Published on Dec 14, 2024 Updated 0 Hours ago

সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং অর্থনৈতিক অগ্রগতির ক্ষেত্রে ভারতীয় প্রবাসীদের বিশ্বব্যাপী সাফল্য থেকে আফ্রিকা শিখতে পারে

ভারতীয় মডেল: আফ্রিকার স্টেম ডায়াস্পোরাকে কাজে লাগানোর পথ

সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক অগ্রগতির ক্ষেত্রে ভারতীয় ডায়াস্পোরার (‌প্রবাসীদের)‌ বিশ্বব্যাপী সাফল্য থেকে আফ্রিকা শিখতে পারে। তাদের নিজস্ব ডায়াস্পোরার উদ্যোক্তা মনোভাবকে কাজে লাগিয়ে আফ্রিকার দেশগুলো অর্থনৈতিক বৃদ্ধি বাড়াতে পারে এবং স্থিতিশীল উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। আধুনিক অর্থনীতিগুলি বৃদ্ধির জন্য বৈজ্ঞানিক ও প্রকৌশল গবেষণার উপর নির্ভর করে। আজকের আন্তঃসংযুক্ত বিশ্বে ভারতবর্ষ থেকে যাওয়া মানুষসহ প্রবাসী সম্প্রদায়গুলি বিশ্ব রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রায় ৩০ মিলিয়ন আফ্রিকান, যাঁদের মধ্যে অনেকের উচ্চ ডিগ্রি ও উদ্যোক্তা দক্ষতা রয়েছে, এখন বিদেশে বাস করেন, এবং আতিথ্যদানকারী দেশের উন্নয়নে সহায়তা করার জন্য অর্থ, আইটি ও কৃষির মতো ক্ষেত্রে অবদান রাখেন। অনেকেই রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা ও দাতব্য প্রচেষ্টার মাধ্যমে আফ্রিকার ভবিষ্যৎ উন্নত করার নীতি সক্রিয়ভাবে সমর্থন করেন।

রাষ্ট্রপুঞ্জের বিশ্ব অভিবাসন প্রতিবেদন ২০২২ অনুসারে, ভারতের বিদেশে বসবাসকারী নাগরিকেরা সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ছিলেন, এবং ১৮ মিলিয়নেরও বেশি ভারতীয় বিশ্বব্যাপী উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেছেন। উদাহরণ স্বরূপ, ভারতীয় অভিবাসীরা বার্ষিক প্রায় ১৫০,০০০ মার্কিন ডলারের মধ্যগ (‌মিডিয়ান)‌ পারিবারিক আয়সহ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যে কোনও অভিবাসী গোষ্ঠীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অর্থ উপার্জন করেন। অস্ট্রেলিয়ায় ভারতীয় অভিবাসীদের গড় বার্ষিক পারিবারিক আয় প্রায় ৮৭,০০০ মার্কিন ডলার, যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চিনা অভিবাসীদের গড় পারিবারিক আয় প্রায় ৫৮,০০০ মার্কিন ডলার


প্রায় ৩০ মিলিয়ন আফ্রিকান, যাঁদের মধ্যে অনেকের উচ্চ ডিগ্রি ও উদ্যোক্তা দক্ষতা রয়েছে, এখন বিদেশে বাস করেন, এবং আতিথ্যদানকারী দেশের উন্নয়নে সহায়তা করার জন্য অর্থ, আইটি এবং কৃষির মতো খাতে অবদান রাখেন।



৫৪টি আফ্রিকান দেশে প্রায় ১.৪ বিলিয়ন মানুষ বাস করেন এবং ২৫ থেকে ৩০ বছরে তা ২.৫ বিলিয়ন হবে বলে অনুমান করা হয়। এই বৃদ্ধি শক্তি, জলবায়ু পরিবর্তন ও খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। এই নিবন্ধটি বৈজ্ঞানিক অগ্রগতির জন্য তার ডায়াস্পোরাকে কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে ভারতের কৌশলটি অন্বেষণ করে, এবং বিবেচনা করে যে কীভাবে আফ্রিকার দেশগুলি তাদের নিজস্ব প্রবাসী পেশাদারদের উন্নয়নের জন্য এই পদ্ধতি থেকে শিখতে পারে।

