Published on May 01, 2022 Updated 0 Hours ago

করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ভুল তথ্য বা গুজবের প্রচারের মতো সমান চ্যালেঞ্জিং দিকটির উপর নজর দেওয়াও কোভিড-১৯ প্রতিরোধের অংশ রূপে তুলে ধরতে হবে।

দি ইনফোডেমিক বা তথ্যমারি: অতিমারি প্রতিরোধের নেপথ্যে অন্যতম চ্যালেঞ্জ

২০২০ সালের এপ্রিল মাসের শেষ দিকের এক সকালে মাইক্রোবায়োলজিস্ট ডক্টর এলিসা গ্রানাটো তাঁর নিজের মৃত্যুসংবাদে জেগে ওঠেন যা সে দিন সোশ্যাল মিডিয়ার সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছিল। ইন্টারনেটে এই গুজব ভাইরাল হয়ে যায় যে, ড. গ্রানাটো ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের অধীনে থাকা কোভিড-১৯ টিকা গ্রহণের ফলে মারা গিয়েছেন। প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য, টিকার এই পরীক্ষামূলক প্রয়োগে ব্রিটেন থেকে যে কয়েক জন সবচেয়ে আগে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এগিয়ে এসেছিলেন, ড. গ্রানাটো তাঁদেরই এক জন। ড. গ্রানাটো ইন্টারনেটের এই গুজবের প্রত্যুত্তরে তাঁর সোশ্যাল মিডিয়া প্রোফাইলে পোস্ট করে লেখেন, ‘ভালই আছি।’ কোভিড-১৯ অতিমারি চলাকালীন গত দু’বছরে সারা পৃথিবী জুড়ে যে ধারা লক্ষ করা গিয়েছে, এই ঘটনা তারই এক ঝলক মাত্র।

‘ইনফোডেমিক’ বা ‘তথ্যমারি’ হল কোনও ব্যাধি বা অসুখের সঙ্গে সঙ্গে ছড়িয়ে পড়া পর্বতপ্রমাণ তথ্য, যার কিছুটা ঠিক, কিছুটা ভুল। কোভিড-১৯ অতিমারি চলাকালীন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) তথ্যমারিকে একটি প্রধান উদ্বেগের কারণ রূপে চিহ্নিত করেছে।

অতিমারি চলাকালীন গত দু’বছর যাবৎ পৃথিবীর সব দেশের প্রত্যেক নাগরিকই সব ধরনের ভুল এবং বিভ্রান্তিকর তথ্যের সম্মুখীন হয়েছেন। এবং সেগুলির মধ্যে কিছু কিছু তথ্যের প্রচার এমন ভাবেই চালানো হয়েছে, যেন তা বৈজ্ঞানিক ভাবে প্রমাণিত। সাধারণ মানুষ পৃথক পৃথক উৎস থেকে পরস্পরবিরোধী তথ্য লাভ করেছেন। যাঁরা আরও বেশি তথ্য প্রমাণের অপেক্ষায় ছিলেন এবং পরীক্ষামূলক কাজকর্ম চালিয়ে যাচ্ছিলেন, সেই সব বৈজ্ঞানিক এবং জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের তুলনায় অধিক আত্মবিশ্বাসের সুর শোনা গিয়েছে বিভ্রান্তিকর তথ্যের উদ্ভাবকদের গলায়। কারণ বিজ্ঞানের ভিত্তিই হল নিজেকে প্রশ্ন করা এবং ক্রমাগত পরীক্ষানিরীক্ষা চালিয়ে যাওয়া। প্রিপ্রিন্ট সার্ভারে (অর্থাৎ বৈজ্ঞানিক জার্নালে প্রকাশিত হওয়ার আগে গবেষকদের প্রাথমিক পর্যায়ের পরীক্ষানিরীক্ষালব্ধ ফলাফল জনসাধারণের জ্ঞাতার্থে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা) প্রকাশিত প্রাথমিক অনুমানগুলির ভুল ব্যাখ্যা প্রচার করেন এমন এক দল মানুষ যাঁদের বৈজ্ঞানিক গবেষণা সংক্রান্ত কোনও পূর্ব অভিজ্ঞতা বা ধারণাই নেই।

