Author : Abhishek Sharma

Published on Jan 22, 2025 Updated 0 Hours ago

দক্ষিণ কোরিয়ার রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা আরও গভীর হয়েছে এবং দুই সপ্তাহের মধ্যে দুই প্রেসিডেন্ট দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। দেশটি কি তা হলে খাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে?

দক্ষিণ কোরিয়ায় রাজনৈতিক ইমপিচমেন্টের বিরামহীন চক্র: এর পরিণতি কি সাংবিধানিক সঙ্কট?

Image Source: Getty

২০২৪ সালের ১৪ ডিসেম্বর দক্ষিণ কোরিয়ার ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি দেশের প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওলকে সামরিক আইন জারি করার সিদ্ধান্তের জন্য অভিযুক্ত করেছে, যার ফলে সমাজে ব্যাপক বিশৃঙ্খলা বাজারে নানাবিধ জল্পনা ছড়িয়ে পড়ে। এই ঘটনার পর, তৎকালীন প্রাইম মিনিস্টার হান ডাক-সু ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হন এবং সরকার পরিচালনার দায়িত্ব নেন। যাই হোক তাঁর সংক্ষিপ্ত কার্যকালও ২০২৪ সালের ২৭ ডিসেম্বর ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির তরফে আনা অভিযোগের মাধ্যমে শেষ হয় এবং বক্তব্যের পক্ষে ৩০০টির মধ্যে ১৯২টি ভোট পেয়ে বিলটি পাস হয়। তাঁর অপসারণের পর ডেপুটি প্রাইম মিনিস্টার এবং মিনিস্টার অফ ইকোনমি অ্যান্ড ফিন্যান্স চোই সাং-মোক এ বার প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণ করতে চলেছেন, যিনি বর্তমান প্রশাসনের তৃতীয় সর্বোচ্চ ব্যক্তি। যাই হোক, রাজনৈতিক অভিযোগের প্রতিটি চক্রের দরুন দেশটি ক্রমশ সাংবিধানিক সঙ্কটের দিকে ধাবিত হচ্ছে, যা এর অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা পরিস্থিতির উপর গভীর প্রভাব ফেলেছে।

চিরস্থায়ী সাংবিধানিক সঙ্কটের পরিস্থিতিতে

প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ইউনকে দোষী সাব্যস্ত করার জন্য প্রয়োজনীয় তিন সাংবিধানিক আদালতের বিচারকের নিয়োগে বাধা দেওয়ার দায়ে বিরোধীরা প্রাইম মিনিস্টার হান ডাক-সুকে দায়ী করেছে। এই সিদ্ধান্তটি নেওয়া হয়েছিল কারণ বিরোধী নেতারা তাঁর কাজকে সংবিধান ও ন্যায়বিচারের প্রক্রিয়ার লঙ্ঘন বলে মনে করেছিলেন। তদন্ত থেকে উঠে আসা আরও বিশদ তথ্য সামরিক আইন ঘোষণার নেপথ্যে থাকা আসল উদ্দেশ্য ও পরিস্থিতির গুরুত্বকে দর্শিয়েছে। তদন্তের পর গণতান্ত্রিক দলের প্রধান লি জায়ে-মিউং প্রাইম মিনিস্টার-সহ সামরিক আইন পর্বের সঙ্গে যুক্ত বিদ্রোহী শক্তি’কে নির্মূল করার আহ্বান জানিয়েছেন। রাজনৈতিক জবাবদিহির দাবি জানিয়ে লি বলেন, ‘ন সুক ইওলকে ক্ষমতা থেকে অপসারণ করা, তাঁর অনুগত বাহিনী নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত এবং বিদ্রোহ সম্পূর্ণ রূপে দমন না করা পর্যন্ত আমরা আমাদের চিরাচরিত দায়িত্ব পালন করব।সামরিক আইনে তাঁর ভূমিকা, তদন্ত বিলে তাঁর ভেটো, এবং ইউনের পরে দলের নেতা হান ডং-হুনের সঙ্গে একটি চুক্তির মধ্যস্থতা করার ক্ষেত্রে তাঁর সম্ভাব্য ভূমিকার জন্য লি প্রাইম মিনিস্টারকে অভিযুক্ত করেছেন। এই সব কিছুই ইউনের ক্ষমতাচ্যুতির পর সঙ্কট সমাধানের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকা সম্পর্কে বিরোধী পক্ষের হতাশাকেই দর্শায়। এর পাশাপাশি এই সব কিছুই সমস্যা সমাধানে ক্ষমতাসীন দলের হালকা ভাবে নেওয়ার বিষয়টি পুনর্ব্যক্ত করে। এই দ্বিতীয় অভিযোগের পরে মামলাটি সাংবিধানিক আদালতে শুনানির মধ্য দিয়ে যাবে, যেখানে ১৮০ দিনের মধ্যে প্রক্রিয়াটির বৈধতার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সাংবিধানিক আদালতে এরই মধ্যে প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ইউনের বিচার শুরু হয়েছে।