আফ্রিকান স্টেম ডায়াস্পোরা

দুঃখজনকভাবে, আফ্রিকায় সরকারি ও বেসরকারি উভয় ধরনের গবেষকদের বৈজ্ঞানিক অগ্রগতিতে অবদান ন্যূনতম রয়ে গেছে আফ্রিকার সরকারগুলির অপ্রতুল তহবিলের কারণে। এটি উচ্চাভিলাষী গবেষণার সুযোগ সীমিত করে। তাদের বৈজ্ঞানিক অবদান বাড়ানোর জন্য, আফ্রিকাকে অবশ্যই স্থানীয় ও বৈশ্বিক অংশীদারদের সঙ্গে সহযোগিতা বৃদ্ধি করতে হবে, এবং আফ্রিকান স্টেম ডায়াস্পোরার সঙ্গে জড়িত হতে হবে। উপরন্তু, বেসরকারি ক্ষেত্রের ব্যবসার আফ্রিকান স্টেম গবেষকদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করা উচিত, যাঁরা রাসায়নিক উৎপাদন, চিকিৎসা ডিভাইস, ভ্যাকসিন ও ফার্মাসিউটিক্যালস এর মতো ক্ষেত্রে উদ্ভাবন উন্নত করেছেন, যা আফ্রিকা এবং তার বাইরের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সহায়তা করতে পারে।

অন্যভাবে বললে, আফ্রিকার আবিষ্কার ও উদ্ভাবনকে কার্যকরভাবে প্রচার করার জন্য একটি কৌশল প্রয়োজন। বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে গবেষণা সম্প্রসারণ সুবিধাজনক হবে, এবং যাঁরা স্টেম সুযোগের সন্ধানে মহাদেশ ছেড়েছেন তাঁদের ফিরে আসতে এবং সহযোগিতা করতে উৎসাহিত করবে। এই কৌশল মধ্যবিত্তের জন্য নতুন অর্থনৈতিক সুযোগ উন্মুক্ত করতে পারে, যা প্রসারিত হচ্ছে এবং উচ্চ পরিমাণে নিষ্পত্তিযোগ্য আয় রয়েছে।


বেসরকারি ক্ষেত্রের ব্যবসার আফ্রিকান স্টেম গবেষকদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করা উচিত, যাঁরা রাসায়নিক উৎপাদন, চিকিৎসা ডিভাইস, ভ্যাকসিন ও ফার্মাসিউটিক্যালস এর মতো ক্ষেত্রে উদ্ভাবন উন্নত করেছেন, যা আফ্রিকা এবং তার বাইরের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সহায়তা করতে পারে।



আইবিএম, নেসলে, ও গুগল-এর মতো গ্লোবাল কর্পোরেশনগুলি স্থানীয় উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করার গুরুত্ব স্বীকার করে আফ্রিকার গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলিতে গবেষণা ও উন্নয়ন কেন্দ্র স্থাপন করেছে। উদাহরণস্বরূপ,
গুগল-এর ঘানায় একটি এআই গবেষণা সুবিধাকেন্দ্র রয়েছে এবং আইবিএম দক্ষিণ আফ্রিকা ও কেনিয়াতে এমন কেন্দ্রগুলি চালায়৷ এই কোম্পানিগুলির মধ্যে অনেকগুলি স্থানীয় ও বৈশ্বিক উভয় স্তরে দক্ষতা অর্জনের জন্য প্রবাসী পেশাদারদের নিয়োগ করেছে। যাই হোক, উল্লেখযোগ্য অব্যবহৃত সম্ভাবনা রয়ে গেছে এবং আফ্রিকা এই ক্ষেত্রে ভারতের অভিজ্ঞতা থেকে শিখতে পারে।

