Author : Rumi Aijaz

Published on Apr 08, 2023 Updated 0 Hours ago

অনেক ভারতীয় শহরে ‘সকলের জন্য জল’ এখনও সুদূরের স্বপ্ন। এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য সরকারি সংস্থা এবং নাগরিকদের বৃহত্তর প্রচেষ্টার প্রয়োজন

ভারতীয় শহরগুলিতে জল সরবরাহের উন্নতি

১৯৯৩ সাল থেকে প্রতি বছর ২২ মার্চ জলের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে, এই সঙ্কট কাটিয়ে ওঠার জন্য ধারণা বিনিময় এবং জলের স্থিতিশীল ব্যবহার, ব্যয় এবং ব্যবস্থাপনার জন্য পদক্ষেপ করার উদ্দেশ্যে বিশ্ব জল দিবস পালন করা হয়। ২০৩০ সালের মধ্যে সকলের জন্য জল ও সুস্বাস্থ্যবিধি অর্জনের উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রপুঞ্জের নেতৃত্বাধীন উদ্যোগ স্থিতিশীল উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) ৬ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

অসংখ্য আন্তর্জাতিক এবং স্থানীয় উদ্যোগ সত্ত্বেও বিশ্বের একটি সুবিশাল জনসংখ্যা পরিস্রুত জল না পাওয়ায় অসুবিধার সম্মুখীন হয়। জলের অপ্রতুলতা তাদের স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও কাজের মতো দৈনন্দিন কাজকর্ম এবং ভ্রমণকে মারাত্মক ভাবে প্রভাবিত করে।

উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, ভারতে সরকার জল সরবরাহের সমস্যাগুলি সমাধান করার এবং সমগ্র জনসংখ্যাকে পাইপলাইনের জল সরবরাহ করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। রাজ্য সরকারের উদ্যোগের পাশাপাশি জাতীয় সরকার জল জীবন মিশন (২০২৪ সালের মধ্যে প্রতিটি গ্রামীণ পরিবারে কলের জলের সংযোগ প্রদানের ব্যবস্থা), পুনর্জাগরণ ও শহুরে রূপান্তরের জন্য অটল মিশন (সমস্ত সংবিধিবদ্ধ শহরের প্রতিটি শহুরে পরিবারকে কলের জলের সংযোগ প্রদানের ব্যবস্থা) এবং জল শক্তি অভিযান (বৃষ্টির জল সঞ্চয় ও সংরক্ষণের জন্য) মতো বিভিন্ন প্রকল্প এবং কর্মসূচির মাধ্যমে সহায়তা প্রদান করে।

২০২৩ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত দেশের মোট ১৯৪.২৬ মিলিয়ন গ্রামীণ পরিবারের মধ্যে ৬০ শতাংশ কলের জলের ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। গোয়া, আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ, দাদরা ও নগর হাভেলি, দমন ও দিউ, হরিয়ানা, গুজরাত, পুদুচেরি, পাঞ্জাব এবং তেলেঙ্গানায় গ্রামীণ পরিবারের ১০০ শতাংশ-সহ রাজ্য/কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল স্তরে বৈচিত্র লক্ষ করা যায়। অন্য দিকে এমন ন’টি রাজ্য রয়েছে যেখানে ৫০ শতাংশেরও কম গ্রামীণ পরিবার এই সুবিধা পান। এর মধ্যে রয়েছে মধ্যপ্রদেশ, কেরল, মেঘালয়, অসম, ছত্তিশগড়, রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ, ঝাড়খণ্ড এবং পশ্চিমবঙ্গ।

সাধারণত ভারতীয় শহরগুলি পরিকল্পিত এবং অপরিকল্পিত উভয় উন্নয়নের অভিজ্ঞতা লাভ করেছে এবং অপরিকল্পিত (বা অনানুষ্ঠানিক) এলাকায় বসবাসকারী একটি বৃহৎ জনসংখ্যার কাছে – যেমন বস্তি এবং অননুমোদিত কলোনিগুলিতে – পাইপবাহিত জলের সুবিধা লব্ধ নয়।

