহায্যে সংযুক্ত আরব আমিরশাহির অজানা অঞ্চলে আক্রমণ চালানো চতুর্থ হামলাটির জন্য দায়ী অপেক্ষাকৃত অপরিচিত ইরাকি শিয়া গোষ্ঠী, যাদের সঙ্গে ইরানের সম্পর্ক আছে বলে অনুমান করা যায়। ১৭ এবং ৩১ জানুয়ারির ক্ষেপণাস্ত্র হামলাগুলি এবং ২ ফেব্রুয়ারির ড্রোন হামলাটি ব্যর্থ করে দেওয়া গেলেও ২৪ জানুয়ারির ড্রোন হামলায় সীমিত ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি আবু ধাবিতে দু’জন ভারতীয় এবং এক জন পাকিস্তানি নাগরিকের মৃত্যু হয়

তবুও ২০২১ সালের অবসান ঘটেছে এক আশার ঝলকের সঙ্গে। পশ্চিম এশিয়ার কয়েকটি দীর্ঘমেয়াদি বিবাদ খুব সামান্য হলেও সৌহার্দ্যের পুনঃপ্রতিষ্ঠার দিকে এগোচ্ছে। যদিও স্থায়ী সমাধানসূত্র নির্ধারণে এখনও অনেকটা সময় লাগবে।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রস্থান এবং ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের প্রতি বাইডেন প্রশাসনের আগ্রহী হয়ে ওঠা একাধিক আঞ্চলিক শক্তিকে তাদের আন্তঃ-আঞ্চলিক কলহের নিষ্পত্তিতে মনোযোগ দিতে উৎসাহিত করে। কিন্তু প্রক্রিয়াটি আসলে তখনই ত্বরান্বিত হয়, যখন আগস্ট মাসে আমেরিকা বিশৃঙ্খল ভাবে আচমকা আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহার করে নেয়। একই সঙ্গে এটাও স্পষ্ট হয়ে যায় যে, এই অঞ্চলে বিদ্যমান মারাত্মক সংঘাতের নিষ্পত্তির ভার সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরশাহির মতো আঞ্চলিক শক্তিগুলির উপরে বর্তাবে, যার ভবিষ্যৎ নিতান্তই অনিশ্চিত। ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে সৌদি আরবে অনুষ্ঠিত জি সি সি শীর্ষ সম্মেলনে আল উলা চুক্তি অনুযায়ী আরব চতুষ্টয় অর্থাৎ মিশর, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি এবং বাহরিন দ্বারা কাতারকে বয়কট করার বিষয়টির সমাপ্তি ঘটানো হয়। একই বছরের পরের দিকে সংযুক্ত আরব আমিরশাহির ক্ষমতাশালী জাতীয় সুরক্ষা উপদেষ্টা শেখ তাহনুন বিন জায়েদের কাতার এবং তুরস্ক পরিদর্শন এই দেশগুলির সঙ্গে সংযুক্ত আরব আমিরশাহির সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের পথ প্রশস্ত করতে সাহায্য করেছে। আবু ধাবির ক্ষমতাসীন যুবরাজ শেখ মহম্মদ বিন জায়েদ নভেম্বর মাসে আঙ্কারা পরিদর্শনে যান এবং আনুষ্ঠানিক ভাবে টানাপড়েনে ইতি টানেন। এমনকি তিনি ধুঁকতে থাকা তুর্কি অর্থনীতির জন্য এক হাজার কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগের কথাও ঘোষণা করেন। পারস্পরিক সম্পর্কের উন্নতি সুনিশ্চিত করতে প্রেসিডেন্ট এরদোগান যে শীঘ্রই আবু ধাবি সফরে যাবেন, এমনটা আশা করা যাচ্ছে।