বৈজ্ঞানিক ডায়াস্পোরাকে যুক্ত করার ‘‌ভারতীয় পথ’‌

ভারতীয় প্রবাসীদের সঙ্গে সংযোগ জোরদার করা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর অধীনে ভারতের বিদেশনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হয়ে উঠেছে। প্রবাসীদের সম্ভাবনাকে স্বীকার করে ভারত সরকার যাঁরা ব্যবসা শুরু করতে ফিরে আসেন, তাঁদের
কর ছাড় ও অন্যান্য প্রণোদনা দেয়। উল্লেখযোগ্য উদাহরণগুলির মধ্যে রয়েছে উইপ্রো ও রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ, উভয়ই ফিরে আসা প্রবাসীদের দ্বারা বা নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত।

বিজ্ঞানের সাম্প্রতিক অগ্রগতি তার প্রবাসীদের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ককে শক্তিশালী করেছে, এবং এর কৃতিত্ব পশ্চিমী প্রতিষ্ঠানে শিক্ষিত পেশাদারদের, যাঁরা মূল্যবান জ্ঞান ও দক্ষতা নিয়ে ফিরে এসেছেন। এই কৌশলটি অতিমারির সময় বিশেষভাবে কার্যকর প্রমাণিত হয়েছিল, যা ভারতকে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী করে তুলেছে। আফ্রিকার সরকারদের এই পদ্ধতির দিকে নজর  দেওয়া উচিত।

তদ্ব্যতীত, সরকার
বৈশ্বিক ভারতীয় বৈজ্ঞানিক (বৈভব) ফেলোশিপ প্রোগ্রাম চালু করেছে, যাতে বৈজ্ঞানিক ডায়াস্পোরার সঙ্গে অ্যাকাডেমিক এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলিকে সংযুক্ত করা যায়। এই উদ্যোগের লক্ষ্য হল সর্বোত্তম অনুশীলন, জ্ঞান বিনিময়, এবং অত্যাধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে সহযোগিতামূলক গবেষণার প্রসার ঘটিয়ে প্রবাসীদের সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করা, যার ফলে ভারতের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে গবেষণা বাস্তুতন্ত্র উন্নত হয়।


বৈভব ফেলোরা শীঘ্রই ভারতীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করবেন, যাতে ভারত সরকার দ্বারা নির্ধারিত অগ্রাধিকার ক্ষেত্রগুলিতে উন্নত গবেষণার উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে একটি সহযোগী নেটওয়ার্ক তৈরি করা যায়।



বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রকের অধীনে এই ফেলোশিপ প্রোগ্রামের লক্ষ্য হল ৭৫ জন বিশিষ্ট বিজ্ঞানী এবং ভারতীয় বংশোদ্ভূত প্রযুক্তিবিদদের (এনআরআই/ওসিআই/পিআইও) তাঁদের নিজ দেশে গবেষণা পরিচালনা করতে সহায়তা করা। প্রোগ্রামটি কোয়ান্টাম প্রযুক্তি, স্বাস্থ্য ও কৃষিসহ
১৮টি মূল ক্ষেত্র অন্তর্ভুক্ত করে। ৩০২টি আবেদন পর্যালোচনা করার পর, এপেক্স কমিটি ২২ জন বৈভব ফেলো এবং দুই বিশিষ্ট বৈভব ফেলো-র নাম সুপারিশ করেছে৷

বৈভব  ফেলোরা শীঘ্রই ভারতীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করবেন, যাতে ভারত সরকার দ্বারা নির্ধারিত অগ্রাধিকার ক্ষেত্রগুলিতে উন্নত গবেষণার উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে একটি সহযোগী নেটওয়ার্ক তৈরি করা যায়। তাঁরা যৌথ গবেষণার মাধ্যমে মূল উদ্বেগের সমাধান করবেন এবং সর্বোত্তম অনুশীলনগুলি ভাগ করবেন। ফেলোশিপে তিন বছর পর্যন্ত ভ্রমণ, বাসস্থান, আকস্মিক পরিস্থিতি এবং
৪০০,০০০ ভারতীয় রুপির (৫০০০ মার্কিন ডলার) মাসিক অনুদান অন্তর্ভক্ত। প্রত্যেক ফেলো সহযোগিতার জন্য একটি ভারতীয় প্রতিষ্ঠান বেছে নিতে পারেন এবং প্রকল্পে তিন বছরের মধ্যে বার্ষিক দুই মাস পর্যন্ত দিতে পারেন।

