Author : Niranjan Sahoo

Published on Jan 14, 2022 Updated 0 Hours ago

বিচারবিভাগীয় পরিকাঠামোর জরাজীর্ণ অবস্থার হাল ফেরানোর প্রয়োজনেই ন্যাশনাল জুডিশিয়াল ইনফ্রাস্ট্রাকচার কর্পোরেশন প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব এসেছে।

বিচারবিভাগীয় পরিকাঠামো: ‌ন্যাশনাল জুডিশিয়াল ইনফ্রাস্ট্রাকচার কর্পোরেশন কি সহায়ক হবে?‌

২০২১ সালের ২৩ অক্টোবর তারিখে বম্বে হাইকোর্টের আওরঙ্গাবাদ বেঞ্চের অ্যানেক্স ভবন উদ্বোধন করতে গিয়ে ভারতের প্রধান বিচারপতি এন ভি রামানা দেশের বিচারবিভাগীয় পরিকাঠামোর করুণ অবস্থার দিকে মঞ্চে উপস্থিত কেন্দ্রীয় আইন ও বিচার মন্ত্রী কিরেন রিজিজুর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন। বিচারবিভাগীয় পরিকাঠামোর আমূল পরিবর্তনের জরুরি প্রয়োজনের গুরুত্ব তুলে ধরে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘‌‘‌ভারতে আদালতের জন্য ভাল বিচারবিভাগীয় পরিকাঠামো সবসময়ই পরে–মাথায়–আসা চিন্তাভাবনা হিসেবেই থেকেছে। এই মানসিকতার কারণেই আদালতগুলো এখনও জরাজীর্ণ কাঠামো থেকেই কাজ করে, যা তাদের দক্ষতার সঙ্গে কাজ সম্পাদন করা কঠিন করে তোলে।’‌’‌ বিচারপতি রামানা অবশ্য প্রথম প্রধান বিচারপতি নন যিনি এই বিষয়টি নিয়ে সরব হলেন। তাঁর আগে অনেক প্রধান বিচারপতি এ বিষয়ে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। ২০১৬ সালে, তৎকালীন প্রধান বিচারপতি টি এস ঠাকুর তো বিচারবিভাগের বিশ্বাসযোগ্যতাকে যা কিছু ব্যাহত করে তার দীর্ঘ তালিকা দিতে গিয়ে ভেঙেই পড়েছিলেন। তাঁর তালিকায় ছিল বহু দিন ধরে জমে–থাকা মামলা, বিচারবিভাগীয় শূন্যপদ ও পরিকাঠামোগত নানা সমস্যা।

বাস্তবের মাটি থেকে পাওয়া প্রমাণগুলো বিচারবিভাগের পরিকাঠামোর মারাত্মক ঘাটতির কথাই তুলে ধরে, বিশেষ করে নিম্ন আদালতগুলোর ক্ষেত্রে। ইতিমধ্যে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, বিচারবিভাগীয় অফিসারদের মোট অনুমোদিত সংখ্যা ২৪,২৮০ জন। কিন্তু এখন মাত্র ২০,১৪৩টি কোর্ট হল রয়েছে, যার মধ্যে ৬২০টি আবার ভাড়া করা। নির্মীয়মাণ হলের সংখ্যা ২,৪২৩টি। আরও চমকানোর মতো ঘটনা হল জেলা আদালতের ২৬ শতাংশের মতো মহিলা টয়লেটে কলের জল নেই, এবং মাত্র ১১ শতাংশ শৌচাগার প্রতিবন্ধী নাগরিকদের ব্যবহারযোগ্য। মাত্র ২ শতাংশ আদালতে দৃষ্টিহীনদের জন্য স্পর্শ–বোধগম্য পথ আছে। গাইড ম্যাপ আছে মাত্র ২০ শতাংশ আদালতে, আর হেল্পডেস্ক আছে মোট ৪৫ শতাংশ আদালতে। ৬৮ শতাংশের মতো নিম্ন আদালতে আলাদা রেকর্ড রুম নেই, এবং সেগুলোর প্রায় অর্ধেকের লাইব্রেরিও নেই।

