Author : Harsh V. Pant

Published on Mar 04, 2024 Updated 0 Hours ago

যেমনটা বেজিং দেখাতে চায়, দেশটি নিজে ততটা ভাল অবস্থানে নেই। অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ এবং বিচ্ছিন্নতার দরুন বর্তমানে বেজিং তার অতীতের বন্ধুদেশগুলির পরিবর্তে – যাদের সঙ্গে তার সম্পর্ক এখন ভাল নয় - অন্যান্য দেশের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চেষ্টা চালাচ্ছে।

বিশ্ব মঞ্চে চিনের বড় মাপের কূটনৈতিক পদক্ষেপগুলিকে অতিরিক্ত গুরুত্ব দেওয়ার প্রয়োজন নেই

সাম্প্রতিক কূটনৈতিক কার্যকলাপের দিকে নজর রাখলে মনে হবে, আন্তর্জাতিক মঞ্চে বিভিন্ন দেশ যখন বেজিংয়ের সঙ্গে নিজেদের সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করার চেষ্টা করছে, তখন চিন সমস্ত জটিলতা কাটিয়ে আবার স্বমহিমায় ফিরে আসছে। গত কয়েক বছর চিনা কূটনীতির জন্য খুব কঠিন ছিল এবং এর অধিকাংশের জন্য চিন নিজেই দায়ী। কৌশলগত স্তরে অহঙ্কারের পাশাপাশি সাম্প্রতিক সময়ে ‘উলফ ওয়ারিয়র’ বা ‘যুদ্ধবাজ’ নীতি চিনের শান্তিপূর্ণ আখ্যানকে নস্যাৎ করে দিয়েছে। যেহেতু চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করার চেষ্টা চালাচ্ছেন এবং আন্তর্জাতিক মঞ্চে নিজের পূর্বসূরিদের সজ্জন ভাবমূর্তি ঝেড়ে ফেলছেন, তাই তিনি বিশ্বব্যাপী খলনায়ক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। এবং এ  ক্ষেত্রে তিনি তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী উত্তর কোরিয়ার স্বৈরশাসক কিম জং-উনকেও ছাপিয়ে গিয়েছেন।

গোটা বিশ্ব চিনা আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সক্রিয় হয়েছে। বিশেষ করে কোভিডের প্রাদুর্ভাব এবং তার অব্যবহিত প্রভাব বহু-অনুশীলিত চিনা প্রশাসনিক মডেলের ধারণাকেও ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ এবং ইন্দো-প্যাসিফিকের প্রধান শক্তিগুলি বেজিংয়ের আধিপত্যবাদী মনোভাবকে চ্যালেঞ্জ জানানোর ক্ষেত্রে নিজেদের স্বর জোরালো করেছে। ইন্দো-প্যাসিফিক দ্বারা প্রভাবিত আন্তর্জাতিক রাজনীতির উপর ভূ-কৌশলগত মনোযোগ দিয়ে চিনকে তার আঞ্চলিক কৌশলগত পরিসরকে আকার দেওয়ার আকাঙ্ক্ষা চরিতার্থ করার জন্য উল্লেখযোগ্য শক্তিগুলির সঙ্গে লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়তে হয়েছে। ইন্দো-প্যাসিফিক’-এর ধারণাটি প্রতিদ্বন্দ্বিতার একটি ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে। যখন আন্তর্জাতিক শক্তিগুলি বেজিংয়ের আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে গিয়ে এই অঞ্চলটিকে আলোচনার কেন্দ্রে তুলে আনার চেষ্টা করছে, তখন চিন সেই প্রয়াসের বিরোধিতা করছে।

