গত দুই দশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আমাদের গ্রহের সবচেয়ে দূরবর্তী ও চ্যালেঞ্জিং পরিবেশগুলির একটির দিকে মনোযোগ সরিয়ে নিয়েছে - আর্কটিক বা উত্তর মেরু। এই পুনর্নবীকৃত ফোকাসটির কারণ মূলত এই অঞ্চলে পরিবেশগত পরিবর্তন, যা জলবায়ু পরিবর্তনের একটি প্রত্যক্ষ পরিণতি।
অধ্যয়ন অনুমান করে যে আর্কটিক ২০৩০-এর দশকের প্রথম দিকে তার প্রথম বরফ-বিহীন গ্রীষ্মের সাক্ষী হতে পারে। এই প্রত্যাশিত পরিবর্তনটি তেল ও গ্যাস, রেয়ার আর্থ ধাতুসমূহ, সামুদ্রিক পশুসম্পদ এবং অন্যান্য আর্কটিক খনিজ, যেমন তামা, দস্তা, কয়লা ইত্যাদি সহ এই অঞ্চলের প্রচুর প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ সহজ করতে পারে। একই সঙ্গে এটি এ অঞ্চলে যাওয়ার নতুন সামুদ্রিক রুটও খুলে দিতে পারে। এই সব ঘটনার মধ্যে একটি অতি-গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উঠছে: আর্কটিক অঞ্চল কে বা কী শাসন করে?
একটি সাধারণ আখ্যান প্রস্তাব করে যে এর প্রতিরূপ অ্যান্টার্কটিক-এর মতোই আর্কটিক একটি বৈশ্বিক সর্বজনীন — একটি সংস্থান ক্ষেত্র যেটি কোনও একটি নির্দিষ্ট দেশের এক্তিয়ারের মধ্যে পড়ে না, যেখানে সমস্ত দেশের প্রবেশাধিকার রয়েছে। যদি এটি সত্য হত, তাহলে আমরা এই অঞ্চলে আধিপত্য প্রতিষ্ঠার জন্য দেশগুলির মধ্যে একটি অভূতপূর্ব দৌড়ের সাক্ষী হতে পারতাম, যা আমরা কয়েক দশকের মধ্যে মহাকাশে প্রত্যক্ষ করতে পারি।
তবে এই আখ্যান ঠিক ঘটনা নয়। কেন ঠিক নয় তা বোঝার জন্য আমাদের এর ভূগোল বুঝতে হবে।
মানচিত্র সূত্র: ইনস্টিটিউট ফর অ্যাডভান্সড সাসটেনিবিলিটি স্টাডিজ
উপরের মানচিত্রে যেমন লক্ষ্য করা যায়, আর্কটিক অঞ্চলে প্রাথমিকভাবে তিনটি মূল উপাদান রয়েছে:
আর্কটিক মহাসাগর
আর্কটিক রাষ্ট্রগুলির ভূমি অঞ্চল
আর্কটিক রাষ্ট্রগুলির সমুদ্র অঞ্চল
বিশ্বের ক্ষুদ্রতম এবং অগভীরতম মহাসাগর হিসাবে স্বীকৃত আর্কটিক মহাসাগর, পাঁচটি দেশ দ্বারা বেষ্টিত — কানাডা, ডেনমার্ক (গ্রিনল্যান্ড), মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র , রাশিয়া ও নরওয়ে, যেমন মানচিত্রে চিত্রিত হয়েছে। দেশগুলিকে প্রায়শই আর্কটিক উপকূলীয় রাষ্ট্র হিসাবে উল্লেখ করা হয়।
ইউএনক্লস
উপরের মানচিত্রে প্রতিটি দেশের চারপাশের স্বতন্ত্র রঙিন এলাকাগুলি তাদের এক্সক্লুসিভ ইকনমিক জোন (ইইজেড)–এর প্রতিনিধিত্ব করে। রাষ্ট্রপুঞ্জের কনভেনশন অন দ্য ল অফ দ্য সি (ইউএনক্লস) অনুসারে, ইইজেড এমন একটি অঞ্চল যেখানে উপকূলীয় দেশটির কিছু অধিকার, কর্তব্য এবং এক্তিয়ার রয়েছে। এটি প্রাকৃতিক সম্পদের অন্বেষণ ও শোষণ, বায়ু এবং জলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন, মাছ ধরার মতো কার্যকলাপগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করে। কনভেনশনের ৫৭ অনুচ্ছেদের অধীনে, এই অঞ্চলটি দেশসংলগ্ন সমুদ্রের প্রস্থ পরিমাপের জন্য ব্যবহৃত বেসলাইন থেকে ২০০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত প্রসারিত। এই রাষ্ট্রগুলির উপকূল থেকে ২০০ নটিক্যাল মাইল অতিক্রম করে একটি ত্রিভুজ আকৃতির অঞ্চল রয়ে গেছে, যাকে সেন্ট্রাল আর্কটিক মহাসাগর (সিএও) বা সহজভাবে আর্কটিক হাই সি বলা হয়।
এই ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলা এই দেশগুলির জন্য সুবিধাজনক ছিল, কারণ এটি তাদের আর্কটিক মহাসাগরের ভূখণ্ডগত সংঘাত ন্যূনতম করার পাশাপাশি একটি উল্লেখযোগ্য অঞ্চলের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে দেয়।
ইউএনক্লস-এর অধীনে এই হাই সি বা গভীর সমুদ্র প্রকৃতপক্ষে একটি বৈশ্বিক সর্বজনীন, অর্থাৎ মানবজাতির সাধারণ ঐতিহ্য। তদনুসারে, সমস্ত দেশের এই গভীর সমুদ্রে কিছু অন্তর্নিহিত অধিকার রয়েছে, যার মধ্যে সম্পদ অনুসন্ধান ও শোষণ, মাছ ধরা, বৈজ্ঞানিক তদন্ত, নৌচলাচলের অধিকার এবং আরও অনেক কিছু।
তাদের জাতীয় স্বার্থ বিবেচনা করে আর্কটিক উপকূলীয় দেশগুলি যৌথভাবে ২০০৮ সালে ঘোষণা করেছিল যে, সমুদ্রের আইন আর্কটিক অঞ্চল পরিচালনার জন্য উপযুক্ত কাঠামো হবে। এই ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলা এই দেশগুলির জন্য সুবিধাজনক ছিল, কারণ এটি তাদের আর্কটিক মহাসাগরের ভূখণ্ডগত সংঘাত ন্যূনতম করার পাশাপাশি একটি উল্লেখযোগ্য অঞ্চলের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে দেয়। যেহেতু আর্কটিক অঞ্চলটি আর্কটিক রাষ্ট্রগুলির ভূমি অঞ্চল, আর্কটিক উপকূলীয় রাষ্ট্রগুলির সামুদ্রিক অঞ্চল এবং গভীর সমুদ্র নিয়ে গঠিত, তাই এই অঞ্চলটিকে "অর্ধ-বৈশ্বিক সর্বজনীন" হিসাবে বর্ণনা করা যেতে পারে।
শাসন: আর্কটিক কাউন্সিল
এই অঞ্চলের বিচিত্র অবস্থা, আতিথ্যহীন প্রকৃতি এবং রাষ্ট্রীয় সম্পদ ও ক্ষমতার সাধারণ অভাবের কারণে আর্কটিকে একটি অভিনব শাসন কাঠামোর প্রয়োজন ছিল। এই লক্ষ্যে ১৯৯৬ সালের অটোয়া ঘোষণার অধীনে আর্কটিক রাষ্ট্রগুলির দ্বারা একটি উচ্চস্তরের আন্তঃসরকারি ফোরাম হিসাবে আর্কটিক কাউন্সিল প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল পাঁচটি আর্কটিক উপকূলীয় রাষ্ট্র এবং সুইডেন, ফিনল্যান্ড ও আইসল্যান্ডকে নিয়ে।