বাসস্থানের ক্ষেত্রে বিচারবিভাগীয় অফিসারদের জন্য ৩,৯৮৮টি ভাড়া করা ইউনিটসহ মোট মাত্র ১৭,৮০০টি ইউনিট রয়েছে।

কোভিড–১৯ অতিমারি চলাকালীন যখন আদালতগুলো ভার্চুয়াল হতে বাধ্য হয়, সেই সময় এই সব জরুরি কাঠামোর অভাব একটা বড় বাধা বলে প্রমাণিত হয়েছে। মাত্র ২৭ শতাংশ আদালত ভিডিও-কনফারেন্সিংয়ের ব্যবস্থা সহ বিচারকের মঞ্চে একটি কম্পিউটার বসাতে সক্ষম হওয়ায় অতিমারি চলাকালীন বিচার প্রক্রিয়া ব্যাপক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, বিশেষত নিম্ন আদালতে। কাজেই বিচারবিভাগীয় পরিকাঠামোর উন্নতির লক্ষ্যে প্রক্রিয়াগুলোকে ঢেলে সাজার জন্য প্রধান বিচারপতির আহ্বান এসেছে একেবারে সঠিক সময়ে।

বিচারবিভাগীয় পরিকাঠামো কেন গুরুত্বপূর্ণ?

বিচারবিভাগীয় পরিকাঠামোর মধ্যে আছে আদালত, ট্রাইবুনাল, আইনজীবীদের চেম্বার ইত্যাদির বাস্তব ঘরবাড়ি। এর মধ্যে সময়মতো ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত সম্পদের প্রাপ্যতা সহ ডিজিটাল ও মানবসম্পদ কাঠামোও আছে। এই সংক্ষিপ্ত নিবন্ধের কেন্দ্রবিন্দু হল বাস্তব পরিকাঠামোর দিকটি। পর্যাপ্ত বিচারবিভাগীয় পরিকাঠামো ও ন্যায়বিচার প্রদানের হার, এই দুটোর মধ্যে ইতিবাচক সম্পর্ক বাস্তব অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে সুপ্রতিষ্ঠিত। বিচারক, আইনজীবী ও বিচারবিভাগীয় কর্মকর্তাদের বিচারের সময় দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের প্রাথমিক পূর্বশর্ত হল পর্যাপ্ত ও মানসম্পন্ন বিচারবিভাগীয় পরিকাঠামো। ন্যাশনাল মিশন ফর জাস্টিস ডেলিভারি অ্যান্ড লিগ্যাল রিফর্মস–এর বক্তব্য, জমে–থাকা মামলা ও বিচারে বিলম্ব কমানোর প্রয়োজনীয় পূর্বশর্ত হল পর্যাপ্ত বিচারবিভাগীয় পরিকাঠামো গড়ে তোলা। সুপ্রিম কোর্ট গঠিত ন্যাশনাল কোর্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (এনসিএমএস) বলেছে ভৌত কাঠামো এবং কর্মী ও ডিজিটাল পরিকাঠামোর সঙ্গে বকেয়া মামলার বিষয়টি সরাসরি সংযুক্ত। এনসিএমএস–এর তৈরি করা পরিকল্পনা সুস্পষ্ট ভাবে দেখিয়েছে কী ভাবে পরিকাঠামো অনেকগুলো লক্ষ্য পূরণ করতে পারে, যার মধ্যে আছে কর্মদক্ষতা বাড়ানোর জন্য সর্বোত্তম কাজের পরিবেশ তৈরি করা।

