Author : Abhijit Singh

Published on Apr 13, 2023 Updated 0 Hours ago

সামুদ্রিক কৌশলের একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ হিসাবে বিবেচনা করা হলেও বৃহৎ ‘সুপারক্যারিয়ার’গুলি কিন্তু যথেষ্টই ব্যয়বহুল

ভারতীয় নৌবাহিনীর বিমানবাহী জাহাজ সংক্রান্ত দ্বন্দ্ব

ভারতের প্রথম চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ প্রয়াত জেনারেল বিপিন রাওয়াত বিমানবাহী রণতরী সম্পর্কে একটি আবছা দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করতেন। তিনি এগুলিকে ব্যয়বহুল ও অপ্রয়োজনীয় মনে করেছিলেন। ২০২০ সালের জুন মাসে তাঁর তির্যক বক্তব্যে উঠে এসেছিল যে, ভারতীয় সামরিক বাহিনী ‘কোনও অভিযাত্রী বাহিনী নয়’ এবং দূরবর্তী স্থানে এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার মোতায়েন করার প্রয়োজন নেই। তা ছাড়া তিনি অনুভব করেছিলেন যে, এ ধরনের জাহাজগুলি সমুদ্র থেকে উৎক্ষেপণ এবং উপকূলভিত্তিক ক্ষেপণাস্ত্রগুলির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। জেনারেলকে বরং সাবমেরিনের পক্ষপাতী বলে মনে হয়েছিল। কারণ সেগুলিকে তিনি প্রতিরক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেন এবং সে ক্ষেত্রে এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ারের মতো সুরক্ষার জন্য যুদ্ধজাহাজগুলির ঢালের প্রয়োজনীয়তা ছিল না।

এয়ারক্রাফ্ট ক্যারিয়ারকে সামুদ্রিক কৌশলের কেন্দ্রস্থলে একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ হিসাবে বিবেচনা করার দরুন ভারতীয় নৌবাহিনী বরাবরই এই ধরনের যুক্তি সম্পর্কে সন্দিহান ছিল। ভারতীয় বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফ্ল্যাটটপের একটি অবিচ্ছিন্ন এবং দৃশ্যমান উপস্থিতি সুনিশ্চিত করার মাধ্যমে উপকূলে মনস্তাত্ত্বিক ভারসাম্যকে প্রভাবিত করার সিদ্ধান্তমূলক ক্ষমতা রয়েছে, যা প্রতিপক্ষের খরচ-লাভের হিসাবকে জটিলতর করে তোলে। ক্যাটাপল্ট লঞ্চ সিস্টেম-সহ বৃহৎ ডেক ক্যারিয়ার বা সুপার ক্যারিয়ার, বিশেষ করে ভারী, দীর্ঘপাল্লার বহু ক্ষেত্রে কার্যকর এয়ারক্রাফ্ট চালানোর ক্ষমতার জন্য অনুকূল

কিন্তু নৌবাহিনী গত বছর অপ্রত্যাশিত ভাবে বৃহৎ ক্যারিয়ারের চাহিদাকে ত্যাগ করে। বর্তমান নৌপ্রধান অ্যাডমিরাল আর হরি কুমার ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে নৌবাহিনী দিবসের প্রেস কনফারেন্সে ঘোষণা করেছিলেন যে, পরবর্তী ফ্ল্যাটটপটি আকারে ছোট হবে৷ তিনি গত মাসে এই সিদ্ধান্তটি সুনিশ্চিত করে বলেছেন যে, নৌবাহিনী ৪৫,০০০ টন ওজনসম্পন্ন ভারতের প্রথম দেশীয় এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার বিক্রান্তের জন্য একটি পুনরায় বরাতের পরিকল্পনা করছে। এর পাশাপাশি ভবিষ্যতে আরও বৃহত্তর এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ারের নকশা নির্মাণের চেষ্টা চালাচ্ছে।

