Published on Jan 06, 2024 Updated 4 Hours ago

ভারতীয় সেনাবাহিনী অবশেষে পরিষেবার জন্য একটি সাইবার–সক্ষম ক্ষমতা তৈরি করার দিকে অবিচলিত পদক্ষেপ করছে

ভারতীয় সেনাবাহিনী অবশেষে ডিজিটাইজেশনে অগ্রগতি করছে

ভারতীয় সেনাবাহিনীর (আইএ) সাইবার প্রযুক্তি গ্রহণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন ঘটেছে। আইএ ঘোষণা করেছে যে এটি দীর্ঘ বিলম্বিত ব্যাটেল সার্ভেয়লেন্স সিস্টেম (বিএসএস) চালু করবে। বিএসএস–এর অনুপস্থিতি একটি ডিজিটাইজড ও সাইবার–সক্ষম আইএ তৈরিতে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেছে। কেন বিএসএস প্রয়োজনীয় তা দ্রুত এক নজরে দেখলেই বোঝা যাবে কেন এর বিলম্বিত গ্রহণকে শুধু যে স্বাগত জানানো উচিত তাই নয়, একইসঙ্গে এ কথাও মনে রাখা প্রয়োজন যে বিএসএস প্রতিষ্ঠা বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্থান বরাদ্দ না–করার ঘটনাটি ভারতের অসামরিক ও সেনা নেতৃত্বের প্রদর্শিত উদাসীনতার সাক্ষ্য দেয়। আইএ–এর সিনিয়র নেতৃত্ব বেশ কয়েক বছর ধরে দ্বিধা করেছিলেন এবং বিএসএস–কে অগ্রাধিকার হিসাবে বিবেচনা করেননি। ইতিমধ্যে চিনের পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ) ও পাকিস্তান আর্মি (পিএ) ডিজিটাইজেশন ও সাইবার প্রযুক্তির ক্ষেত্রে (‌ভারতের থেকে)‌ এগিয়ে গিয়েছে।

আইএ–র
‘‌প্রোজেক্ট সঞ্জয়’‌ এর অংশ হিসাবে অনুসৃত বিএসএস–এর অপরিহার্যতা দুটি কারণ থেকে উদ্ভূত হয়েছে। প্রথমত, এটি একটি নজরদারি স্থাপত্য তৈরি করে যা আইএ–এর বিভিন্ন স্তরের কমান্ডার ও কর্মীদের সঙ্গে সমস্ত কমান্ড কেন্দ্রকে একীভূত করে। দ্বিতীয়ত, বিএসএস–কে আইএ–র আর্টিলারি কমব্যাট কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল অ্যান্ড কমিউনিকেশন সিস্টেম (‌এসিসিসিএস)‌–এর সঙ্গে সংযুক্ত করা হবে, যা সেন্সর থেকে শ্যুটার লুপকে আরও শক্তিশালী করবে। ফলে, বিএসএস শুধু সমস্ত কমান্ডের জন্য একটি বিস্তৃত অভিযানগত ও কৌশলগত চিত্রই প্রতিষ্ঠা করে না, বরং যখন সম্পূর্ণরূপে একত্রিত ও কার্যকরী করা হয় তখন পরিস্থিতিগত সচেতনতাকে সমানভাবে বৃদ্ধি করে, যা সর্বোচ্চ স্তরের কমান্ডারদের সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সক্ষম করে।