তবুও ২০২১ সালের অবসান ঘটেছে এক আশার ঝলকের সঙ্গে। পশ্চিম এশিয়ার কয়েকটি দীর্ঘমেয়াদি বিবাদ খুব সামান্য হলেও সৌহার্দ্যের পুনঃপ্রতিষ্ঠার দিকে এগোচ্ছে। যদিও স্থায়ী সমাধানসূত্র নির্ধারণে এখনও অনেকটা সময় লাগবে।

২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে শেখ তাহনুনের তেহরান পরিদর্শন হয়তো আরও বেশি তাৎপর্যপূর্ণ। সংযুক্ত আরব আমিরশাহির প্রেসিডেন্টের কূটনৈতিক উপদেষ্টা ডক্টর আনওয়ার গারগাশ এই সফরকে ‘অঞ্চলটিতে পারস্পরিক সম্পর্ক এবং সহযোগিতা জোরদার করতে আমিরশাহির প্রচেষ্টার ধারাবাহিকতার উদাহরণ’ রূপে দর্শিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, ‘সংযুক্ত আরব আমিরশাহি আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে ইতিবাচক সম্পর্ক গড়ে তুলতে চায় এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের দিকগুলিকে সুনিশ্চিত করতে চায়।’ তিনি প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং তাঁকে সংযুক্ত আরব আমিরশাহি সফরে আমন্ত্রণ জানান। এই সকল ঘটনা পরম্পরার সঙ্গে সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে যে পারস্পরিক আলাপ-আলোচনা চলছে তার কথা মাথায় রাখলে মনে হতে পারে যে, ইরান এবং উপসাগরের অপর পারে তার দুই প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী দেশের মধ্যে আঁতাতের এক মৌন প্রত্যাশা জন্ম নিচ্ছে।

কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে আবু ধাবির উপরে চালানো হামলাগুলি এই সকল প্রচেষ্টার অনেকগুলির উপরেই প্রশ্নচিহ্ন ঝুলিয়ে দিয়েছে। এবং এই প্রেক্ষিতে এই নাটকের চরিত্রদের প্রতিক্রিয়ার দিকে নজর দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র

অঞ্চলটিতে নিজেদের উপস্থিতি সীমিত করে আনার আপাত ইচ্ছা সত্ত্বেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ফের অঞ্চলটির বর্তমান অবস্থার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে। ১৭ জানুয়ারির ক্ষেপণাস্ত্র আক্রমণের লক্ষ ছিল সংযুক্ত আরব আমিরশাহির কৌশলগত ভাবে গুরুত্বপূর্ণ আল ধাফরা বিমানঘাঁটি, যেখানে মার্কিন বিমানবাহিনীর ৩৮০তম এয়ার এক্সপিডিশনারি উইংটি অবস্থিত। আল ধাফরায় প্রায় ২০০০ মার্কিন সামরিক ও অসামরিক কর্মী থাকার পাশাপাশি সমগ্র ব্যবস্থাটিকে রক্ষার জন্য পেট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র ব্যাটারিও বর্তমান। এক জন মার্কিন কেন্দ্রীয় কম্যান্ড মুখপাত্র জানিয়েছেন যে, দু’টি ক্ষেপণাস্ত্রকে গুলি করে নামিয়ে আনার জন্য পেট্রিয়ট ইন্টারসেপ্টরগুলিকে কাজে লাগানো হয়। এবং এই দু’টি ক্ষেত্রে — সংযুক্ত আরব আমিরশাহি দ্বারা একশো কোটি মার্কিন ডলারেরও বেশি মূল্যে অর্জিত — টার্মিনাল হাই অল্টিটিউড এরিয়া ডিফেন্স (থাড) ব্যবহার করা হয়। সেন্ট্রাল কম্যান্ড প্রধান জেনারেল ফ্র্যাঙ্ক ম্যাকেঞ্জি জানান যে, এই প্রথম বার কোনও সংঘাত ক্ষেত্রে থাড সিস্টেমকে ব্যবহার করা হল

