Author : Rumi Aijaz

Published on Apr 11, 2023 Updated 0 Hours ago

আবাসন ও পরিবহণ খাতে বরাদ্দকৃত সর্বোচ্চ পরিমাণ ইঙ্গিত করে যে ২০২৩-২৪ সালে সরকারের অগ্রাধিকার অবশিষ্ট সম্প্রদায়কে আশ্রয় প্রদান করা এবং গতিশীলতার ব্যবধানগুলির সমাধান করা

কেন্দ্রীয় বাজেট ২০২৩-২৪: ভারতের নগর খাতে বরাদ্দ

কেন্দ্রীয় বাজেট নিয়ে নাগরিকদের বিপুল প্রত্যাশা থাকে। কারণ এটি তাঁদের নানাবিধ সমস্যার সমাধান করার ক্ষমতা রাখে। ২০২৩-২৪-এর জন্য ভারতের বাজেটে আবাসন, পরিবহণ, স্বাস্থ্যবিধি এবং অন্যান্য পরিকাঠামো-সহ বিভিন্ন নগর খাতের উন্নতির জন্য ৭৬৪.৩২ বিলিয়ন টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এই নিবন্ধটি ক্ষেত্রভিত্তিক বরাদ্দের বিন্যাস এবং প্রস্তাবিত নগর নীতি সংস্কারের ব্যাখ্যাকেই তুলে ধরেছে। বিশ্লেষণটি দর্শিয়েছে যে, বরাদ্দকৃত পরিমাণ এবং রাজ্য/স্থানীয় সরকারগুলির সীমিত ক্ষমতা শহুরে জনসংখ্যার বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে বাধা হতে পারে।

নগর খাতে প্রধান ব্যয়ের ক্ষেত্রগুলি হল প্রতিষ্ঠান, যেমন সচিবালয়, সংযুক্ত অফিস/স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা; কেন্দ্রীয় খাতের কর্মসূচি/প্রকল্প, যেমন মাস র‍্যাপিড ট্রানজিট সিস্টেম (এমআরটিএস), মেট্রো প্রকল্প, রাস্তার বিক্রেতাদের জন্য প্রকল্প; এবং প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা-আরবান (পিএমএওয়াই-ইউ), ন্যাশনাল আরবান লাইভলিহুড মিশন (এনইউএলএম), অটল মিশন ফর রিজুভেনেশন অ্যান্ড আরবান ট্রান্সফরমেশন (এএমআরইউটি বা অম্রুত), স্মার্ট সিটিজ-সহ বিভিন্ন কেন্দ্রীয় স্তরে প্রস্তাবিত প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য রাজ্য/কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে স্থানান্তর এবং স্বচ্ছ ভারত মিশন-আরবান (এসবিএম-ইউ)।

চলতি অর্থবর্ষে অর্থাৎ ২০২৩-২৪-এ মোট নেট বাজেট বরাদ্দের পরিমাণ ৭৬৪.৩২ বিলিয়ন টাকা। এই বরাদ্দের মধ্যে সর্বাধিক পরিমাণ পিএমএওয়াই-ইউ (আরবান) (৩৩ শতাংশ) এবং এমআরটিএস/মেট্রো প্রকল্পে (৩০ শতাংশ) যেমন মেট্রো রেল, পরিবহণ পরিকল্পনা, নগর পরিবহণে সক্ষমতা বৃদ্ধি, জাতীয় রাজধানী অঞ্চল পরিবহণ কর্পোরেশনে বরাদ্দ করা হয়েছে। মোট বরাদ্দের ৬০ শতাংশেরও বেশি এই দু’টি কাজে ব্যয় করতে হবে।

বিশ্লেষণটি দর্শিয়েছে যে, বরাদ্দকৃত পরিমাণ এবং রাজ্য/স্থানীয় সরকারগুলির সীমিত ক্ষমতা শহুরে জনসংখ্যার বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে বাধা হতে পারে।

অবশিষ্ট বরাদ্দের পরিমাণ অম্রুত (১০.৫ শতাংশ), স্মার্ট সিটিজ (১০.৫ শতাংশ) এবং অন্যান্য ব্যয়ের খাতে ধরা হয়েছে। এসবিএম (ইউ) এবং এনইউএলএমইউ-এর ক্ষেত্রে বরাদ্দের পরিমাণ সবচেয়ে কম। মোট বরাদ্দে তাদের পরিমাণ যথাক্রমে ৬.৫ এবং ১.৩ শতাংশ।

গত দু’বছরে বাজেট বরাদ্দে পরিবর্তনের সাপেক্ষে ২০২২-২৩-এর জন্য সংশোধিত পরিমাণ এবং ২০২৩-২৪-এর জন্য বাজেটকৃত পরিমাণ পর্যালোচনা করলে বিষয়টি স্পষ্টতর হয়। তথ্য প্রমাণ দর্শিয়েছে যে, বরাদ্দের পরিমাণ সামগ্রিকভাবে প্রায় ৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। অর্থাৎ ২০২২-২৩ সালে ৭৪৫.৪৬ বিলিয়ন টাকা থেকে বেড়ে ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে বরাদ্দের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭৬৪.৩২ বিলিয়ন টাকা।

বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে যে, এসবিএম (ইউ)-এর জন্য বরাদ্দ ২০ বিলিয়ন টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৫০ বিলিয়ন টাকা পর্যন্ত হয়েছে। এই বাজেটে অম্রুত-এর জন্য ২৩ শতাংশ বৃদ্ধি এবং এমআরটিএস/মেট্রো প্রকল্পগুলির ক্ষেত্রে ১৪ শতাংশ বৃদ্ধি পরিলক্ষিত হয়েছে।

অবশিষ্ট প্রকল্পগুলি, যথা এনইউএলএম, পিএমএওয়াইইউ (ইউ) এবং স্মার্ট সিটিজ-এর ক্ষেত্রে বাজেটের পরিমাণে হ্রাস ঘটেছে অর্থাৎ নেতিবাচক শতাংশ নথিবদ্ধ করা হয়েছে।

নগর খাতের জন্য বাজেট বরাদ্দের উপরোক্ত পর্যালোচনা থেকে নিম্নলিখিত অনুমান করা সম্ভব:

  • আবাসন এবং পরিবহণের জন্য সর্বাধিক পরিমাণ বরাদ্দ করা হয়েছে।
  • জীবিকা ও স্বাস্থ্যবিধির জন্য সবচেয়ে কম বরাদ্দ করা হয়েছে।
  • গত অর্থবর্ষের তুলনায় জীবিকা, আবাসন এবং স্মার্ট সিটিজ-এর জন্য পরিমাণে হ্রাস পরিলক্ষিত হয়েছে৷

২০২৩-২৪ সালের বাজেট বক্তৃতায় ভারতের অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন বিদ্যমান শহরগুলিকে স্থিতিশীল শহরে রূপান্তরিত করার আহ্বান জানিয়েছেন। সেই অনুযায়ী, রাজ্য এবং স্থানীয় সরকারগুলিকে নিম্নলিখিত পদ্ধতিতে সহায়তা করা হবে:

  • মিউনিসিপ্যালিটির আর্থিক অবস্থা পৌর কর এবং ব্যবহারকারীর চার্জ (পৌরসভা পরিষেবা প্রদানের উপর) উন্নত সংগ্রহের মাধ্যমে সশক্ত করা হবে। এটি পৌরসভাগুলিকে ঋণ-যোগ্য বন্ড জারি করার অনুমতি দেবে।
  • সরকারি সংস্থাগুলিকে সহায়তার জন্য টিয়ার ২ এবং টিয়ার ৩ শহরে পরিকাঠামো শক্তিশালী করার জন্য একটি আরবান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট ফান্ড (ইউআইডিএফ) স্থাপিত হবে। আশা করা হচ্ছে যে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য প্রতি বছরে ১০০ বিলিয়ন টাকা বরাদ্দ করা হবে।
  • এর পাশাপাশি শহুরে পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য বিদ্যমান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ফাইন্যান্স সেক্রেটারিয়েট-এর (আইএফএস) সাহায্যে বেসরকারি বিনিয়োগ আয়োজনের চেষ্টা চালানো হবে।
  • কর ছাড়ের ব্যবস্থা হিসাবে নগর পরিকল্পনা ও উন্নয়নে (আবাসন সহ) নিযুক্ত উন্নয়ন সংস্থাগুলি তাদের আয়ের উপর ছাড় পাবে।
  • নগর পরিকল্পনায় একটি দৃষ্টান্তমূলক পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তার উপর আবার জোর দিতে হবে। এটি ভবিষ্যৎ নগর বৃদ্ধির পথনির্দেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুশীলন, যা পরিকল্পিত উন্নয়নের দিকে চালিত করে। প্রস্তাবিত পদক্ষেপগুলির মধ্যে রয়েছে নগর পরিকল্পনা জ্ঞানের উন্নতি এবং প্রত্যয়িত প্রশিক্ষণ।
  • তিনটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) কেন্দ্র স্থাপন করা হবে এবং বিভিন্ন শহুরে সমস্যাগুলি কাটিয়ে উঠতে এআই-ভিত্তিক সমাধানগুলির বিকাশে ব্যক্তিগত বিশেষজ্ঞদের নিযুক্ত করা হবে।
  • পিএম আবাস (হাউজিং) যোজনার আওতায় অবশিষ্ট যোগ্য সুবিধাভোগীদের (মধ্য ও নিম্ন আয়ের গোষ্ঠীর আওতাভুক্ত) বাড়ি প্রদান করা হবে। এই উদ্দেশ্যে সময়মতো জমি এবং নির্মাণ সংক্রান্ত অনুমোদন চাওয়া হবে এবং পর্যাপ্ত পুঁজির ব্যবস্থা করা হবে।
  • ২০৭০ সালের মধ্যে শূন্য কার্বন নিঃসরণ অর্জনের জন্য প্রয়োজনীয় নীতি আরও জোরদারভাবে অনুসরণ করা হবে। এর জন্য গৃহীত ব্যবস্থার মধ্যে রয়েছে পরিবেশ-সচেতন জীবনযাত্রার প্রচার, কম কার্বন অর্থনীতিতে রূপান্তর এবং পুরনো সরকারি যানবাহনগুলি বাতিল করা।
  • সেপ্টিক ট্যাঙ্ক এবং নর্দমাগুলির হস্তচালিত পরিষ্কারের বর্তমান অনুশীলনটি দেশের সমস্ত নগর কেন্দ্রগুলিতে যান্ত্রিক পরিচ্ছন্নতা/ডিলাডিং দিয়ে প্রতিস্থাপন করা হবে।
  • ল্যান্ডফিল সাইট বা ভাগাড়ে বর্জ্য জমা করার বর্তমান অনুশীলন বৈজ্ঞানিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দ্বারা প্রতিস্থাপিত হবে। এ বিষয়ে একটি প্রস্তাব হল শহরাঞ্চলে ৭৫টি সঙ্কুচিত বায়োগ্যাস প্লান্ট স্থাপন, যার জন্য জৈব পদার্থ (বায়োমাস) সংগ্রহ এবং জৈব সার বিতরণের উদ্দেশ্যে আর্থিক সহায়তা জোগানো হবে।