ছোট ডেক ক্যারিয়ারগুলি শান্তিমূলক পরিস্থিতিতে কাজকর্ম চালাতে অবশ্যই কার্যকর হলেও তাদের যুদ্ধের ভূমিকা সীমিত।

এই বিপরীত অবস্থানের দু’টি ব্যাখ্যা সম্ভব, প্রথমটি হল যে, নৌবাহিনী এমন একটি আর্থিক পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে, যেখানে একটি বড় এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার তৈরি করা আর সম্ভব নয়। বর্তমান মোদী সরকারের চালিকামন্ত্র হল আত্মনির্ভর ভারত এবং তাই নৌ-পরিকল্পকরা ২০৪৭ সালের মধ্যে স্বদেশিকরণের জন্য ক্রমবর্ধমান চাপের মধ্যে রয়েছেন। অতিমারি এবং ইউক্রেনের যুদ্ধের ফলে মূলধন বরাদ্দও (আপেক্ষিক পরিপ্রেক্ষিতে) কম হয়েছে, যখন সরকার বিদেশি ব্যবস্থা ক্রয়ের ক্ষেত্রে বরাদ্দ পুঁজিতে ব্যাপক হ্রাস ঘটিয়েছে। তাই একটি বৃহৎ এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় সময় এবং সম্পদ বাদ দিয়ে ভারতের নৌ-পরিকল্পকরা একটি বৃহৎ এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় আমদানি আদৌ বাস্তবায়িত হবে কি না, সে ব্যাপারে অনিশ্চিত। একটি ছোট ক্যারিয়ারের বিকল্পও সুনিশ্চিত করবে যে, বিক্রান্ত নির্মাণে কোচিন শিপইয়ার্ডের অভিজ্ঞতা যাতে বৃথা না যায়।

নৌবাহিনী এই দশকের শেষ নাগাদ দেশীয় টুইন-ইঞ্জিন ডেকভিত্তিক লড়াকু বিমান অন্তর্ভুক্তির কাজ শুরু করতে পারে। মিগ-২৯কে বিমানগুলিকে প্রতিস্থাপন করার উদ্দেশ্যে তৈরি এই বিমানগুলি পরিচালনা করতে নৌবাহিনীর কমপক্ষে দু’টি কার্যকর এয়ারক্রাফ্ট ক্যারিয়ারের প্রয়োজন হবে। একটি বৃহৎ ডেক ক্যারিয়ার নৌবাহিনীর পরিকল্পনার অংশ নয়। কারণ পরিষেবায় এটিকে প্রবেশ করাতে দুই দশকের বেশি সময় লাগবে।

তবুও একটি সুপার ক্যারিয়ারের বদলে একটি ছোট ফ্ল্যাটটপ ব্যবহার করার বিষয়টি নিয়ে নৌবাহিনী বেশ দ্বন্দ্বে রয়েছে। একটি হালকা ক্যারিয়ারের প্রধান সমস্যা হল এই যে, এটি বর্তমানের জটিল এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ সামুদ্রিক পরিবেশের জন্য উপযুক্ত নয়। যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে একটি ছোট ক্যারিয়ার তার কার্যকলাপে সীমাবদ্ধ, বিশেষ করে যখন সেগুলি প্রতিপক্ষের অ্যান্টি-অ্যাক্সেস, অ্যান্টি-ডিনায়াল ব্যবস্থাগুলির সম্মুখীন হয়। যেহেতু একটি ছোট ফ্ল্যাটটপ ভারী বিমানগুলি পরিচালনা না করার দরুন উড়ানের জন্য ক্যাটাপল্ট ব্যবস্থার প্রয়োজন হয়। তবে সাধারণত দীর্ঘতর রেঞ্জ থাকায় জাহাজের কাছে প্রতিপক্ষের উপকূলভিত্তিক ক্ষেপণাস্ত্র এবং বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সম্পৃক্ততার পরিসরের মধ্যে কাজ করা ছাড়া তার কাছে বিশেষ বিকল্প থাকে না।