প্রিপ্রিন্ট সার্ভারে (অর্থাৎ বৈজ্ঞানিক জার্নালে প্রকাশিত হওয়ার আগে গবেষকদের প্রাথমিক পর্যায়ের পরীক্ষানিরীক্ষালব্ধ ফলাফল জনসাধারণের জ্ঞাতার্থে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা) প্রকাশিত প্রাথমিক অনুমানগুলির ভুল ব্যাখ্যা প্রচার করেন এমন এক দল মানুষ যাঁদের বৈজ্ঞানিক গবেষণা সংক্রান্ত কোনও পূর্ব অভিজ্ঞতা বা ধারণাই নেই।

সাধারণ মানুষ প্রায়শই কোভিড-১৯ ভাইরাস, সংক্রমণ, ব্যাধি, টিকা, রোগের লক্ষণ, চিকিৎসা প্রক্রিয়া, রোগ পরীক্ষা এবং অতিমারি সংক্রান্ত অন্যান্য প্রায় সব বিষয়েই ভুল তথ্যের শিকার হয়েছেন। তথ্য শুধু মাত্র পরিমাণগত ভাবেই যে পাহাড়প্রমাণ ছিল, এমনটা নয়। তা ছিল সঠিক তথ্য, বিভ্রান্তিকর তথ্য এবং সম্পূর্ণ গুজবের এক মিশ্রণ। এমন এক সময়ে যখন সকলের প্রয়োজন বিজ্ঞানভিত্তিক তথ্য, তখন বিভ্রান্তিকর তথ্যের প্রচারের ফলে সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন দরিদ্র এবং সমাজের প্রান্তিক মানুষেরা।

অতিমারির সময়ে যে কোনও সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার জন্য প্রয়োজন মহামারিবিদ্যা বা এপিডেমিওলজি এবং জনস্বাস্থ্যের মূল নীতিগুলি সম্পর্কে সর্বাঙ্গীন ও প্রগতিশীল ধারণা থাকা। কিন্তু এমনটা হওয়ার পরিবর্তে অতিমারির সময়ে এক দল ‘নো অল এক্সপার্ট’ বা ‘সবজান্তা বিশেষজ্ঞ’র সর্বব্যাপী উপস্থিতি (বিশেষ করে টেলিভিশন চ্যানেল আর সোশ্যাল মিডিয়ায়) লক্ষ করা গিয়েছে যাঁরা সর্বদাই বৈজ্ঞানিক সত্যতার পরিপন্থী হওয়া সত্ত্বেও তাঁদের সিদ্ধান্ত এবং মতামতকে চূড়ান্ত বলে প্রচার চালিয়েছেন। ভারতে ছড়িয়ে পড়া গুজবগুলির মধ্যে অন্যতম হল এই যে – অতিমারির তৃতীয় প্রবাহ শিশুদের উপরে প্রভাব ফেলবে। এটি একটি সম্পূর্ণ ভ্রান্ত ধারণা হলেও এর ফলে নীতি নির্ধারকরা দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়েন এবং তাঁরা পুনরায় স্কুলগুলি খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করেন। ফলে পরবর্তী কালে অনেক দেরিতে হলেও যখন আংশিক ভাবে বিদ্যালয়গুলি পুনরায় খুলে দেওয়া হয়, তখন শিশুদের মা-বাবারা তাদের স্কুলে পাঠানোর বিষয়ে ইতস্তত করতে থাকেন। শুধু মাত্র একটি বিভ্রান্তিকর তথ্যের কী মারাত্মক প্রভাব পড়তে পারে, তা এই ঘটনা থেকেই স্পষ্ট হয়ে যায়।

নাগরিকদের মধ্যে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে পড়ার ফলে টিকাগ্রহণে দ্বিধা, কনট্যাক্ট ট্রেসিং বা সংক্রামিত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসা মানুষদের চিহ্নিত করার কাজে জন-সহযোগিতার অভাব এবং কোভিড বিধি ও জনস্বাস্থ্য সংক্রান্ত নিয়ম মেনে চলার ক্ষেত্রে অসঙ্গতি লক্ষ করা যায়। রোগ নিরাময়ের কাজে অপ্রমাণিত চিকিৎসা পদ্ধতির প্রচার চালানো হয় এবং অতিমারির তীব্র সঙ্কটের মাঝেই ভুয়ো মতামতকে অকাট্য সত্য বলে তুলে ধরা হতে থাকে। এর ফল হয় সর্বব্যাপী এবং গুরুতর।

