Author : Abhinav Mehrotra

Published on Jan 30, 2022 Updated 0 Hours ago

একটি অভিন্ন দেওয়ানি বিধির অভাব ভারতীয় সমাজের সামগ্রিক বিকাশের সম্ভাবনাকে খর্ব করছে।

ভারতে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি: একটি পর্যালোচনা

একটি সাম্প্রতিক রায়ে এলাহাবাদ হাইকোর্ট জানিয়েছে যে,অভিন্ন দেওয়ানি বিধি (ইউনিফর্ম সিভিল কোড বা ইউ সি সি) প্রয়োজনীয় এবং বাধ্যতামূলক ভাবে আবশ্যিক। এই প্রেক্ষিতে ভারতে ইউ সি সি-র বাস্তব অবস্থা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকা প্রয়োজন। প্রসঙ্গত যে প্রশ্নটি উঠে আসে, তা হল — কী ভাবে ইউ সি সি-র ধারণার জন্ম হয়? স্বাধীনতা-পরবর্তী পর্যায়ে ইউ সি সি-র প্রণয়নে কোন কোন পদক্ষেপ করা হয়েছিল? বিষয়টি নিয়ে পূর্ববর্তী মামলা থেকে উদ্ভূত আইনশাস্ত্রের ধারাগুলিই বা কী কী? এই বিধি কার্যকর করতে বর্তমান সরকারের ব্যর্থতার কারণগুলি কী কী এবং আগামিদিনে সামনে এগোনোর সম্ভাব্য পথ কোনটি? সংবিধানের ৪৪তম ধারায় বলা হয়েছে যে, রাষ্ট্র নাগরিকদের জন্য ইউ সি সি প্রণয়নের চেষ্টা চালাবে। এই প্রতিবেদনটি সংবিধানের চতুর্থ খণ্ডের আওতায় পড়ে যা রাষ্ট্রীয় নীতির নির্দেশমূলক বিধানগুলির সঙ্গে সম্পর্কিত। এগুলি কোনও আদালতের দ্বারা কার্যকর করা সম্ভব নয়। তবে এতে বর্ণিত নীতিগুলি দেশের শাসন ব্যবস্থার জন্য অপরিহার্য এবং এই নীতিগুলিকে আইন প্রণয়নের কাজে লাগানো রাষ্ট্রের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। নির্দেশমূলক নীতিগুলির সঙ্গে সংযুক্ত তাৎপর্যটি মিনার্ভা মিলস বনাম ভারত সরকারের মামলায় স্বীকৃত হয়েছিল, যেখানে সুপ্রিম কোর্ট বলেছিল যে, মৌলিক অধিকারগুলিকে নির্দেশমূলক নীতিগুলির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে এবং এই সামঞ্জস্য সংবিধানের অন্যতম মৌলিক বৈশিষ্ট্য।

ঐতিহাসিক ভাবে ইউ সি সি-র ধারণাটি উনিশ শতক এবং বিশ শতকের গোড়ার দিকে ইউরোপীয় দেশগুলিতে প্রণীত অনুরূপ নীতি দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল। এবং বিশেষ করে ১৮০৪ সালের ফরাসি কোড যা সেই সময়ে প্রচলিত সব ধরনের প্রথাগত বা বিধিবদ্ধ আইনকে নির্মূল করে একটি অভিন্ন বিধি দ্বারা সেগুলিকে প্রতিস্থাপিত করেছিল। বৃহত্তর প্রেক্ষিতে এটি পশ্চিমী ধারার অনুসরণ করে একটি বৃহত্তর ঔপনিবেশিক প্রকল্পের অংশ হিসেবে দেশকে ‘সভ্য’ করে গড়ে তোলার প্রচেষ্টা ছিল। ১৮৫৭ সালে ভারতের স্বাধীনতার জন্য প্রথম যুদ্ধ ব্রিটিশদের কাছে ভারতের সামাজিক কাঠামো পরিবর্তন না করার জন্য এবং বিবাহ, বিবাহবিচ্ছেদ, রক্ষণাবেক্ষণ, দত্তক নেওয়া এবং উত্তরাধিকারের দিকগুলি পরিচালনাকারী ব্যক্তিগত বিধিগুলিকে সম্মান করার জন্য একটি শক্তিশালী সংকেত প্রেরণ করেছিল।

