Author : Saaransh Mishra

Published on Jun 26, 2022 Updated 0 Hours ago

বিদ্যমান ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে উদ্ভূত নজিরবিহীন ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ এবং উদ্বেগের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে রাশিয়ার হুমকি সত্ত্বেও ফিনল্যান্ড এবং সুইডেন ন্যাটোয় যোগদানের সিদ্ধান্তে দৃঢ় সংকল্প।

ন্যাটোয় যোগদান করতে উদ্যত ফিনল্যান্ড এবং সুইডেনের বিরুদ্ধে কি রাশিয়া সামরিক ভাবে প্রতিশোধ নেবে?

ফিনল্যান্ড এবং সুইডেন, যারা সাম্প্রতিক কালে নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজেশনে (ন্যাটো) অবিলম্বে যোগদানের পরিকল্পনা ব্যক্ত করেছিল, এই উদ্দেশ্য পূরণের জন্য তারা এবার আনুষ্ঠানিক ভাবে তাদের আবেদন জমা দিয়েছে। এই দু’টি দেশ ঐতিহাসিক ভাবে নিরপেক্ষতা এবং অপক্ষপাতের নীতিরই অনুসরণ করে এসেছে, কিন্তু এ বার ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষিতে সেখানে সামরিক জোটে অংশগ্রহণ করার পক্ষে ব্যাপক জনমত গড়ে উঠেছে।

পূর্ববর্তী সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে ১৯৪৮ এবং ১৯৯২ সালে বন্ধুত্ব, পারস্পরিক সহযোগিতা এবং সাহায্যের ভিত্তিতে স্বাক্ষরিত চুক্তির প্রেক্ষিতে ফিনল্যান্ড এত দিন ন্যাটোয় যোগদান করা থেকে বিরত ছিল। অন্য দিকে সুইডেনের বিদেশ নীতি প্রধানত বহুপাক্ষিক আলাপ-আলোচনা এবং পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ কেন্দ্রিক হওয়ার ফলে দেশটি বিগত ২০০ বছরেরও বেশি সময় যাবৎ কোনও সামরিক জোটে অংশগ্রহণ করেনি।

যদিও বিদ্যমান ইউক্রেন যুদ্ধ এবং রাশিয়ার সঙ্গে ফিনল্যান্ডের ১৩০০ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত থাকার বাস্তবতা ফিনল্যান্ডকে এ হেন সিদ্ধান্ত গ্রহণে বাধ্য করছে। অন্য দিকে সুইডেনও ২০১৪ সালে ক্রিমিয়া পরিস্থিতির পর পরই সেনাবাহিনীতে বাধ্যতামূলক যোগদান পুনরায় চালু করা এবং প্রতিরক্ষা খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করে থাকলেও ইউক্রেনের বর্তমান যুদ্ধ দেশটির ন্যাটোয় যোগদানের সিদ্ধান্তের নেপথ্যে চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করেছে।

প্রেসিডেন্ট পুতিন এ প্রসঙ্গে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানান এবং বলেন যে, এই পদক্ষেপ তাঁর দেশের জন্য কোনও ‘অব্যবহিত হুমকি’ সৃষ্টি না করার দরুন রাশিয়ার ‘এই সিদ্ধান্ত সংক্রান্ত কোনও আপত্তি নেই।’ এ কথা সত্যি হলেও আমেরিকা যে ‘আগ্রাসী’ মনোভাবের সঙ্গে ন্যাটোর সীমানা বৃদ্ধিকে ব্যবহার করছে, তা বিদ্যমান জটিল আন্তর্জাতিক পরিস্থিতিকে জটিলতর করে তুলবে।