এই স্থায়ী সদস্যরা ছাড়াও কাউন্সিলের ছয়টি স্থায়ী অংশগ্রহণকারী (পিপি) গোষ্ঠী রয়েছে যারা আর্কটিকের আদিবাসীদের প্রতিনিধিত্ব করে, যেমন আলেউট ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন, রাশিয়ান আর্কটিক ইন্ডিজেনাস পিপলস অফ দ্য নর্থ, এবং সামি কাউন্সিল। অধিকন্তু, এমন ৩৮টি নন-আর্কটিক দেশকে পর্যবেক্ষকের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে যারা এই অঞ্চলের কার্যক্রমে গভীর আগ্রহ দেখিয়েছে।
কাউন্সিলের ছয়টি স্থায়ী অংশগ্রহণকারী (পিপি) গোষ্ঠী রয়েছে যারা আর্কটিকের আদিবাসীদের প্রতিনিধিত্ব করে, যেমন আলেউট ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন, রাশিয়ান আর্কটিক ইন্ডিজেনাস পিপলস অফ দ্য নর্থ, এবং সামি কাউন্সিল।
কাউন্সিল কোনও নিয়ম-প্রণয়নকারী সংস্থা নয়; বরং, এটি স্থিতিশীল উন্নয়ন, বৈজ্ঞানিক গবেষণা, পরিবেশ, এবং সেইসঙ্গে আদিবাসীদের অধিকারের মতো ক্ষেত্রগুলিতে আর্কটিক রাষ্ট্রগুলির মধ্যে সহযোগিতা ও সমন্বয়ের জন্য একটি ফোরাম হিসাবে কাজ করে৷ এর ম্যান্ডেট স্পষ্টভাবে সামরিক নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়গুলিকে বাদ দেয়।
আর্কটিক কাউন্সিল নিম্নলিখিত কারণগুলির জন্য এই অঞ্চলে বিভিন্ন অনন্য চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হওয়া সত্ত্বেও তার ম্যান্ডেট পূরণে কমবেশি সফল হয়েছে:
❅ গবেষণাভিত্তিক পরিবেশগত ফোকাস: পরিবেশগত সমস্যাগুলির জন্য একটি গবেষণাভিত্তিক পদ্ধতির উপর কাউন্সিলের গুরুত্ব আরোপ একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এই ফোকাস একটি আঞ্চলিক ও ইস্যু-ভিত্তিক কথন বজায় রাখতে সাহায্য করেছে, এবং আলোচনাগুলিকে মহাশক্তি প্রতিদ্বন্দ্বিতা দ্বারা প্রভাবিত হওয়া থেকে মুক্ত রেখেছে।
❅ ছোট কুশীলবদের নেতৃত্ব: নরওয়ের মতো ছোট রাষ্ট্রগুলির সক্রিয় ভূমিকা মহাশক্তিগুলির মধ্যে দ্বন্দ্ব প্রশমিত করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ক্ষুদ্র কুশীলবেরা নেতৃত্ব প্রদান করে এবং একটি আঞ্চলিক ও ইস্যুভিত্তিক আলোচনার সুবিধা প্রদান করে, যা বৃহত্তর ভূ-রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জড়িয়ে পড়া এড়িয়ে চলে। কাউন্সিলে সমস্ত রাষ্ট্রের সমান মর্যাদা এই লক্ষ্য পূরণের একটি বড় কারণ।
❅ সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত গ্রহণ: আর্কটিক কাউন্সিল সর্বসম্মতির ভিত্তিতে কাজ করে, যার অর্থ সিদ্ধান্তগুলি সম্মিলিতভাবে নেওয়া হয়। এই পদ্ধতিটি প্রাথমিকভাবে আলোচ্য বিষয়গুলির পরিসরকে সীমিত করলেও কাউন্সিলকে তার সদস্যদের মধ্যে আস্থা তৈরি করার সুযোগ দিয়েছে, যা তার প্রকৃত শাসন ক্ষমতার ভিত্তি তৈরি করেছে।