পর্যাপ্ত বিচারবিভাগীয় পরিকাঠামোর গুরুত্ব, বিশেষত ডিজিটাল পরিকাঠামোর, খুব বেশি অনুভূত হয়েছিল অতিমারি চলাকালীন, যখন আদালতগুলি ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে চলে যেতে বাধ্য হয়েছিল। নিম্ন আদালতগুলোর মাত্র এক-তৃতীয়াংশে যথাযথ ডিজিটাল সুবিধা থাকায় (অর্থাৎ ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের ব্যবস্থা সহ বিচারকের মঞ্চে কম্পিউটারের ব্যবস্থা)‌ ন্যায়বিচারে একটা বড়সড় ধাক্কা লেগেছে। কোভিড-১৯-জনিত ব্যাঘাতের কারণে ২০২০ সালের মার্চ থেকে বকেয়া মামলা ১৯ শতাংশে গিয়ে ঠেকেছে, এবং তার সংখ্যা পৌঁছে গেছে রেকর্ড ৪.৪ কোটিতে। ন্যায়বিচারের ধীরগতির সর্বাধিক প্রত্যক্ষ ভুক্তভোগী হয় সবচেয়ে দরিদ্র ও সামাজিক ভাবে প্রান্তিক গোষ্ঠীগুলি।

বিচারক, আইনজীবী ও বিচারবিভাগীয় কর্মকর্তাদের বিচারের সময় দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের প্রাথমিক পূর্বশর্ত হল পর্যাপ্ত ও মানসম্পন্ন বিচারবিভাগীয় কাঠামো।

বিচার বিভাগের পরিকাঠামো পিছিয়ে আছে কেন?

এই অবস্থায় এই প্রশ্ন প্রাসঙ্গিক যে ভারত কেন এসব ঠিকঠাক করতে পারেনি, বিশেষ করে ভৌত পরিকাঠামো, যা মানব সম্পদের থেকে অনেক সহজে তৈরি করা যায়? প্রথমত, বিচারবিভাগের পরিকাঠামোগত সমস্যাগুলি দেখা উচিত বিচারবিভাগীয় শাখার জন্য নির্দিষ্ট বাজেটের অভাবের প্রেক্ষাপটে, যা কি না বেশিরভাগ গণতন্ত্রেই একটা সাধারণ ঘটনা। প্রধান বিচারপতি রামানা যে বিষয়টি স্পষ্ট ভাবে উল্লেখ করেছেন, বিচারবিভাগের সেই দীর্ঘ ও ঐতিহাসিক অবহেলার ফলে এই শাখাটি পর্যাপ্ত প্রাতিষ্ঠানিক মনোযোগ পায়নি। শাসনের একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা হওয়া সত্ত্বেও বিচারবিভাগের জন্য বাজেট বরাদ্দের ক্ষেত্রে এটি স্পষ্ট ভাবে প্রতীয়মান। রাজ্যগুলোকে হিসেবের মধ্যে ধরেও স্বাধীনতার সাত দশকের বেশি সময় পরেও বাজেট বরাদ্দ এখনও জিডিপি–র ১ শতাংশের কম।

সম্প্রতি প্রকাশিত ইন্ডিয়া জাস্টিস রিপোর্ট অনুসারে, ২০১১-১২ ও ২০১৫-১৬ সালের মধ্যে বিচারবিভাগের জন্য ভারতের বার্ষিক গড় ব্যয় ছিল জিডিপি–র মাত্র ০.০৮ শতাংশ৷ যদিও অবস্থার সামান্য উন্নতি হয়েছে কেন্দ্র বরাদ্দ ক্রমশ বাড়ানোয়—১৩তম ও ১৪তম অর্থ কমিশনের মাধ্যমে— তা সত্ত্বেও তা এখনও গুরুতর উদ্বেগের কারণ হিসেবে থেকে গেছে৷ তা ছাড়া বিচারবিভাগের জন্য কেন্দ্রীয় বাজেট থেকে বরাদ্দও অপ্রতুল ও সঙ্গতিহীন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, যখন বকেয়া মামলা হুহু করে বাড়ছে এবং বিচারবিভাগীয় পরিকাঠামো চাপের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারছে না, সেই সময়ে বিচারবিভাগীয় পরিকাঠামোর জন্য টাকা অনেকটা কমানো হয়েছে (‌২০১৯–২০ অর্থবর্ষের ৯৯০ কোটি টাকা থেকে কমিয়ে ৭৬২ কোটি টাকা)‌।