পৃথিবীর অন্য একাধিক দেশও একই রকমের অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছে। ইউরোপ এবং আমেরিকায় বহু সংখ্যক মানুষ ফেস মাস্ক বা টিকার মতো প্রমাণিত জনস্বাস্থ্যের সরঞ্জাম ও ওষুধের সক্রিয় ভাবে বিরোধিতা করেছেন। এশিয়া প্যাসিফিকে বেশির ভাগ দেশই ভুল তথ্য সংক্রান্ত বিভিন্ন রকমের প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়েছে। ফলে দেশগুলি ক্ষতি এড়াতে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ এবং সোশ্যাল মিডিয়ার উপরে বিধিনিষেধ আরোপ করতে বাধ্য হয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়া ‘বিগ ডেটা’ এবং আই সি আর টি মঞ্চগুলি ব্যবহার করে অতিমারির বিভিন্ন আঙ্গিক সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে নিয়মিত ভাবে সচেতন করেছে এবং গুজবের প্রচার রোধে সচেষ্ট হয়েছে। ফিজি এবং সলোমন আইল্যান্ড-এ সরকারের সঙ্গে আন্তর্জাতিক এন জি ও বা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলি ভুল তথ্যের সংশোধন ও গুজবের অপপ্রচার রুখতে একজোটে কাজ করেছে। বাংলাদেশে ব্যাধিটির সংশ্লিষ্ট দিকগুলি সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে তুলতে মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটররা সরকারি স্বাস্থ্য মন্ত্রকের সঙ্গে একযোগে কাজ করেছে মঙ্গোলিয়ায় অতিমারি সংক্রান্ত সঠিক তথ্যের প্রচারের জন্য একটি শিশু সম্পর্কিত ভিডিয়ো ব্যবহার করা হয় এবং পরিবারের মানুষজনদের প্রভাবিত করার কাজে শিশুদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাকে চিহ্নিত করা হয়।

অধিকাংশ দেশই একই সঙ্গে দু’টি অতিমারির সঙ্গে লড়াই করছে – করোনাভাইরাস এবং ইনফোডেমিক। এবং উভয়ই সমান ক্ষতিকারক। কোভিড-১৯ অতিমারির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ইনফোডেমিকের চ্যালেঞ্জটি আরও বেশি করে স্পষ্ট হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ডিরেক্টর জেনারেল টেডরস অ্যাডানম ঘেব্রিয়েসাস বলেন যে, ‘কোভিড-১৯ বাধা অতিক্রম করার জন্য বিজ্ঞান এবং প্রামাণিক তথ্যের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা থাকা অপরিহার্য, তাই কোভিড-১৯ থেকে মানুষের প্রাণ বাঁচাতে গৃহীত জনস্বাস্থ্য পদক্ষেপের মতোই সমান গুরুত্বপূর্ণ হল ইনফোডেমিক বা তথ্যমারির সমাধান খোঁজা। যখন ভুল তথ্য বার বার প্রচার করা হয় এবং বাড়িয়ে বলা হয়, তা সে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের দ্বারাই হোক না কেন, তখন সবচেয়ে বড় বিপদ হল এই যে, সত্যের উপরে ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত তথ্যেরও জনমানসে ক্ষীণ প্রভাব পড়ে।’

অতিমারির নিয়ন্ত্রণে ভারত তার ন্যাশনাল ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অ্যাক্ট, ২০০৫ রদ করে দেয় এবং ফেস মাস্ক ও শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার মতো নিয়মগুলি ছাড়া অন্যান্য বিধিনিষেধ তুলে দেয়।

বিশ্বের অধিকাংশ দেশের সরকারই গুজবের প্রতিরোধে দ্রুততার সঙ্গে ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করে না। যদিও সাম্প্রতিক অতীতে অবস্থার সামান্য বদল হয়েছে। অতিমারির শেষ দুই বছরে কেন্দ্রীয় এবং আঞ্চলিক কর্তৃপক্ষের তরফে সাধারণ মানুষকে গুজব এবং ভুয়ো খবরের শিকার হওয়া থেকে রক্ষা করতে ক্রমাগত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের কাজ চালানো হয়েছে। কোভিড-১৯ ভুয়ো তথ্য প্রচারের প্রতিরোধে গুগুল, ফেসবুক (মেটা) ইত্যাদি সোশ্যাল মিডিয়া সংস্থাগুলির তৎপরতাও এই সময়ে পরিলক্ষিত হয়েছে।