❅ ইউএনক্লস-এর প্রতি সম্মান: সমস্ত পক্ষের দ্বারা রাষ্ট্রপুঞ্জের কনভেনশন অন দ্য ল অফ দ্য সি (ইউএনক্লস) মেনে চলা — এমনকি যদিও সমস্ত সদস্য বা পর্যবেক্ষক দেশ চুক্তিটি অনুমোদন করেনি — স্থিতিশীলতায় অবদান রাখে। কনভেনশন সম্পর্কে আপত্তি সত্ত্বেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চিনের মতো প্রধান রাষ্ট্রগুলির ইউএনক্লস মেনে চলার প্রতি দায়বদ্ধতা আর্কটিক অঞ্চল পরিচালনায় কাউন্সিলের কার্যকারিতা বাড়ায়।
আর্কটিক শাসনের ভবিষ্যৎ
প্রায় তিন দশক আগে এর গঠনের পর থেকে আর্কটিক কাউন্সিলের যে ভূচিত্রটি কল্পনা করা হয়েছিল তা ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হয়েছে। পৃথিবীর পরিবেশগত অবস্থা ৩০ বছর আগে যেমন ছিল তেমন নেই, বিশ্বব্যবস্থাও নেই। একসময় দুর্গম বলে বিবেচিত এই অঞ্চলটি জলবায়ু পরিবর্তনের মধ্যে অর্থনৈতিক সুযোগ এবং কৌশলগত গুরুত্বের কারণে একটি কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। এটি আর্কটিক এবং বাকি বিশ্বের মধ্যে শক্তিশালী অর্থনৈতিক ও ভূ-রাজনৈতিক সম্পর্কের দিকে চালিত করেছে, যা উত্তরের বাইরের অঞ্চলগুলিকে প্রভাবিত করেছে।
একসময় দুর্গম বলে বিবেচিত এই অঞ্চলটি জলবায়ু পরিবর্তনের মধ্যে অর্থনৈতিক সুযোগ এবং কৌশলগত গুরুত্বের কারণে একটি কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।
যদিও কাউন্সিল বিশাল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় স্থিতিস্থাপকতা প্রদর্শন করেছে, বর্তমান পরিবেশগত ও ভূ-রাজনৈতিক পরিবর্তনগুলির কারণে এর কার্যাবলি ও কর্তৃত্বের পুঙ্খানুপুঙ্খ পুনর্মূল্যায়নের প্রয়োজন দেখা দিতে পারে। পুনর্মূল্যায়নের প্রয়োজনীয়তা সাম্প্রতিক ঘটনাগুলির দ্বারা চিহ্নিত হয়েছে, যেমন ২০২২-এর উদাহরণ, যেখানে কাউন্সিল একতরফাভাবে আর্কটিকে যার অনেক স্বার্থ জড়িত এমন গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার ও কাউন্সিলের চেয়ারের পদে অধিষ্ঠিত গুরুত্বপূর্ণ সদস্য রাশিয়ার সঙ্গে সহযোগিতা প্রত্যাখ্যান করে। এই সিদ্ধান্তটি ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানের কারণে নেওয়া হয়েছিল, এবং এটি কাউন্সিলের শাসন কাঠামোর সম্ভাব্য দুর্বলতা তুলে ধরে।
এই পটভূমিতে, আর্কটিক কাউন্সিলের ভূমিকা আগে কখনও এখনকার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল না, কারণ এটি এই অঞ্চলটির চলতি রূপান্তর থেকে উদ্ভূত বহুমুখী চ্যালেঞ্জের সময়ে আর্কটিক ও নন-আর্কটিক দেশগুলির সঙ্গে আদিবাসী সম্প্রদায়গুলিকে নির্দেশনা দেওয়ার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে।
উদয়বীর আহুজা অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ প্রোগ্রামের প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.