বর্তমানে সেই প্রতিযোগিতার তীব্রতা দৃশ্যতই হ্রাস পেয়েছে বলে মনে করা যেতে পারে। ব্রিটেনের নতুন বিদেশসচিব ডেভিড ক্যামেরন পরামর্শ দিয়েছেন, তিনি চিনের প্রতি ঋষি সুনাক সরকারের বর্তমান বাস্তববাদী, কঠোর নীতি সমর্থন করলেও বেজিংয়ের সঙ্গে ‘সম্পৃক্ত’ হওয়া এখনও যুক্তিযুক্ত। কারণ জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বৃহৎ সমস্যা সমাধানে চিন গুরুত্বপূর্ণ। নভেম্বর মাসের শুরুতে অ্যান্থনি আলবানিজ গত সাত বছরের মধ্যে প্রথম অস্ট্রেলীয় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে চিন সফরে যান। জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা সানফ্রান্সিসকো এশিয়া-প্যাসিফিক ইকোনমিক কো-অপারেশন (এপিইসি) শীর্ষ সম্মেলনের পাশাপাশি চিনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন, যেখানে তাঁরা ‘অভিন্ন সাধারণ স্বার্থের উপর মনোযোগ দেওয়া’ এবং পারস্পরিক সুবিধার কৌশলগত সম্পর্ককে পুনর্নিশ্চিত করা ও সেটিকে একটি নতুন অর্থ দেওয়ার চেষ্টা করেছেন’। জাপান, চিন এবং দক্ষিণ কোরিয়ার বিদেশমন্ত্রীরা সম্প্রতি উত্তর-পূর্ব এশীয় স্থিতিশীলতার উপর মনোনিবেশ করে চার বছরেরও বেশি সময় পরে এই প্রথম বার ব্যক্তিগত ভাবে আলোচনায় উপস্থিত থেকেছেন।

ঘটনাপ্রবাহের উপর যখন সারা বিশ্বের নজর রয়েছে, সেই সময়ের একটি বিশেষ মুহূর্ত হিসাবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং শি জিনপিংয়ের মধ্যে অত্যন্ত প্রত্যাশিত শীর্ষ বৈঠকে দুই নেতা একটি প্রেসিডেন্সিয়াল হটলাইন চালু করা, দুই দেশের সামরিক স্তরে আন্তঃসংযোগ পুনরায় শুরু করা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ফেন্টানাইল এবং এই আসক্তিমূলক ড্রাগের উপাদানগুলির প্রবাহ রোধ করার জন্য একজোটে কাজ করতে সম্মত হন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই অভ্যন্তরীণ আসক্তি সঙ্কটের সম্মুখীন। উভয় শক্তির মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এতটাই তলানিতে ঠেকেছিল যে, এই শীর্ষ বৈঠকটিকে ওয়াশিংটন-বেজিং সম্পর্কের স্বাভাবিকীকরণের প্রচেষ্টা হিসেবে দেখা যেতে পারে। তাই শীর্ষ সম্মেলনটি একাধিক কারণে প্রতীকী হয়ে উঠেছে এবং এই সব প্রতীক বৃহৎ শক্তি কূটনীতিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

এই সম্পর্কের পুনর্বিন্যাস শি জিনপিংয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কারণ চিনেসামনে উপস্থিত অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জগুলি প্রশমনের কোনও লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না এবং একজন কার্যকর ব্যবস্থাপক হিসাবে শি-র নিজের ভাবমূর্তিও বিনষ্ট হয়েছে। এই পর্যায়ে দেশটির অতিমারি-পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার মরীচিকাই রয়ে গিয়েছে। তাই চিনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম শি-বাইডেন শীর্ষ সম্মেলনের ফলাফলকে এক ধাপ এগিয়ে ‘ঐতিহাসিক এবং আলোচনাটিকে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের নতুন প্রারম্ভিক বিন্দু’ বলে বর্ণনা করেছে। এবং বাইডেন চিনা নেতাকে আরও একবার ‘স্বৈরাচারী’ হিসাবে বর্ণনা করা এবং একটি মুক্ত ও অবাধ ইন্দো-প্যাসিফিকের পক্ষে জোর দেওয়া সত্ত্বেও এমনটা ঘটেছে।