দ্বিতীয়ত, অর্থই বর্তমান সংকটের একমাত্র কারণ নয়। সুনির্দিষ্ট বিচারবিভাগীয় পরিকাঠামোর প্রকল্পের জন্য অর্থ অব্যবহৃত থেকে যাওয়ার বিষয়টিও আছে। প্রকৃতপক্ষে, গত কয়েক বছরে কেন্দ্রীয় সরকার নিম্ন বিচারবিভাগের পরিকাঠামোগত সমস্যাগুলো দূর করার জন্য সেন্ট্রালি স্পনসরড স্কিম (সিএসএস)–এর অধীনে অর্থ ঢেলেছে। কেন্দ্র ১৯৯৩-২০২০ সালের মধ্যে জেলা আদালতের উন্নতিতে ব্যয় করার জন্য রাজ্যগুলিকে ৭,৪৬০.২৪ কোটি টাকা দিয়েছে। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের অংশ হিসেবে রাজ্যের দেয় ৪০ শতাংশ টাকা ধরা হয়নি।। কিন্তু বছরের পর বছর এই বরাদ্দকৃত অর্থের একটা বড় অংশ অব্যবহৃত থেকে যায়, এবং শেষ পর্যন্ত তামাদি হয়ে যায়। এই ঘটনার দৃষ্টান্ত হিসেবে বলা যায়, রাজ্যগুলিকে ২০১৯–২০ সালে ৯৮১.৯৮ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হলেও পাঁচটি রাজ্য সম্মিলিত ভাবে মোটের উপর ৮৪.৯ কোটি টাকা খরচ করেছে। অর্থাৎ ৯১ শতাংশ অর্থ অব্যবহৃত থেকে গেছে। সিএসএস–এর মাধ্যমে পাঠানো অর্থের এই ভাবে অব্যবহৃত থেকে যাওয়ার অনেক কারণ আছে।

বিচারবিভাগের পরিকাঠামোগত সমস্যাগুলি দেখা উচিত বিচারবিভাগীয় শাখার জন্য নির্দিষ্ট বাজেটের অভাবের প্রেক্ষাপটে, যা কি না বেশিরভাগ গণতন্ত্রেই একটা সাধারণ ঘটনা।

এক, সিএসএস-এর শর্তাবলি অনুযায়ী রাজ্যগুলিকে ৪০ শতাংশ ম্যাচিং গ্রান্ট দিতে হয়। বেশিরভাগ রাজ্য বিভিন্ন কারণে এই টাকা দিতে ব্যর্থ হয়। এই ম্যাচিং কনট্রিবিউশনের বাইরে সাধারণ ভাবে রাজ্যগুলো এই গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজনীয় বিষয়টিতে তেমন ভাবে সাড়া দেয়নি। যেমন মহারাষ্ট্র ২ শতাংশ অনুমোদন করলেও ভারতের বাকি রাজ্যগুলো তাদের বিচারবিভাগীয় পরিকাঠামোর জন্য বাজেটের ২ শতাংশের কম বরাদ্দ করে। দুই, সংশ্লিষ্ট হাইকোর্টের কাছে জেলা আদালত ও সেই সম্পর্কিত পরিকাঠামো অনুমোদন করার ক্ষমতা থাকলেও জমি বরাদ্দ করা ও ভবন নির্মাণের অনুমতি সহ বাস্তবায়ন সংক্রান্ত সিদ্ধান্তগুলি গ্রহণ করে রাজ্য সরকারগুলো, সংশ্লিষ্ট হাইকোর্টের সঙ্গে পরামর্শ করে। এই পরামর্শ ও সমন্বয় প্রক্রিয়া জটিল এবং খুব সময়সাপেক্ষ। আরও গুরুত্বপূর্ণ কথা হল, রাজ্যগুলো ব্যস্ত থাকে নিজেদের গুরুতর অগ্রাধিকারের বিষয়গুলো নিয়ে আর উচ্চ আদালত তাদের নিজস্ব দৈনন্দিন ন্যায়বিচার নিয়ে, এবং সব মিলিয়ে প্রকল্পগুলো নিয়ে ভাবার কেউ থাকে না।

ন্যাশনাল জুডিশিয়াল ইনফ্রাস্ট্রাকচার কর্পোরেশন কি সমস্যার সমাধান করবে?