পিপিপি-র প্রাক্তন প্রধান হান ডং-হুনের পদত্যাগের পর - যিনি ইউনের পদক্ষেপের বিরোধিতাকারী এক শক্তিশালী নেতাও বটে – দলটি বর্তমানে পিপিপির ভারপ্রাপ্ত নেতা কেওন সিওং-ডং-এর নেতৃত্বে চালিত হচ্ছে, যিনি ইউনপন্থী অংশের ঘনিষ্ঠ মিত্র ও অংশও বটে।

উভয় পক্ষের রাজনৈতিক সুবিধাবাদ এবং অগণতান্ত্রিক মনোভাব সংক্রান্ত অভিযোগের পাশাপাশি বিচারের প্রক্রিয়াটি প্রাইম মিনিস্টারের দোষী সাব্যস্ত হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ভোটের সংখ্যা নিয়েও বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। ক্ষমতাসীন দল যুক্তি দিয়েছে যে, ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্টকে দোষী সাব্যস্তকারী বিলটি পাসের জন্য দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রয়োজন হবে, যখন অন্য দিকে বিরোধী পক্ষ দাবি করেছে যে, বিলটি পাস করার জন্য শুধুমাত্র ১৫১টি ভোটের একটি সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রয়োজন, যেমনটা ক্যাবিনেট মিনিস্টারদের ক্ষেত্রেও দেখা গিয়েছে

ভোটের সংখ্যাকে ঘিরে বিতর্ক ছাড়াও পুরো পর্বটি আর কটি বিষয়কেও তুলে ধরে এবং তা হল ক্ষমতাসীনদের মধ্যে আন্তঃদলীয় দ্বন্দ্ব। পিপিপি-র প্রাক্তন প্রধান হান ডং-হুনের পদত্যাগের পর - যিনি ইউনের পদক্ষেপের বিরোধিতাকারী এক শক্তিশালী নেতাও বটে – দলটি বর্তমানে পিপিপির ভারপ্রাপ্ত নেতা কেওন সিওং-ডং-এর নেতৃত্বে চালিত হচ্ছে, যিনি ইউনপন্থী অংশের ঘনিষ্ঠ মিত্র ও অংশও বটে। তাঁর পূর্বসূরির বিপরীতে - যিনি ইউনের কর্মকাণ্ডের প্রকাশ্যে নিন্দা করেছেন -  কেওন রাজনৈতিক প্রতিকূলতার সম্মুখে একটি সংযুক্ত ফ্রন্ট উপস্থাপন করার চেষ্টা করছেন এবং বিচারকদের নিয়োগকে বিলম্বিত করার মাধ্যমে বিরোধ জিইয়ে রাখার চেষ্টা চালাচ্ছেন। তাঁর এই প্রচেষ্টা জনসমর্থন দ্বারা সমর্থিত একটি শক্তিশালী বিরোধীদের সঙ্গে সমাপতিত হয়েছে, যাঁরা শেষ পর্যন্ত লড়াই করতে প্রস্তুত। সুতরাং উভয় পক্ষের কঠোর অবস্থান আইন প্রণেতা মন্ত্রীদের জন্য পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে, যা রাজনৈতিক স্থবিরতার জন্ম দিয়েছে।