উপরে উল্লিখিত শহুরে এলাকার উন্নতির জন্য নীতি প্রস্তাবগুলির পর্যালোচনা থেকে জানা যায় যে, ২০২৩-২৪-এর মধ্যে আরও তহবিল গঠন, নগর পরিকল্পনার মান উন্নতি, উদীয়মান প্রযুক্তি ব্যবহার, দূষণ-বিরোধী পদক্ষেপ প্রয়োগ, বাস্তবায়ন সংক্রান্ত বাধা কাটিয়ে ওঠা এবং সমাজে আচরণগত পরিবর্তনকে উন্নীত করার প্রচেষ্টা চালানো হবে।

সরকারি সংস্থাগুলিকে সহায়তার জন্য টিয়ার ২ এবং টিয়ার ৩ শহরে পরিকাঠামোকে শক্তিশালী করার জন্য একটি আরবান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট ফান্ড (ইউআইডিএফ) স্থাপিত হবে।

টিয়ার ২ এবং টিয়ার ৩ শহরে পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য তহবিলের প্রবিধান সবচেয়ে উপযুক্ত। এই রূপান্তর জনবহুল শহরগুলির জন্য একটি আশীর্বাদস্বরূপ, যা অভিবাসনের কারণে প্রচণ্ড চাপের সম্মুখীন। এ কথা বুঝতে হবে যে, এই প্রেক্ষিতে পূর্ববর্তী প্রচেষ্টাগুলি কেন তেমন প্রভাব ফেলতে পারেনি এবং লক্ষ্য অর্জনের জন্য কোন নতুন পদক্ষেপগুলি গ্রহণ করতে হবে।

আবাসন ও পরিবহণ খাতে বরাদ্দকৃত সর্বোচ্চ পরিমাণ দর্শায় যে, ২০২৩-২৪ সালের মধ্যে সরকারের অগ্রাধিকার হল অবশিষ্ট সম্প্রদায়কে আশ্রয় প্রদান এবং গতিশীলতার ব্যবধানগুলি পূরণ করা। জীবিকা ও স্বাস্থ্যবিধি খাতে কম বরাদ্দ একটি উদ্বেগের কারণ হতে পারে। নগরায়িত ভারতে শিক্ষা শেষ করার পরে পছন্দের চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা কম এবং তাই বিভিন্ন সুযোগ তৈরি করার প্রয়োজন রয়েছে। এ বিষয়ে একমাত্র বাজেটের প্রবিধান হল শহুরে রাস্তার বিক্রেতাদের জন্য ৪.৬৮ বিলিয়ন টাকার সমর্থন জোগানো। স্বাস্থ্যবিধির ক্ষেত্রে,

বিশেষ করে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, পয়ঃপ্রণালী এবং নিষ্কাশনের ক্ষেত্রে এখনও অনেক কাজ করা বাকি আছে।

সর্বোপরি, ভারতের নগর ক্ষেত্রে উন্নতির জন্য ৭৬৪.৩২ বিলিয়ন টাকা বরাদ্দ করার যৌক্তিকতা স্পষ্ট নয়। এই বরাদ্দকৃত অর্থ কি নগরায়ণের সঙ্গে সম্পর্কিত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাগুলির সমাধানের জন্য যথেষ্ট? সেই সমস্যাগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল শহরতলি এলাকা এবং জনগণনা চালানোর শহরগুলিতে নিম্নমানের জীবনযাত্রা, অপরাধ ও হিংসার ক্রমবর্ধমান ঘটনা, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি বা বিভিন্ন নগর ক্ষেত্রে অব্যবস্থাপনা এবং পরিবহণ, স্বাস্থ্য, জল, ভূমি-সহ প্রাকৃতিক সম্পদ। এগুলি জনসাধারণের উদ্বেগের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যা অবিলম্বে সমাধান করা দরকার।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.