বিচারবিভাগীয় পরিকাঠামোর কাজগুলো যে ভাবে শামুকের গতিতে এগিয়েছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে কাজগুলোকে দ্রুত এগনোর জন্য প্রধান বিচারপতি সম্প্রতি একটি সমন্বয়কারী সংস্থা হিসেবে কাজ করার জন্য ন্যাশনাল জুডিশিয়াল ইনফ্রাস্ট্রাকচার কর্পোরেশন (এনজেআইসি)‌ তৈরির প্রস্তাব দিয়েছেন, এবং তা যথেষ্ট আগ্রহ তৈরি করেছে। এই এনজেআইসি–র মধ্যে থাকবেন প্রধান বিচারপতি, সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্টের বিচারপতিরা, কেন্দ্র ও রাজ্যগুলির অর্থ সচিবেরা। প্রধান বিচারপতির মতে, এই সংস্থা আমলাতান্ত্রিক বাধা ও একাধিক সংস্থার মধ্যে সমন্বয়ের সমস্যাগুলোর দ্রুত সমাধান করতে পারবে। প্রস্তাবিত সংস্থাটির নানা উদ্দেশ্যের মধ্যে আছে জমি বরাদ্দে বিলম্ব, অ-বিচারবিভাগীয় কাজে তহবিলের টাকা সরানো, উচ্চ আদালত ও বিচার–আদালতের দায়িত্ব এড়ানোর মতো সমস্যাগুলোর দিকে নজর রাখা ও সেগুলোর সমাধান করা। যদিও এনজেআইসি–র বড় বড় লক্ষ্য রয়েছে, তবে এর বিশদ ব্লুপ্রিন্ট এখনও প্রকাশিত হয়নি। কিন্তু এক্ষেত্রে মূল প্রশ্ন হল, এই সংস্থা কি কাজের হবে? নাকি এটিও জাতীয় গ্রিন ট্রাইব্যুনালের মতোই এমন একটা সংস্থা হয়ে উঠবে যাকে এখনও ছাপ ফেলার জন্য লড়াই করতে হচ্ছে?

কিছু বিশ্লেষক ইতিমধ্যেই এই সংস্থার প্রয়োজন এবং এটি যে ভূমিকা পালন করতে চায় সে সম্পর্কে গভীর সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। তাঁরা মনে করেন একটি নতুন সংস্থার অধীনে ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ যুক্তরাষ্ট্রীয় নীতির বিরুদ্ধে যাবে। এনজেআইসি রাজ্যগুলোকে বাধ্য করতে পারবে না আরও বেশি ব্যয় করতে বা কোনও নতুন সংস্থার কাছে নিজের ক্ষমতা ছেড়ে দিতে। তা ছাড়া পরিকাঠামো প্রকল্পগুলি, বিশেষত যেগুলো সিএসএস তহবিলের আওতায় পড়ে, সেগুলোর জন্য কেন্দ্র ও রাজ্যগুলোর মধ্যে যথেষ্ট পেপার ওয়র্কের ক্লান্তিকর প্রক্রিয়া রয়েছে, এবং তার পরেও রয়েছে জমি অধিগ্রহণ, টেন্ডার ও বরাত দেওয়া, এবং সাইট পরিদর্শনের বিষয়ে সমন্বয়ের সমস্যা। এর জন্য এনজেআইসি–র পক্ষ থেকে যথেষ্ট সময় এবং প্রচেষ্টা প্রয়োজন। সবচেয়ে বিতর্কিত প্রশ্নটি হল, যখন ক্রমবর্ধমান বকেয়া মামলার দিকেই তাঁদের অবিভক্ত মনোযোগ থাকা প্রয়োজন, সেই সময় বিচারপতিদের কি পরিকাঠামো প্রকল্পের মতো কোনও কিছুতে প্রবেশ করা উচিত?

