-
CENTRES
Progammes & Centres
Location
রাশিয়ার তরফে দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের উপর সংঘাত চালানোর কাল্পনিক প্রতিবেদন সম্ভবত এই অঞ্চলে সামরিক ভঙ্গি ও ব্যয়কে তীব্রতর করে তুলবে।
২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসের শেষের দিকের একটি প্রতিবেদনে দেখা গিয়েছে যে, রাশিয়ার সামরিক বাহিনী ২০০৮ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে গোপন নথির ভিত্তিতে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ায় একটি কাল্পনিক সংঘাতের জন্য ১৬০টি সম্ভাব্য হামলার একটি তালিকা তৈরি করেছে। পরিকল্পনাগুলি মস্কোর অনুমান ও নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজেশনের অধীনে পূর্ব এশিয়ায় যুদ্ধের নিরিখে করা হয়েছিল। লক্ষ্যবস্তুর তালিকায় কম্যান্ড সেন্টার, বিমানঘাঁটি, নৌ-স্থাপনা ও রাডার ফেসিলিটির মতো ৮২টি সামরিক পরিসর রয়েছে।
যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা বিশ্বব্যাপী সামরিক বাহিনী দ্বারা পরিচালিত একটি নিয়মিত অনুশীলন। তবে রাশিয়ার পরিকল্পনা দু’টি উল্লেখযোগ্য কারণের দরুন আলাদা: পরিকল্পিত অভিযানগুলির ব্যাপক মাত্রা ও সুযোগ এবং জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রকৃত লক্ষ্যগুলির সুনির্দিষ্ট বিবরণ ও পরিসরকে অন্তর্ভুক্ত করা।
রাশিয়ার কৌশলগত হুমকিতে জাপানের অবস্থান ও প্রতিক্রিয়া
জাপানের নির্দিষ্ট লক্ষ্যগুলির মধ্যে রয়েছে হোক্কাইডোর ওকুশিরি দ্বীপে এয়ার সেলফ-ডিফেন্স ফোর্স রাডার বেস, নির্মাণ ও অবকাঠামোর বিস্তারিত পরিমাপ। বেসামরিক লক্ষ্যবস্তুগুলির মধ্যে রয়েছে হোনশু ও কিউশু দ্বীপের সংযোগকারী কানমন সুড়ঙ্গ এবং ইবারাকি প্রিফেকচারের টোকাই গ্রামে একটি পারমাণবিক কেন্দ্র। ফাঁস হওয়া নথিগুলিকে রাশিয়ার বর্তমান কৌশলগত পদ্ধতির সঙ্গে প্রাসঙ্গিক বলে মনে করা হয়।
ফাঁস হওয়া রুশ সামরিক নথিতে জাপানের পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র সহ জাপানের গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোকে লক্ষ্য করে হামলা চালানোর বিস্তারিত পরিকল্পনা রয়েছে, যা আসলে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে জাপান যে অনিশ্চিত নিরাপত্তা পরিবেশের সম্মুখীন হয়েছে, সেই বিষয়টিকে আরও স্পষ্ট করেছে। এই উদ্ঘাটন রাশিয়ার নিরাপত্তা হুমকি হিসেবে টোকিয়োর ধারণাকে আরও তীব্র করে তুলতে পারে, বিশেষ করে যখন এই পরিকল্পনাগুলি শুধুমাত্র সামরিক স্থাপনা নয়, বেসামরিক অবকাঠামোকেও লক্ষ্য করে গৃহীত হয়েছে।
ফাঁস হওয়া রুশ সামরিক নথিতে জাপানের পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র সহ জাপানের গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোকে লক্ষ্য করে হামলা চালানোর বিস্তারিত পরিকল্পনা রয়েছে, যা আসলে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে জাপান যে অনিশ্চিত নিরাপত্তা পরিবেশের সম্মুখীন হয়েছে, সেই বিষয়টিকে আরও স্পষ্ট করেছে।
জাপান ইতিমধ্যেই তার ন্যাশনাল সিকিউরিটি স্ট্র্যাটেজি বা জাতীয় নিরাপত্তা কৌশলের (এনএসএস) অধীনে উল্লেখযোগ্য প্রতিরক্ষা সংস্কার করে চলেছে, সাম্প্রতিক বছরগুলিতে রেকর্ড প্রতিরক্ষা বাজেট বরাদ্দ করেছে। রাশিয়ার লক্ষ্যতালিকায় পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও শক্তি অবকাঠামোর অন্তর্ভুক্তি জাপানের গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোর দুর্বলতার সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ এবং এই কেন্দ্রগুলিকে সুরক্ষিত করার জন্য প্রতিরক্ষামূলক পদক্ষেপের বিষয়ে নতুন করে মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন। দূরপাল্লার ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র-সহ জাপানের পাল্টা হামলা করার ক্ষমতার অধিগ্রহণ প্রতিরোধের বিষয়ে কৌশলগত পরিবর্তনকেই দর্শায় এবং সম্ভাব্য আগ্রাসনের প্রতিক্রিয়া জানাতে তার প্রস্তুতির ইঙ্গিত দেয়। সর্বোপরি, রাশিয়ার কেএইচ-১০১ ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করার পরিকল্পনার প্রেক্ষিতে এজিস অ্যাশোর-এর মতো উন্নত ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার উপর মনোযোগ দেওয়া অত্যন্ত প্রয়োজন, যদিও এই ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা বাস্তব যুদ্ধের পরিস্থিতিতে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়।