গাজিয়াবাদের ভারত ইলেকট্রনিক লিমিটেড (বিইএল) হল বিএসএস–এর সেন্সরগুলির লিড ইন্টিগ্রেটর৷ এই অগ্রগতি সত্ত্বেও আইএ এখনও ব্যাটল ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (বিএমএস), যা প্রতিটি সৈনিককে সর্বনিম্ন স্তর থেকে সর্বোচ্চ স্তর পর্যন্ত সংযুক্ত করবে, তা তৈরির জন্য সব কাজ করে উঠতে পারেনি। বিএমএস কীভাবে বিএসএস থেকে আলাদা তা স্পষ্ট নয়। একটি বাস্তব পার্থক্য হতে পারে যে বিএমএস–এর কাজ হল বিয়ন্ড লাইন অফ সাইট (ব্লস) যোগাযোগের জন্য একটি নেটওয়ার্ক তৈরি করা,
স্পেকট্রাম ও নেটওয়ার্ক পরিচালনা, কম লেটেন্সি সহ কোয়ালিটি অফ সার্ভিস (কিউওএস), নির্ভরযোগ্য হাই স্পিড ডেলিভারি এবং শক্তিশালী এনক্রিপশন। বিএমএস–এর অধীনে ডেটা ট্রান্সমিশন রেট বেশি হবে এবং আইএ–র জন্য কাস্টম বিকশিত হবে। এর সমাপ্তির পরে বিএমএস, যেমনটি ইতিমধ্যে বিএসএস–এর ক্ষেত্রে হয়েছে, সংযুক্ত হবে এসসিসিসিএস ও কমান্ড ইনফরমেশন অ্যান্ড ডিসিশন সাপোর্ট সিস্টেম (সিআইডিএসএস)–এর সঙ্গে, যা আর্মি ইনফরমেশন অ্যান্ড ডিসিশন সাপোর্ট সিস্টেম (এআইডিএসএস) নামেও পরিচিত। এআইডিএসএস ২০১১ সাল থেকে চালু হয়েছে।


যদিও বিএমএস–এর থেকে বিএসএস আলাদা কি না তা নিয়ে পরস্পরবিরোধী মতামত আছে, তবুও এ কথা ঠিক যে সাইবার ও ডিজিটাল প্রযুক্তির আইএ–র প্রয়োগ এখনও বিকাশশীল ও অসম্পূর্ণ। এই সমস্ত উপাদানগুলি সম্পন্ন হলে, সেগুলি সমস্ত শ্রেণিবদ্ধ কৌশলগত এবং অভিযানগত বিষয়গুলির জন্য দায়ী অপারেশনাল ইনফরমেশন সিস্টেম (ওআইএস)–এ সংযুক্ত হবে। ওআইএস আর্মি ক্লাউডের দুটি অংশের একটি গঠন করবে, যেটি ২০১৫ সালে চালু করা হয়েছিল। আর্মি ক্লাউডের অন্য অংশটি হল ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (এমআইএস), যা কর্মীদের সমস্যা সম্পর্কিত সমস্ত ডেটা রাখবে ও তত্ত্বাবধান করবে।

কৌশলগত যোগাযোগের জন্য বৃহত্তর দেশীয় সক্ষমতার দিকে আইএ–র পদক্ষেপ এই প্রয়াসকে আরও শক্তিশালী করবে। আইএ একটি চুক্তি করেছে
বেঙ্গালুরু–ভিত্তিক অ্যাস্ট্রোম টেকনোলজি প্রাইভেট লিমিটেড (এটিপিএল)–এর সঙ্গে একটি লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক (ল্যান) যোগাযোগ ব্যবস্থা তৈরি করার জন্য, যাকে ‘‌ট্যাকটিক্যাল ল্যান রেডিও (টিএলআর)’‌ নাম দেওয়া হয়েছে। এটি একবার সম্পূর্ণরূপে আইএ–র যুদ্ধ প্রস্তুতির সঙ্গে সংযুক্ত হলে আইএ–র মোতায়েন ইউনিটগুলির মধ্যে বাধা–প্রতিরোধী যোগাযোগ ব্যবস্থা তৈরি করবে।


একটি দ্বিতীয় ঘটনা, যা অতি সাম্প্রতিক, তা হল মায়া ওএস–উবুন্টু নামক অপারেটিং সিস্টেম (ওএস) নেওয়া। ওএস–এর বিকাশের সঙ্গে বেশ কয়েকটি সত্তা যুক্ত ছিল। প্রতিরক্ষা মন্ত্রক (এমওডি), প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থা (ডিআরডিও), সেন্টার ফর দ্য ডেভেলপমেন্ট অফ অ্যাডভান্সড কম্পিউটিং (সি–ড্যাক) ও ন্যাশনাল ইনফরমেটিক্স সেন্টার (এনআইসি) মিলিতভাবে মায়া ওএস–উবুন্টু তৈরি করেছে।
একত্রে এই সত্তাগুলি একটি ওএস তৈরি করেছে যার ইন্টারফেস ও কার্যকারিতা উইন্ডোজ ওএস–এর মতো। এই ওএস–এর একটি ভার্চুয়াল স্তরও রয়েছে, যা কার্যকরভাবে চক্রব্যূহ নামক সফটওয়্যারের সাহায্যে রক্ষা করা হয়। এটি সর্বশেষ ব্যবহারকারী ও ইন্টারনেটকে ম্যালওয়্যার–এর অনুপ্রবেশ থেকে রক্ষা করে।