প্রেসিডেন্ট পুতিন এ প্রসঙ্গে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানান এবং বলেন যে, এই পদক্ষেপ তাঁর দেশের জন্য কোনও ‘অব্যবহিত হুমকি’ সৃষ্টি না করার দরুন রাশিয়ার ‘এই সিদ্ধান্ত সংক্রান্ত কোনও আপত্তি নেই।’ তবে তাঁর মতে, আমেরিকা যে ‘আগ্রাসী’ মনোভাবের সঙ্গে ন্যাটোর পরিসর বৃদ্ধিকে ব্যবহার করছে, তা বিদ্যমান জটিল আন্তর্জাতিক পরিস্থিতিকে জটিলতর করে তুলবে। তিনি এ-ও জানান যে, রাশিয়ার প্রতিক্রিয়া শুধু মাত্র তার নিজস্ব সমস্যা সাপেক্ষ হবে এবং কোনও কারণ ছাড়াই রাশিয়ার সম্মুখে এই সমস্যাগুলি সৃষ্টি করা হচ্ছে। ইউক্রেনে সামরিক অভিযান চালানোর নেপথ্যে রাশিয়ার একটি উদ্দেশ্য যদি পূর্ব দিকে ন্যাটোর সম্প্রসারণ বন্ধ করা হয়, তা হলে আলোচ্য ঘটনা পরম্পরা এক সম্পূর্ণ বিপরীত অবস্থানের ইঙ্গিত দেয়। যদিও বাস্তবিক ভাবে দুই দেশের সামরিক বিন্যাসের এই পরিবর্তন তেমন কোনও উল্লেখযোগ্য পার্থক্য সৃষ্টি করবে না। কারণ ফিনল্যান্ড এবং সুইডেন উভয় দেশই ১৯৯০-এর দশক থেকে ন্যাটোর সঙ্গে ব্যাপক ভাবে আন্তঃসহযোগিতা চালিয়ে এসেছে।

ফিনল্যান্ড এবং সুইডেন উভয়েই ন্যাটোর অংশীদার দেশ এবং বলকান, আফগানিস্তান, ইরাক ও লিবিয়ায় একাধিক গুরুত্বপূর্ণ অভিযানে তারা ন্যাটোর সঙ্গে যৌথ ভাবে কাজ করেছে। উভয় দেশই ন্যাটোর মানদণ্ড অনুসারে ট্রাইডেন্ট জাঙ্কচার এবং প্রতিরক্ষা বিষয়ক পশ্চিমী সামরিক জোটকে সহযোগিতা করার মতো শতাধিক আধুনিক অনুশীলনে ন্যাটোর সঙ্গে অংশগ্রহণ করেছে। এ ছাড়াও ৮টি ন্যাটো সদস্য দেশ বিশিষ্ট ব্রিটেনের জয়েন্ট এক্সপেডিশনারি ফোর্সেস বা যৌথ অভিযান বাহিনীর সদস্য হওয়ার দরুন ফিনল্যান্ড এবং সুইডেন উভয়েই পশ্চিমী সামরিক পরিকাঠামোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ভাবে যুক্ত।

ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পরেও ফিনল্যান্ড ও সুইডেনের তরফে ন্যাটোকে তথ্য সরবরাহ ও ন্যাটোর নীতির সঙ্গে সমন্বয় সাধনের চেষ্টা করতে দেখা গিয়েছে। দুই দেশের মন্ত্রীরাও ন্যাটোর মন্ত্রিপর্যায়ের বৈঠকে অংশগ্রহণ করেছেন যা আনুষ্ঠানিক ভাবে সদস্য না হওয়া সত্ত্বেও পশ্চিমী জোটটির সঙ্গে উভয় দেশেরই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ককে তুলে ধরে।

বিশেষ করে ইউক্রেনের ঘটনার পরে এ হেন উস্কানিমূলক পদক্ষেপের প্রেক্ষিতে রাশিয়ার প্রতিক্রিয়া কী হবে, সে নিয়ে বিস্তর জল্পনা শুরু হয়েছে। এক অর্থে এই পদক্ষেপ নিশ্চিত ভাবেই ইউরোপের নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুললেও তা রাশিয়ার তরফে কোনও হিংসাত্মক প্রত্যুত্তরকে প্ররোচিত করবে বলে মনে হয় না। কারণ রাশিয়া জানে, উভয় দেশই দীর্ঘ দিন যাবৎ পশ্চিমী জোট শক্তির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ভাবে যুক্ত। ন্যাটোয় যোগদানের সিদ্ধান্ত এই সম্পর্ককে শুধু মাত্র আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেবে।