এই আক্রমণের প্রত্যুত্তরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গাইডেড মিসাইল ডেস্ট্রয়ার বা সুনিয়ন্ত্রিত ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংসকারী ইউ এস এস কোল এবং অত্যাধুনিক এফ-২২ যুদ্ধবিমান দ্রুত প্রেরণের মাধ্যমে সংযুক্ত আরব আমিরশাহির প্রতিরক্ষা ক্ষমতাকে মদত জোগায়। শেখ মহম্মদ বিন জায়েদ এবং মার্কিন ডিফেন্স সেক্রেটারি লয়েড অস্টিনের মধ্যে ফোনে কথাবার্তার পরেই আবু ধাবির মার্কিন দূতাবাস এই সাহায্য প্রেরণের কথা সুনিশ্চিত করে এবং পাশাপাশি ‘ইন্টেলিজেন্সের তরফে আগাম সতর্ক বার্তা দিতে থাকা এবং আকাশ প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে সমন্বয় গড়ে তোলার জন্য’ অন্যান্য পদক্ষেপের কথাও ঘোষণা করে। এই সমন্বয়ের দিকটি সংযুক্ত আরব আমিরশাহির এফ-১৬ যুদ্ধবিমান দ্বারা ইয়েমেনের হুতি ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ কেন্দ্রগুলি ধ্বংস করার ক্ষিপ্রতা থেকেই স্পষ্টত দৃশ্যমান হয়।

সংযুক্ত আরব আমিরশাহির প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে উদ্দীপনা জোগাতে এবং অঞ্চলটিতে আমেরিকার নিজস্ব সামরিক পরিকাঠামোর জন্য বিপজ্জনক অবস্থা তথা আবু ধাবির উপর হওয়া হামলাকে যে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে, তা বোঝাতে ৬ ফেব্রুয়ারি জেনারেল ম্যাকেঞ্জি স্বয়ং আবু ধাবিতে উপস্থিত হন। তিনি বলেন যে, এফ-২২ যুদ্ধবিমানে পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ লুক ডাউন রেডার বর্তমান যেগুলি ভূখণ্ডে ব্যবহৃত ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোনের মতো লক্ষ্যগুলিকে শনাক্ত করতে সক্ষম। 

হুতি

প্রথম দর্শনে সংযুক্ত আরব আমিরশাহির উপরে হামলার ঘটনা যুদ্ধক্ষেত্রে নাটকীয় হারের পর হুতিদের হতাশার বহিঃপ্রকাশ বলে মনে হয়। এক মাস আগেও তারা ইয়েমেনের অতিরিক্ত সংযুক্ত অঞ্চলে তাদের জমি শক্ত করার কাজে রত ছিল। তেল সমৃদ্ধ শাবওয়া প্রশাসনিক বিভাগের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ জেলার উপর নিয়ন্ত্রণ কায়েম করার ফলে তাদের জন্য পার্শ্ববর্তী মারিব প্রশাসনিক অঞ্চলের দখল নেওয়ার রাস্তাও খুলে যায়। হুতিদের হাতে শাবওয়া এবং মারিবের পতন প্রেসিডেন্ট আবদ্রাব্বু মনসুর হাদি-র আডেন-কেন্দ্রিক সরকারকে এক অসহায় পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে বাধ্য করত।

হুতি বা ইরাকে সাহায্যকারী দলগুলিকে সামনে রেখে তেহরান ঘটনা পরম্পরার দায় এড়িয়ে যেতে চায় এবং প্রত্যক্ষ ভাবে নিজেদের মতামত জানানোর বদলে অঞ্চল বহির্ভূত মধ্যস্থতাকারীদের ‘মনোযোগ দাও, অন্যথায়…’ জাতীয় অব্যক্ত বার্তা প্রদান করতে চায়। এটি এমন এক সাশ্রয়ী কৌশল যা অতীতেও ইরানের জন্য লাভজনক বলে প্রমাণিত হয়েছে।

পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝতে পেরে সৌদিরা আমিরশাহির সঙ্গে আরও কার্যকর ভাবে সমন্বয় ব্যবস্থা গড়ে তুলতে উদ্যোগী হয় এবং একই সঙ্গে শাবওয়ার গভর্নর মহম্মদ সালেহ বিন আদিও-র অপসারণের জন্য তাদের অনেক দিনের দাবিতে মনোযোগ দিতে বাধ্য হয়। হুতি সেনার অগ্রগতি রুখতে তিনি ব্যর্থ হয়েছেন এবং তাঁর নিজের ইসলামপন্থী ইসলাহ পার্টির সদস্য হওয়া ব্যাপারটিকে আরও জটিল করে তোলে। ইয়েমেনে আমিরশাহির হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে তাঁর কড়া সমালোচনাই সম্ভবত আবু ধাবির সহ্যের সীমা ভেঙে দেয়। কিন্তু আবু ধাবির পছন্দসই প্রার্থী আওয়াদ আল আওলাকির দ্বারা তাঁর অপসারণের পরেই সংযুক্ত আরব আমিরশাহি সমর্থিত আল উইয়াত আল আমালিকা অথবা জায়েন্টস ব্রিগেডস সেনা দ্রুত মাঠে নেমে পড়ে। ১০ জানুয়ারির মধ্যে তারা হুতিদের শাবওয়ার সীমান্তের বাইরে বার করে দিতে সমর্থ হয় এবং এর ফলে আরও এক বার স্পষ্ট হয়ে যায় যে, আমিরশাহি এবং তাদের স্থানীয় সমর্থকেরাই হুতিদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে প্রধান শক্তি।

এর ফলে হুতিদের অবস্থান কী দাঁড়াবে? সাম্প্রতিক ব্যর্থতা কি তাদের নেতৃত্বকে বোঝাতে সক্ষম হবে যে, এই যুদ্ধ জেতা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়? তারা কি প্রকৃত সদিচ্ছার সঙ্গে আলোচনার টেবিলে ফিরে আসতে রাজি হবে? না কি তারা আবু ধাবির উপর হামলা চালাতেই থাকবে যদি তেমনটা তাদের ইরানীয় পৃষ্ঠপোষকদের কৌশলের অনুকূল হয়? এখনকার মতো এই সব কৌশল ব্যর্থ হয়েছে এবং এর ফল উলটো হয়েছে। এ সবের ফলে আমিরশাহি আরও দৃঢ় সঙ্কল্প হয়েছে এবং সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটটি পুনরুজ্জীবিত হয়ে উঠেছে। এরা সকলেই আমেরিকাকে পুনরায় এই কলহের অংশ করে তুলেছে এবং আমেরিকা ইচ্ছা মতো অঞ্চলটি থেকে নিজেদের সরিয়ে নিতে পারে না — এই ধারণাই এমনটা ঘটাতে সাহায্য করেছে।