কিন্তু ছোট ক্যারিয়ারগুলি অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে বড় ডেক ক্যারিয়ারের তুলনায় কম সক্ষম। বড় ক্যারিয়ারগুলির বিপরীতে যেগুলি বেশির ভাগই পারমাণবিক শক্তি চালিত এবং সংবেদনশীল উপকূলে ক্রমাগত কৌশল চালানোর জন্য পর্যাপ্ত শক্তি রাখে, সেগুলি ছোট ফ্ল্যাটটপগুলিতে প্রচলিত প্রপালশনসম্পন্ন (গ্যাস টারবাইন বা ডিজেল), যা কম শক্তি সরবরাহ করে। এর ফলে তার স্থিতিস্থাপকতা ও কার্যকারিতা… উভয়ই হ্রাস পায়। বৃহৎ এয়ারক্রাফ্ট ক্যারিয়ারগুলি একটি ভাসমান ঘাঁটি হিসাবে কাজ করতে এবং দীর্ঘ সময়ের জন্য কার্যকর থাকলেও একটি ছোট ফ্ল্যাটটপের সংক্ষিপ্ত পরিচালন পরিসীমা, আক্রমণ করার ক্ষমতার হার এবং সহনশীলতাও কম। একটি বৃহৎ ক্যারিয়ারের তুলনায় ছোট ফ্ল্যাটটপগুলিতে কম শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে এবং ড্রোন আক্রমণের প্রেক্ষিতে তা বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ।

ছোট ডেক ক্যারিয়ারগুলি শান্তিমূলক পরিস্থিতিতে কাজকর্ম চালাতে অবশ্যই কার্যকর হলেও তাদের যুদ্ধের ভূমিকা সীমিত, যদি না বর্ধিত পরিসর, আক্রমণের ক্ষমতা এবং বেঁচে থাকার ক্ষমতাসম্পন্ন এফ-৩৫বি-এর মতো একটি শক্তিশালী যুদ্ধবিমান তাদের এয়ার উইং-এ থাকে। উল্লেখযোগ্যভাবে পঞ্চম-প্রজন্মের ক্যারিয়ারভিত্তিক ফাইটার বিমান বা এয়ারক্রুদের ক্ষতির ঝুঁকি ছাড়াই দীর্ঘ পরিসরে নির্ভুল যুদ্ধাস্ত্র মোতায়েন করতে সক্ষম এটি। ভারতীয় নৌবাহিনী, যা পরবর্তী দশকে তার ছোট এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার থেকে মিগ-২৯কে এবং রাফায়েল মেরিন (বা এফ/এ-১৮ সুপার হর্নেটস) উড়ান দেবে, একটি সংঘাতের সময় প্রতিপক্ষদের প্রতিহত করতে সফল হতে পারে। তবে প্রতিকূল পরিবেশে অপরীক্ষিত বিমান-সহ ভারতীয় ক্যারিয়ারগুলি কীভাবে কাজ করবে, তা অনুমান করা কঠিন।

একটি ছোট এয়ারক্রাফ্ট ক্যারিয়ারের সঙ্গে একটি বড় ডেক ফ্ল্যাটটপের চাহিদাকে প্রতিস্থাপন করার নৌবাহিনীর সিদ্ধান্তটি নানা সুবিধার দ্বারা চালিত হলেও তবে এটি বাস্তবিকই বিকল্প হ্রাসের ফলাফল। একটি বড় ক্যারিয়ারের বিকল্প না থাকার দরুন একটি ছোট ফ্ল্যাটটপ ভারতীয় নৌবাহিনীর একমাত্র সম্ভাব্য পছন্দ। জাহাজের সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও বিশেষ করে এর সীমিত যুদ্ধের ক্ষমতা, দ্বিতীয় বিক্রান্ত হল বর্তমান পরিস্থিতিতে নৌবাহিনীর একমাত্র আশার আলো।


এই প্রতিবেদনটি প্রথম প্রকাশিত হয় লোয়ি ইনস্টিটিউট-এ।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.