সর্বোপরি, সর্বাধিক অভিজ্ঞতাসম্পন্ন আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরাও ভুল অনুমান  করতে পারেন— ইউক্রেন যুদ্ধ আমাদের সেই শিক্ষা দিয়ে থাকলেও বহুবিধ ব্যবহারিক বাস্তবতা এই দিকেই ইঙ্গিত করে যে, উভয় দেশের দ্বারা গৃহীত সাম্প্রতিক পদক্ষেপ সত্ত্বেও রাশিয়ার পক্ষে ফিনল্যান্ড ও সুইডেনের বিরুদ্ধে সামরিক ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভবপর হবে না।

ফিনল্যান্ড ও সুইডেন উভয় দেশেরই অত্যন্ত আধুনিক সেনা থাকার পাশাপাশি শক্তিশালী নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, ডুবোজাহাজ এবং যুদ্ধ বিমান রয়েছে। পশ্চিমী দেশগুলির যুদ্ধ অভিজ্ঞতা এবং তাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সামরিক সম্পর্ক উভয় দেশকেই শক্তিশালী প্রতিপক্ষ করে তুলেছে। ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে রাশিয়া উল্লেখযোগ্য সাফল্য লাভ করে থাকলেও তাকে তীব্র অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়েছে এবং যথেষ্ট পরিমাণে রুশ সেনা (যদিও সেই সংখ্যা পশ্চিমী ও ইউক্রেনীয় গণমাধ্যমে প্রতিবেদিত সংখ্যার তুলনায় অনেকটাই কম) হারাতে হয়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধ চলতে থাকার ফলে অর্থের পাশাপাশি রাশিয়ার লোকবলের চাহিদাও প্রবল। ফলে তার পক্ষে ইউরোপের অন্য অংশে সামরিক অভিযান চালানো সম্ভব নয়, বিশেষ করে পশ্চিমী দেশগুলির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ভাবে যুক্ত সামরিক ভাবে শক্তিশালী দেশগুলির বিরুদ্ধে। রাশিয়া ইতিমধ্যেই জানুয়ারি থেকে এপ্রিল মাসের মধ্যে প্রতিরক্ষা খাতে ১.৭ ট্রিলিয়ন রুবল (২৬.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) খরচ করেছে যা সে দেশের ২০২২ সালের নেট বরাদ্দ ৩.৫ ট্রিলিয়ন রুবল বা জি ডি পি-র ২.৬ শতাংশের প্রায় অর্ধেক।

ফিনল্যান্ড ও সুইডেন উভয় দেশেরই অত্যন্ত আধুনিক সেনা থাকার পাশাপাশি শক্তিশালী নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, ডুবোজাহাজ এবং যুদ্ধ বিমান রয়েছে। পশ্চিমী দেশগুলির যুদ্ধ অভিজ্ঞতা এবং তাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সামরিক সম্পর্ক উভয় দেশকেই শক্তিশালী প্রতিপক্ষ করে তুলেছে।