ইরান

সাম্প্রতিক ঘটনাগুলির প্রেক্ষিতে ইরান এক অত্যাশ্চর্য মৌন অবলম্বন করেছে এবং মূলত হুতিদের ও সরকারি সংবাদপত্র তেহরান টাইমসকে যা বলার বলতে দিচ্ছে। ইরানে তাদের ভূমিকার জন্য সংযুক্ত আরব আমিরশাহিকে যথাযোগ্য শাস্তি দেওয়ার লক্ষ্য এবং আগামি দিনেও আক্রমণের তীব্রতা বৃদ্ধির মতো হুতিদের মুখপাত্রের দেওয়া হুমকি ব্যাপক ভাবে প্রচারিত হলেও হুতি আক্রমণের নিন্দা করা বা তাদের নিয়ন্ত্রণ করার মতো কোনও কিছু বলা বা করা হয়নি। আপাত দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে যে, কৌশলের সঙ্গে পদক্ষেপ করার পাশাপাশি তেহরান এক দিকে ওয়াশিংটনের উপর নজর রাখছে এবং অন্য দিকে তার নজর থাকছে ভিয়েনার জে সি পি ও এ আলোচনার উপরে। যেমন ২০১৯ সালে সৌদি আরবের উপর ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন হামলার ক্ষেত্রে ঘটেছিল, তেমনই সাম্প্রতিকতম ঘটনাগুলির পরিকল্পনায় ইরানের ভূমিকা নিয়ে সন্দেহের বিশেষ অবকাশ নেই। হুতি বা ইরাকে সাহায্যকারী দলগুলিকে সামনে রেখে তেহরান ঘটনা পরম্পরার দায় এড়িয়ে যেতে চায় এবং প্রত্যক্ষ ভাবে নিজেদের মতামত জানানোর বদলে অঞ্চল বহির্ভূত মধ্যস্থতাকারীদের ‘মনোযোগ দাও, অন্যথায়…’ জাতীয় অব্যক্ত বার্তা প্রদান করতে চায়। এটি এমন এক সাশ্রয়ী কৌশল যা অতীতেও ইরানের জন্য লাভজনক বলে প্রমাণিত হয়েছে।

সামনের দিকে তাকালে দেখা যাবে যে, ৮ ফেব্রুয়ারি ভিয়েনায় শুরু হওয়া বর্তমান এবং সম্ভবত চূড়ান্ত পর্বের আলোচনার ফলাফলের উপর অনেক কিছু নির্ভর করবে। ভিয়েনার প্রাথমিক আলোচনা থেকে আভাস পাওয়া যায় যে, সতর্ক আশাবাদের জন্য জায়গা এখনও বর্তমান। আলোচনার প্রাক্কালে মার্কিন বিদেশমন্ত্রকের এক মুখপাত্র বলেছেন, ‘সব পক্ষেরই উদ্বেগের সমাধান করে এমন একটি চুক্তির সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু আগামী সপ্তাহগুলিতে তা বাস্তবায়িত না হলে ইরানের ক্রমবর্ধমান পারমাণবিক অগ্রগতি আমাদের জন্য জে সি পি ও এ-তে ফিরে আসা অসম্ভব করে তুলবে।’ ইরানের বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র সইদ খাতিবজাদে বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র আগামিকাল ভিয়েনায় যে উত্তর দেবে, তা নির্ধারণ করবে আমরা কখন একটি চুক্তিতে পৌঁছতে পারব… আমরা ভিয়েনা আলোচনার বিভিন্ন ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভাবে এগিয়েছি।’ আলোচনায় রুশ মধ্যস্থতাকারী মিখাইল উলিয়ানভ আরও এক ধাপ এগিয়ে বললেন, ‘আমরা শেষ লাইন থেকে পাঁচ মিনিট দূরে… চূড়ান্ত নথির একটি খসড়া তৈরি করা হয়েছে। সেখানে বেশ কয়েকটি পয়েন্ট রয়েছে যেগুলির উপরে আরও কাজ করা দরকার। তবে সেই নথিটি ইতিমধ্যেই আলোচনার টেবিলে চলে এসেছে।’