আমাদের বিশ্ব এখনও অতিমারির মধ্যে দিয়ে চলেছে। ২০২১ সালের ডিসেম্বর এবং ২০২২ সালের প্রথম দিকে পঞ্চম কোভিড সারস কোভ টু-এর ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন (বি ১.৬১৭) আবিষ্কৃত হয় এবং পরবর্তী সময়ে এটির তিনটি প্রকার যথাক্রমে বি এ ওয়ান, বি এ টু এবং বি এ থ্রি-কেও শনাক্ত করা হয়। ২০২২ সালের মার্চ মাসে ওমিক্রনের এক্স ই রিকম্বিন্যান্ট ভ্যারিয়েন্টকেও খুঁজে পাওয়া যায়। ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের উত্থানের ফলে ভারতে কোভিড-১৯ তৃতীয় প্রবাহ-সহ বিশ্বে অনেক দেশেই সংক্রমণের নতুন প্রবাহ লক্ষ করা গিয়েছে। যদিও তত দিনে কোভিড-১৯ টিকাকরণের প্রসার এবং সাধারণ সংক্রমণের হার কম থাকার ফলে ভারতে তৃতীয় প্রবাহের প্রভাব সীমিত থেকেছে। এমনটা সম্ভব হয়েছে বিগত প্রবাহগুলির পদ্ধতি থেকে শিক্ষা নিয়ে সেগুলির প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ এবং উপযুক্ত সময়ে যথাযথ ভাবে সেগুলির বাস্তবায়নের ফলে। ২০২২ সালের ৩১ মার্চ অতিমারির নিয়ন্ত্রণে ভারত তার ন্যাশনাল ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অ্যাক্ট, ২০০৫ রদ করে দেয় এবং ফেস মাস্ক ও শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার মতো নিয়মগুলি ছাড়া অন্যান্য বিধিনিষেধ তুলে দেয়। একই সঙ্গে ২০২২ সালের মার্চ-এপ্রিল মাসে সারা বিশ্ব জুড়ে সংক্রমণের নতুন প্রবাহের জোয়ার এসেছে। চিনে কোভিড-১৯ সংক্রমণের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ২০২২ সালের এপ্রিল মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে সাংহাইয়ে কড়া লকডাউন জারি করা হয়েছে।

সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ

স্পষ্টতই সারা বিশ্ব কোভিড-১৯ অতিমারির সঙ্গে লড়ছে এবং ইনফোডেমিককে ক্রমাগত নিয়ন্ত্রণে রাখতে আমাদের কতগুলি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

প্রথমত, প্রতিটি দেশকে তথ্যের অতিমারি বিষয়টিকে নিজেদের প্রেক্ষাপটে খতিয়ে দেখতে হবে, তার সম্ভাব্য উৎসগুলি খুঁজে বের করতে হবে এবং চ্যালেঞ্জটির মোকাবিলায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। ইনফোডেমিক সমস্যাটির সমাধান প্রক্রিয়া অতিমারির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জনসংযোগ কৌশলেরই অংশ হওয়া উচিত।

দ্বিতীয়ত, সোশ্যাল মিডিয়া সংস্থাগুলিকেও তাদের ব্যবহারকারীদের নজরে পড়া কোনও বিভ্রান্তিকর তথ্য ফ্ল্যাগ বা চিহ্নিত করার ক্ষমতা প্রদানে আরও শক্তিশালী রিপোর্টিং কৌশলের বাস্তবায়ন করতে হবে। একই সঙ্গে, সংস্থাগুলির তরফে ইতিমধ্যেই বহুল প্রচারিত গুজবভিত্তিক পোস্ট বা বক্তব্য সম্পর্কে ব্যবহারকারীদের সতর্ক করার কথাও ভাবা যেতে পারে। এমনটা করা শুরু হলেও এ ক্ষেত্রে আরও সদর্থক ভূমিকা পালনের সুযোগ রয়েছে

তৃতীয়ত, ইনফোডেমিকের প্রতিরোধে গোষ্ঠীগুলির উদ্বেগ এবং প্রশ্নগুলি বুঝতে পারা, সে সম্পর্কে সচেতন হওয়া এবং সেগুলির সময়োপযোগী প্রত্যুত্তর দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। অতিমারির সময়ে সঠিক তথ্যের অভাবে সৃষ্ট শূন্যস্থান সাধারণত ভুয়ো তথ্যের দখলে চলে যায়। তাই মানুষের কথা শোনা, প্রধান উদ্বেগগুলি চিহ্নিতকরণের জন্য গবেষণা চালানো এবং সমাধান প্রদানের চেষ্টা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