প্রস্তাবিত সংস্থাটির নানা উদ্দেশ্যের মধ্যে আছে জমি বরাদ্দে বিলম্ব, অ-বিচারবিভাগীয় কাজে তহবিলের টাকা সরানো, উচ্চ আদালত ও বিচার–আদালতের দায়িত্ব এড়ানোর মতো সমস্যাগুলোর দিকে নজর রাখা ও সেগুলোর সমাধান করা।

এগুলো নিশ্চয়ই ভেবে দেখার মতো প্রাসঙ্গিক বিষয়, কিন্তু আমাদের এ কথাও বুঝতে হবে যে কেন প্রধান বিচারপতি এমন একটি ‘‌বিশেষ’‌ ধরনের ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছেন। আমাদের সামনে এমন পরিস্থিতি রয়েছে যেখানে কেন্দ্র বা রাজ্য কেউই পদ্ধতিমাফিক আর্থিক বরাদ্দের বাইরে সত্যিসত্যি কোনও আগ্রহ দেখায়নি। পরিকাঠামো প্রকল্পগুলি বাস্তবায়নের অতীত অভিজ্ঞতা বলছে এই গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলিকে একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শেষ করার জন্য রাজ্য বা জেলা স্তরের আধিকারিকরা কেউই সে ভাবে দায়িত্ব নেন না। অনেক প্রকল্প প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষেত্রের লড়াইয়ের মধ্যে আটকা পড়ে যায়। তা ছাড়া অনেক সময়েই প্রয়োজনীয় জমি বরাদ্দের জন্যই অনেক বছর সময় লেগে যায়, এবং তার ফলে প্রকল্প শুরু করতে বিলম্ব ঘটে। বিষয়টিকে যা আরও জটিল করে তোলে তা হল এই প্রকল্পগুলোর অর্থায়ন সিএসএস প্রকল্পের মাধ্যমে হওয়ায় সেগুলোর জন্য কেন্দ্র ও রাজ্যগুলোর মধ্যে পেপার ওয়র্কের একটি ক্লান্তিকর প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়। প্রকল্পগুলি বেশিরভাগই কোনও স্পষ্ট সময়সীমা ছাড়াই অ্যাড হক পদ্ধতিতে চলে। সেই জন্যই প্রয়োজন একটি কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী সংস্থার, যা প্রকল্প বাস্তবায়নের সংশ্লিষ্ট এজেন্সিগুলোর ক্ষমতায়নের পাশাপাশি বাস্তব সময়ের ভিত্তিতে কাজগুলোর উপর নজর রাখতে পারবে। জমি বরাদ্দ করা, টেন্ডার ডাকা, বরাত দেওয়া ও সাইট পরিদর্শনের জন্য একাধিক সংস্থার মধ্যে সক্রিয় সমন্বয় প্রয়োজন। এখানেই এনজেআইসি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব নিতে পারে এবং দ্রুত সমাধানের দরজা খুলে দিতে পারে।

এনজেআইসি–র কারণে কেন্দ্রীকরণ ও উপর থেকে নিচের পর্যায়ে হস্তক্ষেপের আশঙ্কার কিছু কারণ আছে ঠিকই, কিন্তু প্রতিটি রাজ্যে সংশ্লিষ্ট হাইকোর্ট এবং রাজ্য ও জেলা পর্যায়ের অফিসারদের নিয়ে একটি কর্পোরেশন তৈরি করে তা অনেকাংশে কমানো যেতে পারে। তা ছাড়া এনজেআইসি–র ব্লুপ্রিন্ট জনসমক্ষে এলেই সন্দেহের ধোঁয়াশা কেটে যেতে পারে। যদিও কেউ এই ধরনের একটি সংস্থার চরিত্র ও কার্যপ্রণালী সম্পর্কে বিতর্ক করতেই পারেন, কিন্তু বিচারবিভাগীয় পরিকাঠামোর ক্ষেত্রে একটা বড় ধাক্কা দেওয়া যে প্রয়োজন তা অস্বীকার করার উপায় নেই।


গবেষণা সহায়তায় জিবরান খান, রিসার্চ ইন্টার্ন, ওআরএফ।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.