ইজরায়েল

আব্রাহাম চুক্তির প্রেক্ষিতে সংযুক্ত আরব আমিরশাহি এবং ইজরায়েলের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক উন্নত হয়েছে এবং দুই দেশের মধ্যে সরাসরি উড়ান, ব্যবসায়িক এবং সরকারি প্রতিনিধিদলের নিয়মিত সফর এবং প্রতিরক্ষা, গোয়েন্দা, বৈজ্ঞানিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সহযোগিতার ক্রমবর্ধমান কর্মসূচি গৃহীত হয়েছে। ইরানের প্রতি দুই দেশের একটি সাধারণ বিদ্বেষ বর্তমান এবং কিছু দিন আগে পর্যন্তও উভয় দেশই ইরানকে একটি অস্তিত্ব সঙ্কটের কারণ হিসেবে দেখত। ইজরায়েল মূলত ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে মাথা ঘামালেও সংযুক্ত আরব আমিরশাহিও ইয়েমেন এবং বাহরিন থেকে ইরাক, সিরিয়া এবং লেবানন পর্যন্ত মূলত শিয়া সম্প্রদায়ের মাধ্যমে বেশ কয়েকটি আরব দেশে তার হস্তক্ষেপ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। একই ভাবে ইরান আব্রাহাম চুক্তিকে একটি বিপদ হিসেবে দেখছে এবং এর প্রতিবাদে সুরও চড়িয়েছে। ইরান প্রায়শই ইজরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণকে প্যালেস্তাইনের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা বলে দর্শিয়েছে।

তেহরানের সঙ্গে উন্নততর সম্পর্ক স্থাপনে উদ্যোগী হওয়ার পরে, আবু ধাবি তার প্রতিক্রিয়ায় অত্যন্ত সতর্ক হওয়ার চেষ্টা চালিয়েছে। তারা হুতিদের আক্রমণের নিন্দা করেছে এবং দাবি করেছে যেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অবিলম্বে আবার তাদের সন্ত্রাসবাদী তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে। কিন্তু এমনটা করলেও ইরানি পৃষ্ঠপোষকদের বিরুদ্ধে তারা কোনও কথা বলেনি।

ইজরায়েলের প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হারজগ প্রকৃতপক্ষে আবুধাবিতে একটি ঐতিহাসিক সফরে ছিলেন, যখন ৩১ জানুয়ারি আবু ধাবির উপরে হুতি ক্ষেপণাস্ত্রগুলিকে প্রতিহত করা হয়। কিন্তু এটি প্রেসিডেন্ট হারজগকে তাঁর কর্মসূচি চালিয়ে যেতে বাধা দেয়নি, যার মধ্যে ব্যস্ততম দুবাই এক্সপোতে তাঁর ইজরায়েলি প্যাভিলিয়ন পরিদর্শনও অন্তর্ভুক্ত ছিল। অন্য দিকে, এমন খবর উঠে আসছে যে, ইজরায়েল এখন সেরা মানের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কেনার ক্ষেত্রে সংযুক্ত আরব আমিরশাহির আগ্রহের প্রতি আরও বেশি নমনীয় হতে পারে। এখন এটাই দেখার যে, ইজরায়েল কি তার আয়রন ডোম ব্যবস্থাটি তাদের ব্যবহার করতে দেবে, যা এত দিন তার শহরগুলিকে গাজার হামাস বাহিনী দ্বারা নিক্ষেপ করা ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন আক্রমণ থেকে অবিশ্বাস্য রকমের সুরক্ষা প্রদান করেছে।

সৌদি আরব

হুতি-বিরোধী জোটের নেতা হিসেবে সৌদি আরব আবু ধাবিতে হামলার প্রতিক্রিয়ায় হুতিদের শক্ত ঘাঁটির বিরুদ্ধে বিমান আক্রমণ শুরু করে। রিপোর্টে জানা যাচ্ছে যে, এর ফলে বাস্তবে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ হতাহত এবং সম্ভাব্য কোল্যাটেরাল ড্যামেজের ঘটনা ঘটেছে। রিয়াদও হুতিদের অপ্রতিসম যুদ্ধ কৌশলের ফল ভোগ করছে। সে দেশের শহর এবং বিমানবন্দরগুলি হুতি ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন দ্বারা একাধিক বার আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুতর ছিল ২০১৯ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর সৌদি আরামকো-র আবকাইক খুরাইস কেন্দ্রে হামলা। হুতিরা এই হামলার দায় স্বীকার করলেও অন্যান্য রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, ড্রোনের তরঙ্গ দক্ষিণ ইরাক থেকে বা সম্ভবত ইরান থেকেই নিক্ষেপ করা হয়েছিল।