সাময়িক রাজনৈতিক ব্যবস্থা

দ্বিতীয় ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট চোই সাং-মোকের কাজ আগামিদিনে সহজ না হলেও – যেমনটা প্রধানমন্ত্রীর অভিশংসনের ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে – ই পরিস্থিতি চাপানউতোরের মধ্যেও স্থিতিশীলতার এক ইতিবাচক বার্তা প্রেরণ করে, যা সরকারের কার্যকারিতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এক  অর্থনৈতিক আমলা হিসেবে তাঁর নির্দলীয় অতীত এবং ভূমিকা দেশের আর্থিক স্থিতিশীলতা বৈদেশিক সম্পর্কের জন্য উপযুক্ত। সাংবাদিকদের দেওয়া বার্তায় তিনি তাঁর সরকারের উপর অবিলম্বে মনোযোগ দেওয়ার বিষয়ে জোর দিয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রীয় কার্যকলাপে বিশৃঙ্খলা কমানো এই মুহূর্তে সবচেয়ে জরুরি কাজ। যাতে শক্তিশালী নিরাপত্তা বজায় রাখার পাশাপাশি একটি স্থিতিশীল অর্থনীতি ধরে রাখার জন্য এবং যাতে দেশের মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা ব্যাহত না হয় ও দেশের আইনশৃঙ্খলা বজায় থাকে… তার জন্য সরকার সর্বতো ভাবে চেষ্টা করবে।’ তাঁর মন্তব্যে আত্মবিশ্বাসের সুর শোনা গেলেও বাস্তব পরিস্থিতি অত্যন্ত জটিল। ক্ষমতাসীন দল পিপিপি ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে সংখ্যাগরিষ্ঠতা বা জনগণের আস্থা পেতে সমর্থ হয়নি। অতএব, সাম্প্রতিক ঘটনাবলিপ্রেক্ষিতে নির্বাহী নিয়ন্ত্রণ প্রেসিডেন্টের হাতে থাকলেও রাজনৈতিক ভবিষ্য প্রধান বিরোধী পক্ষ ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি দ্বারা নির্ধারিত হয়, যা শীর্ষ পদটিকে নেহাতই হাতের পুতুলে পরিণত করেছে। এ ছাড়াও ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট আবার ফার্স্ট লেডি সংক্রান্ত বিশেষ কাউন্সিল বিল আনতে চলেছেন, যা হানের অভিযুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে বিরোধীদের সঙ্গে মতানৈক্যের কারণ হয়ে উঠেছে। সুতরাং, দক্ষিণ কোরিয়ায় রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার মূল চাবিকাঠি উভয় পক্ষের কাছে থাকা সত্ত্বেও প্রতিটি পক্ষই আপস ছাড়াই নিজেদের অবস্থান ধরে রাখতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।

তা সত্ত্বেও, চাপানউতোরের খেলা অব্যাহত রয়েছে এবং একই প্রক্রিয়ার পুনরাবৃত্তি হতে পারে। যেমনটা বিরোধীরাই ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, অভিশংসনের রাজনৈতিক চক্র স্থায়ী হয়সে ক্ষেত্রে, লি জু-হো, ইউ সাং-ইম এবং চো তাই-ইউল-সহ একগুচ্ছ মন্ত্রীরাও সেই পদে বহাল হতে পারেন। কিন্তু এ বার দেশের জন্য এই ঘটনার প্রভাব গভীরতর হবে এবং দ্বিতীয় অর্থনৈতিক ধাক্কার এক বৃহত্তর ঝুঁকিও আসতে চলেছে, যা প্রথম আঘাতের চেয়ে আরও গুরুতর হবে। এ ছাড়াও, বিচারক নিয়োগের বর্তমান প্রয়াসও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের ঝুঁকির সম্মুখীন, যেমনটা আগে দেখা যায়নি। রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের মধ্যে বিরোধীরা এবং ক্ষমতাসীনরা ভুলে যাচ্ছেন, ট্রাম্প প্রশাসনের দ্বিতীয় মেয়াদের সঙ্গে সঙ্গেই দক্ষিণ কোরিয়ার এই স্থবিরতা সমাপতিত হচ্ছে। ট্রাম্প প্রশাসন ইতিমধ্যেই একগুচ্ছ অভিযোগের তালিকা প্রস্তুত করেছে। বিশেষ করে দক্ষিণ কোরিয়ার বর্তমান নিরাপত্তা অর্থনৈতিক পরিবেশের পরিপ্রেক্ষিতে, এ হেন গুরুত্বপূর্ণ সময়ে রাজনৈতিক নেতৃত্বের অনুপস্থিতি ক্ষমতাসীন দল বা বিরোধীদের স্বার্থে অনুকূল নয়।

 


এই প্রতিবেদনটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয় ইন্ডিয়া টুডে-তে।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.