চতুর্থত, এটিও গুরুত্বপূর্ণ যে, স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তি এবং অতিমারি বিশেষজ্ঞরা অতিমারি এবং মহামারি সংক্রান্ত ঝুঁকিগুলি বিশ্লেষণ করার কাজেও প্রশিক্ষিত হবেন। কার্যকরী দক্ষতা এবং প্রশিক্ষণের অভাবে তাঁরা সম্পূর্ণ তথ্য প্রদানে ব্যর্থ হন। ঝুঁকি বিশ্লেষণ এবং জনসাধারণকে উপদেশ দেওয়ার কাজে প্রভাবশালী এবং নির্ভরযোগ্য বিশেষজ্ঞদের সংযুক্ত করা উচিত।

চিকিৎসা এবং জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের দায় বর্তায় তাঁদের তরফে থেকে স্বচ্ছ এবং মুক্ত তথ্য প্রদানের এবং একই সঙ্গে দায় বর্তায়, তাঁরা যা জানেন বা জানেন না, সে কথা অকপটে স্বীকার করে নেওয়ার। বিশেষ করে এমন এক পরিস্থিতিতে যখন একটি নতুন প্যাথোজেন শনাক্ত করা হয়েছে এবং সংক্রমণ ও অতিমারির বৃদ্ধি ঊর্ধ্বমুখী।

সর্বোপরি ভুয়ো তথ্যের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে বিভিন্ন সম্প্রদায় বা গোষ্ঠীর মানুষের সংযুক্তিকরণ ও সশক্তিকরণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর জন্য নাগরিক সমাজের পরিকাঠামো এবং স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সদর্থক ভাবে কাজে লাগানো যেতে পারে।

চিকিৎসা এবং জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের দায় বর্তায় তাঁদের তরফ থেকে স্বচ্ছ এবং মুক্ত তথ্য প্রদানের এবং একই সঙ্গে দায় বর্তায়, তাঁরা যা জানেন বা জানেন না, সে কথা অকপটে স্বীকার করে নেওয়ার। বিশেষ করে এমন এক পরিস্থিতিতে যখন একটি নতুন প্যাথোজেন শনাক্ত করা হয়েছে এবং সংক্রমণ ও অতিমারির বৃদ্ধি ঊর্ধ্বমুখী। ফলে চিকিৎসা ব্যবস্থা সংক্রান্ত মানুষজন-সহ প্রত্যেকের উপরেই এই গুরু দায়িত্ব বর্তায় যে, তাঁরা যেন সেই সকল বিষয়ে মন্তব্য না করেন, যে বিষয়ে তাঁরা পারদর্শী নন। একই ভাবে সহকর্মীদের মধ্যে থেকে উদ্ভূত ভুয়ো তথ্যের শনাক্তকরণও জরুরি।

ইনফোডেমিক বা তথ্যমারি প্রতিরোধের সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটিতে স্বাস্থ্য পরিষেবা সংক্রান্ত সকল তথ্যের প্রচার টার্গেট অডিয়েন্স বা কাঙ্ক্ষিত জনগোষ্ঠীর কথা মাথায় রেখে করা উচিত। এবং যাতে সাধারণ মানুষ বুঝতে পারেন, তাই এই তথ্যের প্রচার তাঁদের বোধগম্য ভাষায় হওয়া এবং প্রান্তিক অঞ্চলের মানুষের কাছে পৌঁছনোও অত্যন্ত জরুরি। ভুয়ো তথ্যের প্রতিরোধই যথেষ্ট নয়, বিশ্বস্ত সূত্রের মাধ্যমে নির্দিষ্ট সময়ে এবং স্বচ্ছ ভাবে তথ্যের প্রচার করাও অপরিহার্য। বৈজ্ঞানিক গবেষণা এবং তথ্য প্রমাণই ইনফোডেমিক প্রতিরোধে সর্বাধিক কার্যকর উপায়।

কোভিড-১৯ সময়কালের পুরোটা জুড়েই ইনফোডেমিক এক চ্যালেঞ্জ রূপে বিদ্যমান থেকেছে। অতিমারির দু’বছর পার করে সকল দেশই এই চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে আরও ভাল ভাবে অবগত। প্রত্যেক দেশকে সঠিক চর্চা এবং অন্য দেশের অভিজ্ঞতা থেকে শিখতে হবে, অতিমারির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের শেষ লগ্নে পৌঁছে টিকাকরণের হার বৃদ্ধি এবং অন্যান্য জনস্বাস্থ্য সংক্রান্ত পদক্ষেপ গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গে ভুয়ো তথ্যের প্রচারের অবসান ঘটানো কোভিড-১৯ প্রতিরোধ কৌশলের জন্য সমান গুরুত্বপূর্ণ।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.