২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইয়েমেন থেকে তার বেশির ভাগ সৈন্য প্রত্যাহার করার সংযুক্ত আরব আমিরশাহির সিদ্ধান্ত দুই ঘনিষ্ঠ মিত্র দেশের মধ্যে কিছুটা মনোমালিন্যের সৃষ্টি করেছিল এবং গত কয়েক মাস ধরে এই মনোমালিন্যের সুযোগ নিয়ে হুতিরা যুদ্ধক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করতে সমর্থ হয়। কিন্তু সৌদি আরবের সঙ্গে সংযুক্ত আরব আমিরশাহির আন্তঃসহযোগিতার পুনরুজ্জীবন এবং জায়েন্টস ব্রিগেডের প্রতি আমিরশাহির সক্রিয় সমর্থন পরিস্থিতির দ্রুত পরিবর্তন ঘটিয়েছে।

সৌদিরা ইতিমধ্যেই ২০১৬ সালে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন হওয়ার পর থেকে এই প্রথম বার ইরানের সঙ্গে সারবত্তাপূর্ণ আলোচনা চালানোর জন্য ইরাকের সদিচ্ছার উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। কিছু অগ্রগতি স্পষ্ট ভাবে লক্ষ করা গেছে এবং ইরানিরা অর্গানাইজেশন অফ ইসলামিক কোঅপারেশনের (ওআইসি) সদর দফতর জেড্ডায় তিন জন কূটনীতিক পাঠানোর মাধ্যমে নিজেদের প্রতিনিধিত্ব পুনরায় শুরু করেছে। বাগদাদে চার দফা আলোচনার পর ইরানের আধা-সরকারি বার্তা সংস্থা ফারস ৫ ফেব্রুয়ারি জানিয়েছে যে, প্রেসিডেন্ট রাইসি ইরাকের প্রধানমন্ত্রী মুস্তাফা আল কাদিমির সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন এবং জানিয়েছেন যে, ‘ইরান কোনও নির্দিষ্ট ফলাফলে না পৌঁছনো পর্যন্ত এই আলোচনা চালিয়ে যেতে প্রস্তুত। তবে তা একটি মাত্র শর্তেই এবং সেটি হল সৌদিরাও যেন পারস্পরিক বোঝাপড়া এবং সম্মানের বাতাবরণের মধ্যে আলাপ আলোচনা চালাতে আগ্রহী হয়।’

সংযুক্ত আরব আমিরশাহি

এটি উল্লেখযোগ্য যে, আমিরশাহি সব সময় ইয়েমেনি টানাপড়েনে অংশগ্রহণ করতে অনিচ্ছুক ছিল। তারা অনিচ্ছা সত্ত্বেও সৌদি জোটে সামিল হয়েছিল। কারণ তারা জানত যে, সৌদি সেনার পক্ষে একা এই কাজ করা সম্ভব নয়। তারা এটাও বুঝতে পেরেছিল যে, তাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছাড়া সৌদিদের সামরিক ভাবে পিছু হটা আসন্ন এবং তা ইরানকে কৌশলগত সুবিধা দেবে। কিন্তু পাঁচ বছর পরে তারা অনুভব করেছে যে, এই যুদ্ধ অজেয় এবং ইয়েমেনে তাদের ধারাবাহিক উপস্থিতির জন্য যথেষ্ট আর্থিক মূল্য চোকাতে হয়েছে এবং ভাবমূর্তিও নষ্ট হয়েছে। এবং ঠিক এই সময়ই আবু ধাবিও তাদের বিগত দশকের আগ্রাসী বৈদেশিক নীতি গ্রহণের অবস্থান থেকে সরে এসে অঞ্চলটিতে শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য কাজ করতে চাওয়ার কথা ঘোষণা করেছিল।