পশ্চিমী শক্তিগুলি আগেই এ কথা স্পষ্ট ভাবে জানিয়েছে যে, তারা এই যুদ্ধে প্রত্যক্ষ ভাবে অংশগ্রহণ করবে না। ন্যাটোর সদস্য দেশ না হওয়ার দরুন তারা ইউক্রেনকে শুধু মাত্র সামরিক ও আর্থিক পুঁজি প্রদানের মাধ্যমে সহায়তা করবে। যদিও ফিনল্যান্ড ও সুইডেনের ন্যাটোয় সদস্য পদ পাওয়া এবং প্রতিক্রিয়া স্বরূপ সম্ভাব্য রুশ আগ্রাসন ন্যাটোর আর্টিকল ৫-কে সক্রিয় করে তুলতে পারে, যেখানে ন্যাটোর সম্মিলিত প্রতিরোধের মূল নীতিটি ব্যক্ত করা হয়েছে: জোটের কোনও একটি সদস্য দেশের উপরে হামলা হলে সেটিকে সকল সদস্য দেশের উপর হামলা বলে গণ্য করা হবে। এবং এ হেন হামলার ঘটনা ঘটলে প্রতিটি সদস্য দেশ আক্রমণের সম্মুখীন মিত্র দেশকে সহায়তা করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে যাতে ‘উত্তর আটলান্টিক অঞ্চলে নিরাপত্তার বাতাবরণ পুনরুদ্ধার করা ও বজায় রাখা সম্ভব হয়।’ অর্থাৎ সে ক্ষেত্রে রাশিয়াকে ৩০টিরও বেশি পশ্চিমী দেশের জোটবদ্ধ সামরিক শক্তির মোকাবিলা করতে হবে। সামরিক ভাবে প্রত্যুত্তর দেওয়ার অত্যন্ত ক্ষীণ সম্ভাবনা থাকলেও রাশিয়ার হাতে বাস্তবে তেমনটা করার সময় সীমিত এবং ফিনল্যান্ড ও সুইডেন ন্যাটোতে যোগদান না করা পর্যন্তই এমনটা করা সম্ভব। কিন্তু পশ্চিমী দেশগুলি এ কথা স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, পদ্ধতিটি দ্রুত সম্পন্ন করা হবে।

এ ছাড়াও, এ কথা উল্লেখযোগ্য যে, ইউক্রেন ঐতিহাসিক ভাবে রাশিয়ার জন্য যতটা গুরুত্বপূর্ণ, ফিনল্যান্ড ও সুইডেন ততটা নয়, ইউক্রেন যেন তার নিরপেক্ষ অবস্থান বজায় রেখে চলে এ হেন দাবি করার পাশাপাশি প্রেসিডেন্ট পুতিন এ কথা স্পষ্ট জানান যে, ইউক্রেনে বিশেষ সামরিক অভিযান চালানোর নেপথ্যে প্রধান উদ্দেশ্য হল সে দেশে রুশভাষী সংখ্যালঘুদের রক্ষা করা যারা ইউক্রেনের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষদের দ্বারা পীড়িত। ফিনল্যান্ড এবং সুইডেন আক্রমণের জন্য রাশিয়ার কাছে এ রকম কোনও শক্তিশালী অজুহাত না থাকার দরুন আপত্তি থাকা সত্ত্বেও দেশ দু’টির বিরুদ্ধে রাশিয়া সামরিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা থেকে  বিরত থাকবে বলেই মনে করা হচ্ছে।

ইউক্রেনের মতো উচ্চ ঝুঁকিসম্পন্ন দেশের সঙ্গে সামরিক ও অর্থনৈতিক ভাবে গুরুতর যুদ্ধে জড়িয়ে পড়া এবং ফিনল্যান্ড ও সুইডেনের আনুষ্ঠানিক ভাবে নির্জোট দেশ হওয়ার দরুন উভয় দেশের জন্যই রাশিয়া এত দিন সম্ভাব্য বিপদের কারণ হয়ে ওঠেনি। বরং সমসাময়িক নিরাপত্তা পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে দেশ দু’টির নিরপেক্ষ অবস্থান ত্যাগ করা অবস্থাকে জটিলতর করে তুলবে এবং আগামী দিনে ফিনল্যান্ড ও সুইডেনের সঙ্গে রাশিয়ার শত্রুতা বৃদ্ধি করবে।

এ কথা বলা হলেও ইউক্রেনে সামরিক অভিযান দর্শিয়েছে যে, রাশিয়ার কৌশলগত সিদ্ধান্ত সব সময় সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতের সঙ্গে খাপ খায় না। বিশেষত সেই দেশগুলির সঙ্গে আর একটি সামরিক সংঘাতে জড়িয়ে পড়া রাশিয়ার জন্য আদর্শ হবে না, যারা অনানুষ্ঠানিক ভাবে দীর্ঘ দিন ন্যাটোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ভাবে যুক্ত। তবুও সর্বোচ্চ সিদ্ধান্ত নির্ভর করবে বিষয়টি নিয়ে পুতিনের কৌশলগত বিবেচনার উপরে এবং তাই এটি অনিশ্চিত।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.