সংখ্যাগত দিক থেকে সামগ্রিক পরিস্থিতি ভারতের শহুরে অঞ্চলে আরও সুস্পষ্ট, যেখানে ৮০ শতাংশেরও বেশি শহুরে পরিবার তাদের বাসস্থানের চৌহদ্দির মধ্যেই জলের সুবিধা ভোগ করেন। স্থলভাগে জল সরবরাহে গুরুতর শহর-স্তর এবং আন্তঃনগর অসাম্য বিদ্যমান। সাধারণত ভারতীয় শহরগুলি পরিকল্পিত এবং অপরিকল্পিত উভয় উন্নয়নের অভিজ্ঞতা লাভ করেছে এবং অপরিকল্পিত (বা অনানুষ্ঠানিক) এলাকায় বসবাসকারী একটি বৃহৎ জনসংখ্যার কাছে – যেমন বস্তি এবং অননুমোদিত কলোনিগুলিতে – পাইপবাহিত জলের সুবিধা লব্ধ নয়।

সর্বোপরি অবশিষ্ট গ্রামীণ পরিবারগুলিকে সুবিধা প্রদান করার জন্য পাইপযুক্ত জলের নেটওয়ার্কগুলি সম্প্রসারিত করা হবে৷ জনবহুল ভারতীয় শহর এবং মেগা শহুরে অঞ্চলে জলের সংকট দেখা দিচ্ছে। দেশটি নগরায়ণের সম্মুখীন হচ্ছে এবং সরবরাহ সংস্থাগুলির কাছে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার জলের চাহিদা মেটানো ক্রমশ কঠিন হয়ে উঠছে।

২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ভারতের রাজধানী দিল্লিতে জলের চাহিদা ছিল দৈনন্দিন ১২৬০ মিলিয়ন গ্যালন (এমজিডি), যেখানে জল সরবরাহকারী সংস্থা ৯৯০ এমজিডি উৎপাদন করছিল। শহরের জনসংখ্যার প্রায় ৯৩ শতাংশ পাইপ নেটওয়ার্ক দ্বারা সংযুক্ত হলেও জল সরবরাহ করা হয় কম পরিমাণে এবং গ্রীষ্মের মাসগুলিতে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে ওঠে। জলের সরবরাহ বাড়ানোর জন্য এবং শহরে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার জন্য নানা উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে।

ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করে এবং অননুমোদিত গ্রাহকদের উপর পরিবেশগত ক্ষতিপূরণ কর আরোপ করে ভূগর্ভস্থ জলের অবৈধ উত্তোলন রোধ করা হচ্ছে। ভূগর্ভস্থ জলের স্তর হ্রাসের সমস্যা নিয়ন্ত্রণেও প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে।

রেন ওয়াটার হার্ভেস্টিং স্ট্রাকচার বা বৃষ্টির জল সংরক্ষণ স্থাপন করা প্রত্যেক বাড়ির জন্য বাধ্যতামূলক করা হয়েছে এবং যাঁরা এই নিয়ম মেনে চলেন, তাঁরা জলের বিলে ছাড় পাবেন। ভূগর্ভস্থ জল পূরণ করার জন্য এবং অপেয় উদ্দেশ্যে বৃষ্টির জল ব্যবহার করার জন্য এই পদ্ধতি চালু করা হয়েছে।

অবহেলিত জলাশয়গুলি (যেমন হ্রদ, কূপ এবং পুকুর) পুনরুজ্জীবিত করা হচ্ছে এবং বৃষ্টির জল ধরে রাখার জন্য নতুনগুলির নির্মাণকাজও চলছে। এই অনুশীলন ভূগর্ভস্থ জল পূরণেও সহায়তা করে।