স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে দেশভাগের পটভূমিতে ঘটা সাম্প্রদায়িক অশান্তি এবং ব্যক্তিগত আইন প্রত্যাহারের জন্য গড়ে ওঠা প্রতিরোধের ফলে ইউ সি সি-কে একটি নির্দেশমূলক নীতি হিসেবে স্থান দেওয়া হয়েছিল। যদিও, সংবিধানের রচয়িতারা সংসদে একটি হিন্দু কোড বিল আনার চেষ্টা করেছিলেন, যাতে নারীদের উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে সমান অধিকারের মতো প্রগতিশীল পদক্ষেপগুলিও অন্তর্ভুক্ত ছিল। দুর্ভাগ্যবশত এটি দিনের আলো দেখতে পারেনি। ২০০৫ সালের ৫ সেপ্টেম্বর যখন হিন্দু উত্তরাধিকার (সংশোধন) আইন, ২০০৫ ভারতের রাষ্ট্রপতির সম্মতিপ্রাপ্ত হয়, তখন হিন্দু উত্তরাধিকার আইন, ১৯৫৬-এর সম্পত্তির অধিকার সংক্রান্ত বৈষম্যমূলক ধারাগুলিও অপসারিত হয়।

এখন মহিলা-সহ সমাজের সার্বিক উন্নয়নকে সুনিশ্চিত করতে ইউ সি সি-র প্রণয়ন এবং সংবিধানের ধারা ৫১ এ (এফ) এবং ধারা ৫১ এ (ই) — যেগুলি যথাক্রমে সমন্বয়ী সংস্কৃতির সমৃদ্ধ ঐতিহ্যের মূল্য দেয় ও সংরক্ষণ করে এবং নারীর মর্যাদার জন্য অবমাননাকর অভ্যাসগুলি পরিত্যাগ করে — তার মধ্যে সমতা বিধান করাই বর্তমান লক্ষ্য।

এই প্রেক্ষিতে, বিচারবিভাগীয় দৃষ্টিকোণ থেকে, সুপ্রিম কোর্ট শাহ বানু বেগম মামলা থেকে শুরু করে সাম্প্রতিক শায়রা বানু বনাম ভারত সরকারের মামলা পর্যন্ত যে বেশ কিছু ক্ষেত্রে বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন, সেগুলিতে একটি ইউ সি সি থাকার গুরুত্বের উপর জোর দিয়েছে। তা তালাক-ই-বিদাত (তিন তালাক) প্রথার আইনি বৈধতাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে এবং সেটিকে অসাংবিধানিক বলে ঘোষণা করেছে।

মোহম্মদ আহমেদ খান বনাম শাহ বানু বেগম এবং অন্যদের মামলার ক্ষেত্রে শাহ বানুর স্বামী তাঁর বিরুদ্ধে তালাক ঘোষণার পরে সুপ্রিম কোর্ট রক্ষণাবেক্ষণের বিষয়টি ফৌজদারি কার্যবিধির ১২৫ তম ধারার অধীনে নথিভুক্ত করে। মামলার রায় দেওয়ার সময় প্রধান বিচারপতি ওয়াই ভি চন্দ্রচূড় পর্যবেক্ষণ করেছিলেন যে, সংসদের একটি সাধারণ নাগরিক বিধির রূপরেখা তৈরি করা উচিত। কারণ এটি এমন একটি উপকরণ যা আইনের সামনে জাতীয় সম্প্রীতি এবং সমতাকে সহজতর করে তোলে। তা সত্ত্বেও সরকার এই সমস্যাটির সমাধান করেনি এবং ১৯৮৬ সালে বিবাহবিচ্ছেদের অধিকারের জন্য মুসলিম মহিলা সুরক্ষা আইন প্রবর্তন করে।