সংযুক্ত আরব আমিরশাহি এখন পর্যন্ত সরাসরি ইরানের দিকে আঙুল তোলা থেকে বিরত থেকেছে। ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন হামলাগুলি উপসাগরের মাত্র ১৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত অনির্ভরযোগ্য প্রতিবেশীর কার্যকলাপের মুখে দুবাই এবং আবু ধাবির দুর্বলতার বাস্তবকেই তুলে ধরে। তেহরানের সঙ্গে উন্নততর সম্পর্ক স্থাপনে উদ্যোগী হওয়ার পরে, আবু ধাবি তার প্রতিক্রিয়ায় অত্যন্ত সতর্ক হওয়ার চেষ্টা চালিয়েছে। তারা হুতিদের আক্রমণের নিন্দা করেছে এবং দাবি করেছে যেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অবিলম্বে আবার তাদের সন্ত্রাসবাদী তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে। কিন্তু এমনটা করলেও ইরানি পৃষ্ঠপোষকদের বিরুদ্ধে তারা কোনও কথা বলেনি। আপাতত আক্রমণ প্রতিহত করা এবং আগ্রাসনের বিরুদ্ধে শাস্তি দেওয়ার ক্ষেত্রে দেশের সামরিক সক্ষমতা তুলে ধরার দিকে নজর দেওয়া হচ্ছে এবং পাশাপাশি ব্যস্ত রাস্তাঘাট, জমজমাট বাজার এবং চালু হয়ে যাওয়া স্কুলের ছবিও তুলে ধরা হচ্ছে। দুবাই এক্সপো শুরু হয়ে গেছে এবং শহরটিকে আরও ব্যবসা-বান্ধব গন্তব্য করে তোলার জন্য সংযুক্ত আরব আমিরশাহির তরফে একাধিক তাৎপর্যপূর্ণ সংস্কার করা হয়েছে। আপাতত আবু ধাবি তার ‘সম্মিলিত শান্তি ও সমৃদ্ধি’ কর্মসূচিতে মনোনিবেশ করতে চাইছে।

ভবিষ্যতের পথ

এক দিকে আমিরশাহি এবং তাদের মার্কিন মিত্ররা পরবর্তী ক্ষেপণাস্ত্র বা ড্রোন আক্রমণের জন্য আকাশের উপর নজরদারি বজায় রাখলেও, অন্য দিকে তাদের নজর থাকছে ভিয়েনার ঘটনা পরম্পরার ক্ষেত্রে। জয়েন্ট কমপ্রিহেনসিভ প্ল্যান অফ অ্যাকশনের (জে সি পি ও এ) একটি সফল পুনরুজ্জীবন এই অঞ্চলের গতিশীলতায় সম্ভাব্য পরিবর্তন আনার ক্ষমতা রাখে, বিশেষ করে যদি এটি তেহরানের সঙ্গে রিয়াদ এবং আবু ধাবির আলাপ আলোচনার অগ্রগতির সঙ্গে একত্র করা হয়। এটি এমন এক বাস্তবচিত্র, যা শুধু মাত্র ভিয়েনায় আলাপ আলোচনার উপরে নির্ভরশীল নয়। অনেকটাই নির্ভর করছে তেহরানে কী ঘটবে, তার উপরও। সেখানে কট্টরপন্থী দলগুলিকে অনেক ক্ষেত্রেই তাদের অবস্থান থেকে সরে আসতে হতে পারে।

ইতিমধ্যে শেখ মহম্মদ বিন জায়েদ অবশেষে বেজিংয়ে শীতকালীন অলিম্পিক চলাকালীন কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির সঙ্গে দেখা করেছেন এবং প্রেসিডেন্ট এরদোগান শীঘ্রই রিয়াদ এবং আবু ধাবির দিকে রওনা হচ্ছেন। প্রেমের মরসুম আগত, এবং হয়তো বা বসন্তও!

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.