রেন ওয়াটার হার্ভেস্টিং স্ট্রাকচার বা বৃষ্টির জল সংরক্ষণ স্থাপন করা প্রত্যেক বাড়ির জন্য বাধ্যতামূলক করা হয়েছে এবং যাঁরা এই নিয়ম মেনে চলেন, তাঁরা জলের বিলে ছাড় পাবেন।

গুণমান সুনিশ্চিত করার জন্য সরকারি এবং বেসরকারি সংস্থা উভয়ই পরীক্ষাগারে পরিস্রুত জলের নমুনা নিয়মিত পরীক্ষা করে থাকে। ভূপৃষ্ঠের জলাশয়ে শিল্প বর্জ্য নিষ্পত্তির সমস্যা পরস্পর সংযোগকারী নালা-নর্দমা স্থাপনের মাধ্যমে সমাধান করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে।

জলের হিসাব/নিরীক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করে, সেন্সরভিত্তিক ছিদ্র শনাক্তকরণ প্রযুক্তি ব্যবহার করে এবং পুরনো পাইপলাইনগুলি প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে উৎপাদন এবং সঞ্চালনের ফলে উদ্ভূত জলের সমস্যা নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। মিটারযুক্ত সংযোগ প্রদানের মাধ্যমে এবং ‘বেশি ব্যবহারে বেশি খরচ’ নীতির ভিত্তিতে যৌক্তিক জলের শুল্ক প্রবর্তনের মাধ্যমে অপচয় রোধ করা হচ্ছে। নাগরিকদের মধ্যে জল সংরক্ষণ সচেতনতা বৃদ্ধি কৌশলের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

পয়ঃনিষ্কাশন নেটওয়ার্কগুলি প্রসারিত করা হচ্ছে এবং পুরো শহরব্যাপী বিকেন্দ্রীভূত বর্জ্য জল শোধনাগারের উন্নয়নের কাজ শুরু হয়েছে।

নতুন উন্নয়নশীল এলাকায় জল, পয়ঃপ্রণালী এবং নিষ্কাশন পরিকাঠামোর সমন্বিত উন্নয়নের উপর জোর দেওয়া হয়। এর পাশাপাশি নির্মাণের পর্যায়ে জল সংরক্ষণের বৈশিষ্ট্যগুলিকেও অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে।

উপসংহারে বলা যায়, ভারতীয় শহরগুলিতে জল পরিস্থিতির উন্নতির জন্য উদ্বেগের বিভিন্ন দিকগুলির দিকে নজর দেওয়ার কাজ চলছে। এই প্রচেষ্টার একটি ইতিবাচক প্রভাব পাইপযুক্ত জল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে জনসংখ্যার কাছে পৌঁছে দেওয়া এবং উন্নত জলের গুণমান বৃদ্ধিতে পরিলক্ষিত হয়। সকলের জন্য জল লক্ষ্য অর্জনের উদ্দেশ্যে সরকারি সংস্থা এবং নাগরিকদের বৃহত্তর প্রচেষ্টার প্রয়োজন হবে। এই উদ্বেগগুলি বোঝার এবং সেগুলি সংক্রান্ত পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সরকারের তরফে বিভিন্ন ভোক্তা এবং অংশীদারদের সঙ্গে সাড়া দেওয়ার জন্যও সম্পৃক্ততা গুরুত্বপূর্ণ। জল সরবরাহ সংক্রান্ত কিছু কার্যক্রম বেসরকারি ক্ষেত্রের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ ভিত্তিতে করা যেতে পারে, যেমন কার্যক্রম ও রক্ষণাবেক্ষণ, বিলিং ও সংগ্রহ ইত্যাদি। সরকারগুলিকে অবশ্যই তাদের আর্থিক, নিয়ন্ত্রক, পরিকল্পনামূলক এবং পরিষেবা সরবরাহের অনুশীলনগুলিকে সশক্ত করতে হবে।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.