পরবর্তী দশকে ব্যাপারটি দীর্ঘ দিন আলোচনার বাইরে থাকার পরে সরলা মুদগল, রাষ্ট্রপতি, কল্যাণী ও অন্যান্য বনাম ভারত সরকার ও অন্যান্য মামলায় উঠে আসে। সেখানে সুপ্রিম কোর্ট নির্যাতিতদের রক্ষা এবং জাতীয় সংহতি অর্জনের জন্য হিন্দু কোডের মডেলের উপর ভিত্তি করে একটি অভিন্ন দেওয়ানি বিধি প্রণয়ন করার অনুরোধ জানায়। একই ভাবে লিলি টমাস বনাম ভারত সরকার এবং এ বি সি বনাম রাজ্য (দিল্লির এন সি টি) মামলাগুলিরও শুনানি হয়। এর মধ্যে প্রথম ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্ট উত্তরাধিকারের প্রসঙ্গে ইউ সি সি-র গুরুত্বের উপর জোর দেয় এবং শেষোক্ত ক্ষেত্রে রায় দেয় যে, গার্ডিয়ান এবং ওয়ার্ডস অ্যাক্ট, ১৮৯০ ধারার অধীনে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী একজন একক মা তার সন্তানের পিতার সম্মতি ছাড়াই একমাত্র অভিভাবকত্বের জন্য আবেদন করার যোগ্য। পূর্বে এই ধারার অধীনে খ্রিস্টান একক মায়েদের অধিকারকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। এই প্রেক্ষাপটে, আদালত অভিন্ন দেওয়ানি বিধির অনুপস্থিতিতে সৃষ্ট সমস্যার কথাও তুলে ধরে।

বর্তমান সময়ে ফেরত এলে আমরা দেখতে পাব, ২০১৪ সাল থেকে ক্ষমতায় থাকা ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) তার সাধারণ নির্বাচনী ইস্তাহারে বলেছিল যে, ‘বিজেপি বিশ্বাস করে — যতক্ষণ না ভারত একটি অভিন্ন দেওয়ানি বিধি প্রণয়ন করছে, ততক্ষণ পর্যন্ত লিঙ্গ সমতার বাস্তবায়ন সম্ভব নয়, যা সকল নারীর অধিকারকে সুরক্ষিত করে। এবং বিজেপি প্রচলিত শ্রেষ্ঠ প্রথাগুলিকে আধুনিক সময়ের প্রেক্ষিতে সমন্বিত করার মাধ্যমে একটি অভিন্ন দেওয়ানি বিধির খসড়া তৈরির জন্য তার অবস্থানকে পুনর্ব্যক্ত করে।’

বাস্তবে এমনটা ঘটেনি। বর্তমান সরকার দ্বারা মেয়েদের বিয়ের বয়স ২১ বছরে উন্নীত করার মতো সিদ্ধান্ত লিঙ্গ সমতা সুরক্ষিত করার দিকে নিশ্চয়ই একটি প্রশংসনীয় পদক্ষেপ। এখন মহিলা-সহ সমাজের সার্বিক উন্নয়নকে সুনিশ্চিত করতে ইউ সি সি-র প্রণয়ন এবং সংবিধানের ধারা ৫১ এ (এফ) এবং ধারা ৫১ এ (ই) — যেগুলি যথাক্রমে সমন্বয়ী সংস্কৃতির সমৃদ্ধ ঐতিহ্যের মূল্য দেয় ও সংরক্ষণ করে এবং নারীর মর্যাদার জন্য অবমাননাকর অভ্যাসগুলি পরিত্যাগ করে — তার মধ্যে সমতা বিধান করাই বর্তমান লক্ষ্য।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.

Author

Abhinav Mehrotra

Abhinav Mehrotra

Abhinav Mehrotra is an Assistant Professor at O.P. Jindal Global University and holds an LL.M. in International Human Rights Law from the University of Leeds. ...

Read More +