জাপানের বেসামরিক অবকাঠামোকে রাশিয়ার লক্ষ্যবস্তু করে তোলার ঘটনা আসলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-জাপান নিরাপত্তা জোটে টোকিয়োর ভূমিকাকেই সশক্ত করেছে। এই অঞ্চলে মার্কিন সামরিক বাহিনীর অগ্রসরমান উপস্থিতি - যা মিত্র অভিযানের সঙ্গে তার নিরাপত্তা কৌশলকে সমন্বিত করার জন্য জাপানের ক্রমবর্ধমান ইচ্ছার সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ - আসলে টোকিয়ো ও ওয়াশিংটনের মধ্যে গভীরতর প্রতিরক্ষা সহযোগিতাকেই দর্শায়। উপরন্তু, টোকিয়ো দক্ষিণ কোরিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বর্ধিত ত্রিপাক্ষিক সহযোগিতার জন্য চাপ দিতে পারে, বিশেষ করে নথিগুলি উভয় দেশের বিরুদ্ধে অভিন্ন সাধারণ রুশ কৌশলগুলিকে দর্শায়। চিরাচরিত উত্তেজনা সত্ত্বেও টোকিয়ো ও সিওল সম্প্রতি রাশিয়া ও চিনের তরফে উঠে আসা যৌথ হুমকিকে স্বীকৃতি দিয়ে সম্পর্ক সংশোধন করতে শুরু করেছে।
কুরিল দ্বীপপুঞ্জ (জাপানে উত্তরাঞ্চলীয় পরিসর হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে) নিয়ে অমীমাংসিত আঞ্চলিক বিরোধ সার্বভৌমত্বের প্রতিরক্ষা হিসাবে মস্কোর আক্রমণাত্মক হামলা একটি সম্ভাব্য কারণ। জাপানের গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ও উন্নত সামরিক সক্ষমতা রাশিয়ার জন্য মার্কিন জোট ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ব্যাহত করার কৌশলগত লক্ষ্যে পরিণত হয়েছে। পরিকল্পনাগুলি পশ্চিম থেকে গভীরতর বিচ্ছিন্নতার মধ্যেই ইন্দো-প্যাসিফিকের উপর রাশিয়ার পরিবর্তনশীল কৌশলগত মনোযোগের দিকেও দৃষ্টি আকর্ষণ করে। বিশ্বব্যাপী অস্থির ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে পরিকল্পনাগুলির নিরিখে টোকিয়োকে সম্ভাব্য জটিল হুমকি পরিবেশে নিজের প্রস্তুতিও বাড়াতে হবে।
জাপানের গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ও উন্নত সামরিক সক্ষমতা রাশিয়ার জন্য মার্কিন জোট ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ব্যাহত করার কৌশলগত লক্ষ্যে পরিণত হয়েছে।
দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিক্রিয়া
দক্ষিণ কোরিয়ার জন্য লক্ষ্যতালিকায় কৌশলগত গুরুত্বের বেসামরিক ও সামরিক অবস্থানগুলি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে সেতু, কম্যান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল বাঙ্কার, সামরিক সদর দফতর ও ঘাঁটি এবং বুসানে অবস্থিত পোহাং স্টিলওয়ার্কসের মতো গুরুত্বপূর্ণ শিল্পক্ষেত্র। দেশে বিদ্যমান রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে পরিকল্পনার উদ্ঘাটন গুরুতর উদ্বেগের বিষয় হলেও, এটি জাপানের মতো অনুরূপ রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া তৈরি করেনি।
তা সত্ত্বেও, দক্ষিণ কোরিয়া উত্তর-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলে রাশিয়ার ক্রমবর্ধমান কৌশলগত ভাবমূর্তি নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন। বিশেষ করে ২০২৪ সালের জুন মাসে সর্বাত্মক অংশীদারিত্বের চুক্তি স্বাক্ষরের পরে উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে মস্কোর ক্রমবর্ধমান সামরিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক সিওলের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষেত্রে বিরক্তির কারণ হয়ে উঠেছে।