সামনের পথ

গত কয়েক দশক ধরে, প্রযুক্তিগত অগ্রগতি উন্নত দেশগুলিতে আইটি ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধির সুযোগ করে দিয়েছে, স্থানীয় সম্প্রদায়গুলিকে উপকৃত করেছে, এবং কর রাজস্ব বৃদ্ধি করেছে। অনেকেই বহুজাতিক কর্পোরেশনে প্রোগ্রামার, প্রোডাক্ট ম্যানেজার এবং বিশ্লেষক হিসেবে চাকরি পেয়েছেন। আফ্রিকা তার দেশীয় আইটি সংস্থাগুলিকে সমর্থন করে এই সাফল্য অনুসরণ করতে পারে, সেগুলি ল্যাব উদ্ভাবন, স্টার্টআপ বা অ্যাকাডেমিক প্রকল্প যে কোনও ক্ষেত্র থেকে উদ্ভূত হোক না কেন। এই পদ্ধতিটি আফ্রিকানদের, বিশেষ করে নতুন স্নাতকদের, জন্য আরও কাজের সুযোগ তৈরি করবে।


আগামী ২৫ বছরে ২.৫ বিলিয়ন জনসংখ্যার অনুমানসহ, আফ্রিকাকে অবশ্যই তার বিশ্ব সম্প্রদায়ের দক্ষতার মূল্যায়ন করার পাশাপাশি বিজ্ঞান ও প্রকৌশলকে ভিত্তি করে উদ্ভাবনী সমাধানগুলি বিকাশ করতে হবে।



অধিকন্তু, আফ্রিকা তার ডায়াস্পোরাকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে নিযুক্ত করে এবং তার  বৈশ্বিক নরম শক্তি বৃদ্ধি করে একটি শক্তিশালী জ্ঞান অর্থনীতি গড়ে তুলতে পারে। এই সহযোগিতার মাধ্যমে আর্থিক সহায়তা, প্রযুক্তিগত সহায়তা এবং ধারণা ভাগ করা উচিত। যেহেতু মহাদেশটি আগামী কয়েক দশকে উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে চলেছে, তাই একটি শক্তিশালী সম্পদ হিসেবে ডায়াস্পোরাকে কাজে লাগানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আগামী ২৫ বছরে ২.৫ বিলিয়ন জনসংখ্যার অনুমানসহ, আফ্রিকাকে অবশ্যই তার বিশ্ব সম্প্রদায়ের দক্ষতার মূল্যায়ন করার পাশাপাশি বিজ্ঞান ও প্রকৌশলকে ভিত্তি করে উদ্ভাবনী সমাধানগুলি বিকাশ করতে  হবে।

সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক অগ্রগতির ক্ষেত্রে ভারতীয় ডায়াস্পোরার বিশ্বব্যাপী সাফল্য থেকে আফ্রিকা শিখতে পারে। তাদের নিজস্ব ডায়াস্পোরার উদ্যোক্তা মনোভাবকে কাজে লাগিয়ে, আফ্রিকান দেশগুলি অর্থনৈতিক বৃদ্ধি অর্জন করতে পারে এবং স্থিতিশীল উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। ভারতীয় ডায়াস্পোরার সমৃদ্ধ অর্থনীতি তৈরির ইতিহাস এবং সংস্কৃতি পরিবর্তন করা থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে আফ্রিকার দেশগুলিকে তাদের দক্ষ প্রবাসীদের সঙ্গে বৈজ্ঞানিক গবেষণা পরিচালনা করতে এবং তাদের উদ্দেশ্য পূরণ করতে সহযোগিতা করা উচিত।



সমীর ভট্টাচার্য অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের একজন অ্যাসোসিয়েট ফেলো

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.