অন্যান্য সাম্প্রতিক সম্পৃক্ততার ক্ষেত্রেও একই কথা সত্য, যেখানে নানাবিধ উত্তেজনা সত্ত্বেও ঘটনাপ্রবাহ সেই চেনা হতাশার পথেই এগিয়েছে। জাপান-চিন সম্মেলন থেকে অর্জন করার মতো উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটেনি, যেখানে এক দিকে টোকিয়ো তাইওয়ান প্রণালীতে শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য পুনরায় দাবি জানিয়েছে এবং বেজিং জাপানি সামুদ্রিক খাদ্যের উপর বিদ্যমান নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত বৈজ্ঞানিক পুনর্মূল্যায়ন চালাচ্ছে।

নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি অস্ট্রেলিয়া একটি চিনা যুদ্ধজাহাজকে ‘অনিরাপদ ও অপেশাদার’ আচরণের দায়ে অভিযুক্ত করে, যখন জাহাজটি আন্তর্জাতিক জলসীমায় বিপজ্জনক সোনার পালসেস বা শব্দতরঙ্গ নিঃসরণ করে এবং এর ফলে অস্ট্রেলীয় ডুবুরিদের নিরাপত্তা ঝুঁকির মুখে পড়ে। ডেভিড ক্যামেরন স্বীকার করে নিয়েছেন যে, ব্রিটিশ প্রাইমমিনিস্টার হিসেবে যে চিনকে তিনি চিনতেন, বর্তমান চিন তার চেয়ে অনেকটাই আলাদা। তিনি এ কথা স্বীকার করেছেন যে, ‘উইঘুর, হংকং এবং উলফ ওয়ারিয়র কূটনীতির নিরিখে বর্তমানে চিন অনেক বেশি আগ্রাসী ও একগুঁয়ে হয়ে উঠেছে।’ অর্থাৎ লন্ডনকে আমাদের (ব্রিটেন) মিত্রদের সঙ্গে আরও সতর্ক ভাবে সহাবস্থান বজায় রাখতে হবে, যাতে আমরা চিনের তরফ থেকে আসা যে কোনও ক্ষতিকারক হুমকি মোকাবিলা করতে পারি।

চিনের সঙ্গে নতুন করে আন্তর্জাতিক স্তরে সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টাকে কেন্দ্র করে যে মনোযোগ বৃদ্ধি পেয়েছে, তাতে এ কথা স্পষ্ট যে, বেজিং এই পুনর্নবীকরণের বিষয়ে আরও বেশি আগ্রহী। এটি তার প্রধান অর্থনৈতিক অংশীদারদের কাছ থেকে পুঁজি সংগ্রহে আগ্রহী এবং তাদের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে অচলাবস্থা কাটিয়ে ওঠার ইঙ্গিত দিতে আগ্রহী। কিন্তু বিশ্বও তার পূর্ববর্তী অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেছে এবং বর্তমানে চিনা আচরণ সংক্রান্ত বিপদসীমা নির্মাণে আগ্রহী।

বিশ্বব্যাপী বিশ্বাসভিত্তিক অংশীদারিত্ব যদি নতুন চল হয়ে ওঠে, তা হলে চিন বহিরাগতই রয়ে গিয়েছে এবং কয়েকটি ব্যাপক প্রচারসম্পন্ন শীর্ষ সম্মেলন দিয়ে সেই বহু প্রয়োজনীয় রাজনৈতিক বিশ্বাসকে পুনর্নির্মাণ করা অসম্ভব। নয়াদিল্লিও ২০২০ সালে গলওয়ান সঙ্কটের পরে চিনেপ্রেক্ষিতে নিজস্ব বিপদসীমা নির্ধারণ করেছে এবং বেশ কিছু উপায়ে বিশ্বকে এক আগ্রাসী চিনকে কী ভাবে মোকাবিলা করা উচিত, সে বিষয়ে সম্ভাব্য রূপরেখা প্রদান করেছে। আন্তর্জাতিক ব্যবস্থায় ভারতের নিজস্ব উত্থানের পরিপ্রেক্ষিতে এবং আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলার পরিবর্তনের গুরুত্বপূর্ণ মূল্যায়ন সুযোগগুলি সন্ধানের নিরিখে নয়াদিল্লিকে বেজিংয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ততার নিজস্ব শর্তাবলি নির্ধারণ করতে হবে।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.