প্রতিবেদনটিতে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে তার সামরিক পদক্ষেপ সংক্রান্ত বিবেচনা নিয়ে মস্কোর আচরণ সম্পর্কে অনেক শঙ্কা থাকলেও রাশিয়ার প্রতি সিওলের প্রাথমিক উদ্বেগ অস্তিত্বের হুমকির বদলে বরং এখন পিয়ংইয়ংয়ের সঙ্গে রাশিয়ার সামরিক সম্পর্ক গভীরতর হওয়া সংক্রান্ত। সুতরাং, উদ্দেশ্য হল দুই দেশের মধ্যে গভীরতর অংশীদারিত্বের সমাধান করা, যার ফলে দক্ষিণ কোরিয়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের সঙ্গে দক্ষিণ কোরিয়ার অংশীদারিত্ব আসলে দ্বিপাক্ষিক ও ত্রিপাক্ষিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দক্ষিণ কোরিয়া-জাপান সম্পর্ক ও ত্রিপাক্ষিক নিরাপত্তা সহযোগিতার মাধ্যমে পদ্ধতিগত ভাবে অগ্রসর হয়েছে। এ ছাড়াও দক্ষিণ কোরিয়া ন্যাটো এবং পোল্যান্ড ও ইউক্রেনের মতো পূর্ব ইউরোপীয় দেশগুলির সঙ্গে বিশেষ করে রাশিয়ার হুমকি বিবেচনা করে সহযোগিতার প্রক্রিয়া উন্নত করেছে।
যাই হোক, জাপানের বিপরীতে রুশ হুমকির আখ্যান সিওলের রাজনৈতিক বর্ণালি জুড়ে তেমন প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি। রাশিয়া ও চিনের হুমকির ধারণার ক্ষেত্রে বিরোধী দল ও ক্ষমতাসীন দলের মধ্যে দ্বিদলীয়তার অনুপস্থিতির কারণে এমনটা ঘটেছে। গণতান্ত্রিক প্রশাসনের অধীনে একটি গুরুতর জাতীয় নিরাপত্তা হুমকি হিসাবে রাশিয়ার এই ভিন্ন ধারণার পাশাপাশি মিত্রদের মধ্যে সহযোগিতার সুযোগ চিরাচরিত ভাবে সীমিত হয়েছে। এই ধরনের তথ্য দেশের অনেকের জন্য বিরক্তির উদ্রেক করলেও তাৎক্ষণিক হুমকির তালিকায় তেমন অগ্রাধিকার পায় না।
দক্ষিণ কোরিয়া ন্যাটো এবং পোল্যান্ড ও ইউক্রেনের মতো পূর্ব ইউরোপীয় দেশগুলির সঙ্গে বিশেষ করে রাশিয়ার হুমকি বিবেচনা করে সহযোগিতার প্রক্রিয়া উন্নত করেছে।
দেশে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব অব্যাহত থাকায় বৈদেশিক নীতির উপর বিদ্যমান বিভাজন প্রকাশ্যে এসেছে এবং বিরোধীরা ইউন প্রশাসনের বিরুদ্ধে মূল্যভিত্তিক কূটনৈতিক অনুশীলন ও আঞ্চলিক ভূ-রাজনৈতিক ভারসাম্যকে উপেক্ষা করার অভিযোগ এনেছে।
উপসংহার
আগামী চার বছরে ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদকালে উত্তর-পূর্ব এশিয়ায় রুশ চ্যালেঞ্জ সামরিক ভঙ্গি, অর্থনৈতিক সুবিধা ও কূটনৈতিক চাপের মিশ্রণের মাধ্যমে মোকাবিলা করার সম্ভাবনা রয়েছে। অভিন্ন চাপের নিরিখে ট্রাম্প জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়াকে প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়ানোর জন্য চাপ দিতে পারেন বা নৌবাহিনী মোতায়েন ও তীব্র যৌথ মহড়া-সহ এই অঞ্চলে মার্কিন সামরিক উপস্থিতি জোরদার করার সময় স্বাধীন সামরিক দক্ষতা বিকাশ করতে পারেন। ট্রাম্প চিরাচরিত ভাবে মস্কোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করার চেষ্টা করলেও যে কোনও বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া সম্ভবত মার্কিন স্বার্থের জন্য ইতিবাচক সুযোগ আনতে পারে। যাই হোক, রাশিয়া সম্পর্কে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের ভিন্ন হুমকি ধারণা সম্ভবত সহযোগিতার ঊর্ধ্বে উঠে বিতর্কেরই জন্ম দেবে।
প্রত্নশ্রী বসু অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন, কলকাতার সেন্টার ফর নিউ ইকোনমিক ডিপ্লোমেসি, ইন্দো-প্যাসিফিক ও স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ প্রোগ্রামের অ্যাসোসিয়েট ফেলো।
অভিষেক শর্মা অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.
Pratnashree Basu is an Associate Fellow, Indo-Pacific at Observer Research Foundation, Kolkata, with the Strategic Studies Programme and the Centre for New Economic Diplomacy. She ...
Read More +Abhishek Sharma is a Research Assistant with ORF’s Strategic Studies Programme. His research focuses on the Indo-Pacific regional security and geopolitical developments with a special ...
Read More +