ভারতীয় সশস্ত্র পরিষেবাগুলির মধ্যে ভারতীয় নৌসেনা (আইএন) প্রথম মায়া ওএস ব্যবহারের পথে অগ্রসর হয়েছিল। একটি দেশীয়ভাবে নির্মিত ওএস–এর সুবিধাগুলি বাহিনী ও এমওডি–জুড়ে নেটওয়ার্ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য যথেষ্ট। যদিও আইএ এখনও সফটওয়্যারটির মূল্যায়ন করছে, বাহিনীটির এটি গ্রহণ করতে বেশি সময় লাগবে না। ভারতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনীর নেটওয়ার্কগুলিতে বৃহত্তর সাইবার স্থিতিস্থাপকতা তৈরি করার ক্ষেত্রে ভারতের জন্য মায়া–ওএস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, এবং এটি ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীগুলির জন্য নেটিভ সফটওয়্যার ও কম্পিউটিং ক্ষমতার সুবিধার ক্ষেত্রেও একটি ভাল পদক্ষেপ। মায়া–ওএস গ্রহণ ও সংযুক্তিকরণের পরে ভারতের সশস্ত্র বাহিনী দ্বারা পরিচালিত কম্পিউটার নেটওয়ার্কগুলিতে প্রতিকূল অনুপ্রবেশের সম্ভাবনা কমে যাবে। মায়া–ওএস ব্যবহারের সঙ্গে এনক্রিপ্ট করা যোগাযোগগুলি আরও ভাল হবে।

বহু বছর ধরে আপত্তি করার পরে, যার সবটাই অবশ্য তাদের নিজস্ব সিদ্ধান্তের কারণে নয়, আইএ নেতৃত্ব অবশেষে এবং স্থিরভাবে বাহিনীর জন্য একটি সাইবার–সমর্থিত সক্ষমতা তৈরিতে অগ্রগতি করেছে। আইএ–এর বর্তমান প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের পিছনে সবটা না–হলেও একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হল সেনাবাহিনীর প্রধান (সিওএএস) জেনারেল মনোজ পান্ডে নিজেই একজন প্রযুক্তিবিদ। তিনিই প্রথম প্রকৌশলী যিনি আইএ পরিচালনা করছেন। নিশ্চিতভাবে বলা যায় তাঁর অব্যবহিত পূর্বসূরি জেনারেল মনোজ মুকুন্দ নারাভানে ও প্রয়াত চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ (সিডিএস) জেনারেল বিপিন রাওয়াতও আইএ–তে বর্তমান প্রযুক্তিগত পরিবর্তন আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। ভারতের বেসরকারি ক্ষেত্রকে, এবং বিশেষ করে
স্টার্ট–আপগুলিকে, নিয়ে আসার জন্য মোদী সরকারের অন্যতম প্রধান উদ্যোগ ইনোভেশন ইন ডিফেন্স এক্সিলেন্স (আইডেক্স)–এর কাজে আইএ–এর ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের সক্রিয় ভূমিকা আছে। তা ছাড়াও আইএ প্রতিরক্ষা স্টার্ট–আপ চ্যালেঞ্জ (ডিস্ক), ওপেন চ্যালেঞ্জ, এবং আইডেক্স প্রাইম স্কিম-এর আওতায় ৪২টি প্রকল্প চালু করেছে। এগুলির লক্ষ্য আইএ যে সব প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে সেগুলির জন্য অত্যাধুনিক প্রযুক্তিগত সমাধানের বিকাশ। সর্বোপরি, এই ঘটনাগুলি এবং আইএ যে পথে এগোচ্ছে তা এই বাহিনীর জন্য ভাল।



কার্তিক ব্যোমকান্তি অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ প্রোগ্রামের একজন সিনিয়র ফেলো

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.